নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবনের বাঁকে বাঁকে স্বপ্ন দেখি

মুহাম্মাদ রিয়াজ উদ্দিন

রিয়াজ উদ্দিন

স্বপ্ন দেখতে, স্বপ্নের কথা বলতে ভালোবাসি

রিয়াজ উদ্দিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প , প্রতিশোধ

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০২



স্কুলে ভর্তির প্রথম দিন থেকেই নয়নের দুষ্টুমিটা সবার নজরে পড়েছে। কী শিক্ষক আর ছাত্র সবার সামনেই দুষ্টুমি করে নয়ন। স্কুলে নতুন ভর্তি হয়েছে নয়ন। ক্লাস এইটের ছাত্র নয়ন। শহরের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য কতজনই না পুরো বছর অপেক্ষা করে। ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে কিছু ছাত্র ভর্তি করা হয়। ক্লাস এইটে মাত্র আটটি আসন খালি ছিল। সবার মতো নয়নও ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হয়েছে। ইন্টারভিউ নেয়ার পদ্ধতি হয়তো বা নয়ন ভর্তি হতে পারত না। নয়নের বাবা সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। অনেক নাম ডাক। নয়ন অল্প কযে়কদিনের ভেতরই কয়েকজনের সাথে সখ্যত গড়ে তোলে। সবাই যে দুষ্টু তা নয়। কেউ কম কেউবা বেশি। নয়নই সেরা। অবশ্য পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকলে প্রথম মাসেই নয়ন সেরা দুষ্টুর খেতাবটা নিতে পারত। প্রতিদিন নিয়মমাফিক ক্লাস হয়। ইংরেজি ক্লাসটা প্রথমে হয়। ইংরেজি ক্লাসের পড়াটা কেউ ফাঁকি দিতে পারে না। নয়ন মাঝে মাঝে নয় বরং প্রায়ই পড়া না পারার কারণে দাঁড়িয়ে শাস্তি পেতে হয়। ওর দাঁড়ানোটা একরকম কমন বিষয়। নয়ন ইংরেজি আর গণিতে দুর্বল। এছাড়া সব বিষয়ই ও ভালো। ক্লাসের পর ওর বাসায় বাবা মা দুজনই পড়ান। ক্লাস ক্যাপ্টেন রাফি অনেক শান্ত ছেলে। ক্যাপ্টেন্সির দায়িত্ব পালনে মাঝে মাঝে যে কঠোর হতে হয় রাফি সেটা পারে না। কারো সাথে জোরে কথা বলে না। পেছনের বেঞ্চে বসা ছাত্ররা প্রায়ই শোরগোল করে। রাফিকে নাম লিখতে বলা হয়। রাফি কখনো কখনো লিখে আবার লিখে না। নয়ন পেছনে বসলেই কারো না কারো সাথে ঝগড়া করবে। রাফি এসে থামায়। নয়নের দিকে চোখ রাঙিয়ে নয়ন বলে-‘রাফি তুমি শুধু আমাকেই দেখো। অন্যরা যে দুষ্টুমি করে তা দেখো না।’ রাফি ওর মতো করে শান্ত হয়ে বলে-‘না নয়ন তুমি ঠিক বলোনি। ক্লাসে যে দুষ্টুমি করবে তার নামই আমি লিখে স্যারকে দিব।’ নয়ন কথা না বাড়িয়ে চুপ হয়ে বসে থাকে। এক এক করে সাতটি প্রিয়ড হওয়ার পর স্কুল ছুটি হয়। নয়ন পেছনের বেঞ্চে বসে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকে। কখনো ছুটির ঘণ্টা ওর কানে বাজবে। মাঝে মাঝে ছুটির ঘণ্টা ওর কাছে বিরক্ত লাগে। তবে যেদিন খুব খিদে থাকে তখন ওর কাছে খুব ভালো লাগে। নয়নের ঘণ্টার শব্দ ভালো লাগা আর না লাগার খবর আর কেউ জানলেও ওর ঘনিষ্ট বন্ধু শফিক জানে। কারণ শফিকের সাথে ওর সখ্যতা স্কুলে ভর্তির পর থেকেই। ছুটি শেষে শফিকের সাথে রিকশায় বাসায় ফেরে। দুজনার মাঝে গলায় গলায় খাতির। নয়নের বন্ধু বলতে শফিক। ক্লাসের অন্যান্যদের সাথে নয়নের আচরণ কিছুটা ভিন্ন। কারো কারো ঝগড়া লেগে হাতাহাতি পর্যন্তও হয়। ক্লাস টিচারের কাছে নালিশ গেলে নয়নকে শাস্তি পেতে হয়। নয়ন কী আর শাস্তি ভয় করে? রোজ রোজ শাস্তি পেতে পেতে ওর হজম হয়ে গেছে। কে কী বলল তাতে ওর কিছু আসে যায় না। ও ওর মতো করে ক্লাসে থাকবে। বৃহস্পতিবার টিফিন পর্যন্ত ক্লাস হয়। তারপর ছুটি। নয়ন আজ একটু আগেই ক্লাসে এসেছে। নির্ধারিত আসন থাকা সত্ত্বেও নয়ন পেছনের বেঞ্চে বসেছে। আজ ওর মতলব খারাপ। ইংলিশ প্রিয়ডের পরই নিয়াজের সাথে লেগেছে। ক্লাসে একদম নিরীহ ছেলে নিয়াজ মাখদুম। ওদের চেয়ে একটু লম্বা হওয়ায় নিয়াজ দাঁড়ালে নয়ন ওর ঘাড়ের কাছে পড়ে থাকে। ‘নয়ন আমার সাথে শুধু শুধু লাগছ কেন?’ নিয়াজ শান্ত গলায় কথাটি বলে। ‘এই আমি তোর সাথে শুধু শুধু লাগলাম কোথায়? তুই তো আমার শার্ট টান দিয়েছিস?’ নিয়াজ অবাক হয়ে বলে-‘নয়ন তুমি আমাকে তুই তোকারি করে বলছ কেন? আর কেনইবা তোমার শার্ট টান দিব। দেখো অন্য কেউ দিয়েছে কিনা।’ নিয়াজ এবার বসে বই খোলে। নয়ন আরো কিছু বলে কয়ে শান্ত হয়। শফিক এসে খোঁজ নেয় নয়নের সাথে নিয়াজের কী ঘটেছিল। নয়ন আর শফিক পরামর্শ করে। দুজনে উচ্চস্বরে হেসে ওঠে। নিয়াজকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করে। ছুটির পর এক এক করে সবাই বাসায় চলে যায়। নিয়াজ স্কুল গেট পার হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রিকশা খুঁজছে। হঠাৎ শফিক এসে বলে-‘কী নিয়াজ রিকশা খুঁজছ? চলো দুজন হেঁটে যাই।’ নিয়াজ শফিকের কথায় সামনের দিকে পা বাড়ায়। কিছুক্ষণ পর সরু রাস্তায় ঢুকতেই সামনে নয়ন এসে দাঁড়ায়। নিয়াজ এবার শফিকের সব বুঝতে পেরে ওর মুখের দিকে একবার তাকায়। শফিক মুচকি হেসে বলে-‘দোস্ত রাগ করিস না। সব নয়নের পরিকল্পনা।’ নয়ন সামনে পেছনে তাকিয়ে নিয়াজের গালে থাপ্পড় মারে। ‘আমাকে মারছ কেন নয়ন? আমি তোমাকে কী করেছি?’ নিয়াজ নয়নের মুখের দিকে তাকিয়ে কথাটি বলে। ‘আহারে কচি খোকা! কিচ্ছু বোঝোনা। ক্লাসের কথা কী ভুলে গেলে? আমার শার্ট ধরে টান দিয়েছিলে কেন?’ নিয়াজের কাঁধের ব্যাগটা একটু টেনে নয়ন কথাগুলো বলে। ‘নয়ন বিশ্বাস করো আমি তোমার শার্ট ধরে টান দিইনি।’ নিয়াজ কথা না বাড়িয়ে সামনের দিকে পা বাড়ায়। শফিক আর নয়ন উল্টা পথে হাঁটতে থাকে। ‘নয়ন, নিয়াজকে মারাটা কী ঠিক হলো?’ জানতে চায় শফিক। ‘ঠিক হয়নি মানে? একশ’ বার ঠিক হয়েছে। ও বড্ড খারাপ। আমাকে মুখে মুখে কথা বলে। ‘নিয়াজকে অনেক ভালো ছেলে। ওকে এভাবে মারাটা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। আমি আর তোমার সাথে নেই নয়ন। আমাকেও সবাই খারাপ বলবে।’ শফিক নয়নের সামনে এগিয়ে গিয়ে কথাগুলো বলে। ‘ঠিক আছে শফিক। আমিও তোকে দেখে নিবো।’ নয়ন একটু জোরেই কথাটি বলে ওর বাসার দিকে হাঁটতে থাকে। শনিবার ক্লাসের সবাই নয়ন আর নিয়াজের ব্যাপারটি জেনে যায়। এক কানা থেকে অন্য কানে এভাবে শিক্ষকরাও জেনে যায়। নয়নকে ডাকা হয় হেড স্যারের রুমে। নয়ন নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য মিথ্যে মিথ্যে অনেক অভিযোগ করে নিয়াজের নামে। হেড স্যার সব জেনেও নয়নকে কিছু বললেন না। শুধু এইটুকু বললেন-‘নয়ন তুমি এই স্কুলে নতুন এসেছো। এমন কিছু করো না যা তোমার এবং তোমার বাবার সুনামকে ক্ষুন্ন হয়।’ নয়ন কথাগুলো শুনে ক্লাসে এসে বসে। ওর ক্লাসের সবাই কেমন যেন করে ওর দিকে তাকায়। রাফি, তানভীর, রনি, তারেকসহ অনেকেই নয়নকে দুষ্টুমি না করার জন্য পরামর্শ দেয়। নয়ন একবার নিয়াজের দিকে তাকায়। নিয়াজ সেই আগের মতোই শান্ত হয়ে বেঞ্চে বসা। স্কুলের ক্লাস নিয়মিত হচ্ছে। টিউটোরিয়াল পরীক্ষার রেজাল্ট নোটিস বোর্ডে টানিয়ে দেয়া হয়েছে। সবাই ভালো করলেও নয়ন ভালো করতে পারেনি। নয়ন অনেকটা ভালো হয়ে গেছে। ক্লাসের দুষ্টুমিটা অনেক কমেছে। আগের মতো ওর নামে অভিযোগ আসে না। শিক্ষকরাও নয়নকে আদর করে। নিয়াজ ক্লাসের অন্যান্যদের মতো কথা বলে। নয়নের পড়ালেখার খোঁজ নেয়। শীতকালীন ছুটির পর স্কুল খুলেছে। সিলেবাসের পড়াগুলো শিখাচ্ছেন সব শিক্ষকেরা। সোমবার স্কুল ছুটির পর নয়ন রিকশা না পেয়ে একাই হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে। প্রচণ্ড রোদে নয়ন ঘেমে যাচ্ছে। না কোথাও রিকশার খোঁজ নেই। কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ পেছনে একটা রিকশা থামল। ‘নয়ন আমার সাথে আসো।’ নিয়াজের কথায় পেছনে তাকাল নয়ন। নয়ন রিকশায় উঠবে কিনা বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষণ নিয়াজের মুখের দিকে তাকিলে থাকে নয়ন। ‘কী ভাবছ নয়ন? এই রোদের ভেতর তুমি হেঁটে হেঁটে বাসায় যেতে পারবে না। তোমার অনেক কষ্ট হবে।’ নয়ন এবার রিকশায় ওঠে। রিকশাওয়ালা রিকশা চালাতে থাকে। ‘নিয়াজ আমাকে ক্ষমা করো বন্ধু।’ নয়ন কথাটি বলেই নিয়াজের দুই হাত জোর করে ধরে রাখে। ‘ক্ষমা চাচ্ছ কেন নয়ন। তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছ এটাই তো অনেক কিছু। ক্লাসের সবাই আমরা ভাই ভাই। ভাই মানে বন্ধু। এক বন্ধু কী অপর বন্ধুর অকল্যাণ চাইতে পারে। তুমিও অনেক ভালো ছেলে।’ নিয়াজের কথায় নয়ন অনেক লজ্জা পায়। ‘নিয়াজ আর কিছু বলো না ভাই। তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি। মনে কিছু রেখো না। তুমি আমার বাসায় কবে আসবে বলো?’ নয়ন নিয়াজের মুখের দিকে তাকায়। ‘আসব নয়ন। ফার্স্ট সেমিস্টোর পরীক্ষার পরই আসব।’ কিছুক্ষণ পর নয়নের বাসার সামনে এসে পৌঁছায়। নয়ন রিকশা থেকে নেমে নিয়াজকে ওর বাসায় আসার পুনরায় আমন্ত্রণ জানিয়ে বিদায় জানায়। নিয়াজকে নিযে় রিকশাটা ছুটল ওর বাসার দিকে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.