নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ

ভাবতে থাকি

আমি বাংলাদেশের

ভাবতে থাকুন

আমি বাংলাদেশের › বিস্তারিত পোস্টঃ

গাদা ফুল

২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:২৯

গাদা ফুল

-এমন করে কি দেখছ?

-তোমাকে।

-মনে হয় আর দেখনি!

-যতই দেখি ততই মনে হয় অদেখা থেকে দেখা।

-এত দেখতে হবে না। আজ প্রায় চার বছর হল শুধু দেখেই গেলে। এভাবে আর হবে না।

-তুমি যদি চাও তোমার জন্য এনে দিতে পারি ১০১টা নীলপদ্ম।

-তুমি নীলপদ্ম দেখছ কখনও?

-নীলপদ্ম কি, সব ফুল তোমাকে এনে দিতে পারি শুধু তোমার মুখের একটু হাসির বিনিময়ে।

-তুমি কয়টা ফুলের নাম জান? জানতো শুধু চাপা।

-কি বলছ তুমি? আমি জানিনা ভাবছ। তবে শুন জবাফুল, কদমফুল, বাদামফুল, বিউটিফুল, ট্রুথফুল, নাইসফুল, গ্রেট...।।

-থাম। আসলে তুমি একটা গাদা।

-তাই বল, তুমি গাদাফুল পছন্দ কর। এই তুমি কৈ যাও?

-তুমি আমার সাথে আসবানা। আব্বু আমার যে ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেছে আমি তাকেই বিয়ে করব।

তপা রাগ করে চলে যাওয়াতে তপু মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে রইল। তার চার বছরের প্রেমের ইতি ঘটতে যাচ্ছে। তার প্রেমিকার বিয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে। যে ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে সে ফ্রান্স থেকে এসেছে। বিয়ের পর তপাকেও নিয়ে যাবে। তপার আব্বু খুব মেজাজি স্বভাবের লোক। তিনি এই বিয়েতে রাজী। তাই তার মেয়ে তপার কথার মূল্য তার কাছে নেই, মেয়েও তাই তার প্রেম সম্পর্কে পিতাকে কিছু জানাতে ভয় পাচ্ছ। তপুর আজও ছেলে মানুষী কাটল না। তার এই হেয়ালির কারনেই সে তপাকে হারাচ্ছে হয়ত।

আজ ছেলে পক্ষ আসছে তপাকে দেখতে। অবশ্য কথা আগেই পাকা, আজ শুধু ছেলে তপাকে দেখছে এবং আংটি পরাল। আগামী শুক্র ও শনিবার গায়ে হলুদ এবং তারপরের দিন বিয়ে। তারমানে বিয়ের এখনও ৭দিন সময় আছে। এদিকে তপু খুব হতাশ হয়ে পড়েছে। টিউশানিয়েতো যাচ্ছে না। শুধু গুরে বেড়াচ্ছে সেই সব জায়গায় যেখানে সে তপাকে নিয়ে গুরে বেড়িয়েছে। এই এল পার্কের সেই বট গাছের নিচে। আর পুরনো স্মৃতিটা মনে পরে গেল। একদিন তপা এই গাছের নিচে বসে ছিল। তপু পাশের দোকান থেকে আইসক্রিম আনতে গেল। দোকানদারকে আইসক্রিম দিতে বলে নিজে পকেটে হাত দিল কিন্তু পকেটে মানিব্যাগ নেই। দোকানদার আইসক্রিম দিয়ে টাকা চাইল। তপু আইসক্রিম হাতে নিয়ে বলল, ঐ বটগাছের নিচে আমি আছি কিছুক্ষণপর টাকা পাঠিয়ে দেব। দোকানদারে পরিচিত কাস্টমার তাই রাজী হল। তপু আইসক্রিম নিয়ে চলে গেল। তপার হাতে একটা আইসক্রিম দিল। দুজনে আইসক্রিমে একটু করে মুখ দিল। আর তখন তপুর মাথায় কি জানি আসল। সে নিজের ও তপার খাওয়া বদ্ধ করে আইসক্রিম পরিবর্তন করে নিল। অর্থাৎ তপারটা তপু নিল আর তপুরটা তপা নিল। এভাবে আইসক্রিমে প্রতি চুমুক দেয়ার পরেই দুজনের আইসক্রিম পরিবর্তন করে পেলে। এভাবে তাদের এই আইসক্রিম খেতে প্রায় ২০মিনিট লাগে। যদিও তার আগেই আইসক্রিম গলে যায়। হটাৎ সামনে এসে দাঁড়াল দোকানের কাজের ছেলেটা। আর বলল, ভাইয়া আইসক্রিমের টাকাটা...? তপু বলল, ও আচ্ছা। তপা ৫০টা টাকা দাও। তপা বুঝতে পেরেছে। কারন তপুর সবগুলো বদ অভ্যাস তপার জানা আছে। এই বদঅভ্যাস তার অন্যতম একটি। মানিব্যাগ কলম কিম্বা কোন গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ সময় সে হারায় কিম্বা ভুলে যায়। তাই কথা না বাড়িয়ে ৫০টাকা দিয়ে দিল। ছেলেটি চলে যাওয়ার পর তপা জিজ্ঞাস করল তপুকে, এটা কি হল? তপু বলল, দোকানের সামনে যে হালকা ভিড় ছিল তার মানিব্যাগ সম্ববত ঐ খানেই ছিনতাই হয়ে যায়।

-তুমি দেখনি ঠিক আছে কিন্তু বুজতেও পারনি?

-কি করে বুঝবো। বুঝতে গেলেতো মাথা ঠিক চাই?

-মাথাও কি ছিনতাই হল নাকি?

-মাথাতো সে কবেই তুমি ছিনতাই করে নিয়ে গেছ। তারপর থেকে এই মাথা আর কিছুই ভাবতে পারছে না।

-হয়েছে হয়েছে এখন আর চাপা মারতে হবেনা।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে তপুর চোখে জল চলে আসল। তারপর আবার হতাশ আর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে হাটতে লাগল। পার্কের একপাশে একা বসল একটা বেঞ্চে। টি স্টল নিয়ে একটা বালক এসে বলল, চা দেব ভাইয়া? তপু মাথা নেড়ে জানাল না। তপার ফোন বদ্ধ কয়েকবার ট্রাই করেও তপু ব্যাথ। অনেক রাত তপুর চোখে গুম নেই, ম্যাচের অন্যরা যেন না বুজতে পারে তাই চাদে উঠে একা একা চাঁদ দেখতে থাকে। কষ্ট ভুলাতে চাঁদের চেয়ে আকাশের তারাই বেশি উপযোগী। যখন খুব কষ্ট হবে তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে সোজা শুয়ে ভাবতে থাক এই বিশাল আকাশ তোমার বুকে। আর তারাগুলোকে ইচ্ছে মত সাজিয়ে নিতে পার। তোমার এতকিছু থাকতে কষ্ট কীসের? তপুও এই ভাবনাতে শুয়ে পড়ল। কিন্তু কষ্ট কতটা কমল তপুর? তা দেখা যায় ভোর রাতে গুমের ঔষধ খেয়ে বিছানায় চটপট করতে করতে। দুদিনের ক্লান্তিকর প্রশান্তির গুমের পর বিকেলে লেকের পাশে বেঞ্চে বসল তপু। এখানেও তপা চোখে ভাসে। ফাল্গুনের এক বিকেলে তপু তপার জন্য অপেক্ষা করতেছে। তপা একটু পর এল, এসে দেখে তপু একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। তপা এসে পেছন থেকে তপুর কান টেনে ধরল।

-ও মা কানটা চিড়ে গেলতো।

-ঐ দিকে কি দেখ?

-সবাই দেখছেতো, প্লিস আগে কানটা ছাড়।

-এই ছাড়লাম এখন বল।

-বিশ্বাস কর আমি ঐ মেয়েকে দেখছি না। ওর চুলগুলো যে হাওয়ায় ভেসে যাচ্ছে আমি তাও দেখিনি। ও যে চোখে নীল কাজল দিয়েছে কিম্বা ওর কানের বড় বড় দুলগুলো যে নৃত্যের মত দুলছে আমি তাও দেখিনি।

-তুমি কিছুই দেখনি? আচ্ছা আমি গেলাম।

পেছন পেছন তপু তপার পিছু নিল। ক্ষমা প্রার্থনা করতে করতে।

আজ তপার গায়ে হলুদ। অনেক আনন্দ করছে সবাই। কিন্তু তপার মন ভীষণ খারাপ বার বার তপুর কথা মনে হচ্ছে। গায়ে হলুদের শাড়িতে তপাকে খুব সুন্দর লাগছে। কপালে বড় একটা হলুদ টিপ, হলুদ শাড়ী গায়ে, হাতে স্বর্ণের মোটা চুড়ি। আজ আসলেই তপাকে হলুদ দেখাচ্ছে। তপার খালাতো বোন স্বর্ণা এসে তপাকে বলল, তপু ভাইয়াকে দেখলাম পার্কের পশ্চিম পাশের বট গাছের নিচে বসে আছে। তপা স্বর্ণাকে বলল, তুই সকালে তপুকে বলবি সে যেন আমার সাথে আগামীকাল বিকেলে লেকের পাশে দেখা করে।

পরদিন বিকেলে তপু অপেক্ষায় বসে আছে তপার জন্য। তপুর ভেতর খুব উত্তেজনা কাজ করছে। অনেকদিন পর তার আপনজনের সাথে দেখা হচ্ছে। যদিও এই দেখা অন্য চোখের। তারপরও পুরনো স্মৃতি আর ভালোলাগা কিম্বা বর্তমানের কষ্ট সব মিলিয়ে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করছে তপুর ভেতর। তপা এসে তপুর সামনে দাঁড়াল হাতে একটা ব্যাগ। তপার গায়ে ছিল সেই গায়ে হলুদের সাজ। তপু নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে আছে তপার দিকে। যেন সে কত জনম পর তপাকে দেখছে। তপা বলল, এত রোগা হয়ে গেছ কেন? সেইভ না করে দেবদাস হয়ে গেলে। কি করে ভাবলে আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো, অন্যের হয়ে যাব? চল। তপু মগ্ন দৃষ্টিতে অবাক হয়ে বলল, কোথায়?

-কোথায় যাব যান না? নাও ব্যাগটা হাতে নিয়ে আমার সাথে। গাধা কোথাকার

-ঠিক আছে গাদার মনিব যেখানে গাদাকে নিয়ে যাবে সে যাবে।

এরপর দুজন পালানর জন্য ষ্টেশানের দিকে হাঁটল।





সবিনয় নিবেদন এই যে, স্যার যদি আপনার ভালো লাগে তবে আপনার জগতে ইহার প্রান দিবেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.