নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ

ভাবতে থাকি

আমি বাংলাদেশের

ভাবতে থাকুন

আমি বাংলাদেশের › বিস্তারিত পোস্টঃ

চির-দুঃখিনীর ঘর-সংসার

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:৫৪

আজ তিনি একজন বৃদ্ধা। একসময় তিনি এমন শক্তিহীন ছিলেন না। নিজের হাতে গড়েছেন স্বামীর সংসার। বিয়ের আগে ছিলেন পিতার সংসারে। যখন স্বামীর সংসারে এসেছেন কিছু দিনের জন্য হলেও ভেবেছেন এই বুঝি পেলাম নিজের সংসার। কারণটা অন্যখানে, কোন সম্পদ নিয়ে কিম্বা থাকার বাসস্থান নিয়ে তিনি ভাবেন নি । তবু রাত-দিন লড়েছেন একটা সংসার গড়তে, লড়াই করেছেন সম্পদ বাড়াতে, লড়াই করেছেন অভাব দূর করতে, লড়াই করেছেন ক্ষুদা নিবারনে। অন্যসব মৌলিক চাহিদা তো আছেই। তবুও টিকে ছিলেন এত বৈসমের মুখোমুখি হয়ে। এত লড়াই কেন কারন উনি ভাবতে শিখেছেন উনার সংসার হয়েছে। অধিকার আদায় করেছেন শত বঞ্চনা সহ্য করে। যদিও সংসারে ছিল না কোন চাবি তবু ভেবেছেন এই সত্য যে উনি গৃহিণী। উনার সন্তানগুলোকে দেখে এই বিশ্বাস উনার। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে আরও গতি নিয়ে লড়েছেন, রাত-দিন লড়েছেন সন্তানদের ছেয়ে। ভীষণ অভাব তবু স্বপ্ন দেখেছেন, যদি বলি অলিক তিনি ভাবতেন না। সেই অভাবের মধ্যে দর্শন এই, বড় ছেলেটা কিছুদিন পর চাকরি করবে আর সংসারের সব দুঃখ ভুলিয়ে দেবেন। তাই ভাত খাওয়াতেন বড় ছেলেকে আর মাড় (পানি মিশ্রিত) খেতেন নিজে আর অন্যদের। অন্য সন্তানদের সান্ত্বনা দিতেন এই বলে, তোর ভাই তাড়াতাড়ি বড় হয়ে চাকরি করবে আর তখন তোদের জন্য ভাত আনবে। বাড়ির কেউ যেন অন্য ছোট ছেলেটির দিকে নজর দিয়েছে তাই আর বের করবে না শিশুটিকে ঘরের বাহিরে কিংবা নিজের আঁচড়ের। সব নজর বন্ধি করেছেন নিজে একাই। ছেলেটির যেন কষ্ট না হয় সে জন্য মায়ের আশীর্বাদের কমতি ছিল না। নামাজ পড়ে আল্লার কাছে সব সন্তানদের জন্য নানান দোয়া করতেন। মাওলানার কাছ থেকে পানি পড়া তেল পড়া কিছুই বাদ ছিল না।

আজ ঘর ভরেছে তার ৬ছেলে মেয়ে নিয়ে। সব মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে নাতি-নাতনি পেয়েছে। বড় ছেলের চাকরি হল। সংসারের কর্তা অকেজো হয়ে গেল। বৃদ্ধা তার দেখাশুনার ভার নিল। উপর মায়ের হল টা কি আজও কেন চিন্তায় অস্থির। সবার গতি হল কিন্তু ছোট ছেলেটি কিছু এখনও হচ্ছে না। চেষ্টা তো আর কম হল না তবুও ভাগ্য ফিরছে না কেন? মায়ের কান্না কিংবা চিন্তা কমছে না তার জন্য। তাই মায়ের আকুতিতে হল সাহায্য ছেলেটির জন্য, তার বিয়ে দিলেন। বেকার ছেলের বিয়ে হল মা আজও চিন্তিত। একসময় ছেলের চাকরি হল কিন্তু ছেলের কাছে মা নেই। ছেলের বউ আজ সংসারের মালিক। সংসার হয়ে গেল হাল ছাড়া। মায়ের সাথে সন্তানদের ঝামেলা আর ছেলের বউয়ের সাথে বৃদ্ধার সন্তানদের সম্পর্ক মধুর। এক সময় সেই মধু শেষ। বার বার বৃদ্ধা অসুস্থ হয়ে পড়ছে, তাকে কেউ দেখছে না। মেয়েদেরও জানানো হচ্ছে না তার অসুস্থতার কথা। এবার বৃদ্ধা ভীষণ অসুস্থ চিকিৎসা নেই, খাবের নেই। বাধ্য হয়ে সবাইকে জানাল বৃদ্ধার কথা। সবাই জানে এবার তাদের মা মারা যাবে। কিন্তু মরচে না। বাড়ির লোক ও মেয়েরা চিকিৎসার জন্য এগিয়ে এলো। তার ছেলে ও তার বউ কাউকে এগুতে দিচ্ছে না। একসময় প্রচার করে দিল তার বড় ছেলে এসে মায়ের চিকিৎসা করাবে। বড় ছেলে এলো আর বলল, কিডারে কি হইছে? সবাই ডাক্তারের কথা বলল, আর সে বলল, ডাক্তার চিকিৎসা জানেনা। উনি বৃদ্ধ হয়েছেন মারা যাবে। অযথা মাকে কষ্ট দিয়ে লাভ নেই। কেউ আর ভয়ে তাদের চিকিৎসার কথা বলছে না। তারা সবাইকে হুসিয়ার করে বলল কেউ যেন এতে নাক না গলায়। মেয়েরাও চিকিৎসার কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না। এবার মেয়েদের মধ্যে ভাগ, দুই মেয়ে তার ছেলেদের যুক্তি মানছে অন্য দু জন চিকিৎসার দাবি করে চলছেন। এরপর সপ্তাহ পার, বিনা চিকিৎসা। নেই খাবার। এর মধ্যেও ছেলে ছেলে বউ কিংবা ১টা মেয়ে বেশ মজাই আছে। হাসি তামাশা তাদের চলছে। এত অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যেও জ্ঞান আছে বৃদ্ধার কথা বলছে। শেষে বৃদ্ধা নিজেই বলছে আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যা। পরে এক মেয়ে এগিয়ে এলো কিন্তু তাকে চিকিৎসা করাতে দেবে না তার ছেলেরা। তার টাকা ফিরিয়ে দিয়ে ছোট ছেলের বউ তার স্বামী ও তার বড় ভাইকে বলছে আপনাদের মায়ের চিকিৎসা আপনারা করান বাহিরের কারো টাকা নিবেন কেন? পরে মিটিং হল তারা ডাক্তার দেখাবে। অবশেষ লজ্জা আর সমালোচনার জন্যে ডাক্তার দেখায়। সেই ডাক্তারের কাছে নেয়া আর কত নাটক কত বকাঝকা তাদের যারা বৃদ্ধার পক্ষ নিয়ে কথা বলল। কয়েক দিন বাদে বৃদ্ধা সুস্থ আর যখন তার কাছ থেকে সবাই চলে গেছে তখন শুরু হয়েছে তার উপর অমানবিক অত্যাচার। খাবার দিচ্ছেনা ঔষধ দুরের কথা। আবার বৃদ্ধা অসুস্থ এবার আর তার পাশে কেউ নেই। ডাক্তার ঔষধ চিকিৎসা খাবার সেবা ছাড়াই সপ্তাহখানেক পর মৃত্যুর পরাজয় নিশ্চিত করে বেছে আসলেন বৃদ্ধা। কিন্তু পরাজিত করতে পারেন নি পশুসমতুল্য ছেলেদের। পরে তার মেয়ে সিদ্ধান্ত নিল প্রতিদিন তাকে খাবার নিয়ে যাবে। এরপর ছেলের বউ ও তার সাঙ্গুরা শুরু করল বাজে পথ ধরতে। তারা বলছে তুই খাবার দেস কিন্তু পায়খানা সাফ করে যেতে পারিস না পস্রাব আসে কেন? সত্যি বলতে এসব মিথ্যে ছিল। বৃদ্ধার জ্ঞান ছিল উনি নিজেই নিজের সব করতেন আর এই মিথ্যে ছিল তাদের নাটক। এরপর বৃদ্ধাকে নানান ভাবে অবহেলা আর নাজেহাল করতে লাগল তার ছেলের বউ। তাকে কোন কাপড় পড়তে দিতেন না, এভাবেই অপমান। আর তার ছেলে সব দেখে চুপচার পক্ষান্তরে বৃদ্ধার পক্ষে কেউ আসলে তাকে ধমক দেয়। আজও বৃদ্ধার বেছে আছেন। চিকিৎসার অভাবে নয়, খাদ্যের অভাবে নয়, বস্ত্র কিংবা বাসস্থানের অভাবে নয়। উনার সংসার ফিরে পেতে নয়। যাদের মুখের দিকে তাকিয়ে উনি স্বপ্ন দেখেছেন তার তার কাছ থেকে চলে গিয়ে উনি এখন এক শূন্য। তার ছেলে গেছে আর কি তাকে ফিরে পেতে হবে!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.