নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সিনেমা নির্মাণ কঠিন হলেও সমালোচনা কিন্তু সহজ
আমাদের দেশের সিনেমার হারানো গৌরব যে হেরে গেছে তা আর ফিরে আসেনি। এর পেছনে কয়েকদিন আগেও যুক্তি ছিল, আমাদের সিনেমা আধুনিক প্রযুক্তিগত দিক থেকে পিছিয়ে। কিন্তু এখন বেশ যুক্ত হল প্রযুক্তি আর সিনেমার শিল্পীদের বিশেষ অনুরোধে ভালো সিনেমা দেখার আগ্রহে কিছু দর্শক ছুটে গেল সিনেমা হলে। দর্শক হতাশ হল। যদি সিনেমার কারিঘরেরা বলে আমরা দর্শকদের হলে আনতে পেরেছি আর আমরা সফল। আসলে তা নয় আজ দর্শককে ধোঁকা দিলেন কিন্তু আগামীতে ভালো সিনেমার দর্শকও পাবেন না। আর তার কারন আপনাদের বোকামি। আর দর্শক যদি বিনোদনের জন্য ক্ষেত্র খুঁজে পায় তবে আর সিনেমা কেন? এবার সিনেমা দেখে হল থেকে ফিরে এসে সমালোচনা করে বলল এ সিনেমায় তামিল/ হিন্দি ছবির নকল। অন্য কেউ এসে বলল এই সিনেমায় সংলাপগুলো ভালো হয়নি। কেউ সমালোচনা করে বলল এই সিনেমায় অভিনেতা/ অভিনেত্রীদের বাচন ভঙ্গি ভালো নয় কিম্বা তাদের ইমোশান যুক্তিযুক্ত এবং কাঙ্খিত মানের নয়। এসব সমালোচনার জবাব যদি সিনেমার মাধ্যমে পরিচালক, অভিনেতা, অভিনেত্রী, চিত্রনাট্য এবং সংলাপ লেখক যদি দিতে পারে তবে এই দর্শকগুলো নিয়মিত হলমুখি হবে, না হয় না।
জবাব দিন নিজ নিজ ডিপার্টমেন্ট থেকে। সবার আলাদা আলাদা ব্যাখ্যা আছে। কিন্তু আমার যুক্তি কি? দেখুন দেশে লেখক আছে, তবে সংলার কিংবা চিত্রনাট্যে অভাব থাকে কেন?
সিনেমা নকল করে বানান, তেমন অপরাধ কি? এই নকল বলিউডও করে তাদের সমালোচনা করেন না কেন?। সুতরাং নকল করার সমালোচনার জবাব অতি সহজ। সিনেমার গল্প নকল হবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি কারো সিনেমা নকল করে নিজের ভাষায় একটা নির্মাণ করলেন তবে এটা আর ওটার মধ্যে বৈচিত্র কি? ভাষা রূপান্তর করে খাঁটি জিনিস দেখলেইতো হয়। তাতে আপনাদের নকল সিনেমার কাজ কি? আপনে যাদের( দর্শক) জন্য সিনেমা বানাবেন তাদের উপযোগী করলে হয়তো এই সমালোচনা শুনতে হত না, বলিউডের নকল সিনেমার মত। নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা নিজস্ব মতামত নিজস্ব সংস্কৃতি নিজস্ব ইতিহাস নিজেদের ধর্ম চর্চা নিজস্ব পোশাক-পরিচ্ছেদ নিজস্ব আনন্দ-দুঃখ নিজস্ব আবাস-ভূমি নিজেদের গাছ-পালা নিজেদের বাড়ী নিজস্ব সমস্যা নিজেদের বাবা-মায়ের বকা আমাদের নদী-পাহাড় আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এসব থাকতে হবে আপনার সিনেমায় তবেই তা নিজেদের মানে আমাদের মনে হবে আর আমাদের কথা প্রকাশ করবে তখন আমরা দেখতে বাধ্য হব। ধরুন একটা গল্প, বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে এটি বিভিন্ন রকম চিত্রায়ন হতে পারে। যেমন গল্পটিকে নিয়ে যান আপনার বাড়ী এখানে যেমন চিত্রায়ন হবে নদীর পাড়ে তেমন চিত্রায়ন না হয়ে ভিন্ন মাত্রা পাবে। আবার নির্মাতার চিন্তা ভাবনা কিম্বা পরিবর্তনে সেটা পাবে আরেকটা ভিন্ন মাত্রা। যদি বলি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লক্ষ সিনেমা নির্মাণ করলেও গল্পের অভাব পড়বে না। ধরি মুক্তিযুদ্ধকে ৫ অংকের একটা সংখ্যায় লেখা হল যা [ ১২৩৪৫] । এবার একে বিভিন্ন ভাবে সাজান যায়। যেমনঃ [১২৩৫৪], [১২৪৩৫], [৫৪৩২১]...... এভাবে ১২০ ভাবে একে সাজান যায়। মুক্তিযুদ্ধের একটা অপারেশন বিবেচনা করি যা একেকজন একেক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করবে। অবশ্যই দুজনের বিবেচনা এক হবে না। এভাবে অসংখ্য অপারেশন আছে। আবার মুক্তিযুদ্ধের উপর সামগ্রিক মূল্যায়ন আছে। আবার ধ্বংস, বাঁচার প্রয়াস, জনসাধারনের উপলব্ধি ও ঘটনা ফলাফল। আমার মনে হয় পুরো একটা সিনেমা হওয়া দরকার ২৫শে মার্চ কালো রাত নিয়ে। হতে পারে শুধু ১৪ই ডিসেম্বারের বুদ্ধিজীবী হত্যা নিয়ে কিম্বা ১৬ই ডিসেম্বারের বাঙালির বিজয়ের আবেগ নিয়ে। প্রতিটি বীরের বীরত্ব নিয়ে আলাদা আলাদা সিনেমা হওয়া দরকার। আমাদের সিনেমায় কাল্পনিক নায়ক কেন আনতে যাব? এই দেশেই যখন বীরত্বে ভরপুর নায়ক অসংখ্য তখন কাল্পনিক গল্পের নায়ক কি করবে। আমাদের একজন বীর যে পেট্রোলে আগুন জ্বালিয়ে চারপাশ প্রদক্ষিণ করত আর নিজের তেজ গুলো অনুভব করত কিম্বা সেটাকে অসীমতায় পৌঁছাত সে বীর নিয়ে কোন গল্প হয়নি, সিনেমা হয়নি। কারন আমাদের ইতিহাসের প্রতি সম্মান নেই। আর নিজেদের মঘজ আজও পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বের হতে পারেনি তাই মঘজের চিন্তা-ভাবনা নকল।
অভিনেতা/ অভিনেত্রীদের অভিনয় করতে হবে না আবার শিখতে হবে? ইরানি সিনেমায় তাকালে বুঝা যায় তারা চলমান সমস্যা যা সিনেমায় তুলে আনে তা ঐ মানুষগুলো দিয়েই সিনেমার পর্দায় উপস্থাপন করে। এর বাহিরেও পেশাদার অভিনেতা/ অভিনেত্রী থাকে। এবার আসা যাক এই কৃত্তিম মানুষ চরিত্র কেমন হওয়া উচিৎ। তাদের হওয়া উচিৎ মুখোশধারি। কার মুখোশ ধরবে? উত্তরঃ তাদের, যাদের নেতৃত্ব মানে যাদের উপস্থাপন অভিনেতা/ অভিনেত্রীরা করবে। ব্যাপারটা এত সহজ নয়। কারন একটা সন্ত্রাস সারা জীবন পরিশ্রম করে সন্ত্রাসী হয় তার মুখোশ কেউ অল্প দিনে ধারণ করবে। এটা সম্ভব হওয়া উচিৎ নয়। কারন এটা নীতি ও প্রকৃতি বিরোধী। প্রকৃতির বিপক্ষে আমাদের লড়াই প্রায় অসম্ভব। তবে মানুষের কাল্পনিক জীবনে অসম্ভব কিছুই নেই। তবে সেটা বাস্তবের সাথে মিলতে হবে। এই মুখোশ ধারন যে সব মানুষের পক্ষে অতি সহজ হয় তারা অনেক শ্রম করে সামলে নেয় ব্যাপারটা। মুখাভিনয়, আমি মনে করি একটা শ্রেষ্ঠ শিল্প যা মুখোশ ধারনে অনেক সহায়তা করে। তাই যারা অভিনয় করতে আগ্রহী তাদের উচিৎ আগে মুখাভিনয় ভালোভাবে আয়ত্ত করা। তবেই কাঙ্খিত সমালোচনার জবাব দিতে পারবে সিনেমার কারিঘরেরা। তবেই তারা হলে গিয়ে সিনেমা দেখবে নিয়মিত যারা দর্শক নিয়মিত।
ভাবছেন এর মাধ্যমে সব মানুষ দর্শক হয়ে হলে ফিরে সিনেমা দেখবে? না, তারাই দেখবে যাদের উপলব্ধি অনুযায়ী আপনে সিনেমা নির্মাণ করবেন। অর্থাৎ যাদের কথা ভাবনা আপনার সিনেমায় উপস্থাপিত হবে। যেমন একজন বিজ্ঞানি/ ডাক্তার/ শিক্ষক অথবা অন্য কোন পেশাজীবী, সে কি আপনার সিনেমা দেখবে? তার আগে বলে নি। সে কেন দেখবে? যদি তার চিন্তা ভাবনা আপনে উপস্থাপন করতে পারেন, তবে হয়ত সে দেখবে। সে অনেক ব্যাস্থ নাও দেখতে পারে। কিন্তু তাতে সমস্যা নেই অন্যরা প্রায় সবাই দেখবে নিজেকে বিনোদন দেয়ার লক্ষ্যে হোক আর কিছুক্ষণের জন্য এডভেঞ্চার উপভোগ করতে। অন্তত তাতে সমালোচনা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
মানুষের চিন্তা-ভাবনা কোন নির্দিষ্ট বিষয় বা ভাবকে ঘিরে পরিবর্তন হয় না। নিজের সাথে নিজের, নিজের সাথে পরিবারের, নিজের সাথে বন্ধুদের, নিজের সাথে চারপাশের, নিজের সাথে নিজের স্বপ্ন, প্রাপ্তি, অক্ষমতা কিম্বা হতাশা, নিজের সাথে নিজের অথবা পরিবার অথবা বন্ধুদের অথবা দেশ কিম্বা বিশ্ব ভাবনায়, আরও আছে চলমান বিশ্ব প্রতিযোগিতা, প্রযুক্তি চিনে নেয়া আর মানিয়ে চলা সঙ্গে আছে এর সাথে নিজের ব্যবধান। এভাবে অসংখ্য অসংখ্য ব্যাপার আছে যেগুলো একেকটার সাথে একেকটা আপেক্ষিক। তাহলে সবার চিন্তার প্রতিফলন ঘটিয়ে কি সম্ভব সিনেমা নির্মাণ করা? তাই যতদিন মানুষ বোকা থাকবে ততদিন সিনেমা ব্যাবসা ভালো হবে। তবে সমস্যা নেই বোকা লোকের অভাব কখনও কমবে না। আর বেশি কিছু ভাবতে গেলে কিছুই হবে না। শুধু সমালোচনা করাতেই আবদ্ধ থাকতে হবে। মানে যারা কিছু পারে না তারা সমালোচনা হাতিয়ার ভালো ব্যাবহার করতে পারে।
©somewhere in net ltd.