![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কাজী সায়েমুজ্জামান: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবির সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, বঙ্গবন্ধু আমাকে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ কি জিনিস তা তোমাদের থেকে আমি ভালো জানি। এই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করতে পারলে হবেনা। আমিতো শুধু আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারিনা। এজন্যই বাকশাল করে সবদল নিষিদ্ধ করলাম। মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের দুজন বন্ধুকে তার সরকার গুলি করে হত্যা করায় আমি বঙ্গবন্ধুর ডাকসুর আজীবন সদস্য পদ বাতিল করেছিলাম। বলেছিলাম, যার হাত সন্তানের রক্তে রঞ্জিত তিনি পিতৃত্ত্বের দাবী করতে পারেন না। দেশবাসী কেউ তাকে জাতির পিতা বলবেন না। আমি জনসমাবেশে এ কথা মুখে উচ্চারণ করলেও সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধুর আজীবন সদস্যপদের কাগজটি ছিড়ে ফেলেছিলেন। তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বামদের যে অংশটি চীনপন্থী বলে পরিচিত ছিল তারাও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। বলেছে, এটি দুই কুকুরের ( মার্কিন ও সোভিয়েট) লড়াই। একে প্রতিরোধ করা উচিত।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সম্প্রতি রাজধানীর পল্টনস্থ সিপিবির অফিসে বসে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এ প্রতিবেদককে একথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, পরবর্তীতে বাকশালে যোগ দেয়া আমাদের জন্য ভুল ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিব বাহিনীর সঙ্গে এফএফ বা ফ্রিডম ফাইটার ও আমাদের বামপন্থীদের গড়া গেরিলা বাহিনীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল। মুজিব বাহিনী ভেবেছিলো নেতৃত্ব বুঝি হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বামপন্থী দাবীদার যারা সরকারে গেছেন তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। কারণ এখনকার আওয়ামী লীগ মধ্য ডানপন্থী দলে পরিণত হয়েছে। তাদের সঙ্গে আমরা এ কারণেই জোটবদ্ধ হতে পারিনা। তার পুরো সাক্ষাতকারটি নিচে উপস্থাপন করা হলো।
কাজী সায়েমুজ্জামান: মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সিপিবি কিভাবে সংজ্ঞায়িত করে ?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: কেউ কেউ বলার চেষ্টা করে কেবল নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের পর্বটাই হলো মুক্তিযুদ্ধ। আসলে এটা একটা ভ্রান্তি। মুক্তিযুদ্ধ একটি দীর্ঘকালীন প্রক্রিয়া। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে এ দেশের মানুষের সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, রক্তদানের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া অগ্রসর হয়ে একসময় শীর্ষ বিন্দুতে গিয়ে পৌছে। এসময় যে সশস্ত্র আন্দোলন হয় তাই মুক্তিযুদ্ধ। এজন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে খুঁজতে গেলে কেবল নয় মাসের মধ্যে তা খুঁজে পাবোনা। এ সংগ্রামের বৈশিষ্ট, উপাদানও চরিত্রের মধ্য দিয়ে এ চেতনাকে খুজে পাওয়া যাবে। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতেই ধর্মভিত্তিক পাকিস্থান রাষ্ট্রের গোড়া পত্তন হয় । আর দ্বিজাতিত্ত্ব যে ভুল তা বুঝে উঠতে এ দেশের মানুষের সময় লাগেনি। যদিও কমিউনিস্ট ও বামপন্থিরা ১৯৪৮ সালে শ্লোগান তুলেছিল যে “ইয়ে আজাদী ভুখা হ্যায়, লাখো মানুষ ভুখা হ্যায়।” আমরা বলেছিলাম, দুটি অংশের মধ্যে বহু ব্যবধান নিয়ে ধর্মভিত্তিক কৃত্রিম রাষ্ট্র বেশি দিন টিকতে পারেনা। মুসলিম লীগের অত্যাচার নিপীড়ন সেসময় দেশবাসীর ওপর চেপে বসেছিল। ওই সময় জেলখানা গুলো ভর্তি করা হয় কমিউনিস্ট নেতা কর্মী দিয়ে। ১৯৭৫ সালের আগেও একবার জেল হত্যা হয়েছিল। প্রথম জেল হত্যাকান্ড হয়েছিল ১৯৫০ সালে। রাজশাহীতে সাত জনবন্দীকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এত অত্যাচার সত্ত্বেও কমিউনিস্টরা ওই সময় গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক অধিকারের আওয়াজকে তুলে ধরে। স্বৈরাচারী প্রবণতার বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায়। আর বাঙালি স্বাধিকারের প্রশ্নে সোচ্চার হয়। ওই সময় বাঙালি মধ্যবিত্তের স্বার্থ রক্ষাকারী অংশটিরও দ্রুত মোহভংগ ঘটে। ১৯৪৮ সালের পরপরই তাদের উপলব্ধি ঘটে যে পাকিস্থানী আদর্শ বাঙালি মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা করছেনা। এ উপলব্ধি থেকেই তারা মুসলিম আওয়ামী লীগ ভেংগে মুসলিম আওয়ামী লীগ গঠন করে। তারা বুঝে যান পাকিস্থানের ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতি তত্ত্বের নীতি বাঙালি স্বার্থকে ক্ষুন্ন করছে। সেই সময় বাংলা ভাষা নিয়ে যে সংগ্রাম শুরু হয় ওই সংগ্রামই স্বাধীকারের জায়গাটি সামনে নিয়ে আসে। এর সঙ্গে এ উপলব্ধিও আসতে শুরু করে যে আমরা তো স্বাধীনতা চেয়েছিলাম বৃটিশ উপনিবেশের হাত থেকে। কিন্তু বৃটিশরা সরাসরিভাবে শাসন ছেড়ে দিলেও অর্থনৈতিকভাবে শোষণ অব্যাহত রেখেছে। এর সঙ্গে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদও যুক্ত হয়েছে। এরা নানা সামরিক চুক্তি, অর্থনৈতিক কলাকৌশলের মাধ্যমে সার্বভৌমত্ব, স্বাধীন ইচ্ছা ও বিকাশকে খর্ব করে রেখেছে। এর ফলে গণতন্ত্রের দাবী ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আওয়াজটা জোরদার হতে থাকে। বাঙালি জাতির অধিকারের প্রশ্নটাও জোরদার হতে থাকে। এর মধ্যে কৃষক, শ্রমিকরা তাদের দাবীতে সংগ্রাম করতে থাকে। অর্থনীতির চরিত্র নিয়েও জণগন প্রশ্ন তোলে। তারা দাবী করে, ব্যাংক বীমা বড় শিল্প জাতীয়করণ করতে হবে। দেশকে সমাজতন্ত্রের দিকে নিতে হবে। শ্রেণী শোষনের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। এর ধারাবাহিকতায় গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র সব আন্দোলনের মর্মবাণীতে পরিগণিত হয়। আর মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে সেটা পরিপক্কতা লাভ করে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে আমরা যে সংবিধান রচনা করি সেখানে মুজিবনগরে ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণা ও চারটি মুলনীতি যুক্ত হয়। সুতরাং এ সমস্ত আন্দোলনের নির্যাসকেই আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে চাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা একটি শ্লোগান, বায়ুবীয় বা বিমূর্ত কোন বিষয় নয়। ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূলনীতির ভেতরেই মূর্ত হয়ে রয়েছে।
সায়েম: অপনি কি মনে করেন মুক্তিযুদ্ধের চেতানা বাস্তবায়ন হয়েছে?
মুজাহিদুল ইসলাম: আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর রাষ্ট্রের মূল চরিত্রকে ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উপাদান বাদ দিয়ে পাকিস্থানী ধারার চেতনার ধারা যুক্ত করা হয়। ’৭৫ পরবর্তী এ ধারাটির সূচনা করেছিলেন মোশতাক। তা অব্যাহত রেখেছে জিয়াউর রহমান, এরশাদ। এদের দেয়া ধারা নীতি অনুযায়ী এখন দেশ চলছে। এধারায় খালেদা জিয়া দুবার রাজত্ব করেছেন। শেখ হাসিনাও দুবার করতে যাচ্ছেন। খালেদা জিয়ার কথা বাদ দিলাম। কিন্তু শেখ হাসিনা কেন এখনো মোশতাক ও জিয়ার ধারায় দেশকে রেখে দিয়েছেন- সেটা একটি বড় প্রশ্ন।
সায়েম: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বাস্তবায়নের পথ কি?
মুজাহিদুল ইসলাম: এখান থেকে ফিরে আসার পথ আমাদের ৭৫ এর পরবর্তী পট পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশের গতি যে একটি ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়া হলো তাকে ফের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ধারায় নিয়ে যেতে হবে। যেহেতু সংসদে তিন চতুর্থাংশ আওয়ামী লীগ ও চৌদ্দ দলের রয়েছে সেহেতু এখনই দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে নিতে হবে। এটা এখন খুবই সহজ কাজ। তবে উচ্চ আদালতে পঞ্চম সংশোধনি বাতিলের বিষয়টি ঝুলে রয়েছে। আমার বক্তব্য হচ্ছে কেবল আইনের ওপর নির্ভর না করে আওয়ামী লীগের উচিত হবে এটা নিয়ে জণগণের ভেতর ব্যাপক প্রচারণা ও শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলা । ৭২ এর সংবিধান পূণ:স্থাপন হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফেরার পথে অন্যতম প্রধান কাজ। এরপরও অনেক কাজ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ধারায় সুশাসন আনতে হবে।
সায়েম: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বামপন্থী দলগুলো- যেমন সিপিবি, ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের ভূমিকা কি ছিল?
মুজাহিদুল ইসলাম: মুক্তিযুদ্ধে সিপিবি, ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের তিনদিক থেকে ভূমিকা রয়েছে। রাজনৈতিক উপাদান সৃৃষ্টির পেছনে এদের বিশাল অবদান রয়েছে। কতগুলো ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছে। যেমন গণতন্ত্রের প্রশ্ন প্রথম সংলাপের সূচনা করেছে। অসাম্প্রদায়িকতা শব্দটিও প্রথম উচ্চারণ করেছিল কমিউনিস্টরা। বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলন একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন না হয়ে একটি সুশৃংখল জাতীয় মুক্তির আন্দোলনে পরিণত করার কৃতিত্বও এদের। লাহোর বৈঠকে কি হয়েছিল? সেখানে বলা হয়েছেল মুসলমানদের জন্য একাধিক রাষ্ট্র হবে। পাকিস্থানের নেতারা স্টেটস বা রাষ্ট্রপুঞ্জ শব্দটির বহুবচন এস কেটে একবচন করে দিয়েছিলো। যারা এ চিন্তা করতেন তারা ভাবতের বাঙালি মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র বাংলাস্থান করা হবে। সেই আন্দোলন হতো পাকিস্থান ভেংগে একই কায়দার আরেকটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। আমরা সেপথে যাইনি। আমরা পাকিস্থানের দর্শনকে নাকচ করে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি জাতি রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে আন্দোলন করেছি। এ সংগ্রামটিই মুক্তিযুদ্ধ নামে পরিচিত হয়। দুনিয়াকে গ্রাস করা বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের ভেতর পাকিস্থান। আর পাকিস্থান আবার পূর্ব বাংলার ওপর অতিরিক্ত শোষণ চালায়। আমরা এ শোষনের জিঞ্জির ভাংগতে চাই মানে হচ্ছে পাকিস্থানী উপনিবেশ ও বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের শোষণকে ভাংগতে চাই। আমরা দেশকে মুক্ত করতে চাই। এটা হলো জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম। এক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের বিশাল অবদান ছিল। সমাজতন্ত্রের চিন্তা চেতনাও নিয়ে এসেছে কমিউনিস্টরা। দ্বিতীয়ত হলো- সরাসরি সংগ্রাম। আমরা মার্চ মাস থেকে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হওয়ার আগে ১৯৬৮ সালেই বলেছি যে, পুরো পাকিস্থানে বিপ্লব করা যাবেনা। বাংলাদেশ স্বাধীন করে বিপ্লব করতে হবে। ফেব্র“য়ারী মাসেই ছাত্র ইউনিয়ন ঘোষণা করে ভোটের রায় যদি সমস্ত পাকিস্তানের ভিত্তিতে কার্যকর করতে না দাও তাহলে দেশকে স্বাধীন করে তা কার্যকর করবো। আমাদের সকল ডকুমেন্টেও বিচ্ছিন্ন হওয়া সহ আত্ম নিয়ন্ত্রনের দাবী অন্তর্ভক্ত করা হয়। ১ মার্চ অধিবেশন বাতিল করা হলে আমরা সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতিতে নেমে পড়ি। কিভাবে ককটেল, উচ্চ বিষ্ফোরক বানাতে হবে, সেনানিবাস থেকে যাতে সৈন্য ট্যাংক বের হতে না পারে তার প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করি। ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ছাত্র ইউনিয়ন সশস্ত্র প্যারেড শুরু করে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই আমরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলাম। পরে যুদ্ধ শুরু হলে আমাদের নেতা কর্মীরা প্রশিক্ষণ শেষে সেক্টর কমান্ডারদের অধীনে এফএফ বাহিনী বা ফ্রিডম ফাইটার বাহিনীতে যোগ দেন। মেরিন কমান্ডো বাহিনীতে ছাত্র ইউনিয়নের অবদান ব্যাপক। এছাড়াও কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ নেতৃত্বে বিশেষ গেরিলা বাহিনী গড়ে ওঠে। আমাদের ৩৫ হাজার গেরিলা যোদ্ধা ছিল। তারা বিভিন্ন অপারেশনে সম্মুখ যুদ্ধে প্রাণও দেন। নভেম্বর মাসেই আমরা দীর্ঘ মেয়াদী গেরিলা যুদ্ধের কৌশল বদলে সরাসরি আক্রমনের কৌশল গ্রহন করি। ঢাকা কে কিভাবে পতন করা যায় সেই চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। আমিও ওই আক্রমনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম।
সায়েম: সাম্প্রতিককালে ল্য করা যাচ্ছে- মুক্তিযুদ্ধে আপনাদের অবদানকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছেনা- বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন ?
মুজাহিদুল ইসলাম: ইতিহাস বিকৃতির খেলা বহুদিন ধরেই চলছে। এমনকি বহুদিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের অবদান ও বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অস্বীকার করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের অংশ গ্রহণ ও নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে এটা সত্যের একটি অংশ। আর আংশিকভাবে সত্য উত্থাপন করাটাও ইইতহাসের একটি বিকৃতি। কমিউনিস্ট ও বামপন্থিরা মুক্তিযুদ্ধে যে অসামান্য ও নির্ধারণী অবদান রেখেছে তা ইতিহাসে সঠিকভাবে উপস্থাপিত না হলে তা ইতিহাস বিকৃতি হবে। পাকিস্থান আমলে আওয়ামী লীগ ও কমিউনিস্ট পার্টি একসঙ্গে ২১ দফার ভিত্তিতে নির্বাচন করেছিলো। এর মধ্যে স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবী ছিলো। কিছু দিন পর আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাওয়ার্দীকে যখন পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী বানানো হলো তিনি হুকুম দিলেন এখন আর স্বায়ত্ত্ব শাসনের আন্দোলন চলবেনা। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের কথা ও বলা চলবেনা। তিনি বললেন, ৯৮ শতাংশ স্বায়ত্ত্বশাসন হয়ে গেছে। বাকী দুই শতাংশের মধ্যে এক শতাংশ পিআইএর সদর দপ্তর ঢাকা নিয়ে আসবো। বাকী এক শতাংশ আমি নিজে পূরণ করে দেবো। কিন্তু মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে একটি দল এর প্রতিবাদ করলেন। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন নিয়ে সোহরাওয়ার্দী একটি থিওরি দিলেন। তা হলো- জিরো প্লাস জিরো ইজ ইকুয়াল টু জিরো। ছোট ছোট দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে আমাদের লাভ নেই। তার চেয়ে বড় কোন দেশের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব করতে হবে। আমাদের এখন মার্কিনীদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে হবে। এ কথা বলে তিনি পাক মার্কিন সামরিক চুক্তিগুলো অনুমোদন করলেন। তিনি এভাবে সাম্রাজ্যবাদের কাছে আত্মসমার্পণ করলেন। সুতরাং স্বায়ত্ত্বশাসন ও সাম্রাজ্যবাদ এ দুটি প্রশ্নে যখন বিভেদ তৈরী হলো তখন ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ গঠিত হয়। সুতরাং আওয়ামী লীগ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে একরকম। আর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আরেক রকম। আওয়ামী লীগের মধ্যে নানান দোলাচল হয়েছে। দলটি একবার এই দিকে আরেক বার ওই দিকে গেছে। কিন্তু কমিউনিস্ট ও প্রগতিশীল বামপন্থীরা নীতির জায়গা থেকে কোনদিন বিপথগামী হয়নি। তবে ষাটের দশকে গিয়ে কমিউনিস্ট ও বাম আন্দোলনে একটি বিভক্তি তৈরী হয়। এটা সাধারণভাবে চীন রাশিয়া বিভেদ বলে পরিচিত। এতে সাধারণভাবে একটি ভ্রান্তি তৈরী হয়। জাতীয় অধিকারের দাবীটি পরিপক্ক হওয়ার সময় এ বিভেদের জন্য বামপন্থীরা দূর্বল হয়ে পড়ে। এর আগে জাতীয়তাবাদী ও বামপন্থীরা সমান সমান ছিলো। এতে জাতীয়তাবাদীরা নেতৃত্বে সামনের কাতারে চলে আসে। বামপন্থীরা কয়েকটি বিভ্রান্তির মধ্যেও পড়ে যায়। তারা বিতর্ক করে আইয়ুব খানের প্রতি দৃষ্টিভংগি কি হবে? কেউ আইয়ুব খানের প্রতি নরম দৃষ্টি নেয়ার চেষ্টা করে। বামদের মধ্যে যারা চীনপন্থী বলে পরিচিত তাদের মধ্যে এই ত্রুটিগুলো দেখা যায়। চীনপন্থীদের মধ্যে ছোট একটি উপদল মুক্তিযুদ্ধকে দুই কুকুরের লড়াই বলেও উপাধি দেয়। এজন্য আমাদের কোন পথে না গিয়ে এদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা উচিত। এদের মধ্যে আনোয়ার জাহিদের নাম উল্লেখ করা যায়। তিনি পাক বাহিনীর জন্য মুরগী সরবরাহের মতো ধিক্কারজনক কাজও নিয়েছিলেন। এই ভ্রান্তি ও বিভক্তির ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। নেতৃত্ব বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদীদের হাতে চলে যায়। এটি না হলে ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো। মুক্তিযুদ্ধে বামপন্থীদের মিলিত শক্তির ভারসাম্য সমানে সমানে থাকলে পরবর্তীতে সকল ভুল ত্রুটিগুলো আমরা এড়িয়ে যেতে পারতাম।
ইতিহাসের ব্যাখ্যায় বা উপস্থাপনায় কেউ কেউ বিকৃতি করতে পারে। ইতিহাস কোনদিন বিকৃতি হয়না। টাইম মেশিনে গিয়ে ইতিহাসের ঘটনা আবার নতুন করে করা সম্ভব নয়। কোন একসময় ইতিহাসের সত্যতা বের হয়ে যাবে। তবে আমাদের একটা দায়িত্ব রয়েছে যাতে ইতিহাসের ওই অধ্যায়গুলো হারিয়ে না যায়।
সায়েম: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক কেমন ছিল?
মুজাহিদুল ইসলাম: আমরা মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করেছি। আমাদের একটি উপদেশ ছিল সব দল মিলে একটি জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট গঠন করে আমাদের সংগ্রমটা পরিচালনা করা। আমাদের ওই পরামর্শ তারা শুনেনি। কিন্তু একটা সময়ে তারা একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করে সেখানে আওয়ামী লীগের বাইরে কমরেড মনি সিংহ, মোজাফফর আহমেদ, মাওলানা ভাসানী ও কংগ্রেসের মনোরঞ্জন ধরকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। সেটাও একধাপ অগ্রগতি হতো। কিন্তু আমরা খুশী হতাম সবাইকে নিয়ে জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট গঠিত হলে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও যৌথ কমান্ডের ভিত্তিতে যদি দেশ কিছু দিন পরিচালিত হতো। তারা আমাদের সাজেশন না শুনলেও আমরা মুল অবস্থানটা পরিবর্তন করিনি। আমরা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন সরকারের পে দৃঢ় অবস্থান নিয়েই আমাদের স্বাধীন তৎপরতাকে এগিয়ে নিয়ে গেছি। তবে বিএলএফ এর সঙ্গে এফএফ এর যেমন একটি দ্বন্দ্ব ছিলো। আমাদের গেরিলা বাহিনীর সঙ্গেও ছিল। বিএলএফ মুজিব বাহিনী হিসেবে পরিচিতি পায়। সেটা ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের তরুন ক্যাডারদের নিয়ে গঠন করা হয়। আগেই বলেছি সেক্টর কমান্ডারদের অধীনে এফএফ বাহিনী বলে আরেকটি বাহিনী ছিল। বিএলএফ এর সঙ্গে এফ এফ ও আমাদের গেরিলা বাহিনীর দ্বন্দ্ব শুরু হতে থাকে। তারা ভেবেছিলো আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ব ১৬ আনা থাকবে কিনা? না কি বামদের হাতে নেতৃত্ব চলে যাবে ? আওয়ামী লীগের মধ্যেও দ্বন্দ্ব ছিলো। তাজ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধেও একটি গ্রুপ বাজ করতে ছিলো। আমেরিকার তত্ত্বাবধানে মোশতাকের নেতৃত্বেও একটি গ্রুপ ছিলো, যারা স্বাধীনতা আন্দোলনকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে পাকিস্থানের সঙ্গে কনফেডারেশন গঠনের চেষ্টা করা হচ্ছিল। তবে অক্টোবর মাসের শেষ দিকে গিয়ে আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে এর ফয়সালা হয়। ছাত্র লীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন ওই সময় একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছিল। সমন্বিত যুদ্ধের জন্য একটি সমন্বয় সেলও গঠন করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে দ্বন্দ্ব বহুলাংশে নিরসন সম্ভব হয়। এ ব্যাপারেও কমিউনিস্টদের বড় অবদান ছিল।
সায়েম: মুক্তিযুদ্ধের পর ডাকসুর সহসভাপতি থাকাকালীন আপনি কি কারণে শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকসুর আজীবন সদস্যপদ বাতিল করেছিলেন কেন ?
মুজাহিদুল ইসলাম: সেটা একটি ঘটনা বটে। স্বাধীন দেশে নির্বাচনের মাধ্যমে আমিই প্রথম ডাকসুর ভিপি হই। আমরা তখন একটি বড় প্রচেষ্টা নেই যে, লাখো শহীদের রক্তে মুক্ত স্বদেশ, এসো দেশ গড়ি। এ শ্লোগান দিয়ে আমরা দেশ গড়ার সংগ্রাম শুরু করে দেই। অনেক কাজই আমরা ওই সময় করেছি। ছাত্রদের থাকার জায়গা ছিলনা। আমরা এফ রহমান হল তৈরীর উদ্যোগ নেই। ভিসিকে বললাম, হল বানিয়ে দেন। তিনি বলেন, অর্থ নেই। আমরা স্বেচ্ছা শ্রম দিয়ে অল্প টাকার মধ্যেই অনেকগুলো ব্যারাক তৈরী করেছিলাম। আমি নিজে মাথায় করে ইট টেনেচিলাম। সিলেবাসকে কিভাবে সুন্দর করা যায় তা নিয়ে কাজ করেছি। শিা বর্ষের প্রথম দিন সকল শিক্ষক শিক্ষার্থীরাএকত্রিত হবে। শিক্ষার্থীরা স্যারদের সালাম করবে। পরে এক সঙ্গে মিছিল করে শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিয়ে আসবে। ডিপার্টমেন্টে যারা প্রথম হবে তাদের ছবি টাঙ্গিয়ে দেয়ার রেওয়াজ চালু করার আবেদন করে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। আমরা ছাত্রলীগকে এতে সর্বাংশে পাইনি। তারা অনেক অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হয়ে যায়। এমনকি খুন খারাবিও শুরু করে। মহসিন হলের সামনে সাতজনকে লাইনে দাড় করিয়ে খুন করা হয়। এর মধ্যেই ৭৩ সালে ভিয়েতনামের ওপর মার্কিনরা যখন বোমা ফেলতে শুরু করে তখন আমরা অনেক কর্মসূচী নেই। ১ লা জানুয়ারী আমরা একটি মিছিল বের করি। আমরা মার্কিন দুতাবাসে গিয়ে একটি স্মারকলিপি দিতে এগিয়ে যাই। এ মিছিলটি এগিয়ে যেতে শুরু করলে বিনা উস্কানিতে মিছিলে গুলি করা হয়। এতে আমাদের মতিউল ইসলাম ও মীর্জা আব্দুল কাদের নামে দুজন বন্ধু মারা যান। আমি নিজেও ওই মিছিলে ছিলাম। ওই দিন অনেক সিনিয়র নেতাও আহত হন। আমরা এর প্রতিবাদ করি। এছাড়াও কতগুলো দাবী সরকারের কাছে তুলে ধরি। সরকার আমাদের দাবীর প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ না করে একটি প্রেস রিলিজ দিয়ে বলে ছাত্রদের উস্কানী দমনে গুলি করা হয়েছে । সেই প্রতিবাদে পল্টনে আমরা সমাবেশ আহবান করি। সেখানে আমি তীব্র প্রতিবাদ করে বলি যার হাত রক্তে রঞ্জিত সে পিতৃত্ত্বের দাবী করতে পারেনা। এজন্য কাল থেকে কেউ তাকে আর জাতির পিতা বলবেন না। এছাড়াও আসম আব্দুর রব ও আব্দুল কুদ্দুস মাখন তাকে ডাকসুর আজীবন যে সদস্য পদ দিয়েছিল তা আজ থেকে বাতিল ঘোষণা করা হলো। আমি মুখে উচ্চারণ করলেও সাধারণ সম্পাদক মাহামুদুজ্জামান আরো বেশি উত্তেজিত হয়ে ওই সদস্য পদের কাগজ ছিড়ে ফেলে। আমি তা ছিড়িনি। বঙ্গবন্ধু কোন অন্যায় করলে আমি তার প্রতিবাদ করেছি। ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলে আমি রাজপথে মিছিল করে প্রতিবাদ করেছি। আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ অনেকেই ছিলেন, অধিকাংশকেই তখন পাইনি। তারা মোশতাকের সঙ্গে ভিড়ে গেছিলেন। প্রথম প্রতিবাদ আমার নেতৃত্বেই হয়েছিল।
সায়েম: পরবর্তীতে আপনারা বাকশালে যোগ দিয়েছিলেন। এখন ওই যোগদানকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
মুজাহিদুল ইসলাম: আমরা অনেক আগেই মূল্যায়ন করেছি যে, ওই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিলনা। বাইরে প্রচার করা হয় এটা কমিউনিস্টদের ফর্মুলা। সত্য ঘটনা হলো- আমরা কমিউনিস্টরা তিনবার বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়ে অনুরোধ করে বলেছিলাম বাকশাল করবেন না। সমাজতন্ত্রের জন্য একদল থাকার প্রয়োজন নেই। তার চেয়ে সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ওই কথায় একমত হননি। আমার সঙ্গেই বঙ্গবন্ধুর কথা হয়েছে। তিনি বললেন, তোমাদের কথা মানলে তো আওয়ামী লীগ থেকে যাবে। আওয়ামী লীগ কি জিনিস তা তোমাদের থেকে আমি ভালো জানি। এই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করতে পারলে হবেনা। আমিতো শুধু আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারিনা। বাকশালে যোগ দিলেও আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়নে অবদান রাখার চেষ্টা করেছি।
সায়েম: মুক্তিযুদ্ধের পরপর দেশে সিপিবি ও ছাত্র ইউনিয়নের ব্যাপক জনসমর্থন ছিল। বর্তমানে তা নেই। এর কারণ কি বলে মনে করেন?
মুজাহিদুল ইসলাম: গোটা রাজনীতির এখন বাণিজ্যিকীকরণ হয়ে গেছে। চলতি হাওয়ার রাজনীতি হলো দুষিত। এরশাদের পতনের পর বিশেষভাবে এ ষড়যন্ত্র কার্যকর হয়। মার্কিন ফর্মুলা হলো এদেশে দ্বিদলীয় ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। একটি থাকবে সরকারী ও অন্যটি থাকবে বিরোধী দল। আর দুটোই আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। গদির বদল হলেও আমার স্বার্থ ঠিক থাকবে। এজন্য অন্য দলগুলোকে দূরে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। একটি জনসভা ও কনফারেন্স করতে যে খরচ হয় তাতো ছোট দলগুলো করতে পারবেনা। আর ওই দল গুলোকে তারা টাকা পয়সা দিয়ে এমন সিস্টেম করে ফেলেছে যে তাদের ধারে যাওয়ারও সুযোগ নেই। এজন্যই আমি বলি, এখন রাজনীতিতে পলিট্রিকস ঢুকে গেছে। আমরা যখন রাজনীতি শুরু করেছি তখন নেতা তুমি এগিয়ে চলো ধরনের ব্যানার লাগানোর প্রথা ছিলনা। এখন শেখ হাসিনা এগিয়ে চলো আর খালেদা জিয়া এগিয়ে চলো ব্যানারে ছেয়ে গেছে। ব্যানারের নিচে সৌজন্যে এতো নাম লেখা হয় যে আর জায়গা থাকেনা। রাজনীতি এখন বিনিয়োগের একটি জায়গা। কমিটির সদস্য হলে টেন্ডারবাজি করা যাবে। প্রধানমন্ত্রী ১২ বার ধমক দিয়েছে তাতেও কাজ হয়নি। তার কথার চেয়ে টেন্ডারের লোভ অনেক বেশি আকর্ষনীয়।
সায়েম: অধিকাংশ বামদলের সমন্বয়ে ১৪ দল নিয়ে গঠিত মহাজোট এখন সরকার গঠন করেছে। আপনারা বিকল্প বামপন্থার বক্তব্য দিচ্ছেন। কেন ১৪ দলে যোগ দেননি। সরকারে অংশ নেয়া বামদলগুলোর সম্পর্কে আপনার মত কি?
মুজাহিদুল ইসলাম: আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের একটি জোট গঠনের মতো অবস্থা আওয়ামী লীগ রাখেনি। একটি সময় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ মধ্যবাম নীতি নিয়েছিল। তখন আমাদের সঙ্গে তার দূরত্ব কম ছিল। আর এখন আওয়ামী লীগের নীতি হয়েছে মধ্য ডান। আর আমরা তো বামে রয়েছি। আমরা পজিশন পরিবর্তন করিনি। আওয়ামী লীগ করেছে। আওয়ামী লীগ যতদিন এ অবস্থানে থাকবে ততদিন তাদের সঙ্গে আমাদের কোন জোট গঠন আওয়ামী লীগই অসম্ভব করে রেখেছে। এজন্যই আমরা বিকল্প বাম শক্তির সমাবেশ করার জন্য ১ দল গঠন করেছিলাম। কিন্তু নানা বিভ্রান্তিতে পড়ে আমদের শরীক দুএকটি দল তারা দ্বিদলীয় মেরুকরণের বাইরে গিয়ে বিকল্প গড়ার বদলে তারা একটি দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছে। এর ফলে বিকল্প গড়ার প্রায়াসটাও একটু বিলম্বিত হলো। এভাবে ওই শক্তিশালী সাম্রাজ্যবাদ এখন বিকল্পটাও দখল করার চেষ্টা করেছে। বিকল্প থেকে কয়েকজনকে ছুটিয়ে নিয়ে গেলো। যারা সরকারে গেছেন তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক তাই আমি চাই।
সায়েম: বর্তমান মহাজোট সরকারের কর্মকান্ড সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?
মুজাহিদুল ইসলাম: সরকার তার সবগুলো প্রতিশ্র“তি রার পথে দৃঢ়ভাবে অগ্রসর হতে পারছেনা। দু একটি কাজ ভালো করার চেষ্টা করছে। তার নীতিগত অবস্থানটি হলো- খোলাবাজর অর্থনীতি, দলবাজি আর দলীয় করণের। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবজি চলছে। একারণে হাজার চেষ্টা করলেও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেনা। এগুলোর ফলে মানুষের মনে বিক্ষোভ তৈরী হচ্ছে। তাদের প্রাথমিক আশাবাদ শেষ হয়ে গিয়ে আশাহত হয়েছে। সমস্যার গোড়ায় না গিয়ে উপর থেকে সমাধান দেয়ার চেষ্টা বিফল হবে। যানজটের কথাই বলি - আসল সমস্যা হলো জনজট। ঢাকা শহর এত মানুষ ধারণ করার কি মতা রয়েছে। নেই। তারপরও মানুষ ঢাকার দিকে আসছে। গ্রামের মানুষ বাচার তাগিদে শহরে চলে আসছে। উন্নয়নের সমস্ত প্রয়াসকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। সরকারে কথা আর কাজে কোন মিল থাকেনা। যেমন শিল্পমন্ত্রী বললেন, এখন থেকে কোন শিল্প আর প্রাইভেটাইজেশন করা হবেনা। এটা সরকারের পলিসি হলে প্রাইভেটাইজেশন কমিশন এখনো বহাল রয়েছে কেন?
সায়েম: সরকার যুদ্ধাপরাধিদের বিচারের কথা বলছে। আপনি কি মনে করেন যুদ্ধাপরাধিদের বিচার করার ব্যাপারে সরকারের যথেস্ট অঙ্গিকার রয়েছে ? সরকার এ বিষয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে অগ্রসর না হলে আপনাদের ভূমিকা কি হবে?
মুজাহিদুল ইসলাম: এর ব্যাপারে কিছু সন্দেহ কারার কারণ রয়েছে। তারা প্রথম বলেছে বাজেটের টাকা ছিলনা। পরে বলেছে ভবন নেই। আমাকে বললে আমি সাত দিনের মধ্যেই লোকজনের কাছ থেকে টাকা তুলে ১০ কোটি টাকা দিতে পারতাম। প্রধানমন্ত্রীর ভবনের চার ভাগের একভাগ ছেড়ে দিলেইতো হতো। সরকার এদের বিচার করবে কি করবেনা এ নিয়ে সন্দেহ করার মতো কতগুলো আলামত দেখা দিয়েছে। আমরা এটা নিয়ে বহুদিন ধরেই আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমাদের আগের ভূমিকাই থাকবে।
সায়েম: আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাউন্সিল সম্পর্কে আপনার মতামত কি?
মুজাহিদুল ইসলাম: এটা বলতে পারি তাদের এ কাউন্সিলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিন্দুমাত্র অগ্রসর হয়নি। বিএনপি এতদিন পরে কেন কাউন্সিল করলো তা একটি প্রশ্ন। সব কিছুই আগের মতোই রয়েছে। খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে অভিজ্ঞতা, নেতৃত্ব আত্মস্থ করার বাইরে ওই কাউন্সিল। তাদের পদ্ধতি হলো নেতা ঠিকমতো নির্বাচন করো। পরে নেতা যা বলবে ওইটাই দলের পলিসি। তিনি যেভাবে কমিটি বানাবেন সেটাই কমিটি। গঠনতন্ত্রে রয়েছে, ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন হবে। ভোটতো কারও কাছে হস্তান্তর করা যায়না। তাহলে চেয়ারপারসনকে কিভাবে ভোট হস্তান্তর করা হলো। নেতা নির্বাচন করার দায়িত্ব আমার অথচ তার দায়িত্ব খালেদা জিয়াকে তো দিতে পারিনা। তারেক জিয়াকে ভাইস চেয়ারম্যান বানানো হলো। এখানেও একটি বৈপরীত্য রয়েছে। এর কিছুণ আগেও তারেক রহমান বলেছিলেন, সার্বিক বিবেচনায় আমি মনে করি আমার এখন রাজনীতি করা উচিত নয়। তিনি যদি এতটাই বিজ্ঞ হন তার প্রতি এত আস্থা থাকলে তার বক্তব্যতো মেনে চলা উচিত। সবাই বললো তাকে আমরা একযোগে নেতা মানি। অথচ তাকে নেতা মেনে প্রথম যে কাজটি করা হলো- নেতার বক্তব্যটা নাকচ করে দেয়া হলো। আওয়ামী লীগ সামন্য একটু করেছে। বাকী সবটাই একরকম। দুটো একই চরিত্রের তা আমি বলিনা। একটু পার্থক্য রয়েছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এ সামান্য পার্থক্য বেশ মূল্যবান। মানুষের যত আশা ছিল তা মিথ্যা প্রহেলিকায় পরিণত হয়েছে। যারা লুটপাটতন্ত্রে বিশ্বাস করে তাদের দলে কখনোই গণতন্ত্র আসবেনা। লুটপাটের ব্যবস্থা গণতন্ত্রকে সার্পোট করেনা।
সায়েম: আপনাকে ধন্যবাদ।
Click This Link আওয়ামী লীগকে নিষিদà§�ধ করতেà/
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:৪৮
মহাপাগল বলেছেন: যার হাত সন্তানের রক্তে রঞ্জিত তিনি পিতৃত্ত্বের দাবী করতে পারেন না। দেশবাসী কেউ তাকে জাতির পিতা বলবেন না।
আহারে বাপের নামে মিথ্যাচার সন্তানের একি কুবচন!