![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিভাবে লিখবো বুঝে উঠতে পারছিনা। মনটা বেদনায় ভরা, ইচ্ছে করছে যদি সব কিছু উল্টে দিতে পারতাম! কিন্তু ইচ্ছে আছে সেই শক্তি নেই, তাই প্রতিবাদের নিম্নতম পর্যায়ে গিয়ে দুকলম লিখতে বসলাম। কখনো এই লিখাটা যে লিখবো ভাবনায়ও ছিলনা, কিন্তু নিউজটা পড়ে চমকে উঠলাম। দু চোখের পানি ধরধর করে গড়িয়ে পড়লো। “ঢাবির শামসুন নাহার হলে ফজরের নামাজ পড়ার কারণে তিন ছাত্রীকে হল থেকে বহিষ্কার”! কোন সাধারণ মুসলমান কি ভাবতে পারে এই রকম একটা নিউজের কথা! তাই স্মৃতির পাতা থেকে দুকলম লিখতে বসলাম। জানি আমার দৌড় লিখা পর্যন্ত, তবুও লিখতে বসলাম।
৫১২ টেপ রেকর্ডারে রাস্তার পাশে কোন মাইকে বাজানো বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ শুনে দেশকে ভালবাসতে শিখেছি, বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার প্রাণ পুরুষ হিসাবে জেনেছি। আমার রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তি ছিল এখান থেকেই। আজও স্পষ্ট মনে পড়ে, আমার ৭/৮ বছর বয়েসের দিকে ভোটের সময় আমার সম বয়সি সবাই দলবেঁধে শুধুমাত্র ধানের শীষের পোস্টার নিয়ে “ধানের শীষ- ধানের শীষ” বলে রাস্তায় রাস্তায় গলা পাঠিয়ে ফেলতো। কিন্তু দেখেছি সেই বয়সে নৌকার শ্লোগান দেওয়ার মত কেউ ছিলনা। যেহেতু আমার রাস্তায় যাওয়ার অনুমতি ছিল না, পোস্টারের সেই বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখে পুলকিত হয়ে একা একা পুরো উঠান জোড়ে শ্লোগান দিয়ে বেড়াতাম, আজও তা ষ্পষ্ট মনে পড়ে।
প্রাইমারি স্কুলের সবাই আমাকে “আমামী লীগ” “হিন্দু” নামে ডাকতো, কারণ এলাকার অধিকাংশ হিন্দুরা আওয়ামীলীগ কে সাপোর্ট করতো। বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসতাম বলে কারো সাথে আমার তেমন বন্ধুত্ব হয়ে উঠতো না। কেউ বঙ্গবন্ধুকে ব্যঙ্গ করে ডাকলে থাকে মেরে নাক ফাটিয়ে দিতাম। পঞ্চম শ্রেণি পাশ কওমী মাদ্রাসায় ভর্তি হলাম, সেই পরিবেশে গিয়েও এককভাবে বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসার কথা, তার দেশ প্রেমের কথা গর্ব করে সবার মাঝে বলতাম। সেখানেও অধিকাংশ বন্ধুরা আমাকে “আমামী লীগ” “হিন্দু” নামে ডাকতো। যার রাজ সাক্ষী আমার বন্ধু তাকী উসমানী।
এরপর ৬ষ্ট থেকে ৮ম শ্রেণি পড়া বাদ দিয়ে একলাফে ৯ম শ্রেণিতে গিয়ে সরকারি মাদ্রাসায় ভর্তি হলাম। নতুন প্রতিষ্ঠানে এসেই কিছুদিনের মধ্যে ভাল ছাত্র হিসাবে সুনাম কুঁড়িয়ে নিলাম। হঠাৎ একদিন শুনলাম আমার মাদ্রাসায় শিবিরের কমিঠি করা হবে, সমন্বয় কমিঠিতে আমাকেও রাখা হবে। ঘোর বিরোধিতা শুরু করলাম, এবং অবশেষে সেই কমিঠি আর হয়নি। যার রাজ সাক্ষী পাভেল মোস্তফা। এবং সেই সময় রসায়ন ক্লাস করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের উপর মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসির “মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস” লেখা গ্রন্থটি পড়ে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার যুদ্ধের ভূমিকা ও বীরত্ব সম্পর্কে জেনে থাকে হৃদয়ে স্থান দিয়। বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি মেজর জিয়াকে স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তির মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করি। সেই সময় থেকে রাজকার, আল বদর, আল শামস ও দেশ বিরোধীদের ভূমিকা সম্পর্কে জেনে তাদের মনে প্রাণে ঘৃণা শুরু করি।
অতপর ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হয় যা ছিল সম্পূর্ন শিবিরের দখলে। আমাকেও বলা হল শিবির করতে ও তাদের সাথে সম্পৃক্ত হতে। কিন্তু আমি না করে দিয়, এবং এরপর তারা আমাকে কোন জোর জবরদস্তী করেনি। যার রাজ সাক্ষী আমার বন্ধু ইসমাইল। ছোটবেলা থেকে কলেজের গাল গল্প শুনে এসে দেখলাম তা ভিন্ন।
২০১১-১২ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে ভর্তি হলাম, আর আমার সিট বরাদ্দ হল সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে। হলে এসেই বুঝলাম এখানে থাকতে হলে রাজনীতি করতে হবে, কিন্তু ছোটবেলা থেকে রাজনীতির প্রতি অনিচ্ছাই নিজেকে সরাসরি রাজনীতির মাঠ থেকে বিরত রাখলাম। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালবাসা থেকে ছাত্রলীগের প্রতিটা মিছিলে যেতাম। কিন্তু যেটা আজও আমাকে পীড়া দেয় তা হল, এখানের রাজনৈতিক নেতাদের ধারণা ছিল, যারা নামাজ পড়ে তারা শিবির! যারা গ-ম খায়না তারা শিবির। আর চট্টগ্রাম বিভাগ, সাতক্ষীরা, বগুড়া ইত্যাদি অঞ্চলের ছেলেরা শিবির। যেহেতু কখনো শিবির করিনি তা প্রমাণ করার জন্য নামাজ ছেড়ে দিলাম, গ-ম খাওয়া শুরু করলাম। ব্যাস, ভালই ছিলাম দেড়টা বছর। জীবনের পাপের সোনালি সময় পার করলাম, বুক ফুলিয়ে রাস্তায় হিটলারের মত হাঁটতাম। ২০১৩ সালে হলে SMPL শুরু হলে কমিঠিতে জুনিয়র সদস্য হিসাবে অনলাইনে বিভাগে সিনিয়রদের মাঝে স্থান পেলাম। আর নিজের ইয়ারের দল FIRE BOX এর নাম মাত্র কোচ হলাম। ১০ই এপ্রিল SiDar আর সিনিয়রদের একটা দলের (নাম স্মরণ নাই) সাথে খেলা চলাকালীন সিনিয়রদের অনৈতিক সুবিধা এবং আমাদের দুই বন্ধুকে শারীরিক ভাবে হেনেস্তার বিচার চেয়ে সামনের সারিতে থেকে তার প্রতিবাদ করলাম। ১১ই এপ্রিল রাতে শুনলাম আমি চট্টগ্রামের ছেলে তাই শিবির করি! ব্যাস, হল থেকে গাঁয়ের কাপড় নিয়ে সকালে বেরিয়ে আসলাম। মনের দুঃখে আজও আর হলে যাইনি। ছোটবেলা থেকে যে বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসার কারণে গালি শুনলাম, সেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নাম ধারী কিছু অমানুষের হাতে বলীর পাঁঠা হলাম।
এবার আসি মূল কথায়, ১৯২১ সালে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার সময় যে মেনোপ্যাস্ট ছিল তাতে উল্লেখ আছে “পূর্ব বাংলার পশ্চাৎ পদ মুসলমানদের শিক্ষা দীক্ষায় এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা”। কিন্তু আজ দেখতেছি শিক্ষক নামধারী নাস্তিক কুত্তা-কুত্তি গুলোর ছত্রছায়ায় কিছু শুয়ার নামাজ পড়লেই শিবির আখ্যা দিয়ে হল থেকে বহিষ্কার করে। আমি আমার নিজ অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি এদের অধিকাংশ আমার মত নিরপরাধ হয়েও কোন ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে শিবির ট্যাগ খায়। আজ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে নিজেকে খুব ছোট ও হীন ভাবছি।
০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৫৮
ভন্ড ফকির বলেছেন: আমীন।
২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০২
ভন্ড ফকির বলেছেন: Click This Link
৩| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৪৮
খেলাঘর বলেছেন:
আপনার কোন রাজনৈতিক দর্শন নেই; আপনি ছাত্র-মাফিয়াদের অংশ বা ওদের শিকার।
৪| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২২
ফা হিম বলেছেন: ভাইজান, আপনার খবরের সোর্স কি? দাড়ান খোজ লাগাইতাছি। আর শুনেন, ঢাবি'র প্রতিটা হলে মসজিদ আছে। এবং নামাজের সময় সেইটা ভরা থাকে। আমার পরিচিত বন্ধু আছে যারা এক্টিভলি তাবলীগের সাথে জড়িত, এবং তাদেরকে কোন সময় নিরুৎসাহিত করতে দেখি নাই কাউকে। আপনে কি দেখতে কি দেখছেন আপনি-ই জানেন।
আমি ২০০৯-১০ ব্যাচের। এখনো মাস্টার্স করতাছি। আপনার ব্যাচের একজনের সাথে পরিচয় আছে আমার। দাড়ান, একটু খোজ লাগাই।
০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৪৯
ভন্ড ফকির বলেছেন: mzamin.com/mobile/details.php?mzamin=NDg2NTM=&sMQ==
দয়াকরে এই লিংক টা দেখে নিন, আর ২০ বা ২১ শে অক্টোবর এর নিউজ দেখুন সোফিয়া কামাল হল নিয়া....
০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫১
ভন্ড ফকির বলেছেন: mzamin.com/mobile/details.php?mzamin=NDg2NTM=&sMQ==
৫| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০৮
ফা হিম বলেছেন: এসব গুজব-মার্কা পত্রিকা থেকে আমার খবর নিতে হবে কেন? যদি ঢাবি'র ছাত্র হয়ে থাক, তবে খোজ নিয়ে তারপর পোস্ট দাও। এইটা ব্লগ, তোমাদের বাসা-বাড়ি না।
০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:২৭
ভন্ড ফকির বলেছেন: আপনাকে খুব ভদ্র ও মার্জিত মনে করেছিলাম বাট আপনি ইতরের পর্যায়ে, বড় হয়ে আপনার প্রতি এই ভাষা ব্যবহার করতে হল! সরি... তবে নিউজ দেখে নয় জেনেশুনে এবং ক্যাম্পাসের এই নৈমিত্তিক ঘটনা যা বন্ধুদের মাঝে ঘটছে, ঘটতেছে তা নিয়ে লিখছি, আপনার মত ইতর প্রাণী হয়ে শুধু নিউজের উপর সীমাবদ্ধ নয়।
৬| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০১
ফা হিম বলেছেন: শোন ছেলে, আমি এই মাত্র খোজ নিলাম। নিষিদ্ধ সংগঠন সদস্য হিসেবে গ্রেফতার হওয়া আর ধর্ম পালন করতে গিয়ে গ্রেফতার হওয়ার মধ্যে পার্থক্য করার মত শিক্ষা আশা করি তোমার আছে। এভাবে বিশেষ শ্রেনীর অনলাইন পোর্টালের রেফারেন্স দিয়ে এইসব পোস্ট করে কি প্রমাণ করতে চাও? আমার পরিচিত ছাত্রলীগ করা বন্ধুকেও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে দেখেছি। ব্লগ হল দায়িত্বশীলতার জায়গা, এখানে গুজব ছড়াবা না। ছড়াতে চাইলে বাসা-বাড়িতে ছড়াও।
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৫৯
ভন্ড ফকির বলেছেন: এটা কোন গাঁজাখুরি গপ্প নয়,
এটা ঢাবির হল গুলোর নিত্য নৈমিত্তিক
ঘটনা যা প্রতিদিন ঘটছে! অনলাইন নিউজ নয়
বরং জেনেশুনে চোখে দেখে পর্যবেক্ষণ
করে এই লিখাটা! গত কয়েকদিন আগে এফ রহমান
হলে আমার এক বন্ধু এমন পরিস্থিতির স্বীকার
হয়েছে,
এবং পরবর্তীতে জামেয়া আহমাদিয়া যারা শিবিরের
ঘোর বিরোধী প্রমাণিত হওয়ার পর
থানা থেকে ছাড়া পেয়েছে, কিন্তু কি দোষ
ছিল তার নিয়মিত নামাজ পড়তো!
ছাড়া পেয়ে কি সে হলে গিয়েছিল, তার সিট
কি ছিল! জনাব জানিনা আপনি হলে থাকেন
কিনা কিন্তু আজ
ঢাবিতে যা হচ্ছে তা আপনি স্বীকার
না করতে পারেন, আমরা যারা ভিকটিম হয় তারাই
জানি। যারা বিনাদোষে মার খেয়ে হল
থেকে বের হয় তারা জানে,
আপনি বা আপনারা বুঝবেন না।
আপনি ছাত্রলীগ এর কথা বলছেন, এরাই তো এসব
করছে, আমি দেড়বছর ছাত্রলীগের
প্রতিটি কাজের সাথে প্রত্যক্ষ অপ্রত্যক্ষ
ভাবে জড়িয় ছিলাম জনাব। জনাব এক তরফা অন্ধ
ভাবে সমর্থক হবেন না, আমিও বলি শিবির
পাইলে মার তবে হান্ড্রেট পার্সেন্ট শিউর হয়ে।
সন্দেহের বশে, নামাজ শুধু নামাজ পড়া বা ধর্মীয়
আচার পালনের উপর ভিত্তি করে নয়।
আপনি হয়তো হলে থাকেন না। তাই এর ভিতরের
খবর আপনি জানবেন না অথবা আপনি যদি উপরের
জিলাগুলি বা বিভাগের ছেলে হন
তবে জানতেন।
৭| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৪৬
ভন্ড ফকির বলেছেন: এটা কোন গাঁজাখুরি গপ্প নয়, এটা ঢাবির হল গুলোর নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা যা প্রতিদিন ঘটছে! অনলাইন নিউজ নয় বরং জেনেশুনে চোখে দেখে পর্যবেক্ষণ করে এই লিখাটা! গত কয়েকদিন আগে এফ রহমান হলে আমার এক বন্ধু এমন পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছে, এবং পরবর্তীতে জামেয়া আহমাদিয়া যারা শিবিরের ঘোর বিরোধী প্রমাণিত হওয়ার পর থানা থেকে ছাড়া পেয়েছে, কিন্তু কি দোষ ছিল তার নিয়মিত নামাজ পড়তো! ছাড়া পেয়ে কি সে হলে গিয়েছিল, তার সিট কি ছিল! জনাব জানিনা আপনি হলে থাকেন কিনা কিন্তু আজ ঢাবিতে যা হচ্ছে তা আপনি স্বীকার না করতে পারেন, আমরা যারা ভিকটিম হয় তারাই জানি। যারা বিনাদোষে মার খেয়ে হল থেকে বের হয় তারা জানে, আপনি বা আপনারা বুঝবেন না।
আপনি ছাত্রলীগ এর কথা বলছেন, এরাই তো এসব করছে, আমি দেড়বছর ছাত্রলীগের প্রতিটি কাজের সাথে প্রত্যক্ষ অপ্রত্যক্ষ ভাবে জড়িয় ছিলাম জনাব। জনাব এক তরফা অন্ধ ভাবে সমর্থক হবেন না, আমিও বলি শিবির পাইলে মার তবে হান্ড্রেট পার্সেন্ট শিউর হয়ে। সন্দেহের বশে, নামাজ শুধু নামাজ পড়া বা ধর্মীয় আচার পালনের উপর ভিত্তি করে নয়। আপনি হয়তো হলে থাকেন না। তাই এর ভিতরের খবর আপনি জানবেন না অথবা আপনি যদি উপরের জিলাগুলি বা বিভাগের ছেলে হন তবে জানতেন।
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৫৮
ভন্ড ফকির বলেছেন: জনাব, ঢাকায় বাড়ি আপনার আপনি কি বুঝবেন। দু চারিজন ফ্রেন্ডরা যা বলে তা শুনবেন ও বুঝবেন। হলে থাকলে ভিতর থেকে দেখতে পেতেন এর ভিতর কি অবস্থা! ঢাকায় বড় হয়েছেন মাইলেষ্টোনে পড়েছেন গ্রাম থেকে আসা একজন নিম্ন বা মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান যখন মিথ্যা একটা প্রোপাগান্ডা নিয়ে সব কিছু হারিয়ে হল থেকে বের হয়ে যেতে হয়, সেই কষ্ট আপনি কিভাবে বুঝবেন! কারো লেখাকে মিথ্যা না বলে ভিতর থেকে জানুন দেখতে পাবেন গরীব ঘরের সব কিছু হারানো আপনার ছোট ভাইয়ের মত সে ছেলেদের কথা!
৮| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:১৫
আমি তুমি আমরা বলেছেন: আপনার কথার সোর্স কি?
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:২৯
ভন্ড ফকির বলেছেন: উপরের কমেন্টে লিংক দেওয়া আছে....
৯| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:১১
এক চিলতে রোদ্দুর বলেছেন: লেখাটি পড়ে ভাল লাগল বললে আপনাকে ছোট করা হবে আর তথাকথিত লেবাজধারী ফাওখেকো ছাত্রত্ব মেয়াদ উর্ত্তীন ছাত্রদের সমর্থন করা হবে। এসএম হলের ছাত্র হিসেবে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয় নিজেকে, জানিনা এই ভানাটা কতটুকু শান্তিদায়ক। ভাল থাকবেন।আপনার সাথে পরিচিত হবার বাসনা নিয়ে বিদায় নিচ্ছি। আমাকে পাবেন। [email protected] fb id.
or 01729397979
এসএম হলের ছাত্র হওয়ায় আপনাকে “এসএম হলের ডায়েরী” নামক বইটার প্রথম গল্পটা পাঠালাম। ভাল থাকবেন।
এসএম হলের এক আবাসিক ছাত্রের লেখা দৈনিক ডায়েরি।
অনেক বাস্তবতাই অবিশ্বাস্য বলে মনে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের নানা ঘটনার প্রতিবিম্ব এ ডায়েরি।
ভর্তি-যুদ্ধে জয়, হলের ক্যান্টিন, মাঠ, মসজিদকে ঘিরে স্মৃতিচারণ।
বারান্দায় থাকা কষ্টের সে দিনগুলি...
একটি প্রেম, অতপর...হৃদয়ের অতল জলে অবগাহন।
নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার।
ভালবাসার শিশিরে সিক্ত হওয়া দু’টি মন।
পহেলা বৈশাখ আর বসন্ত উৎসবের নতুন আমেজে মন ভাসানো।
সেন্ট্রাল লাইব্রেরি, হাকিম চত্বরের আদা-চা’য়ে জিব ভেজানো।
টিএসসি, ফুলার রোড, ভিসি চত্বরের রাঙা সেই দিনগুলি।
প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের সুখ ছাড়তেই মন চায় না।
উৎসর্গ:
এসএম হল’কে
যেখানে আমি আশ্রিত
হোসাইন সাজ্জাদ
১৫৯, এসএম হল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
+৮৮০১৭২৯৩৯৭৯৭৯
এসএম হল পরিচিতি:
সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সাধারণত এসএম হল নামে অধিক পরিচিত। খাজা আবদুল গনির ষষ্ঠ পুত্র, খান বাহাদুর আহসান উল্লাহ’র (১৮৪৬-১৯০১) জ্যেষ্ঠ পুত্র নওয়াব সলিমুল্লাহ ১৮৭১-এর ৭ জুন জন্মগ্রহণ করেন। ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি সপ্তম অ্যাডওয়ার্ড দিলি¬র দরবারে মুকুট পরিধান অনুষ্ঠানে তাঁকে ‘নওয়াব বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯১২ সালের ২৯ জানুয়ারি দিলি¬র দরবারে বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণার পরে, ৩০ জানুয়ারি ঢাকার কার্জন হলে বড়লাটের আগমন উপলক্ষ অনুষ্ঠানে নওয়াব সলিমুল্লাহ পূর্ব-বাংলার অনগ্রসর মুসলিমদের শিক্ষার সুযোগ করে দেয়ার লক্ষ্যে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯১২ সালের ২৭ মে রবার্ট নাথানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়। এরপরে সলিমুল্লাহ'র অব্যাহত দাবির প্রেক্ষিতে ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ নাথান কমিটির রিপোর্টটি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট হিসেবে অনুমোদন লাভ করে। ১৯২০ সালে ১৫ নম্বর অ্যাক্টের মাধ্যমে মুসলিম হল প্রতিষ্ঠিত হয়, যার কার্যক্রম ১৯২১ সালে শুরু হয়। তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯২৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম হলের নামকরণ করা হয় সলিমুল্লাহ মুসলিম হল।
সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ভবনের পরিকল্পনা ও নকশা প্রস্তুত করেন স্থপতি মি. গাইথার . বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর স্যার স্ট্যানলি জ্যাকসন ১৯৩১ সালের ১১ আগষ্ট আনুষ্ঠানিকভাবে সুরম্য সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ভবনের উদ্বোধন করেন। ১৯৩১-৩২ শিক্ষাবর্ষের শুরুতে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ১৯২৮ সালে ডিসেম্বর মাসের শেষ ভাগে তদানীন্তন গভর্ণর জেনারেল এবং ভারতবর্ষের ভাইসরয় ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের কথা থাকলেও তা আর হয়ে ওঠেনি, একারণে ১৯২৯ সালে ২২ আগষ্ট ভিত্তিপ্রস্তর আনুষ্ঠানিকভাবে স্থাপন করা হয়। সমাজ সংস্কারক, জনদরদী, সমাজসেবী, শিক্ষানুরাগী, নওয়াব বাহাদুর স্যার সলিমুল্লাহ ১৯১৫ সালে ৫ জানুয়ারি ইহলোক ত্যাগ করেন। ঢাকার বেগম বাজারস্থ পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
যেভাবে সাজানো আমার ডায়েরির পাতা...
এসএম হলকে ঘিরে আমার স্বপ্ন
১০/০২/২০০৮
রুমের স্বপ্ন সার্থক হল আমার
১৩/১২/২০০৯
আমার রুমমেট ও আমি
২০/০২/২০১০
সেরা কলেজের অসার ছাত্র
২২/০২/২০১০
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির হাতছানি...
২৫/০২/২০১০
অক্সফোর্ড দ্বীপে আমি
২০/০৩/২০১০
রুস্তম আলীর ক্যান্টিন
১০/০৪/২০১০
প্রেমের পরিসংখ্যান
১২/০৪/২০১০
রিডিং রুম
১৫/০৪/২০১০
শাহবাগের ফুলের মেলা
১৬/০৫/২০১০
ইভটিজিং
১৮/০৬/২০১০
রক্তচোষা
২০/০৬/২০১০
এসএম হলের মেস
২১/০৬/২০১০
প্রেমের বিভিন্নতা:
কিশোর প্রেম
৩০/০৬/২০১০
যুবক বয়সের প্রেম
০২/০৭/২০১০
আমাকে লেখা রবির প্রথম প্রেমের চিঠি
১৮/১০/২০১০
বিয়ে পরবর্তী প্রেম
৩০/১০/২০১০
বয়স্ক প্রেম
১/১১/২০১০
বাবাকে লেখা তাঁর চাকরি জীবনের শেষ চিঠি
২৭/১২/২০১০
এসএম হলকে ঘিরে আমার স্বপ্ন
১০/০২/২০০৮
একটা তালা যুক্ত টিনের ট্রাঙ্ক। মশা নিরোধক মশারী। চার ফিট প্রস্থ আর আট ফিট দৈর্ঘ্যরে অতটুকুন জায়গায় তার বাস। কোন আসবাবপত্রের বালাই নেই। আমি কোন মিসকিন বা মুসাফিরের থাকার ঘরের কথা বলছি না। জামাই হল হিসেবে খ্যাত এসএম হলের রাজপ্রাসাদের রাজবারান্দায় থাকা, ছারপোকাদের সাথে বসবাসরত রাজপুত্রদের কথা বলছি। কী কঠিন কষ্টের জীবন-যাপন এই মেধাবীদের, তা স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। শরনার্থী শিবিরের সদস্যরাও এর থেকে ভাল অবস্থানে থাকে। ভর্তিযুদ্ধ বা মেধার মহাযুদ্ধে জয় হয়ে কী লাভ হয়েছে, যদি মাথা গোঁজার আশ্রয়টুকু বৃষ্টি এলেই ভিজে যায়। ঘুমের মাঝে বৃষ্টির পানি ভিজিয়ে দেয় বিছানার তোষক, বালিশ আর চাদর।
এই মেধাবী মাথাগুলো আট বা দশ সিটের রুমের সাধ করতে পারে না। এদের মধ্যে তৃতীয় বর্ষের ছেলেও আছে। প্রথম বর্ষের আনাড়ি ছেলের সাথে তৃতীয় বর্ষের জ্যেষ্ঠদের পাশাপাশি সহাবস্থান, সত্যি বেমানান আর অস্বস্তিকর। একটি রুমের স্বপ্ন ওদের কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। বড় ভাইদের নক্ষত্রপুঞ্জ, স্বর্গছেড়া, বার্ডনেস্ট নেমপে¬টধারী নামকরণের রুমে গেলে কান্নার জলে চোখ ভিজে যায়। সাজানো গোছানো, কার্পেট দিয়ে মোড়ানো, নতুন রং করা রুমে গেলে নিজেকে অসহায় ছাড়া কিছু ভাবতে ইচ্ছে করে না।
বিশ্ববিদ্যালয় লাইফের আমার আর একটা বছর বাকি।
এখন আমি নামি-দামি ডিপার্টমেন্টের তৃতীয় বর্ষে পড়ুয়া বেশি নাম্বার পাওয়া ছাত্র। আমি বড় অফিসার হব, বিসিএস ক্যাডার হব, এরকম স্বপ্ন দেখে আমার পরিচিত জনেরা। আমি স্বপ্ন দেখি ডাবলিং বেডের একটা সিট; যেখানে আমি ক্লাস শেষে ক্লান্ত হয়ে অবশ দেহ নিয়ে মনের মত করে ঘুমাব। পূর্ব আকাশের সূর্যের আলো লেগে অথবা বারান্দায় পাশ দিয়ে যাওয়া কারো পা লেগে, আমার কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে যাবে না। অত সাজানো গোছানো রুমের দরকার নেই আমার। রুম হলেই হল, সেটা গণরুম আর জনরুম যাই হোক। শুধু একটা বিছানা আর বালিশ হলেই হল। শরীরটা মাঝে মাঝে বিছানায় শোয়ার বায়না ধরে। অগত্যা বড় ভাইদের রুমে গিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে মনকে প্রবোধ দেই। বাড়ি গেলে অতবড় বিছানায় আমি একা ঘুমাই, কিন্তু ঘুম আসে না। এসএম হলের বায়ু না হলে আর পানি দিয়ে গোসল না করলে আমার দেহ ও মন জুড়ায় না। এ বাতাসের অক্সিজেন আমার দেহের সাথে মানিয়ে গেছে।
এসএম হল ছাড়া বনানীর বড় চাচার বড় ফ্লাটেও আমার ঘুম আসে না। প্রায়ই ভাবি এসএম হলের জীবন আমার আর বছর-দুই, তারপর কীভাবে থাকব মশা-মাছির এই শহরে। ভাবতেই মনটা মোচড় দিয়ে ওঠে। রুম আর বিছানার স্বপ্ন তখন বাদ দিয়ে ভাবি বারান্দাতেই ভাল আছি; শহরের পাকা বাড়ির স্যাঁতসেঁতে বদ্ধ রুমের চেয়ে। বাবা সেদিন ফোনে বলল, বাসার পূর্ব পাশের বড় আম গাছটি কেটে বাংলোর জন্য খাট বানাচ্ছেন কাঠমিস্ত্রি দিয়ে। খাটের কথা মনে হতেই মনে হল ইস! যদি একটা খাট এসএম হলের বারান্দায় আনা যেত। অন্তত রুম আর বিছানার অর্ধেক স্বপ্ন পূরণ হত আমার, পূরণ হত অর্ধেক শূন্যতা। বাসাতে বড় দুটি খাট আমি আর বড় ভাইয়ের জন্য সবসময় খালি পড়ে থাকে। আর বিছানা ছাড়া কী বিরক্তির জীবন যাপন করছি রাজপ্রাসাদের এই রাজ বারান্দাতে।
রাতে সারা শহর যখন ঘুমিয়ে থাকে এসএম হলকে তখন প্রাচীন ঐতিহ্যের কোন দূর্গ বলে মনে হয়। আমরা সেই দূর্গের দূর্গাধিপতি হই বছর পাঁচেকের জন্য। এত স্মৃতি জমা হয় এসএম হলের মাঠ, বারান্দা, ক্যান্টিন, মসজিদ আর রিডিং রুম নিয়ে; সে স্মৃতিচারণ করতে কেটে যাবে পরবর্তী চাকরি ও সংসার জীবন। আমার স্মৃতি ভাণ্ডারে কোন রুমের স্মৃতি থাকবে না, থাকবে দীর্ঘ পাঁচ বছরের বৃষ্টি, ঝড় আর ধূলার ধূসর থেকে নিজেকে রক্ষার ব্যর্থ প্রচেষ্টা। সকালে আধা সেকা রুটি
রুস্তম আলীর ক্যান্টিনে বাসি ভাজি দিয়ে খাই। দুপুরে খাবার খাই ডাকসু’তে। রাতের খাবারের ভিন্নতা আনতে যাই নীলক্ষেতের মামা হোটেলে বা বুয়েট ক্যান্টিনে। খাওয়ায় মন নেই আমার। খেয়ে পেট পুরলেও মন জুড়ায় না। বার বার মায়ের রান্না মাছের ঝোল অনুভব করি ক্যান্টিনের ঝাঁঝালো ঝোল মুখে দিয়ে।
রাত বারটা নাগাদ কাজ শেষ করে ফুলার রোডে বসি গা মেলে। ফুলার রোডে ফুল নেই, সারি সারি করে জোড়া বাঁধা প্রেমিক যুগলের হাতে হাতে গুচছফুল। ফুলার রোডের নামের সার্থকতা এখানেই। উদয়ন স্কুল পার হয়ে পলাশীর এক কাপ গরম চায়ের নেশা মাথায় জেঁকে বসে। চায়ের নেশা তাড়াতে পলাশীর মোড়ে যাই আদা-চায়ে জিব ভিজাতে। হলের মাঠের নরম সবুজ ঘাস আমাকে চরমভাবে টানে।
মিনিট পাঁচেক পরেই হলে ফিরে আসি।
আমার পঁচা-বাসি খাওয়া পাঠান দেহ এলিয়ে দেই সবুজ ঘাসের বিছানার উপর। ভিজা গায়ে শীতল বাতাসে চরম শিহরণ জাগে। মাঝ রাত অবধি খালি গায়ে ঘুমিয়ে থাকি সবুজ ঘাসের উপর। নরম ঘাস আমাকে ওদের আপন ভেবে অক্টোপাসের মত আঁকড়ে থাকে। বারান্দায় আমার বিছানার উপর ধূলার আস্তরণ ঘুমুতে শরীর সায় দেয় না। ঝেড়ে ঝুড়ে বালির বিছানায় বাধ্য হয়ে ঘুমাতে যাই, কিন্তু ঘুম আসে না। টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে পড়তে বসি স্বরযন্ত্রকে শব্দহীন করে, পাছে সহপাঠী কারো ঘুম ভেঙ্গে যায়। ভোর হবার আগেই কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে যায়। চোখ কাঁটা কাঁটা লাগে ঘুমের অভাবে। ঘুম ভাঙ্গে বারান্দার পাশে থাকা পাখ-পাখালির অতিচিৎকার আর পাশের টেবিলে বড় ভাইটির উচ্চস্বরে পড়ার ভঙ্গিতে। কিছুই করার নেই আমার আফসোস করে। আফসোস করব সেটাও আবার সবার কাছে নয়, পাত্রভেদে। বড়বাবুদের সিটের কথা বললে সায় দেয়, কিন্তু সিট দেয় না। গেস্ট রুমের লিস্টে সপ্তাহে দুই-তিন দিন না থাকলে বড় বাবুদের গলা গরম হয়ে যায়। মনটা তখন আরো বিষিয়ে যায়। কী করুন আর কঠিন বাস্তবতাকে মেনে নিয়েছি এই আবেগী আমি। কষ্ট করতে করতে হৃদয় কাঠ হয়ে গেছে যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রেম হয় নাই কারো সাথে। নাওয়া খাওয়ার কষ্ট সহ্য করা গেলেও, শোয়ার কষ্ট আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
গ্রামের বন্ধুরা বলে, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত নামি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র। অথচ আমার বড়ত্ব চার ফুট প্রস্থ আর আট ফুট দৈর্ঘ্যের বারান্দার ফ্লোর। সেই বন্ধুরা জানতে পারে আমার দৈন্যতা, যখন শামীম তার বড় বোনের বাসা আজিমপুরে আসে, রাতে আমার কাছে শোয়ার বায়না ধরে। নিজের কষ্টকে কষ্ট মনে করি না। কিন্তু বন্ধুর সামনে এ লজ্জা রাখি কোথায়? অবশ্য এ লজ্জা আমার না, এ লজ্জা বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় কর্তাদের। গ্রামে গিয়ে আমার দৈন্যতার কথা বন্ধুদের কাছে বলে দেয়, এ কথা ভাবতেই ওকে বুঝাই আমার রুম সংস্কার চলছে। প্রাচীন হল, বুঝিস তো সেই ১৯২১ সালে গড়া। মিথ্যা বাহানার গল্প ওকে বলি। শামীম আমার কথায় বিশ্বাস করে, বিশ্বাস না করে উপায় নেই। আমি বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় মিথ্যাবাদী। আমার কথার মারপ্যাঁচ আমার এ গ্রাম্য সহজ-সরল বন্ধুটির বুঝার কথা না। হলের প্রতি তারপরও আমার আবেগী টান; অজানা আদরের লোভে আমি বারান্দাতেই থাকি। সেদিন, বহুবছর আগে হলে থাকা এক বড় ভাই হলে এসে আবেগী হয়ে কেঁদে একাকার। তার চোখে জল দেখে আমি যাই কোথায়? তারপর থেকে হলের প্রতি আমি আরও বেশী আবেগী। বড়ভাই তার রুমে গিয়ে দিক-বেদিক চিন্তা না করে বিছানায় শুয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন। আমারও বিছানায় শুয়ে কাঁদার শখ আছে। তবে আমি কাঁদব কোথায়? এই বারান্দাতে! খুব কষ্ট হয়, আমি কাঁদতেও পারব না আমার মত করে। এসএম হলের স্মৃতিচারণ করতে এসে আজ থেকে বছর বিশেক পরে কর্তৃপক্ষ যেন আমার জন্য একটি বিছানার ব্যবস্থা করে। কী স্বার্থপর আমি, শুধু নিজের কথা বলে যাচ্ছি, বারান্দায় থাকা বাকী অনাথগুলোর কথা বলছি না। ওরা মায়ের আদর, বাবার শাসন পায় না। ভাইয়ের স্নেহ আর বোনের ভালবাসা পায় না। তবুও ওরা মেডিকেলের অজানা বারান্দার রোগীর মত পড়ে থাকে হলের বারান্দাতে।
ওদেরও আমার মত কাঁদতে মন চায় এ আমি বুঝি। কে করবে এই কাঁদবার ব্যবস্থা, কাকে আশ্রয় করে কাঁদব আমরা? ওরা একদিন বড় অফিসার হবে, বড় আমলা হবে, দেশের দিক নির্দেশনা দিবে।
স্প্রিং ম্যাট্রেজের নরম তুলার বিছানায় ঘুমাতে গিয়ে অবশ্যই বারান্দায় ঘুমের কষ্টের কথা মনে পড়বে। ওয়াশ রুমে গিয়ে কষ্টের চোখের জল মুছবে, পাছে স্ত্রী-সন্তানরা কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করলে জবাবহীন হয়ে যায়। স্মৃতিচারণ করতে অনেক নামি-দামি অফিসার এসএম হলে আসে সপরিবারে। স্ত্রীকে দেখান দেখ দেখ, এই মাঠ, এখানে বসে তোমাকে প্রেমপত্র লিখতাম। বাবু তোমাদের বাবা এই রুমে থাকত। ছেলে-মেয়েদেরকে এমএম হলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন বড়লোক বাবা। ছেলে-মেয়েরা বাবার বিছানায় বসে ভাবে; আমাদের বাসার বিছানা কত নরম। তুমি এত শক্ত বিছানায় ঘুমাতে কি করে? ছোট মেয়েটি প্রশ্ন করে বাবাকে। আমরা বারান্দার অনাথরা যদি স্মৃতিকাতর হয়ে স্মৃতিচারণ করতে এসএম হলে আসি বাচ্চাদের কি বলব? তোমাদের চৌধুরী আর তালুকদার বাবা বারান্দায় বালির বিছানায় খোলা আকাশের নিচে ঘুমাত। এ লজ্জা পাওয়ার চেয়ে মরা কী ভাল হবে না!
তারা জানবে তাদের ‘বড় সাহেব’ নামধারী বাবা খালি ফ্লোরে বালির বিছানায় থাকত। তখন এ মুখ কি করে ঢাকব? আমাদের স্মৃতির পথেও লজ্জার ভয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের কাছে লজ্জা সেটা মেনে নেওয়া যায়। সন্তানের কাছে লজ্জায় ছোট হওয়া বাবাদের কি সাজে? আমার এ কান্না কারো শুনবার কথা নয়। কারণ এ কান্না প্রতিধ্বনিত হয় না। আমার এ কান্না বুঝতে পারি আমরা যারা বারান্দাতে থাকি, আর বুঝতে পারবে- অনাগত বারান্দায় আসা অভাগাগুলো ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৫৬
রেজওয়ান26 বলেছেন: আপনার লেখাটা পড়ার পর আমার মনে হচ্ছে 'আমাদের বাংলাদেশে ইসলাম এই মূহূর্তে সবচেয়ে বেশী হুমকীর মুখে।' যারা আজ নামাজ পড়ার জন্য বহি:ষ্কৃত তাদেরকে আল্লাহ সাহায্য করুন।