তিন প্রিয় ব্যান্ড/ রকস্টারদের প্রথম ব্যান্ড ও সলো অ্যালবাম নিয়ে কিছু কথা

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৯

তিনটি প্রিয় ব্যান্ড ফিলিংস(বর্তমান নগরবাউল), এলআরবি ও আর্ক, তিনটি ব্যান্ড এবং ব্যান্ড তিনটির মেইন ভোকাল আমাদের আত্মার সঙে জড়িয়ে আছে, থাকবে চিরদিন । আজ এই তিন ব্যান্ড ও ব্যান্ডের তিন প্রিয় রকস্টার আইয়ুব বাচ্চু, জেমস ও হাসানের প্রথম একক অ্যালবাম নিয়ে কিছু স্মৃতিচারন করব ।

ফিলিংস ও জেমসঃ ফিলিংসের যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই আশির দশকের শুরুতে- চট্টগ্রাম থেকে । শুরুতে এই ব্যান্ড কুমার বিশ্বজিৎ, আইয়ুব বাচ্চুও বাজাতেন । আজকের উপমহাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় রকস্টার- আমাদের প্রিয় গুরু নগরবাউল জেমস ফিলিংস ব্যান্ডে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৮১ সালের দিকে । প্রথম দিকে তারা ক্লাব/ হোটেলেই বাজাতেন । তাদের প্রথম অ্যালবাম বের হয় চট্টগ্রাম থেকেই ১৯৮৭ সালে, অ্যালবামের নাম ছিল "ষ্টেশন রোড"- প্রকাশ করে বেঙ্গল মিউজিক নামে একটি কোম্পানি । পরবর্তীতে ২০০০ সালের দিকে ঐ অ্যালবামটিই আবার ঢাকা থেকে পুনরায় প্রকাশ করে অন্যতম বড় মিউজিক কোম্পানি সংগীতা । এই অ্যালবামে দুইটি মৌলিক ইংরেজি গানও ছিল, পাবলোর লেখা আর বাকি গানগুলোর বেশিরভাগ জেমসের লেখা ছিল । অ্যালবামের টাইটেল গান ষ্টেশন রোড, আর নয় যুদ্ধ, এভার সিন্স ইউ, যদি এমন হত, একদিন ছিল, ঝর্না থেকে নদী গানগুলো আজও মুগ্ধ করে । ঐ প্রথম ব্যান্ড অ্যালবাম প্রকাশের পর পর জেমস ঢাকায় চলে আসেন, সাথে তৎকালীন ফিলিংস ব্যান্ডের ড্রামার ফানটিও, তারা ঢাকায় ফিলিংস ব্যান্ডের কার্যক্রম নতুন উদ্যমে শুরু করেন । ঢাকায় আসার পরে ব্যান্ড অ্যালবাম করার আগেই প্রকাশ করেন জেমসের প্রথম অ্যালবাম, যার নাম ছিল "অনন্যা" । আসিফ ইকবালের লেখা গানের সুর ও সংগীত ছিল জেমসের করা, তবে কয়েকটি গান বিখ্যাত ইংরেজি গানের সুরের উপর করা ছিল । টাইটেল গান অনন্যা, দুরন্ত মেয়ে, ফেরারি, টেলিফোন, রাতের ট্রেন গানগুলো আজও ভাল লাগে । এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি ফিলিংস ব্যান্ড ও জেমসকে । পরবর্তী ইতিহাস সকলেরই জানা, নিয়মিত কনসার্ট, একের পর এক সফল ব্যান্ড/ একক অ্যালবাম প্রকাশ, বিভিন্ন মিক্সড অ্যালবামে কাজ করা ও দেশের ও বলিউডের সিনেমায় প্লে- ব্যাকের কারনে আজ জেমস শুধু বাংলাদেশেই না- দেশের বাইরেও অনেক জনপ্রিয় একজন রকস্টার ।

ছবিতে ফিলিংস(বর্তমান নগরবাউল) ব্যান্ডের প্রথম প্রকাশিত অ্যালবাম ষ্টেশন রোডের কভারঃ



২০০০ সালে ষ্টেশন রোড পুনরায় প্রকাশ পায় এই কভারেঃ

জেমসের প্রথম একক অ্যালবামের কভারঃ



আইয়ুব বাচ্চু ও এলআরবিঃ রক লিজেন্ড আইয়ুব বাচ্চু এলআরবি ব্যান্ড গঠনের বহু আগে থেকেই মিউজিকের সাথে জড়িত ফিলিংস, সোলস এর মত ব্যান্ডে ছিলেন তিনি আশির দশক জুড়ে । সোলসে থাকা অবস্থায়ই ব্যান্ডের হয়ে এবং তৎকালীন সোলসের ভোকাল তপন চৌধুরীর একক অ্যালবামের জন্য অসাধারন সব গান সৃষ্টি করেন তিনি । চট্টগ্রামে থাকা অবস্থায়ই ১৯৮৫/৮৬ সালের দিকে বাজারে আসে তার প্রথম একক অ্যালবাম "রক্ত গোলাপ", অসাধারন সব মেলোডিয়াস গান ছিল এই অ্যালবামে । পরবর্তীতে অ্যালবামটি আবার নতুন করে রিলিজ দেয়া হয় ৯০ এর দশকে । এর পরে ৮৮ সালে প্রকাশ হয় ঢাকা থেকে তার একক অ্যালবাম ময়না, এই অ্যালবামটি যথেষ্ট শ্রোতাপ্রিয় হয়েছিল সেই সময়ে । উল্লেখ্য আইয়ুব বাচ্চুর ডাক নাম রবিন, তার প্রথম কিছু একক অ্যালবাম তাই লেখা থাকত সুর ও সংগীতঃ রবিন ! যেহেতু আইয়ুব বাচ্চুর প্রিয় মিউজিক ধারা ছিল রক মিউজিক, তাই তিনি সোলস ব্যান্ড ছেড়ে ১৯৯১ সালে গঠন করেন পিউর রক ব্যান্ড এলআরবি ! গঠনের পর পরই এলআরবি রিলিজ করে ডবল অ্যালবাম "এলআরবি-১ ও এলআরবি-২" নামে, যা বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে । পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালেও আবার এলআরবি আরেকটি ডবল অ্যালবাম প্রকাশ করেছিল । প্রথম অ্যালবামেই বাজিমাত করে এলআরবি, সেই থেকে আজও এলআরবি বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যান্ড হিসেবে এখনো পথ চলছে । এলআরবি ব্যান্ডের প্রথম দুই অ্যালবামের ঘুম ভাঙা শহরে, হকার, পেনশন, শেষ চিঠি, মাধবি গানগুলো আজও সকলের মুখে মুখে ।

আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম দুইটি একক অ্যালবামের কভারঃ

এলআরবি ব্যান্ডের প্রথম প্রকাশিত ডাবল অ্যালবামের কভারঃ

আর্ক ও হাসানঃ আর্ক ব্যান্ড প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯১ সালে, বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞ আশিকুজ্জামান টুলু এই চাইম ব্যান্ড থেকে বেড়িয়ে আর্ক গঠন করেন । গঠনের পর পরই প্রকাশ পায় তাদের প্রথম ব্যান্ড অ্যালবাম "মুক্তিযুদ্ধ" । এই অ্যালবামের সেদিনও আকাশেচিল চাঁদ গানটি আজও অনেক জনপ্রিয় । পরবর্তীতে ব্যান্ড পঞ্চম ও হাসান যুক্ত হয়, ১৯৯৬ সালে তাজমহল অ্যালবাম প্রকাশের পর থেকে আর্ক বাংলাদেশের ব্যান্ড মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নেয় । ব্যান্ড অ্যালবাম ও বিভিন্ন মিক্সড অ্যালবামে ধারাবাহিক ভাবে টানা ৫/৬ বছর জনপ্রিয় অসাধারন সব গান উপহার দেওয়ার পরে ২০০১ সালে আর্কের প্রধান ভোকাল হাসান এর প্রথম একক অ্যালবাম "তাল" বাজারে আসে । এই অ্যালবামের বেশিরভাগ গানের কথা ও সকল গানের সুর ছিল প্রিন্স মাহমুদের করা । অ্যালবামের মায়া গানটি সারা বাংলা ঝড় তোলে, এছাড়া যার জন্য, এসিড নামের হিরোশিমা, কেন দীর্ঘ ধুসর সহ প্রায় প্রতিটি গান আজও আমাদের প্রিয় গানের তালিকায় আছে ।

আর্ক ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম ও হাসানের প্রথম একক অ্যালবামের কভারঃ

আবার নিয়মিত বাংলাদেশের সকল ব্যান্ডের অ্যালবাম সকল ব্যান্ড তারকা সহ সকল শিল্পীদের অ্যালবাম প্রকাশ হোক, ফিরে আসুক বাংলা গানের সোনালী দিন- এটাই প্রত্যাশা ।

০ টি +০/-০