নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নগরবাউল জেমস ও বাংলা রকসংগীত ।

ওয়ালিদ আজিজ

আমি বাংলা ব্যান্ড সংগীতের বিশেষ অনুরাগী, বিশেষ করে নগরবাউল জেমসের গান আমার অনেক বেশি ভাল লাগে । তাই গান নিয়েই ব্লগে, ফেসবুকে লেখালেখি করি ।

ওয়ালিদ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নগরবাউল জেমসের গানে গানে দেশের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৫

সেই আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে আমাদের প্রিয় রকস্টার নগরবাউল জেমসের এই পর্যন্ত প্রকাশিত ব্যান্ড ও একক অ্যালবামের সংখ্যা মাত্র ১৩ টি(পাঁচটি ব্যান্ড অ্যালবাম, ৮টি একক অ্যালবাম) । এছাড়া অসংখ্য মিক্সড অ্যালবাম ও বেশকিছু ডুয়েট অ্যালবামে কাজ করেছেন তিনি । প্রথম অ্যালবাম থেকে এই পর্যন্ত গাওয়া অসংখ্য জনপ্রিয় গানের মাঝে বাংলাদেশ- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ- ভাষা আন্দোলন কিংবা শুধুই দেশের প্রতি- দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতি ভালোবাসা থেকে তার কিছু গান রয়েছে । এর মাঝে তার চতুর্থ একক অ্যালবাম "ঠিক আছে বন্ধু" তে গীতিকবি মারজুক রাসেলের লেখা "মনে পরে সুধাংশু" ও প্রিন্স মাহমুদের কথা ও সুরে ২০০০ সালে প্রকাশিত পিয়ানো অ্যালবামের "বাংলাদেশ" গান দুইটি অনেক অনেক বেশি জনপ্রিয়- যা তিনি এখনো মাঝেই মাঝেই লাইভ কনসার্টে পরিবেশন করে থাকেন । এর বাইরেও দেশপ্রেম নিয়ে , দেশভাবনা- দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতি মুগ্ধ হয়ে তার আরও কিছু অসাধারন গান রয়েছে বিভিন্ন ব্যান্ড, একক ও মিক্সড অ্যালবামে গাওয়া । আজ বিজয়ের মাসের প্রথম দিনে চেষ্টা করব সবগুলো গান নিয়েই কিছু কিছু আলোচনা করতে ।




বিষয় ভিত্তিক গানের প্রতি জেমসের অনুরাগের কথা স্পষ্ট বোঝা যায় তার প্রথম অ্যালবাম থেকেই, ফিলিংস ব্যান্ডের হয়ে জেমসের মিউজিক ক্যারিয়ারের প্রথম অ্যালবাম "ষ্টেশন রোড" প্রকাশ পায় আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে, এই অ্যালবামের টাইটেল গান "ষ্টেশন রোড" ছিল পৃথিবীর অন্যতম আদিম পেশা "দেহ ব্যবসা" ও এই কাজে সংশ্লিষ্ট নারীদের বঞ্চনার কথা তুলে ধরে । এই গানটির কথাগুলো ছিল এমনঃ "স্টেশন রোডের জীবন ধারা ফুটপাথের ঐ নগর নটিরা/ ভাতের আশায় দিচ্ছে শরীর যেন ত্রিমাত্রিক জীবন্ত ছবি/ স্টেডিয়ামের জরিনা বিবি ভীষণ জ্বরে ঘুম আসেনা/ ভাতের আশায় দিচ্ছে শরীর যেন ত্রিমাত্রিক জীবন্ত ছবি! লোভী দৃষ্টি এখানে সেখানে ছড়িয়ে আছে কিছু মাংসপিন্ড অসহায় মানুষের আর্তনাদে মেঘনা যমুনার পাড় ভাঙে.....!! এই অ্যালবামের আরেকটি গান ছিল "আর নয় যুদ্ধ", বিশ্ব শান্তির বানী উচ্চারন করে মানবতার জয়গান ছিল জেমসের এই গানে । এই গানটির কথাগুলিও ছিল অসাধারনঃ "আর নয় যুদ্ধ, আর নয় ধ্বংস, আর নয় হিংসা বিদ্বেষ/ আর নয় অপমৃত্যু, আর নয় হত্যা, আর নয় রক্ত প্লাবন ! এই অ্যালবামে জেমসের গাওয়া প্রায় পাঁচটি গান ছিল তার নিজের লেখা ও সবগুলো গানের সুর ও সংগীত তার । এর পরবর্তী অ্যালবাম হচ্ছে জেমসের প্রথম একক প্রজেক্ট "অনন্যা", এখানেও রাজনীতি, রিক্সাওয়ালাদের জীবনযুদ্ধ নিয়ে বিষয়ভিত্তিক গান ছিল । এর পরে আসে ফিলিংস ব্যান্ডের ব্যানারে দ্বিতীয় অ্যালবাম "জেল থেকে বলছি" । এই অ্যালবামে আমার প্রানের শহর, পেশাদার খুনির মত চমৎকার বিষয়ভিত্তিক গান ছিল । শ্রদ্ধেয় লতিফুল ইসলাম শিবলির লেখা আমার প্রানের শহর ঢাকা গানটি সরাসরি দেশে নিয়ে গান না হলেও ঢাকা শহরের প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসার কথা উচ্চারিত হয়েছিল এই গানে- দেশের রাজধানীর প্রতি প্রেমের বানী বড় আঙ্গিকে দেখলে দেশের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ হিসেবেও দেখা যায় । যা হোক, সরাসরি দেশপ্রেম নিয়ে গান জেমস করেন পরবর্তী অ্যালবামেই, তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম 'পালাবে কোথায়" তে ছিল লতিফুল ইসলাম শিবলির লেখা "সারে তিন হাত ভুমি" নামে একটি গান । এই গানের মাধ্যমেই জেমস প্রথম সরাসরি চিৎকার করে উঠেন প্রিয় মাতৃভুমির জন্য ! গানের কথাগুলো শিবলি ভাই এতটাই আবেগ দিয়ে লিখেছেন, যে কারো ভাল লাগতে বাধ্য ! আর জেমসের সুর ও সংগীত, গায়কী নিয়ে তো আর নতুন করে বলার কিছুই নেই !! গানের কথাগুলো ছিল এমনঃ

"টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া জুড়ে…
সবুজের মাঝে লাল কাফন আমার…
তুমি ছাড়া আর কে আছে বল…
ছন্নছাড়া এই আমার আপন?
ওগো বাংলাদেশ তুমি……আমার কবর তুমি
সাড়ে তিন হাত জন্মভুমি….



দেশ নিয়ে এই নগরের বাউলের পরবর্তী গানটা ছিল "টুগেদার" নামে একটি মিক্সড অ্যালবামে গাওয়া, গানের শিরোনাম পলাশীর প্রান্তর/ পরাধীন বাংলা । এই গানটিতে সেই ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু ১৯৭১ সাল পর্যন্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা উঠে এসেছে । গানটি লেখা ছিল বিশিষ্ট গীতিকবি গোলাম মোরশেদ এর লেখা, সুর ও সংগীত জেমসের নিজের । এই গানটি সেই ৯৪ সালের দিকে প্রকাশিত, সেই সময় থেকে ২০০০ সালের আগে পর্যন্ত স্টেজে অনেকবার এই গানটি করেছেন জেমস- তবে আজকাল আর গানটি স্টেজে করতে দেখা যায়না । গানের কথাগুলো ছিল এমনঃ

"চোখ বুজলেই দেখি পলাশীর প্রান্তর,
বিশ্বাস ঘাতক মীরজাফর
পরাজিত নবাব সিরাজুদ্দউলা,
পরাস্ত স্বাধীনতা পরাধীন বাংলা
শুরু হলো ইংরেজি শালাদের শাসন,
চুরি হলো সম্পদ ভেঙ্গে গেলো মন
বেহিসেবি কামনাতে মুখ তুলে বাংলা,
দেশ বড় চঞ্চল আগুন জ্বালা, আগুন জ্বালা/
শংকিত স্বাধীনতা, শংকিত বাংলা".....



যারা জেমসের এই পলাশীর প্রান্তর/ পরাধীন বাংলা গানটি আগে শোনেননি তাদের জন্য ইউটিউব লিংকও যুক্ত করা হল । আর এই অ্যালবামে লতিফুল ইসলাম শিবলির লেখা "নাটোর ষ্টেশন" নামে ছোটবেলার স্মৃতিচারনমূলক আরেকটি অসাধারন বিষয়ভিত্তিক গান গেয়েছিলেন জেমস, এই ইউটিউব লিংকের প্লেলিস্টে সেই গানটি সহ সম্পূর্ণ অ্যালবামটিই আছে ।



এর পরবর্তীতে ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত জেমস দুইটি ব্যান্ড অ্যালবাম(নগরবাউল ও লেইস ফিতা লেইস), একটি একক অ্যালবাম(দুঃখিনী দুঃখ করোনা), দুইটি ব্যান্ড ডুয়েট অ্যালবাম(ক্যাপস্যুল-৫০০মিলি গ্রাম ও স্ক্রু ড্রাইভার) ও বেশকিছু মিক্সড অ্যালবামে অনেক অনেক বিষয়ভিত্তিক গান করেন, বেশিরভাগ গানে প্রায় হারিয়ে যাওয়া বাংলার ঐতিহ্য তুলে ধরলেও সরাসরি ঠিক দেশের গান করেননি । বাংলাদেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী বিষয় গানে গানে তুলে ধরাও এক প্রকার দেশের প্রতি ভালোবাসারই প্রকাশ বলেই আমি মনে করি ! এই সময়ে এই ধরনের উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয়ভিত্তিক গানের নাম উল্লেখ না করলেই নয়ঃ ফিলিংসের ব্যানারে নগরবাউল অ্যালবামে নাগ নাগিনীর খেলা গানে এক সময়ে সারা বাংলায় বিচরন করা বেদেদের জীবন তুলে ধরা হয়েছে । এই অ্যালবামেরই যাত্রা গানটিতে এখনো ঐতিহ্য হিসেবে সারা বাংলায় প্রচলিত যাত্রাপালার গল্প ছিল। অন্যদিকে এই অ্যালবামের মন্নান মিয়ার তিতাস মলম নামে লতিফুল ইসলাম শিবলির লেখা আরেকটি কালজয়ী গানে এখন ঢাকার রাস্তায় চোখে পড়ে এমন মলম বিক্রেতার জীবনের সঙে হৃদয় যাতনায় ভুগছে এমন একজন মানুষের চিৎকার মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়- অসম্ভব ব্যতিক্রমধর্মী এই গানে । স্ক্রু ড্রাইভার অ্যালবামে বাংলার লাঠিয়াল নামে একটি গান ছিল- সকলেই জানেন জমিদার জোতদারদের আমলে লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে চর দখলের একটা ব্যাপার ছিল, এখনো হয়তো কোন কোন জায়গায় আছে সেই অবস্থা- সেই লাঠিয়ালদের স্মরণ করেই এই গান । লেইস ফিতা লেইস অ্যালবামের টাইটেল গানে লেইসফিতা ওয়ালাদের জীবন তুলে ধরা, কিংবা বায়স্কোপ গানে এক সময়ে সারা বাংলাদেশের গ্রামে হেটে হেটে যে বায়স্কোপ ওয়ালারা বায়স্কোপ দেখাতেন- তা স্মরণ করা হয়েছে । এই অ্যালবামেরই আরেকটি গান ছিল হাউজি নামে, এই হাউজির প্রচলন হয়তো এখনো কোথাও কোথাও আছে । দুঃখিনী দুঃখ করোনা অ্যালবামে টাইটেল গানের মাধ্যমে নারী জাগরনের কথা, সুলতানা বিবিয়ানার মাধ্যমে হারানো শৈশবের কথা স্মরণ করানোর পাশাপাশি আরও বেশি কিছু বিষয়ভিত্তিক গান ছিল । তবে সুস্মিতার সবুজ ওড়না নামে যে গানটি, এই গানটিতে সবুজ ওড়নাকে আসলে বাংলাদেশের সবুজ পতাকা অথবা সবুজ প্রকৃতিকে বোঝানো হয়েছে । জেমস ও দেহলোভির যৌথ ভাবে লেখা এই অসাধারন গানটির কথা ছিল এমনঃ

সুস্মিতার সবুজ ওড়না উড়ে যায়, উড়ে যায় ।
ছুঁয়ে যায় নিঝুম মফস্বলের সবুজ মাঠ
ছুঁয়ে যায় দুখিনী মায়ের দুখিনী ললাট
দূর আধারে দূর জঙ্গলে
ঐ পাহারে, ঐ সাগরে
ছুঁয়ে ছুঁয়ে চলে যায ।

বাধাহীন উড়ে যায়
নীল আকাশ ছুঁয়ে যায়
রাতদিন উড়ে যায়
কাজল দিঘি ছুঁয়ে যায়
ছুঁয়ে যায় যমুনার বুকের মলাট
ছুঁয়ে যায় আকাশের নীল সীমানা ।

পথে পথে উড়ে যায়
সাওতাল ছুয়ে যায়
ছোট নদী বটগাছ
সমতট ছুয়ে যায়
ছুঁয়ে যায় পথিকের পায়ে হাটা পথ
ছুঁয়ে যায় আমার বুকের জমাট।

সুস্মিতার সবুজ ওড়না উড়ে যায়, উড়ে যায়।।
ছুঁয়ে যায় নিঝুম মফস্বলের সবুজ মাঠ,
ছুঁয়ে যায় দুখিনী মায়ের দুখিনী ললাট,
দূর আধারে দূর জঙ্গলে,
ঐ পাহারে, ঐ সাগরে
উড়ে উড়ে চলে.......



১৯৯৯ সালে প্রকাশ পায় জেমসের চতুর্থ একক অ্যালবাম ঠিক আছে বন্ধু, এই অ্যালবামে শামসুর রাহমানের কবিতার এক চরিত্র "সুধাংশু" কে গীতিকবি মারজুক রাসেল নিয়ে আসেন ভিন্ন আঙ্গিকে ! গানের কথায় ৫২ ও ৭১ এর সংগ্রামকে মিলেমিশে একাকার করা- আর এক বন্ধুকে স্মরণ ! জেমসের অসাধারন সুর ও সংগীতে গানটি আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায় । এখনো মাঝে মাঝেই লাইভ কনসার্টে জেমস গানটি করেন । এই অ্যালবামে সুধাংশু ছাড়াও বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হাডুডু নিয়ে চমৎকার একটি গানও ছিল । সুধাংশু গানের লিরিকঃ

মনে পড়ে সুধাংশু,
সেই উনিশ পাঁচ দুই
মনে পড়ে সুধাংশু,
সেই উনিশ পাঁচ দুই
শ্লোগানে, মিছিলে এক সাথে ছিলাম,
সেই আমি আর তুই রে
সেই আমি আর তুই…
মনে পড়ে সুধাংশু,
সেই উনিশ পাঁচ দুই…

আমি ভুলি নাই… ভুলি নাই… ভুলি নাই তোরে…
আমি ভুলি নাই বাংলা মায়ের সাত কোটি সন্তানেরে
আমি ভুলি নাই রে……….
আমি ভুলি নাই রে…
ভুলি নাই তোরে…
মনে পড়ে সুধাংশু,
সেই উনিশ পাঁচ দুই…

ওরে একবার আসি একবার যাই
ওরে আমি একবার আসি একবার যাই….
যাইয়া দেখি বন্ধু তুই আজো ঘরে ফিরিস নাই
যাইয়া দেখি বন্ধু তুই আজো ফিরিস নাই….

মনে পড়ে বন্ধু,
মনে কি পড়ে তোর?
মনে পড়ে সুধাংশু,
সেই উনিশ সাত এক
দুজনার ছিলো কাধে কাধ,
আর হাতে ছিলো রাইফেল…..
সেই আমি আর তুই
সেই আমি আর তুই…
সেই আমি আর সেই তুই রে….
কাঁধে কাঁধ ছিল,
হাতে ছিল রাইফেল
সেই আমি আর তুই রে…
সেই আমি আর সেই তুই রে…
আমি ভুলি নাই… ভুলি নাই রে…
ভুলি নাই আমি বাংলা মায়ের সাত কোটি সন্তানেরে….
আমি ভুলি নাই রে….
আমি ভুলি নাই… ভুলি নাই… ভুলি নাই…
আমি ভুলি নাই তোরে…

অ্যালবামের লিংক, এখানেই আছে এই গানটিঃ




এর ঠিক বছর গানেক পরেই ২০০০ সালের শেষ দিকের কথা, সেবার রোজার ঈদ একেবারেই বছরের শেষে- ঈদ উপলক্ষ্যে অডিও কোম্পানি সাউন্ডটেকের ব্যানারে বাজারে আসে শ্রদ্ধেয় প্রিন্স মাহমুদের কথা ও সুরে জেমস ও আইয়ুব বাচ্চুর কালজয়ী ডুয়েট অ্যালবাম পিয়ানো, এই অ্যালবামে অন্য অসাধারন নয়টি গানের সাথে জেমসের গাওয়া "বাংলাদেশ" শিরোনামে" একটি গান ছিল , এই গানটির ব্যাপারে মোটামুটি সকলেরই কম বেশি জানা আছে- ২০১৬ সালে এসেও গানটি এখনো অনেক জনপ্রিয় । গানটি প্রিন্স মাহমুদ লিখেছিলেন প্রচণ্ড আবেগ নিয়ে, জেমস গেয়েছিলেনও অসাধারন । গানটিতে বাংলাদেশের গর্ব করার মত ব্যক্তিত্ত, একুশের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম, মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করা হয়েছে । আগে অনেক লাইভ কনসার্টে জেমস গানটি গাইতেন, ইউটিউব খুজলে অনেক লাইভ ভিডিও ও মিউজিক ভিডিও পাবেন, আমিও এই গানের লিরিকের শেষে কিছু লিংক যুক্ত করে দিচ্ছি । জেমসের বাংলাদেশ গানের লিরিকঃ

তুমি মিশ্রিত লগ্ন মাধুরীর জলে ভেজা কবিতায়
আছো সরোয়ার্দী,শেরেবাংলা, ভাসানীর শেষ ইচ্ছায়
তুমি বঙ্গবন্ধুর রক্তে আগুনে জ্বলা জ্বালাময়ী সে ভাষন
তুমি ধানের শীষে মিশে থাকা শহীদ জিয়ার স্বপন,
তুমি ছেলে হারা মা জাহানারা ঈমামের একাত্তরের দিনগুলি
তুমি জসীম উদ্দিনের নকশী কাথার মাঠ, মুঠো মুঠো সোনার ধুলি,
তুমি তিরিশ কিংবা তার অধিক লাখো শহীদের প্রান
তুমি শহীদ মিনারে প্রভাত ফেরীর, ভাই হারা একুশের গান ।

আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি,
জন্ম দিয়েছ তুমি মাগো, তাই তোমায় ভালোবাসি
আমার প্রানের বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি
প্রানের প্রিয় মা তোকে, বড় বেশী ভালোবাসি ।

তুমি কবি নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা উন্নত মম্ শীর
তুমি রক্তের কালিতে লেখা নাম, সাত শ্রেষ্ট বীর
তুমি সুরের পাখি আব্বাসের, দরদ ভরা সেই গান
তুমি আব্দুল আলীমের সর্বনাশা পদ্মা নদীর টান
তুমি সুফিয়া কামালের কাব্য ভাষায় নারীর অধিকার
তুমি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের, শাণীত ছুরির ধার
তুমি জয়নুল আবেদীন, এস এম সুলতানের রঙ তুলীর আঁচড়
শহীদুল্লাহ কায়সার, মুনীর চৌধুরীর নতুন দেখা সেই ভোর ।

আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি,
জন্ম দিয়েছ তুমি মাগো, তাই তোমায় ভালোবাসি
আমার প্রানের বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি
প্রানের প্রিয় মা তোকে, বড় বেশী ভালোবাসি ।

তুমি মিশ্রিত লগ্ন মাধুরীর জলে ভেজা কবিতায়
তুমি বাঙ্গালীর গর্ব, বাঙ্গালীর প্রেম প্রথম ও শেষ ছোঁয়ায়,
তুমি বঙ্গবন্ধুর রক্তে আগুনে জ্বলা জ্বালাময়ী সে ভাষন
তুমি ধানের শীষে মিশে থাকা শহীদ জিয়ার স্বপন
তুমি একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে বেজে উঠ সুমধুর,
তুমি রাগে অনুরাগে মুক্তি সংগ্রামের সোনা ঝরা সেই রোদ্দুর
তুমি প্রতিটি পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধার অভিমানের সংসার
তুমি ক্রন্দন, তুমি হাসি, তুমি জাগ্রত শহীদ মিনার ।

আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি,
জন্ম দিয়েছ তুমি মাগো, তাই তোমায় ভালোবাসি
আমার প্রানের বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি
প্রানের প্রিয় মা তোকে, বড় বেশী ভালোবাসি ।

এই গানের অডিও/ ভিডিও কিছু লিঙ্কঃ





২০০১ সালের শেষে প্রকাশ পায় ব্যান্ড নগরবাউল এর ব্যানারে একমাত্র অ্যালবাম "দুষ্টু ছেলের দল", এই অ্যালবামে "মা ও মাটি শিরোনামে অসাধারন একটি গান ছিল, গানটি যেকোন বাংলা গান থেকে ভিন্ন সুর, সংগীত ও গায়কিতে গাওয়া । জেমস ও বিশু শিকদারের যৌথ ভাবে লেখা এই গানের শুরুতে একটু গল্পের মত উল্লেখ করা ছিল- সেই গল্প সহ গানটির লিরিকঃ

যুদ্ধ শেষে যুদ্ধের ময়দান থেকে আরেক যুদ্ধে যাত্রার সময় সহযোদ্ধার দিকে চেয়ে এক যোদ্ধা ‘’শেখর’’ এর প্রতি এই দৃঢ়, ব্যথিত, অমোঘ উচ্চারণ‘’ বেঁচে থাকলে দেখা হবে, মরে গেলে আর দেখা হবে না’’। ঘটনাটি শুনেছিলাম নড়াইলের মফিজের মুখে---

"বেঁচে থাকলে দেখা হবে বন্ধুরা।
যদি একই পথে থাকি।
রাতের আঁধারে দেখ হবে
রাইফেল হাতে মুখোমুখি।

যদি ঝরে যাই, যদি ভেসে যাই
তবু বলে যাই, মনে রেখো ভাই
মনে রেখো এই আমাকে, মনে রেখো ভাই
তোমাদের চোখে, চেয়ে আছে
এই মা, ও মাটি, ও ভাই"।।

মা ও মাটি গানের লিংকঃ

২০০৩ সালে প্রকাশিত জেমসের পঞ্চম একক অ্যালবাম "আমি তোমাদেরই লোক" এ নিজের মিউজিক জীবনের শুরুর সময়ের স্মৃতি চারন, ভক্তদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গান, গার্মেন্টস কর্মীদের শ্রদ্ধা জানিয়ে বিষয়ভিত্তিক গান ছিল । হয়তো সরাসরি দেশ নিয়ে কোন গান ছিল না, বরাবরের মতই বিষয়ভিত্তিক গানের প্রাধান্য ছি এই অ্যালবামেও । তেমনি ২০০৫ সালের শুরুতে জেমসের ষষ্ঠ একক অ্যালবাম জনতা একপ্রেসেও সরাসরি দেশের গান ছিল না । অ্যালবামের টাইটেল গান জনতা একপ্রেস কিংবা লিডার আসছে গানে শান্তির বানী ছিল । আর "পোড়া চোখে ঘুম আসেনা" শিরোনামে একটি গান ছিল এই অ্যালবামে, গানটি শুনলে মনে হবে হয়তো প্রেমবিষয়ক কোন গান ! কিন্তু আসলে গানটিতে দেশের প্রতি- দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতি ভালোবাসার কথাই বলে হয়েছিল । গানটির কথাগুলো ছিল এমনঃ "পোড়া চোখে ঘুম আসেনা, কিছুতেই মনে বসে না- যতদূর চোখ যায়, ততদূর দেখি বাংলার রূপ ! প্রানে- মনে বাতায়নে বয়ে যায় ঝড়হাওয়া"..... আর ২০০৫ সালের শেষ দিকেই বিশিষ্ট গীতিকার- মিউজিশিয়ান ও সাংবাদিক তানভীর তারেকের কথা ও প্রিন্স মাহমুদের সুরে সিএমভি অডিও কোম্পানির ব্যানারে বাজারে আসে জেমস- আইয়ুব বাচ্চু ও হাসানের যৌথ মিক্সড অ্যালবাম দেনা- পাওনা, এই অ্যালবাম "ফিরে আসব বাংলায়" শিরোনামে চমৎকার একটি দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে এমন গান ছিল জেমসে গাওয়া ।




গানটির লিরিক:

রোদ্দুর নরম রোদ
শান্ত বিকেলে হাটছি একা একা
সন্ধ্যা আসে আসে একটু আনমনে পাখিদের ডাকা
ফিরে আসবো আবার, ফিরে আসবো আবার
ফিরে আসবো বাংলায়
প্রতি জন্মে আমি ফিরে আসবো আবার
ফিরে আসবো আবার তোমার চেতনায়…।

এ আকাশ এ দিগন্ত, এ সবুজ বনানী
সোনালী ফসলে আগামীর হাতছানি
এ ধুলিকনা করে আনমনা
প্রকৃতির খেয়ালে আমায়
রোদ্দুর নরম রোদ
শান্ত বিকেলে হাটছি একা একা

এ যে পলিমাটি প্রাচুর্যের ছোয়া
চাষি আর মাঝিদের মুখোরিত হওয়া
এ ধুলিকনা করে আনমনা
খেয়ালেই কাটুক তোমার
রোদ্দুর নরম রোদ
শান্ত বিকেলে হাটছি একা একা ।।

এই অ্যালবামেই ছিল গানটিঃ

সব শেষে দেশা দ্যা লিডার সিনেমায় শফিক তুহিনের কথা ও সুরে ২০১৪ সালে প্রকাশ পায় দেশপ্রেম নিয়ে আরেকটি সুন্দর গান "আসছে দেশা আসছে" এই গানটির জন্য জাতীয় চলচিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন জেমস- যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কেউ কোন রক টাইপের গানের জন্য পাওয়া জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার । গানটির কথা ছিল এমনঃ পতাকাটা খামচাতে কখনো আসে যদি শকুন আর হায়নার দল/ সংগ্রামে সংগ্রামে রুখে দাড়াতেই হবে সাহস বুকে অবিচল !

জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার পাওয়া এই গানটির লিঙ্কঃ

এইভাবে ক্যারিয়ার জুড়ে জেমস আমাদের দিয়ে গেছেন একের পর এক দেশপ্রেম নিয়ে গান, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তুলে ধরা অনেক গান । অনেক অনেক ভালোবাসা রইলো প্রিয় রকস্টার নগরবাউল জেমসের জন্য । এখন সেই আগের মত চাঙ্গা অডিও ইন্ডাস্ট্রি নাই আমাদের, বড় বড় শিল্পীরা কেউই এখন আর নিয়মিত অ্যালবাম প্রকাশ করেন না । জেমসেরও একক অ্যালবাম নেই ৮ বছর হতে চলল, আশার কথা হচ্ছে অনলাইনের মাধ্যমে আবার মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে আমাদের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি, প্রত্যাশা অচিরেই ফিরে আসবে সেই সোনালী সময়- আবার নিয়মিত প্রকাশিত হবে বাংলা গান । জয় হোক বাংলা ব্যান্ড সংগীতের, বাংলা গানের ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.