![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমরা জাতি হিসেবে কতটা ত্যাগী তা পৃথিবী দেখেছে সেই ১৯৫২ সাল এবং ১৯৭১ সালে। একটা জাতি তার নিজ সত্তা টিকিয়ে রাখার জন্য আমরা উদাহরণ। পৃথিবীর একমাত্র দেশ যারা ভাষা মমতায় নিজের জীবনের মমতা ছেড়ে দিয়েছে, নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছে বাংলা ভাষার রক্ষায়। সেই সেনারা ছিল বাংলা ভাষার প্রধান সিপাহী।
একটা সময় ছিল যখন সন্ধ্যা নামলে চারেদিকে ধুম পড়ে যেত রাখালি, বাউল, পুঁথি , পল্লীগীতি, ভাটিয়ালী, জারি, সারি গান। শীতের সকাল, ফজরের নামাজ শেষ করে বের হয়েছে কৃষাণ। ঘন কুয়াশা চারেদিকে দুই কদম সামনে ভালো মত কিছু দেখা যায় না। গাঁয়ে তার শুধু একটা ছেড়া গেঞ্জি। পরনে সাত পুরানা ফুটা লুঙ্গী। সেটা আবার মাটি থেকে আধ হাত উপরে।মাটি অনুভব করছে তার পায়ের ধপধপানি। শরীর তার কাঁপছে তারপরেও মুখে তার ছিল বাংলার গান "রসুল নামে"।
সন্ধ্যা নেমে এসেছে ধান কাটা এখনো শেষ হয়নি। কয়েকজন কৃষাণ একসাথে শুর ধরেছে "আমার সোনার ময়না পাখি", "লোকে বলে বলে রে"ইত্যাদি।
মাঝি রাতে নৌকা বাইতে বাইতে বউকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি থেকে ফিরছে। মুখে ছিল তার ভাটিয়ালী গান।
গ্রামের বউ শাশুড়িরা বসতো করিম চাচার কাছে পুঁথি শুনতে।
এটা ঠিক খুব বেশিদিন আগের কথা না। বলা যায় দুই যুগের মধ্যে পুরো দেশটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন বাংলার ঐতিহ্য প্রায় মরার পথে বললেও ভুল হবে না। যারা দুই চারজন চর্চা করে সেগুলো নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
চারিদিকে এখন পশ্চিমা সভ্যতার আগ্রাসন, শুধু গান কি? তাদের কালচার অনুসরণ করতে গিয়ে ছেলেরা হয়েছি মেয়ে আর মেয়েরা হয়েছে ভোগের সামগ্রী। আমরা নিজের ঐতিহ্য তো হারিয়েছি। সাথে মেয়েদেরকে দিয়ে করাচ্ছি ব্যবসা। মেয়েদেরকে ভোগের সামগ্রী বলাটায় শ্রেয় মনে হয়। মেয়েদের স্বাধীনতা দেবার নামে আধুনিক নিয়মে ভোগ করা হচ্ছে। আসলে মেয়েরা কি স্বাধীনতা পেয়েছে?
আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেও হারিয়ে ফেলেছি। ত্রিশলক্ষ শহীদ, দুই লক্ষ মা বোনের সম্মান আমরা রাখতে পারিনি। শেষ বেলাতে আমরা আধুনিক সভ্যতার কাছে প্রায় হার মেনেই নিয়েছি। মেনে নিয়েছি আমাদের নিজের কোন সভ্যতা নেই, নিজের কোন ব্যক্তিত্ব নেই।
কিন্তু আমরাই তো ওই জাতি যারা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি, একাত্তরে প্রাণ ও ইজ্জত খুয়েছি। তারা এতো সহজে সভ্যতার কাছে হার মানবে এটা মেনে নেয়াটা খুব বেশি কষ্টের। খুব বেশি বেদনাদায়ক।
এই বেদনা নিয়ে এই দেশ খুব বেশিদিন বাঁচতে পারবে না।
আমাদের দেশ, সংস্কৃতি আমাদের রক্ষা করতে হবে। আজ এটাই আমাদের যুদ্ধ।
©somewhere in net ltd.