![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নানা কারণে এই লেখা লিখতে হলো | আজকাল নারীদের ধর্ষণের কারণ হিসেবে তাদের ছোট কাপড়কে দোষারোপ করা হচ্ছে | নারীদের পোশাকের ওপর হিন্দু ফতোয়া, যা এইবঙ্গে এর আগে কখনো দেখা যায় নি, তাই দেয়া হচ্ছে | সেই জন্য আমার মনে হলো যে অতীত হিন্দু ভারতে নারীদের পোশাক কেমন ছিল সেটা অনুসন্ধান করে দেখা প্রয়োজন | সেই অনুসন্ধানের তথ্যসূত্র হিসেবে মহাকবি কালিদাসের রচনাগুলিকে অনেক নির্ভরযোগ্য বলে মনে হয়েছিল |
প্রাচীন কবিতাগুলির ঐতিহাসিক মূল্য
ইতিহাসের প্রমান হিসেবে প্রাচীন লেখা, স্থাপত্য ভাস্কর্য ইত্যাদি ব্যবহৃত হয় | এইগুলি থেকেই সেই যুগের লোকেদের জীবন জানা যায় | আমরা মুঘল যুগ জানতে সেখানকার স্থাপত্য ভাস্কর্য পুঁথি ইত্যাদি ব্যবহার করি | সেরকম প্রাচীন ভারতকে জানতেও আমরা সেখানকার ঐসব প্রমান ব্যবহার করব | তার আগে কয়েকটা জিনিস পরিষ্কার করে নেয়া উচিত |
চিহ্ন, প্রতীক, রূপক, রূপকধর্মী রচনা বা মেটাফর
এই জিনিসগুলির সংজ্ঞা আমি এখানে দিলাম | এর উদ্দেশ্যটা পরে বুঝা যাবে |
চিহ্ন = এটা একটা বস্তু যা অন্য একটা বস্তুকে বোঝায়
প্রতীক = এটা একটা বাস্তব বস্তু যা একটা অদৃশ্য বস্তুকে বোঝায় |
মেটাফর বা রূপক = একটা বস্তু যা সমধর্মী অন্য বস্তুকে নির্দেশ করে |
আলেগরী বা রূপক ধর্মী রচনা = এটা হলো একটা গল্প যা তার সীমার বাইরের কোনো কিছুকে নির্দেশ করে |
তথ্যসূত্র : চিহ্ন প্রতীক রূপক রূপক রচনা
মহাকবি কালিদাসের রচনায় দেখা যায় নারীদেহের গ্রাফিক বর্ণনা | এটা কালিদাস কেমন করে করলেন যদি তিনি নারীদেহ না দেখে থাকেন ? নারীর স্তন যে উন্নত তা তিনি কি করে বুঝলেন যদি তিনি প্রকৃত স্তনটা না দেখেন ? নারীর নিতম্ব যে ভারী তা তিনি কি করে বুঝলেন যদি তিনি ওই নিতম্ব না দেখেন ? নারীর উরু যে কলাগাছের গুঁড়ির মত তাই বা তিনি কি করে বুঝলেন যদি তিনি উরু না দেখে থাকেন ? এই বর্ণনা থেকে এটা স্পষ্ট যে কালিদাস নারীদেহ ওপেনলি দেখেছিলেন | তাহলে হিন্দু নারীরা কিরকম পোশাক পরতেন ?
কালিদাসের ঋতুসংহার কবিতা থেকে এটা সম্পর্কে জানা যায় | সেখানে গ্বিভিন্ন ঋতুতে নারীর পোশাক সম্পর্কে বলা আছে | গ্রীষ্মে নারী “অতি মিহি বস্ত্রখন্ডে নিতম্ব আবৃত করে, কখনো বা সমুন্নত স্তনদ্বয়ে চন্দন লেপন করে, কখনো বা কুঞ্চিত কেশদামে গন্ধদ্রব্য মেখে প্রিয়তমের সন্তোষ উত্পাদনে প্রয়াসী হচ্ছে |.......কখনো উন্নত স্তনদ্বয়ে শুভ্র হার ঝুলিয়ে বা স্বর্ণ মেখলায় নিতম্ব আবৃত করে দিয়ে ” প্রিয়তমের মনে চাঞ্চল্য জাগাচ্ছে | বর্ষাকালে নারী “সুপ্রশস্ত নিতম্বকেও কেশদাম দিয়ে আবৃত করে রেখেছে , সমুন্নত স্তনতটে ফুলমালা ঝুলছে..........বারাঙ্গনারাও নিজেদের মনোলোভা সাজে সজ্জিত করেছে |” শেষের পংক্তি থেকে বুঝা যায় আগের বর্ণনা গুলি কুলবধুর | এছাড়া ওই বর্ষাতেই নারীর “উন্নত ও মনোলোভা স্তনাগ্রে ফুলমালা শোভা পাচ্ছে আর সুপ্রশস্ত নিতম্বদেশে শুভ্র চিক্কন বসন শোভা পাচ্ছে........” |শরত্কালে নারী “ফুলমালায় স্তনযুগল আর অতি সুক্ষ্ম বসনে নিতম্ব” ঢেকে রেখেছে | হেমন্তকালে “ বস্ত্রখন্ডে স্তন আর নিতম্বদেশ উরু পর্যন্ত আবৃত করে শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে |” শিশিরকালে “মাত্রাতিরিক্ত বস্ত্রে নিজেদের দেহ” আবৃত করে নারীরা | বসন্তকালে আবার নারীরা চিক্কন মেখলায় নিতম্ব আর ফুলমালায় স্তনদ্বয় আবৃত করে |
তাহলে উপরের আলোচনা থেকে দেখা গেল যে হেমন্ত আর শীতকাল বাদ দিয়ে বাকি ঋতুগুলিতে নারী মিহি চিকন বস্ত্রে নিতম্ব আর ফুলমালায় স্তন ঢাকে | শীতের দিনের পোশাক মাত্রাতিরিক্ত বলে বিবেচিত হয় | এই মিহি চিকন বস্ত্রের কথায় বাংলার মসলিনের কথা মনে পড়ে যায় | মিহি চিকন বস্ত্রে নারীদেহের প্রতিটি বাঁক দেখা যায়, নিতম্ব, যোনী ইত্যাদি দেখা যায় আর ফুলমালায় ঢাকা স্তন তো খুবই দেখতে পাওয়া যায় | সেই কারণেই কালিদাস এত গ্রাফিকালি নারীদেহ বর্ণনা করতে পেরেছেন | এই ছিল আপামর নারীর বস্ত্র |
হিন্দু নারীদের এই সুক্ষ্ম বস্ত্রের বহুল প্রয়োগ দেখা যায় ভারতের মূর্তিগুলির উপর | নারীমূর্তি , তা সে খাজুরাহই হোক কি দক্ষিন ভারত হোক, সর্বদাই চিকন বস্ত্র পরে নিজেদের শরীরের চড়াই উতরাই দেখাতে ব্যস্ত | আজকের হিন্দু (?) দের কাছে এটা হয়ত অশ্লীলতা, সৌজন্যে ইংরাজি শিক্ষা, কিন্তু প্রাচীন ভারতে এটা মোটেই অশ্লীলতা ছিল না | হলে এই মূর্তিগুলি এত বছর ধরে এখানে টিকে থাকত না | এরাই সময়ের সমুদ্র পেরিয়ে অতীত ভারতের সমাজের বার্তা বর্তমানের ভারতের কাছে পৌছে দিচ্ছে |
আপত্তি
অনেকে এখানে আপত্তি তুলতে পারেন যে কালিদাসের রচনা হলো প্রতিক বা রুপকের ব্যবহার আর স্থাপত্যগুলি হলো কবিকল্পনা | তাদের জন্যই প্রথমে আমি রূপক টুপকের অর্থ বলে দিয়েছি | এইবার সেই অর্থে ফেলে আসুন বিচার করি | নগ্ন নারিদেহের অঙ্গগুলি যদি রূপক বা প্রতিক হয় তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে কিসের বা কার রূপক বা প্রতিক ওগুলো ? কারণ কবি যে বস্তুকে শব্দে প্রকাশ করতে পারেন না সেটাকেই তিনি প্রতিক বা রুপকের সাহায্যে প্রকাশ করেন | তাহলে এখানে বিজ্ঞজনেরা কি বলবেন যে নগ্ন নারীদেহ দিয়ে কবি কোন বস্তুর কথা বলতে চেয়েছিলেন ?
একটা উদাহরণ দিলে বুঝা যাবে | মেঘদূত কবিতা | মেঘ কখনো দূত হতে পারে না | কারণ সে জড় বস্তু | কিন্তু দুতের সাথে মেঘের একটা সাদৃশ্য আছে | উভয়েই গতিশীল | তাই কালিদাস মেঘকে দুতের রূপক বানিয়েছেন | কারণ দূত ওই গন্ধর্বের নির্বাসনের জায়গায় নেই | তাই মেঘকে দুতের রূপক বানানো | অর্থাৎ রূপক প্রয়োগের পিছনে যার রূপক সেই বিষয় প্রকাশের ক্ষেত্রে একটা জোরদার বাধা আছে | তাই রুপকের ব্যবহার | কালিদাসের প্রেমের কবিতায় নগ্ন নারীদেহ তাহলে কিসের রূপক ? কোন বিষয় কালিদাস ওই সব প্রেমের কবিতা যেমন ঋতু সংহার ইত্যাদিতে প্রকাশ করতে পারেননি , যার জন্য রুপকের ব্যবহার করেছেন ? উত্তরটা বিজ্ঞজনদের উপরই ছেড়ে দিলাম |
তাহলে আজকে যারা নারীরা ছোট বস্ত্র পরে বলে অহিন্দুতার আপত্তি জানায় তারা কোন সংস্কৃতির কথা বলে ? ইংরেজরা মসলিনকে ধ্বংস করেছে অশ্লীলতার দোহাই দিয়ে | ছোট বস্ত্র আসলে কোনভাবেই নারীর সৌন্দর্যকে কলঙ্কিত করে না | তা বরং ওই সৌন্দর্যকে প্রকাশিত করে | আর এইটাই হয়ত লোকেদের ভীষণ আপত্তির বিষয় |
এই অনুসন্ধান থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে আজকে হিন্দু নারীদের পোশাক হিসবে যে আপাদমস্তক ঢাকা শাড়ি ব্লাউজের প্রচলন দেখা যায় , তা অতীত হিন্দু নারীদের পোশাক ছিল না | হিন্দু নারীরা দেহসৌন্দর্যকে ঢেকে রাখায় বিশ্বাসী ছিলেন না | একমাত্র শীতকালে বাধ্য হতেন নিজের দেহের সৌন্দর্যকে ঢেকে রাখতে | শৈত্যপ্রবাহের জন্য | এই আপাদমস্তক ঢাকা শাড়ি ব্লাউজের কারণে পঞ্চাশ বছরের নারীর ভরাট সৌন্দর্যও আজ দেখা যায় না , ধরে নেয়া হয় ওই বয়সে মেয়েরা বুড়ি | কিন্তু এটা সর্বদা সত্য নয় | আমি নিজে অনেক পঞ্চাশোর্ধ নারীর ভরাট স্তন আর নিতম্ব দেখেছি | রেখা , যে হিন্দি ফিল্মের অভিনেত্রী , তিনি ষাটোর্ধ , কিন্তু এখনো সুন্দরী |
বাঙালি নারীরা প্রথমে ব্লাউস পরতেন না | শাড়ি দিয়ে স্তন ঢাকতেন | কিন্তু ইংরেজরা প্রথমে তাদের ব্লাউস পড়তে বাধ্য করে |
যাই হোক , এই রচনা আশা করি অনেকের চোখ খুলে দেবে | হিন্দু নারীদের আসল পোশাক কি ছিল সেটা লোকের সামনে আনাটাই আমার উদ্দেশ্য | কতটা তা সিদ্ধ হলো তা আপনাদের কমেন্ট থেকে বুঝব |
২| ০৭ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:১৩
বিজন রয় বলেছেন: মানুষের রুচি, চাহিদা সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়। এটা ভাল দিক।
৩| ০৭ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:১৪
পাউডার বলেছেন:
গোল্ডেন জিপিএ নাকি?
এখনকার কবিতাতেও নগ্ন মহিলার বর্ণনা থাকে। তো দুশ বছর পর কবিতা পড়ে আবার কোন ছাগ্লা ধারনা করবে যে ২০১৬ সালে ঢাকায় মেয়েরা ল্যাংটা হয়ে হাঁটত!
০৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:৩৪
আমি দুরের পাখি বলেছেন: ২০১৬ সালে মেয়েরা ল্যাংটা হয়ে হাঁটে তবে ঢাকার রাস্তায় নয় , ভারতের রাস্তায় | ঢাকায় মেয়েদের মর্জিমাফিক কাপড় পরার উপায় আছে ? যেরকম সন্ত্রাসী বাতাবরণ তা পাকিস্তানকেও হার মানিয়ে দেবে |
৪| ০৭ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৩০
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আচ্ছা, নির্মলেন্দু গুনের কবিতা পড়ে ১০০ বছর পর কি মানুষ ভাববে এদেশের নারীরা কাপড় পরতো না? সেও তো নগ্নতার কথা বলেছে!!
০৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:৩৫
আমি দুরের পাখি বলেছেন: তা ভাবলে ক্ষতি কি ?
৫| ০৭ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৫১
তাওহিদ হিমু বলেছেন: কালিদাসের কবিতা দিয়ে নগ্নতার প্রমাণ হয় না। কবিগণ রূপক অর্থেই বলেন। এযুগের আপাদমস্তক আবৃত নারীকেও কবিরা নগ্নভাবে বর্ণনা করেন। তবে প্রাচীন কালের পোষাকের চিহ্ন হতে পারে পুরাতন মূর্তি গুলো, যেগুলো হাজার হাজার বছর টিকে আছে।
০৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:৩৬
আমি দুরের পাখি বলেছেন: কবি রূপকে বলেছেন বুঝলাম কিন্তু ভাস্কর্যগুলোও কি রূপক নাকি ? তাহলে তো আপনিও একটা রূপক |
৬| ০৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:৩২
আমি দুরের পাখি বলেছেন: ভালো কথা | কালিদাসের কবিতাতে প্রমান হয় না | খাযুরাহের এবং ভারতের অন্যত্র পাওয়া ভাস্কর্যে নারীর দেহের দৃশ্য দিয়েও কি প্রমান হয় না ? তাহলে কিসে প্রমান হয় ? টাইম মেশিনে চড়ে ওই সময়ে যেতে হবে নাকি প্রমান করতে ?
যতসব ফালতু কথা |
৭| ০৮ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:৩৪
অতৃপ্তচোখ বলেছেন: সময়ের বিবর্তনে মানুষের বোধশক্তি বাড়ছে।
ভালো লাগলো ভাই। ঘুম পাচ্ছে, পরে আরেকবার আসবো
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:০৬
অগ্নিবেশ বলেছেন: সব কিছুই পরিবর্তন হয়ে যুগোপযোগী হয়।
কি পোশাক কি আশাক কি ভাষাক।
কিতাবেরও পরিবর্তন দরকার, না হলে ফুটফাট ফাটতেই থাকবে।