নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রশ্ন কর | প্রশ্ন করা প্রাকটিস কর |

আমি দুরের পাখি

চক চক করলেই সোনা হয় না

আমি দুরের পাখি › বিস্তারিত পোস্টঃ

চীনা বাগ্মিবিদ্যা (রেটরিক)

০২ রা আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:০১


প্রশ্ন হতে পারে হটাত চীনা বাগ্মিতা নিয়ে লিখছি কেন ? কারণ আমরা গ্রিক বাগ্মিতা আর ভারতীয় বাগ্মিতা জানি কিন্তু চীনা বাগ্মিতা অতটা জানি না | তাই জ্ঞানের সম্প্রসারণের জন্য এই চীনা বাগ্মিতা নিয়ে লিখলাম |

ইতিহাস

চিনের ইতিহাসে বাগ্মীদের উল্লেখ পাওয়া যায় অটাম স্প্রিং পর্ব আর যুদ্ধরত রাজ্যগুলির পর্বে | এই সময়তেই চিনের রাজ্যগুলিতে বাগ্মীরা ঘুরে ঘুরে বেড়াতেন এবং রাজাদের কাছে বিভিন্ন রাজনৈতিক উপায় নিয়ে কথা বলতেন | এদের নাম ছিল যথাক্রমে ইউশুই (ভ্রাম্যমান বাগ্মী), জিনজিয়াং (রাজাদের নীতি প্রদর্শক )| এরা চিনের এক বৃহত পরম্পরা ছিল | কিন্তু চীনে এই বাগ্মিতা শিখানোর কোনো প্রণালীবদ্ধ উপায় ছিল না | তবে বাগ্মিতা শিক্ষা করা হত এবিষয়ে সন্দেহ নাই কারণ চীনে এক দার্শনিক স্কুল ছিল যার নাম ছিল মিংবিয়ান (নাম তর্ক) | এই শ্রেনীর দার্শনিকরা বিভিন্ন তর্কের বা আর্গুমেন্টের পিছনে যে যুক্তি ছিল সেটা নিয়ে আলোচনা করত |

বাগ্মিতা শিক্ষা করা ছিল রাজনীতির এক অপরিহার্য অঙ্গ | বাগ্মী লোকেদেরই রাজসভায় কদর ছিল | বাগ্মিতা হলো মানুষ ও রাজনীতিকে বোঝা | একাডেমিক ক্ষেত্রেও এই বাগ্মিতার গুরুত্ব ছিল | বাগ্মিতা দিয়ে বিপক্ষের শিক্ষাবিদদের ও রাজনীতিকদের স্বমতে আনার জন্য এটা খুব দরকার ছিল |

এই বাগ্মিতার একটি শব্দভান্ডার আছে | সেটা নিচে দিলাম :


চীনা ভাষায় ৬ টা টার্ম বা শব্দ আছে যা বাগ্মিতার ক্ষেত্রে কাজে লাগে | সেগুলি হলো :

১] ইয়ান (yan)
ভাষণ, ভাষার ব্যবহার

২] চি বা কি (ci)
ভাষণের ধারা বা রীতি , আলোচনাশৈলি ইত্যাদি

৩] জিয়ান (jian)
উপদেশ দেয়া

৪] শুই (shui)
ব্যাখ্যা দেয়া, প্ররোচনা দেয়া

৫] মিং (ming)
নামকরণ, প্রতিক ব্যবহার, জ্ঞানতত্ব ইত্যাদি

৬] বিয়ান (bian)
পার্থক্য, পরিবর্তন, ন্যায় বাগ্মিতা, তর্ক, বিতর্ক, বিতর্কমূলক আলোচনা

চিনের বাগ্মী ও তার শ্রোতা

চিনের বাগ্মিদের তিন ভাগে ভাগ করা যায় | এদের যথাক্রমে কেসি (ceshi), সুশি (shushi) আর জুএশি (xue shi ) বলে | shi শব্দটা সাধারনভাবে শিক্ষিত লোকেদের বেলায় প্রযোজ্য | আসলে তিন জায়গায় প্রধানত বাগ্মিতার দরকার ছিল : রাজনীতি তথা প্রশাসন, নৈতিক শিক্ষা আর গবেষণা | এই তিন ধরনের বাগ্মী তিন জায়গায় অভ্যাস করতেন | এদের মধ্যে আবার সুক্ষ্ম ভাগ আছে যেমন বিয়ানশি তর্কে পারদর্শী, মুসি কৌশলে, কাশি তদন্তে, বেনশি লেখায় ইত্যাদি |

চিনের বাগ্মিদের মত তাদের শ্রোতারাও ছিল তিন রকম | শাসক, বিশ্ববিদ্যালয় আর সামাজিক এলিটেরা |

বাগ্মিতার পদ্ধতি


১] সবচেয়ে ইম্পর্টান্ট পদ্ধতি হলো নৈতিকতা | চীনা বাগ্মীরা নৈতিকতার ওপর খুব গুরুত্ব দিয়েছেন | কোনো একটা কাজ সামাজিক অবস্থানগত চাহিদার অনুকুল হবে কিনা এটা ছিল খুব ইম্পর্টান্ট পদ্ধতি | উদাহরণ : একজন ডাক্তার কি গর্ভপাত করতে পারে না পারে না ? এই প্রশ্নের উত্তর হলো সমাজ ডাক্তারদের কাছ থেকে কি আশা করে , গর্ভপাত না জীবনদান ?

২] ইতিহাস অথবা বাস্তব থেকে একটা রিয়েল লাইফ উদাহরণ দিয়ে কোনো মতকে সমর্থন করা | উদাহরণ : বাংলাদেশে জনতা ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ পছন্দ করে : এই মত সমর্থন করতে গুলশান হত্যাকারী আর মুক্তমনাদের হত্যাকারীর প্রতি বাংলাদেশের মানুষের নরম মনোভাব হলো বাস্তব উদাহরণ আর ৭১এর যুদ্ধে পাকিস্তানিদের মদত দেয়া হলো ইতিহাস থেকে উদাহরণ |

৩] ইতিহাসের গল্পকে বাস্তবের উপমা হিসেবে ব্যবহার করা আরেকটি পদ্ধতি | চিনারা অনেকসময় বানানো গল্পের সাহায্যও নিত | প্রাকৃতিক ঘটনাবলির সাহায্যও নেয়া হত |

৪] এই উপায়টি হলো বাস্তব অবস্থার ভালো মন্দ বিচার | কোনো একটা বাস্তব সমস্যার বিভিন্ন বকল্প সমাধান এনে হাজির করা হত | তারপর প্রতিটা বিকল্পের ভালো মন্দ বিচার করা হত | যেমন কোনো চিঙ্গের সমন্তরাজা লু আক্রমন করতে যাবে | এক বাগ্মী এসে বলল যে লু আক্রমন করলে ওই সমন্তরাজার কোনো লাভ হবে না কারণ লু ছোট ও দুর্বল শহর | পুরো ক্রেডিট চিঙ্গের রাজার সেনাপতিরা পাবে | বরং তার জায়গায় উই আক্রমন করলে ওই সামন্তরাজার লাভ হবে কারণ উই বড় ও শক্তিশালী শহর আর তাতে চিঙ্গের সেনাবাহিনীর শক্তি পরীক্ষা হবে | ওই সামন্ত রাজার কোনো বড় পদপ্রাপ্তি হতে পারে |

৫] এছাড়া চিনারা আবেগ কে প্ররোচনা বা মন্ত্রনার ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করত | উদাহরণ হিসেবে আজকের পলিটিকাল বক্তৃতার কথা বুঝা যেতে পারে | এখানে ভীতিপ্রদর্শনও একটা উপায় হিসেবে ব্যবহার করা হত |

৬] গুনবত্তা প্ররোচনা বা মন্ত্রণা বা বাগ্মিতার আরেকটা হাতিয়ার ছিল | জং ঘেং মতের বাগ্মীরা গুনবত্তার উল্লেখ করতেন মন্ত্রনার সমর্থন হিসেবে আর নৈতিকতাকে অন্যের মন্ত্রনার মানদন্ড হিসেবে ব্যবহার করতেন |

৭] নামকরণ বা সংজ্ঞায়িত করণ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় | এর দ্বারা নৈতিক বিমূর্ত বিষয়গুলিকে একটা সুষ্ঠু আকার দেয়া সম্ভব হত | এটা পিওর লজিকের ক্ষেত্র |

৮] কাজে করে দেখানোটাও মন্ত্রণা বা প্ররোচনার একটা হাতিয়ার ছিল |

৯] নিজের উদাহরনও ছিল আরেকটা হাতিয়ার | এটাই শেষ হাতিয়ার |

চীনা বাগ্মী সংস্কৃতি

চীনে এমনিতে অনেক বাগ্মী সংস্কৃতি ছিল তবে এই লেখায় আমি তিনটি সংস্কৃতির উল্লেখ করলাম : কনফুসিয়, শিন জু আর ছুয়াং জু |

ক] কনফুসিয় ধারা

এই ধারায় বক্তার নিজের চরিত্রের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে | বক্তা যদি নিজে চরিত্রবান না হয় তাহলে সে কাউকে প্রভাবিত করতে পারে না | বক্তা যদি সমাজের চোখে লুচ্চা লাফাঙ্গা হয় তাহলে সমাজের কেউই তার কথায় গুরুত্ব দেবে না | বক্তা যদি সমাজের চোখে চরিত্রবান গুনি হয় তবেই সময তার কথা শুনবে |

খ] শিন জু ধারা

শিন জু কনফুসিয় ধারারই অনুসারী |

তাঁর মতে শ্রোতার বিভিন্ন বিশ্বাস আছে | বক্তাকে সেই বিশ্বাস গ্রহণ করতে হবে আর তা দিয়েই শ্রোতার হিত কিভাবে হয় সেটা বলতে হবে | লক্ষনীয় যে এখানে বক্তা শ্রোতার বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করছেন না , আক্রমণও করছেন না , তিনি ওই বিশ্বাসটাকে দিয়েই শ্রোতার হৃদয় পরিবর্তন করছেন | এটাই শিন জুর বক্তব্য |

গ] ছুয়াং জু ধারা

ছুয়াং জু বলেছেন প্রকৃতির সাথে এক হয়ে যেতে | তিনি কনফুসিয় ধারার ঠিক বিপরীত | তিনি বলেন যে সামাজিক নিয়মকানুনের বেড়াজালে সত্য থাকে না | সত্য প্রকৃতির নিয়মের অনুসরণেই পাওয়া যায় | তিনি বাকচাতুর্যকে প্রশ্রয় দেন নি | তিনি তাওবাদী ছিলেন | তিনি নিঃশব্দকে সত্যের একমাত্র বাণী বলেছেন |

উপসংহার

সময় আর স্থানাভাবে সংক্ষেপে চীনা বাগ্মিবিদ্যা সম্পর্কে বলতে হলো | ভুলত্রুটি মার্জনা করে দেবেন দয়া করে | চিনের বাগ্মিতা সম্পর্কে বাংলাভাষায় খুব কম লেখাই বেরিয়েছে | আমার এই ছোট্ট লেখা তার মধ্যে একটা ছোট্ট অবদান |

তথ্যসূত্র :

Perspective on classical Chinese theories of rhetoric by D. Ray Haisey

Persuasion in chinese culture : a glimps of the ancient practice in contrast to the west by ling chen, hongkong Baptist university

Both downloaded from net.

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:১২

পুলহ বলেছেন: পোস্ট প্রিয় তালিকাতে যুক্ত করলাম।
খুব অন্যরকম একটা প্রসঙ্গ নিয়ে লিখেছেন। ব্লগে এ ধরণের ইন্টেলিজেন্ট এবং নির্ভরযোগ্য লেখা দেখতে এবং পড়তে খুব ভালো লাগে।
"বক্তা যদি সমাজের চোখে লুচ্চা লাফাঙ্গা হয় তাহলে সমাজের কেউই তার কথায় গুরুত্ব দেবে না | "-- কনফুসিয় ধারার এ পয়েন্টটা তো মনে হয় হিউম্যান সাইকোলজির একটা বিশেষ দিক সম্পর্কেও ইঙ্গিত করে!
আবারো ধন্যবাদ আপনাকে এতো চমৎকার একটা লেখা উপহার দেয়ার জন্য।
ভালো থাকবেন ভাই।

২| ০২ রা আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:৩৫

রমিত বলেছেন: সুন্দর পোস্ট!

৩| ০২ রা আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:৩৬

সিগনেচার নসিব বলেছেন: ধন্যবাদ শেয়ারের জন্য

৪| ০২ রা আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৯

জেন রসি বলেছেন: তাওবাদ কিংবা কনফুসিয় মতবাদ দুইটা বিপরীতধর্মী মতবাদ। শুধুমাত্র মতবাদের আলোকে তর্ক করা বা পলিসি ঠিক করলে অনেক সময় সেটা অযৌক্তিক কিছুও হয়ে যেতে পারে।

ভালো পোস্ট।

৫| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৬:৩৮

মাষ্টারমশাই বলেছেন: চমৎকার লেখা। অনেক কিছুই জানা গেলো। আরো লিখুন। ভিন্নধর্মী পোস্ট। ধন্যবাদ।

৬| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:৪৮

আসাদুল ইসলাম আব্দুল্লাহ বলেছেন: ভালো লিখেছেন। তথ্যবহুল পোস্ট।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.