নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রশ্ন কর | প্রশ্ন করা প্রাকটিস কর |

আমি দুরের পাখি

চক চক করলেই সোনা হয় না

আমি দুরের পাখি › বিস্তারিত পোস্টঃ

যুদ্ধ যখন শিল্প (ইন্ডাস্ট্রি): আমেরিকার যুদ্ধব্যাবসায়িদের ইতিকথা

০১ লা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:০৪


নানা কারণে এটা লিখতে হলো | আজকে পৃথিবীতে সবচেয়ে যুদ্ধ বাধায় যে দেশটা তার নাম আমেরিকা | এই লেখায় আমি দেখাব যে আমেরিকার জন্ম থেকে বর্তমান কাল অব্দি যেসব যুদ্ধ সে লড়েছে তার আসল সত্যিটি কি ? সেসব যুদ্ধ কি এড়ানো যেত না , না ইচ্ছে করে এড়ানো হয়নি ? এই প্রশ্নটারই উত্তর খুঁজবো আর চেষ্টা করব ভবিষ্যতকে দেখার | পাঠক প্রস্তুত হোন |

এই কাজে আমি সাহায্য নিয়েছি সোভিয়েত অর্থনীতিবিদ জর্জি সাগলোভের লেখা বই ওয়ার ইস দেয়ার বিজনেস | বইটাতে বিস্তারিত ভাবে যে বিষয়টি লেখা আছে তা হলো আমেরিকার যুদ্ধব্যাবসা বা মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স | এইটাই আজকের উপজীব্য | বইটা কলেজ স্ট্রিটের মনীষা গ্রন্থালয় থেকে পেয়েছি | প্রগতি প্রকাশন মস্কো থেকে এটা ছাপিয়েছিল |

১] যুদ্ধব্যাব্সার ইতিহাস : কিভাবে এইসব শুরু হলো ?


যুদ্ধব্যাব্সার জন্মদাতা পুঁজিবাদ | এই পুঁজিবাদী সমাজের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো সেনা-রাষ্ট্র-একচেটিয়া কারবারের অশুভ আঁতাত | এই যুদ্ধব্যাব্সার দায় একা যুদ্ধবাজির বা অস্ত্রের প্রতিযোগিতার (আর্মস রেস) নয় | সাম্রাজ্যবাদ যুদ্ধবাজির (মিলিটারিজম) সৃষ্টি করেছে | রাষ্ট্র আর একচেটিয়া কারবারের অশুভ আঁতাত জন্ম দিয়েছে পুঁজিবাদের | এই পুঁজিবাদ জন্ম দিয়েছে একজন অত্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল ও আগ্রাসী একচেটিয়া যুদ্ধ ব্যবসায়ী আর রাষ্ট্রের যুদ্ধবাজ অংশের অশুভ আঁতাতকে |

যুদ্ধব্যাবসায় যত বাড়তে লাগলো ততই এটা নিজস্ব প্রতিষ্ঠান, প্রপাগান্ডা এজেন্সি আর লবি ইত্যাদির সৃষ্টি করতে লাগলো | এটা নিজেই একটা শক্তি হয়ে দাঁড়ালো |

আমেরিকার কমিউনিস্ট পার্টির একটা প্রোগ্রামে লেখা হয়েছিল যে এই যুদ্ধব্যাবসায়িদের দুনিয়ার চরিত্ররা ঘোরাফেরা করে পেন্টাগন, প্রশাসন আর অস্ত্র প্রস্তুতকারক শিল্পের আঙ্গিনার মধ্যে | এর মধ্যে বিভিন্ন সরকারী গুপ্ত সংস্থা যেমন ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল, সি আই এ , এফ বি আই, পেন্টাগন, কিছু হাতে গোনা কনগ্রেসনাল ও হোআইট হাউস কমিটি আছে যাদের কাজকর্ম জনতার কাছে গোপন রাখা হয় | এটা এক ধরনের অদৃশ্য সরকার |

এই যুদ্ধব্যাবসায় দুম করে তৈরী হয় নি | আমেরিকার জন্ম থেকেই মৃদুভাবে এটা ছিল | এই সময় নাগরিকরা আর্মিকে নিয়ন্ত্রণ করত | ১৮ আর ১৯ শতক ধরে এই আর্মি শুধুই উত্তর আমেরিকায় নিজেদের প্রাধান্য অটুট রেখেছিল | কিন্তু বিংশ শতক থেকেই পরিস্থিতি পাল্টায় | পুঁজিবাদ আমেরিকায় সাম্রাজ্যবাদের পরযায়ে পৌঁছায় | এর ফলে উপনিবেশের প্রয়োজন দেখা দেয় | কিন্তু সেই সময় পৃথিবী বিভিন্ন উপনিবেশে বিভক্ত ছিল | আমেরিকাকে তার সেনাবাহিনীর বৃদ্ধি করার দরকার হয়ে পড়েছিল | বিশেষত নৌবাহিনী |

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আমেরিকাকে সেনাবাহিনীর বৃদ্ধির সুযোগ এনে দেয় | এইসময় বহু মার্কিন কোটিপতি কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার বানায় যুদ্ধের কন্ট্রাক্ট থেকে | যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র আর জিনিসপত্রের বরাত থেকে কোটি কোটি ডলার কামায় এরা | কংগ্রেস একবার অস্ত্রশিল্পের ভিতর তদন্ত করেছিল | তাতে উঠে এসেছে যে যুদ্ধের সময় ২২০০০ নতুন কোটিপতি তৈরী হয়েছে | এতে বুঝা যায় যে যুদ্ধ মার্কিনদের কাছে কতটা লাভজনক | এই তদন্তের পর প্রতিরক্ষা শিল্প জাতীয়করণ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল কিন্তু তা খারিজ হয়ে যায় | হবে নাই বা কেন ?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই এই যুদ্ধব্যাবসায় আরো বেড়ে ওঠে দেশের ভিতরে এবং বাইরে | এই কমপ্লেক্সকে অনেক ফ্যাক্টর আজকের আকার দিয়েছে | কিছু পুরনো ও কিছু নতুন ফ্যাক্টর | এইসব ফাচ্তর্দের মধ্যে রাষ্ট্র আর একচেটিয়া সামরিক উত্পাদন একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর |

যুদ্ধ ব্যবসার দুইটি প্রধান অঙ্গ আছে : যুদ্ধাস্ত্র প্রস্তুতকারক সংস্থা আর সেনাবাহিনীর দপ্তর আর আমলারা | প্রথমটি হলো যুদ্ধব্যাব্সায়ের মূল ভিত্তি | এই দুইটি প্রতিষ্ঠান পরস্পরের সাথে যুক্ত আছে শুধু তাদের সাধারণ স্বার্থে নয় , যা আসলে যুদ্ধবাজি করা , পরন্তু রাষ্ট্র আর একচেটিয়া সম্পর্কের সুত্রে | এই সম্পর্কের মধ্যে পড়ে অস্ত্র কেনার কন্ট্রাক্ট ব্যবস্থা যা কিনা ডাইরেক্ট নেগোশিয়েশন আর ক্লোজড বিডিং এর উপর গঠিত | যুদ্ধ প্রযুক্তির উন্নতির ফলেই এই কমপ্লেক্স গড়ে উঠেছে | কিভাবে সরকার আর অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানি যুক্ত তার একটা উদাহরণ দেয়া যাক |

আলেকজান্ডার হেইগ | ইনি ইউরোপে ন্যাটোর সুপ্রিম এলায়েড কমান্ডার ছিলেন | সেনা বাহিনীর লোক | সেখান ১৯৭৯ সাল নাগাদ থেকে তিনি হয়ে গেলেন একটা এরোস্পেস কোম্পানি (যারা মিসাইল, যুদ্ধবিমান ইত্যাদি বানায়), ইউনাইটেড টেকনোলজির প্রেসিডেন্ট | পুরোপুরি ব্যবসায়ী | এক বছর পর ইনি হলেন ইউ এস সেক্রেটারি অফ স্টেট, আমলা | সেনা-কোম্পানি-সরকারী আমলা | যোগসূত্রটা আশা করি বুঝা গেল | তবে হেইগ-ই একমাত্র উদাহরণ নন |

১৯৫৯ সালে কংগ্রেশনাল কমিটি যে সার্ভে করে তাতে দেখা যাচ্ছে যে, ১৯৫৯ সালেই পেন্টাগনের ১০০ কন্ট্রাক্টর ৭৬৮ জন অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসারকে কোম্পানিতে নিয়োগ করে | ১০ বছর পর সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ২০৭২ জন ---এদের মধ্যে ২১০ জন লকহিড এয়ারক্রাফট, ১৬৯ জন বোয়িং, ১৪১ জন ম্যাকডনেল ডগলাস (আরেকটা অস্ত্র নির্মাতা),১১৩ জন জেনারেল ডাইনামিক্স ইত্যাদিতে নিযুক্ত হয় | সবই সেনা বাহিনী থেকে ব্যবসায়ে আসার দৃষ্টান্ত |

কিন্তু সেনা অফিসারদের কেন ব্যবসা জগতে নিয়োগ চলছে ? ব্যবসার তারা কি বোঝে ? আজ্ঞে কিছুই বোঝে না | তাদের কাজ হলো লাল ফিতের ফাঁসটা খুলে দেয়া | তারাই পারে এটা করতে | সুতরাং এদেরকে বোর্ডের চেয়ারম্যান করে দাও | ব্যাস , তরতরিয়ে চলবে ব্যবসা | চলছেও তাই |

অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিরও এইভাবে প্রতিরক্ষার ব্যাপারে নাক গলাচ্ছে | অর্থনীতিবিদ জন কেনেথ গলব্রেথ বলেছেন যে অস্ত্র নির্মাতারা প্রতিরক্ষা দপ্তরকে উপদেশ দিচ্ছে যে কোন সিস্টেমটা কেনা উচিত | অর্থাৎ অস্ত্র বিক্রি করছে | সেনাবাহিনীর জন্য কি প্রয়োজন তা সেনা অফিসাররা জানেন , কিন্তু তাদের কোনো গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না | কিন্তু অস্ত্র নির্মাতারা সেনার প্রয়োজন কি বোঝে ? কিছুই না | কিন্তু সেনাবাহিনীর অফিসারদের কায়েমী স্বার্থের জন্য এইসব আনাড়িদের কথা শুনা হচ্ছে | বেশ একটা উইন উইন অবস্থা না ?

আজ্ঞে না | এই গোটা খেলাতে উইনার দুইজনই : অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানি , যারা কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার মুনাফা করছে |আর কিছু অসাধু সেনা অফিসার আর আমলা, যারা মাইনের টাকায় ফুলে ফেঁপে উঠছে | আর লুজার সবাই | লুজার দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা , যা দিনকে দিন ঢিলে হয়ে যাচ্ছে | লুজার আপামর আমেরিকাবাসী যাদের ট্যাক্স-এর টাকায় এই রদ্দি সিস্টেমগুলি কেনা হচ্ছে | লুজার এইসব হতভাগা আমেরিকান সেনারা, যারা এইসব রদ্দি মাল নিয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিজের প্রাণ অথবা হাত পা খুইয়ে আসে | লুজার তাদের পরিবার যারা পথে বসে | স-অ-ব লুজার |

এখানে একটা কথা বলি | একটা চালু ভারতীয় প্রবাদ আছে | আমেরিকায় যা খুব পুরনো, ইউসলেস, সেটা তারা ভারতে বেচে | কথাটা কিন্তু সত্যি নয় | এইসব অস্ত্র কোম্পানিগুলি তাদেরকে সেই গুনমানের মালই বেচবে যার টাকা দেয়া হবে | এরা বোঝে ফেল কড়ি মাখো তেল , কেউ কি আমার পর | তাহলে ভারতের সেনার এই দুর্দশা কেন ? এর দুটো ব্যখ্যা হতে পারে | প্রথমত ভালো গুণমানের মাল কেনা হয় না | দ্বিতীয়ত অস্ত্র যথেষ্ট দক্ষতার সাথে ব্যবহার করা হয় না | দুটিই যথেষ্ট অস্বস্তিকর | নয় কি ?

২] অস্ত্র নির্মাতা : মৃত্যুর সদাগরেরা

এইবার অস্ত্র নির্মাতারা, যারা মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স এর মূল ভিত্তি তাদের একটু দেখা যাক |

১] জেনারেল ডাইনামিক্স

এটির মালিক হেনরি ক্রাউন | এটি সর্ববৃহৎ অস্ত্র নির্মাতা | তিনি এত বড় অস্ত্র নির্মাতা যে তাকে “মৃত্যুর সওদাগর” আখ্যায় ভুষিত করা হয়েছিল | এই কোম্পানির বোর্ডে বহু অবসরপ্রাপ্ত আর্মি অফিসার, পেন্টাগনের অফিসার আর সামরিক গবেষনার বিজ্ঞানী আছে | কোম্পানির পেরোল-এ প্রায় ২০০ অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল, এডমিরাল, অন্যান্য উচ্চ পদের অফিসাররা আছেন | ১৯৮২ তে এফ ১৬ বিমান বিক্রি করে এই কোম্পানি তিন বিলিয়ন ডলার মুনাফা করেছিল |

২] ম্যাকডনেল ডগলাস

এটা পেন্টাগনের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী | এই কোম্পানি জেমস ম্যাকডনেল নামের একজন ইঞ্জিনিয়ারের তৈরী | এটা একটা এয়ারক্রাফট কোম্পানি | এই কোম্পানিই টমাহক ক্ষেপনাস্ত্র, এফ ১৫ সুপারসনিক ফাইটার বম্বার, ড্রাগন এন্টি ট্যাঙ্ক ক্ষেপনাস্ত্র, হারপূণ নেভাল ক্ষেপনাস্ত্র, ফ্যান্টম, স্কাইহক, এফ ১৮ ফাইটার প্লেন, ভূমি থেকে আকাশ, আকাশ থেকে আকাশ, আকাশ থেকে ভূমি ক্ষেপনাস্ত্র ইত্যাদি তৈরী করে | সাধারনত এই কোম্পানির সাফল্যের কারণ বলতে এর প্রযুক্তিগত সাফল্যকে বলা হয় কিন্তু কথাটা সত্যি নয় | এর তৈরী বহু প্লেন, বিশেষত এফ ১৮ ডিজাইনের ত্রুটির জন্য দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে | বহু পাইলট মারা গেছে | আমেরিকান পাইলটরা এর নাম দিয়েছে হ্যাঙ্গার কুইন | তাহলে এই কোম্পানির সাফল্যের কারণ কি ? কেন পেন্টাগন এর কাছ থেকে প্লেন কেনে ? তার রহস্য হলো : বহু অবসরপ্রাপ্ত সেনা আধিকারিক এর বোর্ড মেম্বার | ১৯৮০ সালে ১৮০ জন অবসরপ্রাপ্ত সেনা আধিকারিক এই কোম্পানির পে রোলে ছিল | রিয়ার এডমিরাল লয়েড হ্যারিসন নেভিতে থাকাকালীন ম্যাকডনেল-এর ত্রুটিপূর্ণ ডেমন ফাইটার প্লেন কিনেছিলেন যা হয় ক্রাশ করত নয়তো আকাশে থাকাকালীন আগুন লেগে যেত | হ্যারিসনের অবসরগ্রহনের পরের বছরই ম্যাকডনেল তাকে বোর্ডে নিয়েছিল |

৩] হিউজেস এয়ারক্রাফট

এই কোম্পানিটা হাওয়ার্ড হিউজের | আপনারা দি এভিয়েটর মুভিটা দেখেছেন বোধহয় | মুভি টা এই হাওয়ার্ড হিউজের জীবনের ওপর নির্মিত হয়েছিল | এই কোম্পানিটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই উন্নতি করছিল |কারণ হিউজ মিলিটারির টপ অবসরপ্রাপ্ত অফিসারদের বোর্ডে নিয়েছিল | এদের মধ্যে ছিলেন জেনারেল ইরা একার আর হ্যারল্ড জর্জ | একার ছিলেন বায়ুসেনার প্রাক্তন ডেপুটি কমান্ডার | জর্জ ছিলেন এয়ার ট্রান্সপোর্ট স্টাফদের চিফ | এরা রকেট শিল্পে লাভজনক সরকারী কন্ট্রাক্ট এনেছিলেন | কিন্তু যখন আইজেনহাওয়ারের নেভির সেক্রেটারি চার্লস টমাস যোগ দেন তখন সরকারী কন্ট্রাক্ট-এর বন্যা বয় | হিউজ এদের মোটা মাইনে দিয়ে রাখতেন | কোম্পানি পেন্টাগনকে সবরকম অস্ত্র সাপ্লাই দিত : রেকি উপগ্রহ থেকে হেলিকপ্টার গানশিপ : সবই সাপ্লাই হত | কোরিয়া আর ভিয়েতনামের যুদ্ধে এই কোম্পানি প্রভূত মুনাফা অর্জন করেছে | পেন্টাগন ছাড়া সি আই এ এবং অন্যান্য সরকারী সংস্থার সামরিক কার্যকলাপ (পড়ুন অন্যদেশের গণতান্ত্রিক সরকার ছুঁড়ে ফেলা ইত্যাদি ) ইত্যাদিতে এই কোম্পানি অনেক সাহায্য করেছিল | অর্থাৎ অন্যদেশের অন্তর্ঘাত, বিদ্রোহ, ইত্যাদিতেও আমেরিকার অস্ত্রশিল্পের কারবারীদের হাত আছে |

৪] চার্লস থর্নটন আর লিটন ইন্ডাস্ট্রিস

এর সব কিছুই আগের তিনজনের মত তবে উল্লেখ্য বিষয় হলো রবার্ট ম্যাকনামারা, যিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হন, এই ফার্মের বোর্ডে ছিলেন |

মোটামুটিভাবে আমেরিকার অস্ত্রের কারবারীরা একই স্ট্রাটেজি নিয়েছে : সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলদের বোর্ডে নাও আর তাদের দিয়ে সরকারী কন্ট্রাক্ট বাগাও | এর মধ্যে সি আই এ আদি সরকারী সংস্থাগুলিরও যোগসাজশ আছে | ইরাকে পরমানু অস্ত্র পাবার রিপোর্টটা আদ্যোপান্ত জাল ছিল | এটা বানানো হয়েছিল কোনো এক অস্ত্র ব্যবসায়ীর পোষা জেনারেলের অঙ্গুলিহেলনে | এখন সেটা বোঝা যাচ্ছে | এটাই সেনা-অস্ত্র নির্মাতা আঁতাত |

এইবার দেখা যাক এই মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স-এ সামরিক কুশীলব কারা ?

৩] সব পেন্টাগনের লোক : সামরিক অংশ

ক] পেন্টাগনের অফিসাররা কারা ?

পেন্টাগনের টপ লেভেল আর্মি অফিসারেরা হলো পেন্টাগনের এলিটদের এক অংশ | এরা কারা ? এরা হলো সব শিল্পপতি, জমিদার, আমলার ছেলে মেয়েরা | এককথায় পয়সাওলা ধনী ঘরের ছেলে |

এলিটদের আরেক অংশ হলো বিভিন্ন সার্ভিসের সেক্রেটারি আর তাদের ডেপুটিরা | এই গ্রুপটা সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স চালায় | এদের প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করে | এরা সিভিলিয়ান অফিসিয়াল | আর এদের কাজ হলো আর্মির উপর সিভিলিয়ান কন্ট্রোল বজায় রাখা | আর্মি যাতে লাগামছাড়া না হয় সেটা দেখা | কিন্তু বাস্তবে এটা ফাঁকা বুলিমাত্র | এর অনেক কারণ আছে | প্রথমত সিভিলিয়ান অফিসারদের কাজের মেয়াদ ছোট | প্রশাসনের পালাবদলের সাথে সাথে তারা যায় আসে | অন্যদিকে আর্মি অফিসাররা পেন্টাগনের অধীনে কাজ করে বলে তাদের মেয়াদ বেশি | তারা অনেক স্টেবল | দ্বিতীয়ত আর্মি অফিসারদের প্রমোশন হয় তাদের বড়কর্তার সুপারিশে, সিভিলিয়ান লিডারদের সুপারিশে নয় | তৃতীয়ত সিভিলিয়ান লিডারদের নিজেদের কাজ সম্বন্ধে কোন জ্ঞান নেই | তাই তারা আর্মির সঙ্গে আপোস করে চলেন যে আর্মিকে তাদের কন্ট্রোল করার কথা | তারা এইসব পদে আসেন প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে সুসম্পর্কের সুবাদে | উদাহরণ : জন লেহমান, নেভির সেক্রেটারি হবার আগে ছিলেন এবিংটন নাম এক কনসাল্টিং এজেন্সির প্রেসিডেন্ট আর রোনাল্ড রেগানের নির্বাচনী পরামর্শদাতা | বেরন অর্র, এয়ার ফোর্সের সেক্রেটারি হবার আগে ছিলেন কালিফোর্নিয়ার এক ফিনান্স কোম্পানির ডিরেক্টর আর রেগানের ঘনিষ্ঠ | জন মার্স, আর্মির সেক্রেটারি হবার আগে ছিলেন উকিল আর রেগানকে তিনি আইনি পরামর্শ দিতেন |
চতুর্থত সিভিলিয়ান অফিসারদের বেতনের পরিমান নির্ভর করে কোন বিভাগ তারা চালাচ্ছে তার উপর | এইখানেই সেনার সাথে তাদের স্বার্থ এক হয়ে যায় | সিভিলিয়ান অফিসাররা বড়জোর সেনার মুখপত্র হিসাবে কাজ করে | তারা সেনার বার্তা কংগ্রেসে তুলে ধরে | যদি তারা এটা না করে তাহলে কোনো গুরুত্বপূর্ণ খবরই তারা পাবে না | সেনা অফিসারদের এই খবর চেপে যাবার ক্ষমতা আছে |
তাই আর্মির ওপর কোন সিভিলিয়ান কন্ট্রোল নাই |

খ] কিভাবে অস্ত্র কেনাবেচা হয় এইবার সেইটা বলি |

যেসব অফিসাররা পেন্টাগনের টপ লেভেলে আছেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগই অস্ত্র ব্যবসায়ী কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত | এরা হলেন মূলত রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট শাখার অফিসার | পেন্টাগনে আসার আগে এরা অস্ত্র কোম্পানিতে কাজ করতেন | সেখান থেকে পেন্টাগন | আবার পেন্টাগন থেকে অস্ত্র কোম্পানিতে তারা ফিরে যান | এরাই নতুন অস্ত্র তৈরির জন্য সর্বদা অতি উত্সাহী থাকে | এদের সাথে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ থাকে | যখনি প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়সংকোচ করা হয় তখনি এইসব অস্ত্রব্যাব্সায়িরা বলে তাদের উত্পাদন কমে যাবে | একই সাথে ছাঁটাই বাড়বে মানে বেকারী বাড়বে | এই সুরে তাল মেলান সেনেটররা যাদের এলাকায় বেকারী বাড়বে | এইখানেই অস্ত্রব্যাবসায়ী-সেনা-রাজনীতিকের অশুভ আঁতাত তৈরী হয় | এর ফলে ডিফেন্সে ব্যয় কোনদিনই কমে না | আর দেশ একটার পর একটা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে |

গ] আমলারা কিভাবে পেন্টাগনকে নিয়ন্ত্রণ করে ?

পেন্টাগনে যথাযথ কার্যদক্ষতার পরিমাপ করতে না দিয়ে | পেন্টাগনের অফিসারদের সবসময় চেষ্টা থাকে যেন কিছুতেই ভালো ম্যানেজমেন্ট প্রাকটিস পেন্টাগনে না আনা যায় | এর পক্ষে সব্বাই ওকালতি করে : সেনা থেকে আমলা | পেন্টাগনে যেসব জটিল কার্যপ্রক্রিয়া চলে তার কোনো মূল্যায়ন হয় না | কোনো কস্ট এফেক্টিভনেস-এর মূল্যায়ন হয় না | আমলারা বিভিন্ন রিসার্চ প্রজেক্টের ভবিষ্যত খুব ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখাতে শুরু করে | এটাই সেনা-আমলা আঁতাত | এই ব্যবস্থাটা নিজে থেকেই চলতে থাকে | এর ফলে পেন্টাগন ডিফেন্স বাজেট নয়ছয় করে | আর কোনো কিছু যা পেন্টাগনের আর্থিক বরবাদী করার এই ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয় সেগুলিকে পেন্টাগন এই সেনা-আমলা আঁতাত দিয়ে ঠেকিয়ে রাখে |

গবেষক জে রোনাল্ড ফক্স বলেছেন যে পেন্টাগনের সেনাকর্তারা কখনো অস্ত্র কেনাবেচার ব্যবস্থার পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন তোলে না | কারণ তারা অস্ত্র নির্মাতাদের চটাতে চায় না | রিটায়ারমেন্ট-এর পর চাকরি পাবে না বলে | আবার সরকারী আমলারা যারা তাদের বন্ধু হয়ে গেছে তাদেরও চটাতে চায় না | সুতরাং স্বার্থ কায়েম আছে |

পেন্টাগনে অনেক ডিফেন্স প্রোগ্রাম চলে যেগুলির কোনো দরকার নেই | অথচ এইসব নিয়ে কেউই মুখ খুলে না | কোটি কোটি ডলার এই করে বরবাদ হয় | সবটাই করা হয় অস্ত্র কোম্পানির স্বার্থে | রিটায়ার-এর পরে এইসব অস্ত্র নির্মাতাদের কাছে চাকরির লোভে |
সেনাকর্তারা মনে করেন (পড়ুন করতে বাধ্য হন ) যে সেনাবাহিনীর উন্নতির জন্য সর্বদা নতুন উন্নত অস্ত্রের দরকার | আপাত দৃষ্টিতে খুবই ন্যায্য কথা | কিন্তু তলিয়ে ভাবলেই বুঝা যায় যে এর পিছনে কায়েমী স্বার্থ আছে | “উন্নত অস্ত্র” বলতে কি বুঝা হয় ? কিভাবে অস্ত্রগুলির মূল্যায়ন করা হয় ? এই প্রশ্ন যদি কেউ করে তাহলে সে দেখতে পাবে যে মূল্যায়নের পরিমাপে অসংখ্য গলদ | কোনো ভালো মূল্যায়ন করার উপায় নেই | অস্ত্র কোম্পানিরা যে অস্ত্র বেচে সেটাই নিতে হয় |

রোজ নিত্য নতুন অস্ত্র কিনতে চাইলে কংগ্রেসের অনুমোদন চাই | সেটা কিভাবে পাওয়া যাবে ? যাবে সর্বক্ষণ দেশের সম্মুখে বিপদ আছে বা বিদেশে মার্কিন স্বার্থ বিপন্ন : এই গীত গেয়ে |

এডমিরাল টমাস মুর, যিনি প্রাক্তন চেয়ারম্যান অফ জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফ ছিলেন, তিনি বলেছেন : “ আমাদের মাইনে দেয়া হয় এটা বলার জন্য যে সর্বদা বিপদ আছে অথবা মার্কিন স্বার্থ বিপন্ন | এটা আমেরিকার আমজনতাকে বলতে হয় |”

পেন্টাগনের মূল ট্রেন্ড হলো ক্রমাগত অস্ত্র কিনে যাওয়া | অস্ত্র কেনার হার অনেক বেশি | যে আর্মি অফিসার জোট বেশি নতুন অস্ত্র কেনার ব্যাপারে ওকালতি করতে পারবে সে তত বেশি প্রমোশন পাবে | এই ব্যবস্থায় অস্ত্র না কিনে সেনা অফিসাররা কোথায় যাবে ?

ঘ] সেনা-আমলা-অস্ত্র নির্মাতা আঁতাত

আগেই এই আঁতাতের কথা বলেছি | এটাও বলেছি যে পেন্টাগনে সিভিলিয়ান কন্ট্রোল নামমাত্র আছে | আসলে আর্মি অফিসাররাই সিভিলিয়ান আমলাদের কন্ট্রোল করে | এইবার যখনি আর্মির বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ ওঠে তখন সেনা অফিসাররা সমস্ত দোষ এই সিভিলিয়ান আমলাগুলোর ওপরে চাপায় | সিভিলিয়ান আমলাগুলি হলো ওদের শিখন্ডি বা ঢাল | আর সরকারের স্বার্থরক্ষার জন্য নিয়োজিত কন্ট্রাক্ট এডমিনিস্ট্রেটর যার কাজ হলো অস্ত্র কোম্পানি আর সেনার সাথে চুক্তির দিকগুলি দেখা, তাদের কি অবস্থা ? যখনি কোনো পেন্টাগনের অফিসার অস্ত্র নির্মাতাদের ফ্যাক্টরিতে যায় তখন টপ ম্যানেজার-এর সাথে সেই অফিসারের গোপন বৈঠক হয় যাতে কন্ট্রাক্ট এডমিনিস্ট্রেটরকে উপস্থিত থাকতে দেয়া হয় না | এইভাবে সরকারকে বোকা বানিয়ে কোটি কোটি টাকা নিয়ে আমেরিকার আর্মি ছেলেখেলা করছে |

তবে অস্ত্র কোম্পানিগুলো উপকারীর উপকার ভোলে না | যেসব সেনা অফিসাররা তাদের মাল কেনে তাদের রিটায়ারের পর ওই কোম্পানির বোর্ডের সদস্য করে নেয়া হয় |

আচ্ছা দেখা যাক যে এই খেলার অন্যসব কুশীলব কারা ?

৪] মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স-এর রাজনৈতিক অংশ


সেনা আর অস্ত্র নির্মাতারা এই মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স-এর মূলস্তম্ভ | কিন্তু এরাও চলার পথে কিছু সহযোগী জোগার করে নেয় | এইসব সহযোগীরা কারা ?

ক] ওয়াশিংটন-এর অফিসাররা

এই অস্ত্র নির্মাতারা বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার ভোট ক্যাম্পেইন-এ টাকা ঢেলে থাকে | উদাহরণ : আমেরিকান পলিটিকাল সায়েন্টিস্ট রিচার্ড বার্নেট তার বই ইকোনমি অফ ডেথ-এ বলেছিলেন যে : একটি অস্ত্র নির্মাতা, টেক্সাসের ব্রাউন এন্ড রুট কোম্পানি লিন্ডন জনসনের পলিটিকাল কাম্পেনে টাকা ঢালে | জনসন প্রেসিডেন্ট হলে ব্রাউন এন্ড রুট প্রচুর লোভনীয় সরকারী কন্ট্রাক্ট পায় | একটা কন্ট্রাক্ট হলো দক্ষিন ভিয়েতনামে মিলিটারি বেস বানানোর | আরেকটি কোম্পানি লিং-টেমকো-ভট ইনক জনসন আর হামফ্রের ভোট প্রচারে টাকা ঢালে | এরা যখন সরকারে আসে তখন ওই ফার্ম ফুলে ফেঁপে কলাগাছ হয়ে যায় |

রিচার্ড নিক্সনকে মনে আছে নিশ্চই, ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারির হিরো ? ওনার ভোট প্রচারে টাকা ঢালে দুই অস্ত্র নির্মাতা : লকহিড এয়ারক্রাফট আর হিউজেস এয়ারক্রাফট | রেগানের ভোট প্রচারে টাকা ঢালে ব্যাঙ্ক অফ আমেরিকা, সবচেয়ে বড় দক্ষিনপন্থী সংগঠন |

এত গেল প্রেসিডেন্টের গপ্প | অন্যান্য রাজনৈতিক ক্ষমতাগুলিও যুদ্ধবাজরা দখল করে বসে আছে | যেমন সেক্রেটারি অফ স্টেট, আলেকজান্ডার হেইগ | এনার দর্শন খুব পরিষ্কার : রাশিয়ানরা আসছে | এই একই দর্শন উনি যখন ন্যাটোর কমান্ডার ছিলেন তখনও আউরেছেন বলে টাইম ম্যাগাজিন বলছে | ইনার উত্তরসুরী জর্জ সুলজও মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স-এর ঘনিষ্ঠ লোক | ইনি সান ফ্রান্সিসকোর বেচটেল কোম্পানির প্রেসিডেন্ট ছিলেন | এটি একটি মিলিটারি কনস্ট্রাকশন কোম্পানি | আরেকজন হলেন কাসপার ওয়েনবার্জার | ইনি যখন নিক্সনের বাজেট বিভাগের ডিরেক্টর ছিলেন তখন সামাজিক সুরক্ষার জন্য ব্যবহৃত বরাদ্দ এত কাটছাট করেছিলেন যে তার নাম হয়েছিল “চাকু কাস্প”| এখন সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স হিসাবে উনি খালি প্রতিরক্ষা খাটে বরাদ্দ বাড়াতে বলেন | ওনার এখনকার নাম হলো “শোভেল কাস্প” | এটা নিউস উইক-এর খবর |

খ] মার্কিন কংগ্রেস

কংগ্রেসম্যান আর সেনেটররা এই যুদ্ধবাজদের সাথে আছে কারণ যত মিলিটারি প্রজেক্ট সেনেটরদের এলাকায় হবে , ততই এমপ্লয়মেন্ট বাড়বে | ততই সেনেটরদের ভোট পাবার সম্ভাবনা বাড়বে | সুতরাং যুদ্ধবাজদের স্বাগত | এছাড়া সেনেটররা অস্ত্র কোম্পানিতে শেয়ার হোল্ডারও বটে | কোম্পানি বেশি লাভ করলে তাদেরও সম্পত্তি বাড়বে | এই কারণেই যুদ্ধের প্রস্তাবগুলি তাড়াতাড়ি কনগ্রেসে পাস হয় কিন্তু শান্তির প্রস্তাব সহজে পাস হয় না | এছাড়াও মিলিটারি লবিয়িস্ট আছে যারা আমেরিকার সবচেয়ে শক্তিশালী প্রেসার গ্রুপ | এছাড়াও আছে সেনেটরদের আলসেমি | এরা আর্মড সার্ভিস এন্ড এপ্রপ্রিয়াসন কমিটিতে আছে, যা বাজেট দেখে | এরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফাইল গুলি ভালো করে পড়ে না | তাই প্রজেক্টের ব্যাপারে বিস্তারিত জানে না | এদেরকে তাই নির্ভর করতে হয় পেন্টাগন অফিসার, লবিয়িস্ট আর ডিফেন্স স্টাফদের উপর | তাই চটপট প্রতিরক্ষা বাজেট পাস হয়ে যায় | খাঁটি ভারতীয় প্রবলেম, নয় ?

গ] সিভিক সংস্থা

বিভিন্ন দক্ষিনপন্থী রাজনৈতিক সংগঠনও এই যুদ্ধবাজদের মদতদাতা | এগুলি যুদ্ধবাজরাই তৈরী করেছে | বিভিন্ন অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিরা মিলে এইসব সংস্থা তৈরী করে | এদের কাজ হলো দেশের বাইরের বিভিন্ন বিপদ সম্বন্ধে জনগনকে সচেতন করা | সোজা কথায় জনমত গঠন | এই রকম একটি সংগঠন হলো দি আমেরিকান সিকিউরিটি কাউন্সিল | এটা আসলে অস্ত্র নির্মাতাদের অতি পুরনো একটা সংস্থা | তৈরী হয় ঠান্ডা যুদ্ধের সময় | প্রায় ১৭০০ কোম্পানি এর মেম্বার ছিল সত্তরের দশকে |

ঘ] যুদ্ধবাজ চিন্তাবিদ

হ্যা শুনে খুব হাসি পাবারই কথা | কিন্তু দক্ষিনপন্থী চিন্তাবিদদের এছাড়া আর কি বলা যায় ? এরা কারা ? এইসব অস্ত্র নির্মানের প্রজেক্টে কাজ করা বিজ্ঞানী তথা গবেষকদের দল | এরাও পেন্টাগনের সাথে গলা মিলিয়ে যুদ্ধের পক্ষে ওকালতি করে আর জাতীয় নীতি নির্ধারণে সাহায্য করে | উদাহরণ : রান্ড কর্পোরেশন | এটা বায়ুসেনা আর ডগলাস এয়ারক্রাফট-এর মিলিত ভেঞ্চার | এই সংস্থা থেকে বহু রিসার্চ স্কলার ও এক্সপার্ট প্রেসিডেন্ট রেগানের বিদেশ নীতি আয়োগের সদস্য হয়েছেন | রেগানের বিদেশ নীতি আসলে এই যুদ্ধবাজরাই বানায় | এদের মধ্যে অন্যতম হলো ফ্রেড ইকলে |

বিশ্লেষণ

তাহলে বন্ধু পুরো গল্পটা কি দাঁড়ালো ? যুদ্ধ আমেরিকার মজ্জায় মজ্জায় ঢুকে গেছে | যা শুরু হয়েছিল সেনা-অস্ত্রনির্মাতা-আমলা আঁতাত দিয়ে, তার মধ্যে ঢুকে গেছে রাজনৈতিক নেতা, সিভিক সংগঠন, বুদ্ধিজীবী, সাংসদ, মিডিয়া, বিনোদন স-অ-ব | মার্কিন মিডিয়া সর্বদা যুদ্ধের পক্ষে ওকালতি করে | আর হলিউড ? এই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি কোনদিন এমন ছবি কি নির্মান করেছে যাতে কোনরকম যুদ্ধ মারদাঙ্গা নেই ? এই ইন্ডাস্ট্রি-র ম্যাক্সিমাম ছবিতে টাকা ঢালে ব্যাঙ্ক অফ আমেরিকা, আগেই বলেছি | ব্যাঙ্ক অফ আমেরিকা যুদ্ধবাজদের একটি প্রমুখ সংস্থা | এই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে যুদ্ধ ঢুকে যাচ্ছে আপামর জনতার মধ্যে , ছড়িয়ে পড়ছে ক্যান্সার-এর মত | তাই তো আজ আমেরিকানদের যুদ্ধের পক্ষে রাজি করানো এত সোজা | এটাই মূলধারা | ব্যতিক্রম কেউ থাকতেই পারেন, তবে তারা ব্যতিক্রমই |
এইরকম ব্যতিক্রম ছিলেন জন এফ কেনেডি | ভিয়েতনাম যুদ্ধ থামাতে গিয়েছিলেন | এই কায়েমী স্বার্থ তাঁকে হত্যা করে | তাঁর হত্যাকারী যে মার্কিন প্রশাসনের মধ্যেই আছে এই বিষয়ে এখন আর কোনো সন্দেহই নেই | ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারী না হলে ভিয়েতনাম যুদ্ধ কখনই থামত না | আরেক ব্যতিক্রম ছিল হিপিরা | এরাও যুদ্ধের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল | এদের উপরেও আঘাত নেমে এসেছিল | এদের নিয়ে পরে লিখব |

এই লেখা পড়ার পরে আমাদের আমেরিকার প্রতিটি কথা নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করা চলবে না | বিজ্ঞানীরা যা বলে তা নিজেদের স্বার্থে বলে , সত্যের জন্য বলে না | আমাদের নিজেদের সতর্ক থাকতে হবে | আর আমেরিকা কোনদিনও যুদ্ধ থামাবে এই আশা করলে চলবে না | স্বাধীনতা যুদ্ধ দিয়ে আমেরিকার যুদ্ধের শুরু , তারপরে গৃহযুদ্ধ, বিশ্বযুদ্ধ, উপসাগরীয় যুদ্ধ, ঠান্ডা যুদ্ধ, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ........| তালিকা বেড়েই চলেছে | পরে আরো যুদ্ধ আসবে | তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগতেই পারে |

এই লেখা আরো ব্যাখ্যা করে কেন আমেরিকা সবার সব ব্যাপারে নাক গলায় ? যুদ্ধবাজ কোম্পানিগুলি অস্ত্র বেচবার জন্যই মার্কিন সরকারকে দিয়ে দাদাগিরি করায় | এই সঙ্গে এটাও বুঝতে হবে যে সাধারণ আমেরিকানরা যুদ্ধ চায় না | তারা আসলে মগজধোলাই-এর শিকার | যুদ্ধ শুধু কিছু লোকে চায় | যারা বিশাল সংখ্যক লোকেদের বোকা বানিয়ে মসনদে বসেছে |

মার্কিন সেনার সম্বন্ধে না লিখলে লেখাটা সম্পূর্ণ হয় না | সেনা যতটা শক্তিশালী বলে মনে হয় আসলে ততটা শক্তিশালী নয় | যে সেনাবাহিনীতে ভালো মূল্যায়নের ব্যবস্থা নেই আর ভালো ম্যানেজমেন্ট নেই, যে সেনাবাহিনী যুদ্ধবিশারদদের বদলে অস্ত্রব্যবসায়ীদের অঙ্গুলিহেলনে চলে, সেই সেনাবাহিনী কিভাবে শক্তিশালী হতে পারে ? মার্কিন সেনা যে অস্ত্রগুলো কেনে তার মূল্যায়নের কোনো ব্যবস্থা নেই | যে রিসার্চ প্রজেক্ট চালায় সেগুলির বেশিরভাগেরই কোনো দরকার নেই [মহাকাশ যুদ্ধ প্রজেক্ট হলো এমনই একটা হাস্যকর প্রজেক্ট যার কোনো দরকার ছিল না | ষ্টার ওয়ার নামে মুভি থেকে এটার উত্পত্তি |] | তাহলে সেনা ঠিক কতটা শক্তিশালী ? মার্কিন সেনাবাহিনী শুধুই একটা অস্ত্র কেনার যন্ত্রে পরিনত হয়েছে যে খালি অস্ত্র কেনে আর সেগুলিকে শুধু প্রয়োগ করে | দূর থেকে মনে হয় সেনা খুবই শক্তিশালী | কিন্তু নিকটে গেলে দেখা যাবে যে সেটা শুধুই একটা অস্ত্র কেনার যন্ত্র মাত্র | বা আরো ভালো করে বললে বলা যায় যে সেটা হলো অস্ত্র নির্মাতাদের এটিএম | যে কোনো সময় দরকার হলেই অস্ত্র বেচে যেখান থেকে অস্ত্র নির্মাতারা পকেট ভরাতে পারে | কিন্তু তাহলে যে মার্কিন বাহিনীর বীরত্বের নানা খবর পাওয়া যায় সেগুলি কি ? সঙ্গত প্রশ্ন | সেগুলি আসলে ভুয়ো খবর | ইরাকে আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী বহু মার খেয়েছে | ভিয়েতনামের মত একটা দেশ মার্কিন সেনার কবরখানায় পরিনত হয়েছিল | এইসব খবর কোনদিনও মার্কিন মিডিয়া স্বীকার করবে না | এইজন্যেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মার্কিন বাহিনী অন্য দেশের সেনাদের দিয়ে কাজ করায় | নিজের দুর্বলতাটা জানে বলেই বোধহয় | কোথাও আক্রমন করতে গেলে মার্কিন বাহিনী ন্যাটোর জোট নিয়ে আক্রমন করে | কিন্তু কেন ? বিশ্বসেরা বাহিনী হলে নিজেই যাও না কেন ? কিন্তু আসলে তা নয় | মার্কিন বাহিনী নিজের দুর্বলতাটা খুব ভালো করে জানে | তাই সে এরকম অদ্ভুত ব্যবহার করে | আমেরিকার সেনাবাহিনীর শক্তি আসলে একটা মিথ |

মার্কিন প্রশাসন ? সেটাও তো অস্ত্র নির্মাতাদের পকেটে পোরা | কি করে আমেরিকায় সুশাসন থাকবে যদি প্রশাসন দক্ষতার সাথে না চলে কতকগুলি অস্ত্র ব্যবসায়ীর অঙ্গুলিহেলনে চলে ? তাই তো দেখা যায় আমেরিকায় স্কুলে কলেজে অফিসে থিয়েটারে সর্বত্র বন্দুকবাজের উত্পাত | আর পুলিশ ব্যর্থ | যে প্রশাসনের কর্তারা ফাইল ভালো করে না পড়ে শুধু ব্যবসায়ীদের সেলস টক্-এর উপর ভরসা করে তাদের সাথে ভারতীয় কর্তাদের ফারাক কোথায় ? আমেরিকার সেনাসক্তির মত প্রশাসনিক দক্ষতাটাও একটা মিথ |

উপসংহার

আর বেশি লিখলাম না | আশা করি এই লেখা পাঠকদের ভালো লাগবে | ভালো লাগলে তারা যেন লাইক দেয় |

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:১৬

চাঁদগাজী বলেছেন:



গরুর রচনা।

আমেরিকা কি ১ম ও ২য় বিশ্বযুদ্ধ লাগায়েছিল?

০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:২৩

আমি দুরের পাখি বলেছেন: কেন হে চাঁদমামা এই এত বড় রচনাটার শেষের একটা লাইন তোমার জ্ঞানমত (?) হয় নি বলে সবটাই গরুর রচনা ?

২| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৩

অহনাব বলেছেন: লেখাটা অনেক ভাল হয়েছে। শুধুমাত্র এটা বলার জন্যই কষ্ট করে লগিন করলাম। আর এটা গরুর রচনা না। বুঝতে হলে পুরোটা ধৈর্য নিয়ে পড়তে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.