![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই পোস্ট খুব কম ব্লগারই পড়বে | তবু এটা দেয়া জরুরি মনে হলো | মুসলমান সমাজটাকে সমগ্রতার সাথে পর্যালোচনা করাটা খুবই জরুরি | এই শিরোনামে ২০১২ তে সৌমিত্র দস্তিদার একটা ডকুমেন্টারী বানিয়েছিলেন যার কথা অনীকের পুজাসংখ্যায় পড়লাম | পড়ে মনে হলো ভদ্রলোক মুসলিম সমাজের একটি মাত্র দিকই দেখিয়েছেন | একটি মাত্র ডাইমেনশন দেখিয়েছেন | কিন্তু সবটা দেখাননি | সবটা দেখালে তবেই বুঝতে পারা যাবে মুসলিম সমাজের অবস্থাটা কি আর আমাদের ঠিক কি কর্তব্য | সেই চেষ্টাটাই এই লেখাতে করতে চাই | ঈশ্বর আমার সহায় হন |
মুসলিম সমাজকে দুটি বড় ভাগে ভাগ করা যায় : বঞ্চনা আর আগ্রাসন | বঞ্চনার আবার দুটি ভাগ আছে : বিধর্মীদের দ্বারা বঞ্চনা আর স্বধর্মীদের দ্বারা বঞ্চনা | আসুন একে একে দেখা যাক |
১] বঞ্চনা
ক] বিধর্মীদের দ্বারা বঞ্চনা
এইটি বহুল প্রচলিত | সৌমিত্রবাবু এইটি আমাদের দেখিয়েছেন | এইটি আমরা স্পষ্টভাবে জানি | হিন্দুরা মুসলিমদের বঞ্চনা করেছে | বহু জায়গায় স্রেফ মুসলিম বলে কোনো এক ব্যক্তি সম্মান পাননি | কলকাতার মত অভিজাত শহরেও স্রেফ মুসলিম বলে কোনো হিন্দু বাড়িওয়ালা ঘর দিতে রাজি হয় নি | মুসলিম বলে সরকারী চাকরি পায়নি এমন মেয়েও আমরা দেখেছি | আমার নিজের ব্যক্তিগত একটা অভিজ্ঞতা বলি | আমাদের ফ্ল্যাট বাড়িতে একটা মুসলিম মেয়ে ময়লা নিতে আসে | ধরুন তার নাম আমিনা | তাকে তার মুসলিম নামে কেউই ডাকতে রাজি নয় | একজন ডাকসাইটে ফ্ল্যাট ওনার যিনি সার্ভিস চার্জ কখনই দেন না তিনি তার নাম বদলে দিলেন পদ্ম | হিন্দু নাম | ওই নামে তিনি ডাকতে ভালবাসেন | আমার মা তাকে ডাকে বউ বলে | বাবা ডাকে বৌমনি বলে | কিন্তু কেউই তাকে আমিনা বলে ডাকে না | এটা যে একটা লোককে কত বড় অপমান এই বোধটাই কোনো শিক্ষিত হিন্দুর নেই |
সংখ্যালঘু উন্নয়ন বলে এদেশে কিছু নেই | মুসলমানদের কেউ হিন্দুস্থানে ভালো করে জানেও না | হিন্দুদের কাছে মুসলমান মানে টুপি-দাড়ি-বিরিয়ানি-গরু-তিনটে বিয়ে-তালাক-দরবেশ-সুফি-কাওয়ালী-বাংলাদেশী-শায়েরী ইত্যাদি | কিছু কিছু লোকের কাছে মুসলিম মানেই সন্ত্রাসবাদী | কিন্তু মুসলিমরা যে সবাই এরকম নয় সেটাই কেউ জানতে চায় না | উপরের ইমেজ পাকিস্তানি মুসলিমদের ক্ষেত্রে খাটে কিন্তু বাংলাদেশী মুসলিমদের ক্ষেত্রে খাটে না | আরবীদের ক্ষেত্রে তো নয়ই | ইসলাম দুনিয়ার যেখানে যেখানে গেছে সেখানকার লোকসংস্কৃতিকে আপন করে নিয়েছে | বাংলাদেশী মুসলিমদের ইমেজ হলো টুপি-দাড়ি-ঝিঙে পোস্ত-গরু-একটা বিয়ে-তালাক-বাউল-বাংলা গান-কবিতা ইত্যাদি | পাঠক দয়া করে শুধরে দেবেন | আবার উচ্চশিক্ষিত মুসলিমদের ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইমেজ হলো টুপি নেই-দাড়ি নেই-যেকোনো খাবার-একটা বিয়ে-তালাক-মসজিদ-পাশ্চাত্য গান ইত্যাদি | কমিউনিস্ট সেকুলার মুসলিমও আছে | তাদের সাথে হিন্দুদের খুব একটা ফারাক নেই | উদাহরণ এই বঙ্গের কম্মুনিস্য় নেতা মহম্মদ সেলিম | কোনদিন নামাজ পড়েনি | সুতরাং হিন্দুদের মুসলমান সম্বন্ধে কোনো জ্ঞানই নেই | তারা শুধু তাদের দেশভাগের গায়ের ঝাল মেটায় |
আমরাই আজ মুসলিমদের দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক বানিয়েছি ভারতে | এই বঙ্গের জনসংখ্যার ২৫% মুসলিম কিন্তু সরকারী চাকরিতে তারা মাত্র ২%| স্কুল কলেজ গবেষনাগার কোথাও তারা সেভাবে নেই | রাজনৈতিক দলগুলির নীতি নির্ধারণে তারা নেই | আমি একটি মুসলিম রাজনৈতিক দলের খুব অভাব বোধ করছিলাম যারা মুসলিমদের স্বার্থরক্ষা করবে | মুসলিমদের জন্য লড়বে | এদেশে হিন্দু দল আছে সেকুলার দল আছে, দলিত্দেরও দল আছে কিন্তু মুসলিমদের কোনো রাজনৈতিক দলই নেই | আমরা হিন্দুরা হতেই দেই নি |
আরো একভাবে হিন্দুরা মুসলিমদের বঞ্চিত করে | তা হলো মাদ্রাসা শিক্ষাকে লুপ্ত না করে | এই মাদ্রসা হলো নরকের সিংহদুয়ার | এইখান দিয়েই একটা মুসলিম মৃত্যুর পথে এগিয়ে যায় | আমরা কেন মুসলিমদের ইংরাজি সেকুলার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করিনি ? কেন তাদের কোরানের সেকুলার ব্যাখ্যা পড়াইনি ? ইংরাজি মাধ্যমেও মুসলিমদের কোরান পড়ানো যেত এবং তা সেকুলার হতো | তাহলে তো মুসলিমরা এইভাবে মরত না |
খ] স্বধর্মীদের দ্বারা বঞ্চনা
মুসলিমরাও অনেক সময় মুসলিমদের বঞ্চনা করে | সেটা দেখা যায় যখন তারা ফতোয়া দেয় যে মেয়েরা পড়াশুনা করতে পারবে না | তাদের ঘরকন্না করতে হবে | পাকিস্তান এর অন্যতম উদাহরণ | সেখানে শুধু নারীশিক্ষা ইসলামের নামে বন্ধ হয় নি | সেখানে ইসলামের নামে অনেক ভেদাভেদ আর বঞ্চনা দেখা গেছে | সিন্ধি, বালুচ, পাঞ্জাবি, ইত্যাদি লোকেরা যদিও মুসলমান তবুও একে অপরকে দেখতে পারে না | আজ বালুচিস্তান স্বাধীনতা দাবি করছে | ভারতীয় মুসলমানদের পাকিস্তানি মুসলমানরা মোহাজির বলে | তাদের তৃতীয় শ্রেনীর নাগরিক করে রাখা হয়েছে | আরবী মুসলিমরা অন্য কোনো দেশীয় মুসলিমদের ভালো চোখে দেখে না | আরবে ব্যবসা করতে গেলে বিদেশী মুসলমানদের একজন আরবি মুসলমানকে পার্টনার করতেই হবে | নাহলে ব্যবসা হবে না | এইসব নানাবিধ বঞ্চনা দেখা যায় | আফগানিস্তানে তালিবানরা আফগান মুসলিমদের হাজারা নাম দিয়ে ঘৃনা করত |
২] আগ্রাসন
বিধর্মীদের দ্বারা মুসলিমদের বঞ্চনাকে হাতিয়ার করে একদল সুবিধাবাদী স্বার্থপর লোক বঞ্চিত মুসলিমদের খেপাচ্ছে | তাদের বক্তব্য বিধর্মীরা কাফের | তাদের মেরে ইসলামের শাসন আনলেই মুসলিমদের বঞ্চনা বন্ধ হয়ে যাবে | ইসলামিক স্টেট থেকে শুরু করে জামাতে ইসলামী বাংলাদেশ ইত্যাদি সমস্ত টেররিস্ট গ্রুপের একটাই স্লোগান : বিধর্মীদের মেরে ইসলামী শাসন নিয়ে আস | শরিয়ার শাসন নিয়ে আসো | তাহলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে | সব বঞ্চনার সমাপ্তি হবে | শুধু তাই নয় এরা পরলোকেও চলে গেছে | এরা বলছে যে শুধু ইহজীবনেই সুখী হবে তা নয় , পরলোকেও সুখী হবে | লক্ষ লক্ষ বঞ্চিত নিপীড়িত মুসলিম এই কথায় নেচে টেররিস্ট হয়ে যাচ্ছে | আর আত্মহত্যা করছে | এই পথ জীবনের নয় মুসলিমদের কাছে এটা মরণের পথ | কি নারী কি পুরুষ, কি অশিক্ষিত কি উচ্চশিক্ষিত সব্বাই এই মোহে যাচ্ছে | আর মারা পড়ছে |
এছাড়াও দারিদ্র্যও একটা কারণ | কিন্তু দারিদ্রের কারণ বঞ্চনা | যে বঞ্চিত হতদরিদ্র মুসলিম ইহলোকে পেট্রো ডলার আর পরলোকে স্বর্গসুখের খোয়াব দেখে জিহাদী হচ্ছে তাকে আমরা , যারা তাকে বঞ্চিত করে রেখেছি, ঠিক কতটা দোষ দিতে পারি ? সে কোনটাই পাচ্ছে না | না ইহলোকে অর্থ না পরলোকে সুখ | আমরা হিন্দুরা কি এক্ষেত্রে যথেষ্ট দোষী নই ?
আমাদের স্বীকারোক্তি
আমরা হিন্দুরা এক মহান পাপ করছি | মুসলিমদের বঞ্চিত করে আমরাই তাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছি | আমরা বঞ্চনা না করলে ওরা হয়ত জিহাদী হয়ে যেত না | হয়ত ওরা বেঁচে থাকত | হয়ত ওদের জীবন সুস্থ সুন্দর হতে পারত | কিন্তু ওদের আমরা কোনো সুস্থ জীবন দিতেই চাইনি | অন্ধ ধর্মীয় নোংরামি আমরা শুধু ওদের ওপর ছুড়েছি | আর সেটাই আজকে আমাদের কাছে বুমেরাং হয়ে ফিরে আসছে মুসলিম সন্ত্রাসবাদ নাম নিয়ে | আমরা বিধর্মীরা সুতরাং এর জন্য পরোক্ষ ভাবে দায়ী |
আমাদের কর্তব্য
সুতরাং আমাদের এগিয়ে আসতে হবে মুসলিমদের দিকে | তাদের সমস্যা বুঝতে হবে | তাদের আশ্রয় দিতে হবে | তাদের সেই শিক্ষা দিতে হবে যার দ্বারা তারাও আমাদের মত সুস্থ জীবন কাটায় | তাদের বঞ্চনা সর্বতভাবে বন্ধ করতে হবে | ওই পুরনো লাইফস্টাইল ভুলে যেতে হবে | এইভাবেই আমরা মুসলিম সন্ত্রাসবাদ কিছুটা হলেও কম করতে পারি | মুসলিমদের সংগঠিত করতে হবে | তাদের সেকুলার ইংরাজি মাধ্যমের শিক্ষা দিতে হবে | কোরানের সেকুলার ব্যাখ্যা , বিশেষ করে সুফি ব্যাখ্যা শিখাতে হবে যাতে করে ওরা ওই সন্ত্রাসীদের কবলে না পড়ে |
দ্বিতীয়ত মুসলিমদেরও একটা কথা বুঝতে হবে | যে বা যারা তাদের বঞ্চনামুক্তির গল্প শোনাচ্ছে তারাই কিন্তু মুসলিম দেশে মুসলমানদের শোষণ করে চলেছে | পাকিস্তান আর ওপেক দেশগুলিত ধনী দরিদ্রের ভেদ প্রচন্ড | ধনী দরিদ্র উভয়েই মুসলিম | কিন্তু ধনীরা দরিদ্রদের এক পয়সাও দেয় না | ইসলামী শাসন এলে জিহাদিদের অবস্থাও কিন্তু ঐরকমই হবে | তাদের খোঁজ নিতে হবে যে এইসব জিহাদিরা মারা গেলে তাদের পরিবারের সঙ্গে কি করা হয় | তাদের পরিবারকে ঠিক কতটা সুরক্ষা দেয়া হয় | কত টাকা পয়সা দেয়া হয় | এইগুলির প্রপার জানা উচিত | তারপর যা ভালো বোঝে সেটা করা উচিত |
০৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:৪৯
আমি দুরের পাখি বলেছেন: কোন রাজনৈতিক দল নিজের ভোটের ক্ষতি করে এই যুগান্তকারী কাজটা করবে বলে মনে হয় না । তা সেটা বাংলাদেশে হোক কিংবা ভারতে ।
ভোটের ক্ষতি কেন হবে ? তার মানে মুসলিম জনতাই চায় না মাদ্রাসা শিক্ষা বন্ধ হোক | সেক্ষেত্রে যদি পুরস্কারের বা বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা করে ওদেরকে মাদ্রাসা থেকে সরিয়ে আনা যায় | সেই চেষ্টা করে দেখতে হবে | আর এটা রাষ্ট্র ব্যতীত সম্ভব নয় |
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:২৪
শ্রাবণধারা বলেছেন: অনেক ভাল লিখেছেন । আপনার প্রতিটা পয়েন্টের সাথেই মোটামুটি সহমত পোষণ করছি। একজন মুসলিম হিসেবে আমার ধারণা এই যে মুসলমানদের মাদ্রাসা শিক্ষা থেকে বের করে নিয়ে আসাটা অত্যন্ত কঠিন । কোন রাজনৈতিক দল নিজের ভোটের ক্ষতি করে এই যুগান্তকারী কাজটা করবে বলে মনে হয় না । তা সেটা বাংলাদেশে হোক কিংবা ভারতে ।
এক সময় বৃটিশদের কাছ থেকে সেকুলার শিক্ষা বাদ দিয়ে যারা মাদ্রাসা শিক্ষা চেয়ে ছিল, আজ ঠিক ২০০ বছর পরেও সংখ্যায় তারা কম নয়, হোক সেটা রাজনৈতিক দুষ্টবুদ্ধি তাড়িত । এই ব্লগেও দেখবেন দাজ্জাল বা এই জাতীয় বিষয় নিয়ে লেখা লেখকের সংখ্যা, অথবা রবীন্দ্র-বিদ্দেষী বা খেলাফত- জামাত-শরিয়া আইন প্রেমিদের সংখ্যা কম নয় । অতএব অন্ধকার থেকে আলোর দিকে যাত্রার তেমন আশাবাদ দেখি না ।