নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রশ্ন কর | প্রশ্ন করা প্রাকটিস কর |

আমি দুরের পাখি

চক চক করলেই সোনা হয় না

আমি দুরের পাখি › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেয়েদের না বলার অধিকার

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৭:২৭

আজ একটু আগে আনন্দবাজারে মেয়েদের না বলার অধিকার নিয়ে জনৈক আনন্দবাজারি লেখক গৌতম-এর লেখা পড়লাম | ভদ্রলোক না বলার অধিকারকে ভারতীয় সংস্কৃতির অংশ বলেছেন | প্রমান হিসেবে তিনি কামসূত্র থেকে উর্বশী-পুরুরবা গল্প থেকে ঋগ্বেদ অব্দি দৌড়েছেন | সবেতেই নাকি মেয়েদের না বলার অধিকার আছে | আর সেই দুই টাকার সিনেমাওয়ালা যে পিঙ্ক ছবিটা করেছিল আর অমিতাভর মুখে ডায়লগ বসিয়েছিল যে তোমার বউ মা মেয়ে এমনকি রাস্তার যৌনকর্মীর পর্যন্ত না বলার অধিকার আছে তাকেও ধন্যবাদ | শ্রী গৌতম এখানে তারই এই মেসেজটাকে ভারতীয় শাস্ত্র দিয়ে জাস্টিফাই করেছিলেন | কিন্তু অতি চালাকের একটু ভুল হয়ে গেল যে |

বিষয়টাকে খুবই সাধারনভাবে উপর উপর দেখা হয়েছে | আমি ওই সমস্ত ব্যাপারটা একটু তলিয়ে দেখতে চাই | মেয়েরা না বলবে , কিন্তু কখন বলবে ? সম্পর্কের শুরুতে না মাঝামাঝি সময়ে ? যখনি এই প্রশ্নটা তোলা হয় তখনি মেয়েদের না বলার অধিকারের শয়তানিটা চোখে পড়ে | অবশ্যই মেয়েরা না বলবে কিন্তু তা সম্পর্কের শুরুতে | ছেলেটির সাথে অনেক দিনের অন্তরঙ্গ সম্পকের শেষে হটাত করে একদিন বেটার ছেলে পাবার জন্য অথবা স্বার্থসিদ্ধি হয়ে যাবার কারণে না বলে দিয়ে সটকে পড়ার অধিকার মেয়েদের নেই |

এবার আসি শ্রীগৌতমের প্রমান সম্বন্ধে | উর্বশী পুরুরবার গল্পে যে উর্বশীর অমতে পুরুরবা তাকে নিতে গেলে উর্বশী পুরুরবাকে ছেড়ে চলে যান | এটা কোনো আকস্মিক ঘটনা নয় | সম্পর্কের শুরুতে দুজনের মধ্যে এই চুক্তি হয়েছিল যে বিশেষ একটা দিনে মিলন হবে না | রাজা সেই চুক্তি ভাঙ্গার ফলেই উর্বশী তাকে ছেড়ে চলে যায় | সুতরাং এখানেও সম্পর্কের শুরুতেই সমস্ত নির্ধারিত হয়েছিল | শ্রীগৌতম বোধহয় সেটা বুঝতে পারেন নি |

আর কামসুত্রের কথা ? কামসুত্রের দুটি ভাগ আছে : ১] সাধারণ কুলবধূ সম্বন্ধে , ২] বেশ্যাদের সম্বন্ধে | গৌতম যে কোথা থেকে মেয়েদের না বলার অধিকার পেলেন সেটা অবশ্য তিনি খুলে বলেন নি | যদি বেশ্যাদের অধ্যায় থেকে পেয়ে থাকেন তাহলে বলা উচিত যে বেশ্যাদের না বলার অধিকার আছে তবে সব মেয়ে তো আর বেশ্যা নয় | গৌতম যদি সব্বাইকে বেশ্যা বানিয়ে দেন তাহলে সেটা যুক্তিসম্মত হবে না তবে আনন্দবাজারসম্মত অবশ্যই হবে |

শ্রীগৌতম দ্বারকানাথ ঠাকুরের স্ত্রীর কথাও টেনে এনেছেন | উনি নাকি স্বামী ইংরেজদের সাথে ব্যবসা করছেন জেনে ব্রাহ্মনদের বিধান দিতে বলেছিলেন স্বামীকে ত্যাগ করার স্ত্রীর অধিকার প্রসঙ্গে | ব্রাহ্মনেরা বিধান দিয়েছিলেন | অতএব স্ত্রীর না বলার অধিকার অবশ্যই শাস্ত্রসম্মত | কিন্তু এখানেও একটা বড় ভুল হয়ে গেল | হিন্দুধর্মের সবচেয়ে ধার্মিক বলে প্রসিদ্ধ যে ব্যক্তিটি অর্থাৎ ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির তিনি এই ম্লেচ্ছ যবনদের সম্বন্ধে কি বলেছিলেন ? তিনি যখন ইন্দ্রপ্রস্থে রাজসূয় যজ্ঞ করেছিলেন তখন শুদ্র ম্লেচ্ছ যবন বনবাসী সব্বাইকে আমন্ত্রণ করে তাদের হাত থেকে উপহার নিয়েছিলেন | শুদ্রেরা দাসী উপহার দিয়েছিল | যবনেরা সোনা উপহার দিয়েছিল | তিনি এটাকে অধার্মিক মনে করেননি | দ্বারকানাথের স্ত্রী নিশ্চয় যুদ্ধিষ্ঠিরের চেয়ে বেশি ধর্ম বুঝতেন না | আর ব্রাহ্মনদের কথা ? তাঁরা তো জমিদারগিন্নির অর্থ পাবার জন্য তাঁর মন রাখা বিধান অবশ্যই দেবেন এতে আর আশ্চর্যের কি ? সুতরাং নারীদের না বলার অধিকার শাস্ত্রসম্মত নয় |

অনেকে বলতে পারেন সীতা রামকে ত্যাগ করে গেছিলেন | সেটা তো শাস্ত্রসম্মত ছিল | আমি বলি সীতা রামকে ভুল বোঝেন | এই ভুল বোঝাবুঝির অবস্থায় স্ত্রীর কোনো কর্মই শাস্ত্রসম্মত হতে পারে না | সেটা অন্যায় হয় | মেয়েরা না বলবে সম্পর্কের শুরুতে | তার পরে নয় |

আর ঋগ্বেদ ? এখানে একটা ডোমেন প্রবলেম আছে | ঋগ্বেদ হলো যজ্ঞের বই | ঋক গুলি সামের মত গাওয়া হয় যজ্ঞে | এই গ্রন্থে নারী পুরুষের যৌনসম্পর্ক কেমন হবে সে সম্পর্কে কথা কেন থাকবে ? যা আছে সেটাকে বিকৃত করে শ্রীগৌতম পেশ করেছেন |

আমার মতে মেয়েদের না বলার অধিকার আছে কিন্তু তা সম্পর্কের শুরুতে | ছেলেটি যখন মেয়েটিকে ডেট করতে চাইবে তখনি মেয়েটির না বলে দেয়া উচিত | ডেট করা হয়ে গিয়ে প্রপোস করার সময় না বলা উচিত না | তাহলেই সমস্যা হয় | আর যদি ডেট করাই হয়ে থাকে তাহলে প্রপোস করার সময়েও হ্যা বলাই উচিত | অনেক মেয়ে তো বিয়ের পরে না বলে | সেটা আরো খারাপ |

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.