![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দর্শন কি এইটা আমার বহুদিনের জানার ইচ্ছে | সেটার জন্য আমি বহু দর্শনে বই পড়েছি | প্লেটোর জর্জিয়াস তাদের মধ্যে অন্যতম | আসলে আমি প্লেটোর সবকটা বইই পড়েছি | সক্রেটিসের চরিত্র আমাকে খুবই অনুপ্রাণিত করেছে | তবু আমি দর্শন কাকে বলে বুঝিনি | এখন মনে হয় কিছুটা বুঝতে পারছি | তাই শেয়ার করতে চাইছি |
আমি এখানে সক্রেটিসের চরিত্রের মধ্য দিয়ে দেখব দর্শন আসলেই কি ? জর্জিয়াস বইতে সক্রেটিস বাগ্মিবিদ্যা বা অরেটরির স্বরূপ জানতে চেষ্টা করেছেন | এজন্য তিনি সেকালের এক বাগ্মিবিদ্যার শিক্ষক জর্জিয়াসের সাথে প্রশ্ন উত্তর করতে থাকেন | প্রশ্ন-উত্তরের ধরনটা লক্ষ করুন :
সক্রেটিস : বাগ্মিবিদ্যার বিষয় কি ?
জর্জিয়াস : বাক্য বা কথা |
এটা খুবই সাধারণ উত্তর হলো | কারণ কথা অনেক রকমের আছে | তাই সক্রেটিসের পরবর্তী প্রশ্ন
কি রকম কথা ? ওই রোগ হলে ডাক্তার দেখাতে হয় : এই রকম কথা ?
না |
তাহলে বাগ্মিবিদ্যা সব রকমের কথা নিয়ে কাজ করে না ?
না |
অথচ এটা মানুষকে কথা বলতে শেখায় ?
হ্যা |
আর যে বিষয়ে সে কথা বলছে সে বিষয় সম্বন্ধে চিন্তা করতে শেখায় ?
হ্যা |
এই শেষের প্রশ্নটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ | পরে এটা বোঝা যাবে | তাহলে বাগ্মিবিদ্যা মানুষকে কোনো বিষয়ে চিন্তা করতে আর কথা বলতে শিখায় | কিন্তু আরো অনেক শাস্ত্র আছে যা কথা বলতে শেখায় যেমন :
ডাক্তারি মানুষকে কি রোগের ব্যাপারে চিন্তা করতে আর কথা বলতে শিখায় না ?
হ্যা |
শারীরবিদ্যা স্বাস্থ্যের ব্যাপারে চিন্তা করতে আর কথা বলতে শিখায় না ?
হ্যা |
সেই রকম আরো বিভিন্ন শাস্ত্র করে , তাহলে সেগুলোকেও বাগ্মিবিদ্যা বলা হবে না কেন ?
কারণ অন্য বিদ্যাগুলি যেখানে তাদের সব কাজ করে কায়িক শ্রমের দ্বারা সেখানে বাগ্মিবিদ্যা তার কাজ করে কথার দ্বারা | এটাই পার্থক্য |
তাহলে এতদূর অব্দি বাগ্মিবিদ্যার একটা বৈশিষ্ট্য বোঝা গেল | এটা শুধুই কথার দ্বারা কাজ করে | আর কোনো কিছু এতে নেই | কিন্তু এখনো জিনিষটা স্পষ্ট নয় | কারণ আরো অনেক বিদ্যা আছে যা শুধু কথার দ্বারা কাজ করে | যেমন : পাটিগণিত ও হিসাব, জ্যামিতি, ব্যাকগ্যামন ইত্যাদি |
তাহলে এগুলো বাগ্মিবিদ্যা নয় তো ?
জর্জিয়াস : না |
যখন বাগ্মিবিদ্যা হলো সেই বিদ্যা যা কথা নিয়ে কাজ করে আর এই রকম আরো অনেক বিদ্যা আছে তাহলে বাগ্মিবিদ্যা কথার বিষয় কি ? (ক্রমাগত বিশেষিকরণের চেষ্টা লক্ষনীয় )
মানুষের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল |
কিন্তু এটা আরেকটা অত্যন্ত সাধারণ উত্তর | কারণ মানুষের মঙ্গল অনেক রকম আছে : স্বাস্থ্য, সম্পদ, সৌন্দর্য ইত্যাদি | তাই সক্রেটিসের পরবর্তী প্রশ্ন :
কি ধরনের মঙ্গল ?
বাগ্মিবিদ্যা মানুষকে এক বিশাল সংখ্যক লোকের মতামত গঠন করাতে শিখায় | এটা প্রধানত কোর্টে আর আইনসভায় কাজে লাগে |
মতামতের একটা বিষয় আছে | তাই সক্রেটিসের পরবর্তী প্রশ্ন হচ্ছে :
কোন বিষয়ে মতামত গঠন করাতে শিখায় ?
ভালো আর মন্দ কি, সেই বিষয়ে |
অর্থাৎ অন্য বিষয়ে ভালো মন্দ ঠিক ভুল কি হবে সে বিষয়ে জনমত গঠন হলো বাগ্মির কাজ | ওই যে কাজটা আজকে মিডিয়া ফেসবুক করে আর কি | তা এই যে জনমত গঠন করা হয় তা দুই রকম হতে পারে : সত্যের পক্ষে অথবা বিশ্বাসের পক্ষে | অর্থাৎ জনমতটা কখনো সত্য হতে পারে আবার কখনো মিথ্যা হতে পারে | উদাহরণ : রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষে যে জনমত গঠন চলে তা মিথ্যা অর্থাৎ বিশ্বাসের | আবার এইডস রোগের বিরুদ্ধে যে জনমত গঠন চলে তা সত্য | তাই সক্রেটিসের পরবর্তী প্রশ্ন :
তাহলে বাগ্মীরা কি বিষয়ে জনমত গঠন করে ? সত্য না মিথ্যা ?
জর্জিয়াস : মিথ্যা অর্থাৎ বিশ্বাস |
এইভাবেই ক্রমশ প্রশ্ন আর উত্তর এগিয়েছে | এর সাথে বেড়ে উঠেছে জ্ঞানও | ধীরে ধীরে বাগ্মিবিদ্যার বিষয়ে অনেক কিছু জানা গেছে | কিন্তু সেটা এই লেখার বিষয় নয় | এখানে শুধু আমি দেখাচ্ছি যে গ্রিকরা দর্শন বলতে ঠিক কি বুঝাত | এটা হলো শুধুই বিশেষভাবে জানার ইচ্ছে | সেই ইচ্ছে থেকে প্রশ্ন আসে | প্রশ্ন এলে উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় | তাতে একটু একটু করে জ্ঞান বাড়ে | এটাই গ্রিকদের মতে দর্শন | এই প্রশ্ন উত্তরই গ্রিক দর্শন | ভারতীয় দর্শনও ঠিক এই প্রশ্ন উত্তরের মধ্যেই দাঁড়িয়ে আছে | শাস্ত্র গ্রন্থ গুলি প্রশ্ন দিয়ে শুরু হয়ে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে এগিয়েছে |
এখন এই প্রশ্ন উত্তর ব্যাপারটা সোজা নয় | আমি বহু চেষ্টা করে এর কিছুটা মাত্র আয়ত্তে আনতে পেরেছি | প্রথম প্রথম মাথা একদম ফাঁকা থাকত | কোনো প্রশ্নই আসত না | তারপর এখন একটু একটু আসে | কিন্তু মজার ব্যাপার এটাই যে বর্তমানে দর্শনের ক্লাসে কখনই প্রশ্ন করতে শিখানো হয় না | যদি কোন বেয়াদব ছাত্র প্রশ্ন করে ,তাহলে তাকে শিক্ষকের মুখনাড়া খেতে হয় | এখনকার ক্লাসে শুধুই গোটাকতক দার্শনিকদের জীবনী পড়াবে আর তাদের দর্শন গুলি উপর উপর পড়িয়ে যাবে | দর্শনের মানব কল্যানকর দিকগুলি কিছুই পড়াবে না |
এখন প্রশ্ন হলো এই যে এই প্রশ্নোত্তরে দর্শন চর্চা কি মানুষের কোন কাজে লাগে ? অবশ্যই লাগে | আজকালকার দিনে আমরা যদি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আরো বেশি জানি অর্থাৎ প্রশ্ন করি তাহলে আমাদের ঠকবার চান্স কম | যারা কম জানে , কম প্রশ্ন করে তারাই ঠকে বেশি | এটাই দর্শনের মানব কল্যানকর দিক |দর্শন কি এইটা আমার বহুদিনের জানার ইচ্ছে | সেটার জন্য আমি বহু দর্শনে বই পড়েছি | প্লেটোর জর্জিয়াস তাদের মধ্যে অন্যতম | আসলে আমি প্লেটোর সবকটা বইই পড়েছি | সক্রেটিসের চরিত্র আমাকে খুবই অনুপ্রাণিত করেছে | তবু আমি দর্শন কাকে বলে বুঝিনি | এখন মনে হয় কিছুটা বুঝতে পারছি | তাই শেয়ার করতে চাইছি |
|
©somewhere in net ltd.