নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রশ্ন কর | প্রশ্ন করা প্রাকটিস কর |

আমি দুরের পাখি

চক চক করলেই সোনা হয় না

আমি দুরের পাখি › বিস্তারিত পোস্টঃ

কান্টের সমালোচনামূলক দর্শন

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩৭





কান্টের ক্রিটিকাল ফিলোসফি-র বাংলা অনুবাদ বড় অদ্ভুত | সেটা কখনো হয় পর্যালোচনামূলক দর্শন , কখনো হয় সবিচার দর্শন | কিন্তু পর্যালোচনা বা বিচার কোনটাই কান্ট করেননি | উনি যেটা করেছেন সেটা হলো সমালোচনা | ইংরাজিতে ক্রিটিকাল কথাটার মানেই হলো সমালোচনামূলক | তা যদি না হয় তাহলে ক্রিটিক শব্দের অর্থ সমালোচক হবে না আর ক্রিটিসিসম শব্দের অর্থ সমালোচনা হবে না | এইসব বাংলা অনুবাদকারীরা অদ্ভুত মুর্খতা আর অজ্ঞতার পরিচয় দেয় | এদেরই জন্য আমি ইংরাজি বেশি পছন্দ করি |

কান্ট যে সমালোচনা করেছিলেন সেটা ছিল প্রকৃতির সমস্ত বস্তুর সমালোচনা | ওনার নিয়ম হলো যদি কোনো একটা বস্তু বা ঘটনা ওনার সমালোচনার পরও টিকে থাকে তবেই উনি তাকে সত্যি বলে মেনে নেবেন | এই ধরনের বিচারের সুবিধা হলো যে এটা একপেশে নয় | এটা একপেশে হতে পারে না | এই ধরনের বিচারই সত্যের সম্মুখীন করে দেয় মানুষকে | আজকে আমাদের এই ধরনের সমালোচনামূলক দর্শনের খুবই দরকার |

কিভাবে এই দর্শন কাজ করে ? এর উত্তরে আমি কান্টের ক্রিটিক অফ পিওর রিসন বা বিশুদ্ধ যুক্তির সমালোচক বলে যে লেখাটা আছে সেটার সাহায্য নিতে চাই | এই লেখায় কান্ট বিশুদ্ধ যুক্তির সমালোচনা করেছেন | বিশুদ্ধ যুক্তিকে সত্য জ্ঞানের উত্স বলে দাবি করা হয় |উনি বলেছেন যে আমাদের সমস্ত যুক্তিই ইন্দ্রিযজাত জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল | কিন্তু আমরা সেটুকুই জানি যা আমাদের ইন্দ্রিয় আমাদের জানায় | ইন্দ্রিয়ের ক্ষমতার বাইরে যে জ্ঞান রয়েছে সেটা সম্বন্ধে আমরা কিছুই জানি না | সুতরাং বিশুদ্ধ যুক্তি যথার্থ জ্ঞান দেয় না | এর সাথে আরো একটা সমালোচনা হলো যে ইন্দ্রিয় প্রতারিত হয় | চোখ কান নাক ভুল জ্ঞান দেয় | ম্যাজিক বা মরিচিকাই তার প্রমান | এর দ্বারাই বুঝা যায় এইসব ইন্দ্রিযজাত জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে যে বিশুদ্ধ যুক্তি কাজ করে সেটা কতদূর মিথ্যা জ্ঞান দেয় | তাই কান্ট বলেছেন যে আমরা কখনই জগত কাকে বলে তা জানি না | এই লেখায় বিশুদ্ধ যুক্তি কান্টের সমালোচনার দ্বারা খর্ব হলেও একেবারে বিনষ্ট হয় নি |

এই সমালোচনা দ্বারা এটাই প্রমান হয়েছে যে বিশুদ্ধ যুক্তি পুরোপুরি সত্য জ্ঞান দিতে পারে না | কিন্তু অর্ধসত্য জ্ঞান দিতে পারে | এটা একেবারে ফেলনাও নয় আবার একেবারে সেরাও নয় | মাঝামাঝি | কিভাবে এই দর্শন আমরা ব্যবহার করতে পারি ?

আমাদের প্রতিটা বস্তুকে পরীক্ষা করতে হবে | দেখতে হবে যে ওই বস্তুর স্বরূপ সম্বন্ধে যা বলা হচ্ছে তার ব্যতিক্রম বা ব্যভিচার কিছু আছে কিনা | যদি থাকে তাহলে সেটাই সমালোচনা | এতে করে বস্তুর আসল রূপটি প্রকাশ পায় | যেমন বিশুদ্ধ যুক্তির মূলেই গন্ডগোল | যার গোড়াতেই গলদ সেটা কিভাবে আমাদের সত্যজ্ঞান দেবে ? এইভাবে আমাদের সমালোচনা করতে হবে | আজকের দিনে এই দর্শনের কি প্রয়োজন ?

ভীষণ প্রয়োজন | আজকের দিনে যদি আমরা চারপাশ থেকে নানারকম বিজ্ঞাপনে আচ্ছন্ন হয়ে আছি | এই বিশ্বায়নের যুগে নানারকম আজব দাবি আমাদের প্রতিমুহুর্তে আচ্ছন্ন করে রাখছে | এইসব আজগুবি দাবিকে যাচাই করা খুব প্রয়োজন, না হলে ঠকে যেতে হবে প্রতি পদে | সুতরাং সমালোচনা করতে হবে | খুঁজে দেখতে হবে যা দাবি করা হচ্ছে তার উল্টো কোনো কিছু আছে কি না | যদি থাকে তাহলে নির্ভয়ে সেটাকে গ্রহণ করতে হবে |

আমাদের প্রাচীন ন্যায়্দর্শনও এইরকম সমালোচনামূলক ছিল | নৈয়ায়িক তর্কযুদ্ধতে দুই পক্ষ একে অপরের সমালোচনা করত | যে সমালোচনা করতে পারত না, সেই পক্ষ হেরে যেত |শঙ্করাচার্য-এর সাথে বৌদ্ধদের তর্কযুদ্ধ হয়েছিল | সেখানে শঙ্করের অদ্বৈত মতের সমালোচনা করতে না পারায় বৌদ্ধরা পরাজিত হয় | সুতরাং কান্টের সমালোচনামূলক দর্শন ভারতে অজ্ঞাত ছিল না |



মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:২২

দরবেশমুসাফির বলেছেন: অনেকদিন পর অসাধারন একটি লেখা পড়লাম ব্লগে। আপনি পোস্টে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দুই চিন্তা ধারার দুটো ভ্রম দেখিয়ে দিয়েছেন।

ইংরাজিতে ক্রিটিকাল কথাটার মানেই হলো সমালোচনামূলক | তা যদি না হয় তাহলে ক্রিটিক শব্দের অর্থ সমালোচক হবে না আর ক্রিটিসিসম শব্দের অর্থ সমালোচনা হবে না | এইসব বাংলা অনুবাদকারীরা অদ্ভুত মুর্খতা আর অজ্ঞতার পরিচয় দেয় | এদেরই জন্য আমি ইংরাজি বেশি পছন্দ করি

এটা প্রাচ্যের বুদ্ধিজীবীদের পাশ্চাত্য দর্শনের প্রতি অতি পক্ষপাতী হওয়ার ফল। কান্টের মতবাদের ভুল ধরার ক্ষেত্রে প্রাচ্যের বুদ্ধিজীবীরা অদ্ভুত দুর্বলতা দেখিয়েছেন। আর হেগেলিয়ান ডায়ালেকটিকের কথা নাই বা বললাম।

আমাদের প্রাচীন ন্যায়্দর্শনও এইরকম সমালোচনামূলক ছিল | নৈয়ায়িক তর্কযুদ্ধতে দুই পক্ষ একে অপরের সমালোচনা করত | যে সমালোচনা করতে পারত না, সেই পক্ষ হেরে যেত |শঙ্করাচার্য-এর সাথে বৌদ্ধদের তর্কযুদ্ধ হয়েছিল | সেখানে শঙ্করের অদ্বৈত মতের সমালোচনা করতে না পারায় বৌদ্ধরা পরাজিত হয় | সুতরাং কান্টের সমালোচনামূলক দর্শন ভারতে অজ্ঞাত ছিল না

প্রাচ্য দর্শনে এমন অনেক কিছুই ছিল ও আছে যা পাশ্চাত্যের দর্শন অনেক পরে খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু আগে যে বলেছিলাম, প্রাচ্যের বুদ্ধিজীবীদের পাশ্চাত্যের প্রতি অতি পক্ষপাত ( যা দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে সৃষ্ট )।ঔপনিবেশিক দাদারা তাঁদের বিজ্ঞান, তাঁদের দর্শন, তাঁদের সংস্কৃতিকে সবক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ মনে করতেন এবং তা প্রমাণেরও চেষ্টা করতেন। তার ফলে এগুলো উঠে আসে না। এখনও ফিলসফি বলতে পাশ্চাত্য দর্শনই বোঝা হয়। এখনও দর্শনের ইতিহাস বলতে শুধু পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসই বোঝান হয় ( উদাহরন অয়েবার ও রাসেলের লেখা দর্শনের ইতিহাস )।

তবে আজকের পৃথিবীর পরিপ্রেক্ষিতে কান্টের মতবাদের চেয়ে হেগেলিয়ান ডায়ালেকটিককে আমার বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়।



০৯ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৪৫

আমি দুরের পাখি বলেছেন: হেগেলিয়ান ডায়ালেকটিক কেন বেশি গুরুত্বপূর্ণ কান্টের মতবাদের চেয়ে ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.