![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এটা দুর্নীতি না হলে ক্যামন সুনীতি
এমপি হওয়ার পরপরই দেখলাম সবাই কারণে-অকারণে স্পিকার অফিসে যায়। জিজ্ঞাসা করে জানলাম, সেখানে যাওয়ার অনেক কারণ আছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বিদেশ ভ্রমণ। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ, ইন্টারন্যাশনাল পার্লামেন্টারি ইউনিয়নসহ জাতিসংঘের নানা সংগঠন এমপিদের সদলবলে বিদেশ নিয়ে যায়। কাগজ-কলমে এগুলো শিক্ষা সফর হিসেবে বলা হলেও কার্যত বিনোদন হিসেবেই লোকজন মনে করে থাকে। পাঁচতারা হোটেলে থাকা-খাওয়া, বিমানের প্রথম শ্রেণীতে যাতায়াত ছাড়াও কিছু আর্থিক সুবিধা থাকে, যা অনেকের কাছে লোভনীয়ও বটে। এর পর রয়েছে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক, সাইট সিয়িংসহ নানা বিনোদনমূলক ব্যবস্থা। ফলে অনেকের মতো আমিও লোভাতুর হয়ে স্পিকার, চিফ হুইপসহ সংসদের অন্যান্য অফিসে ধরনা দিতে থাকলাম।
যেতে যেতে সাড়ে চার বছর চলে গেল; কিন্তু আমার ভাগ্যে শিকে আর ঝুলল না। অনেকেরই ঝুলেনি। কিন্তু কতিপয় সৌভাগ্যবান ও সৌভাগ্যবতীর ক্ষেত্রে স্বয়ং ভাগ্যদেবতা নিজ হস্তে রাজ তিলক এঁকে দিয়েছেন। ফলে তারা ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা ও আফ্রিকার সুন্দর সুন্দর দেশে সাত/আটবার পর্যন্ত ভ্রমণ করেছেন। অন্যদিকে যারা যেতে পারেননি তারা একবারের জন্যও জানতে পারল না কী তাদের অপরাধ? এসব বিষয় নিয়ে কথা বললে কর্তাব্যক্তিরা বলেন, অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে সবকিছু হচ্ছে। তোমরা সিরিয়ালে আছ। অধৈর্য হয়ো না, আশায় থাক। তাদের কথায় আশায় থাকতে থাকতে আমাদের গত চার বছরে গোঁফ, দাড়ি, চুল পেকে গেল। আর অপরপক্ষের দেহমনে নতুন যৌবন উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে_ এটা কেমন ন্যায় বিচার!
জাতীয় সংসদের অনেক বিষয়ই আমাদের কাছে অস্বচ্ছ। যে প্রতিষ্ঠান সমগ্র জাতির জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে তারা যদি চিন্তা-চেতনা আর কর্মে এমনটি হয় তাহলে লোকজন যাবে কোথায়? এএনডিপি একটি এনজিওর মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করছে এমপিদের শেখানোর জন্য। শিশির শীল নামক এক ব্যক্তি ওই এনজিওর কর্তাব্যক্তি। তিনিও অনেক এমপিকে প্রমোদ ভ্রমণ করিয়ে এনেছেন। অনেকে তার কাছেও ধরনা দেয়। আমাকে দেখলে শিশির তার চোখ দুটো কেমন যেন গোল গোল করে ফেলে। আমি ডরে তার দিকে তাকাই না বটে কিন্তু জানতে চাই এত শত কোটি টাকা কোথায় ব্যবহৃত হলো। আর এসব টাকার আউটপুটই বা কি? এ তো গেল প্রমোদ ভ্রমণের বিষয়। এবার বলব এমপিদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়ে। সব এমপির নামেই ফ্ল্যাট বরাদ্দ রয়েছে। তবে এগুলোর আকার, আকৃতি ও অবস্থান ভিন্ন হওয়ার কারণে যার যত ক্ষমতা সে তত সুযোগ ভোগ করে থাকে। যারা মন্ত্রী হয়েছেন তাদের নামেও ফ্ল্যাট আছে। যেসব মন্ত্রী মন্ত্রীপাড়ায় থাকেন তারাও কিন্তু এসব ফ্ল্যাট ছেড়ে দেন না। তাদের চাকর-বাকর, ড্রাইভার, দারোয়ান কিংবা অন্য কেউ এসব ফ্ল্যাটে থাকে। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় বহু লেখালেখি হওয়ার পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। অন্যদিকে যেসব দরিদ্র এমপি সপরিবারে এসব ফ্ল্যাটে থাকেন তারা প্রতিবেশী হিসেবে যাদেরকে পান তা নিয়ে অভিযোগ করবেন সেই জায়গাটিওবা কোথায়।
আমার নামের বরাদ্দকৃত ফ্ল্যাটটি ছোট আকৃতির। সম্ভবত ১১ শ বর্গফুট। সবচেয়ে বড়গুলো প্রায় ১৯ শ বর্গফুট। যারা সত্যিকার অর্থে থাকতে চান এবং পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি তাদের এগুলো বরাদ্দ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। ঢাকাতে আমি ছোট্ট একটি ফ্ল্যাটে থাকি। তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যা আট-নয়জন। এমপি হওয়ার পর আমার ব্যবসা-বাণিজ্য ভীষণভাবে সংকোচিত হয়ে পড়ল। সংসদ থেকে প্রাপ্য ভাতা, লেখালেখি, টকশো এবং সেমিনারে বক্তব্য দিয়ে মোটামুটি চলছি। দৈনন্দিন কিছু না কিছুর অভাব লেগেই থাকে। স্ত্রী বলে, দেখ সংসদে একটি বড় বাসা পাওয়া যায় কিনা? সেক্ষেত্রে আমাদের নিজস্ব ফ্ল্যাটটি ভাড়া দিলে মাসে ২০-২৫ হাজার টাকা পাওয়া যাবে এবং সেই টাকা সংসারে যোগ হলে একটু সচ্ছলতা ফিরে আসবে। আমি থাকি নিউমার্কেটের কাছে ১৪ শ বর্গফুটের বহু পুরনো একটি ফ্ল্যাটে। স্ত্রীর পরামর্শে বেশ পুলকিতবোধ করলাম এই কারণে যে, এটা সম্ভব। কারণ এখনো অনেক ফ্ল্যাট খালি পড়ে আছে।
আমি চিফ হুইপের দরবারে ধরনা দিলাম। তিনি দিলখোলা হাসি দিয়ে আশ্বাস দিলেন। আমি আশায় বুক বেঁধে স্ত্রীকে বললাম, জিনিসপত্র গোছাও। পতিপ্রাণা স্ত্রী তাই করল। দিন যায়, মাস যায় এবং বছর যেতে যেতে সাড়ে চার বছর পার হলো_ আমার ভাগ্যের চাকা ঘুরল না। এর মধ্যে কে একজন বুদ্ধি দিল চিফ হুইপের এপিএসকে ধরার জন্য। কারণ সে নাকি খুবই শক্তিশালী। আমি তার কাছে গেলাম। হাজারো অনুরোধের পর কেবল আব্বা ডাকতে বাকি রেখেছি। একদিন সে (তাও আবার বছর তিনেক আগে) বলল, আপনার বাসাটি হয়ে গেছে। বর্তমানে চিফ হুইপ যে বাসায় থাকেন সেটাই আপনার নামে বরাদ্দ দেওয়া হবে। কারণ চিফ হুইপের জন্য সংসদ চত্বরে নতুন বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি সেখানে উঠবেন। ফলে তার খালি বাসায় আপনি উঠতে পারবেন। আমি প্রশান্ত মনে ফিরলাম এবং স্ত্রীকে জানালাম নিজের পৌরুষদীপ্ত সফলতার কথা। কয়েক মাস গেল; কিন্তু কোনো ফল হলো না। আমি এপিএস মহোদয়কে আবার তাগিদ দিলাম। তিনি মুচকি হেসে নিরুত্তর রইলেন। এর পর ফোন দিলে তিনি তা রিসিভ করতেন না। পরে পত্রিকায় দেখলাম সংসদ চত্বরে চিফ হুইপ মহোদয় অনেক দুধেল গাই পোষেণ। আমি ভাবলাম দুধেল গাইয়ের রাখালদেরও থাকার জায়গা দরকার। আমি তো গাইয়ের মতো দুধও দিতে পারি না বা রাখালের মতো গাই চরাতে পারি না। ফলে কোন অধিকারে আমি এসব আশা করতে পারি?
সংসদের বাসা বরাদ্দ ছাড়াও রয়েছে অফিস বরাদ্দ প্রসঙ্গ। রয়েছে সংসদ ক্লাব এবং ক্যান্টিন নিয়ে নানা অভিযোগ। সংশ্লিষ্টদের দাবি কোথাও কোনো দুর্নীতি হচ্ছে না। আমি বলি এটা দুর্নীতি না হলে ক্যামন সুনীতি। আমাদের নতুন মান্যবর স্পিকার মহোদয় এসব ব্যাপারে সদয় দৃষ্টি রাখবেন এমনটিই অনেকে আশা করেন।
প্রমান
২| ১৮ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৭
মোমেরমানুষ৭১ বলেছেন: এত খাটি মানুষ বাংলাদেশে থাকা ভাল লক্ষন না। তিনারে নিয়ে খুব চিন্তায় আছি
২০ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:৩৬
ইয়াংেমন বলেছেন: হয়তো বা নিজে ভাগ পায় না তাই এখন এই রকম কথা বলে। কিন্তু তেনার কথাগুলা মেন হয় সত্য কথা।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:৫২
ঢাকাবাসী বলেছেন: আপনি নিজেই এমপি কিনা পরিষ্কার না, সুতরাং না জেনে মন্তব্য করে গুম টুম হতে চাইনা।