নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবনের সংক্ষিপ্তসময়টুকু শেষে কিছুই জানা হবে না, শেখার জন্য থেকে যাবে গোটা পৃথিবী। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের ভ্রমণে। আপনার সাথে আমার কথা হোক, চিন্তার বিনিময় হোক বর্ণে বর্ণে, শব্দে শব্দে, ছন্দে ও গল্পে।

আমি ইউনুস আলী

নিজের জীবনকে খুবই ভালোবাসি। নতুন কিছু জানতে, জানাতে, শিখতে, শেখাতে ভালোবাসি। আরো ভালোবাসি গান, কবিতা, গাছ, বই, সিনেমা ও ঘুরে বেড়াতে।

আমি ইউনুস আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাফল্য ও সফলতার ভিত্তি কি?

১৬ ই নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:২৫

সফলতার মাপকাঠি কি?

আমরা সবাই সফল হতে চাই বা সফলতার পেছনে দৌড়াচ্ছি। সফলতা কি? এই সংজ্ঞা ব্যক্তি ও উদ্দেশ্যভেদে আলাদা।

তবে, সামগ্রিকভাবে সফলতা বলতে হয়তো, আর্থিক প্রাচুর্য, প্রতিপত্তি, সামাজিক মর্যাদা ও ক্ষমতাবান হওয়া বোঝায়। এই প্রতিটিগুণ খুব কম মানুষই একসাথে অর্জন করতে পারে। আর তার জন্যই আমরা এইসব প্রতিষ্ঠিত মানুষদের সফলতার মানদন্ড বিবেচনা করে নিজেদের তুলনা করি এবং যখন আমরা নিজেরাই তাদের তুলনায় নিজেকে মূল্যায়ন করি তখন হতাশ হই। এই হতাশা বয়সের সাথে সাথে বাড়তে থাকে।

একজন শিশু যখন ভূমিষ্ট হয় তখন থেকে ১০ বছর বয়স পর্যন্ত তার জন্য খুবই দারুণ সময়। কারণ, এই সময়টাতে বাচ্চার চিন্তাধারা সামাজিক শ্রেণিবিভাগের বাহিরে থাকে। এই জন্য এই সময় ধুলোবালির মধ্যে আনহাইজিন ওয়েতে খেলা সে যেমন উপভোগ করে, তেমনি উপভোগ করে গায়ে সাবান ডলে ডলে হাইজিন হওয়াটাও। এই সময় বাচ্চাটা অস্বাস্থ্যকর খাবার আচার, চিপস, ক্যান্ডি যেমন উপভোগ করে তেমনি বিরিয়ানি, জুস, ডেজার্ট ও পছন্দ করে।
আসলে, উপভোগ্য সবকিছু তার কাছে উপভোগ্য। বাছ বিচার করতে চায় না। স্বাদই তার কাছে সব। পুষ্টিগুণের কোনো তোয়াক্কা সে করতে চায় না।
এই সব বাচ্চাদের ধনী-গরীব, কালো-সাদা যেকোনো ধরণের বাচ্চার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যায়।

কিন্তু এরপর যখন সে বড় হতে থাকে চারপাশের সমাজের শ্রেণিবিন্যাস, ভালো মন্দ, সাদা কালোর পার্থক্য নিরুপণ করতে শিখে তখন তার দুনিয়াটা বিস্তৃতি ও সকীর্ণ একই সমানুপাতে হতে থাকে।
বাড়ন্ত কিশোরটির বাহিরের জগত যতোই বিস্তৃত হতে থাকে, তার একান্ত নিজস্ব জগত ততোই ক্ষুদ্র হতে থাকে। তখন শুধু উপভোগের উপর আর নির্ভর নয়, বাছ বিচার, যাচাই বাছাই করে সে সিদ্ধান্ত নিতে থাকে। এতে করে যা তাকে আনন্দ দিতো এমন অনেক কিছু জীবন থেকে হারিয়ে যায় এবং এমন অনেক কিছু জীবনে যুক্ত হয় যা তাকে আনন্দ দিবে না কিন্তু সামাজিক ভ্যালু আছে তাই সেগুলো জীবনের সাথে যুক্ত করতে হবে।

এভাবেই শুরু হয় প্রতিযোগিতা, ভালো কিছু করার প্রতিযোগিতা, ভালো থাকার প্রতিযোগিতা, ভালো কিছু দেখানোর প্রতিযোগিতা। প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন আবিষ্কার, নতুন সব দর্শন, নতুন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন সব হাজারো পণ্যের মাঝে আমাদের জন্য যথার্থ নির্বাচক হওয়াটা খুবই কঠিন হয়ে যায়।

এর ফলে আমরা যা করছি সেটা যতো ভালো বা খারাপই হোক না কেন সেটার যদি সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা না থাকে তখন সেটা সময়ের খাতা থেকে মুছে যায়। এই সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য মার্কেটিং বিষয়টার আত্মপ্রকাশ ঘটে।

একটা মানুষ হয়তো কম উপার্জন করে ফ্যান্টাসটিক একটা জীবন যাপন করছে। সে তার অল্প উপার্জনের মধ্যেই সুস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করছে, পর্যাপ্ত ঘুমানোর সময় পাচ্ছে। সবসময় হাসিখুশি থাকছে। তার ছোট বড় শখ পূরণ করার সময় পাচ্ছে। যেমন গান করা, লেখালেখি করা, বইপড়া, বাগান করা, ঘুরে বেড়ানো।
হতাশা, বিষণ্নতা কিছুই নেই। এমন একটা জীবনকে এই সমাজ কখনোই আর্দশ জীবন হিসেবে প্রচার করবে না।
কারণ, আমাদের এই পুঁজিবাদী সমাজে পুঁজির প্রভাবকে সর্বোচ্চ উচ্চতায় রাখার প্রচেষ্টাই বিশ্ব নীতি নির্ধারকদের একমাত্র লক্ষ্য। যেকোনোভাবেই হোক আমাদের চিন্তা ধারায় বস্তুবাদী সফলতাকেই ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে।

এখন এমন একজন মানুষের কথা ভাবা যাক, যে খুব বড় অঙ্কের অর্থ উপার্জন করছে এবং এজন্য তাকে প্রচুর পরিমাণ ছোট বড় সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে যা তাকে সবসময় উদ্বিগ্ন রাখছে। হেলদি খাবারের তুলনায় দামী খাবারই সিম্বোলিক হিসেবে সে এটা গ্রহণ করছে। সে অনেক বিত্তশালী তাই তাকে খুবই প্রিমিয়াম থিংস own করতে হবে তাই তাকে আরো উপার্জন করতে হবে এবং এই স্ট্রেস তাকে আরো উদ্বিগ্ন ও বিষণ্ন করে তুলছে এবং প্রয়োজনের চেয়ে কয়েকশগুন অধিক সামগ্রী কেনাকাটা করছে যেটার উৎপাদনে কার্বন ইমিশন বাড়িয়ে পরিবেশের ক্ষতি করছে। কারণ, একটা নিয়ম আছে আমরা যতোই ভোগবাদী হবো ততোই পরিবেশ সাফার করবে।
এই অত্যধিক দায়িত্ব ও জিনিসের চাপে নিজের শখ বলে কিছু থাকে না। এখানে, প্রতিটি কাজই হয় ক্যালকুলেটিভ ও সাবজেক্টিভ। এভাবে একটা লম্বা ইঁদুর দৌড়ের ম্যারাথন শেষে সে উপলব্ধি করে একটা সময় তার বাস্তব জীবনে এমন কিছু ব্যাপার আছে যেটার অভিজ্ঞতা নেয়ার সুযোগ তার একদমই হয়নি।

সে শখ পূরণের জন্য এতো বই কিনেছে কিন্তু তার কোনো বই পড়া হয়নি। সে শখের বশে বড় একটি বাগান করেছে যে বাগানের মাটি, ঘাস, ফুল, গন্ধের স্বাদ সে কখনোই অনুভব করেনি। সে সবথেকে সুন্দরী রমনীর স্বামী কিংবা সবথেকে স্মার্ট সন্তানদের জনক কিন্তু তাদের সাথে কাটানো সময়ের খুব বেশি স্মৃতি সে বৃদ্ধ বয়সে মনে করতে পারছে না।
প্রয়োজনের অধিক কর্মব্যস্ততায় পুরো একটা জীবন পার করে শেষ বয়সে একেবারে নিঃসঙ্গ, ভারাক্রান্ত, বিষণ্ন একটি মানুষ।

লাইট ক্যামেরা অ্যাকশন আর মেকাপের স্ফুলিঙ্গে প্রস্ফুটিত জীবনটি দেখে নিজ জীবনে সুখী কিন্তু কম বিত্তশালী মানুষটিও হয়তো একবার জীবনে আক্ষেপ করেছে তার অপারগতা আর আকাশ না ছুঁতে পারার দুঃখে।

কিন্তু, তথাকথিত সফল মানুষের বার্ধক্য বয়সে এসে তার চোখের সামনে থাকা অর্জন যখন তাকে আর এক্সাইটমেন্ট দিতে পারে না।
সেই ক্লান্ত, শ্রান্ত স্থবির জীবনের হাহাকার হয়তো নিজেকে অসফল মনে করা কোনো মানুষের কান পর্যন্ত পৌঁছায় না।

জীবন নৃত্যের মতো এর প্রতিটি বিট সুন্দর মতো ক্যাপচার করতে পারলেই জীবন ছন্দময় ও সুন্দর হয়ে উঠবে। সফলতার মাপকাঠি সমাজকে ঠিক করতে না দিয়ে নিজে ঠিক করুন।

আপনার জীবনে, আপনার সুখে, আপনার শখে আপনি সফল হোন। কেউ সার্টিফিকেট দিবে সেই আশায় ইঁদুর দৌড়ের ম্যারাথনে যোগ দেয়া শুধুই জীবনের ক্ষয়ই হবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.