নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময় কাটানোর জিনিস নয়, খাটানোর জিনিস।

ইউসুফ জাহিদ

ইউসুফ জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিদ্রা ও জাগ্রত হওয়ার নিয়মনীতি

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৪



১. সন্ধ্যায় অন্ধকার ঘনিয়ে আসলে শিশুদেরকে ঘরে ডেকে আনবে এবং বাইরে খেলতে দেবেনা। রাত্রের কিছু অংশ অতিবাহিত হবার পর বাইরে যাবার অনুমতি দেয়া যেতে পারে। সাবধানতা হিসেবে একান্ত অবশ্যকতা ব্যতীত শিশুদেরকে ঘর থেকে বাইরে যেতে দেয়া উচিৎ নয়। রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “যখন সন্ধ্যা হয় তখন ছোট শিশুদেরকে ঘরে আবদ্ধ করে রাখবে। কেননা, এ সময় শয়তানের দল (দুষ্ট জ্বিনেরা) পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে,তবে রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হওয়ার পর শিশুদেরকে ছেড়ে দিতে পার।” (সিয়াহ সিত্তাহ, হেছনে হাছীন)

২. সন্ধ্যায় এ দোআ’পাঠ করবে। রাসূল (সাঃ) সাহাবায়ে কেরামকে এ দোআ পাঠ করতে শিক্ষা দিতেন।

اللّهُـمَّ بِكَ أَمْسَـينا وَبِكَ أَصْـبَحْنا، وَبِكَ نَحْـيا وَبِكَ نَمُـوتُ وَإِلَـيْكَ النُّشُوْرِ (ترمذى)

“আয় আল্লাহ! আমরা তোমারই অনু্গ্রহে সন্ধ্যা পেয়েছি, তোমারই সাহায্যে ভের পেয়েছি, তোমারই দয়ায় জীবিত আছি, তোমারই নির্দেশে মৃত্যুবরণ করব আর শেষ পর্যন্ত তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করব।”

(তিরমিযী)

মাগরিবের আযানের সময় এ দোআ পাঠ করবে।

اللَّهُمَّ هَذَا إِقْبَالُ لَيْلِكَ وَإِدْبَارُ نَهَارِكَ وَأَصْوَاتُ دُعَاتِكَ ، فَاغْفِرْ لِي (ترمذى ابو داود)

“হে আল্লাহ! এটা তোমার রাতের আগমনের সময়, তোমার দিনের প্রস্থানের সময়। তোমার আহ্বানকারীদের আহ্বানের সময়, তুমি আমাকে ক্ষমা কর।” (তিরমিযী, আবু দাউদ)

৩. এশার নামায আদায়ের আগি নিদ্রা যাবে না। এমতাবস্থায় অধিকাংশ সময় এশার নামায বাদ পড়ার ভয় থাকে, আর এমনও হতে পারে যে, হয়তো এ নিদ্রাই চির নিদ্রা হবে। রাসূল (সাঃ) এশার নামাজের পূর্বে কখনও নিদ্রা যেতেন না।

৪. রাত হওয়া মাত্রই ঘরে আলো জ্বালাবে। আলো জ্বালান হয়নি এমন ঘরে রাসূল (সাঃ) নিদ্রা যেতেন না।

৫. অনেক রাত পর্যন্ত জাগ্রত থাকবে না। রাত্রে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে ও শেষরাতে তাড়াতাড়ি উঠতে অভ্যাস করবে।

রাসূল (সাঃ) বলেন, এশার নামাযের পর আল্লাহ তাআলার যিকিরের জন্যে জাগ্রত থাকতে পারবে অথবা ঘরের লোকদের সাথে আবশ্যকীয় কথা-বার্তা বলার জন্যে জাগ্রত থাকা যাবে।

৬. রাত্রে জেগে দিনে নিদ্রা যাবে না। আল্লাহ তাআলা রাতকে সুখ ও শান্তির জন্যে সৃষ্টি করেচেন আর দিনকে জাগ্রত থাকা এবং জরুরী কাজে পরিশ্রম করার সময় হিসেবে নির্ধারিত করেছেন।

পবিত্র কোরআনে সূরা আল-ফুরক্বানের ৪৭ নং আয়াতে আছেঃ

وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ لِبَاسًا وَالنَّوْمَ سُبَاتًا وَجَعَلَ النَّهَارَ‌ نُشُورً‌ا

“তিনি আল্লাহ যিনি রাতকে তোমাদের জন্যে পর্দাস্বরূপ, নিদ্রাকে সুখ ও শান্তির জন্যে এবং দিনকে (রুজীর সন্ধানে) ছড়িয়ে পড়ার জন্যে সৃষ্টি করেছেন।” সূরা আন নাবায় আছে-

وَجَعَلْنَا نَوْمَكُمْ سُبَاتًا ، وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ لِبَاسًا ، وَجَعَلْنَا النَّهَارَ‌ مَعَاشًا

“আমি তোমাদের জন্যে নিদ্রাকে সুখ ও শান্তি, রাতকে পর্দা ও দিনকে জীবিকার জন্যে কায়িক পরিশ্রম করার উত্তম সময় হিসেবে নির্ধারিত করেছি।”

সূরায়ে আন-নমলের ৮৬ নং আয়াতে আছে-

أَلَمْ يَرَ‌وْا أَنَّا جَعَلْنَا اللَّيْلَ لِيَسْكُنُوا فِيهِ وَالنَّهَارَ‌ مُبْصِرً‌ا ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ

“তারা কি দেখেনি যে, আমি রাতকে সৃষ্টি করেছি যেনো তারা তাতে সুখ ও শান্তি ভোগ করে আর দিনকে (সৃষ্টি করেছি) উজ্জ্বল হিসেবে (যেনো তারা তাতে জীবিকার জন্যে সাধ্যমত পরিশ্রম করে। নিঃসন্দেহে এতে মুমিনদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।”

“একবার রাসূল (সাঃ) আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আমি জানতে পারলাম যে, তুমি দিনে রোজা রাখ এবং সারা রাত নামাযে মগ্ন থাক, এটা কি সত্য? আবদুল্লাহ (রাঃ) উত্তরে বললেন, জ্বী হাঁ, সত্য। রাসূল (সাঃ) বললেন, না, এরূপ করবে না, কখনও কখনও রোযা রাখবে আবার কখনো কখনো রোযা রাখবেনা। তদ্রুপ ঘুমাবে আবার ঘুম থেকে উঠে নামাযও আদায় করবে। কেননা, তোমার ওপর তোমার শরীরের হক আছে, তোমার ওপর তোমার চোখেরও অধিকার আছে।” (বুখারী)

৭. অতিরিক্ত আরামদায়ক বিছানায় আরাম করবে না। দুনিয়ায় মুমিনকে অধিক সুখ অন্বেষণ, আনন্দ উল্লাস ও বিলাস বসন থেকে বিরত থাকহে হবে। মু’মিনের জন্যে জীবন হলো জিহাদ হলো জিহাদ সমতুল্য, তাই মুমিনকে তার জীবন যুদ্ধে অধিক কষ্টসহিষ্ণু ও কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে।

হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, “রাসূল (সাঃ)-এর বিছানা ছিল চামড়ার তৈরী এবং তাতে খেজুরের ছাল ভর্তি ছিল।” (শামায়েলে তিরমিযী)

“হযরত হাফছ (রাঃ)-কে কেউ জিজ্ঞেস করল, আপনার ঘরে রাসূল (সাঃ)-এর বিছানা কেমন ছিল? তিনি উত্তরে বললেন, একটি চট ছিল যা আমি দু’ভাঁজ করে রাসূল (সাঃ)-এর জন্যে বিছিয়ে দিতাম, একদিন আমি ভাবলাম যে, চার ভাঁজ করে বিছিনো হলে হয়তো কিছুটা বেশী নরম হবে। সুতরাং আমি চার ভাঁজ করে বিছিয়ে দিলাম। ভোরে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি আমার পিঠের নিচে কি বিছিয়ে দিয়েছিলে? আমি উত্তরে বললাম, ঐ চটই ছিল, তবে আমি চার ভাঁজ করে বিছেয়ে দিয়েছেলাম। রাসূল (সাঃ) বললেন, না, উহাকে দুভাকেঁই থাকতে দাও। রাতে তাহাজ্জুদের জন্যে উঠতে নরম বিছানা আমার অলসতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল”। (শামায়েলে তিরমিযী)

“হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, একবার এক আনসারী মহিলা আমাদের ঘরে এসে রাসূল (সাঃ)-এর বিছানা দেখলেন, সেই মহিলা তার ঘরে গিয়ে পশম ভর্তি নরম মোলায়েম বিছানা তৈরী করে পাঠিয়ে দিলেন। রাসূলে আকরাম (সাঃ) ঘরে এসে ঐ বিছানা দেখে বললেন, এটা কি? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অমুক আনসারী মহিলা আমাদের ঘরে এসে আপনার বিছানা দেখে গিয়েছিলেন, পরে তিনি এটা তৈরী করে আপনার জন্যে পাঠিয়েছেন। রাসূল (সাঃ) বললেন, না, এটা ফিরিয়ে দাও। ঐ বিছানাটা আমার অনেক পছন্দ হয়েফিল তাই তা ফেরৎ দিতে মন চাচ্ছিল না। কিন্তু রাসূল (সাঃ) তা ফেরৎ দেওয়ার জন্যে এত জোর দিয়ে বলছিলেন যে, শেষ পর্যন্ত আমাকে তা ফেরৎ দিতেই হলো”। (শামায়েলে তিরমিযী)

“রাসূল (সাঃ) একবার খালি চাটাইতে শোয়ার কারণে তাঁর শরীরে চাটাইর দাগ হয়ে গিয়েছিল। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমি তা দেখে কাঁদতে লাগলাম। রাসূল (সাঃ) আমাকে কাঁদতে দেখে বললেন, তুমি কাঁদছ কেন? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! রোম ও ইরানের বাদশাহগণ সিল্ক ও পশমের গদিতে ঘুমাবে আর আপনি দুনিয় ও আখিরাতের বাদশাহ হওয় সত্বেও চাটাইর উপর ঘুমাবেন। রাসূল (সাঃ) বললেন, “এতে কাঁদার কিছু নেই। তাদের জন্যে শুধু দুনিয়া আর আমাদের জন্যে হ’লো আখিরাত”।

একবার রাসূল (সাঃ) বললেনঃ “আমি কিভাবে সুখ-শান্তি ও নিশ্চিন্ত জীবন-যাপন করব? ইসরাফীল (আঃ) মুখে সিঙ্গা নিয়ে কান খাড়া করে অবনত মস্তকে অপেক্ষা করছেন যে, কখন সিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার আদেশ হয়”। (তিরমিযী)

৮. রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নাতের দাবী হলো মুমিন এ পৃথিবীতে মুজাহিদের ন্যায় জীবন-যাপন করবে এবং সুখ অন্বেষণ থেকে বিরত থাকবে। ঘুমানোর পূর্বে অযু করারও গুরুত্ব দিবে এবং পবিত্র ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে ঘুমাবে। হাতে কোন তৈলাক্ত জিনিস লেগে থাকলে হাত ধুয়ে ঘুমাবে। রাসূল (সাঃ) বলেন, “কারো হাতে যদি কোন তৈলাক্ত বস্তু লেগে থাকে এবং সে যদি তা না ধুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে এবং এতে যদি তার কোন ক্ষতি হয় (অর্থাৎ বিষাক্ত প্রাণী আঘাত করে) তাহলে সে যেনো নিজেকেই নিজে তিরষ্কার করে।

রাসূল (সাঃ)-এর অভ্যাস ছিল যে, শোয়ার পূর্বে অযু করতেন।

৯. ঘুমানের সময় ঘরের দরজা বন্ধ করে দেবে। পানাহারের পাত্র ঢেকে রাখবে।আলো নিভিয়ে দেবে।

একবার মদীনায় রাতের বেলায় আগুন লেগে গেল, তখন রাসূল (সাঃ) বললেনঃ আগুন হলো তোমাদের শত্রু, যখন তোমরা ঘুমাতে যাবে তখন আগুন নিভিয়ে দেবে।

১০. শোয়ার সময় বিছানার উপর বা বিছানার নিকট, পানি ও গ্লাস লোটা বা বদনা, লাঠি, আলোর জন্যে দিয়াশলাই, মেসওয়াক, তোয়ালে ইত্যাদি অবশ্যই রাখবে। কোথাও মেহমান হলে বাড়ীওয়ালাদের নিকট থেকে পায়খানা ইত্যাদির কথা অবশ্যই জেনে নেবে, কেননা, হয়তো রাতে আবশ্যক হতে পারে অন্যথায় কষ্ট হতে পারে। রাসূল (সাঃ) যখন আরাম করতেন তখন তাঁর শিয়রে নিম্নের সাতটি বস্তু রাখতেন-

(ক) তেলের শিশি।

(খ)চিরুনী।

(গ) সুরমাদানী।

(ঘ)কাঁশি।

(ঙ) মেসওয়াক।

(চ) আয়না।

(ছ) কাঠের একটি শলাকা যা মাথা ও শরীর চুলকানোর কাজে আসে।

১১. ঘুমানোর সময় জুতা ও ব্যবহারের কাপড় কাছেই রাখবে, যেনো ঘুম থেকে উঠে খুঁজতে না হয় এবং ঘুম থেকে উঠেই জুতা পায়ে দেবে না, তদ্রুপ না ঝেড়ে কাপড়ও পরিধান করবে না, আগে ঝেড়ে নেবে, হয়তো জুতা অথবা কাপড়ের ভেতর কোন কষ্টদায়ক প্রাণী লুকিয়ে থাকতে পারে। আর আল্লাহ না করুন! ঐ প্রাণী কষ্ট দিতে পারে।

১২. শোয়ার আগে বিছানা ভাল করে ঝেড়ে নেবে, প্রয়োজন বোধে শোয়া থেকে উঠে গেলে তারপর আবার এসে শুতে হলে তখনও বিছানা ভাল করে ঝেড়ে নেবে।

রাসূল (সাঃ) বলেন, “রাতে তোমাদের কেউ যখন বিছানা থেকে উঠে বাইরে যাবে এবং জরুরত সেরে পুনঃ বিছানায় ফিরে আসবে তখন নিজের পরনের তহবন্দের একমাথা দিয়ে তিন বার বিছানা ঝেড়ে নিবে। কেননা, সে জানেনা যে, তার প্রস্থানের পরে বিছানায় কি এসে পড়েছে।”

(তিরমিযী)

১৩. বিছানায় গিয়ে এ দোআ পড়বে। রাসূল (সাঃ)-এর বিশিষ্ট খাদেম হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন বিছানায় যেতেন তখন এ দোআ টি পাঠ করতেন।

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَكَفَانَا وَآوَانَا وَكَمْ مِمَّنْ لا كَافِي لَهُ وَلا مَأْوًى (شمايل ترمذى)

“সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যে যিনি আমাদেরকে পানাহার করিয়েছেন, যিনি আমাদের কাজ-কর্মে সাহায্য করেছেন, যিনি আমাদের বসবাসের ঠিকানা দিয়েছেন। আর কত লোক আছে যাদের কোন সাহায্যকারী ও ঠিকানা দাতা নেই।

১৪. বিছানায় গিয়ে পবিত্র কুরআনের কিছু অংশ পাঠ করবে। রাসূল (সাঃ) ঘুমানো পূর্বে পবিত্র কুরআনের কিছু অংশ পাঠ করতেন। তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি বিশ্রাম করতে গিয়ে পবিত্র কুরআনের কোন সূরা পাঠ করে, তখন আল্লাহ তাআলা তার নিকট একজন ফিরিশতা প্রেরণ করেন, যে সে ঘুম থেকে চৈতন্য হওয়া পর্যন্ত তাকে প্রত্যেক কষ্টদায়ক বস্তু থেকে পাহারা দেয়।

(আহমাদ)

তিনি আরো বলেন, “মানুষ যখন বিছানায় গিয়ে পৌছেঁ তখন একজন ফিরিশতা ও একজন শয়তানও সেখানে গিয়ে পৌছেঁ। ফিরিশতা তাকে বলে-“ভাল কাজ দ্বারা তোমার কর্ম শেষ কর”।শয়তান বলে-“মন্দ কাজ দ্বারা তোমার কর্ম শেষ কর”। অতঃপর সে ব্যক্তি যদি আল্লাহকে স্মরণের কুরআন পাঠের মাধ্যমে ঘুমিয়ে পড়ে তাহলে ফিরিশতা সারা রাত তাকে পাহার দিতে থাকে”।

হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন যে, “রাসূল (সাঃ) বিছানায় গিয়ে দোআ করার মত হাত উত্তোলন করতেন এবং কুলহুআল্লাহু আহাদ, কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক্ব ও কুল আউযু বিরাব্বিন্নাস সূরাসমূহ পাঠ করে উভয় হাতে ফুঁক দিতেন, তারপর শরীরের যে পর্যন্ত হাত পৌঁছান সম্বব হতো সে পর্যন্ত সারা শরীর মর্দন করতেন। মাথা, চেহারা ও শরীরের সামনের অংশ থেকে মর্দন আরম্ভ করতেন। এরূপ তিন তিনবার করতেন”। (শামায়েলে তিরমিযী)

১৫. ঘুমানোর ইচ্ছা করলে ডান হাত ডান চোয়ালের নিচে রেখে ডান পাশে কাত হয়ে শুবে।

হযরত বারা (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) বিশ্রাম করার সময় ডান হাত ডান চোয়ালের নিচে রেখে এ দোআ পাঠ করতেন-

رَبِّ قِنِىْ عَذَبَكَ يَوْمًا تَبْعَثُ عِبَادَكَ

“হে আমার প্রতিপালক!তুমি আমাকে সে দিনের আযাব থেকে রক্ষা করো, যে দিন তুমি তোমার বান্দাহদেরকে উঠিয়ে তোমার নিকট হাযির করবে”। হেছনে হাছীন নামক কিতাবে আছে যে, তিনি এ শব্দগুলো তিনবার পাঠ করতেন।

১৬. উপুড় হয়ে ও বামপাশে ঘুমানো থেকে বিরত থাকবে। হযরত মুয়ী’শ (রাঃ)-এর পিতা তাফখাতুল গিফারী (রাঃ) বলেন, “আমি মসজিদে নববীতে উপাড় হয়ে শুয়েছিলাম। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি পা দিয়ে নাড়িয়ে বলল, এভাবে শোয়াকে আল্লাহ পছন্দ করেন না, আমি চোখ খুলে দেখতে পেলাম যে, ঐ ব্যক্তি ছিলেন রাসূল (সাঃ)”। (আবু দাউদ)

১৭. ঘুমাবার জন্যে এমন স্থান নির্বাচন করবে যেখানে এরূপ বাতাস প্রবাহিত হয় না।

১৮. মুখ ঢেকে ঘুমাবে না যাতে স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রতিক্রিয়া পড়ে, মুখ খুলে ঘুমাবার অভ্যাস করবে যেনো (শ্বাস প্রশ্বাসে) নির্মল বাতাস গ্রহণ করা যায়।

১৯. দেওয়াল বা বেড়াবিহীন ঘরে ঘুমাবে না এবং ঘর থেকে নামার সিঁড়িতে পা রাখার আগেই আলোর ব্যবস্থা করবে। কেননা, অনেক সময় সাধারণ ভুলের কারণেও অসাধারণ কষ্ট ভোগ করতে হয়।

২০.যত প্রচণ্ড শীতই পড়ুক না কেন আগুনের কুণ্ডলী জ্বালিয়ে এবং বদ্ধ কামরাতে হারিকেন জ্বালিয়ে ঘুমাবে না। আবদ্ধ কামরায় জ্বলন্ত আগুনে যে গ্যাসের সৃষ্টি হয় তা স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। এমন কি অনেক সময় উহা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়া পারে।

২১. ঘুমানোর পূর্বে দোআ করবে। হযরত আবু হোরাইরা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সাঃ) ঘুমাবার আগে এ দোআ পাঠ করতেন।

بِاسْمِكَ رَبِّي وَضَعْتُ جَنْبي ، وَبِكَ أرْفَعُهُ ، إنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِي فَارْحَمْهَا ، وَإنْ أَرْسَلْتَهَا ، فاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِهِ عِبَادَكَ الصَّالِحِينَ

“হে আমার প্রতিপালক! তোমারই নামে আমার শরীর বিছানায় শায়িত করলাম এবং তোমারই সাহায্যে বিছানা থেকে উঠব। তুমি যদি রাতেই আমার মৃত্যু দাও তাহলে তার প্রতি দয়া কর। আর তুমি যদি আত্মাকে ছেড়ে দিয়ে অবকাশ দাও, তাহলে তাকে হেফাজত করো।

যেমনভাবে তুমি তোমার নেক্কার বান্দাহকে হেফাজত করে থাকো”।

এ দোআ মুখস্থ না থাকলে নিম্নের ছোট দোআ পাঠ করবে।

اللهُمَّ بِاِسْمِكَ اَمُوْتُ وَاَحْيٰى

“হে আল্লাহ! আমি তোমারই নামে মৃত্যু বরণ করছি এবং তোমারই নামে জীবিত হয়ে উঠবো”।

২২.শেষ রাতে ওঠার অভ্যাস করবে। আত্মার উন্নতি ও আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টির জন্যে শেষ রাতে উঠে আল্লাহকে স্মরণ করা অর্থাৎ আল্লাহর ইবাদত করা উচিত। আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের বৈশষ্ট্য সম্পর্কে বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন যে, “তারা শেষ রাতে উঠে আল্লাহর দরবারে রুকু-সেজদা করে ও তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে”। রাসূল (সাঃ)-এর অভ্যাস ছিল যে, তিনি রাতের প্রথম ভাগে বিশ্রাম করতেন এবং শেষ রাতে উঠে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হতেন।

২৩. ঘুম থেকে উঠে এ দোআ পাঠ করবে।

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانًا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ (بُخَارِى مُسْلِم)

“সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যে যিনি আমাদেরকে মৃত্যু দানের পর আবার জীবিত করেন আর তাঁরই দিকে পুনরুত্থিত হতে হবে”।

২৪. যদি সুস্বপ্ন দেখ তবে আল্লাহ তাআলার শোকর আদায় করবে এবং নিজের সু-সংবাদ বলে মনে করবে। রাসূল (সাঃ) বলেন, এখন নবুয়ত থেকে বেশারত ছাড়া আর কিছু বাকী নেই। (কেননা, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) শেষ নবী হওয়ার কারণে নবুয়তের দরজা একেবারে বন্ধ) সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, বেশারত অর্থ কি? তিনি বললেন, সুস্বপ্ন।(বুখারী) তিনি বলেছেন যে, “তোমাদের মধ্যে যে অধিক সত্যবাদী তার স্বপ্নও অধিক সত্য হবে”। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, “কোন স্বপ্ন দেখলে আল্লাহর প্রশংসা করবে এবং ঈমানদার বন্ধুর নিকট বর্ণনা করবে”। রাসূল (সাঃ) কোন স্বপ্ন দেখলে তা সাহাবায়ে কেরামের নিকট বর্ণনা করতেন আর তাদেরকে বলতেন, “তোমাদের স্বপ্ন বর্ণনা কর, আমি উহার ব্যাখ্যা দেব”। (বুখারী)

২৫. দুরূদ শরীফ বেশী বেশী করে পড়বে, কেননা আশা করা যায় যে, এর বরকতে আল্লাহ তাআ’লা রাসূল (সাঃ) এর যিয়ারত নসীব করবেন।

হযরত মাওলানা মোহাম্মদ আলী মুঙ্গের (রহঃ) একবার হযরত ফজলে রহমান গাঞ্জ মুরদাবাদী (রঃ) কে বললেন যে, “আমাকে এমন একটি দুরূদ শরীফ শিক্ষা দিন যা পড়লে রাসূল (সাঃ) এর দীদার নসীব হয়। তিনি বললেন, এমন কোন বিশেষ দরূদ নেই, শুধু আন্তরিকতা সৃষ্টি করে লও, উহাই যথেষ্ট। তারপর অনেকক্ষণ চিন্তা করার পর তিনি বললেন, তবে হযরত সাইয়্যেদ হাসান (রঃ) এ দরূদ শরীফটি পাঠ করে বিশেষ ফল লাভ করেছিলেন।

আরবি

“হে আল্লাহ! তোমার জানা যত কিছু আছে তত সংখ্যক রহমত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর বংশধরগণের উপর নাযিল কর”।

রাসূল (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখেছে সে প্রকৃতপক্ষে আমাকেই দেখেছে, কেননা শয়তান কখনোই আমার রূপ ধারণ করতে পারে না”।

(শামায়েলে তিরমিযী)

হযরত ইয়াযীদ ফারসী (রঃ) পবিত্র কোরআন লিখতেন। একবার তিনি রাসূল (সাঃ)-কে স্বপ্নে দেখতে পেলেন, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) তখন জীবিত ছিলেন। হযরত ইয়াযীদ (রঃ) তাঁর নিকট স্বপ্নের কথা বর্ণনা করলে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) তাঁকে রাসূল (সাঃ)-এর এ হাদীস শুনিয়ে দিলেন যে, তিনি বলেছেন “যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখেছে সে সত্যিই আমাকে দেখেছে, কেননা, শয়তান আমার রূপ ধারণ করতে সম্পূর্ণ অক্ষম”।তারপর জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি স্বপ্নে যাকে দেখেছ তাঁর আকৃতির বর্ণনা দিতে পার”।হযরতইয়াযীদ (রঃ) বললেন, তাঁর শরীর ও দেহের উচ্চতা অত্যন্ত মধ্যমাকৃতির, তাঁর গায়ের রং শ্যামলা সাদা মিশ্রিত সুন্দর, চক্ষু যুগল সুরমা লাগানো। হাসি-খুশী মুখ, সুশ্রী গোল চেহারা, মুখমণ্ডল বেষ্টিত সিনার দিকে বিস্তৃত ঘন দাঁড়ি”। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, তুমি যদি রাসূল (সাঃ)-কে জীবিতাবস্থায় দেখতে তা হলেও এর থেকে বেশী সুন্দর করে তাঁর আকৃতির বর্ণনা দিতে পারতে না (অর্থাৎ তুমি যে আকৃতির কথা বর্ণনা করেছ তা প্রকৃতপক্ষে রাসূল (সাঃ) এরই আকৃতি।

(শামায়েলে তিরমিযী)

২৬. আল্লাহ না করুন! কোন সময় অপছন্দনীয় ও ভীতিজনক কোন স্বপ্ন দেখলে তা কারো নিকট বলবেনা এবং ঐ স্বপ্নের অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তার ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে। হযরত আবু সালমা বলেন, মন্দ স্বপ্নের কারণে বেশীরভাগ সময় আমি অসুস্থ থাকতাম। একদিন আমি হযরত আবু কাতাদা (রাঃ)-এর নিকট এ বিষয়ে অভিযোগ করলাম। তিনি আমাকে রাসূল (সাঃ)-এর হাদীস শোনালেন, “সু স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। তোমাদের কেউ যদি কোন স্বপ্ন দেখে তাহলে সে যেনো তার একান্ত বন্ধু ছাড়া আর কারো কাছে তা বর্ণনা না করে। আর কোন মন্দ স্বপ্ন দেখলে তা অন্য কাউকে বলবে না। বরং সচেতন হলে “আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম” বলে বামদিকে তিনবার থু থু ফেলবে এবং পার্শ্ব পরিবর্তন করে শু’বে, তাহলে সে স্বপ্নের অনিষ্টতা থেকে রক্ষা পাবে”।

(রিয়াদুস সালেহীন)

২৭. নিজের মন থেকে কখনো মিথ্যা স্বপ্ন তৈরী করে বর্ণনা করবে না। হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মনগড়া মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করে, কিয়ামতের দিন তাকে দু’টি যবের মধ্যে গিরা দেওয়ার শাস্তি প্রদান করা হবে, বস্তুতঃ সে কখনো গিরা যবের মধ্যে গিরা দেওয়া শাস্তি প্রদান করা হবে, বস্তুতঃ সে কখনো গিরা দিতে পারবে না। সুতরাং সে আযাব ভোগ করতে থাকবে”।

(মুসলিম)

তিনি আরো বলেছেন, “মানুষ চোখে না দেখে যে কথা বলে তা হলো অত্যন্ত জঘন্য ধরনের মিথ্যারোপ”।

(বুখারী)

২৮. কোন বন্ধু যখন তার নিজের স্বপ্নের কথা বর্ণনা করে তখন তার স্বপ্নের উত্তম ব্যাখ্যা দেবে এবং তার মঙ্গলের জন্যে দোআ করবে। একবার এক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) এর নিকট নিজের স্বপ্নের কথা বর্ণনা করলে রাসূল (সাঃ) বললেন, “উত্তম স্বপ্ন দেখেছ, উত্তম ব্যাখ্যা হবে”।

আরবি

“ঐ স্বপ্নের শুভ ফল তোমার নসীব হোক, উহার খারাপ ফল থেকে তোমাকে রক্ষা করুন, আমাদের জন্যে উত্তম এবং আমাদের শত্রুদের দুর্ভাগ্য হোক, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যে যিনি সমগ্র সৃষ্টি জগতের প্রতিপালক”।

২৯. কখনো স্বপ্নে ভয় পেলে অথবা চিন্তাযুক্ত স্বপ্ন দেখে অস্থির হয়ে পড়লে, ঐ ভয় ও অস্থিরতা দূর করার জন্যে এ দোআ পাঠ করবে এবং নিজেদের বুঝ-জ্ঞান সম্পন্ন বাচ্চাদেরকেও এ দোআটি মুখস্ত করিয়ে দেবে।

হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আ’স (রাঃ) বলেন, যখন কোন ব্যক্তি স্বপ্ন দেখে ভীত অথবা চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ত তখন রাসূল (সাঃ) তাদের অস্থিরতা দূর করার জন্য এ দোআটি শিক্ষা দিতেন এবং পড়তে বলতেন।

আরবি

“আমি আল্লাহ তাআলার নিকট তাঁর গযব ও ক্রোধ, তাঁর শাস্তি, তাঁর বান্দারেদ দুষ্টামী, শয়তানদের ওয়াসওয়াসা ও তারা আমার নিকট উপস্থিতির ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার পানাহ চাই”।

(আবু দাউদ, তিরমিযি)

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:০৩

বিজন রয় বলেছেন: জানলাম।

২| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৫৫

নিশির আলো বলেছেন: আল্লাহ আপনাকে এর উত্তম প্রতিদান দিক। অনেক কিছু জানলাম। আমি স্বপ্নে যা দেখতাম তা বলতাম তবে সাথে কিছু বাড়িয়ে, আর মুখ ঢেকেউ ঘুমাতাম। তবে এখন থেকে নিজেকে সংশোধন করা শুরু করলাম।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:২১

ইউসুফ জাহিদ বলেছেন: আপনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.