![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১. সফরে বের হবার জন্যে এমন সময় নির্ধারণ করবে যাতে সময় কম ব্যয় হয় এবং নামাজের সময়ের প্রতিও লক্ষ্য থাকে। রাসূল (সাঃ) নিজে বা অপরকে সফরে রওয়ানা করিয়ে দিতে বৃহস্পতিবারকে বেশী উপযোগী দিন মনে করতেন।
২. একাকী সফর না করে কমপক্ষে তিনজন সাথীসহ সফর করবে, এতে পথিমধ্যে আসবাব-পত্রের পাহারা ও অন্যান্য আবশ্যকীয় কাজ-কাম স্বহস্তে সমাধা করা এবং অনেক বিপদাপদ থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। রাসূল (সাঃ) বলেন, “একাকী সফর করা বিপজ্জনক। এ সম্পর্কে আমি যা জানি তা যদি লোকেরা জানতো তা হলে কোন আরোহী কখনও রাত্রিবেলায় একা সফরে বের হতো না।
(বুখারী)
এক ব্যক্তি দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে রাসূল (সাঃ) এর দরবারে হাযির হলেন। তিনি মুসাফির ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার সাথে আর কে আছে?” বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার সাথে তো আর কেউ নেই, আমি একাই এসেছি। তখন তিনি বললেন, একা ভ্রমণকারী শয়তান। দু’জন আরোহীও শয়তান। তিনজন আরোহীই আরোহী। (তিরমিযী) অর্থাৎ ভ্রমণকারী তিনজন হলে তারা প্রকৃত ভ্রমণকারী আর ভ্রমণকারী তিনজনের কম হলে তারা মূলত শয়তানের সাথী।
৩. মহিলাদের সর্বদা মুহরিম সঙ্গীর সাথে সফর করা উচিৎ। অবশ্যক সফরের রাস্তা একদিন অথবা অর্ধদিনের হলে একা গেলে তেমন ক্ষতি নেই। কিন্তু সাবধানতা হিসেবে কখনো একা সফর করতে নেই। রাসূল (সাঃ) বলেন, “যে মহিলা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে তার পক্ষে একাকী তিনদিন তিন রাতের পথ ভ্রমণ করা বৈধ নয়”। সে এত লম্বা সফর তখনই করতে পারবে যখন তার সাথে তার পিতা-মাতা, ভাই, স্বামী অথবা আপন ছেলে অথবা অন্য কোন মুহরিম ব্যক্তি থাকবে”। (বুখারী) অন্য একস্থানে তিনি এতটুকু পর্যন্ত বলেছেন, “মহিলারা একদিন এক রাতের দূরত্বের ভ্রমণে একা যেতে পারবে না”।
(বুখারী, মুসলিম)
৪. সফরে রওয়ানা হবার সময় যানবাহনে বসে এ দোআ করবে।
আরবি
“পবিত্র ও মহান সে আল্লাহ যিনি এটাকে আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন করে দিয়েছেন, মূলতঃ আমরা আয়ত্ব করতে সক্ষম ছিলাম না, আমরা অবশ্যই আমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তনকারী (আল কুরআন) আল্লাহ! আমার এ সফরে তোমাকে ভয় করার তাওফীক প্রার্থনা করছি আর তুমি সন্তুষ্ট হও এমন আমলের তাওফীক প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ, সহজ কর তুমি আমাদের এ সফরকে। আর ইহার দূরত্ব আমাদের জন্যে সংক্ষেপ করে দাও! তুমিই আমার এ সফরের সাথী এবং আমার পরিবারের প্রতিনিধি ও রক্ষক। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট সফরের কষ্ট থেকে, অসহনীয় দৃশ্য থেকে, আমার পরিবারস্থ লোকদের নিকট, ধন-সম্পদে ও সন্তান-সন্ততিতে মন্দ প্রভাব পড়া থেকে, আর অত্যাচারিতের সাক্ষাত থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি”।
(মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযি)
৫. চলার পথে অন্য সাথীদে বিশ্রামের প্রতি দৃষ্টি রাখবে। সাথীদেরও অধিকার আছে বিশ্রামের, আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, আরবি
“পার্শ্বের সাথীর সাথে সদ্ব্যবহার করো”। পার্শ্বের সাথী বলতে এখানে এমন সব ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে যারা যে কোন সময় কোন এক উপলক্ষে তোমার সাথী হয়েছিল। সফরকালীন সংক্ষিপ্ত সময়ের সাথীর (বন্ধুরও) তোমার প্রতি অধিকার আছে যে, তুমি তার সাথে সদ্ব্যবহার করবে এবং তোমার কোন কথা ও কর্ম দ্বারা যেনো তার শারীরিক বা মানসিক কোন কষ্ট না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখবে। রাসূল (সাঃ)বলেন, “জাতির নেতা তাদের সেবকই হয়, যে ব্যক্তি মানব সেবায় অন্য লোকদের থেকে অগ্রগামী হয়, শহীদগণ ব্যতীত আর কোন লোক নেকীতে তার থেকে অগ্রগামী নয়”।
(মেশকাত)
৬.সফরে রওয়ানা হবার সময় এবং সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে শোকরানা স্বরূপ দু’রাকাআত নফল নামায পড়বে, কেননা রাসূল (সাঃ) এরূপই করতেন।
৭. রেলগাড়ী, বাস, ট্যাক্সী ইত্যদি উপরের দিকে উঠার সময় এবং বিমান আকাশে উড্ডয়নের সময় এ দোআ পড়বে।
আরবি
“হে আল্লাহ! প্রত্যেক উচ্চতা ও শ্রেষ্ঠত্বের উপর আপনিই বড়, সর্বাবস্থায় সকল প্রশংসা আপনারই জন্যে নির্ধারিত”।
৮. রাতে কোথায়ও অবস্থান করতে হলে যথাসম্ভব সুরক্ষিত নিরাপদ স্থানে অবস্থান করবে, যেখানে জান ও মাল চোর ডাকাতদের থেকে রক্ষা পায় এবং কষ্টদায়ক প্রাণীদের অনিষ্টতার আশংকাও না থাকে।
৯. সফরের উদ্দেশ্য পূর্ণ হবার পর তাড়াতাড়ি বাড়ী ফিরে আসবে, অনর্থক ঘোরাফেরা করা থেকে বিরত থাকবে।
১০. সফর থেকে প্রত্যাবর্তনের সংবাদ না দিয়ে বাড়ী প্রবেশ করবে না। আগে থেকে প্রত্যাবর্তনের তারিখ ও সময় সম্পর্কে অবহিত করে রাখবে, দরকার হলে মসজিদে দু’রাকায়াত নফল নামায আদায় করার জন্যে অপেক্ষা করে বাড়ীর লোকদেরকে সুযোগ দেবে যেন তারা সুন্দরভাবে অভ্যর্থনা করার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে।
১১. সফরে কোন প্রাণী সাথে থাকলে তার আরাম ও বিশ্রামের প্রতিও খেয়াল রাখবে। কোন যানবাহন থাকলে তার আবশ্যকীয় জিনিসপত্র ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রতি লক্ষ্য রাখবে।
১২. শীতকালে বিছানাপত্র সাথে রাখবে, মেজবানকে বেশী অসুবিধায় ফেলবে না।
১৩. সফরে পানির পাত্র ও জায়নামায সাথে রাখবে যেনো এস্তেঞ্জা, অজু, নামায ও পানি পানে কোন সমস্যা না হয়।
১৪. সফর সঙ্গী হলে একজনকে আমীর নির্বাচন করে নেবে এবং প্রত্যেকের প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র, টাকা পয়সা ও জরুরী আসবাবপত্র নিজ নিজ দায়িত্বে রাখবে।
১৫. সফরে কোথাও রাত হয়ে গেলে এ দোআ করবে-
আরবি
“হে যমীন। আমার ও তোমার প্রতিপালক আল্লাহ! আমি আল্লাহ তাআলার নিকট তোমার ক্ষতি থেকে, তোমার মধ্যে আল্লাহ যেসব ক্ষতিকর প্রাণী সৃষ্টি করেছেন সে সব প্রাণীর অনিষ্টতা থেকে এবং তোমার উপর বিচরণকারী প্রাণীসমূহের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আল্লাহর নিকট আরো আশ্রয় প্রার্থনা করছি সিংহ, কাল সাপ ও বিচ্ছু, এ শহরবাসীদের অনিষ্টতা এবং এ শহরের প্রত্যেক পিতা ও সন্তানের অনিষ্টতা থেকে।
(আবু দাউদ)
১৬. সফর থেকে বাড়ী ফিরে এ দোআ পাঠ করবে।
আরবি
“প্রত্যাবর্তন! প্রত্যাবর্তন! আমাদের প্রতিপালকের নিকটই প্রত্যবর্তন! আমাদের প্রতিপালকের নিকট তাওবা করছি যেন তিনি আমাদের সকল গুনাহ মাফ করে দেন।
(হিসনে হাসিন)
১৭. কোন মুসাফিরকে বিদায় দেবার সময় তার সাথে কিছু পথ চলবে এবং তার নিকট দোআর আবেদন করবে, এ দোআ পড়ে তাকে বিদায় দেবে।
আরবি
“আমি তোমার দীন, আমানত ও কর্মের শেষ ফলাফল আল্লাহর নিকট সোপর্দ করছি”।
১৮. কেউ সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করলে তাকে অভ্যর্থনা জানাবে এবং ভালোবাসাপূর্ণ কথা বলতে বলতে তাকে অভ্যর্থনা জানাবে এবং ভালবাসাপূর্ণ কথা বলতে বলতে আবশ্যক ও সময় সুযোগের প্রতি লক্ষ্য রেখে মুসাফা করবে অথবা মুয়ানাকহ্ ও করবে।
©somewhere in net ltd.