![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১. বিপদাপকে ধৈর্য্য ও নীরবতার সাথে সহ্য করবে, সাহস হারাবে না এবং শোককে কখনও সীমা অতিক্রম করতে দেবে না। দুনিয়ার জীবনে কোন মানুষ, দুঃখ-শোক, বিপদাপদ, ব্যর্থতা ও লোকসান থেকে সবসময় উদাসীন ও নিরাপদ থাকতে পারেনা। অবশ্য মুমিন ও কাফিরের কর্মনীতিতে এ পার্থক্য রয়েছে যে, কাফির দুঃখ ও শোকের কারণে জ্ঞান ও অনুভূতি শক্তি হারিয়ে ফেলে। নৈরাশ্যের শিকার হয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে পড়ে। এমনকি অনেক সময় শোকের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা পর্যন্ত করে বসে। মুমিন ব্যক্তি কোন বড় দুর্ঘটনায়ও ধৈর্য্যহারা হয়না এবং ধৈর্য্য ও দৃঢ়তার উজ্জ্বল চিত্ররূপে পাথর খণ্ডের ন্যায় অটল থাকে, সে মনে করে যে, যা কিছু ঘটেছে, তা আল্লাহর ইচ্ছায় ঘটেছে। আল্লাহর কোন নির্দেশই বিজ্ঞান ও যুক্তির বাইরে নয়, বরং আল্লাহ যা কিছু করেন বান্দাহর ভালর জন্যই করেন, নিশ্চয়ই এতে ভাল নিহিত আছে, এসব ধারণা করে মুমিন ব্যক্তি এমন শাস্তি ও প্রশান্তি লাভ করে যে, তার নিকট শোকের আঘাতেও অমৃত স্বাদ অনুভব করতে থাকে। তাক্বদীরের এ বিশ্বাস প্রত্যেক বিপদকে সহজ করে দেয়।
আল্লাহ বলেন-
আরবি
“যে সকল বিপদাপদ পৃথিবীতে আপতিত হয় এবং তোমাদের উপর যে সকল দুঃখ-কষ্ট পতিত হয়, এ সকল বিষয় সংঘটিত করার পূর্বেই এক কিতাব (লিপিবদ্ধ) থাকে। নিঃসন্দেহে ইহা আল্লাহর পক্ষে সহজ। যেন তোমরা তোমাদের অকৃতকার্যতার ফলে দুঃখ অনুভব না কর”।
অর্থাৎ-তাকদীরের উপর বিশ্বাস স্থাপনের এক উপকারিতা এই যে, মুমিন ব্যক্তি সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাকে নিজের ভাগ্যলিপির ফল মনে করে দুঃখ ও শোকে অস্থির ও চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে না, সে তার প্রত্যেক কাজে দয়াবান আল্লাহর দিকে দৃষ্টি স্থির করে নেয় এবং ধের্য্য ও শোকর করে প্রত্যেক মন্দের মধ্যেও নিজের জন্যে শুভফল বের করার চেষ্টা করে।
রাসূল (সাঃ) বলেন, “মুমিনের প্রত্যেক কাজই উত্তম, সে যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন। সে যদি দুঃখ-কষ্ট, রোগ-শোক ও অভাব-অনটনের সম্মুকীন হয় তাহলে সে শান্তি ও ধৈর্য্যের সাথে মোকাবেলা করে সুতরাং এ পরীক্ষাও তার জন্যে উত্তমই প্রমাণিত হয়, তার যদি শাস্তি ও স্বচ্ছলতা নসীব হয় তবে সে আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করে (অর্থাৎ দান-খয়রাত করে) সুতরাং স্বচ্ছলতাও তার জন্যে উত্তম প্রতিফল বলে আনে”।
(মুসলিম)
২. যখন দুঃখ-শোকের কোন সংবাদ শনবে অথবা কোন লোকসান হয় অথবা আল্লাহ না করুন হঠাৎ কোন বিপদাপদে জড়িয়ে পড়ো তখনই এ দোআ পাঠ করবে।
আরবি
“নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্যে আর নিশ্চিত আমাদেরকে তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে”।
(আল-বাক্বারাহ)
অর্থাৎ-আমাদের নিকট যা কিছু আছে সবই আল্লাহর। তিনিই আমাদেরকে দিয়েছেন আবার তিনিই তা নিয়ে যাবেন, আমরাও তাঁরই আবার তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করব। সর্বাবস্থায় তাঁর সন্তুষ্টির ওপর সন্তুষ্ট। তাঁর প্রতিটি কাজ যুক্তি, বিজ্ঞান ও ইনসাফ সম্মত। তিনি যা কিছু করেন তা মহান ও উত্তম। প্রভুভক্ত গোলামের কাজ হলো (মনিবের কোন কাজে তার ভ্রূ কুঞ্চিত হবেনা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
আরবি
“আর আমি কিছু ভয়ভীতি, দুর্ভিক্ষ, জান ও মালের এবং ফলাদির সামান্য ক্ষতি সাধন করে তোমাদেরকে পরীক্ষা করব। আপনি তাদেরকে সুসংবাদ দিন যারা বিপদে ধৈর্য্যধারণকারী এবং তারা যখন বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্যে আর নিশ্চয়ই আমাদেরকে তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। ঐ সকল লোকের উপর তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে বড় দান এবং রহমত (করুণা) বর্ষিত হবে আর তারাই হেদায়েত প্রাপ্ত।
(আল-বাক্বারা)
রাসূল (সাঃ) বলেন, “যখন কোন বান্দা বিপদে পড়ে,
আরবি
পাঠ করে তখন আল্লাহ তার বিপদ দূর করে দেন, তাকে পরিণামে মূল্যবান পুরষ্কার দান করেন আর তাকে উহার (বিপদের) প্রতিদান স্বরূপ তার পছন্দনীয় বস্তু দান করেন”।
একবার রাসূল (সাঃ) এর প্রদীপ নিভে গেলে তিনি পাঠ করলেন,(ইন্না লিল্লাহি ওয়অ ইন্নইলাইহি রাজিউন)। জনৈক সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! চেরাগ নিভে যাওয়াও কি কোন বিপদ? আল্লাহর নবী বললেন,হ্যাঁ, যার দ্বারা মুমিননের কষ্ট হয় তাই বিপদ”।
রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন, “যে কোন মুসলমানই মানসিক অশান্তি, শারীরিক কষ্ট, রোগ, দুঃখ-শোক এ আপতিত হয়, এমনটি তার শরীরে যদি একটি কাঁটাও বিঁধে আর সে তাতে ধৈর্য্যধারণ করে তখন আল্লাহ তাআলা তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেন”।
(বুখারী, মুসলিম)
হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, পরীক্ষা যত কঠিন ও বিপদ যত ভয়াবহ তার প্রতিদান তত মহান ও বিরাট। আল্লাহ যখন তাঁর কোন দাসকে ভালবাসেন তখন তাদেরকে খাঁটি ও বিশুদ্ধ স্বর্ণে পরিণত করার জন্যে নানাভাবে পরীক্ষার সম্মুখীন করেন। সুতরাং যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট হন, আল্লাহও তাদের ওপর সন্তুষ্ট হন। আর যারা ঐ পরীক্ষার কারণে আল্লাহর অসন্তুষ্ট আল্লাহও তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট।
(তিরমিযি)
হযরত আবু মুসা আশয়ারী (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যখন কোন বান্দাহর সন্তানের মৃত্যু হয় তখন আল্লাহ তাআলা ফিরিশতাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, তোমরা কি আমার বান্দাহর সন্তানের জান কবজ করেছ? তাঁরা উত্তরে বলেন, ‘হ্যাঁ’, তিনি আবার জিজ্ঞেস করেন, তোমরা কি তার কলিজার টুকরার প্রাণ বের করেছ? তারা বলেন, হ্যাঁ, তিনি আবার জিজ্ঞেস করেন, তখন আমার বান্দাহ কি বলল? তারা বলেন, এ বিপদের সময়ও সে তোমার প্রশংসা করেছে এবং “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না-ইলাইহি রাজিউন” পড়েছে। তখন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বলেন, আমার ঐ বান্দাহের জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করো। এবং ঐ ঘরের নাম রাখ বাইতুল হামদ (প্রশংসার ঘর)”।
(তিরমিযি)
৩. কষ্ট ও দুর্ঘটনার পর শোক-দুঃখ প্রকাশ করা একটি স্বাভাবিক ব্যাপার কিন্তু এ ব্যাপারে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করবে যে, শোক ও দুঃখের চূড়ান্ত তীব্রতায় যেন মুখ থেকে কোন অযথা অনর্থক বাক্য বের হয়ে না যায় এবং ধৈর্য্য ও শোকরের পথ পরিত্যাগ না করো।
রাসূল (সাঃ) এর প্রিয় সাহবেযাদা ইবরাহীম (রাঃ) মৃত্যুর সময় রাসূলূল্লাহ (সাঃ)-এর কোলে ছিলেন, রাসূল (সাঃ)-এর চোখ দিয়ে অশ্রুর ফোঁটা ঝরতে লাগল। তিনি বললেন, “হে ইবরাহীম! আমি তোমার বিচ্ছেদে শোকাহত! কিন্তু মুখ থেকে তাই বেরুবে যা মহান প্রতিপালরেক সন্তুষ্টি মোতাবেক হবে”।
(মুসলিম)
৪. শোকের আধিক্যতায়ও এমন কোন কথা বলবে না যার দ্বারা অকৃতজ্ঞতা (নাশোকরী) ও অভিযোগের সুর প্রকাশ পায় এবং যা শরীয়াত বিরোধী। হট্টগোল করে কান্নাকাটি করা, জামা ছিঁড়ে ফেলা, মুখে থাপ্পড় মারা, চিৎকার করে কাঁদা, শোকে মাথ ও বুকের ছাতি পিটানো মুমিনের জন্যে কখনো জায়েয নয়। রাসূল (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি (শোকে) জামা ছিঁড়ে, মুখে থাপ্পড় মারে এবং জাহেলিয়াতের যুগের মানুষের ন্যায় চিৎকার ও বিলাপ করে কাদেঁ সে আমার উম্মত নয়”।
(তিরমিযি)
হযরত জাফর ত্বাইয়ার শহীদ হবার পর তাঁর শাহাদতের খবর য়কন বাড়ী পৌঁছলো তখন তাঁর বাড়ীর মহিলারা চিৎকার ও বিলাপ করে কান্নাকাটি শুরু করল। রাসূল (সাঃ) বলে পাঠালেন যে, “বিলাপ করা যাবে না”। তবুও তারা বিরত হলো না। অতঃপর তিনি আবারও নিষেধ করলেন, এবারও তারা মানল না। তখন তিনি নির্দেশ দিলেন যে, তাদের মুখে মাটি ভরে দাও।
(বুখারী)
একবার তিনি এক জানাযায় উপস্থিত ছিলেন, (ঐ জানাযার সাথে) এক মহিলা আগুনের পাতিল নিয়ে আসল, তিনি ঐ মহিলাকে এমন ধমক দিলেন যে, সে ভয়ে পালিয়ে গেল।
(সীরাতুন্নবী ৬ষ্ঠ খণ্ড)
রাসূল (সাঃ) আরো বলেছেন যে, জানাযার পেছনে কেউ আগুন ও বাদ্যযন্ত্র নিয়ে যাবে না।
আরবদের মধ্যে এমন প্রচলন ছিল যে, জানাযার পেছনে শোক প্রকাশার্থে গায়ের চাদর ফেলে দিত, শুধু জামা থাকত। একবার তিনি সাহাবীদেরকে এ অবস্থায় দেখতে পেয়ে বললেন, তোমরা অন্ধাকার যুগের রীতি পালন করছ। আমার মন চায় আমি তোমাদের ব্যাপারে এমন বদদোআ করি যেন তোমাদের চেহারা বিবর্ণ হয়ে যায়। সাহাবীগণ একথা শুনে নিজ নিজ চাদর পরে নিলেন আর কখনো এরূপ করেন নি।
(ইবনু মাজাহ)
৫. অসুখ হলে ভাল-মন্দ কিছু বলবে না, রোগ সম্পর্কে অভিযোগমূলক কো কথা মুখে আনবে না বরং অত্যন্ত ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা ধারণ করবে এবং এর জন্যে পরকালের পুরষ্কারের আশা করবে।
রোগ ভোগ ও কষ্ট সহ্য করার মাধ্যমে পাপ মোচন হয়ে নিষ্পাপ হওয়া যায় এবং পরকালে মহান পুরষ্কার লাভ হয়।
রাসূল (সাঃ) বলেন, শারীরিক কষ্ট, রোগ অথবা অন্য কোন কারণে মুমিনের যে কষ্ট হয় আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে তার জীবনের যাবতীয় পাপ ঝেড়ে পরিষ্কার করে দেন যেমন গাছের পাতাগুলো ঋতু পরিবর্তনের সময় ঝরে যায়।
(বুখারী, মুসলিম)
একবার এক মহিলাকে কাঁপতে দেখে রাসূল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হে সায়েবের মাতা! তুমি কাঁপছ কেন? সে উত্তরে বলল, আমার জ্বর, রাসূল (সাঃ) উপদেশ দিলেন যে, জ্বরকে মন্দ বলবেনা, জ্বর মানুষের পাপরাশিকে এমনভাবে পরিষ্কার করে দেয় যেমনভাবে আগুন লোহা মরিচা দূর করে পরিষ্কার করে দেয়।
(মুসলিম)
“হযরত আতা বিন রেহাহ (রহঃ) নিজের এক ঘটনা বর্ণনা করেন যে, একবার হযরত আব্বাস (রাঃ) কা’বার নিকট আমাকে বললেন, তোমাকে কি বেহেশতী মহিলা দেখাব? আমি বললাম, অবশ্যই দেখান। তিনি বললেন, কালো রং এর ঐ মহিলাটিকে দেখ। সে একবার রাসূল (সাঃ)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার উপর মৃগী রোগের এমন প্রভাব যে, তা যখন উঠে তখন আমার হুশ জ্ঞান থাকে না, এমন কি আমার শরীরেরও কোন ঠিক থাকে না, এমতাবস্থায় আমি উলঙ্গ হয়ে যাই। হে আল্লাহর রাসূল! আমার জন্য আল্লাহর নিকট দোআ করুন! রাসূল (সাঃ) বললেন, তুমি যদি ধৈর্য্য সহকারে এ কষ্ট সহ্য করতে পারো তাহলে আল্লাহ তোমাকে বেহেশত দান করেবন এবং তুমি যদি ইচ্ছা কর তা হলে আমি দোআ করে দেব যে, আল্লাহ তোমাকে রোগ মুক্ত করে দেবেন। একথা শুনে মহিলাটি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি ধৈর্য্যের সাথে রোগ যন্ত্রণা সহ্য করে যাব তবে আপনি আল্লাহর নিকট দোআ করুন! আমি যেনো এ অবস্থায় উলঙ্গ হয়ে না যাই। তখন রাসূল (সাঃ) তার জন্য দোআ করলেন। হযরত আতা বলেন, আমি ঐ লম্বা দেহী মহিলা উম্মে রাফযকে কা’বা ঘরের সিঁড়িতে দেখেছি”।
৬. আপনজনের মৃত্যুতে তিন দিনের বেশী শোক পালন করবে না। মৃত্যুতে শোকাহত হওয়া ও অশ্রু ঝরা স্বভাবগত ব্যাপার কিন্তু তার মুদ্দত তিন দিনের বেশী নয়। রাসূল (সাঃ) বলেন, কোন মুমিনের পক্ষে কারো জন্যে তিন দিনের বেশী শোক পালন করা নাজায়েয, অবশ্য বিধবা (তার স্বামীর জন্যে) চার মাস দশ দিন শোক পালন করতে পারে। এ সময়ের মধ্যে সে কোন প্রকার রঙ্গীন কাপড় পরবে না, সুগন্ধি ব্যবহার করবে না এবং সাজ-সজ্জা এবং রূপ চর্চা করবে না।
(তিরমিযি)
হযরত যয়নাব বিনতে জাহশের ভাইয়ের মৃত্যুর চতুর্থ দিন কিছু মহিলা শোক প্রকাশের জন্য তাঁর নিকট আসল। সকলের সম্মুখে তিনি সুগন্ধি লাগিয়ে বললেন, আমার এখন সুগন্ধি লাগানোর কোন প্রয়োজন ছিল না। আমি সুগন্ধী লাগানোর কোন প্রয়োজন ছিল না। আমি সুগন্ধী শুধু এজন্য লাগিয়েছে আমি রাসূল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, “কোন মহিলাকেই স্বামী ব্যতিত অন্য কারো জন্যে তিন দিনের বেশী শোক পালন করা জায়েয নয়”।
৭. দুঃখ-শোক ও বিপদাপদে একে অন্যকে ধৈর্য্য ধারণের পরামর্শ দেবে। রাসূল (সাঃ) যখন ‘উহুদ প্রান্তর থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন, তখন মহিলারা নিজ নিজ আত্মীয়-স্বজনের সংবাদ জানার জন্যে উপস্থিত হলেন। হামনা বিনতে জাহস যখন রাসূল (সাঃ)-এর সামনে এলেন, তখন তিনি তাকে ধৈর্য্য ধারণের উপদেশ দিয়ে বললেন, তোমার ভাই আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর ব্যাপারে ধৈর্য্য ধারণ কর, তিনি “ইন্না-লিল্লাহি ও ইন্না-ইলাহি রাজিউন” পড়লেন এবং তার জন্যে মাগফিরাত কামনা করলেন। অতঃপর তিনি বললেন, তোমার মামা হামযা (রাঃ)-এর উপরও ধৈর্য্য ধারণ কর, তিনি আবার “ইন্ন লিল্লাহি ওয়া ইন্না-ইলাইহি রাজিউন” পড়লেন এবং তার জন্যেও মাগফিরাতের দোআ করলেন।
“হযরত আবু তালহা (রাঃ)-এর অসুস্থ ছেলেকে অসুস্থ রেখেই তিনি নিজের জরুরী কাজে চলে গেলেন, তাঁর যাবার পর ছেলেটি মারা গেল, বেগম আবু তালহা (রাঃ) স্ত্রী লোকদের বলে রাখল, আবু তালহা (রাঃ)-কে ছেলের মৃত্যুর এ সংবাদ না জানাতে। তিনি সন্ধ্যায় নিজের কাজ থেকে ফিরে এসে বিকে জিজ্ঞেস করলেন, ছেলে কেমন আছে? তিনি বললেন, আগের থেকে অনেক নীরব বা শান্ত এবং তিনি তাঁর জন্যে খানা নিয়ে আসলেন, তিনি শান্তিমত খানা খেয়ে শুয়ে পড়লেন। ভোরে সতী বিবি হেকমতের সঙ্গে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা কেউ যদি কাউকে কোন বস্তু ধার দিয়ে তা আবার ফেরত চায় ত হলে তার কি ঐ বস্তু আটকিয়ে রাখার কোন অধিকার আছে? আবু তালাহ (রাঃ) বললেন, আচ্ছা এ হক কিভাবে পূরণ করা যাবে? তখন ধৈর্য্যশীলা বিবি বললেন, নিজের ছেলের ব্যাপারে ধৈর্য্যধারণ কর”।
(মুসলিম)
৮. সত্য পথে অর্থাৎ দীনের পথে আসা বিপদসমূহকে হাসি মুকে বরণ করে নেবে এবং ঐ পতে যে দুঃখ-কষ্ট আসে তাতে দুঃখিত না হয়ে ধৈর্য্যের সাথে আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করবে যে, তিনি তাঁর পথে তোমার কোরবানী কবুল করেছেন।
হযরত আবদুল্লাহ বিন যোবায়ের (রাঃ)-এর মাতা হযরত আসমা (রাঃ) ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লেন, হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) যুদ্ধ থেকে ফিরে তার মার রোগ সেবার জন্য আসলেন, মা তাঁকে বললেন, বৎস! মনে বড় ইচ্ছা যেন দু’টি বিষয়ের যে কোন একটি দেখা পর্যন্ত আল্লাহ আমাকে জীবিত রাখেন। একটি হলো তুমি বাতিলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ময়দানে শহীদ হয়ে যাবে এবং আমি তোমার শাহাদাতের সংবাদ শুনে ধৈর্য্য ধারণ করার সৌভাগ্য অর্জন করবো অথবা তুমি গাজী হবে আমি তোমাকে বিজয়ী হিসেবে দেখে শান্তি পাবো। আল্লাহর ইচ্ছায়-হযরত আবদুল্লাহ বিন যোবায়ের তাঁর মাতার জীবিতাবস্থায়ই শাহাদাত বরণ করলেন, শাহাদাতের পর হাজ্জাজ যোবায়ের (রাঃ) এর লাশ শূলিতে চড়ালে হযরত আসমা (রাঃ) যথেষ্ট বৃদ্ধা ও অত্যন্ত দুর্বল হওয়া সত্বেও এ হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখার জন্যে শূলির নিকট এসে নিজের কলিজার টুকরার লাশ খোর পর কান্নাকাটি করার পরিবর্তে হাজ্জাজকে বললেন, “এ আরোহীর কি এখনো ঘোড়ার পিঠ থেকে নিচে নামার সময় হয়নি”?
৯. দুঃখ-কষ্টে একে অন্যের সহযোগিতা করবে। বন্ধু-বান্ধবের দুঃখ-শোকে অংশ গ্রহণ করবে এবং শোক ভুলিয়ে দেবার জন্যে সাধ্যমত সাহায্য করবে।
রাসূল (সাঃ) বলেন, “সমগ্র মুসলিম জাতি একজন মানুষের শরীরের সমতুল্য, তার যদি চোখ অসুস্থ হয় তা হলে তার সারা শরীর দুঃখ অনুভব করে এবং তার যদি মাথা ব্যথা হয় তা হলে তার সারা শরীর ব্যথায় কষ্ট পায়”।
(মুসলিম)
হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি সন্তানহারা কোন মহিলাকে সান্ত্বনা প্রদান করে আল্লাহ তাআলা তাকে বেহেশতে প্রবেশের অনুমতি দান করবেন এবং তাকে বেহেশতের পোশাক পরিধান করাবেন”।
(তিরমিযি)
রাসূল (সাঃ) আরো বলেন, “যে ব্যক্তি কোন বিপদগ্রস্তকে সান্ত্বনা প্রদান করবে তিনি এমন পরিমাণ সওয়াব পাবেন যে পরিমাণ সওয়াব বিপদগ্রস্থ ব্যক্তি বিপদে ধৈর্য্যধারণ করার কারণে পাবেন”।
(তিরমিযি)
রাসূল (সাঃ) জানাযায় অংশ গ্রহণ করার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাঃ) বলেন, যে জানাযায় অংশ গ্রহণ করে জানাযার নামায পড়ে সে এক ক্বীরাত পরিমাণ, আর যে জানযার নামাযের পর দাফনেও অংশ গ্রহণ করল সে দু’ক্বীরাত পরিমাণ সওয়াব পাবে। একজন সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ দু’ক্বীরাত কত বড়? অর্থাৎ দু’ক্বীতরাতের পরিমাণ কতটুকু? তিনি বললেন, দুটি পাহাড়ের সমতুল্য”।
(বুখারী)
১০. বিপদ ও শোকে আল্লাহকে স্মরণ করবে এবং নামাজ পড়ে অত্যন্ত মিনতির সাথে আল্লাহ তাআলার নিকট দোআ করবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,
আরবি
“হে মুমিনগণ! (বিপদ ও পরীক্ষায়) ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে (আল্লাহ তাআলার নিকট) সাহায্য প্রার্থনা কর”।
(আর-বাক্বারাহ)
শোক অবস্থায় চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হওয়া, দুঃখিত হওয়া স্বভাবগত ব্যাপার। অবশ্য চীৎকার করে জোরে জোরে কাঁদা অনুচিত। রাসূল (সাঃ) নিজেও কাঁদতেন, তবে তাঁর কান্নায় শব্দ হতো না। ঠাণ্ডা শ্বাস নিতেন চোখ থেকে অশ্রু বের হতো এবং বক্ষঃস্থল থেকে এমন শব্দ বের হতো যেনো কোন হাঁড়ি টগ বগ করছে অথবা কোন চাক্কি ঘুরছে, তিনি নিজেই নিজের শোক ও কান্নার অবস্থা এমনভাবে প্রকাশ করেছেন।
“চক্ষু অশ্রু প্রবাহিত করে, অন্তর দুঃখিত হয়, অথচ আমি মুখ থেকে এমন কথা প্রকাশ করি যার দ্বারা আমাদের প্রতিপালক সন্তুষ্ট হন”।
হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন রাসূল (সাঃ) যখন চিন্তিত হতেন, তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতেন, “সুবহানাল্লাহিল আযীম” (মহান মর্যাদাসম্পন্ন আল্লাহ পবিত্র ও মহিমান্বিত)। আর যখন কান্নায় ভেঙ্গে পড়তেন এবং দোআয় মগ্ন হয়ে যেতেন তখন বলতেন, ইয়া হাইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যুম (হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী)।
(তিরমিযি)
১১.সা’দবিনআবীওয়াক্কাস(রাঃ)থেকেবর্ণিত,রাসূল(সাঃ)বলেছেন,“যুনুনূন1 মাছের পেটে থাকাবস্থায় দোআ করেছিল”। তা ছিল এই-
আরবি
“আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, আপনি ত্রুটিমুক্ত ও পবিত্র, আমি নিশ্চয়ই অত্যাচারীদের মধ্যে গণ্য ছিলাম।
সুতরাং যে কোন মুসলমান তাদের দুঃখ-কষ্টে এ দোআ দ্বারা প্রার্থনা করলে নিশ্চয়ই আল্লাহ তার দোআ কবুল করবেন”।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সাঃ) যখন দুঃখ-শোকে আপতিত হতেন তখন এ দো’আ করতেন।
আরবি
“আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, তিনি আরশের মালিক, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, আসমান ও যমিনের প্রতিপালক, তিনি মহান আরশের মালিক।
(বুখারী, মুসলিম)
হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেন-
আরবি
এ দোয়া ৯৯টি রোগের মহৌষধ। মূল কথা হচ্ছে এ দোআ পাঠকারী দুঃখ ও শোক থেকে নিরাপদ থাকতে পারে।
হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) বলেছেন যে, রাসূল (সাঃ) বলেন, যে বান্দাহ দুঃখ-কষ্টে এ দোআ পাঠ করে, আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তার দুঃখ ও শোককে খুশী ও শান্তিতে রূপান্তরিত করে দেন।
আরবি
“হে আল্লাহ! আমি তোমার বান্দাহ, তোমার বান্দাহর ছেলে, তোমার বান্দির ছেলে, আমার দেশ তোমার হাতে অর্থাৎ আমার সব কিছু তোমার ইচ্ছাধীন, আমার ব্যাপারে তোমারই নির্দেশ কার্যকর, আমার সম্পর্কে তোমারই সিদ্ধান্ত ন্যায়সঙ্গত, আমি তোমার ঐ সকল নামের অসীলায় যে সকল নামে তুমি নিজে সম্বোধিত হয়েছ অথবা যে সকল নাম তুমি তোমার কিতাবে উল্লেখ করেছ অথবা যে সকল নাম তোমার মাখলুককে দীক্ষা দিয়েছ অথবা তোমার গোপন ভাণ্ডারে লুকায়িত রেখেছ তোমার নিকট আবেদন করছি তুমি কুরআন মজীদকে আমার আত্মার শান্তি, আমার চোখের জ্যোতি, আমার শোকের চিকিৎসা ও আমার চিন্তা দূরীকরণের উপকরণ করে দাও”।
(আহমদ, ইনে হাম্বাল, হাকেম)
১২. আল্লাহ না করুক! কোন সময় যদি বিপদ-আপদ চতুর্দিকে থেকে ঘিরে ধরে জীবন কঠিন হয়ে ওঠে এবং শোক-দুঃক এমন ভয়ানক রূপ ধারণ করে যে, জীবন হয়ে যাবে বিষাদময় তখনও মৃত্যু কামনা করবে না এবং কখনও নিজের হাতে নিজেকে ধ্বংস করার লজ্জাস্কর চিন্তাও করবে না। কাপুরুষতা, খেয়ানতও মহাপাপ, এরূপ অস্থিরতা ও অশান্তির সময় নিয়মিত আল্লাহর দরবারে এ দোআ’করবে-
আরবি
“আয় আল্লাহ! যতদিন পর্যন্ত আমার জীবিত থাকা ভালো মনে কর ততদিন আমাকে জীবিত রাখ। আর যখন মৃত্যু ভালো হয তখন মৃত্যু দান কর”।
(বুখারী, মুসলিম)
১৩. কোন বিপদগ্রস্তকে দেখে এ দোআ করবে।
হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে কোন বিপদগ্রস্তকে দেখে এ দোআ করবে সে নিশ্চয়ই ঐ বিপদ থেকে নিরাপদ থাকবে।
আরবি
“সকল প্রশংসা কৃতজ্ঞতা আল্লাহর জন্যে যিনি তোমাকে সে বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন। আর অনেক সৃষ্টির উপর তোমাকে মর্যাদা দান করেছেন”।
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১২
সিকদারভাই বলেছেন: আল্লাহ আপনাকে এই পোস্টের জন্য উত্তম প্রতিদান দিক ।