![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১. দীনের শত্রুদের হত্যা ও লুণ্ঠন, অত্যাচার ও বর্বরতা, ফিৎনা-ফাসাদের আতঙ্ক প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা ধ্বংস লীলার ভয় ইত্যাদি সর্বাবস্থায় মুমিনের কাজ হচ্ছে মূল কারণ খুঁজে বরে করা। ভাসা ভাসা প্রচেষ্টায় সময় নষ্ট না করে কুরআন ও হাদীসের নির্দেশিত পথে সর্বশক্তি নিয়োগ করবে।
পবিত্র কুরআনে উল্লেখ আছে,
আরবি
“তোমাদের উপর যে সকল বিপদাপদ আসে তা তোমাদেরই কৃত-কর্মের ফল এবং আল্লাহ তার অনেকগুলোই ক্ষমা করে দেন”।
(শূরা ৩০)
পবিত্র কুরআনে-এর চিকিৎসাও দিয়েছেন।
আরবি
“তোমরা সকলে একত্রিত হয়ে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর। হে মুমিনগণ! যেনো তোমরা কল্যাণ লাভ কর”।
তাওবা শব্দের অর্থ প্রত্যাবর্তন করা বা ফিরে আসা। পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত উম্মত যখন নিজেদের পাপরাশির উপর লজ্জিত হয়ে আল্লাহর দিকে পুনঃ ইবাদতের আবেগ নিয়ে প্রত্যাবর্তন করে এবং লজ্জা অশ্রু দ্বারা নিজ পাপের আবর্জনা ও জঞ্জাল ধুয়ে পরিষ্কার করে আল্লাহ তাআলার সাথে কৃত কর্মের ওয়াদা পূরণের অঙ্গীকার করে, পবিত্র কুরআনের পরিভাষায় তাওবাহ বলে তাকেই। এ তাওবাই ও ইস্তেগফার সর্ব প্রকার ভয়-ভীতি ও আতঙ্ক থেকে নিরাপদ থাকার প্রকৃত চিকিৎসা।
২. দীনের শত্রুদের যুলুম অত্যাচারে যালেমের নিকট দয়া ভিক্ষা করার মাধ্যমে নিজের দীনী চরিত্রকে কলুষিত না করে বরং দুর্বলতার মুকাবেলায় সাহসিকতা প্রদর্শন করতে হবে।
যে কারণে ভীরুতা সৃষ্টি হয এবং দীনের শত্রুরা তোমার উপর অত্যাচার করতে ও মুসলমানকে গ্রাস করতে সাহস পাচ্ছে। রাসূল (সাঃ) এ দু’টি কারণ উল্লেক করেছেনঃ
(ক) দুনিয়ার মহব্বত এবং
(খ) মৃত্যু ভয়।
এমন সংকল্প করবে যাতে শুধু নিজের নয় এমনটি সমগ্র জাতির অন্তর থেকে এসব রোগ দূর হয়ে যায়।
রাসূল (সাঃ) বলেনঃ “আমার উম্মতের ওপর ঐ সময় আসন্ন যখন অন্যান্য জাতি (সহজ শিকার মনে করে) তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে যেমন পেটুক লোকেরা দস্তরখানে খাদ্য বস্তুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। জনৈক সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, ঐ সময় কি আমরা সংখ্যায় এতই নগণ্য হব যে, অন্যান্য জাতি একত্রিত হয়ে আমাদেরকে গ্রাস করার জন্যে ঝাঁপিয়ে পড়বে? “তিনি বললেন, না! ঐ সময় তোমাদের সংখ্যা নগণ্য হবে না বরং তোমরা বন্যায় ভেসে যাওয়া খড়কুটার মত ওজনতীন হবে এবং তোমাদের প্রভাব প্রতিপত্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আর তোমাদের মধ্যে ভীরুতা কাপুরুষতা দেখা দেবে। এ সময় জনৈক সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কাপুরুষতা কেন সৃষ্টি হবে? তিনি বললেন, এ কারণে যে-
দুনিয়ার প্রতি তোমাদের মহব্বত বৃদ্ধি পাবে।
তোমাদের মধ্যে মৃত্যু ভয় বাড়বে এবং তোমরা মৃত্যুকে ঘৃণা করবে। (বুখারী)
৩. স্বার্থপরতা, বিলাসিতা, নারী নেতৃত্ব এবং পাপাচার থেকে সমাজকে পবিত্র করবে এবং নিজের সমাজ বা সংগঠনকে অধিক শক্তিশালী করে সম্মিলিত শক্তি দ্বারা সমাজ থেকে ফেৎনা-ফাসাদ নির্মূল করে জাতির মধ্যে বীরত্ব, উৎসাহ-উদ্দীপনা, জীবন চেতনা সৃষ্টির চেষ্টা করবে।
রাসূল (সাঃ) বলেনঃ যেখন তোমাদের শাসকগন হবে (সমাজের) উত্তম লোক, তোমাদের ধনীরা হবে দানশীল ও উদার এবং তোমাদের পারস্পরিক কাজসমূহ সমাধা হবে পরামর্শের ভিত্তিতে তখন অবশ্যই যমিনের এপিঠ (জীবনকাল) হবে যমিনের নিচের পিঠ থেকে উত্তম। আর যখন তোমাদের শাসকরা হবে দুর্নীতিবাজ ও দুশ্চরিত্র লোক, তোমাদের মহিলাদের নেতৃত্বে চলবে তখন যমিনের নিচের অংশ অর্থাৎ মৃত্যু হবে উপরের অংশের (অর্থাৎ জীবন থাকার) তুলনায় উত্তম।
(তিরমিযি)
৪. অবস্তা যতই নাজুক হোকনা কেন অর্থাৎ পরিবেশ যতই প্রতিকূল হোক ঐ প্রতিকূল পরিবেশেও সত্যের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা থেকে দূরে থাকবে না। সত্যের পৃষ্ঠপোষকতায় জীবন দান করা নির্লজ্জের জীবন থেকে অনেক উত্তম। কঠিন থেকে কঠিনতম পরীক্ষায় এবং কঠোর থেকে কঠোরতম অবস্থায়ও সত্য থেকে পিছু হটবে না। কেউ মৃত্যুর ভয় দেখালে তাকে মুচকি হাসি দ্বারা উত্তর প্রদান করবে। শাহাদাতের সুযোগ আসলে আগ্রহ ও আকাংখার সাথে তাকে গ্রহণ করবে।
রাসূল (সাঃ) বলেনঃ “চাকা ঘূর্ণায়মান। সুতরাং যে দিকে কুরআনের গতি হবে তোমরাও সে দিকে ঘুরবে। সাবধান! অতি অল্প দিনের মধ্যেই কুরআন ও বাতিল আলাদা হয়ে যাবে। (সাবধান!) তোমরা কুরআন ছাড়বে না। ভবিষ্যতে এমন শাসক আসবে যারা তোমাদের দণ্ডমুণ্ডের মালিক হবে। তোমরা তাদের আনুগত্য স্বীকার করলে তোমাদেরকে সত্য পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে। আর যদি তোমরা তাদের বিরোধিতা করো তা হলে তারা তোমাদেরকে মৃত্যুর মতো কঠিন শাস্তি প্রদান করবে, এমনকি তা মৃত্যু দণ্ডও হতে পারে। জনৈক সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, তখন আমরা কি করব? তিনি বললেন, তোমরা তা-ই করবে যা হযরত ঈসা (আঃ)-এর সাথীর করেছেন। তাদেরকে করাত দ্বারা ফাড়া হয়েছে এবং শূলীতে চড়ানো হয়েছে। আল্লাহ তাআলার নাফরমানী করে জীবিত থাকার চেয়ে আল্লাহর পথে জীবন দান করা উত্তম”।
৫. যে সমস্ত কারণে সমাজে ভয়-ভীতি বৃদ্ধি পায়, অভাব-অনটন, দুর্ভিক্ষ, হত্যা ছড়িয়ে পড়ে, শত্রুদের যুলুম অত্যাচারে জাতি দিশেহারা হয়ে পড়ে ঐ সব সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে অবিরাম যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।
হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ)বলেন, যে জাতির অন্তরে ভয়-ভীতি সৃষ্টি করে দেন, যেন সমাজে ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়ে সে সমাজ দ্রুত ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়, যে সমাজে বিশ্বাসঘাতকতার রীতি প্রচলিত হবে, তারা অবশ্যই অভাব অনটনের শিকার হবে।
যে সমাজে অবিচার চালু হবে সে সমাজে হত্যা, খুন সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হবে। যে জাতি প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে সে জাতির উপর শত্রুর আক্রমণ অবশ্যম্ভাবী।
(মিশকাত)
৬. শত্রু পক্ষ থেকে ভয় অনুভব হলে এ দোআ পাঠ করবে।
আরবি
“হে আল্লাহ! আমরা ঐ শত্রুদের মোকাবেলায় তোমাকেই ঢাল হিসেবে পেশ করছি এবং তাদের অনিষ্টতা ও দুষ্টামী থেকে মুক্তির জন্য তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি”।
(আবু দাউদ, নাসায়ী)
৭. শত্রু বেষ্টিত স্থানে আবদ্ধ হয়ে গেলে এ দোআ পাঠ করবে।
আরবি
“আয় আল্লাহ! তুমি আমাদের ইজ্জত ও সম্মান রক্ষা করো এবং আমাদেরকে ভয়-ভীতি থেকে নিরাপদ রাখো”।
৮. যখন ঘূর্ণিঝড় অথবা মেঘ বাদল উঠতে দেখা যায় তখন অস্থিরতা ও ভয় অনুভব করবে।
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূল (সাঃ)-কে মুখ খুলে হা-হা করে হাসতে দেখিনি। তিনি ঘাবড়িয়ে যেতেন এবং দোআ করতে শুরু করতেন। ভয়ের কারণে কখনো উঠতেন কখনো বসতেন, বৃষ্টি বর্ষণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থা বিরাজ করতো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি লোকদেরকে দেখছি যে, তারা মেঘ-বাদল দেখলে খুশী হয় যে, বৃষ্টি বর্ষিত হবে। অথচ আপনাকে দেখতে পাচ্ছি যে, মেঘ-বাদল দেখলে আপনার চেহারা পরিবর্তন হয়ে যায় এবং আপনি অস্থির হয়ে পড়েন। এর উত্তরে রাসূল (সাঃ) বলেনঃ
হে আয়শা! আমি কি করে নির্ভয় হয়ে যাব যে, এ মেঘের মধ্যে শাস্তি নিহিত নেই যে মেঘ দ্বারা আদ জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছিল সে মেঘ দেখেও তারা বলেছিল, এ মেঘ আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করবে।
(বুখারী, মুসলিম)
আর এ দোআ পাঠ করবে-
আরবি
“হে আল্লাহ! বাতাসকে শান্তির বাতাস করে দাও, অশান্তির বাতাস নয়! আয় আল্লাহ! একে রহমত হিসেবে নাযিল কর কিন্তু আযাব হিসেবে নয়।
ঘূর্ণিঝড়ের সাথে যদি ঘোর আঁধারও ছেয়ে যায় তা হলে “কুলআউযু বিরাব্বিল ফালাক্ব” ও “কুলআউযু বিরাব্বিন্নাস ও পাঠ করবে”।
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) ঘূর্ণিঝড় উঠেছে দেখতে পেলে এ দোআ পাঠ করতেন-
আরবি
“আয় আল্লাহ! আমি তোমার নিকট এ ঘূর্ণিঝড়ের ভালো দিক এর মধ্যে যা আছে তাই এবং যে উদ্দেশ্যে একে প্রেরণ করা হয়েছে তার ভালো দিক কামনা করছি। এ ঘূর্ণিঝড়ের খারাপ দিক, যা আছে তা এবং একে যে উদ্দেশ্যে প্রেরণ করা হয়েছে তার খারাপ দিক হতে তোমার আশ্রয় কামনা করি।
(মুসলিম,তিরমিযি)
৯. অত্যধিক বৃষ্টির কারণে ক্ষতির ভয় দেখা দিলে এ দোআ করবে।
আরবি
“আয় আল্লাহ! আমাদের আশেপাশে বর্ষিত হোক, কিন্তু আমাদের উপর নয়। আয় আল্লাহ! পাহাড়ের উপর টিলা এবং উচ্চ ভূমির উপর, মাঠে ময়দানে এবং ক্ষেত-খামার ও তরুলতা জন্মানোর স্থানে বর্ষিত হোক।
(বুখারী,মুসলিম)
১০. যখন মেঘের গর্জনও বজ্রপাতের শব্দ শুনবে তখন কথাবার্তা বন্ধ করে পবিত্র কুরআনের নিম্নের আয়াতটি পাঠ করবে-
আরবি
আর মেঘের গর্জনও আল্লাহর প্রশংসাসূচক তাসবীহ পাঠ করে, ফিরিশতাগণ আল্লাহর ভয়ে কম্পিত হয়ে তাঁর তাসবিহ পাঠ করে।
(সূরায়ে রা’দ ১৩)
হযরত আবদুল্লাহ বিন জোবায়ের মেঘের গর্জন শুনে কথাবার্তা বন্ধ করে আয়াত পাঠ করতেন।
(আল-আদাবুল মুফরাদ)
হযরত কা’ব বলেন, যে ব্যক্তি মেঘের গর্জনের সময় তিনবার এ আয়াত পাঠ করবে সে গর্জনের দুর্ঘটনা থেকে নিরাপদে থাকবে।
(তিরমিযি)
রাসূল (সাঃ) যখন মেঘ গর্জন ও বজ্রপাতের শব্দ শুনতেন তখন এ দোআ করতেন-
আরবি
“আয় আল্লাহ! আমাদেরকে তোমার গযব দ্বারা ধ্বংস করোনা। আমাদেরকে তোমার আযাব দ্বারা এবং এ ধরনের শাস্তি আসার পূর্বে নিরাপত্তা দান কর”।
(আল-আদাবুল,মুফরাদ)
১১. যখন কোথাও আগুন লেগে যায় তখন নিভাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করবে এবং মুখে “আল্লাহু আকবার” বলতে থাকবে।
রাসূল (সাঃ) বলেনঃ “যখন আগুন লাগতে দেখবে তখন (উচ্চঃস্বরে) “আল্লাহ আকবার” বলবে, তাহলে তাকবীর আগুনকে নিভিয়ে দেয়”।
১২. ভয়-ভীতির আশংকা বেশী হলে এ দোআ পাঠ করবে, আল্লাহর ইচ্ছায় ভীতি দূর হবে এবং শান্তি ও সন্তোষ লাভ হবে। হযরত বারা-বিন আযেব বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ)-এর নিকট অভিযোগ করলো আমার উপর ভয়-ভীতির প্রভাব লেগেই থাকে। তিনি বললেন, “এ দোআ পাঠ করবে”। সে এ দোআ পাঠ করতে লাগলো, আল্লাহ তাআলা তার মন থেকে ভয়-ভীতি দূর করে দিলেন।
(তিবরানী)
আরবি
“আমি সে মহান আল্লাহর গুণগান প্রকাশ করছি। যিনি সকল পবিত্রতার মালিক এবং ফিরিশতাগণের ও জিব্রাইল (আঃ)-এর প্রতিপালক! সমগ্র আকাশমন্ডল ও পৃথিবীতে তোমারই ক্ষমতা ও ঐশ্বর্য বিরাজমান।
©somewhere in net ltd.