নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময় কাটানোর জিনিস নয়, খাটানোর জিনিস।

ইউসুফ জাহিদ

ইউসুফ জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

খুশীর সময় করণীয়

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:২৬



১. যখন খুশী বা আনন্দ প্রকাশের সুযোগ আসে তখন আনন্দ প্রকাশ করবে। খুশী মানুষের জন্য একটি স্বাভাবিক দাবী ও প্রাকৃতিক নিয়ম। দীন মানুষের স্বাভাবিক চাহিদা ও গুরুত্ব অনুভব করে এবং কতিপয় সীমারেখা ও শর্তসাপেক্ষে ঐ প্রয়োজনসমূহ পূরণ করতে উৎসাহ প্রদান করে। দীন কখনো এটা চায়না যে তুমি কপট গাম্ভীর্য, অবাঞ্ছিত মর্যাদা, সর্বদা মনমরা ভাব ও নির্জীবতা দ্বারা তোমার কর্মকশলতা ও যোগ্যতাকে নিস্তেজ করে দেবে। সে (দীন) তোমাকে খুশী ও আনন্দ প্রকাশের পূর্ণ অধিকার প্রদান করে এও দাবী করে যে, তুমি সর্বদা উচ্চ আকাংখা, সজীব উদ্যম ও নব উদ্দীপনায় সজীব থাকো।

জায়েয স্থানসমূহে খুশী প্রকাশ না করা এবং খুশী বা আনন্দ উদযাপনকে দীনী মর্যাদার পরিপন্থী মনে করা দীনের প্রকৃত জ্ঞান নেই এমন লোকের পক্ষেই সম্ভব। তোমার কোন দীনী কর্তব্য পালনের সৌভাগ্য লাভ হলো, তুমি, অথবা তোমার কোন বন্ধু যোগ্যতার দ্বারা উচ্চাসন লাভ করলেন, আল্লাহ তাআলা তোমাকে ধন-দৌলত অথবা অন্য কোন নেয়ামত দান করলেন, তুমি কোন দীনী সফর শেষে বাড়ীতে ফিরলে, তোমার বাড়ীতে কোন সম্মানিত মেহমানের আগমন ঘটল, তোমার বাড়ীতে বিয়ে-শাদী অথবা শিশু জন্মগ্রহণ করল এবং কোন প্রিয়জনের সুস্থ অথবা মঙ্গলের সুসংবাদ আসলো অথবা কোন মুসলিম সেনা বাহিনীর বিজয় সংবাদ শুনলে বা যে কোন ধরনের উৎসব পালন অবশ্যই তোমার জন্মগত অধিকার। ইসলাম শুধু আনন্দ উদযাপনের অনুমতিই দেয় না বরং দীনী দাবীর অংশ হিসেবেও স্বীকৃতি দেয়।

হযরত কাআ’ব বিন মালেকের বর্ণনাঃ আল্লাহ তাআলা আমার তওবাহ কবুল করেছেন এই সুসংবাদ জানতে পেরে আমি তাড়াতাড়ি রাসূল (সাঃ)-এর দরবারে গিয়ে পৌঁছলাম। আমি গিয়ে সালাম দিলাম ঐ সময় রাসূল (সাঃ)-এর মুখমণ্ডল ঝকঝক করছিল। প্রকৃতপক্ষে রাসূল (সাঃ) যখন খুশী হতেন তখন তাঁর মুখমণ্ডল এমন ঝিকিমিকি করতো যেনো চাঁদের একটি টুকরো। তাঁর মুখমণ্ডলে উজ্জ্বল প্রভা দেখেই আমরা বুঝতে পারতাম যে, তিনি খুশী অবস্থায় আছেন।

(রিয়াদুস সালেহীন)

২. উৎসব উপলক্ষে মন খুলে আনন্দ করবে এবং নিজকে কিছুক্ষণের জন্যে আনন্দ উদযাপনে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেবে। অবশ্য তা যেন সীমার মধ্যে থাকে।

রাসূল (সাঃ) যখন (হিজরত করে) মদীনায় তাশরীফ আনলেন তখন বললেনঃ তোমরা বছরে যে দু’দিন আনন্দ উদযাপন করতে, এখন আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে তার চেয়ে উত্তম দু’দিন দান করেছেন অর্থাৎ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। সুতরাং বছরের এ দু’ইসলামী উৎসবে আনন্দ খুশীর পরিপূর্ণ প্রদর্শনী করবে এবং মিলেমিশে খোলামনে স্বাভাবিক নিয়মে কিছু চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করবে। এ কারণে উৎসবের এ দু’দিন রোজা রাখা হারাম। রাসূল (সাঃ) বলেনঃ

এ দিন উত্তম পানাহার, পরস্পর উৎসবের স্বাদ গ্রহণ ও আল্লাহকে স্মরণ করার জন্যে”।

(শরহে মা আনিউল আসার)

ঈদের দিন গুরুত্বের সাথে পরিচ্ছন্নতা এবং নাওয়া-ধোয়ার ব্যবস্থা করবে। ক্ষমতানুযায়ী সর্বোত্তম কাপড় পরে সুগন্ধি ব্যবহার করবে, খাদ্য খাবে এবং শিশুদেরকে জায়েয পন্থায় আনন্দফূর্তি ও খেলাধুলা করে চিত্তবিনোদন ও মনোরঞ্জনের সুযোগ দেবে। যেনো তারা খোলা মনে আনন্দ উদযাপন করতে পারে।

হযরত আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন, ঈদের দিন আনসারী মেয়েরা (আমার ঘরে) বসে আনসাররা ‘বুআস’1 যদ্ধের সময় যে গান গেয়েছিল সে গান গাচ্ছিল। এমতাবস্থায় হযরত আবু বকর (রাঃ) এসে বললো, “নবীর ঘরে এ গান-বাদ্য!” রাসূল (সাঃ) বললেন, “আবু বকর! তাদের কিছু বলো না, প্রত্যেক জাতিরই উৎসবের একটি দিন থাকে-আজ আমাদের ঈদের দিন”।

একবার ঈদের দিন কিছু হাবশী (কাফ্রী) বাজিকর যুদ্ধ নৈপুণ্য দেখাচ্ছিল। রাসূল (সাঃ) নিজেও দেখছিলেন এবং হযরত আয়েশা (রাঃ)-কেও নিজের আড়ালে রেখে দেখাচ্ছিলেন, তিনি বাজিকরদেরকে ধন্যবাদও দিয়ে যাচ্ছিলেন। হযরত আয়েশা যখন দেখতে দেখতে পরিশ্রান্ত হয়ে গেলেন তখন তিনি বললেন, আচ্ছা এখন যাও।

(বুখারী)

৩. আনন্দ উদযাপনে ইসলামী রুচি, ইসলামী নির্দেশ ও রীতি-নীতির প্রতি লক্ষ্য রাখবে। যখন আনন্দ উপভোগ করবে তখন প্রকৃত আনন্দদাতা আল্লাহ তা’আলার শুকরিয়া আদায় করবে। তাঁর দরবারে সেজদায় শোকর আদায় করবে। আনন্দের উত্তেজনায় ইসলাম বিরোধী কোন কার্য বা রীতিনীতি ওআকীদা বিরোধী কোন কার্যকলাপ করবে না। আনন্দ প্রকাশ অবশ্যই করবে কিন্তু কখনও সীমালংঘন করবে না। আনন্দ প্রকাশে এত বাড়াবাড়ির করবে না যাতে গৌরব অহংকার প্রকাশ পায়। আর আবেদন-নিবেদন, বন্দেগীতেও ও বিনয়ের লোপ পায়।

পবিত্র কুরআনে আছে-

আরবি

আল্লাহর নেয়ামত পেয়ে তোমরা অহংকার করবে না, কেননা আল্লাহ অহংকরীকে ভালোবাসেন না।

(সূরায়ে আল-হাদীদ, আয়াত-২৩)

আনন্দে এমন বিভোর হয়ে যাবে না যে, আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল হয়ে যাবে, মুমিনের আনন্দ প্রকাশের ধারা এই যে, মূল আনন্দদাতা আল্লাহকে আরো বেশী বেশী স্মরণ করা। তাঁর দরবারে সেজদায় শোকর এবং নিজের কথা ও কাজে আল্লাহর দান, মাহাত্ম্য ও মহিমা প্রকাশ করা।

রমযানের পূর্ণ মাস রোযা পালন করে এবং রাত্রিকালে কুরআন তেলাওয়াত ও তারাবীহের সুযোগ পেয়ে যখন ঈদের চাঁদ দেখ তখন আনন্দে উল্লাসিত হয়ে উঠ। কারণ, আল্লাহ তাআলা তোমাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন তা আল্লাহর অনুগ্রহে পালন করতে সফলকাম হয়েছ। তাই তুমি তাড়াতাড়ি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় স্বরূপ আল্লাহ তোমাকে যে ধন-দৌলত দান করেছেন তার একটা অংশ (ছাদক্বাতুল ফিতর) তোমার গরীব মিসকীন ভাইদের মধ্যে বন্টন করে দেবে যেনো তোমার বন্দেগীতে কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে থাকলে তার ক্ষতিপূরণ হয়ে যায় এবং আল্লাহর গরীব বান্দাগণও যেনো এ অর্থ পেয়ে ঈদের আনন্দে শরীক হয়ে সবাই ঈদের আনন্দ প্রকাশ করতে পারে। সুতরাং তুমি এসব নেয়ামত লাভের শোকরিয়া স্বরূপ ঈদের মাঠে গিয়ে জামায়াতের সাথে দু’রাকাআত নামায আদায় করে সঠিক আনন্দ প্রকাশ কর। আর ইহাই হলো সালাতুল ঈদ। অনুরূপভাবে ঈদুল আযহার দিন হযরত ইবরাহীম (আঃ) ও হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর মহান ও অনুপম কোরবানীর স্মৃতি স্মারক উদযাপন করে কোরবানীর উদ্দীপনায় নিজের অন্তরাত্মাকে মাতোয়ারা করে শুকরিয়ার সেজদা আদায় কর। ইহাই সালাতুল ঈদুল আযহা।

অতঃপর প্রতিটি জনবসতির অলিগলি, রাস্তা-ঘাট তাকবীর তাহলীল ও আল্লাহর মহানত্বের ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে। আবার যখন শরীয়তানুযায়ী ঈদের দিনগুলোতে ভালো খাদ্য আহার কর, ভালো কাপড় পরিধান এবং আনন্দ প্রকাশের জন্যে জায়েয পন্থা গুলোকে অবলম্বন কর, তখন তোমার প্রতিটি কর্মকাণ্ড তোমার ইবাদতে পরিগণিত হয়।

৪. নিজের আনন্দে অন্যকে শরীক করবে অনুরূপভাবে অন্যের আনন্দে নিজে এবং আনন্দ প্রকাশের সুযোগ লাভে ধন্যবাদ দেয়ারও চেষ্টা করবে।

কা’আব বিন মালেক (রাঃ) এর তাওবা কবুল হওয়ার সংবাদ সাহাবায়ে কেরাম জানতে পেরে তাঁরা দলে দলে এসে তাঁকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে লাগলেন এবং আনন্দ প্রকাশ করতে লাগলেন। এমনকি হযরত তালহা (রাঃ) এর কৃতজ্ঞতা এবং আনন্দ প্রকাশে হযরত কা’আব এতই আবেগাপ্লুত হন যে, জীবনভর তাঁর নিকট স্মরণীয় হয়েছিল। হযরত কা’আব বৃদ্ধাবস্থায় যখন নিজের পরীক্ষা ও তাওবা কবুলের ঘটনা নিজ ছেলে আবদুল্লাহকে বিস্তারিত বললেন, তখন বিশেষ করে হযরত তালহা (রাঃ)-এর আনন্দ প্রকাশের কথা আলোচনা করলেন এবং বললেন, আমি (হযরত) তালহা (রাঃ)-এর ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও আনন্দ প্রকাশের আকর্ষণকে কখনও ভুলতে পারব না। স্বয়ং রাসূল (সাঃ) যখন হযরত কা’আব (রাঃ)-কে তাওবা কবুলের সুসংবাদ দিলেন তখন অত্যন্ত আনন্দ প্রকাশ করে বললেন, “কা’আব! এটা তোমার জীবনের চাইতে বেশী খুশীর দিন।

(রিয়াদুস সালেহীন)

কারো বিয়ের অনুষ্ঠানে অথবা কারো সন্তানের জন্ম দিনে অথবা অনুরূপ অন্য কোন আনন্দ উৎসবে যোগাদন করবে এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবে।

হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) যখন কারো বিয়েতে যেতেন তাকে মোবারকবাদ দিতেন ও এরূপ বলতেন-

আরবি

“আল্লাহ তোমাকে বরকতময় রাখুন! তোমাদের উভয়ের উপর বরকত নাযিল করুন! এবং তোমাদের উভয়ের মধ্যে ভালো ও সুন্দর জীবন-যাপনের তাওফীক দিন”।

একবার হযরত হোসাইন (রাঃ) একজনের সন্তানের জন্মে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের নিয়ম শিক্ষা দিতে গিয়ে বললেন, “এভাবে বলবে যে, আল্লাহ! তোমাকে এ দ্বারা খায়ের ও বরকত দান করুন! তাঁর শুকরিয়া আদায় করার তওফীক দিন, সন্তানকে যৌবনের সখ ও সৌন্দর্য দেখার সুযোগ দিন। আর তাকে তোমার অনুগত করে দিন”।

৫. কারো কোন প্রিয়জন অথবা হিতকারী ব্যক্তি দীর্ঘ সফর শেষে যখন ফিরে আসে তখন তাকে অভ্যর্থনা জানাবে এবং তার সুস্থ শরীরে বাড়ী ফিরে আসা ও সফলকাম হওয়ার জন্যে আনন্দ প্রকাশ করবে। সে যদি শান্তিতে দেশে ফিরে আসার শুকরিয়া স্বরূপ কোন উৎসবের ব্যবস্থা করে থাকে তা হলে তাতে যোগদান করবে। তুমি যদি বিদেশ থেকে শান্তি ও সুস্থ অবস্থায় দেশে ফিরে আসার শুকরিয়া স্বরূপ কোন আনন্দ উদযাপনের ব্যবস্থা কর তাহলে এ আনন্দ উৎসবেও অন্যদেরকে শরীক রাখবে। তবে অনর্থক অতিরিক্ত খরচ ও লোক দেখানো কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবে আর নিজের শক্তির বাইরে খরচ করবে না।

রাসূল (সাঃ) যখন বিজয়ী বেশে তাবুক যুদ্ধ থেকে ফিরে আসলেন তখন সাহাবায়ে কেরাম ও শিশু-কিশোররা অভ্যর্থনার জন্য সানিয়াতুল বেদা (বিদায়ী ঘাঁটি) পর্যন্ত আসে।

(আবু দাউদ)

রাসূল (সাঃ) যখন মক্কা থেকে হিজরত শেষে মদীনায় পৌঁছে দক্ষিণ দিক থেকে শহরে প্রবেশ করতে লাগলেন তখন মুসলমান পুরুষ-মহিলা, সন্তান-সন্ততি সবাই অভ্যর্থনা জানাবার জন্য শহর থেকে বের হয়ে এসেছিলেন এবং তখন আনসারদের ছোট ছোট মেয়েরা মনের আনন্দে গান গাচ্ছিল-

আরবি

“(আজ) আমাদের উপর পূর্ণিমার চাঁদ উদয় হলো, (দক্ষিণ দিকের) সানিয়াতুল বিদা1 থেকে, আমাদের উপর শোকর ওয়াজিব, আহ্বানকারী আল্লাহর পথে যে আহ্বান করেছেন তার জন্যে হাজার শোকরিয়া।

হে, আমাদের মধ্যে প্রেরিত ব্যক্তি! আপনি এমনি দীন এনেছেন আমরা যার অনুসরণ করব”।

“একদা রাসূল (সাঃ) সফর থেকে মদীনায় পৌঁছে উট যবেহ করে লোকদের দাওয়াত করেন”।

(আবু দাউদ)

৬. বিয়ে শাদী উপলক্ষেও আনন্দ করবে। এ আনন্দে নিজের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদেরকেও শরীক করবে। এ উপলক্ষে রাসূল (সাঃ) কিছু ভালো গান পরিবেশন করতে ও দফ নাম বাদ্যযন্ত্র বাজাতেও অনুমতি দিয়েছেন। এর দ্বারা আনন্দের মত্ততা প্রশমিত করা এবং বিবাহের সাধারণ প্রচার ও এর প্রসিদ্ধিও উদ্দেশ্য।

হযরত আয়েশা (রাঃ) নিজের এক আত্মীয় মহিলার সাথে জনৈক আনসারী পুরুষের বিবাহ দিলেন। তাকে যখন বিদায় দেয়া হল তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, লোকেরা তার সাথে কেন একটি দাসী পাঠালোনা, যে দফ বাজাত।

(বুখারী)

হযরত রবী’ বিনতে মাসউদ (রাঃ)-এর বিয়ে হলো। এজন্য কিছু মেয়ে তাঁর নিকট বসে দফ বাজাচ্ছিল এবং বদর যুদ্ধে যারা শাহাদাত বরণ করেছিলেন তাদের প্রশংসা সূচক কবিতা দিয়ে গান গাচ্ছিল, একটি মেয়ে কবিতার এক পংক্তি পাঠ করলোঃ (যার অর্থ হলো)

আমাদের মধ্যে এমন এক নবী আছেন যিনি আগামী দিনের কথা জানেন।

রাসূল (সাঃ) শুনে বললেনঃ এটা বাদ রাখ, আগে যা গাচ্ছিলে তাই গাইতে থাক।

৭. বিয়ে-শাদীর খুশীতে নিজের সাধ্য ও ক্ষমতানুযায়ী নিজের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদেরকে কিছু পানাহার করানোর ব্যবস্থা রাখবে। রাসূল (সাঃ) নিজের বিয়েতেও ওলীমার দাওয়াত করেছেন এবং অন্যকেও এরূপ করতে পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেনঃ

“বিয়েতে যাওয়ার সুযোগ না হলে অন্ততঃপক্ষে ধন্যবাদ বাণী পাঠিয়ে দেবে। বিয়ে-শাদী বা এ জাতীয় আনন্দ প্রকাশের অনুষ্ঠানসমূহে উপহার সামগ্রী উপঢৌকন দিলে পারস্পরিক সম্পর্কে সজীবতা ও দৃঢ়তা সৃষ্টি হয় এবং বন্ধুত্বও বৃদ্ধি পায়। হ্যাঁ এদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবে যে, উপহার যেনো নিজের ক্ষমতানুযায়ী দেয়া হয়, লোক দেখানো ও প্রদর্শনীসুলভ না হয় আর তাতে নিজের অকপটতার হিসাব নিকাশ অবশ্যই করবে।ুশীর সময় করণীয়

১. যখন খুশী বা আনন্দ প্রকাশের সুযোগ আসে তখন আনন্দ প্রকাশ করবে। খুশী মানুষের জন্য একটি স্বাভাবিক দাবী ও প্রাকৃতিক নিয়ম। দীন মানুষের স্বাভাবিক চাহিদা ও গুরুত্ব অনুভব করে এবং কতিপয় সীমারেখা ও শর্তসাপেক্ষে ঐ প্রয়োজনসমূহ পূরণ করতে উৎসাহ প্রদান করে। দীন কখনো এটা চায়না যে তুমি কপট গাম্ভীর্য, অবাঞ্ছিত মর্যাদা, সর্বদা মনমরা ভাব ও নির্জীবতা দ্বারা তোমার কর্মকশলতা ও যোগ্যতাকে নিস্তেজ করে দেবে। সে (দীন) তোমাকে খুশী ও আনন্দ প্রকাশের পূর্ণ অধিকার প্রদান করে এও দাবী করে যে, তুমি সর্বদা উচ্চ আকাংখা, সজীব উদ্যম ও নব উদ্দীপনায় সজীব থাকো।

জায়েয স্থানসমূহে খুশী প্রকাশ না করা এবং খুশী বা আনন্দ উদযাপনকে দীনী মর্যাদার পরিপন্থী মনে করা দীনের প্রকৃত জ্ঞান নেই এমন লোকের পক্ষেই সম্ভব। তোমার কোন দীনী কর্তব্য পালনের সৌভাগ্য লাভ হলো, তুমি, অথবা তোমার কোন বন্ধু যোগ্যতার দ্বারা উচ্চাসন লাভ করলেন, আল্লাহ তাআলা তোমাকে ধন-দৌলত অথবা অন্য কোন নেয়ামত দান করলেন, তুমি কোন দীনী সফর শেষে বাড়ীতে ফিরলে, তোমার বাড়ীতে কোন সম্মানিত মেহমানের আগমন ঘটল, তোমার বাড়ীতে বিয়ে-শাদী অথবা শিশু জন্মগ্রহণ করল এবং কোন প্রিয়জনের সুস্থ অথবা মঙ্গলের সুসংবাদ আসলো অথবা কোন মুসলিম সেনা বাহিনীর বিজয় সংবাদ শুনলে বা যে কোন ধরনের উৎসব পালন অবশ্যই তোমার জন্মগত অধিকার। ইসলাম শুধু আনন্দ উদযাপনের অনুমতিই দেয় না বরং দীনী দাবীর অংশ হিসেবেও স্বীকৃতি দেয়।

হযরত কাআ’ব বিন মালেকের বর্ণনাঃ আল্লাহ তাআলা আমার তওবাহ কবুল করেছেন এই সুসংবাদ জানতে পেরে আমি তাড়াতাড়ি রাসূল (সাঃ)-এর দরবারে গিয়ে পৌঁছলাম। আমি গিয়ে সালাম দিলাম ঐ সময় রাসূল (সাঃ)-এর মুখমণ্ডল ঝকঝক করছিল। প্রকৃতপক্ষে রাসূল (সাঃ) যখন খুশী হতেন তখন তাঁর মুখমণ্ডল এমন ঝিকিমিকি করতো যেনো চাঁদের একটি টুকরো। তাঁর মুখমণ্ডলে উজ্জ্বল প্রভা দেখেই আমরা বুঝতে পারতাম যে, তিনি খুশী অবস্থায় আছেন।

(রিয়াদুস সালেহীন)

২. উৎসব উপলক্ষে মন খুলে আনন্দ করবে এবং নিজকে কিছুক্ষণের জন্যে আনন্দ উদযাপনে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেবে। অবশ্য তা যেন সীমার মধ্যে থাকে।

রাসূল (সাঃ) যখন (হিজরত করে) মদীনায় তাশরীফ আনলেন তখন বললেনঃ তোমরা বছরে যে দু’দিন আনন্দ উদযাপন করতে, এখন আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে তার চেয়ে উত্তম দু’দিন দান করেছেন অর্থাৎ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। সুতরাং বছরের এ দু’ইসলামী উৎসবে আনন্দ খুশীর পরিপূর্ণ প্রদর্শনী করবে এবং মিলেমিশে খোলামনে স্বাভাবিক নিয়মে কিছু চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করবে। এ কারণে উৎসবের এ দু’দিন রোজা রাখা হারাম। রাসূল (সাঃ) বলেনঃ

এ দিন উত্তম পানাহার, পরস্পর উৎসবের স্বাদ গ্রহণ ও আল্লাহকে স্মরণ করার জন্যে”।

(শরহে মা আনিউল আসার)

ঈদের দিন গুরুত্বের সাথে পরিচ্ছন্নতা এবং নাওয়া-ধোয়ার ব্যবস্থা করবে। ক্ষমতানুযায়ী সর্বোত্তম কাপড় পরে সুগন্ধি ব্যবহার করবে, খাদ্য খাবে এবং শিশুদেরকে জায়েয পন্থায় আনন্দফূর্তি ও খেলাধুলা করে চিত্তবিনোদন ও মনোরঞ্জনের সুযোগ দেবে। যেনো তারা খোলা মনে আনন্দ উদযাপন করতে পারে।

হযরত আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন, ঈদের দিন আনসারী মেয়েরা (আমার ঘরে) বসে আনসাররা ‘বুআস’1 যদ্ধের সময় যে গান গেয়েছিল সে গান গাচ্ছিল। এমতাবস্থায় হযরত আবু বকর (রাঃ) এসে বললো, “নবীর ঘরে এ গান-বাদ্য!” রাসূল (সাঃ) বললেন, “আবু বকর! তাদের কিছু বলো না, প্রত্যেক জাতিরই উৎসবের একটি দিন থাকে-আজ আমাদের ঈদের দিন”।

একবার ঈদের দিন কিছু হাবশী (কাফ্রী) বাজিকর যুদ্ধ নৈপুণ্য দেখাচ্ছিল। রাসূল (সাঃ) নিজেও দেখছিলেন এবং হযরত আয়েশা (রাঃ)-কেও নিজের আড়ালে রেখে দেখাচ্ছিলেন, তিনি বাজিকরদেরকে ধন্যবাদও দিয়ে যাচ্ছিলেন। হযরত আয়েশা যখন দেখতে দেখতে পরিশ্রান্ত হয়ে গেলেন তখন তিনি বললেন, আচ্ছা এখন যাও।

(বুখারী)

৩. আনন্দ উদযাপনে ইসলামী রুচি, ইসলামী নির্দেশ ও রীতি-নীতির প্রতি লক্ষ্য রাখবে। যখন আনন্দ উপভোগ করবে তখন প্রকৃত আনন্দদাতা আল্লাহ তা’আলার শুকরিয়া আদায় করবে। তাঁর দরবারে সেজদায় শোকর আদায় করবে। আনন্দের উত্তেজনায় ইসলাম বিরোধী কোন কার্য বা রীতিনীতি ওআকীদা বিরোধী কোন কার্যকলাপ করবে না। আনন্দ প্রকাশ অবশ্যই করবে কিন্তু কখনও সীমালংঘন করবে না। আনন্দ প্রকাশে এত বাড়াবাড়ির করবে না যাতে গৌরব অহংকার প্রকাশ পায়। আর আবেদন-নিবেদন, বন্দেগীতেও ও বিনয়ের লোপ পায়।

পবিত্র কুরআনে আছে-

আরবি

আল্লাহর নেয়ামত পেয়ে তোমরা অহংকার করবে না, কেননা আল্লাহ অহংকরীকে ভালোবাসেন না।

(সূরায়ে আল-হাদীদ, আয়াত-২৩)

আনন্দে এমন বিভোর হয়ে যাবে না যে, আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল হয়ে যাবে, মুমিনের আনন্দ প্রকাশের ধারা এই যে, মূল আনন্দদাতা আল্লাহকে আরো বেশী বেশী স্মরণ করা। তাঁর দরবারে সেজদায় শোকর এবং নিজের কথা ও কাজে আল্লাহর দান, মাহাত্ম্য ও মহিমা প্রকাশ করা।

রমযানের পূর্ণ মাস রোযা পালন করে এবং রাত্রিকালে কুরআন তেলাওয়াত ও তারাবীহের সুযোগ পেয়ে যখন ঈদের চাঁদ দেখ তখন আনন্দে উল্লাসিত হয়ে উঠ। কারণ, আল্লাহ তাআলা তোমাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন তা আল্লাহর অনুগ্রহে পালন করতে সফলকাম হয়েছ। তাই তুমি তাড়াতাড়ি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় স্বরূপ আল্লাহ তোমাকে যে ধন-দৌলত দান করেছেন তার একটা অংশ (ছাদক্বাতুল ফিতর) তোমার গরীব মিসকীন ভাইদের মধ্যে বন্টন করে দেবে যেনো তোমার বন্দেগীতে কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে থাকলে তার ক্ষতিপূরণ হয়ে যায় এবং আল্লাহর গরীব বান্দাগণও যেনো এ অর্থ পেয়ে ঈদের আনন্দে শরীক হয়ে সবাই ঈদের আনন্দ প্রকাশ করতে পারে। সুতরাং তুমি এসব নেয়ামত লাভের শোকরিয়া স্বরূপ ঈদের মাঠে গিয়ে জামায়াতের সাথে দু’রাকাআত নামায আদায় করে সঠিক আনন্দ প্রকাশ কর। আর ইহাই হলো সালাতুল ঈদ। অনুরূপভাবে ঈদুল আযহার দিন হযরত ইবরাহীম (আঃ) ও হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর মহান ও অনুপম কোরবানীর স্মৃতি স্মারক উদযাপন করে কোরবানীর উদ্দীপনায় নিজের অন্তরাত্মাকে মাতোয়ারা করে শুকরিয়ার সেজদা আদায় কর। ইহাই সালাতুল ঈদুল আযহা।

অতঃপর প্রতিটি জনবসতির অলিগলি, রাস্তা-ঘাট তাকবীর তাহলীল ও আল্লাহর মহানত্বের ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে। আবার যখন শরীয়তানুযায়ী ঈদের দিনগুলোতে ভালো খাদ্য আহার কর, ভালো কাপড় পরিধান এবং আনন্দ প্রকাশের জন্যে জায়েয পন্থা গুলোকে অবলম্বন কর, তখন তোমার প্রতিটি কর্মকাণ্ড তোমার ইবাদতে পরিগণিত হয়।

৪. নিজের আনন্দে অন্যকে শরীক করবে অনুরূপভাবে অন্যের আনন্দে নিজে এবং আনন্দ প্রকাশের সুযোগ লাভে ধন্যবাদ দেয়ারও চেষ্টা করবে।

কা’আব বিন মালেক (রাঃ) এর তাওবা কবুল হওয়ার সংবাদ সাহাবায়ে কেরাম জানতে পেরে তাঁরা দলে দলে এসে তাঁকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে লাগলেন এবং আনন্দ প্রকাশ করতে লাগলেন। এমনকি হযরত তালহা (রাঃ) এর কৃতজ্ঞতা এবং আনন্দ প্রকাশে হযরত কা’আব এতই আবেগাপ্লুত হন যে, জীবনভর তাঁর নিকট স্মরণীয় হয়েছিল। হযরত কা’আব বৃদ্ধাবস্থায় যখন নিজের পরীক্ষা ও তাওবা কবুলের ঘটনা নিজ ছেলে আবদুল্লাহকে বিস্তারিত বললেন, তখন বিশেষ করে হযরত তালহা (রাঃ)-এর আনন্দ প্রকাশের কথা আলোচনা করলেন এবং বললেন, আমি (হযরত) তালহা (রাঃ)-এর ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও আনন্দ প্রকাশের আকর্ষণকে কখনও ভুলতে পারব না। স্বয়ং রাসূল (সাঃ) যখন হযরত কা’আব (রাঃ)-কে তাওবা কবুলের সুসংবাদ দিলেন তখন অত্যন্ত আনন্দ প্রকাশ করে বললেন, “কা’আব! এটা তোমার জীবনের চাইতে বেশী খুশীর দিন।

(রিয়াদুস সালেহীন)

কারো বিয়ের অনুষ্ঠানে অথবা কারো সন্তানের জন্ম দিনে অথবা অনুরূপ অন্য কোন আনন্দ উৎসবে যোগাদন করবে এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবে।

হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) যখন কারো বিয়েতে যেতেন তাকে মোবারকবাদ দিতেন ও এরূপ বলতেন-

আরবি

“আল্লাহ তোমাকে বরকতময় রাখুন! তোমাদের উভয়ের উপর বরকত নাযিল করুন! এবং তোমাদের উভয়ের মধ্যে ভালো ও সুন্দর জীবন-যাপনের তাওফীক দিন”।

একবার হযরত হোসাইন (রাঃ) একজনের সন্তানের জন্মে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের নিয়ম শিক্ষা দিতে গিয়ে বললেন, “এভাবে বলবে যে, আল্লাহ! তোমাকে এ দ্বারা খায়ের ও বরকত দান করুন! তাঁর শুকরিয়া আদায় করার তওফীক দিন, সন্তানকে যৌবনের সখ ও সৌন্দর্য দেখার সুযোগ দিন। আর তাকে তোমার অনুগত করে দিন”।

৫. কারো কোন প্রিয়জন অথবা হিতকারী ব্যক্তি দীর্ঘ সফর শেষে যখন ফিরে আসে তখন তাকে অভ্যর্থনা জানাবে এবং তার সুস্থ শরীরে বাড়ী ফিরে আসা ও সফলকাম হওয়ার জন্যে আনন্দ প্রকাশ করবে। সে যদি শান্তিতে দেশে ফিরে আসার শুকরিয়া স্বরূপ কোন উৎসবের ব্যবস্থা করে থাকে তা হলে তাতে যোগদান করবে। তুমি যদি বিদেশ থেকে শান্তি ও সুস্থ অবস্থায় দেশে ফিরে আসার শুকরিয়া স্বরূপ কোন আনন্দ উদযাপনের ব্যবস্থা কর তাহলে এ আনন্দ উৎসবেও অন্যদেরকে শরীক রাখবে। তবে অনর্থক অতিরিক্ত খরচ ও লোক দেখানো কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবে আর নিজের শক্তির বাইরে খরচ করবে না।

রাসূল (সাঃ) যখন বিজয়ী বেশে তাবুক যুদ্ধ থেকে ফিরে আসলেন তখন সাহাবায়ে কেরাম ও শিশু-কিশোররা অভ্যর্থনার জন্য সানিয়াতুল বেদা (বিদায়ী ঘাঁটি) পর্যন্ত আসে।

(আবু দাউদ)

রাসূল (সাঃ) যখন মক্কা থেকে হিজরত শেষে মদীনায় পৌঁছে দক্ষিণ দিক থেকে শহরে প্রবেশ করতে লাগলেন তখন মুসলমান পুরুষ-মহিলা, সন্তান-সন্ততি সবাই অভ্যর্থনা জানাবার জন্য শহর থেকে বের হয়ে এসেছিলেন এবং তখন আনসারদের ছোট ছোট মেয়েরা মনের আনন্দে গান গাচ্ছিল-

আরবি

“(আজ) আমাদের উপর পূর্ণিমার চাঁদ উদয় হলো, (দক্ষিণ দিকের) সানিয়াতুল বিদা1 থেকে, আমাদের উপর শোকর ওয়াজিব, আহ্বানকারী আল্লাহর পথে যে আহ্বান করেছেন তার জন্যে হাজার শোকরিয়া।

হে, আমাদের মধ্যে প্রেরিত ব্যক্তি! আপনি এমনি দীন এনেছেন আমরা যার অনুসরণ করব”।

“একদা রাসূল (সাঃ) সফর থেকে মদীনায় পৌঁছে উট যবেহ করে লোকদের দাওয়াত করেন”।

(আবু দাউদ)

৬. বিয়ে শাদী উপলক্ষেও আনন্দ করবে। এ আনন্দে নিজের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদেরকেও শরীক করবে। এ উপলক্ষে রাসূল (সাঃ) কিছু ভালো গান পরিবেশন করতে ও দফ নাম বাদ্যযন্ত্র বাজাতেও অনুমতি দিয়েছেন। এর দ্বারা আনন্দের মত্ততা প্রশমিত করা এবং বিবাহের সাধারণ প্রচার ও এর প্রসিদ্ধিও উদ্দেশ্য।

হযরত আয়েশা (রাঃ) নিজের এক আত্মীয় মহিলার সাথে জনৈক আনসারী পুরুষের বিবাহ দিলেন। তাকে যখন বিদায় দেয়া হল তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, লোকেরা তার সাথে কেন একটি দাসী পাঠালোনা, যে দফ বাজাত।

(বুখারী)

হযরত রবী’ বিনতে মাসউদ (রাঃ)-এর বিয়ে হলো। এজন্য কিছু মেয়ে তাঁর নিকট বসে দফ বাজাচ্ছিল এবং বদর যুদ্ধে যারা শাহাদাত বরণ করেছিলেন তাদের প্রশংসা সূচক কবিতা দিয়ে গান গাচ্ছিল, একটি মেয়ে কবিতার এক পংক্তি পাঠ করলোঃ (যার অর্থ হলো)

আমাদের মধ্যে এমন এক নবী আছেন যিনি আগামী দিনের কথা জানেন।

রাসূল (সাঃ) শুনে বললেনঃ এটা বাদ রাখ, আগে যা গাচ্ছিলে তাই গাইতে থাক।

৭. বিয়ে-শাদীর খুশীতে নিজের সাধ্য ও ক্ষমতানুযায়ী নিজের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদেরকে কিছু পানাহার করানোর ব্যবস্থা রাখবে। রাসূল (সাঃ) নিজের বিয়েতেও ওলীমার দাওয়াত করেছেন এবং অন্যকেও এরূপ করতে পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেনঃ

“বিয়েতে যাওয়ার সুযোগ না হলে অন্ততঃপক্ষে ধন্যবাদ বাণী পাঠিয়ে দেবে। বিয়ে-শাদী বা এ জাতীয় আনন্দ প্রকাশের অনুষ্ঠানসমূহে উপহার সামগ্রী উপঢৌকন দিলে পারস্পরিক সম্পর্কে সজীবতা ও দৃঢ়তা সৃষ্টি হয় এবং বন্ধুত্বও বৃদ্ধি পায়। হ্যাঁ এদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবে যে, উপহার যেনো নিজের ক্ষমতানুযায়ী দেয়া হয়, লোক দেখানো ও প্রদর্শনীসুলভ না হয় আর তাতে নিজের অকপটতার হিসাব নিকাশ অবশ্যই করবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.