![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কেউ ডাকেনি তবু এলাম, বলতে এলাম ভালোবাসি।
মানুষ খবর খায় না; পড়ে কিংবা শোনে। তার পরও সংবাদমাধ্যমগুলোয় এটিকে বিবেচনা করা হয় খাদ্যের মতোই। প্রকাশের জন্য নির্বাচন করার আগে সংশ্লিষ্টরা বারবার ভাবেন, পাঠক বা দর্শক-শ্রোতা তা খাবে কিনা; অর্থাৎ খবরটি তাদের আকর্ষণ করবে কিনা। প্রশ্ন হলো, খবর কি আসলেই খাদ্য?
একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করলে পাল্টা প্রশ্নই ওঠা স্বাভাবিক— এ যুগে খাবারের তুলনায় সংবাদ জানার প্রয়োজনীয়তা কি মানুষ কোনো অংশে কম অনুভব করে? মানুষ সংবাদ ভক্ষণ করে না ঠিকই; কিন্তু এটি ছাড়া কেউ কি কল্পনা করতে পারে একটি দিন? ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করলে আমরা দেখতে পাই, সভ্যতা যত উত্কর্ষ লাভ করেছে, সংবাদ মানুষের কাছে ততই হয়ে উঠেছে অপরিহার্য। অজানাকে জানার আগ্রহ তার মধ্যে বেড়ে উঠেছে প্রবলভাবে। অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সংবাদ পাঠ বা শোনা ছাড়া আধুনিক জীবন হয়ে উঠেছে অসম্ভব। লক্ষ করলে দেখা যাবে, একজন সচেতন মানুষের দিন শুরু হয় সংবাদ পাঠের মাধ্যমে। এজন্য তিনি দৃষ্টি রাখেন পত্রিকার পাতায়। এ সুযোগ যাদের নেই, সংবাদ শোনার জন্য তারা আশ্রয় নেন রেডিও অথবা দেখার জন্য টেলিভিশনের। আবার রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও একইভাবে টিভি স্ক্রলে বা ইন্টারনেটে দেখে নেন দেশ ও বিদেশের সর্বশেষ খবর। প্রকৃতপক্ষে প্রতিদিন নিয়ম করে খাবার গ্রহণের মতোই সংবাদ জানাও হয়ে উঠেছে অপরিহার্য। সংবাদ পাঠ বা শোনার প্রবণতার দিকেও লক্ষ করলে দেখা যাবে খাবার গ্রহণের মতোই এখানেও রয়েছে রুচির তারতম্য। পত্রিকা পাঠ সবাই এক সংবাদ দিয়ে শুরু করে না। রেডিও বা টেলিভিশনে পরিবেশিত সংবাদের ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যায় এ প্রবণতা। এক সংবাদ সবাইকে আকর্ষণ করে না সমানভাবে। এ পরিস্থিতিতে খবরকে খাদ্য হিসেবে অভিহিত করা কি ভুল হবে?
খাদ্য গ্রহণের ফলে মানুষের শারীরিক প্রক্রিয়ায় তার ফল লক্ষ করা যায়। সংবাদ জানার ফলে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক জগতে পরিবর্তন ঘটা অস্বাভাবিক নয়। তার প্রভাব কি শরীরেও পড়ে? বাংলাদেশের সংবাদপত্র বা অন্যান্য সংবাদমাধ্যম থাকে নেতিবাচক সংবাদে ঠাসা। সাম্প্রতিক কালে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তা আরো বেড়ে উঠেছে। এসবে এমন কিছু ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করা হচ্ছে, যেগুলো এক কথায় বলা যায় বিভত্স। এসব দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে আমাদের শিশুরা। তাদের মানসিকতায় কি এর প্রভাব পড়বে না? খাদ্যের মতো ভেজাল মেশানোর ঘটনা সংবাদেও কম ঘটছে না। এর মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে আমাদের। সংবাদ এখন খাদ্যের মতো অপরিহার্য হয়ে উঠেছে বটে; কিন্তু এ ভেজাল সংবাদের কারণে অনেক ক্ষেত্রে সৃষ্টি হচ্ছে অস্থিরতা আর বাড়ছে জটিলতা। সাধারণত প্রাত্যহিক জীবনে এ ধরনের সংকট আমরা এড়িয়ে চলতে চাই। কথা হলো, আমাদের দেশে যে কায়দায় সংবাদমাধ্যমের বিকাশ ঘটছে, তাতে এসব থেকে নিজেদের মুক্ত রাখার উপায় আমরা রাখছি কোথায়?
খাদ্যের মতোই সংবাদও প্রভাব ফেলছে মানবজীবনে। এ লক্ষে বাড়ছে ব্যয়। প্রযুক্তি কেনার পাশাপাশি পত্রিকা, ডিশ কানেকশন, ইন্টারনেট, সেলফোনে নিউজ অ্যালার্ট প্রভৃতির জন্য বাড়াতে হচ্ছে বরাদ্দ। সংবাদ জানার জন্য মানুষের অতিরিক্ত সময়ও ব্যয় হচ্ছে। সংবাদ জানার জন্য আমাদের মাথাপিছু খরচ কত? প্রতিদিন এ লক্ষে আমরা কতটা সময় ব্যয় করি? কোন ধরনের সংবাদমাধ্যমের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেশি? এসব নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান কিন্তু আমাদের নেই। কিছু সংবাদ যেমন মনে আনন্দ সঞ্চার করে, তেমনি কিছু আবার সৃষ্টি করে মানসিক উত্তেজনা। এর কী ধরনের প্রভাব পড়ে প্রাত্যহিক জীবনে? তাতে লাভ-ক্ষতির হিসাবটাইবা কেমন? মানুষের আগ্রহের কারণে সংবাদ ব্যবসায় বিনিয়োগ বাড়ছে। এ মাধ্যমে কাজের জন্য ঝুঁকছে মানুষ। অনেক ক্ষেত্রে সমাজে তারাও পাচ্ছেন বাড়তি সম্মান। এসব হয়েছে কেবল খবর খাদ্য হয়ে উঠেছে বলেই। এ অবস্থায় উল্লিখিত প্রশ্নের উত্তর খোঁজা কি জরুরি নয়?
Click This Link
©somewhere in net ltd.