নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জাহিরুল ইসলাম

আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যকুল ...

জাহিরুল ইসলাম

কেউ ডাকেনি তবু এলাম, বলতে এলাম ভালোবাসি।

জাহিরুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

এলোমেলো স্বপ্ন

১৫ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:৫৪

আমার আজকের সকালটা ছিল একটু অন্যরকম। ছুটির দিনে মুঠোফোনে অ্যালার্ম বাজার সঙ্গে সঙ্গে ওঠার তাড়া ছিল না বলে নয়, ঘুম ভেঙেছিল একটা স্বপ্ন দেখে। সাধারণত মানুষ যা স্বপ্নে দেখে তার অধিকাংশই ভুলে যায়। এই ভুলে যাওয়ার মধ্যেও কোনো কোনো স্বপ্ন বা স্বপ্নের টুকরো স্মৃতি মনে থাকে। যে স্বপ্নটা দেখতে দেখতে আজ ঘুম ভেঙে গিয়েছিল, সেটা এক ধরনের শিহরণ জাগিয়েছিল আমার মধ্যে। তাই জেগে ওঠার পরও সেটা মনে পড়ছিল বার বার। স্মৃতি বার বার ফিরে যাচ্ছিল ছেলেবেলায়। প্রাইমারি স্কুলে পড়ার দিনগুলোতে। আরও সুস্পষ্ট করে বললে, দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময়ে।
স্বপ্নে দেখি, আমি ক্লাস টু- এ পড়ি। যেই প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম, ক্লাস করছি সেই স্কুলের শ্রেণী কক্ষে। দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় যেই ঘরে আমাদের ক্লাস হতো, ঠিক সেই ঘরে বসে। আমার হাতে প্লাস্টিকে বাঁধানো এ, বি, সি, ডি শেখার ইংরেজি বই। মমেনা আপা সুর করে পড়াচ্ছেন, এ- তে আপেল; বি- তে বল।...
এতদূর পর্যন্ত স্বপ্নটা ঠিকই ছিল। গোলমাল সৃষ্টি হলো অন্য জায়গায়। দেখলাম, আশপাশে যারা বসা তারা সবাই আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে বেশির ভাগ সময় যাদের সঙ্গে এক বেঞ্চে বসতাম, তাদের সঙ্গে বসেই এ, বি, সি, ডি পড়ছি। টানাটানি করছি বই নিয়ে। এখানে একটি কথা বলে রাখি, এরা কেউই আমার স্কুল জীবনে সহপাঠী ছিল না। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েও তো তাদের সাথে প্লাস্টিকে বাঁধানো ইংরেজি বর্ণমালা শেখার বই নিয়ে টানাটানি করিনি। তাহলে স্বপ্নে এ রকম দেখলাম কেন?
গোলমাল আরও একটা জায়গায় আছে। এখনও মনে পড়ছে, এখন যেই টি-শার্টটা পড়ি স্কুল ক্লাসে বসে পড়ার সময় সেটাই ছিল আমার গায়ে। স্কুলের দীর্ঘদিনের সঙ্গী 'ড্রাগন' কোম্পানির ব্যাগ নয়, বর্তমানে 'ন্যাক্স' কোম্পানির যে ব্যাগটা ব্যবহার করি সেটাই আমার সামনে। গবেষকরা বলছেন, স্বপ্নে অতীত দেখাটা স্বাভাবিক। কিন্তু এইরকম অতীত-বর্তমানের সম্মিলন, সেটাও কি স্বাভাবিক?
স্বপ্ন নিয়ে গবেষণাকারী বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, "স্বপ্নে মানুষ অধিকাংশ সময়ই গত দিন বা গত সপ্তাহের বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কিত কিছু দেখে।" কিন্তু আমি যে স্বপ্ন দেখলাম, সে ঘটনা এখন থেকে প্রায় ২৩ বছর আগের। গত দিন বা সপ্তাহের তো দূরের কথা, স্কুলের দিনগুলোর স্মৃতি আমার গত মাসেও তো মনে পড়েনি। একইভাবে মনে আসেনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করার স্মৃতি। তাহলে? উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে, "স্বপ্ন মানুষের একটি মানসিক অবস্থা, যাতে মানুষ ঘুমন্ত অবস্থায় বিভিন্ন কাল্পনিক ঘটনা অবচেতনভাবে অনুভব করে থাকে।" এর অর্থ কি এই-- সচেতনভাবে না হলেও অবচেতন মনে আমি ভাবি আমার 'মধুর শৈশব' নিয়ে?

দুই.
আমি যখন দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ি, তখন ১৯৯২ সাল। ওই সময় যারা আমার সহপাঠী ছিল, তাদের কারও সঙ্গে আমার এখন যোগাযোগ নেই। সত্যি বলতে কী, এক-দুইজন ছাড়া বাকিদের মুখও এখন মনে করতে পারি না। যাদের মুখ মনে করতে পারি, বাস্তবে তো নয়ই স্বপ্নেও তাদের সঙ্গে দেখা হয় না কোনোদিন। কে যে কোথায় কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে, জানিনা।
স্কুলবেলার যে কয়েকজন সহপাঠীর কথা স্মরণ করতে পারি, তাদের সবার সঙ্গেই গাঢ় সম্পর্ক ছিল আমার। বলতে পারি, সম্পর্ক গাঢ় ছিল বলেই তো তাদের এখনও মনে আছে। তাদের কারও কারও কথা মাঝে মাঝে মনে পড়ে। মনে পড়ে স্মৃতিও। আচ্ছা, আমার মতো তাদেরও কি আমাকে মনে পড়ে?
গত ২০ জুলাই বাড়িতে গিয়েছিলাম আড়াই বছর পর; তাও আবার কয়েক ঘণ্টার জন্য। যাওয়ার সময়ই পথিমধ্যে দেখা আমার স্কুলবেলার এক সহপাঠীর সঙ্গে। তার সঙ্গে সর্বশেষ কবে দেখা হয়েছিল, সেটা মনে নেই। অন্তত দশ বছরের কম তো কোনোভাবেই হবে না। সে এখন তিন সন্তানের পিতা। শুনলাম, একটি দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে কয়েক মাস হাসপাতালে থাকতে হয়েছে তাকে। সে জানাল, "মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছি।" এ খবর আমি কারও কাছে জানতে পারিনি। তার মুখে এ কথা শোনার সময় আমার ভেতরটা কেঁপে উঠল। সে যদি বেঁচে না থাকত, তাহলে তার সঙ্গে আমার আর কোনোদিনই দেখা হতো না!
এই নোট যখন লিখছি, তখন আরও কিছু প্রশ্ন মনে জাগছে। দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় তিন শাখা মিলে শিক্ষার্থী ছিল খুব সম্ভবত ২৫৬ জন। আমাদের 'খ' শাখার শিক্ষার্থী ছিল ৮০ জনেরও বেশি। আচ্ছা, এরা সবাই কি বেঁচে আছে? যারা বেঁচে আছে, তারা সবাই কি সুস্থ আছে? এই দেশে চাকরি এখন সোনার হরিণ। সবাই কি জোগাড় করতে পেরেছে একটা কর্মস্থান?

তিন.
ফেসবুকে প্রতিদিন কত মানুষের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাই। আমিও পাঠাই। রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করা কিংবা পাঠানোর আগে তাদের পিকচার দেখি। প্রোফাইল দেখি। এডুকেশন ইনফো দেখি। এত এত মানুষের মধ্যে কোনো প্রোফাইল পিকচারে আমার স্কুলবেলার কোনো বন্ধুর মুখ দেখতে পাই না। বাংলাদেশে যত মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে, তার ৮০ শতাংই আছে ফেসবুকে। এটা বিটিআরসির দেওয়া তথ্য। সন্দেহ নেই, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী জনগোষ্ঠীর সিংহভাগই তরুণ। এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে আমার স্কুলবেলার একজন সহপাঠীও যে নেই, তা কি হতে পারে?
এলোমেলো স্বপ্নটা দেখে ঘুম ভাঙার পর সকালটা ভালো গেলেও দিনভর হাজারও স্মৃতি যখন মনে পড়ছিল, মাথার মধ্যে উল্লিখিত প্রশ্নগুলো যখন ঘুরপাক খাচ্ছিল, মনটা ততই ভরে উঠছিল বিষাদে। ইচ্ছে হচ্ছিল, সাতশ কিলো দূরে অবস্থিত আমার স্কুলটা একবার ছুয়ে আসি। দেখে আসি, আমাদের বসার বেঞ্চগুলো আগের মতো ভাঙাচোরা আছে কিনা। সকালে সশ্রদ্ধ সালাম দিয়ে কারা এখন জাতীয় পতাকা ওঠায়? দেশ অর্থনৈতিকভাবে এতটা এগিয়ে যাওয়ার পরও সেই 'মডেল স্কুলের' টয়লেটটা তখনকার মতোই অব্যবহারযোগ্য রয়ে গেছে, নাকি শিক্ষার্থীরা পেয়েছে একটা স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট?

চার.
স্বীকার করি, যে রকম কাজের প্রেসারে থাকি, তাতে এমন একটি স্বপ্ন এবং ছুটির দিনে না দেখলে বিস্মৃতপ্রায় সহপাঠীদের মুখ আমার মনে পড়ত না। স্বপ্নটি দেখে ভালোই হলো। অনেক দিন পর ছেলেবেলার সহপাঠীদের মুখ মনে পড়ায় স্মৃতি কিছুটা হলেও নবায়ন হলো। এতে তাদের আরও অনেক দিন মনে রাখতে সুবিধা হবে। ঘটনাক্রমে ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারে কারও মুখ যদি ভেসে ওঠে, তাকে চিনতে সময় লাগবে না। স্মৃতির মানুষদের বয়স বাড়ে না। এই দুই যুগের ব্যবধানে তাদের চেহারার পরিবর্তন যতই আসুক না কেন, ঘটনাক্রমে চলার পথে কারও সঙ্গে যদি দেখা হয়ও আমিই যেন আগ বাড়িয়ে বলতে পারি তুমি 'অমুক' না?

পাঁচ.
কিছু মানুষকে দেখেছি, যারা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়। দিতে ভালোবাসে। নিদ্রামগ্ন অবস্থায় দেখা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার মধ্য দিয়েই তারা জীবনকে উপভোগ করে। এ রকম খেয়াল আমার মনে কখনও জাগেনি। কেন জাগেনি, তাও কখনও ভাবিনি।
প্রতিবার ঢাকা থেকে আসার জন্য সায়েদাবাদে কিংবা বাড়ি যাওয়ার জন্য কল্যাণপুরে বাস কাউন্টারে অপেক্ষা করি, তখন হকাররা পত্রিকা নিয়ে আসে। পত্রিকার সঙ্গে প্লাস্টিকে বাঁধানো বর্ণমালা শেখার বইও নিয়ে আসে কেউ কেউ। কেনার জন্য অনুরোধও জানায়। বলে, "স্যার একটা বই নেন; বাসায় ছোট ছেলে-মেয়েদের জন্য নেন।" আমাদের বাড়িতে ওই ধরনের বই পড়ার মতো বয়স কারও নেই। তারপরও মনে হচ্ছে, এবার আসায় সময় প্লাস্টিকে বাঁধানো বর্ণমালা শেখার একটা বই কিনতে হবে।স্কুলবেলার মধুর শৈশবকে আরও নিবিড় করে স্মৃতিতে পাওয়ার জন্য।
আবারও সুর করে পড়ার জন্য
এ- তে আপেল
বি- তে বল
সি- তে ক্যাট
ডি- তে ডল....

সুনামগঞ্জ
১৪ আগস্ট, ২০১৫

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.