নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন সিভিল প্রকৌশলী। আমার জন্ম ১ মার্চ ১৯৮২। আমরা সাত ভাই ও এক বোন। ভাই বোনের মধ্যে আমি ৪র্থ। আমি বর্তমানে উল্লাপাড়া পৌরসভায় উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে কর্মরত আছি। ২০১০ সালের ১৯ নভেম্বর যাকে বিয়ে করি তার নাম মঞ্জুয়ারা খাতুন সম্পা। আমার এক ছেলে এক মেয়ে জু

জহুরুল কাইয়ুম

আমার গ্রামকে আমার পরিবারের মত করে দেখতে চাই

জহুরুল কাইয়ুম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার ছোট মামা!

১৮ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:৫২

পুরো না মো: সেরাজুল ইসলাম বকুল। সবাই বকুল নামেই তাকে চেনে। তিনি আর কেউ না আমার ছোট মামা। আমার ছয় মামার মধ্যে বকুল মামা সবার ছোট। একসময়কার বালসাবাড়ীর হিরো ছিল বকুল মামা কেননা সে ছিল অসাধারন ভাল ছাত্র। বকুল মামা যখন ছাত্র ছিল তখন মামার পড়ার ঘরের সামনে সুন্দর ফুলের বাগান ছিল, সেই বাগানের বিভিন্ন প্রজাতির ফুল গাছ দেখে আমি মুগ্ধ হতাম। বাগানে আমি আর আমার মামাত ভাই বাবু (বড় মামার ছেলে) পানি দিতাম, বিভিন্ন রকম পরিচর্যা করতাম, বিনিময়ে মামা আমাদের মনোহরা, চাদপুর, কাওয়াক, বিভিন্ন মাঠে ফুটবল খেলা দেখাতে নিয়ে যেত। কি ভালই না লাগতো মামার বাই সাইকলটার পেছনে আমি আর সামনে বাবু! কাওয়াক মাঠে উল্লাপাড়া বনাম শাহজাদপুর খেলা। টানটান উত্তেজনা!! তার চেয়েও বেশী উত্তেজনা মনের ভিতরে, সাইকেলে চড়া, বাদাম খাওয়া কি মজার দিনগুলো। এই বালসাবাড়ী এলাকায় ছাত্রদের মধ্যে সর্ব প্রথম কালো জ্যাকেট ও বেলী কেড্স পড়ে স্কুলে যাওয়া ছাত্র ছিল একমাত্র বকুল মামা। ১৯৯০ সাল। সামনে ম্যাট্রিকের টেষ্ট পরীক্ষা। মামা সকালে ঘুম থেকে উঠল জীবনের অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা নিয়ে। সারা রাত পড়াশুনা করার কারেন মামা পাগল হয়ে গিয়েছিল। সেই যে বকুল মামার জীবনে তিমির অন্ধকার নেমে এলো। তারপর কালো জ্যাটে, বেলী কেডস্, মোটর বাইক সব কিছুই জীবন থেকে হারিয়ে গেল। বালসাবাড়ীতে আর কোন বকুল মামারা ফুলের বাগান করার সাহস দেখালো না। তারপর.................। তার আর পর নেই।। তারপরও অনেক দিন পার হয়ে গিয়েছিল। আমার নানা, নানী, বড় মামা, কোরপ আলী মামা (যে সব চেয়ে বেশী বকুল মামার দেখাশুনা করেছে), মমতা আপা, তারা মামা আরও অনেক আপনজন এই পৃতিবী ছেড়ে চলে গেছে!ম্যাট্রিকে ষ্ট্যান করার পরিবর্তে কোনমতে থার্ড ডিভিশন জুটেছিল মামার কপালে। বকুল মামার ৫২ শতক দাগের জমি, বাজারের দোকানপাট, বাড়ীর তাত সব বিক্রি করা হয়েছিল শুধু একটু ভাল চলার আশায়। এরপরও কি দিন ভাল গেছে? সর্বশেষ যারা বকুল মামার সমসাময়িক বন্ধু বান্ধব ছিল (যেমন বিজ্ঞান কলেজের মানিক স্যার) তারা আমার বকুল মামাকে আগ বাড়িয়ে কিছু কিছু সাহায্য করেছেন। আমার একসময়কার অদম্য মেধাবী ছাত্র বকুল মামা আজ বালসাবাড়ী বাজারের শাক সব্জির দোকান্দার। কোনমতে দিন চলতো। এরপরের ঘটনা আরও নির্মম। এইতো কয়েক দিন আগে। কার সাথে যেন ঝগড়া হয়েছিল বকুল মামার। কেজির পাথর ছুড়ে মেরেছিল মুর্খ লোকটা মামার পাকে লক্ষ্য করে। বিধি বাম, আমার বকুল মামার পায়ের বুড়ি আঙ্গুল কেটে ফেলতে হয়েছিল। পায়ে ঘা সৃষ্টি হওয়ায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যালের ডাক্তাররা পরামর্শ দিলেন হাটুর নীচের অংশ কেটে ফেলতে হবে। এই কাজে মামা রাজি ছিল না কিছুতেই। বলল অনেক তো হলো এখন বাড়ী নিয়ে চল। শেষ নি:শাসটা বাপের ভিটাতেই ফেলি। এরপর আমার ছোট ভাই সুমন অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে কৌশলে অপারেশনটা করিয়েছিল। গরীব মানুষদের ক্ষেত্রে যেটা হয়। আপন জনেরা পর হয়ে যায়। আহারে বলার লোকটা পর্যন্ত থাকে না। বকুল মামার ক্ষেত্রেও তাই হলো। বর্তমানে পায়ে মরন ব্যাধি তকতকে ঘা নিয়ে বগুড়া জিয়া মেডিক্যালে পড়ে আছে আমার দীন দু:খি বকুল মামা। পাশে থকার জন্য যিনি দু:খের ঘর বেধে এসছিলেন আমার ছোট মামার ভাঙ্গা ঘরে, সেই ছোট মামী! প্রতিনিয়তই জীবন আর মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে দাড়িয়ে শেষ নি:ম্বাসের অপেক্ষাতে আছেন সহযাত্রী হয়ে। টাকা পয়সার বড়ই অনটন চলছে। ডাক্তার বলেছেন প্রতিদিন ৩৫০০ টাকার ঔষধ দিতেই হবে নইলে ঘা আরও উপরের দিকে উঠে যাবে। জানিনা এভাবে আর কতদিন আমার বকুল মামাকে এভাবে মৃত্যুর প্রহর গুনতে হবে। বকুল মামার জীবন নাটকের পরের দৃশ্যটা কি হবে তা হয়তো এ নাটকের লেখকই ভাল জানেন। আমার শুধু একটা নতুন পবিত্র শুভ্র সকালের অপেক্ষায় পথ চেয়ে রইলাম। বিধাতা যেন অন্তত: এই টুকু প্রার্থনা কবুল করেন!! সবার কাছে দোয়া কামনা রইলো।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৪

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনি কি কোনভাবে সাহায্য করছেন?

১৮ ই জুন, ২০১৬ রাত ৯:৫৯

জহুরুল কাইয়ুম বলেছেন: আমার সাহায্যেই শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যালে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু লেখায় বিষয়টা আড়াল করে গেছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.