![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যে আন্দোলনের কাজ অতীতে আঞ্জাম দিয়েছেন নবী রাসূলগণ, যে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও নবী রাসূলদের সার্থক উত্তরসূরীগণ, আল কোরআন যাদের কে অভিহিত করেছে সিদ্দিকীন, সালেহীন এবং শুহাদা হিসেবে, সেই আন্দোলনে শরীক হতে পারা আল্লাহর একটি বিশেষ মেহেরবানী ছাড়া আর নয়। এই কথা আমরা ইতঃপুর্বোলোচনা করেছি। আল্লাহর এই মেহেরবানীর দাবী হলো, আল্লহর প্রতি আরও বেশী বেশী কৃতজ্ঞ হওয়ার প্রয়াস চালানো। আর সেই কৃতজ্ঞতার দাবী হলো, আল্লাহর এই মেহেরবানীর পূর্ণ সদ্ব্যব্যবহারের আপ্রাণ চেষ্টা চালানো। নিজের যোগ্যতা প্রতিভার সবটুকু এই কাজে লাগিয়ে দেয়া। এই ভাবে যতক্ষণ কোন একটা দলের বা সম্প্রদায়ের লোকেরা সম্মিলিতভাবে এবং নিষ্ঠার সাথে এই দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত থাকে ততক্ষণ আল্লহ তাদেরকে সাহায্য করতে থাকেন, তাদের জন্যে পথ খুলতে থাকেন।
কিন্তু যখন ইসলামী আন্দোলনে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ সম্মিলিত ভাবে আদর্শচ্যুতির শিকার হয়ে যায়, কঠিন এই দায়িত্বেও অনুভূতি হারিয়ে ফেলে, আল কোরআনের ভাষায় পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে, তখন তাদেরকে চরম দুভর্গ্য কুড়াতে হয়। তাদেরকে আল্লাহ তার এই বিশষ মেহেরবানী থেকে বঞ্চিত করেন। তাদের পরিবর্তে অন্য কোন দল বা সম্প্রদায়কে এই কাজের সুযোগ কওে দেন। কারণ আল্লাহ তার দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজের ব্যাপারে কোন দল বা গোষ্ঠীর কাজ করা না করার উপর তার দ্বীনের বিজয়ী হওয়া না হওয়াকে নির্ভরশীলও করেননি। আল্লহতো তার দ্বীনকে বিজয়ী করবেনই। সুতরাং যারা আজ তাই কাজের সুযোগ পেয়েছে তারা যদি চরম উদাসীনতার পরিচয় দেয়, অযোগ্যতা ও নিষ্ক্রিয়তার পরিচয় দেয় তাহলে দায়িত্বহীনতা ও নিস্ক্রিয়তার কারণে আল্লাহ তার দ্বীনের বিজয়কে ঠেকিয়ে রাখবেন না, বরং তাদের পরিবর্তে অন্যদেরকে এই কাজের সুযোগ কওে দেবেন যারা তাদের মত হবে না। এই মূল বিষয়টি ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের গভীরভাবে ভেবে দেখার মত।
অনেকেই মনে করে থাকে, আন্দোলনে অংশ নিয়ে, সময় দিয়ে অর্থ দিয়ে তারা আন্দোলনের প্রতি মেহেরবানী করছেন। তাদের বেশ অবদান আছ, আন্দোলনকে দেয়ার মত অনেক অনেক যোগ্যতার অধিকারী তারা, ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ধরনের লোকদের মনেরভাব ও মানসিকতাকে সামনে রেখেই তো আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন:
يَمُنُّونَ عَلَيْكَ أَنْ أَسْلَمُوا قُلْ لَا تَمُنُّوا عَلَيَّ إِسْلَامَكُمْ بَلِ اللَّهُ يَمُنُّ عَلَيْكُمْ أَنْ هَدَاكُمْ لِلْإِيمَانِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ [الحجرات : 17]
তারা ইসলাম কবুল করে যেন আপনার প্রতি অনুগ্রহ করে- এই মর্মে তারা খোটা দেওয়ার প্রয়াস পায়। আপনি বলে দিন, বরং ঈমানের পথ দেখিয়ে আল্লাহই তোমাদের প্রতি ইহসান করেছেন, যদি তোমরা সত্যি সত্যি ঈমানদার হয়ে থাক। (আল হুজুরাত: ১৭)
আল্লাহর এই বিশেষ অনুগ্রহের অনিবার্য দাবী-এর সদ্ব্যব্যবহরের প্রতিদান এবং অপব্যবহারের পরিণাম সম্পর্কে সদা জাগ্রত ও সচেতন থাকতে হবে। এই দায়িত্ব পালনে গভীর আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা দেখাতে হবে। সুবিধাবাদী মনোভাব ও আচরণ থেকে ব্যক্তি ও সমষ্টিকে মুক্ত রাখার সযতœ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। অন্যথায় এই সৌভাগ্য দুর্ভাগ্য পরিণত হবে। দুনিয়াতেও লাঞ্ছনা পোহাতে হবে। আখেরাতেও কঠোরতম শাস্তি ভোগ করতে হবে। এই দুর্ভাগ্যজনকে পরিণতি পরিণাম থেকে বাঁচাতে হলে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের কাজ করার সুযোগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরকে, ভাগ্যবান ব্যক্তিদেরকে তাদের চলার পথে আল্লাহর সতর্ক সংকেতগুলোও সব সময় সামনে রাখতে হবে। আল্লাহর এই সতর্কবাণী সূরায় আল মায়েদায় এভাবে বর্ণিত হয়েছ:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَنْ يَرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ذَلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ [المائدة : 54]
হে ঈমানদার লোকেরা! তোমাদের মধ্য থেকে যারা আল্লাহর দ্বীন থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে (দ্বীন কায়েমের সংগ্রাম থেকে পিছুটান দেবে তারা যেন জেনে নেয়) আল্লাহ তাদের পরিবর্তে অন্য কাউকে এই কাজের সুযোগ করে দেবেন। তাদেরকে আল্লাহ ভালবাসেন এবং তারাও আল্লাহকে ভালবাসবে। তারা মুমিনদের প্রতি হবে রহমদিল এবং কাফেরদেও মোকাবিলায় হবে কঠোর। তারা সংগ্রাম করে যাবে আল্লহর পথে। কোন নিন্দুকের নিন্দাবাদের পরোয়া করবে না-এটাতো হবে আল্লাহ তায়ালারই অনুগ্রহ তিনি যাকে চান এভাবে অনুগ্রহ প্রদর্শন করে থাকেন। তিনি তো সীমাহীন জ্ঞানের অধিকারী। (আল মায়েদা:৫৪)
সূরায়ে তাওবায় এই সতর্ক সংকেত একটু ভিন্ন সুওে ধ্বনিত হয়েছে- আল্লাহর পথে যুদ্ধে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এই আহ্বানে সাড়া দিতে যারা গড়িমসি করছে তাদেও লক্ষ্য করে বলা হচ্ছে:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَا لَكُمْ إِذَا قِيلَ لَكُمُ انْفِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ اثَّاقَلْتُمْ إِلَى الْأَرْضِ أَرَضِيتُمْ بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ الْآخِرَةِ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا قَلِيلٌ (38) إِلَّا تَنْفِرُوا يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا أَلِيمًا وَيَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلَا تَضُرُّوهُ شَيْئًا وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ [التوبة : 38 ، 39]
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কি হয়েছে যে, যখন আল্লাহর পথে বিরিয়ে পড়তে বলা হয় তখন তোমরা মাটি আঁকড়ে পড়ে থাক। তোমরা কি দুনিয়ার জিন্দেগী নিয়েই খুশী থাকতে চাও অথচ দুনিয়ার এই পার্থিব জীবনতো আখেরাতের তুলনায় কিছুই নয়। যদি তোমরা বের না হও তাহলে (এই কাজের জন্যে) তোমাদেও জায়গায় আল্লাহ অন্য জাতিকে সুযোগ করে দেবেন। তোমরা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ তো সবকিছুর উপর ক্ষমতাশীল এবং কর্তৃত্বের অধিকারী। (আত তাওবা: ৩৮-৩৯)
গুরায়ে মুহাম্মাদ বা সূরায়ে কিতালে এই সতর্কবানী এসেছে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে লিপ্ত ব্যক্তিদের মন-মানসিকতার সার্বিক বিশ্লেষণের প্রেক্ষাপটে। কিতালেে নির্দেশ বাস্তবায়নে যাদের মনে দ্বিধা সংশয় ছিল, তাদেও এই দ্বিধা সংশয় সম্পর্কে একদিকে সতর্ক করা হয়েছে। সেই সাথে যে কুফরী শক্তির ভীতি তাদের মনে ছিল, সেই কুফরী শক্তির অসারতা, পরিণামে তাদের ব্যর্থতা অনিবার্য- এই কথা সুস্পষ্টভাবে বলার পর আল্লাহ ঘোষণা করেন:
فَلَا تَهِنُوا وَتَدْعُوا إِلَى السَّلْمِ وَأَنْتُمُ الْأَعْلَوْنَ وَاللَّهُ مَعَكُمْ وَلَنْ يَتِرَكُمْ أَعْمَالَكُمْ (35) إِنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَإِنْ تُؤْمِنُوا وَتَتَّقُوا يُؤْتِكُمْ أُجُورَكُمْ وَلَا يَسْأَلْكُمْ أَمْوَالَكُمْ (36) إِنْ يَسْأَلْكُمُوهَا فَيُحْفِكُمْ تَبْخَلُوا وَيُخْرِجْ أَضْغَانَكُمْ (37) هَا أَنْتُمْ هَؤُلَاءِ تُدْعَوْنَ لِتُنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَمِنْكُمْ مَنْ يَبْخَلُ وَمَنْ يَبْخَلْ فَإِنَّمَا يَبْخَلُ عَنْ نَفْسِهِ وَاللَّهُ الْغَنِيُّ وَأَنْتُمُ الْفُقَرَاءُ وَإِنْ تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُونُوا أَمْثَالَكُمْ [محمد : 35 - 38]
অতএব তোমরা ভগ্নোৎসাহ হবে না, আপোষ করতে যাবে না, তোমরাই বিজয়ী হবে। আল্লাহ তোমাদের সাথে আছেন। তিনি তোমাদের আমল নষ্ট বা ব্যর্থ হতে দেবেন না। এই দুনিয়ার জীবন একটা খেল তামাশা বৈ আর কিছুই নয়। যদি তোমরা ঈমানদার হও এবং তাকওয়ার অধিকারী হও তাহলে তিনি তোমাদের যথার্থ প্রতিদান দেবেন। তিনি তোমাদের কাছে তোমাদের মাল চাইবেন না। যদি কখনও তিনি মাল চেয়ে বসেন এবং সবটা চান তাহলে তোমরা কৃপণতা প্রদর্শন করবে। এই ভাবে তিনি তোমাদের মনের রোগব্যাধি প্রকাশ করে ছাড়বেন। দেখ, তোমাদেরকে আল্লাহর পথে মাল খরচ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে, এমতাবস্থায় তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ বখিলি করেছে। প্রকৃত পক্ষে তারা নিজেদের সাথেই এই বখিলির আচরণ করছে। (এর পরিণামে তারা নিতেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে) আল্লাহ তো (অশেষ ভান্ডারের অধিকারী) কারো মুখোপেক্ষী নন বরং তোমরাই তার সাহায্যেও মুখাপেক্ষী। যদি তোমরা এই কাজ থেকে মুখ ঢিরিয়ে নাও তাহলে আল্লাহ তোমাদের জায়গায় অন্য কাউকে নিয়ে আসবেন। অতঃপর তারা তোমাদের মত হবে না। (মুহাম্মদ: ৩৫-৩৮)
লক্ষণীয়, এই সতর্ক ও সাবধান সংকেত প্রত্যক্ষভাবে তাদেরকে শুনানো হয়েছে, যারা আল্লাহর রাসূলের কাছ থেকে সরাসরি দাওয়াত পেয়েছিল,তাঁর পরিচালনায় চলছিল। এমনকি তাঁর পেছনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বা জামায়ত আদায় করছিল। আর আমরা তাদের তুলনায় কি? অতএব আল্লাহর এই সতর্ক সংকেতকে ইসলামী আন্দোলনের সাথে জড়িত ব্যক্তিদেরকে সব সময় ব্যক্তিগতভাবে ও সামনে রাখতে হবে, সামষ্টিক ভাবে ও সামনে রাখতে হবে।
যে আন্দোলনের কাজ অতীতে আঞ্জাম দিয়েছেন নবী রাসূলগণ, যে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও নবী রাসূলদের সার্থক উত্তরসূরীগণ, আল কোরআন যাদের কে অভিহিত করেছে সিদ্দিকীন, সালেহীন এবং শুহাদা হিসেবে, সেই আন্দোলনে শরীক হতে পারা আল্লাহর একটি বিশেষ মেহেরবানী ছাড়া আর নয়। এই কথা আমরা ইতঃপুর্বোলোচনা করেছি। আল্লাহর এই মেহেরবানীর দাবী হলো, আল্লহর প্রতি আরও বেশী বেশী কৃতজ্ঞ হওয়ার প্রয়াস চালানো। আর সেই কৃতজ্ঞতার দাবী হলো, আল্লাহর এই মেহেরবানীর পূর্ণ সদ্ব্যব্যবহারের আপ্রাণ চেষ্টা চালানো। নিজের যোগ্যতা প্রতিভার সবটুকু এই কাজে লাগিয়ে দেয়া। এই ভাবে যতক্ষণ কোন একটা দলের বা সম্প্রদায়ের লোকেরা সম্মিলিতভাবে এবং নিষ্ঠার সাথে এই দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত থাকে ততক্ষণ আল্লহ তাদেরকে সাহায্য করতে থাকেন, তাদের জন্যে পথ খুলতে থাকেন।
কিন্তু যখন ইসলামী আন্দোলনে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ সম্মিলিত ভাবে আদর্শচ্যুতির শিকার হয়ে যায়, কঠিন এই দায়িত্বেও অনুভূতি হারিয়ে ফেলে, আল কোরআনের ভাষায় পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে, তখন তাদেরকে চরম দুভর্গ্য কুড়াতে হয়। তাদেরকে আল্লাহ তার এই বিশষ মেহেরবানী থেকে বঞ্চিত করেন। তাদের পরিবর্তে অন্য কোন দল বা সম্প্রদায়কে এই কাজের সুযোগ কওে দেন। কারণ আল্লাহ তার দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজের ব্যাপারে কোন দল বা গোষ্ঠীর কাজ করা না করার উপর তার দ্বীনের বিজয়ী হওয়া না হওয়াকে নির্ভরশীলও করেননি। আল্লহতো তার দ্বীনকে বিজয়ী করবেনই। সুতরাং যারা আজ তাই কাজের সুযোগ পেয়েছে তারা যদি চরম উদাসীনতার পরিচয় দেয়, অযোগ্যতা ও নিষ্ক্রিয়তার পরিচয় দেয় তাহলে দায়িত্বহীনতা ও নিস্ক্রিয়তার কারণে আল্লাহ তার দ্বীনের বিজয়কে ঠেকিয়ে রাখবেন না, বরং তাদের পরিবর্তে অন্যদেরকে এই কাজের সুযোগ কওে দেবেন যারা তাদের মত হবে না। এই মূল বিষয়টি ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের গভীরভাবে ভেবে দেখার মত।
অনেকেই মনে করে থাকে, আন্দোলনে অংশ নিয়ে, সময় দিয়ে অর্থ দিয়ে তারা আন্দোলনের প্রতি মেহেরবানী করছেন। তাদের বেশ অবদান আছ, আন্দোলনকে দেয়ার মত অনেক অনেক যোগ্যতার অধিকারী তারা, ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ধরনের লোকদের মনেরভাব ও মানসিকতাকে সামনে রেখেই তো আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন:
يَمُنُّونَ عَلَيْكَ أَنْ أَسْلَمُوا قُلْ لَا تَمُنُّوا عَلَيَّ إِسْلَامَكُمْ بَلِ اللَّهُ يَمُنُّ عَلَيْكُمْ أَنْ هَدَاكُمْ لِلْإِيمَانِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ [الحجرات : 17]
তারা ইসলাম কবুল করে যেন আপনার প্রতি অনুগ্রহ করে- এই মর্মে তারা খোটা দেওয়ার প্রয়াস পায়। আপনি বলে দিন, বরং ঈমানের পথ দেখিয়ে আল্লাহই তোমাদের প্রতি ইহসান করেছেন, যদি তোমরা সত্যি সত্যি ঈমানদার হয়ে থাক। (আল হুজুরাত: ১৭)
আল্লাহর এই বিশেষ অনুগ্রহের অনিবার্য দাবী-এর সদ্ব্যব্যবহরের প্রতিদান এবং অপব্যবহারের পরিণাম সম্পর্কে সদা জাগ্রত ও সচেতন থাকতে হবে। এই দায়িত্ব পালনে গভীর আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা দেখাতে হবে। সুবিধাবাদী মনোভাব ও আচরণ থেকে ব্যক্তি ও সমষ্টিকে মুক্ত রাখার সযতœ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। অন্যথায় এই সৌভাগ্য দুর্ভাগ্য পরিণত হবে। দুনিয়াতেও লাঞ্ছনা পোহাতে হবে। আখেরাতেও কঠোরতম শাস্তি ভোগ করতে হবে। এই দুর্ভাগ্যজনকে পরিণতি পরিণাম থেকে বাঁচাতে হলে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের কাজ করার সুযোগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরকে, ভাগ্যবান ব্যক্তিদেরকে তাদের চলার পথে আল্লাহর সতর্ক সংকেতগুলোও সব সময় সামনে রাখতে হবে। আল্লাহর এই সতর্কবাণী সূরায় আল মায়েদায় এভাবে বর্ণিত হয়েছ:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَنْ يَرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ذَلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ [المائدة : 54]
হে ঈমানদার লোকেরা! তোমাদের মধ্য থেকে যারা আল্লাহর দ্বীন থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে (দ্বীন কায়েমের সংগ্রাম থেকে পিছুটান দেবে তারা যেন জেনে নেয়) আল্লাহ তাদের পরিবর্তে অন্য কাউকে এই কাজের সুযোগ করে দেবেন। তাদেরকে আল্লাহ ভালবাসেন এবং তারাও আল্লাহকে ভালবাসবে। তারা মুমিনদের প্রতি হবে রহমদিল এবং কাফেরদেও মোকাবিলায় হবে কঠোর। তারা সংগ্রাম করে যাবে আল্লহর পথে। কোন নিন্দুকের নিন্দাবাদের পরোয়া করবে না-এটাতো হবে আল্লাহ তায়ালারই অনুগ্রহ তিনি যাকে চান এভাবে অনুগ্রহ প্রদর্শন করে থাকেন। তিনি তো সীমাহীন জ্ঞানের অধিকারী। (আল মায়েদা:৫৪)
সূরায়ে তাওবায় এই সতর্ক সংকেত একটু ভিন্ন সুওে ধ্বনিত হয়েছে- আল্লাহর পথে যুদ্ধে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এই আহ্বানে সাড়া দিতে যারা গড়িমসি করছে তাদেও লক্ষ্য করে বলা হচ্ছে:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَا لَكُمْ إِذَا قِيلَ لَكُمُ انْفِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ اثَّاقَلْتُمْ إِلَى الْأَرْضِ أَرَضِيتُمْ بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ الْآخِرَةِ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا قَلِيلٌ (38) إِلَّا تَنْفِرُوا يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا أَلِيمًا وَيَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلَا تَضُرُّوهُ شَيْئًا وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ [التوبة : 38 ، 39]
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কি হয়েছে যে, যখন আল্লাহর পথে বিরিয়ে পড়তে বলা হয় তখন তোমরা মাটি আঁকড়ে পড়ে থাক। তোমরা কি দুনিয়ার জিন্দেগী নিয়েই খুশী থাকতে চাও অথচ দুনিয়ার এই পার্থিব জীবনতো আখেরাতের তুলনায় কিছুই নয়। যদি তোমরা বের না হও তাহলে (এই কাজের জন্যে) তোমাদেও জায়গায় আল্লাহ অন্য জাতিকে সুযোগ করে দেবেন। তোমরা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ তো সবকিছুর উপর ক্ষমতাশীল এবং কর্তৃত্বের অধিকারী। (আত তাওবা: ৩৮-৩৯)
গুরায়ে মুহাম্মাদ বা সূরায়ে কিতালে এই সতর্কবানী এসেছে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে লিপ্ত ব্যক্তিদের মন-মানসিকতার সার্বিক বিশ্লেষণের প্রেক্ষাপটে। কিতালেে নির্দেশ বাস্তবায়নে যাদের মনে দ্বিধা সংশয় ছিল, তাদেও এই দ্বিধা সংশয় সম্পর্কে একদিকে সতর্ক করা হয়েছে। সেই সাথে যে কুফরী শক্তির ভীতি তাদের মনে ছিল, সেই কুফরী শক্তির অসারতা, পরিণামে তাদের ব্যর্থতা অনিবার্য- এই কথা সুস্পষ্টভাবে বলার পর আল্লাহ ঘোষণা করেন:
فَلَا تَهِنُوا وَتَدْعُوا إِلَى السَّلْمِ وَأَنْتُمُ الْأَعْلَوْنَ وَاللَّهُ مَعَكُمْ وَلَنْ يَتِرَكُمْ أَعْمَالَكُمْ (35) إِنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَإِنْ تُؤْمِنُوا وَتَتَّقُوا يُؤْتِكُمْ أُجُورَكُمْ وَلَا يَسْأَلْكُمْ أَمْوَالَكُمْ (36) إِنْ يَسْأَلْكُمُوهَا فَيُحْفِكُمْ تَبْخَلُوا وَيُخْرِجْ أَضْغَانَكُمْ (37) هَا أَنْتُمْ هَؤُلَاءِ تُدْعَوْنَ لِتُنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَمِنْكُمْ مَنْ يَبْخَلُ وَمَنْ يَبْخَلْ فَإِنَّمَا يَبْخَلُ عَنْ نَفْسِهِ وَاللَّهُ الْغَنِيُّ وَأَنْتُمُ الْفُقَرَاءُ وَإِنْ تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُونُوا أَمْثَالَكُمْ [محمد : 35 - 38]
অতএব তোমরা ভগ্নোৎসাহ হবে না, আপোষ করতে যাবে না, তোমরাই বিজয়ী হবে। আল্লাহ তোমাদের সাথে আছেন। তিনি তোমাদের আমল নষ্ট বা ব্যর্থ হতে দেবেন না। এই দুনিয়ার জীবন একটা খেল তামাশা বৈ আর কিছুই নয়। যদি তোমরা ঈমানদার হও এবং তাকওয়ার অধিকারী হও তাহলে তিনি তোমাদের যথার্থ প্রতিদান দেবেন। তিনি তোমাদের কাছে তোমাদের মাল চাইবেন না। যদি কখনও তিনি মাল চেয়ে বসেন এবং সবটা চান তাহলে তোমরা কৃপণতা প্রদর্শন করবে। এই ভাবে তিনি তোমাদের মনের রোগব্যাধি প্রকাশ করে ছাড়বেন। দেখ, তোমাদেরকে আল্লাহর পথে মাল খরচ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে, এমতাবস্থায় তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ বখিলি করেছে। প্রকৃত পক্ষে তারা নিজেদের সাথেই এই বখিলির আচরণ করছে। (এর পরিণামে তারা নিতেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে) আল্লাহ তো (অশেষ ভান্ডারের অধিকারী) কারো মুখোপেক্ষী নন বরং তোমরাই তার সাহায্যেও মুখাপেক্ষী। যদি তোমরা এই কাজ থেকে মুখ ঢিরিয়ে নাও তাহলে আল্লাহ তোমাদের জায়গায় অন্য কাউকে নিয়ে আসবেন। অতঃপর তারা তোমাদের মত হবে না। (মুহাম্মদ: ৩৫-৩৮)
লক্ষণীয়, এই সতর্ক ও সাবধান সংকেত প্রত্যক্ষভাবে তাদেরকে শুনানো হয়েছে, যারা আল্লাহর রাসূলের কাছ থেকে সরাসরি দাওয়াত পেয়েছিল,তাঁর পরিচালনায় চলছিল। এমনকি তাঁর পেছনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বা জামায়ত আদায় করছিল। আর আমরা তাদের তুলনায় কি? অতএব আল্লাহর এই সতর্ক সংকেতকে ইসলামী আন্দোলনের সাথে জড়িত ব্যক্তিদেরকে সব সময় ব্যক্তিগতভাবে ও সামনে রাখতে হবে, সামষ্টিক ভাবে ও সামনে রাখতে হবে।
©somewhere in net ltd.