![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাবা ঘুমুচ্ছেন। বাড়ির সবাই কান্নাকাটি করছে। কিছুতেই বাবার ঘুম ভাংছেনা। আমি অপলক নয়নে তাকিয়ে বাবার সটান নিরব দেহটির দিকে। কোথায় বাবা দু’মাসের বেশি হাসপাতালে কাটিয়ে বাড়ি ফিরেছেন, ভাইবোন সবাই মিলে ফুলের তোরা নিয়ে অভ্যর্থনা জানাবো; তানা শুধু কান্নাকাটি বাবার কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে। কি দিলেন আমার বাবা, আমার জানা কতটুকু করেছেন! চোখের সামনে ভেসে উঠছে সব। আমার বয়স আর কতো ৫/৬। বাবার সংগে বাজারে যাচ্ছি। বাবার হাতে আমার হাত যেন পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। হেটে হেটে রেল লাইনের উপর দিয়ে ক্রমাগত হেটে চলা। বাবা কখনও ইংরেজি শব্দ শেখাচ্ছেন; কখনও জীবনের ছোট ছোট গল্প বলছেন। এখনও সেদিনের কথা মনে পরে।
২০০৭ সালের ৩০শে জুলাই বাবা চলে গেলেন না ফেরার দেশে। বাবা চলে যাওয়ার ঠিক পনের দিন আগে ডাক্তার জানাল বাবার অবস্থা কিছুটা ভাল। একদিন বিকেলে বারডেম হাসপাতালে বাবাকে দেখতে গেলাম। সদা হাস্যজ্জল বাবা আমার হাসপাতালের করিডরে হাঁটতে চান। আমাকে শত অনুরোধ। নিয়ে গেলাম হাসপাতালের করিডরে। কি জানি কি মনে করে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। বুকে বুক রেখে অনেকক্ষণ চেপে রাখলেন। তখনও বুঝিনি। বাবা হয়তো বুঝে ছিলেন তিনি হয়তো আর বেঁচে থাকবেন না। সেদিনের সেই বুকে বুক রাখার কথাটা মনে হলেই কেমন যেন হয়ে যাই। শুধু কান্না পায়। যখনই একাকী হয়ে যাই বাবার কথা মনে পড়ে। যখন কোন বিপদে পরি বাবার উপদেশ খুব মনে পড়ে। মিডিয়া বা টেলিভিশনের কাজের সূত্রে মাঝে মাঝেই গভীর রাতে বাসায় ফিরতাম। বাবা তখন সুস্থ। রাত ১১টা বাজলেই আমার মোবাইলে বাসার ল্যান্ডফোনের নাম্বার দেখলেই বুঝে নিতাম বাবার ফোন। শুধু বলতেন চিনু সারাদিন খবর নাই। কোথায় আছিস? বুদ্ধি সুদ্ধি খেয়ে ফেলেছিস। আমি যেই না বলতাম বাবা আমি আসছি, তৎক্ষণাৎ কোন কিছু না বলে ফোনটা রেখে দিতেন।
বাবার এই মধু মাখা রাগের ফোনটি আর আসে না। বাবা গত হয়েছেন প্রায় পাঁচ বছর হল। এখনও আমি বাবার সেই ফোন কলটির অপেক্ষায় আছি! একদিন ভুল করেও যদি বাবার সেই মধু মাখা অভিমানে সুরের কণ্ঠস্বরটি শুনতে পেতাম!
বাবা তুমি যেখানেই থাকো ভাল থেকো। তোমার ভালবাসার আমি এখনও প্রতিক্ষায়……………।
(বাবার জন্য আমার বড় ভাইয়ের লিখা)
©somewhere in net ltd.