নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন- [email protected]
কবি মণীন্দ্র গুপ্তের শৈশব কাটে অভিবক্ত বাংলাদেশের বরিশাল জেলায়। স্কুলের শিক্ষা প্রাপ্ত হন আসামের শিলচর এবং কলকাতায়। শিক্ষা সম্পূর্ণ করার পর তিনি ভারতীয় সেনায় যোগদান করেন এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলে বেশ কিছুকাল কর্মরত ছিলেন। পরে তিনি কলকাতায় ফিরে এসে মেশিন ডিজাইনের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন।
তিনি একালের একজন বিশিষ্ট কবি। অনেকের মতে স্বাধীন উত্তর বাংলায় তিনি সর্বাধিক প্রভাবশালী কবিদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর দীর্ঘ রচনার সম্ভারের মধ্যে রয়েছে " চাঁদের ওপিঠ", "অক্ষয় মালবেরী" প্রভৃতি। ২০১০ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমী দ্বারা ভূষিত হন, এ রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মান "রবীন্দ্র পুরষ্কার"-এ তার "টুংটাং শব্দ নিঃশব্দ"-(২০০৫) এর জন্য।
গল্পগুলো
মণিকর্ণিকার দেশে বিকেল ফুরোয় না। —শুয়ে থাকে
শান্ত অনন্তনাগের মতো অপরাহ্ণ ভরে।
নেশাড়ু বুড়োর কাঁধে আচাভুয়া পাখি নেমে বলে :
গপ্পো বলো—
জনহীন গোল চাতালের পিছে
পাহাড়ের মতো শূন্য উঁচুতে উঠেছে,
শূন্য সামনে নেমেছে খাদ হয়ে।
নেশার বুদবুদ— বিড়বিড় ভাষায় লহরী শোনা যায়— উদ্ভট শ্লোকের
ভাঙা সুর :
উত্তরকুরুর বন্র চামরী গরুরা নীল ঘাস থেকে
আকাশে লাফিয়ে ওঠে—
বৈকাল হ্রদের জলে ছায়া পড়ে নোমাডদলের।
একটা গল্প, শেয়ালের মতো গর্ত থেকে বের করতেই
গ্রামসুদ্ধ তেড়ে এলো—মার, মার! ধূর্ত বদমাশ, হাড়িচোর!
আহীর গ্রামের ভরা যুবতীরা ঘড়া ভরে দুধ নিয়ে মিশে যাচ্ছে
দিগন্ত রেখায়।
নিকটে গাছের গম্ভীর ভাঙা দালানের ঘরে ঘন ছায়া—
একজন রাহী ঐখানে ফিরে এল সন্ধ্যাবেলা—রাত্রে এক মুশকিলয়াসান
তার আধখানা মুখে আলো ফেলে।
গোল চাতালের নিচে দূর খাদে, দুইজন চোর
হিমরাত্রে আগুনের কুঞ্জ জ্বালিয়েছে।
চাদনী রাতে স্কারটারিস পাহাড়ের ছায়া পড়ল
স্নেফেলের অনন্ত সাদায়।
দূর থেকে উদ্ভট শ্লোকের সুর শোনা যায় ঘুমের মতন।
গল্পগুলো পাখির ডিমের মতো ভাঙে…
দেখা যায় না এপার ওপার
কোথাও আরম্ভ নেই, শেষ নেই। তবু মানুষের দেশে ঢেউ
মানুষেরা কুলোর বাতাস নাড়িয়ে নাড়িয়ে তোলে। ফেউ
না ডাকলে রাতের চৌকিদার
রাতের স্রোতের মধ্যে মিশে যেতে পারে— এই ভয়ে
মানুষেরা বিকেলের নিস্তরঙ্গ আলোয় ভানতে ভানতে ধান,
বাঁশঝাড়ে সূর্য পাটে বসলেও, ঢেঁকিশালে পা ছড়িয়ে গায়
শিবের বিয়ের গান।
হায়! তুচ্ছ মাছিটিও সোনার মতন সনাতন মলে ও কমলে।
শুধু আমাদেরই,
শুধু আমাদেরই কৃতকর্ম নড়েচড়ে প্রতিবেশীদের নষ্ট জিভে।
ধেয়ে আসে
কুলোর বাতাস!
অতশত কে জানত!— তাড়া করতেই আমি আপাদমস্তক ভীরু
পালিয়ে পালিয়ে মগডালে…
তবু মাটির নিচের গাঢ় মাটি সরিয়ে মাটির অশরীরী
বলেছিলঃ
এই পৃথিবীতে যার আজ কোন চিহ্ন নেই— যে ছিল অনেকদিন আগে
পোড়া ভিটের পোতায় তার দড়ির মতন শিরা, মরা চুল, আংটির কাঁচ
বিঁধে আছেঃ লোকাপবাদের স্মৃতি।
গাছের গুঁড়ির ফাঁকে বনময় সায়ং হিমের নিচু স্রোত
ঘুমন্ত নাচুনী যেন অদ্ভুত ভঙ্গিতে আঁকাবাঁকা—
সাবধান!
চেঁচিয়ে ওঠার আগে কেউ, আমি উড়ে গিয়েছি সেখানে…
বন থেকে শীতহিম পোকার ঝাঁকের মতো ওঠে
জগৎকুয়াশা আরো ঘন হয়
দেখা যায় না এপার ওপার
বনবাসী আত্না
কোনো বনবাসী আত্না সেদিন রাত্তিরে নেমেছিলো আমাদের ছাদে।
আমি স্থির হয়ে থাকতে পারি নি। ঝুঁকে পড়েছিল এক গভীর জঙ্গল—
গাঢ়মূর্তি গাছের কল্লোল-ছায়া ফিসফাস করছিল কবাটে গরাদে
অপদেবতার মতো। তৃষ্ণার্ত ঝাঁজালো বায়ু বয়ে গিয়েছিল
ঈশানে নৈঋতে।
জন্মর্থী প্রাণের দল সদ্য নরকের থেকে এসে সেইখানে
আলোর আড়ালে যেন ভূমি পেয়েছিলো জন্মবার।
আমি স্থির থাকতে পারি নি— আসক্তির মতো এক অমঙ্গল
আমারও গহন টুঁটি টিপে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো ছাদে।
সেই বনবাসী আত্না প্রকৃতিত সাংঘাতিক সম্রাটের মতো
রাজাজ্ঞা শুনিয়েছিল গমগম নিঃশব্দ আকাশে।
কোনো মেসোজাইক ডাইনোসর অদ্ভুত আওয়াজ ক’রে
লালাসিক্ত ফাটা জিভে চেটে নিয়েছিল আমাদের কিম্ভুত পোশাক।
আমি শঙ্কা ও সভ্যতা ভুলে, সেই ঘন গভীর আরাবে ভরে গিয়ে
যা-কিছু চিন্ময় ছিল সব দিয়ে— মৃন্ময় প্রাণের অন্ধ মূলে
সাষ্টাঙ্গ হলাম।
এখন ওসব কথা থাক
এক লক্ষ বছর সঙ্গে থাকার পর সাব্যস্ত হবে, তুমি আমার কিনা।
ওসব কথা এখন থাক।
এখন চলো মিকির পাহাড়ে বুনো কুল পেকেছে,
চলো খেয়ে আসি।
লাল রুখু চুল
সূর্যাস্তের মধ্যে
অর্কিডের উজ্জ্বল শিকড়ের মতো উড়ছে।
- দেখি দেখি, তোমার তামাটে মুখখানা দেখি!
সূর্য এখনি অস্ত যাবে। পশুর মতো ক্ষীণ শরীর
আমরা হাঁটু পর্যন্ত জলস্রোত পেরিয়ে চলেছি—
জলস্রোত ক্রমশ তীব্র… কনকনে…
মহিম্ন স্তোত্র
বাউলের মতো আমি ভিতরে জ্বালাব বাতি : এই অলীক
ঘুরিয়ে মেরেছে বহুদিন। বহুদিন এই জন্যে নির্বাপিত থেকেছি আঁধার
ঐ টিমটিমে নিজস্ব বাতির জন্য এত লোভ!—এই এক অভিমান, মায়া।
তবু ভাগ্য, ঈশ্বর আমাকে ফিরিয়েছেন ঠিক পথে—রোদ্দুরে, কাদায়, জলধারে,
মোষের মতন পাঁকে, সাপের মতন পদ্মবনে, সন্ন্যাসী-বাঁদর-অভিমানে।
ভাগ্যিস জ্বলে নি আলো, তাই এখন বিশালতা ছুঁতে পারি :
নীলের গহন অভ্যন্তরে ফুটে ওঠে সুদূর মন্দির। এখন মেঘের দেশে
বেলা যায়। ভেসে যায় স্নেহে দশদিকে তোমার হাসির মুখখানি।
আমি বিকেলবেলার সূর্যে মুখ রেখে, অবাস্তব এখন মিলিয়ে যেতে পারি,
যাই নীরব রোদ্দুরে।
বৃষ্টিতে সন্ধ্যায়
সদ্যোজায়মান মেঘ যেন এক দৈত্যের আঙরাখা, উড়ে এল
সমুদ্রের গুপ্ত গুহা থেকে,
সবুজ মাঠের অনর্গল হাওয়া ফোয়ারার মতো উঠে
লুফে নিল তাকে।
গাছের জটলামধ্যে উঠল করতালি। নীল নদীজলে
উদ্বেল খুশির মাছ দল বেঁধে ডিগবাজি খেয়ে
আরো নিচে চলে গেল অন্য কোন দেশ-দিক্ বিজয়ে।
আকাশ পৃথিবী জুড়ে এই গুপ্ত ফুর্তি তুমি কিছুই দেখলে না,
বৃষ্টির উৎসবে তুমি ভিজে মুখে ফিরে এসে ঘরে
আলো জ্বালালে একা একা
মলিন সন্ধ্যায়।
অশ্রু
পাখির মরণ যখন ঘনিয়ে আসে
তখন তার ডাকের মধ্যেও ব্যথা ফুটে ওঠে।
মাঠের কাকতড়ুয়ারাও তা বোঝে, সারা রাত তাদের হাঁড়িমাথায়
শিশির পড়ে পড়ে ভোরবেলায় চোখ ভিজে উঠেছে।
হেমন্তের ঘন কুয়াশার মধ্য দিয়ে তারা দেখে – কৃষক আসছে,
গোরু আসছে। ওদের চুনে আঁকা চোখ কি শেষ পর্যন্ত
আমার জ্যান্ত চোখের চেয়েও অনুভূতিপ্রবণ হল!
আমার কেউ আসেও না, যায়ও না।
রাত্রে গোরের থেকে যারা ওঠে তাদের কান্না কে শুনেছে!
যাবার আগে, আমার শেষ সান্ধ্যভোজের শক্ত পাঁউরুটিটুকু
অন্তত যাতে ভেজে,
আমি সেইটুকু চোখের জলের অপেক্ষায় আছি।
ছাই
ছেলেবেলায়
পায়রার গলায় ছুরি বসিয়ে
লিচুগাছের ডাল ভেঙে
দুই কাঁদি তালশাঁস খেয়ে
বাগান লণ্ডভণ্ড আর পুকুরের জল ঘোলা করে
দিনের শেষে যখন বাড়ি ফিরতাম
তখন ঠাকুমাবুড়ি মাকে শাসাত :
খবরদার বউমা, ওকে আজ ভাত দেবে না
উনুনের ছাই বেড়ে দেবে।
ঠাকুমা কবে মরে গেছে। আমিও মরমর।
কিন্তু এতকাল ধরে আমরা বাগান লণ্ডভণ্ড করেছি
শয়তানের পিছনে কাঠি দিয়েছি।
এখন মাটির নিচে জল পাঁচ মিটার নেমে গেছে।
মেঘ আসে কিন্তু লাফায় না, গর্জায় না, মরা মাছের মতো নীরবে ভেসে যায়।
বেশি টানাহ্যাঁচড়া করলে মাটি থেকে জলের বদলে আর্সেনিক ওঠে।
গাছের শিকড় নুন মাখানো জোঁকের মতো সিটিয়ে গেছে –
নিচে যেতে পারে না। পুত্রবধূ আর নাতবউয়েরা
পাথরের ফাটলবাসী গিরগিটিদের মতো ধুলোমাখা।
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
কতদিন ঘরে এক দানা চাল নেই –
বউমা, ওদের ভাতের বদলে ছাই বেড়ে দাও,
উনুন থেকে গরম ছাই তুলে দাও।
অলাতচক্র
মারা যাবার পরে সে রাস্তা চিনতে পারছিল না।
থতমত খেয়ে সে পারকিনসনের রোগীর মতো
স্পাইরাল সিঁড়ি বেয়ে যেখানে এসে নামল
সে জায়গাটা গ্র্যাণ্ড হোটেলের পিছনের সরু উঠোণ-
ধোবিখানার সাবানজলের দিন রাত ভেজা আর
পাম্পঘরের আরশোলার বাসা, লুব্রিক্যান্টে পিছল অন্ধকার,
সদ্য ছড়ানো ব্লিচিং পাউডারের গন্ধ ।
তার মনে হল, নরকভোগের পক্ষে এই জায়গাটাই প্রশস্ত।
হাজত থেকে বার করে আসামীকে যেমন কোর্টে তোলে
তেমনি তাকে প্রায়ই হোটেলের একটি ছায়াময় কক্ষে পাঠানো হয়।
সেখানে এক কিশোরী পরিচারিকা কার্পেটে বসে
একা একা দিনরাত টিভি দ্যাখে। বীনাবাদিকাদের চেয়ে
টিভি-দেখা পরিচারিকারাই বেশ স্ফুরাধরা।
আয়ত কৌচে এলিয়ে বসে সে দাসীটিকে দেখতে থাকে
আর তার পূন্যভোগ ফিল্মের রীলের মতো মৃদু কিরকির শব্দে গুটোয়।
পাঁচ হাজার বছরের পিরামিডের মৌন ক্রমশ চর্তুদিকে ঘনিয়ে আসে।
ছায়াজগৎ
এই বাড়িতে অনেকদিন হল একা। দুপুরে বই নিয়ে
বসে আছি- বই থেকে মাথা না তুলেও মনে হল
একটা ইঁদুর যেন ঘরের কোনাকুনি দৌড়ে গেল।
আসলে কিছু না।
একদিন হঠাৎ মনে হল একটা স্বচ্ছ কাচের গুলি
চেয়ারের তলা থেকে বেরিয়ে সামনে গড়িয়ে গিয়েই
কোথায় লুকিয়ে পড়ল। আসলে এটাও কিছু না।
পাল্লাবন্ধ কাচের জানলার ওপাশে একটা বড় ছায়া
খসে পড়ল- ছায়া নয়, নিশ্চয় সুপুরি গাছের বালতো।
উঠে জানলা খুলে দেখি, বালতোও না, বিরাট ডানার
একটা চিল পাশের পুকুরে ঝাঁপ দিয়েই নখে মাছ নিয়ে
উঠে যাচ্ছে আকাশে।
দরজা খোলা থাকলে মাঝে মাঝে বেড়াল ঢোকে,
পাশের ফ্ল্যাটের এলসা কুকুরটা ঢোকে। না, না,
বেড়াল কুকুর কেউ না, আজকের কাগজটা হাওয়ায়
মাটিতে পড়ে গড়াচ্ছে আর ফটফট করে কান নাড়াচ্ছে।
বিকেলে লতার ছায়া দোলে দেয়ালে- হঠাৎ মনে হয়
উড়ন্ত প্রজাপতিকে বুঝি টিকটিকি তাড়া করেছে।
সেদিন সন্ধ্যেবেলা চমকে উঠলাম- একটা বাঘ এসে
ঢুকছে ঘরে। না, না, বাঘ নয়, তুমি। লাফিয়ে উঠতে গিয়ে
তাকিয়ে দেখি- নাঃ তুমি না, পৃথিবীর ঠাণ্ডা
সন্ধ্যাবেলাকার ছায়া ঢুকছে ঘরে।
বাড়ি
আমি পারি না। কিন্তু তোমরা প্রত্যেকটি পরিবার বাড়ি তৈরি করো-
আনন্দময় বাড়ী।
আমি প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা প্ল্যান করে দেব,
নিজে দেখাশোনা করে বানিয়ে দেব।
গোনাগুনতি খোলা সিঁড়ি ছাদে উঠে গেছে এমনভাবে যেন শিশুরা
মনে করবে তারা আকাশে উঠছে। বাজপাখি দুপুর-মৌতাতে
পাহাড়চূড়া ভেবে জলের ট্যাংকে এসে বসবে। আবার ঝড়ের মধ্যে
মনে হবে। কংক্রিটের এক বেঁটে পালোয়ান চার হাত-পায়ে
উবু হয়ে মাটি আঁকড়ে ধরেছে, প্রতিদ্বন্ধী কিছুতেই তাকে চিত
করতে পারছে না।
ফার্নিচারও আমি ডিজাইন করে দেব, আপহোলস্টারি পছন্দ করে
দেব।
ধূসর-সবুজ জলের মধ্যে তন্বঙ্গী সরলপুঁটি যেমন ঝিকমিক করে
তেমনি, ছায়াছন্ন ঘরে তোমাদের কিশোরী মেয়েটিকে মাঝে মাঝে
দেখা যায়- কাজ করছে, বই পড়ছে। দিনশেষে বাড়ি ফিরে
নিজের কৌচটিতে বসে বলিষ্ঠ রুইমাছের মতো তুমি শান্তি
পেতে পেতে দেখবে, মৃদু আলোয় তোমার চারপাশে
জলজ কুসুমেরা দুলছে।
আমার নিজের বাড়ি কেমন হবে সে কথা ভাববার সময়
আজ পেরিয়ে গেছে।
গড়িয়ার মোড়ে
শহরতলি শেষ হয়ে যেখানে গড়িয়াগ্রামের শুরু
সেখানে বহুকালের একটি বেশ্যাপাড়া আছে ।
বেশ্যাদের সঙ্গে গলির একটা প্রাচীন সম্পর্ক,
অতএব সেই পাড়ার দুটো গলির মুখে
দিনরাত কয়েকটা মোড়া পড়ে থাকে,
সেইখানে ঐ মেয়েরা এসে বসে, অপেক্ষা করে।
গড়িয়াগ্রামে কয়েকটা অতি পুরনো ছোট পুকুর আছে।
চারপাশ থেকে গাছপালা ঝুঁকে পড়েছে,
অ্যানোডাইজড ধাতুপাতের মতো ধূসর পাঁশুটে জল-
অদ্ভুত সেই পুকুরগুলো ঘোর তামসিকতায় আচ্ছন্ন ।
ঐ পুকুরগুলির ঘাটে যেমন চ্যাং বা চ্যাপটামুখ গজাল মাছেরা এসে
খাদ্যের খোঁজে মুখ তোলে, মেয়েগুলো ঠিক তেমনি ঐ গলির মুখে
তাদের ঘোলাটে শরীর নিয়ে চারপাঁচজন করে আসে,
তাদের চ্যাং গজালের মতো মুখগুলো তুলে
খাবার খোঁজে।
ঘুঘু
শীতের দিন। আশি বছরের পুরনো ফুসফুস
যেন উমা কর্মকারের তালি দেওয়া হাপর-
নিঃশ্বাস নিই আর ঘুরুর ঘুরুর শব্দ হয়
দুটো ঘুঘু এসে পোড়ো ভিটেয় বসেছে যেন।
নিকোটিনে ঘাস চোরকাঁটা পিঙ্গল-
তাদের উপর রোদ্দুর আর ভাঙা উনুনের ছায়া ।
আমি ঘুরুর ঘুরুর শব্দ শুনি
আর খুব নজর করে দেখি
বুকের মধ্যে ঘুঘু নেমেছে।
ঘু ঘু ঘু ঘু – গাছ নিঃশ্বাস ফেলে,
ছায়া পাখির খোলা খাঁচার নকশা, তাল গাছের ছাপ
আর ভাঙা জানলার ছবি আঁকতে আঁকতে
ডান দিকে সরে।
শেষজীবন বড় মিষ্টি।
পোড়ো বাড়িতে ঘুঘু নামে,
হেঁটে বেড়ায়
ডাকে।
প্রেমিকার খোঁজে
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:০২
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
থ্যাঙ্কস হা-মা ভাই।
শুভ বিকেল।
২| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:২২
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
মনীন্দ্রগুপ্ত আপনার কল্যানেই পড়ছি।
দারুন লাগছে কিন্তু।
প্রথম টা, এক লক্ষ বছর পরে...
এই দুইটা অদ্ভূত সুন্দর।।
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৪
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
থ্যাঙ্কস কবি।
শুভ বিকেল।
৩| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৫
অনাহূত বলেছেন: কবিতা নিয়ে আপনার ডেডিকেশন আমার ভালোলাগে। মণীদ্র গুপ্তের কবিতা আগে কখনো পড়িনি। ২০-৩০টা কবিতা প্রকাশ করলে একটা পিডিএফ বানিয়ে ফেলা যায়। আমি বানিয়ে দিবো নে।
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩২
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
পিডিএফ বানাতে চাইলে আমি নিজেই বানাতে পারি। কিন্তু আমার নিজের পিডিএফ পড়তে ভাল্লাগে না, তাই বানাতে ইচ্ছে করে না।
থ্যাঙ্কস কবি।
শুভ বিকেল।
৪| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৬
স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: খুব সুন্দর পোষ্ট ! সময় করে ওনার কবিতাগুলো পড়তে আপনার এই পোষ্টে আসবো আলাউদ্দিন ভাই !
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৮
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
আচ্ছা।
শুভ সন্ধ্যা।
৫| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:৩৫
সোনালী ডানার চিল বলেছেন:
কবি, শুধু ধন্যবাদে কাজ হয় না এসব অসাধারণ সংকলনে!
আপনার জন্যে তারও অধিক কিছু.................
কোনো বনবাসী আত্না সেদিন রাত্তিরে নেমেছিলো আমাদের ছাদে।
আমি স্থির হয়ে থাকতে পারি নি। ঝুঁকে পড়েছিল এক গভীর জঙ্গল—
গাঢ়মূর্তি গাছের কল্লোল-ছায়া ফিসফাস করছিল কবাটে গরাদে
অপদেবতার মতো। তৃষ্ণার্ত ঝাঁজালো বায়ু বয়ে গিয়েছিল
ঈশানে নৈঋতে।
জন্মর্থী প্রাণের দল সদ্য নরকের থেকে এসে সেইখানে
আলোর আড়ালে যেন ভূমি পেয়েছিলো জন্মবার।
আমি স্থির থাকতে পারি নি— আসক্তির মতো এক অমঙ্গল
আমারও গহন টুঁটি টিপে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো ছাদে।
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:৫২
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
মণীন্দ্র গুপ্তের কবিতা প্রথমে আমার ভালো লাগে নাই!!! কিন্তু ধীরে ধীরে ডুবে গেছি ওনার কবিতায়। এই কয়দিন ওনার কবিতাই পড়ছি।
থ্যাঙ্কস কবি।
৬| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:০০
ভিয়েনাস বলেছেন: চমৎকার সংকলন। এর আগে মণীন্দ্র গুপ্তের কবিতা পড়া হয়নি। কয়েক পড়লাম। মনে রাখলাম আরো কিছু পড়ে যাবো।
শেয়ারে ধন্যবাদ
২৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:৪৯
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
আচ্ছা।
শুভ সন্ধ্যা।
৭| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:০৯
স্নিগ্ধ শোভন বলেছেন:
নাইস পোষ্ট। উনার কবিতা আগে কখন পড়া হয়নি। প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম। সময় করে বাকি কবিতাগুলো পড়ব।
২৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:৫১
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
ওকে।
শুভ সন্ধ্যা।
৮| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:২৬
মামুন রশিদ বলেছেন: আপনার সৌজন্যে মণীন্দ্র গুপ্তকে কিছুটা হলেও জানলাম ।
২৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:৫২
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
থ্যাঙ্কস মামুন ভাই।
শুভ সন্ধ্যা।
৯| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৪২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: মণীন্দ্র গুপ্তের কবিতা আজই প্রথম পড়লাম। কিন্তু বাস্তবিকই এতক্ষণ আমি তাঁর কবিতায় ডুবে ছিলাম। অনেক চেনাজানা শব্দকে তিনি কীভাবে নিপুণ শিল্পীর মত বুনে গেছেন, আমি পড়ছিলাম আর বিস্মিত হচ্ছিলাম। এমন সাবলীল ও হৃদয়গ্রাহী কবিতা খুব কম পড়া হয়।
প্রথম দিকের কয়েকটা কবিতা পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল জীবনানন্দের কবিতা নতুন ফ্লেভারে পুনর্নির্মিত হয়েছে। ‘ছাই’ কবিতাটা মনে গেঁথে গেলো, এবং এর পরের প্রতিটা কবিতাই অনন্যসাধারণ।
আপনি আর আশরাফুল ভাই আমাদেরকে অনেক কবির সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন, যাঁদের কবিতা একটা নতুন উন্মাদনা সৃষ্টি করে।
শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
২৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:৫৯
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
আমি ওনার কবিতা পড়েছি কিছুদিন হলো। প্রথম দিকে খুব একটা ভালো লাগে নাই। কিন্তু তারপর যতোই পড়ছিলাম ততোই ডুবছিলাম।
কবিতা সংকলন পোষ্ট দেয়ার পর মনে হচ্ছে কাজটা ভালৈ করেছি, ওনার কবিতা দেখি আমার মতো অনেকেই প্রথম পড়েছেন।
অনেক ধন্যবাদ সোনাভাই।
শুভ রাত্রি।
১০| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:২৪
সাবরিনা সিরাজী তিতির বলেছেন: প্রিয়তে ! মন দিয়ে পড়বো ।
২৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:০০
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
আচ্ছা।
শুভ রাত্রি!
১১| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৫৮
নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন:
ধন্যবাদ আলাউদ্দিন ভাই কবির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। ওনার সম্পর্কে কিছুই যান ছিলনা আমার।
২৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:০১
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
আপনাকেও ধন্যবাদ, পড়ার জন্য।
১২| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৫৮
নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন: *জানা
২৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:০২
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
ব্যাপার না।
শুভ রাত্রি!
১৩| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ২:২০
মাসুম আহমদ ১৪ বলেছেন: চমৎকার শেয়ার
২৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:০২
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
থ্যাঙ্কস কবি।
শুভ রাত্রি।
১৪| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৫২
সায়েম মুন বলেছেন: আচাভুয়া পাখিটা কি চিনেন? কোনটা? প্রিয় কবি সুনীল তার এক কবিতায় এ পাখিটার নাম লিখেছেন।
পোস্টে অনেক ভাললাগা!
২৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:০৪
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
আচাভুয়া হলো রূপকথার পাখি। বাস্তবে এমন পাখি নাই।
থ্যাঙ্কস কবি।
১৫| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:০৩
অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: আমার কাছে উনার কবিতা সমগ্র আছে। আগে খুব পড়া হতো। আমিও একটা শেয়ার করছি কবিতা আংশিক।
====
অক্ষর নানান কবির ভাষা হয়ে অস্পষ্টভাবে হেঁটে চলেছে ধূ ধূ মাঠের দিকে-
অস্পষ্ট ভাষা ধূ ধূ করছে -
পশ্চিম দিগন্তের ওপারে যেখানে জংলা একটু মেঘের পাশে সূর্য ডুবছে
সেখানে পোঁছতে পৌঁছতে পিঁপড়ের চেয়েও অস্পষ্ট হয়ে তারা মিলিয়ে গেলো ।
সূর্য ডোবার পর অন্ধকারের মধ্য দিয়ে হু হু করে হাওয়া বইলো -
আগামী হাজার বছরের গায়ে গত হাজার বছরের কবিতার দুঃখ
এইভাবে এসে লাগলো।
-- মনীন্দ্র গুপ্ত
২৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:১১
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
অক্ষর নানান কবির ভাষা হয়ে অস্পষ্টভাবে হেঁটে চলেছে ধূ ধূ মাঠের দিকে-
অস্পষ্ট ভাষা ধূ ধূ করছে -
পশ্চিম দিগন্তের ওপারে যেখানে জংলা একটু মেঘের পাশে সূর্য ডুবছে
সেখানে পোঁছতে পৌঁছতে পিঁপড়ের চেয়েও অস্পষ্ট হয়ে তারা মিলিয়ে গেলো ।
সূর্য ডোবার পর অন্ধকারের মধ্য দিয়ে হু হু করে হাওয়া বইলো -
আগামী হাজার বছরের গায়ে গত হাজার বছরের কবিতার দুঃখ
এইভাবে এসে লাগলো।
শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
শুভ রাত্রি!
১৬| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৮:৩৭
বন্ধু তুহিন প্রাঙ্গনেমোর বলেছেন: শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ... মনীন্দ্র গুপ্ত পড়ছি....
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:১৮
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
অনেক ধন্যবাদ।
শুভ দুপুর।
১৭| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:৩৯
লাবনী আক্তার বলেছেন: প্রথম পড়লাম এই কবির কবিতা। সবগুলো পড়া হয়নি। সময় করে পড়ব।
০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৯
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
আচ্ছা।
শুভ দুপুর।
১৮| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০৯
বৃতি বলেছেন: ফেইসবুকে তাঁর একটা কবিতা পড়েছিলাম, বেশ ভাল লেগেছিল । প্রিয়তে নিয়ে গেলাম পোস্টটা ।
০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৬:৩৭
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
অনেক ধন্যবাদ।
শুভ ভোর!
১৯| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৩
শায়মা বলেছেন: অনেক ভালো লাগা!!!
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১৩
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
অনেক ধন্যবাদ আপু।
শুভ রাত্রি।
২০| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০৫
অদৃশ্য বলেছেন:
অপূর্ব...
পড়ছি সময়করে আস্তে আস্তে...
আহমেদের জন্য
শুভকামনা...
০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৫৭
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
আচ্ছা।
আহমেদ আজকাল কিছু লিখতে পারছে না।
তাই অন্যদের কবিতা পোষ্ট করে যাচ্ছি।
অনেক ধন্যবাদ কবি।
২১| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৩২
প্যাপিলন বলেছেন: পর মণীন্দ্র গুপ্তর কবিতা শুনেই ছাই কবিতাটি সবার আগে খুজেছি - কবিতাটি খুব নস্টালজিক করে আর নগ্ন বাস্তবতা মনে করিয়ে দেয়
১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৪৯
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
থ্যাঙ্কস ব্রো।
আপনাকে অনেকদিন পর দেখলাম। আশাকরি ভালো ছিলেন/ আছেন।
শুভ দুপুর।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:১৫
হাসান মাহবুব বলেছেন: আপাতত প্রথমটাই পড়লাম শুধু। সেইরকম লাগলো।