নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডোন্ট টেক মোমেন্টস ফর গ্রান্টেড!

আমিনা মুন্নী

আমিনা মুন্নী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আয়নাবাজির ‘পাইরেসি’ কড়চা এবং সর্ষের ভেতর ভূত!

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০২


দেশ গেল, দেশ গেল... শিল্প গেল, রসাতলে গেল...
পাইরেসি ঠেকা, সিনেমা বাঁচা!!
‘আয়নাবাজি’ সিনেমাটির পাইরেসি বন্ধে আর পাইরেটেড সিনেমা দেখা থেকে দর্শককে অনুৎসাহী করে তুলতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে যেন!
কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে সিনেমার প্রযোজক, পরিচালক, কাহিনীকার, কলাকুশলী, শুভানুধ্যায়ী, সচেতন দর্শক মহল সবাই যার যার মত করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। দর্শক কে অনুরোধ করছেন হলে যেতে সিনেমাটি দেখতে। এমন পাইরেসি যে প্রতিভাবানদের সৃষ্টিশীল কর্মে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে এবং ভালো শিল্পকর্ম তৈরি তে অনুৎসাহী করবে ইনিয়ে বিনিয়ে বহুভাবে কথাটা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

একটা সহজ সত্যি কথা কি জানেন, আমাদের নিজেদের পেটে লাথি না পড়া পর্যন্ত আমরা কেঁদে উঠি না!... যেই পাইরেসি কে এতদিন ধরে পেলে পুষে বড় করে আজ এক বিশাল হিংস্র হাঙ্গরে পরিণত করেছেন আপনারা, আজ সেই হাঙ্গরটা আপনাদেরই গিলে খেতে চাইছে। আর এটাই তো হবারই ছিল! তাহলে আজ এত মাতম কিসের? কিসের এত প্রচার? কেন অনর্থক এমন হা-হুতাশ করা??
মজার বিষয় হল আজ যারা আদিখ্যেতা দেখিয়ে ‘Say NO to Piracy’ বা ‘পাইরেটেড সিনেমা দেখবেন না’ অথবা ‘হলে গিয়ে সিনেমা দেখুন’ বলে বুলি আওড়াচ্ছে, তারাই কিন্তু হলিউড বা বলিউডের সিনেমা মুক্তি পাওয়ার দিন অথবা পরদিনই ফেসবুকে watching অমুক বা তমুক সিনেমা বলে গর্ব ভরা স্ট্যাটাস প্রসব করেন, রিভিউও দেন।
ছবি মুক্তির দিন বা তারপর দিন যে মুভিটা আপনি দেখলেন সেটা কি তবে পাইরেটেড ছবি ছিল না?!! দিনের পর দিন বছরের পর বছর ডিভিডি, সিডি অথবা অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে যে ছবিগুলো নামিয়ে দেখে ইন্দ্রিয় তুষ্টি নিয়ে যাচ্ছেন, মুভি স্পেশালিষ্ট হিসাবে বন্ধু মহলে নাম কুড়চ্ছেন, ফেসবুকে সিনেমার রিভিউ লিখছেন, সেসব কি পাইরেটেড মুভি দেখে করেন নি?? এতদিন যা কিছু আপনাদের অতি ভালোলাগার বিষয় ছিল, তা যেন হটাত করে বড্ড বিষাক্ত ঠেকছে, কেন বলুন তো?? এই বিষের সৃষ্টি প্রক্রিয়া তে আপনিও জড়িয়ে ছিলেন এতদিন!!

সেই সচেতন সমাজ আজ স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটায় ঘৃণা ভরে আজ পাইরেটেড ছবির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন, এই তারাই advertising/ আইডিয়ার নামে দিনের পর দিন মোবাইল কোম্পানিগুলোর copyright আইনলঙ্ঘন দেখেও মৌন থেকেছেন, নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নই বলে কখনও প্রতিবাদ করেনি। এরাই ইউটিউব এ ভিনদেশী
অ্যাডভার টাইজিং আইডিয়াগুলো কে কপি করে দেশিয় পন্যের প্রচারণায় গর্বভরে চালিয়ে দিয়েছে। প্রখ্যাত গীতিকার বা সুরকার এর জনপ্রিয় গান টিভিসি তে ব্যবহার করে নিজের বাজার তৈরি করে নিয়েছে অথচ সামান্য একটা কৃতজ্ঞতা পর্যন্ত ওই শিল্পের সৃষ্টিকর্তার প্রতি জানায় নি!
আপনি আমি ভাবি বাংলা সিনেমার এফডিসি ঘরানার পরিচালকরাই কেবল দক্ষিনী তামিল সিনেমা থেকে চুরি করে সিনেমা বানায় আর এনারা দুধে ধোয়া তুলসি পাতা! নারে ভাই…
যে সিনেমার পাইরেসি নিয়ে এত মাথা ব্যাথা সেই সিনেমার কাহিনীই তো স্বয়ং চুরি করা!! এমন কি পোস্টারের আইডিয়াও সেই চুরি থেকে বাদ যায় নি।
অথচ দেখুন, স্বার্থে আঘাত লাগাতে উনারায় আজ পাইরেসির বিরুদ্ধে কথা বলছেন…
বড্ড হাস্যকর লাগে এসব নির্লজ্জ কর্মকাণ্ড দেখে!
পাইরেসির বিরুদ্ধে না দাঁড়িয়ে বরং আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ান। পাইরেসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার ন্যূনত্বম যোগ্যতা আপনার আছে কিনা সেটা আগে যাচাই করে দেখুন!!
এই হতচ্ছাড়া পাইরেসির আরেক ভুক্তভোগী এদেশের প্রকাশকরা! এক নীলক্ষেত বলতে গেলে পুরো প্রকাশনী ইন্ডাস্ট্রি কে পথে বসিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। হাতে গোনা কয়েক পাবলিসার ছাড়া অধিকাংশই বাপ চাচার ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসা ধরেছেন। যখন এই আপনারাই নীলক্ষেত থেকে পাইরেটেড বই পড়ে বাসার বুক সেলফ টা সাজিয়ে তোলেন, তখন কি একবারও অনুভব করতে পারেন নাই পাইরেসির ভয়াবহতা?? কমপিউটারের সেই সফটওয়্যারটা আপনি আমি বা আমরা ব্যবহার করি সেটা পর্যন্ত পাইরেটেড। কই সেই বেলায় তো আমাদের কারো বিবেক বোধ কাজ করে না? অনুতাপ হয় না?? আরেক জনের সৃষ্টি যখন যথেচ্ছ রকম ব্যবহার করে যাই নির্লজ্জের মত, তখন কোথায় থাকে আমাদের লজ্জা, কোথায় থাকে তখন আমাদের সচেতনতা?? অভিতাভ রেজা বা শাওন সাহেব, কেউ কি হলফ করে বলতে পারবেন, পাইরেটেড ছবি উনারা কোনদিন দেখেন না, পাইরেটেড বই উনারা কেনেন না বা পড়েন না?? নকল সফটওয়্যার ব্যবহার করেন না? অন্যের সৃজনশীল আইডিয়া চুরি করেন না??...
শুধু উনারা কেন?? আমি বা আপনি আমরা কেউ বলতে পারব না। কারণ অন্যের ক্ষতি আমাদের পীড়া দেয় না। অন্যের হকে যখন আমরা ভাগ বসায় তখন আমাদের লজ্জা হয় না। আমাদের আতে ঘা কেবল তখন লাগে যখন আমাদের হকে কেউ ভাগ বসায়!
কর্মসূত্রে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপাটি রাইট বিষয়ক একটি প্রোজেক্টে আমাকে ২-৩ বছর কাজ করতে হয়েছে। সেখানে তিক্ত অভিজ্ঞতা ছাড়া ভালো কোন অভিজ্ঞতার কথা চাইলেও স্মরণ করতে পারি না!...
সেই প্রজেক্টের অংশ হিসাবে Pirated CD না কিনতে বা song Download না করতে সচেতনা তৈরিতে কোন প্রোগ্রাম বা কনসার্ট আয়োজনের প্লান করা হয়েছে, অথচ শিল্পীদের স্বার্থ রক্ষায় প্রোগ্রামটা আয়োজন করা হচ্ছে জেনেও নামী দামী শিল্পীদের কেউ সম্মানীতে এক টাকা পর্যন্ত ছাড় দিতে রাজি হন নি, হাজার চেষ্টা করেও গীতিকার, সুরকার বা শিল্পীদের নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছানো সম্ভব হয় নি!

বাংলাদেশ সরকারের কপিরাইট অফিস বলে একটা কফিস আছে। এত এত সৃষ্টিশীল মানুষের ভিড়ে যেখানে থাকা দায়, সেখানে কপিরাইট অফিসে কর্মকর্তারা অফুরন্ত সময় হাতে নিয়ে বসে থাকেন। ১০০০ জনের ভেতর একজন সৃজনশীল লোকও সেখানে কপিরাইট নিবন্ধন এর জন্য যান না! সেই পথ মাড়ানোর প্রয়োজনটাও অনুভব করেন না… এমন কি ‘আয়নাবাজির’ সচেতন পরিচালক বা প্রযোজকও কপিরাইট নিবন্ধনের কাজটি দায়িত্ব নিয়ে করেছেন বলে মনে হয় না। শূন্য তলা নিয়ে তবে এই অনর্থক মাতামাতিটা তবে করা কেন??
বহুজাতিক এবং দেশীয় কোম্পানিগুলো একই ভাবে ভুগছে ‘ট্রেডমার্ক’ violation নিয়ে। এই এক্ষেত্রেও একই অবহেলা। কোম্পানির লোগোর উপরে TM লিখে রাখলে বা বই, ছবি বা অন্যান্য সৃষ্টিকর্মের শেষে © কপিরাইট সংরক্ষিত লিখে রাখলেই যে কেবল কপিরাইট বা ব্যবসায়িক অধিকার সংরক্ষিত হয় না এই নুন্যতমাসাধারণ জ্ঞান বা সচেতনতাটুকু যাদের ভেতর নাই, তারা যখন হুজুগে পড়ে পাইরেটেড ছবি দেখবেন না বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে বন্যা বইয়ে দেন, তখন সেটা দেখতে হাস্যকর ঠেকে বইকি!

‘আয়নাবাজির’ পাইরেসির সাথে জড়িত থাকার কারণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী একজনকে গ্রেফতার করেছে। অথচ এই একই আইন -শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনে দিনের আলোতে পাইরেটেড সিডি, সফটওয়্যার, বই বিক্রি হচ্ছে, তবু আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কেন ধরছে না কেউ বলতে পারেন? প্রকাশ্য দিবালোকে পাইরেসির জ্বলন্ত প্রমান থাকা সত্ত্বেও কেন তা অপরাধিদের ধরার জন্য ঠিকঠাক প্রমাণ হয়ে উঠতে পারে না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে, সেই খবর কি কেউ জানে??!!
ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক মুনাফার কথা বাদই দিলাম, শুধু রাষ্ট্রীয় মুনাফার কথায় যদি উল্লেখ করি, প্রতি বছর শুধু পাইরেসি আর ট্রেডমার্ক violation এর কারণে রাষ্ট্র প্রায় ৫০০০ বিলিয়ন টাকা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। শুধু ভেবে দেখুন এই টাকায় দেশটাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া যেত!

শুধু নিজের পেটে লাথি পড়লেই তবেই ফোঁস করে উঠবেন, তাই কি হয়?? আসুন, আগে নিজেরা ঠিক হই। নিজেদের মূল্যবোধ আগে ঠিক করি। নিজেরা পাইরেসি সম্পর্কে জানুন, পাইরেটেড পণ্য ব্যবহার করা বাদ দেন। তারপর পাইরেসির বিরুদ্ধে প্রচার চালান।
সোশ্যাল মিডিয়া কেন্দ্রিক পাবলিসিটি করেন বলেই এসব লোক দেখানো পাইরেসি বিরোধী প্রচারণাগুলো আসল ধোপে টিকে না!
এবং ভুতের ভেতর রাম নাম শুনে পাবলিকও বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে নতুন কোন তামাশা ভেবে অবহেলা করে উড়িয়ে দেয়!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৩

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: ধন্যবাদ । একটি ভাল বিষয় নিয়ে লিখেছেন , সকলের মাঝে সচেতনাতা আসুক এ কামনা করি ।লিখাটির শেষ অংশে দ্বিত্যতা পরিলক্ষিত । একটু দেখে নিলে ভাল হয় ।
শুভেচ্ছা নিবেন ।

২| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:২৮

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: সহমত। আমরা 'বিজয় বাংলা' না কিনে ৩০ টাকার সিডি থেকে কপি করি...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.