নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডোন্ট টেক মোমেন্টস ফর গ্রান্টেড!

আমিনা মুন্নী

আমিনা মুন্নী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানচিত্রের ঋণ

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৫১

স্বাধীনতা মানে কি কেবল মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার? অথবা কেবল কোনরকমে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা?

স্বাধীনতার সংজ্ঞা আসলে কি?

যদি ইতিহাস ভুল না হয়ে থাকে, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তানি স্বৈরশাসক বিরোধী আন্দোলন, প্রতিটি স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু হয়েছে বৈষম্যের কারণে। জীবিকার বৈষম্য, অধিকারের বৈষম্য, ভাষার বৈষম্য, রাজনীতির বৈষম্য, ক্ষমতার বৈষম্যের কারণে।

তাই স্বাধীনতা মানে শুধু কথা বলার অধিকার নয়, বরং যা উচিত বলে মনে করি, তা স্পষ্ট ভাষায়, জোরালো কন্ঠে বলতে পারার অধিকার।

স্বাধীনতা মানে সুনিশ্চিত এবং সম নাগরিক অধিকার। ভাতের অধিকার, চাকরির অধিকার, বাণিজ্যের অধিকার, শিক্ষার অধিকার।

বৃটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এই অধিকারের জন্যেই ২০০ বছর সংগ্রাম করতে হয়েছে ভারতবাসীকে। আজ শত বছর পড়ে এসেও সেই একই ইস্যুতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। প্রতিটি অধিকার আদায়ে। যুগে যুগে শুধু নাম পাল্টেছে, শাসক পাল্টেছে, শাসনের ধরন পাল্টেছে, পরিচয় পাল্টেছে, নাগরিকত্ব পাল্টেছে, পাল্টায় নি যেন আর কিছুই।

গ্রামের রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে এক বেলা খেটে কোনরকমে খেয়ে বেঁচে থাকা কৃষক, পায়ের ছিঁড়ে চটি পড়া ১০টা থেকে ৫ টা অফিস করা সরকারী কেরানী অথবা মুদি দোকানীর সন্তান, কত না বলা আর না পাওয়ার গল্প জুড়ে থাকে প্রতিটা যুবকের শিক্ষিত হয়ে ওঠার পেছনে, কত স্যাক্রিফাইস থাকে প্রতিটা সার্টিফিকেটের পেছনে। ভাই ভার্সিটিতে পড়বে, চাকরি করে সব অভাব দূর করে দেবে এই স্বপ্নে দেখে বলেই সারা বছর পুটি মাছের ঝোল খেয়েই হাসি মুখে পার করে দেয় কত বোন। ঈদে ফোলানো ফ্রক জামাটাও কেনা হয় না কোনদিন। ছেঁড়া ফাটা দুটো শাড়িতেই মায়ের কেটে যায় বছরের পর বছর। বাবার হলদেটে হয়ে যাওয়া পুরনো গেঞ্জিটা ঠিক বুকের কাছটাতেই ছেঁড়া। ধূর! এসব আবার কেউ দেখে নাকি। বাবা মায়ের আসল অহংকার হলো তার সন্তান। তাই ছেলের পড়াশুনার পেছনে রোজগারের মূলটা টাকাটা চলে যায়। সন্তান মেসে কোনদিন খায়, কেনদিন খায় না। কিন্তু মাসটাতো কাটাতে হবে। এর বেশি টাকা তো সে চাইতে পারে না দরিদ্র অসহায় বাবার কাছে। তার বাবার যে সেই সামর্থ্যই নেই। আর তো মাত্র কটা বছর। চাকরি পেয়ে মায়ের জন্য একটা সবুজ শাড়ী, বাবার জন্য সুন্দর একটা শার্ট আর ফোনের জন্য নতুন ফ্রক কিনে দেবে সে। সবার মুখে সেদিন আনন্দ ঝলমল করবে। এই স্বপ্নেই অর্ধভুক্ত কত রাত কেটে যায় যুবকের। এক সময় বছর পেরোয়। সার্টিফিকেট হাতে আসে।
আর চাকরি? সে যেন হয়ে যা রূপকথার বইতে থাকা অমূল্য সোনার হরিণ।

এমন অসংখ্য পাওয়া না পাওয়ার গল্পেরা মূল্যহীন হয়ে আস্তাকুড়ে পড়ে থাকে কোটা বৈষম্যের বেড়াজালে। এই বৈষম্য বৃটিশ শাসকদের দ্বারা নয়, নেই এখানে বিজাতীয় পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের ভূমিকাও এতটুকু। এ যে রক্তের দামে কেনা স্বাধীনতার ঋণ। মানচিত্রের ঋণ। এই ঋণ শুধতে যেয়ে বাবা মায়ের মুখে আর কখনো হাসি ফোটানো হয়ে উঠে না, বোনের বিয়ের বয়সটাও পেরিয়ে যায় একসময় আর টগবগে যুবকের প্রিয়তমার হাত? সে কবেই মেহেদী রাঙা হাতে অন্য কারো ঘরে আলো জ্বালিয়ে চলে যায়।

মানচিত্রের ঋণ, সে কি কখনো শোধ করা যায়?
কিন্তু হাজার হাজার পরিবারের দীর্ঘশ্বাস আর চাপা কান্নার বিনিময়ে ঋণ শোধ করার চেষ্টাটা চালিয়ে যেতে হয়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বয়ে বেড়াতে হয় স্বাধীনতার ঋণ।

স্বাধীনতা মানে কি তবে কেবলই এক টুকরো মানচিত্র?
নাকি এও এক শুভঙ্করের ফাঁকি??
যেই বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণের মায়া তুচ্ছ করে পাকিস্তানি বর্বর শাসকদের অস্ত্রের সামনে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেছিল একদিন, তারা কি শুধুই একটি মানচিত্রের জন্য যুদ্ধ করেছিলো?... না!
সূর্যসন্তানেরা যুদ্ধ করেছিল নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য। এই অধিকার ভাতের অধিকার, কর্মের অধিকার, বাণিজ্যের অধিকার, হক কথা বলার অধিকার, ভোটের অধিকার, চাকরির অধিকার, শিক্ষার অধিকার। স্বাধীন দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা নাগরিক বৈষম্যের স্বীকার আর অধিকার বঞ্চিত মানুষের হাহাকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবোজ্জ্বল মুখগুলোকে কি আজ এতটুকুও কি মলিন করে তোলে না? এই বৈষম্যই কি তবে তাদেরও চাওয়া ছিল? এত সংগ্রাম আর আত্মত্যাগের বিনিময়ে কি তবে এই আমাদের প্রাপ্য ছিল???

হায় স্বাধীনতা! হায় মানচিত্রের ঋণ!



মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৩২

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: আজ কোটা নিয়ে অনেক বকেছি।।

আপনার পোস্ট এতদিন পর কেন??

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৩৬

আমিনা মুন্নী বলেছেন: সবাই বলতে চায়। শুনতে চায় না কেউ। তাই শুনলাম সবার কথা এতদিন। তবে কোটা প্রসঙ্গে না বলাটা একেবারে অধর্ম মনে হলো। এত বৈষম্য দেখছি চারদিকে, স্বাধীনতার অর্থ অনুধাবন করতে পারছি না। তাই লিখে ফেললাম! ☺

২| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৮

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: যুক্তিগ্রাহ্য এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে চিরন্তন কিছু প্রশ্ন সংবলিত লেখাটি অনেক সুন্দর। বাংলাদের লক্ষ লক্ষ মেধাবিদের মুখে প্রতিধ্বনিত হওয়া প্রশ্নগুলিই যেন লেখিকা তার লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।

১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:০৭

আমিনা মুন্নী বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: ্মুন্নী আপু লেখাটা খুব মন দিয়ে পড়লাম।

১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:০৭

আমিনা মুন্নী বলেছেন: Thank you :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.