নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডোন্ট টেক মোমেন্টস ফর গ্রান্টেড!

আমিনা মুন্নী

আমিনা মুন্নী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি বদলে গেলে, শহরটা বদলে যাবে। বদলে যাবে দেশ!

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২৯



রাষ্ট্র বা রাজধানী কেবল সরকার নিয়ে নয়, বরং জনগণ বা নাগরিকও তার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই উন্নয়ন বা ইতিবাচক পরিবর্তনে নাগরিকের ভূমিকা ততটাই, যতটা সরকারের। সরকার রাতারাতি সব করে ফেলবে, তার তাতেই দেশটা ইউরোপ আমেরিকার মত হয়ে যাবে, সেটা ভাবা অত্যন্ত বোকামি। একটা দেশ কখনোই গুটিকয় মানুষের কারণে বদলায় না, বদলায় সামষ্টিকভাবে। আর সরকারের পাশাপাশি সুনাগরিকের ভূমিকা সেখানে অনস্বীকার্য। রাষ্ট্রযন্ত্রের দিকে আঙ্গুল তোলার আগে, বোধকরি তাই নিজেদের দিকে আঙ্গুল তোলাটাই অধিক জরুরী। আসুন, তাই নিজেই একবার নিজেকে বিবেকের কাঠগোড়ায় দাঁড় করাই। নাগরিক হিসাবে আমরা কতটা সভ্য, সেটা যাচাই করে দেখি।

যত্রতত্র বেআইনী ভাবে গাড়ী পার্ক করে রাখে কারা?

আমি বা আপনি। আমাদের ড্রাইভারেরা।

গাড়ীতে বসে থাকে কে?
আমি বা আপনি। আমাদের মত শিক্ষিত কেউ অথবা কোন পয়সাওয়ালা।

জেব্রা ক্রসিং এ দাঁড়িয়ে থাকে কাদের গাড়ী?
তথাকথিত শিক্ষিত, সভ্য আর ভদ্রলোকেদের গাড়ী।

লেন না মেনে যে গাড়ীগুলো রাস্তায় চলে, তাতে বসে থাকে কারা?
আমি বা আপনি বা কথিত ভদ্রলোকেরা।

ফুটপাতে মোটরসাইকেল চালায় কারা?
আমি, আপনি, আমরা।

উল্টোপথে চলা রিকশাগুলোতে বসে থাকে কারা?
আমরা।

যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে রাখে কে?
ওভারব্রীজ ব্যবহার না করে মহাসড়কে রাস্তা পার হয় কে?
বাসার সামনের ড্রেনটাতে ময়লা ফেলে কে?
অহেতক ট্যাপ ছেড়ে রেখে পানির অপচয় করে কে?
ম্যাচের কাঠি বাঁচানোর জন্য অনর্থক গ্যাস পুড়ায় কে?

এমন হাজারটা বিষয়টা আছে, যেগুলোর নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতেই আছে। কিন্তু সেখানে আমরা কেউ সুনাগরিকের দায়িত্ব পালন করি না। ব্যক্তি চিন্তা আর স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য আমরা প্রতিনিয়ত নিজেদের দায়িত্বে অবহেলা করি। অশিক্ষিত, বর্বর আর বিবেকহীনের মতো আচরণ করি।

যে বাচ্চাটা বাবার মোটরসাইকেলের পেছনে চড়ে ফুটপাতের উপর দিয়ে চড়ে বা উল্টোপথে স্কুলে যাচ্ছে, ভবিষ্যতে তার কাছ থেকে কতটা দায়িত্বশীল আচরণ আপনি আশা করবেন? বাবার দেখানো পথেই সে বড় হয়ে চলবে এটাই স্বাভাবিক। যে বাচ্চা মায়ের হাত ধরে ওভারব্রীজ দিয়ে রাস্তা পার না হয়ে চলন্ত গাড়ী এড়িয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে, তার কাছে কি আপনি ভবিষ্যতে একই আচরণ আশা করেন না? মোটরসাইকেলের সামনে আপনি থাকেন হেলমেট পড়ে, পেছনে আপনার সন্তান, স্ত্রী, বন্ধু, কলিগ বা পরিজন থাকে হেলমেটবিহীন। হঠাৎ করেই করে কোন দূর্ঘটনায় আপনি বেঁচে গেলেন, কিন্তু আপনার সন্তান মারা গেল, সেই দূর্ঘটনার দায় কি কেবলই বেপরোয়া চালকের, আপনার নয়?

গাড়ীতে সিটবেল্ট বেঁধে চলার নিয়ম। অথচ আপনি সিটবেল্ট বাঁধেন না, সেটা কার দায়? সরকারের? প্রশাসনের? সুপার শপে কেনাকাটা করতে গিয়ে আপনার ড্রাইভার মাঝরাস্তায় গাড়ী পার্ক করিয়ে রাখে, অনর্থক রাস্তায় জ্যাম বাঁধে। মানুষের চলাচলের অসুবিধা হয়। স্যুট প্যান্ট পড়া ভদ্রলোক আপনি, সভ্যতা আর স্ট্যাটাসের বড্ড বড়াই আপনার, আপনি বুঝতে পারেন না কাজটা অন্যায় হচ্ছে?

বাড়ির বুয়া বাসার জানালা দিয়েই ময়লা ফেলে, নোংরা হয় চারপাশের পরিবেশ। বন্ধ হয়ে যায় ড্রেন, জন্মায় মশা। অথচ সব দোষ কেবলই সিটি কর্পোরেশনের?
জাতীয় সম্পদ গ্যাস। সচেতন মা/ গৃহিনী আপনি। সন্তানদের উচ্চশিক্ষিত বানাবেন আপনি, স্বামী সন্তান সামলে হয়তো আপনি বাইরেটাও সামলান। সেকি ব্যস্ততা আপনার!!অথচ বুয়া বারবার চুলা জ্বালানোর হ্যাপা পোহাবে না বলে যখন ঘন্টার পর ঘন্টা বেকার চুলা জ্বালিয়ে রাখে, তখন আপনি থাকেন নির্বিকার। বর্ষার দিনে বাবুর কাঁথা আর বাবুর বাবার অন্তর্বাস চুলার উপর দড়ি টানিয়ে আপনিও শুকোতে দেন বৈকি। এটাও কি ভাই আধুনিক নারীর নমুনা?

যেখানে সেখানে হাত উুঁচিয়ে বাস থামান, মাঝ রাস্তায় স্টপেজ ছাড়া বাস থেকে নেমে পড়েন, অথচ অন্যায় বুঝি কেবলই হয় বাসওয়ালার।

যদ্যপি, যদাচার,
তদ্যপি মোদের স্বেচ্ছাচার।

নাগরিক জীবনের প্রতিটা পদে পদে আমরা নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন করছি৷ আমাদের ব্যক্তিগত স্বেচ্ছাচারিতায় আজ সিস্টেমের বারোটা বাজিয়েছে। প্রায় ৩ কোটি মানুষের বসবাস যে শহরে, কেবল প্রশাসনের পক্ষে এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে সিস্টেমে ফেরানো অসম্ভব প্রায়। পচে যাওয়া এই শহরটাকে বদলাতে হলে সবার প্রথমে বদলাতে হবে আমাকে, আপনাকে। ব্যক্তি জীবনে সুনাগরিকের অভ্যাসগুলো আয়ত্ব করতে হবে। অন্যথায় ইউরোপ আমেরিকা ঘুরে এসে খালি হায় আফসোস, হায় আফসোসই করে যেতে হবে আজীবন।

সন্তানদের ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানানোর চেষ্টা করলেই কেবল হবে না, তাদের সুস্থ নাগরিক চর্চার ভেতর দিয়ে বড় করতে হবে। কেবল সার্টিফিকেট বা টাকার জোরে সভ্য সাজলেই চলবে না, আচরণেও সভ্যতার পরিচয় দিতে হবে। অনথ্যায় দিনের পর দিন স্বেচ্ছাচারিতা আর ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে শহরটাকে আমরা পরিত্যক্ত বানিয়ে ফেলছি, সেই পরিত্যক্ত শহরে দাঁড়িয়ে আমাদের বংশধরেরাই আমাদের গালি দেবে।

তাই আসুন, নাগরিক হিসাবে সচেতনতার জায়গা থেকে আমরা নিজেদের দায়িত্বগুলো ঠিকঠাক মত পালন করি। কারণ, আমি আপনি বদলালেই শহরটা বদলাবে, বদলে যাবে দেশ।

তাই বদলে যাওয়ার শুরুটা হোক না
শুরু নিজেকে দিয়েই।







মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪১

সনেট কবি বলেছেন: ভাল বলেছেন।

২| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪২

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেছেন: এই আমি দিয়েই দেশ। আমি পাল্টাতে পারলেই দেশ ভালো থাকবে।

৩| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪৪

পাঠকের প্রতিক্রিয়া ! বলেছেন: ধূর! এত বদলে গিয়ে কী হবে???

৪| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:১২

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: আপনি যা যা বললেন বেশীরভাগের বেলায় সরকারের দায় আছে। ঘরের ময়লা বা গ্যাসের চুলাতে আমাদের দায় মানি। কিন্তু রাস্তাতে পার্কিং, ময়লা এগুলো অবশ্যই সরকারের নজর দিতে হবে। জরিমানা শুরু হলে সবাই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ২০ টাকা হাতে নিয়ে ছেড়ে দিলে তো কাজ হবে না। সব কিছুই ঠিক হবে যদি আইন ঠিক হয়। বাংলাদেশীদের জরিমানার ভয় বেশী। দেখেন না বাইরে গেলে কেমন ফেরেশতা হয়ে যায়...

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৩২

আমিনা মুন্নী বলেছেন: আইন প্রয়োগেই যদি সবকিছু করতে হবে, তাহলে নৈতিকতা, সচেতনতা, বিচারবুদ্ধি, শিক্ষা এসবের মূল্য কি আর প্রয়োগই বা কোথায়?

৫| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:১৩

বলেছেন: সহমত

৬| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:১৩

ইব্‌রাহীম আই কে বলেছেন: সকল আমি মিলেই কিন্তু আমরা, আর আমরা মানেই কিন্তু একটা সুন্দর বাংলাদেশ 8-|

৭| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৩৯

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে পরিবর্তন সম্ভব ; সহমত আপনার সাথে৷

৮| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:০০

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
মানুষ নিজে নিজে কিছু করার থাকেনা।
সরকার বা স্থানিয় সরকার ব্যাবস্থা করে দিলে, আইন করে দিলে সব সঠিক ভাবে চলে। নইলে যে যার মত চলে।

আমার এই লেখাটি পড়ুন -
নাগরিক চলাচল ভোগান্তি কমাতে আমার নিজস্য কিছু ভাবনা

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৪৩

আমিনা মুন্নী বলেছেন: অবশ্যই মানুষের হাতে অনেক কিছু করার আছে। অধিকাংশই মানুষের হাতে। মানুষ যদি তার বিচার বিবেচনাবোধ কাজে লাগিয়ে ব্যক্তি পর্যায়ে একজন সুনাগরিকের দায়িত্ব ঠিক ভাবে পালন করতে পারে, তাহলেও অনেক সমস্যা সমাধান হওয়া সম্ভব!

৯| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:১৬

সাগর শরীফ বলেছেন: নিজেদের নৈতিকতাই তো বিলুপ্তির পথে !

১০| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: যারা এই শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করে তারা অমানুষ। আর এই অমানূষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চএলছে।

১১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:০২

পদ্মপুকুর বলেছেন: আমরা কাজ করার চেয়ে বলতে পছন্দ করি বেশি।। আপনি আমিও।

১২| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:০২

আমিনা মুন্নী বলেছেন: দায়িত্ব নিয়ে বলছি, শুধু বলতে না, ব্যক্তিজীবনে কাজেও করে দেখাই আমি। আর সেটা করতে গিয়ে এই উপলব্ধিটা হয়েছে যে পরিবর্তন সিস্টেমে আসার চাইতেও আমাদের নিজেদের ভেতর আসাটা বেশি জরুরী।

১৩| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৫০

উদাসী স্বপ্ন বলেছেন: আবার এই আমরাই যখন বিদেশ আছি তখন রাস্তায় থুতুটা পর্যন্ত ফেলি না। সিগন্যাল না পরলে রাস্তা পার তো দুর, সিগন্যালের বোতাম পর্যন্ত টিপি না, পাছে যারা গাড়ি চালান তাদের যেনো দেরী না হয়। বিকিনি পড়া মেয়ে দেখলে বিনয়ে মাথা নুইয়ে ফেলি। ঈভটিজিং বা পর্দা করার জন্য গালি বা ধর্ষনের কথা বলা তো দূর কি বাত।

এরাই বাংলাদেশ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.