নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন মানুষের প্রকৃত অর্থে যাহা গুণ থাকা দরকার সেরুপ গুন নিজের মধ্যে না থাকলেও চেষ্টায় আছি প্রকৃত মানুষ হয়ে বাঁচার।

এন.এ.আনসারী

একজন মানুষ হিসাবে আমিও সত্যক ভালবাসি। তাই আমারো চেষ্টা থাকে সত্য প্রকাশ করার আপ্রাণ চেষ্টা। অন্যের মত সহনশীলতার সাথে শুনা এটাই মনুষ্যত্য

এন.এ.আনসারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ষড়যন্ত্রের কবলে- জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম (Part-02).... (আজকের সুশিল সমাজ যে কারনে নজরুলকে এত হিংসা করছে..)

০৪ ঠা মে, ২০১৫ বিকাল ৫:২০

প্রবন্ধের ১ম অংশের লেখা আগে পড়ার অনুরোধ রইল, নইলো পুরো প্রবন্ধটি অসম্পুর্ন মনে হবে- লেখাটির লিংক হচ্ছে— Click This Link
*
২য় অংশ- আজ জাতীয় কবির রচনাবলীর সাথে ভালভাবে পরিচিত না হয়েও বর্তমান একজন সাহিত্যের ছাত্র এম,এ পাশ করবে। বিশ্ববিদ্যালয় সিলেবাসগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বঙ্কিম ও শরৎচন্দ্রকে যতটুকু গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ততটুকু দেওয়া হয়নি এ জাতীয় কবিকে। কি আফসোস যে বঙ্কিমচন্দ্র তৎকালিন বাংলাদেশের মুসলমানকে কটুক্তি করে বলেছিলেন “ঢাকাতে দেখতে গেল নাকি শুধু কাক, কুকুর আর মুসলমান”। আর আজ যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে বিশ্বকবি রবিন্দ্র নাথকে যারা নিরপেক্ষ প্রগতীশিল মনে করেন হ্যা সেই রবীন্দ্রনাথই ছিলেন যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করেছিলেন প্রকাশ্যে। তৎকালিন ব্রিটিশ সরকার মুসলিম ছাত্রদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বৃটিশ সরকার মুসলিম সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের দাবী মেনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষনা দিলে রবীঠাকুরের নেতৃত্বে কলিকাতার হিন্দু বুদ্ধিজীবিরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল।রবীন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষনার প্রতিবাদে কলিকাতার গড়ের মাঠে এক বিরাট সভাও অনুষ্ঠিত হয়।এরপরেও আমাদের সুশিল সমাজের কাছে রবীন্দ্রনাথ নাকি প্রগতিশীল আর নজরুল হয়ে গেলেন প্রতিক্রিয়াশীল।
আসলে নজরুল অত্যন্ত উদার হওয়া সত্ত্বেও ইসলামের পক্ষে কিছু বলায় প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদী হিসেবে এদের কাছে অভিযুক্ত অথচ মুসলিম বিদ্ধেষী সত্ত্বেও রবীন্দ্রনাথ এদের কাছে একজন উচুমাপের প্রগতিশীল ব্যক্তিত্ব।
*
আজ সিলেবাস উঠিয়ে দেখুন, বিভিন্ন পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথের জন্য সম্পুর্ন একশ নম্বরের রবীন্দ্র সাহিত্য পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, অথচ নজরুল ইসলামের জন্য সম্পুর্ন ১০০ নম্বরের কোর্সতো দুরের কথা বরং চার পাঁচজন সাহিত্যিকের মধ্যে একজন করে যে ১৫ নম্বরের পাঠ্য রাখা হয়েছে তাও অনেক ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে। নজরুল ইসলামের বিকল্প পাঠ রাখা হয়েছে এবং এক শ্রেণীর শিক্ষক নজরুল ইসলামের পরিবর্তে বিকল্পগুলোই পড়াচ্ছেন। ছাত্রদের এ নজরুল ইসলামের সামান্যতম নম্বরের পাঠ্যগুলোও না পড়তে উৎসাহিত করছে এসব শিক্ষক। ফলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বেশিভাগ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধুনা এক শ্রেণীর বাংলা সাহিত্যিক সৃষ্টি হচ্ছে যারা রীতিমত জাতীয় কবি বিদ্বেষী। এরা কবিকে নিয়ে গবেষণা করবে তো দুরের কথা বরং তাকে সাহিত্যাঙ্গন থেকে মুছে দিতে বদ্ধপরিকর।
*
স্বাভাবিকভাবে আজ প্রশ্ন জেগেছে- নজরুল ইসলাম এমন কী দোষ করেছিলেন যে, তাকে এভাবে অবজ্ঞা-উপেক্ষা করা হচ্ছে.??
তার উত্তর একটিই, সেটি হলো; নজরুল ইসলামই একমাত্র প্রভাবশালী মহাকবি যিনি বাংলা সাহিত্যে সর্বপ্রথম অত্যন্ত সফলতার সাতে ইসলামী ভাবধারা সন্নিবেশিত করেছিলেন। বাংলা তার আগমন এমন এক সময়ে যখন রবীন্দ্রনাথ, মধুসূদন,সতেন্দ্রনাথ,বঙ্কিমচন্দ্রদের জয়জয়কার। বাংলা সাহিত্য ছিল এদের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আদর্শে সমৃদ্ধ। বিশেষতঃ রবীন্দ্র, মাইকেল, বঙ্কিমদের আকাশচুম্বী অবস্থানের সময়ে বাংলা সাহিত্যে নজরুল ইসলামের আগমণ ছিল যেন প্রচন্ড বিস্ফোরনের মতো। তার কলম যুদ্ধ নিমিষেই বাংলা সাহিত্যের চেহারা পাল্টিয়ে দিয়েছিলো। এতদিন যে সাহিত্য অত্যাচারি বৃটিশ ও জমিদারদের দালালী করতো আজ সেখানে উপস্থিত এক খড়গহস্ত তরুন বিদ্রোহী কবি’র। তৎকালিন বৃটিশ বেনিয়াদের শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে তার আগমণ ছিল শেষ রাতের আকাশে ধূমকেতু’র আবির্ভাবের মতো।যে সাহিত্যে একদিন ইসলাম ও মুসলমানদের স্থান ছিল না, তা এ সময় হয়ে উঠলো এক নতুন খোদায়ী ভাবধারায় উজ্জীবিত।সাম্য, মৈত্রী শান্তির সুবাতাস বইতে লাগলো সাহিত্যে। নজরুল ইসলাম মুসলমানদের লক্ষ্য করে আহবান করলেন-
“দিকে দিকে পুনঃ জ্বলিয়া উঠেছ
দ্বীন-ই-ইসলামী লাল মশাল
ওরে বেখবর, তুইও ওঠ জেগে
তুই তোর প্রান প্রদীপ জ্বাল’।

ঘুমন্ত এবং অবহেলিত মুসলমানদের মধ্যে নতুন করে প্রাণ সঞ্চার করেছিলো সেদিন তার কবিতা। তিনি বেখবর মুসলমানদের উজ্জীবিত করতে স্মরণ করিয়ে দেন আল কুরআন ও প্রিয় নবীজি(সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)এর আদর্শের কথা।
“অন্যের দাস করিতে কিংবা নিজে দাস হতে ওরে
আসেনি দুনিয়ায় মুসলিম, সব বন্ধন ভয় লাজ
এ রে কোরান, এলেন যে নবী, ভুলিলি সে সব আজ?”
*
তিনি শুধু আফসোস করেননি, বরং নতুন বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হতে সাহস যুগিয়েছিলেনস মুসলমানদেরকে
বলেছিলেন-
“বাজিছে দামামা বাধরে আমামা
শির উচু করি মুসলমান
দাওয়াত এসেছে নয়া জামানার
ভাঙ্গা কেল্লায় ওড়ে নিশান”
এভাকে জাতীয় কবি আমাদেরকে জাগিয়েছিলেন আজ সেই ভাবে জাগার প্রয়োজনের সময় হয়েছে হয়তো

কবি বাংলা সাহিত্যের মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র ধারার প্রবক্তা খাটি হিন্দুয়ানী বাংলার বলয়মুক্ত এ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জনক নজরুল ইসলাম একারণেও অনেকের চক্ষুশূল হয়েছিলেন। এছাড়াও, বাংলা সাহিত্য যখন শুধুমাত্র রবীন্দ্রনাথকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছিল। যখন রবীন্দ্রনাথ একজন নোবেল বিজয়ী বিশ্বকবি। রবীন্দ্রনাথের সফলতার আকাশচুম্বী অবস্থায় এ তরুণ কবি নজরুল ইসলামের আগমণ প্রায় সবকিছুই ওলট-পালট করে দিচ্ছিল। সবেমাত্র সাহিত্যাঙ্গণে প্রবেশ করা এক নবীন ও অল্প বয়স্ক তরুণ নজরুলের প্রতিভা দেখে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও বিস্মিত হন। যুদ্ধ ফেরত সৈনিক নজরুল ইসলাম কলাতায় কাব্য চর্চার শুরুর মাত্র এক বছরের মধ্যেই রবীন্দ্রননাথের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হন। সতেন্দ্রনাথ দত্তের মতো কবিকে রবীন্দ্রনাথ এ সময় একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, তিনি নজরুলকে চিনেন কিনা, নজরুলের কবিতা পড়েছেন কিন। সত্যেন্দ্রনাথকে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, এ তরুন কবি একদিন তোমাদের সকলকে ডিঙ্গিয়ে যাবে।
*
নজরূল যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা তা রবীন্দ্রনাথ ভালই টের পেয়েছিলেন। নজরুল ছিলেন এক স্বাধীন, বিদ্রোহী ও সাহসী পুরুষ। যা তার লেখায় শুধু নয়, আচার-আচরণেও প্রকাশ পেত। সাবিত্রী প্রসন্ন চট্টোপাধ্যায়ের বর্ণনা মতে রবীন্দ্রনাথের কলিকাতার জোড়া সাঁকোর বাড়ীতে নজরুল ইসলামের গমণ সংক্রান্ত একটি ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে তিনি লিখেন- ‘জোড়া সাঁকোর বাড়ীতে রবীন্দ্রনাথে সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসার সময় তেমন বড় লোককেও সমীহ করে যেতে দেখেছি, অতি বাক পটুকেও ঢোক গিলে কথা বলতে শুনেছি। কিন্তু নজরুলের প্রথম ঠাকুর বাড়ীতে আবির্ভাব যেন ঝড়ের মত। অনেকে বলত, তোর ওই দাপাদাপি চলবে না। জোড়া সাঁকোর বাড়ীতে, সাহসই হবেনা তোর এমনিভাবে কথা বলতে। নজরুল প্রমাণ করে দিলেন যে, তিনি তা তা পারেন। তাই একদিন সকাল বেলা ‘দে গরুর পা ধুইয়ে’ এই রব তুলতে তুলতে সে করিব(রবি ঠাকুরের) ঘরে গিয়ে উঠল, কিন্তু তাকে জানতেন বলে কবি বিন্দুমাত্রও অসন্তুষ্ট হলেন না”। কাজী নজরুল ইসলাম কাব্যাঙ্গনে প্রবেশ করেন ১৯২০ সালে যখন রবীন্দ্রনাথ বৃদ্ধ এবং বিখ্যাত কবি। মাত্র দু’বছরের মাথায় অর্থাৎ ১৯২২ সালে ৬ জানুয়ারী সাপ্তাহিক ‘বিজলী’ পত্রিকায় ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশিত হলে নজরুল ইসলাম প্রথমেই সে কবিতা নিয়ে জোড়া সাঁকোয় গিয়ে রবীন্দ্রনাথকে কবিতাটি আবৃত্তি করে শুনেয় আসেন। এ প্রসঙ্গে ‘বিজলী’র ম্যানেজার অবিনাশ চন্দ্র ভট্টাচার্য লিখেছেন.... পরের দিন সকালে এসে কবি চারখানা ‘বিজলী’ নিয়ে গেল, বললেন, ‘গুরুজীর কাছে নিয়ে যাচ্ছি’।.... বিকেলে এসে রবীন্দ্রনাথের বাড়ীতে যাওয়ার ঘটনাটা সবিস্তারে বর্ণনা করল। ‘তার বাড়ীতে গিয়ে গুরুজী গুরুজী বলে চেচাতে থাকি। ওপর থেকে রবী ঠাকুর বললেন, কি কাজী অমন ষাড়ের মত চেচাচ্ছ কেন, কী হয়েছে। ‘আপনাকে হত্যা করবো গুরুজী. আপনাকে হত্যা করব’। হত্যা করবো হত্যা করবো কি, ওপরে এস বোস’। হ্যা সত্যিই বলছি আপনাকে আমি হত্যা করবো, বসুন, শুনুন। কাজী তার সামনে দাড়িয়ে, অঙ্গভঙ্গি সহকারে ‘বিজলী’ হাতে নিয়ে উচ্চঃস্বরে ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি তাকে শুনিয়ে দিলেন। তিনি স্তব্ধ বিস্ময়ে কাজীর মুখের দিকে চেয়ে রইলেন। তারপর ধীরে ধীরে উঠে কাজীকে জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে টেনে নিলেন, বললেন, হ্যা কাজী তুমি আমায় সত্যি হত্যা করবে।
*
রবীন্দ্রনাথের উপরোক্ত স্বীকারোক্তিটি কাজী নজরুল ইসলামের কাব্য প্রতিভার এক উজ্জল দৃষ্টান্ত। নজরুল ইসলাম তার প্রতিভার জন্য একদিন যে রবীন্দ্রনাথকে অতিক্রম করতে পারেন এ স্বীকারোক্তিই প্রকাশ পেয়েছে এতে।
অথচ, এমন বিস্ময়কর প্রতিভাধর কবি সেদিনও আক্রান্ত ছিলেন নানারুপ ষড়যন্ত্রে। তাকে কম জ্বালাতন করেননি সমসাময়িক বিরুদ্ধবাদী কবি-সাহিত্যিকরা। সে সময়ও অনেকে তাকে কবি মানতে রাজী ছিলেন না। যদিও বা রবীন্দ্রনাথও তাকে যথেষ্ট সমীহ করতেন। বৃটিশ বিরোধী লেখালেখি ও প্রত্যক্ষ আন্দোলনের জন্য বৃটিশ রাজশক্তি ও দালাল ‘কবি সাহিত্যিকদের রোষানলে পতিত হয়েছিলেন তিনি। কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন কবি। আমরণ অনশনও করেছিলেন জেলে। বৃটিশ সরকার তার অনেক লেখা ও পত্রিকার উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেছিলো- যা অন্য কোন সমসাময়িক কবি-সাহিত্যিকদের ক্ষেত্রে ঘটেনি। এর উপরও হিন্দু কবিদের নানা প্রকারের কটাক্ষ, ব্যঙ্গ-বিদ্রোপ কবিকে করেছিল ক্ষত বিক্ষত। অবশ্য গোড়া, প্রেমহীন নীরস কাঠমোল্লারাও নজরুলের বিরোধিতায় লিপ্ত ছিলেন। এক কথায় সে সময় সবদিক থেকেই যেনো কবি ছিলেন এক অসহায় মজলুম। চারিদিকে শুধু হিংসা-বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। আর্থিক অনটন ও পারিবারিক সমস্যার কথা বাদই দিলাম।
কবি এদের আচরণে কতটা যে অতিষ্ঠ ছিলেন তা “বড়র পীড়িতি বালির” প্রবন্ধের একটি গল্প থেকে সহজেই অনুমেয়। কবি লিখেন, “একদিন কথাশিল্পী সুরেন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায় মহাশয়ের কাছে গল্প শুনেছিলাম যে, শরৎচন্দ্র তার বইয়ের সমস্ত আয় দিয়ে ‘পথের কুকুরদের’ জন্য একটা মঠ তৈরী করে যাবেন। খেতে না পেয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়ায় যেসব হন্যে কুকুর, তারা আহার ও বাসস্থান পাবে এ মাঠে-ফ্রি অব চার্জ। শরৎচন্দ্র নাকি জানতে পেরেছেন, ঐ সমস্ত পথের কুকুর পূর্বজন্মে সাহিত্যিক ছিল মরে কুকুর হয়েছে। ---- সত্যিই আমরা সাহিত্যিকরা কুকুরের জাত। কুকুরের মতই আমরা না খেয়ে কামড়া-কামড়ি করে মরি।--- আজ তাই একটি মাত্র প্রার্থনা, যদি পরজন্ম থাকেই, তবে আর যেন এদেশে কবি হয়ে না জন্মাই। যদি আসি, বরং শরৎচন্দ্রের মঠের কুকুর হয়েই আসি যেন। নিশ্চিন্তে দু’মোঠো খেয়ে বাচব’ নজরুল ইসলামের উক্ত ব্যঙ্গটি থেকেই আমাদের এক শ্রেণীর লেখকের চিত্র ফুটে ওঠে যা থেকে একালের লেখকরাও মুক্ত নয়। অন্যত্র লিখেছেন, ‘মানুষ কি আমায় কম যন্ত্রণা দিয়েছে? পিজারায় পুরে খুঁচিয়ে মেরেছে ওরা। তবু এই মানুষ এই পশুর জন্যই আমি গান গাই-তারই জন্য আছি আজো বেঁচে”।
*
১৩৩৪ বাংলা সনে প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁর কাছে নজরুল ইসলাম যে দীর্ঘ চিঠি লিখেছিলেন, এতেও তাঁর সে ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। তা তিনি বলেন- “আমি আজো মানুষের উপর আস্থা হারাইনি- তাদের হাতের আঘাত যতবড় এবং যতবেশী পাই। মানুষে মুখ উল্টে গেলে বূত হয়, বা ভূত হলে তার মুখ উল্টে যায়, কিন্তু মানুষের হৃদয় উল্টে গেলে সে ভূতের চেয়েও কত ভীষণ ও প্রতিহিংসা পরায়ণ হিংস্র হয়ে ওঠে- তাও আমি ভালো করেই জানি। তবু আমি মানুষকে শ্রদ্ধা করি-ভালবাসি। স্রষ্ঠাকে আমি দেখিনি- কিন্তু মানুষকে দেখেছি। এই ধূলিমাখা পাপলিপ্ত, অসহায় দুঃখী মানুষই একদিন বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করবে, চির রহস্যের অবগুণ্ঠ মোচন করবে, এই ধূলোর নিচে স্বর্গ টেনে আনবে। এ আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। সকল ব্যথিতের ব্যথায়, সকল অসহায়ের অশ্রুজলে আমি আমাকে অনুভব করি, এ আমি একটুও বাড়িয়ে বলছিনে, এ ব্যথিতের অশ্রুজলের মুকুরে যেন আমি আমার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। কিছু করতে যদি নাই পারি, ওদের সাথে প্রাণ ভরে যেন কাঁদতে পাই”।
কবি নজরুল ইসলামের সমস্ত সাধানাই ছিলো নে মানবতার কল্যাণে। তেত্রিশ কোটি ভারতবাসীর মুক্তি চেয়েছিলেন তিনি। বৃটিশ বিরুদ্ধে অস্ত্র ও কলম উভয় বিদ ধরেছিলেন তিন। ‘সর্বহারা’ কাব্যগ্রন্থে ‘আমার কৈফিয়ত’ কবিতায় কবি নিজের ভূমিকা বর্ণনা করে লিখেন।
“প্রার্থনা করো-যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস। যেন লেখা হয় আমার রক্ত লেখায় তাদের সর্বনাশ”।
*
এমন সাহসি কবিকেও, সেদিন স্তব্ধ করে দিতে উদ্যত হয়েছিল একটি সমাজ। এখনউ সে ষড়যন্ত অব্যাহত রয়েছে। এখনো ১৯২০-১৯৪২ সময়ের প্রেতাত্মারা সক্রিয় রেছ নজরুল বিরোধী ষড়যন্ত্রে। এজন্য আজকের সুশিল সমাজের নাটের গুরু হুমায়ুন আজাদ বলেছেন, নজরুল কোন কবিই নন, তিনি মৌলবাদী ছিলেন । আজ যদি হিসাব করি দেখা যাবে সে গুরু থেকে এখনো পর্যন্ত কবির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত। এ ষড়যন্ত্র আর কতো দিন চলবে জানি না। যদিওবা “আমার কৈফিয়ত”এ জাতীয় কবি তার চিরশত্রু দে জন্য এর জবাব রেখে গেছেন, যা সেকালে – একালে সমভাবে প্রযোজ্য।
কবি বলেন –
“বর্তমানের কবি আমি ভাই, ভবিষ্যতের নই নবি’
কবি ও অকবি যাহা বল মোরে মুখ বুঁজে তাই সই সবি!
কবি আরো বলেন-
“কবি-বন্ধুরা হতাশ হইয়া মোর লেখা পড়ে শ্বাস ঠেলে।
কেহ বলে, মাটি হ’ল হয়ে মোটা জেলে বসে শুধু তাত খেলে।
কেহ বলে, তুই জেলে ছিলি ভালো, ফের যেন তুই যান জেলে মোট ৮২টি পদে লেখা ‘আমার কৈফিয়ত’ এ কবি তাঁর বিরুদ্ধে আরোপিত অনেক অভিযোগেরই দাঁতভাঙ্গা জবাব দেন। এক পর্যায়ে তিনি অনেকটা শ্রান্ত ক্লান্ত হয়ে পড়েন।এবং লিখেন, “বন্ধু গো আর বলিতে পারিনা, বড় বিষ জ্বালা এই বুকে। দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখে”। এরপর ছন্দে বলেন,
“রক্ত ঝরাতে পারিনাকো একা
তাই লিখে যায় এ রক্ত লেখা।
বড় কথা বড় ভাব আসে না’ক মাথায়, বন্ধু, বড় দুখে।
অমর কাব্য তোমরা লিখিও বন্ধু, যাহারা আছ সুখে।
*
আজ জাতীয় কবি নেই, কিন্তু তার লেখা চির অম্লান হয়ে থাকবে, অনুপ্রাণিত করবে নির্যাতিত দুঃখী মানুষদের। অথচ, এ লেখাগুলোও আজ সুকৌশলে আড়াল করে ফেলেছে তথাকথিত সাহিত্যিক নামক শরৎচন্দ্রের মঠের কুকুরগুলো’। তাই, আসুন জাতীয় স্বার্থে, মুসলমানদের স্বার্থেই জাতীয় কবির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকালী কুকুরদের বিষদাঁত ভেঙ্গে দেই।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মে, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৯

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কবি নজরুলকে উপেক্ষা করা মোটেই ঠিক হচ্ছেনা । নজরুল চর্চা আরো প্রসারিত করা প্রয়োজন ।

২| ০৪ ঠা মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৫

তাপস কুমার দে বলেছেন: আমি দুজনার কাউকে উপেক্ষা করতে বলবো না। দুজনই আমাদের সম্পদ ,অহংকার।একজন বিশ্বকবি অন্যজন জাতীয়।সমাজে যারা এদের বিরুদ্ধে নানা কথা বলে আমি তাদের ধিক্কার জানাই।

৩| ০৪ ঠা মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এই দেশ এই জাতি শুধূ নয় মানবাত্বার জন্যও নজরুর অপরিহার্য! মনূষ্যত্বের লড়াই যদি হয়- তবে নজরুল ছাড়া কে আছৈ আর প্রেরণা দায়ী! কে দেবে অমন করে জাগরণের বাণী! কে দেবে লড়াইয়ের আত্ম শক্তি!!

ঘুমপাড়াণীরাতো তাকে শত্রু ভাববেই। এ যে জাগিয়ে তোলে! প্রাণের গভীর থেকে নাড়ী ধরে টেনে তোলে সত্যকে!

তবে ইতিহাসের কষ্টিতেই যখনই এ বিশ্বে জাগরণের খথা আসবে- সময় আসবে সবাই নজরুলকেই বুকে তুলে রাখবে। সুশীল গুমপাড়ানীরা তখন ইদুরের গর্তে বসে চাচমাীর নতুন পথ খুজবে!

তাতে নজরুল থোরাই ছোট হয়- বলং যে কুপমন্ডুকেরা এসব করছে তারাই ছোট হচ্ছে! নজরুরতো সূর্যের মতো! বাদুর সূর্যকে দেখতে পারেনা বলে তার মহিমা কম হয়েছে কবে? ;)

“রক্ত ঝরাতে পারিনাকো একা
তাই লিখে যায় এ রক্ত লেখা।
বড় কথা বড় ভাব আসে না’ক মাথায়, বন্ধু, বড় দুখে।
অমর কাব্য তোমরা লিখিও বন্ধু, যাহারা আছ সুখে।

অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও সালাম কবির চরণে।

৪| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:০৪

গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: লেখককে ধন্যবাদ, কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ ও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করার জন্য!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.