নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন মানুষের প্রকৃত অর্থে যাহা গুণ থাকা দরকার সেরুপ গুন নিজের মধ্যে না থাকলেও চেষ্টায় আছি প্রকৃত মানুষ হয়ে বাঁচার।

এন.এ.আনসারী

একজন মানুষ হিসাবে আমিও সত্যক ভালবাসি। তাই আমারো চেষ্টা থাকে সত্য প্রকাশ করার আপ্রাণ চেষ্টা। অন্যের মত সহনশীলতার সাথে শুনা এটাই মনুষ্যত্য

এন.এ.আনসারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলামে খারেজি -ওহাবি জঙ্গিবাদের উৎপত্তি ও বিকাশ ......(part-02)

০১ লা মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:০৪

খারেজিদের প্রথম সন্ত্রাসী বা জঙ্গি তৎপরতাঃ-
১ম পার্টে দেখিয়েছিলাম যে ইসলামে উগ্রবাদ,জঙ্গিবাদ প্রবেশকারী খারেজীদের পরিচয় বা প্রাথমিক পর্যায়, আজতে খারেজিদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের চিত্র তুলে ধরলাম যার কারনে পুরো বিশ্বে আজো ইসলাম বদনাম হচ্ছে--

ইসলামের ইতিহাসে বর্তমান সময়ের ন্যায় প্রথম জঙ্গি কর্মকাণ্ড সূচনা করে খারেজিরা। তাঁরা ইসলামের শত্রু হিসাবে তিন জন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে এবং চিহ্নিত শত্রু দেরকে হত্যা করার গোপন ষড়যন্ত্র করে। তাঁদের চিহ্নিত শত্রুরা হলেন:
১. সুন্নি ৪র্থ খলিফা হযরত আলি রাদ্বিআল্লাহু আনহু।
২. মহানবীর অন্যতম সাহাবি সিরিয়া ও মিশরের সুন্নি শাসক হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাদ্বিআল্লাহু আনহু এবং
৩. ’দুমাতুল জন্দল’ সালিসির হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিআল্লাহু আনহুর পক্ষে নিযুক্তীয় মধ্যস্থতাকারী ‘আমর ইবনুল ‘আস রাদ্বিআল্লাহু আনহুম।
খারেজি জঙ্গিরা একই দিনে ও একই সময়ে এই তিনজনকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। আব্দুর রহমান ইবন মুলজাম, আল হুজ্জাজ আল তামিমি /বারেক ইবন আব্দুল্লাহ এবং আমর ইবন বকর আল তামিমি -এই তিনজন খারেজি জঙ্গি হজ্বের সময় পবিত্র কাবা ঘরে উপস্থিত হয়ে প্রতিজ্ঞা করে যে, পরবর্তী ১৫ ই রমজান (৪০ হি.) ইসলামি জগতে অশান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তাদের চিহ্নিত শত্রু যথাক্রমে হযরত আলি রাদ্বিআল্লাহু আনহু, আমীরে মুয়াবিয়া রাদ্বিআল্লাহু আনহু এবং আমর ইবনুল আস প্রমুখকে বর্তমান ইরাকের কুফা, সিরিয়ার দামেস্ক ও মিশরের ফুসতাতের মসজিদে ফজর নামাযে ইমামতি করে ফেরার পথে হত্যা করবে। প্রতিজ্ঞা পালনের জন্য তারা হত্যা অভিযানে নামে। সৌভাগ্যক্রমে আমর ইবনুল আস ঐ দিন মসজিদে অনুপস্থিত ছিলেন। আমীরে মুয়াবিয়া রাদ্বিআল্লাহু আনহু সামান্য আহত হলেও প্রাণে রক্ষা পেলেন; কিন্তু মুসলমানদের দুর্ভাগ্যক্রমে আব্দুর রহমান ইবন মুলজামের বিষাক্ত ছুরির অব্যর্থ আঘাতে হযরত আলি রাদ্বিআল্লাহু আনহু গুরুতর আহত হন (২৪ জানুয়ারি, ৬৬১ খ্রি.) এবং ২৭ জানুয়ারি, ৬৬১ খ্রি. শাহাদাত বরণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় খারেজিরা উমাইয়া ও আব্বাসী শাসনামলে বিভিন্নভাবে অরাজকতা সৃষ্টি করে এবং বর্তমানে তাঁদের উপদল হিসাবে সালাফি-ওহাবিরা বিশ্বব্যাপী জঙ্গি তৎপরতা চালিয়ে শান্তির ধর্ম ইসলামকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সন্ত্রাসী ও ঘৃণিত ধর্ম হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।
খারেজিদের কতিপয় ভ্রান্ত বিশ্বাস্ ও উগ্রবাদের অগ্রযাত্রাঃ-
১. হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর ১ম ও ২য় খলিফাকে স্বীকৃতি দেয়। সুন্নি ৩য় ও ৪র্থ খলিফা এবং উমাইয়াগণ ইসলামি আদর্শ হতে বিচ্যুত হয়েছেন বলে মনে করেন। ২. যোগ্যতাসম্পন্ন যেকোন ব্যক্তি সর্বজনীন ভোটের মাধ্যমে খলিফা নির্বাচিত হবেন, তাদের মতে কোন নারীর যোগ্যতা থাকলে তিনিও খলিফা হতে পারেন। ৩. কোন মুসলমান গুনাহ করলে তাকে ধর্মচ্যুত বা মুরতাদ বলে গণ্য করে তাকে কাফের বা বিধর্মী বলতে হবে। খারেজি উগ্রগ্রুপের মতে এরূপ ব্যক্তি পুনরায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে পারে না এবং তার পুত্র- কন্যাসহ তাকে হত্যা করতে হবে। ৫. খারেজি সম্প্রদায়ের অনেকে মনে করে যে, যে সমস্ত মুসলমান নিয়মিত নামাজ রোজা ও অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে না তাদেরকে কাফের বলে আখ্যায়িত করতে হবে । (৬) খারেজিরা ভিন্ন মতালম্বী অ-খারেজি বা সুন্নি- শিয়াকে নির্বিশেষে কাফের মনে করে এবং অ-খারেজিদের হত্যা করা সওয়াবের কাজ মনে করে ইত্যাদি।
খারেজিরা যুগে যুগে দেশে দেশে বিভিন্ন গ্রুপে বা নামে ইসলাম ধর্ম বর্হিভূত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাঁদের অপতৎপরতা চালিয়ে আসছেন। তাঁদের বিভিন্ন উপদল বা বিবর্তিত গ্রুপের মধ্যে আজরাকী, ইবাদি, নাজদাই, জাহেরি, ইয়াজেদি, বর্তমান সময়ে আহলে হাদীস বা সালাফি-ওহাবি। পরবর্তীতে খারেজি মতবাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে ইবন তাইমিয়া (১২৬৩-১৩২৮ খ্রি.) ও মুহাম্মদ ইবন আব্দুল ওহাব নজদী (১৭০৩-১৭৯২ খ্রি.) প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। মূলত তাঁদের কারণেই এখনো খারেজি ধারা টিকে আছে। আহলে হাদীস বা সালাফি হচ্ছে সুন্নি চার মাযহাব বিকাশের সময় খারেজি ভাবাপন্ন একগ্রুপ মুসলিম যাঁরা হাদীস বা সুন্নাহর অনুসরণকারী হিসাবে পরিচয় দিত ও মাযহাবের ইজমা-কিয়াস বা অন্যান্য অপ্রধান ইসলামি আইনের উৎসসমূহকে স্বীকৃতি দিত না। তাঁরা বিশেষ কোন ইমামের তাকলিদ বা অনুসরণ করার বিরোধিতা করে। তাঁদের অন্যতম ইমাম ইবন তাইমিয়ার (১২৬৩-১৩২৮ খ্রি.) যুগ শেষ হলে মুহাম্মদ ইবন আব্দুল ওহাব নজদীর (১৭০৩-১৭৯২ খ্রি.) যুগ শুরু হলে তাঁর নামানুসারে তাঁরা ওহাবি হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। তাই বর্তমানে আহলে হাদীস গ্রুপ ও ওহাবিদের মধ্যে পার্থক্য করা হয় না। তাঁদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে আধুনিক সৌদি আরব রাষ্ট্রটি । সুন্নি ও শিয়াদের সঙ্গে খারেজি ওহাবিদের সম্পর্ক যেমন তিক্ত, তেমনি খারেজীদের অনেক সময় অমুসলিমদের সঙ্গে সুসম্পর্ক দেখা যায়। সুন্নি, শিয়া ও খারেজি-ওহাবিদের মধ্যে কতগুলো মৌলিক বিষয়ে মতবিরোধ বিদ্যমান যেমন-মিলাদ শরীফ উদযাপন। সুন্নিরা রবিউল আওয়াল মাসে বিশেষত ১২ই রবিউল আওয়াল ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষভাবে উদযাপন করেন, শিয়ারা ১৭ই রবিউল আওয়াল মিলাদ উদযাপন করে। কারণ এ দিনটি ৬ষ্ঠ ইমাম জাফর সাদিক রাদ্বিআল্লাহু আনহুর জন্মদিন (নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইমাম জাফর সাদিক রাদ্বিআল্লাহু আনহুর জন্মদিন একসঙ্গে উদযাপন করে।) আর ওহাবিরা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিলাদ বা জন্মদিন উদযাপন করে না, তাঁরা এরূপ উদ্যাপন করাকে বিদ‘আত বলে বিশ্বাস করে । এ বিশ্বাসের কারণেই ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানের করাচি শহরে জামাআতে আহলে সুন্নাত বা সুন্নি জামাআতের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ঈদে মিলাদুন্নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুষ্ঠানে ওহাবি জঙ্গিরা হামলা করে এবং ও প্রায় ৫৭ জন সুন্নি মুসলমানকে হত্যা করে । ভারতবর্ষে মিলাদ-ক্বিয়াম নিয়ে ওস্তাদ শাগরেদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে এখনও একদল মিলাদ-কিয়ামের পক্ষে আরেক দল মিলাদ-কিয়ামের বিপক্ষে অবস্থান করছেন। ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম সুন্নি আলেম ও পীর হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মোহাজেরে মক্কী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (ভারত ১২৩১হি.- মক্কা ১৩১৮ হি./১৮১৭-১৮৯৯ খ্রি.) তাঁর সনদ এবং সিলসিলা (তরিকতের শায়খ পরম্পরা) দ্বারা ভারতের দেওবন্দে অনেক আলেম ও পীর রয়েছেন। তাঁর দুইজন নামকরা দেওবন্দি শাগরেদ হলেন যথাক্রমে (১) মাওলানা রশিদ আহমদ গঙ্গুহি (১৮২৯-১৯০৫ খ্রি.) ও (২) মাওলানা আশরাফ আলি থানবি (১৮৬৩-১৯৪৩ খ্রি.)। এই দুইজন দেওবন্দি শাগরেদ তাদের পীরের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করতেন। এই মতানৈক্যের মধ্যে মিলাদ-কিয়াম অন্যতম। পীর ও ওস্তাদ মিলাদ-কিয়াম করতেন এবং এই নফল কাজটিকে পুণ্যের কাজ বলে প্রচার করতেন। অন্যদিকে এই শাগরেদরা মিলাদ-কিয়ামকে শিরক-বিদআত বলে মত প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে ওস্তাদ ’ফায়সালায়ে হাফতে মাছায়েল’ (Faisla Haft Masla; a book on seven controversia lissues) বা সাত মাসায়েলের সমাধান নামক পুস্তিকা লিখে মিলাদ-কিয়াম ইত্যাদি শরীয়তসম্মত আমল বলে প্রচার করলেও এই শাগরেদরা তা মেনে নিতে পারেন নি। অথচ তারা চিশতিয়া তরিকার অনুসারী হিসাবে নিজের পীরের নামে উপশাখা সাবেরি ইমদাদি তরিকার পীর বা তরিকতের খেলাফত প্রাপ্ত দাবী করেন এবং নিজেদের হক্কানিয়াত বা সত্যের পথের পথিক হিসাবে তাঁদের পীর ও মুর্শিদ হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মোহাজেরে মক্কী চিশতি, নক্সবন্দি, সোহরাওয়ার্দী আল কাদেরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির পরিচয় দিয়ে থাকেন অথচ তাদের এ দ্বিমুখী ভূমিকা শরীয়ত ও তরিকতের শিক্ষার পরিপন্থী ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ তাদের এরূপ নীতি দ্বারা তারা বুঝাতে চায় যে, তারা সুন্নি বা হকপন্থী আর তাঁদের পীর শিরকী- বিদআতি ।(সূত্র-http://en.wikipedia.org/wiki/Imdadullah Muhajir Makki,.............(চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.