নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য অন্বেষক

আরব বেদুঈন

আমি তো শুধু প্রাচারক মাত্র

আরব বেদুঈন › বিস্তারিত পোস্টঃ

তৌরাহ ও বাইবেলে বর্ণিত একটি নৃশংস জেনোসাইডের ঘটনা

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২১

বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক পরিমন্ডলে মুসলিমদের সাম্প্রতিক যুদ্ধাঙ্গি পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে যেয়ে প্রায়ই দেখা যায় মিডিয়া বা আলোচনায় অনেক অ-মুসলিম এমনকি তথাকথিত স্বঘোষিত উদারপন্থী মুসলিম আলোচকরাও “ইসলাম ধর্ম”, “কোরআন”, “মোহাম্মদ (সাঃ)” এমনকি সয়ং “আল্লাহ সোবহানা তালা”কে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আসামী’র কাঠগড়ায় উপস্থিত করেন। তারা দৃঢ় কন্ঠে দাবী করেন যে, “কোরআনের ১৬২টি আয়াত আছে যেখানে তথাকথিত “আল্লাহ’র পথে জিহাদ” বা “হোলি ওয়ার” এর নামে মুসলিমদের এহেন সন্ত্রাসবাদের স্বপক্ষে কোরআনে আল্লাহ’র সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, যার কারণে মুসলিমরা বিশ্বজুরে এই সব সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত।” পক্ষান্তরে অন্য কোন ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থ বিশেষ করে ইহুদীদের তৌরাহ এবং নাসারাদের বাইবেলে এই ধরণের সন্ত্রাসবাদের প্রতি তাদের প্রভু’র কোন সুস্পষ্ট সমর্থন নাই, তাই তাদের ধর্ম ইসলাম অপেক্ষা বেশী শান্তির ধর্ম। তাদের আলোচনায় আরো শোনা যায় যে, “ইসলাম শব্দের অর্থ শান্তি হলেও কোরআনের জেহাদী শব্দমালা শান্তির নামে অ-মুসলিমদের ইনফিদেল বা কাফির ঘোষণা করতঃ তাদের নির্বিচারে হত্যা’র প্রতি ইসলাম অনুসারীদের মদদ দেয়। তাই সারা বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে ধর্মীয় যুদ্ধের নামে নিরীহ মানবহত্যার সন্ত্রাসবাদে লিপ্ত হয়েছে।” মানব ইতিহাসে সকল সাধারণ নিরীহ মুসলিমদেরকে এই অপবাদ মাথায় নিয়ে বিশ্বজুরে চলাচল করতে হচ্ছে। আমার এই লেখায় ইহুদী নাসারা বা উদারপন্থী মুসলিমদের সেই দাবী কতটা যুক্তিযুক্ত তার একটা বাস্তব পর্যালোচনা করার চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ।
প্রিয় পাঠক এই লেখাটি লিখতে গিয়ে আমি এতটাই উত্তেজিত বোধ করছি যে কোন বিষয় হয়তো বাদ দিতে পারবো না ফলে লেখাটির কলেবর অনেক বড় হতে পারে। বড় হলেও এখানে এমন কিছু বিষয় আছে যা আমাদের আত্নস্থ করার অবকাশ আছে। তাই পাঠকের কাছে আমার সবিনয় নিবেদন ধৈর্য্য সহকারে লেখাটির আদ্যপান্ত পড়ার চেষ্টা করবেন। বড় লেখার জন্য আমি পাঠকের কাছে সবিনয় ক্ষমাপ্রার্থী।
সম্প্রতি আমেরিকার পেলসেনভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর ডঃ ফিলিপস জেনকিনস “Laying Down the Sowrd” শিরনামে একটি বই প্রকাশ করেছেন। উল্লেখ্য যে, প্রফেসর জেনকিনস একজন ব্রিটিশ নাগরিক এবং যৌবনকালে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী শোষণের কবল থেকে বাঙালীর মুক্তির পথ স্বাধীনতা যুদ্ধের স্বপক্ষে জনমত তৈরীর জন্য তিনি লন্ডনের রাস্তায় ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। প্রফেসর জেনকিনস প্রধানত একজন কনজারভেটিভ খৃষ্টান ধর্মীয় ইতিহাসবিদ বা লেখক হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু তার এই সাম্প্রতিক বইটির আলোচিত বিষয় নিয়ে অনেক কনজারভেটিভ খৃষ্টানরা তাকে উদারপন্থী খৃষ্টান লেখক হিসেবে চিহ্নিত করছে। এমনকি Amazon.com ওয়েবসাইটে এই বইটির উপর মন্তব্য করতে গিয়ে অনেক কনজারভেটিভ পাঠকরা লেখককে একহাত দেখিয়ে দিয়েছে। যাই হোক সম্প্রতি আমেরিকার উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক পলিসি গবেষণা কেন্দ্র কর্তৃক আয়োজিত বার্ষিক “Interfaith Panel for Peace through Religion” আলোচনা সভায় একজন আমন্ত্রিত মুসলিম আলোচক হিসেবে বইটির বিষয়বস্তুর উপর আলোচনা করার একটা সুযোগ আমার আল্লাহ’র মেহেরবানীতে হয়েছিল। সেই আলোচনায় লেখক নিজে তার বই এর বিষয়বস্তুর উপর প্রায় ১ ঘন্টার একটা প্রেজেন্টেশন দিয়েছিলেন। সেখানে আমরা দুজন মুসলিম প্রতিনিধি ছাড়াও উইসকনসিন রাজ্যের সকল অঞ্চলের চার্চ ও সিনাগাওয়া থেকে প্রায় ৩৫০ খৃষ্টান প্রিষ্ট, মিনিষ্টার ও ইহুদী র‍্যাবাই প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। আলোচনার প্রস্তুতি হিসেবে এক মাস যাবৎ পুরা বইটা পড়া এবং আলোচনার অভিজ্ঞতার পর ভেবেছি বিষয়টা আমাদের বাংলা ব্লগ পাঠকের সাথে ভাগাভাগি করতে পারি, তাই লেখা।
বইটাতে প্রধানত তৌরাহ ও বাইবেল থেকে এমন একটি ঐতিহাসিক ঘটনার গল্পকে কেন্দ্র করে প্রফেসর সাহেব আলোচনা করেছেন যা আমাদের বেশীরভাগ সাধারণ মানুষেরই অজানা, এমনকি আমিও এতদিন জানতাম না। সাধারণ মানুষ তো বটেই ইসলামিক ঐতিহাসিক লেখক এমনকি সাম্প্রতিককালের ইসলামিক চিন্তাবিদদেরও বিষয়টি জানা আছে কি-না আমার সন্দেহ হয়, কারণ এ পর্যন্ত এই বিষয়ের উপর কোন ইসলামিক চিন্তাবিদদের কোন ধরণের লেখা বা লেকচার আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি। এই অজানা থাকার মূল কারণ সম্ভবত যেমন অপর ধর্মীয় গ্রন্থ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনে মুসলিম পাঠক, ইসলামিক চিন্তাবিদ ও লেখকদের ধর্মীয় গোঁড়ামীমূলক আনীহা তেমনি ঘটনাটিকে গোপন রাখার স্বার্থে খৃষ্টান ও ইহুদী ধর্মের ধর্মযাযক, লেখক এবং রাজনৈতিকদের চাতুরতার আশ্রয় নেয়া। সে দৃষ্টিভঙ্গিতে একজন লিবারেল (!) লেখক হিসেবে প্রফেসর জেনকিনস এর এই বইটি যেমন ইহুদী নাসারাদের থলের বেড়াল বের করে দিয়েছে তেমনি ইসলাম ও কোরআনের সত্যতাকেও স্বীকৃত করেছে।
যদিও খৃষ্টান ধর্মের অনুসারীরা দাবী করে থাকে যে তাদের ক্রাইস্ট এর ধর্মই একমাত্র শান্তির ধর্ম কিন্তু ২০১১ সালে নরওয়ে নামের দেশে একজন স্বঘোষিত খৃষ্টান মুজাহিদ এন্ডারস বেহরিং ব্রেইভিক “হোলি ওয়ার” এর নামে প্রায় ৭০ জন নিরীহ তরুণদের হত্যা করার ঘটনাটি সমস্ত খৃষ্টান সম্প্রদায়কে অশ্বস্তিকর পরিবেশে ফেলেছিল। অনেক খৃষ্টান সেই ঘটনার নায়ক সন্ত্রাসী ব্রেইভিককে “খৃষ্টান হোলী যোদ্ধা” হিসেবে পরিগণিত করাকে শুধুমাত্র ভূলই মনে করেন না, সেটা খৃষ্টান ধর্মকে অপমান করার জন্য মিডিয়ার একটি সাজানো ম্যাজিক হিসেবেও চিহ্নিত করে থাকে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে একজন মুসলিম হিসেবে আমি মনে করি খৃষ্টান সম্প্রদায়কেও মুসলিমদের মত এই ধরণের কিছু হোরিফিক সো-কলড হোলী ক্রাইম এর অপবাদ ঘাড়ে নিয়ে নিজেদের বিশ্বাসে চলতে হয়। খুবই অল্প সংখ্যক কিছু শয়তান সদৃশ মানুষ ধর্মের আবরণে তাদের শয়তানী কার্যক্রমকে আবৃত করতঃ অপর সাধারণ ধর্মানুসারীদের ধর্মীয় এথিকাল বিশ্বাসকে যথেষ্ট বিপদের মধ্যে ফেলে থাকে। এটা যেমন মুসলিমদের বেলায় সত্য তেমনি ইহুদী, খৃষ্টান, বৌদ্ধ সকল ধর্মের বেলাতেও সত্য। এই সত্যকে সচেতন সকলকে একবাক্যে স্বীকার করতেই হবে।
যখন প্রফেসর জেনকিনস এর মত কোন একজন কনজারভেটিভ খৃষ্টান লেখক নিজ ধর্মের এ ধরণের হোরিফিক ক্রাইম এর ঘটনা লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশ করে দেয় আর অপর সাধারণ খৃষ্টানরা অপমান বোধ করে কাতর স্বরে চিৎকার করে বলতে থাকে যে, “কিছু শয়তান মানুষের জিজাসের নামে ক্রাইম করার সাথে সকল খৃষ্ট বিশ্বাসীদের সংযুক্ত করাটা অন্যায়” তখন একজন মুসলিম হিসেবে আমি তাদের অন্তরের এই বেদনা সহজেই অনুভব করতে পারি। কারণ তারা হারহামেশাই আমাদের সকল মুসলিমদের একই ধরণের অপবাদে প্রতিনিয়ত ছুরিবিদ্ধ করছে, কিন্তু তারা বোধগম্য নয়। এরপরও তাদের বলতে শোনা যাবে যে, “তাদের এ ধরণের ক্রাইম কোন অবস্থাতেই মুসলিমদের ক্রাইমের সাথে তুলনা করার মত নয়। কারণ ইসলামের নামে মুসলিমদের ক্রাইম তাদের ক্রাইম থেকে নাকি আরো ব্যাপক ও ফ্যানাটিক কিন্তু ইহুদী নাসারা ধর্ম প্রকৃতই শান্তির ধর্ম।” এটা কি এতটাই সহজ সমীকরণ?
প্রফেসর জেনকিনস তার বইটিতে আব্রাহামিক ধর্মের সকল ধর্মীয় গ্রন্থের মধ্যেই ধর্মীয় violence এর সন্ধান পেয়েছেন বলে দাবী করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে তৌরাহ বাইবেল এবং কোরআন সবক’টি গ্রন্থেই কিছু আয়াত বা শব্দগুচ্ছ এবং যুদ্ধ সংক্রান্ত গল্প আছে যেগুলো প্রধানত লেখকের ভাষায় “violent” প্রকৃতির। লেখক তার সাম্প্রতিক বইটিতে যে গল্পের উপর আলোচনা সীমাবদ্ধ করেছেন সেটি হচ্ছে ইসরাইল জাতীর এক নবী সাময়েউল, রাজা সওউল এবং ডেভিড এর সাথে তাদের শত্রু রাজা গোলায়েত এর যুদ্ধের ঘটনা। আমার আধুনিক প্রজন্মের ব্লগ পাঠকদের বুঝার সুবিধার্থে আমি ঘটনার নায়কদেরকে কোরআনের আলোকে এখানে উপস্থিত করছি। এই গল্পটি মূলত কোরআনে সুরা বাকারাহ এর ২৪৬ থেকে ২৫১ পর্যন্ত আয়াতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে, যেমন:
২:২৪৬ মূসার পরে তুমি কি বনী ইসরাঈলের একটি দলকে দেখনি, যখন তারা বলেছে নিজেদের নবীর (তৌরাহ ও বাইবেলে এই নবীর নাম সামেউল) কাছে যে, আমাদের জন্য একজন বাদশাহ নির্ধারিত করে দিন যাতে আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে পারি। নবী বললেন, তোমাদের প্রতিও কি এমন ধারণা করা যায় যে, লড়াইর হুকুম যদি হয়, তাহলে তখন তোমরা লড়বে না? তারা বলল, আমাদের কি হয়েছে যে, আমরা আল্লাহর পথে লড়াই করব না। অথচ আমরা বিতাড়িত হয়েছি নিজেদের ঘর-বাড়ী ও সন্তান-সন্ততি থেকে। অতঃপর যখন লড়াইয়ের নির্দেশ হলো, তখন সামান্য কয়েকজন ছাড়া তাদের সবাই ঘুরে দাঁড়ালো। আর আল্লাহ তা-আলা জালেমদের ভাল করেই জানেন।
২:২৪৭ আর তাদেরকে তাদের নবী বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তালূতকে (তৌরাহ ও বাইবেলে এই রাজা Saul নামে পরিচিত) তোমাদের জন্য বাদশাহ সাব্যস্ত করেছেন। তারা বলতে লাগল তা কেমন করে হয় যে, তার শাসন চলবে আমাদের উপর। অথচ রাষ্ট্রক্ষমতা পাওয়ার ক্ষেত্রে তার চেয়ে আমাদেরই অধিকার বেশী। আর সে সম্পদের দিক দিয়েও সচ্ছল নয়। নবী বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর তাকে পছন্দ করেছেন এবং স্বাস্থ্য ও জ্ঞানের দিক দিয়ে প্রাচুর্য দান করেছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তাকেই রাজ্য দান করেন, যাকে ইচ্ছা। আর আল্লাহ হলেন অনুগ্রহ দানকারী এবং সব বিষয়ে অবগত।
২:২৪৮ বনী-ইসরাঈলদেরকে তাদের নবী আরো বললেন, তালূতের নেতৃত্বের চিহ্ন হলো এই যে, তোমাদের কাছে একটা সিন্দুক আসবে তোমাদের পালকর্তার পক্ষ থেকে তোমাদের মনের সন্তুষ্টির নিমিত্তে। আর তাতে থাকবে মূসা, হারুন এবং তাঁদের সন্তানবর্গের পরিত্যক্ত কিছু সামগ্রী। সিন্দুকটিকে বয়ে আনবে ফেরেশতারা। তোমরা যদি ঈমানদার হয়ে থাক, তাহলে এতে তোমাদের জন্য নিশ্চিতই পরিপূর্ণ নিদর্শন রয়েছে।
২:২৪৯ অতঃপর তালূত যখন সৈন্য-সামন্ত নিয়ে বেরুল, তখন বলল, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদিগকে পরীক্ষা করবেন একটি নদীর মাধ্যমে। সুতরাং যে লোক সেই নদীর পানি পান করবে সে আমার নয়। আর যে, লোক তার স্বাদ গ্রহণ করলো না, নিশ্চয়ই সে আমার লোক। কিন্তু যে লোক হাতের আঁজলা ভরে সামান্য খেয়ে নেবে তার দোষঅবশ্য তেমন গুরুতর হবে না। অতঃপর সবাই পান করল সে পানি, সামান্য কয়েকজন ছাড়া। পরে তালূত যখন তা পার হলো এবং তার সাথে ছিল মাত্র কয়েকজন ঈমানদার, তখন তারা বলতে লাগল, আজকের দিনে জালূত এবং তার সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার শক্তি আমাদের নেই, যাদের ধারণা ছিল যে, আল্লাহর সামনে তাদের একদিন উপস্থিত হতে হবে, তারা বার বার বলতে লাগল, সামান্য দলই বিরাট দলের মোকাবেলায় জয়ী হয়েছে আল্লাহর হুকুমে। আর যারা ধৈর্য্যশীল আল্লাহ তাদের সাথে রয়েছেন।
২:২৫০ আর যখন তালূত ও তার সেনাবাহিনী শত্রুর সম্মুখীন হল, তখন বলল, হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের মনে ধৈর্য্য সৃষ্টি করে দাও এবং আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখ-আর আমাদের সাহায্য কর সে কাফের জাতির বিরুদ্ধে।
২:২৫১ তারপর ঈমানদাররা আল্লাহর হুকুমে জালূতের বাহিনীকে পরাজিত করে দিল এবং দাউদ (তৌরাহ ও বাইবেলে যিনি ডোভিড নামে পরিচিত) জালূতকে হত্যা করল। আর আল্লাহ দাউদকে দান করলেন রাজ্য ও অভিজ্ঞতা। আর তাকে যা চাইলেন শিখালেন। আল্লাহ যদি একজনকে অপরজনের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে গোটা দুনিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেতো। কিন্তু বিশ্ববাসীর প্রতি আল্লাহ একান্তই দয়ালু, করুণাময়।

অন্যদিকে এই একই গল্প ইহুদী ও নাসারাদের গ্রন্থে কোরআনে বর্ণিত উপরোল্লেখিত অবিকল অংশের আগে ও পরে আরো বিস্তারিত কিছু এপিসোড সংযুক্ত করা আছে। সেখানে কিভাবে সেই কথিত নবী’র জন্ম হলো, তারপর তিনি কিভাবে নবুওত লাভ করলেন, কিভাবে তিনি তালুতকে ইসরাইল সন্তানদের জন্য বাদশাহ নিযুক্ত করলেন আবার সেই নবীর সাথে তালুতের কিভাবে বিরোধ সৃষ্টি হলো এবং সর্বশেষে সেই নবী কিভাবে ডেভিড বা দাউদ (আঃ)-কে তালুতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার ষড়যন্ত্র করেছে এবং তালুতকে কে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে ইত্যাদি বিস্তৃত অধ্যয়ের বর্ণনা করা হয়েছে।
তৌরাহ ও বাইবেলে যাকে নবী সামেউল বলা হচ্ছে তার নাম কোরআনের কোথাও উল্লেখ নাই। তবে তাকে শুধু নবী হিসেবেই কোরআনে বলা হয়েছে। অবশ্য ইসলামিক ইতিহাসের অনেক বই-এ এই নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। ইসলামিক ইতিহাসের বইগুলোতে কিছু ঘটনা ও নামের উল্লেখ আছে যা সাধারণত ইতিহাসবিদরা ইসরালিয়াত বা ইহুদীদের লোককথা থেকে সংযোযজন করেছেন। নবী সাময়েউল এর নাম এরকমই একটি নাম যা অনেক ইসলামিক ইতিহাসের বই-এ পাওয়া যায়।
যাই হোক ঘটনার বর্ণনা কোরআনে যতটুকু আছে তার পরের অংশ যা কোরআনে নাই কিন্তু তৌরাহ-তে (Deuteronomy 20:16–18, NASB) আছে তা থেকে সংক্ষিপ্তভাবে মোটামুটি সাদামাটা বাংলায় অনুবাদ করে এখানে তুলে ধরছি যা প্রফেসর জেনকিনস এর বই ও আমার এই লেখার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। যুদ্ধের মাঠে যখন ইসরাইল জাতীর রাজা তালুতের নেতৃত্বে স্বল্প সংখ্যক ইসরাইল সন্তান এবং প্রভু’র (আল্লাহ) বিরুদ্ধাচারী ক্যানানাইট (Canaanite) জাতীর দুর্দান্ত প্রতাপশালী রাজা গোলায়েতের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক অবিশ্বাসী সৈন্য বাহিনীর মুখোমুখি হয়, তখন রাজা তালুত বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন যে কিভাবে তার ক্ষুদ্র সৈন্যবাহিনী এত বৃহৎ সেনাবাহিনীর মোকাবিলা করবে। এমনি অবস্থায় শীর্ণ জীর্ণ দরিদ্র ১৭ বছরের এক যুবক ডেভিড (দাউদ) একাই গোলায়েতের মোকাবিলা করার জন্য অগ্রগামী হয়। আর ডেভিডের এক গুলতির আঘাতে যখন গোলায়েত মুহুর্তের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তখন যুদ্ধের বিজয় ইসরাইল সন্তানদের জন্য নিশ্চিত হয়ে যায়। এমনি অবস্থায় তাদের নবী সামেউল তালুতকে তাদের প্রভু’র (আল্লাহ) নির্দেশের কথা শোনায়। তালুতকে নাবী সামেউল বলেন,
“প্রভু নির্দেশ দিচ্ছেন যে, ইসরাইল সন্তানদের বসবাসের জন্য এই ক্যানানাইট ভূখণ্ড তাদের প্রভু নির্ধারিত করেছেন। কাজেই তালুত যেন পরাজিত ক্যানানাইট জাতীর জীবিত অবশিষ্ট সকল নারী, পুরুষ, শিশু, প্রাণী, জীব জানোয়ার এমনকি বৃক্ষরাজী যারা বাতাস থেকে নিঃশ্বাস নিয়ে থাকে তাদের সকলকে অন্তরে কোন প্রকার দ্বিধা না রেখে নির্বিচারে হত্যা করে ভূখণ্ডটিকে পবিত্র করতঃ সেখানে প্রবেশ করে। কারণ অবিশ্বাসীদের পদচারনায় ভূখণ্ডটি দূষিত হয়ে গেছে বিধায় তাদের প্রভু চান ভূখণ্ডটি বিশুদ্ধ করতঃ সেখানে বিশুদ্ধ জাতী হিসেবে ইসরাইল সন্তানদের বসবাসের জন্য সুনিদৃষ্ট করতে। রাজা তালুত নবীর এই এথনিক ক্লিনজিং নির্দেশনা কার্যকর করতে ইতস্ত বোধ করছিল। এমনি অবস্থায় নবী সামেউল শেষ পর্যন্ত তালুতকে এই নির্দেশ কার্যকর করতে বাধ্য করে এবং তালুতের সৈন্যবাহিনী নির্বিচারে ক্যানানাইট জাতীর সকল নিরীহ জীবিত আবালবৃদ্ধবণিতা নারী পুরুষ, প্রাণীকুল ও বৃক্ষরাজীকে হত্যার মাধ্যমে ধংস করে ভূখণ্ডে প্রবেশ করে।”
বাইবেলে এই গল্পের পরবর্তী অংশে আরো বলা হয়েছে যে যেহেতু রাজা তালুত, প্রভুর এথনিক ক্লিনজিং নির্দেশ পালন করতে দ্বিধা করছিল সেহেতু রাজা তালুত ও নবী সামেউলের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। পরবর্তীতে নবী সামেউল রাজা তালুতের মেয়ে জামাই ডেভিড (দাউদ) এর দ্বারা তালুতকে হত্যার জন্য ষড়যন্ত্র করে এবং তালুতকে হত্যা করে ডেভিডকে ইসরাইল জাতীর জন্য রাজা নিযুক্ত করানো হয়। এভাবেই গল্পটি শেষ হয়। আধুনিক তৌরাহ ও বাইবেলে বর্ণিত এই এথনিক ক্লিনজিং এর ঘটনাটি অমানবিক জেনোসাইড হিসেবে আধুনিক মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি যঘন্যতম উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু যেহেতু এই ঘটনাটির ইতিহাস আধুনিক মানব সভ্যতায় ইহুদী ও নাসারাদের জন্য ধর্মীয়ভাবে একটি অপমানকর ইতিহাস তাই তারা সেটি গোপন রাখার স্বার্থে নানা ধরণের চাতুরতার আশ্রয় নিয়ে থাকে। ফলে যেমন তাদের সাধারণ অনুসারীরা এই ইতিহাস সম্পর্কে অবগত নয় তেমনি অন্যরাও তেমনটা অবগত নয়। অথচ হিটলার যখন জার্মান ইহুদীদের অমানবিকভাবে হত্যা করছিল তখন সেও তৌরাহ ও বাইবেল থেকে এই ইতিহাসকেই তার জেনোসাইড অপকর্মের সাফাই হিসেবে ব্যবহার করেছিল। একই ভাবে ইহুদী নাসারার সাম্রাজ্যবাদী রাজনৈতিকরা পরোক্ষভাবে আধুনিক সমাজেও তাদের সকল ধরণের আগ্রাসন যুদ্ধের সাফাই হিসেবে এই ইতিহাসকেই অবলিলাক্রমে ব্যবহার করে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পারমানিবক বোমার আঘাতে নির্বিচারে সাধারণ নিরীহ মানুষকে হত্যা করার সাফাই হিসেবেও অনেক কনজারভেটিভরা এই ইতিহাসকেই পরোক্ষভাবে বিবেচনা করে থাকে। তাই পারমানিবক বোমা ব্যবহারের জন্য কখনও তাদের ক্ষমাপ্রার্থী হতে দেখা যায় না। আমার ধারণা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানীরাও আমাদের বাঙালী নিধনে এই একই তত্ত্ব পরোক্ষভাবে বিবেচনা করেছিল বলেই ইয়াহিয়া সেই যুদ্ধে “তামা মাটি” নীতি গ্রহণ করেছিল এবং সকল বাঙালীকে হিন্দু সম্প্রদায় হিসেবে ঘোষণা করতঃ এথনিক ক্লিনজিং করার চেষ্টা করেছিল। আমাদের দেশে জামাতীদেরকেও সম্ভবত বিএনপি’র ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে একই কাজে নিয়োজিত হতে দেখা যায়। অতি সম্প্রতি আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ বার্মা বা মিয়ানমারের ভূখণ্ড থেকে মুসলিম নিধন অভিযানে সেদেশের শাসক এই ইতিহাস থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছেন কি-না আমার সন্দেহ হয়।
কোরআনে এই গল্পটি সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখ থাকার কারণে ইসলাম বিরোধীরা প্রায়ই বলে থাকে যে, “কোরআন মোহাম্মদ কর্তৃক হাতে লিখা কিতাব তাই মোহাম্মদ নিজের মত করে গল্পটি কোরআনে লিপিবদ্ধ করেছেন।” আমি যখন ক্যানানাইট জেনোসাইডের এই গল্পটি প্রফেসর জেনকিসন এর বই থেকে জানতে পারলাম আর সেটি যখন বাইবেল ও তৌরাহ থেকে নিশ্চিত হলাম তখন আমার মনে শুধু একটি কথাই ঘুরে ফিরে আসছিল যে, কোরআনে আল্লাহ সোবহানা তালা নিশ্চিত করেই একটি আয়াতে বলেছেন যে ইহুদী ও নাসারারা তাদের প্রতি নাজিলকৃত আল্লাহ’র কিতাবে কিভাবে তারা নিজেদের পছন্দমত শব্দমালা জুড়ে নিজ হাতে কিতাব তৈরী করে বলে যে “এটাই আল্লাহ’র কিতাব।” এই আয়াত যখন কোরআনে পড়তাম তখন এর মাজেজা বুঝতাম না, যে কোথায় তারা কিতাবের পরিবর্তন করেছিল, কিন্তু এখন পুরাপুরি সেটা অনুধাবন করতে পরছি। ইসলামের ২য় খলিফা ওমর বিন খাত্তাব (রসুলের জীবিত কালে) ইসলাম গ্রহণের পরও প্রায়ই তিনি রাতের অন্ধকারে সবার অগোচরে তার কিছু ইহুদী বন্ধুদের বাড়ীতে তিনি নিয়মিত যাতায়াত করতেন এবং বন্ধুদের সাথে বসে তৌরাহ পাঠ করা শুনতেন আর নিজ বাড়ীতে ফিরে এসে কোরআনের সাথে তিনি তৌরাহ’র বিষয়গুলো মেলাবার চেষ্টা করতেন। এমনি একদিন তিনি এক ইহুদীর বাড়ী থেকে বের হবার সাথে সাথে অপর এক মুসলিম সাহাবার হাতে ধরা পড়ে যান। তারপর বিষয়টি রসুল (সাঃ)-এঁর কানে গেলে রসুল (সাঃ) তাকে প্রশ্ন করেন বিষয় সম্পর্কে। উত্তরে ওমর (রাঃ) বলেছিলেন, “আমি তাদের তৌরাহ পাঠ করা শুনি বোঝার জন্য যে তারা কিতাবের কোন্‌ অংশে পরিবর্তন করছে বা করেছে যা কোরআনের সাথে অমিল।”
ইন্টারফেইথ প্যানেলের এই আলোচনা সভায় দেখছিলাম যে, খৃষ্টান প্রিষ্ট আর ইহুদী র‍্যাবাইরা খুবই অনুতপ্তের সাথে প্রফেসর জেনকিনসকে প্রশ্ন করছিল যে কিভাবে তারা এখন এ অবস্থান থেকে পেছনে ফিরে যাবে? অবশ্য প্রফেসর জেনকিনস তার জবাব সরাসরি দেন নাই কিন্তু আকার ইঙ্গিতে তার বইটাতে বলেছেন যে “সব ধরণের কিতাবের এই সব Violent আয়াতগুলোকে বাদ দিয়ে অনুসারীদেরকে কিতাবের শুধু মানবিক আয়াতের উপর শিক্ষা দিতে হবে” আমি তার প্রতিবাদ করে বলেছি কোরআন অবিকল আল্লাহ’র কিতাব, এটা কোন মানুষের হাতে লিখা উপন্যাস নয় যে সেখানের কিছু আয়াত বাদ দিয়ে উপন্যাসের গল্প বোধগম্য ভাবে বর্ণনা করা যাবে। আর তা করতে গেলে কোরআন আজকের তৌরাহ ও বাইবেলের মতই একদিন বুমেরাং হিসেবে প্রকাশ পাবে। বরং আমাদরকে কিতাবের প্রতিটি আয়াত নাজিলের পটভূমি, কারণ এবং দার্শনিক অবজেক্টিভের সাথে প্রভু’র (আল্লাহ) গুণাবলির সমন্বয় সাধন করতঃ সঠিক সত্যের প্রতি নিজেদেরকে সমার্পণ করতে হবে এবং সেই সত্যের উপর অনুসারিদের শিক্ষা দিতে হবে। এখানে ইসরাইলীদের খোদা মুসলিম বা খৃষ্টানদের খোদা অপেক্ষা অধিকতর মর্যাদাশালী বা মুসলিমদের আল্লাহ খৃষ্টানদের গড অপেক্ষা মর্যাদাশালী এ ধরণের মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে। মনে রাখতে হবে আমরা সকলেই একই প্রভুর প্রতিনিধী বিভিন্ন শরীয়ায় আমাদের পরিচয়।
যদিও প্রফেসর জেনকিনস তার বইটিতে এমনকি আলোচনা সভাতেও ইসলাম ও কোরআনের স্বপক্ষেই যুক্তি দেখিয়ে সরাসরি-ই বলেছেন যে কোরআনের তথাকথিত violent শব্দগুচ্ছের চেয়ে তৌরাহ ও বাইবেলের যুদ্ধ সংক্রান্ত শব্দগুচ্ছ ও গল্প বেশী violent এবং ক্যানানাইট জেনোসাইড এর মত একটি অমানবিক ইতিহাস তার উদাহরণ। অন্যদিকে কোরআনের শব্দগুচ্ছ বা গল্পে জেনোসাইডের মতো কোন অমানবিক ইতিহাসের উদাহরণ নাই, বরং যে কোন ধরণের অমানবিক আন্যায় আগ্রাসন ও অপ্রেশনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থার ইতিহাস-ই বর্ণনা করে যা থেকে অনুসারীরা আত্ন প্রতিরোধের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
আলোচনার প্রায় বেশীরভাগ সময় আমি ও আমার সহযোগী মুসলিম প্রতিনিধী তাদেরই বিতর্ক শুনছিলাম। হঠাৎ আলোচকদের মধ্য থেকে একজন প্রিষ্ট মুসলিমদের প্রতিক্রিয়া শোনার জন্য প্রশ্ন করে বসে। আমি তখন বলেছি, আমরা যদি এই গল্পটির প্রতিপাদ্য বিষয়কে আল্লাহ’র ধর্মের দার্শনিক ও অবজেক্টিভ পয়েন্টের ভিক্তিতে পর্যালোচনা করি তাহলে উত্তর সবার কাছে পরিস্কার হয়ে যাবে আশা করি। যেমন, প্রথমেই আশা যাক আল্লাহ’র মৌলিক গুণাবলি কী সে সম্পর্কে ধারণা নেয়া যাক। আল্লাহ’র অন্যতম অনেকগুলি মৌলিক গুণাবলির মধ্যে “তিনি ন্যায় বিচারক”, “তিনি ক্ষমাকারী”, এবং “তিনি সৃষ্টির প্রতি অনুগ্রহশীল” অন্যতম মৌলিক গুণ। যার কারণে আল্লাহ সোবহানা তালা মানুষকে যেমন ন্যায় বিচারের তাগিত করেছেন তেমনি একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল ও ক্ষমাশীল হবারও তাগিত করেছেন তাঁর সকল কিতাবে। একই সময় আমাদেরকে আধুনিক ইংরেজী Violence এবং Terrorism শব্দের বিশ্লেষণ করতে হবে বিষয়টিকে পুরাপুরি অনুধাবন করার জন্য। ইংরেজী আভিধানিক অর্থে নিজস্বার্থে কোন Innocent ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কোন ধরণের কারণ ছাড়াই ভয় ভিতি প্রদর্শন করা বা তাদের উপর আগ্রাসন চালিয়ে তাদের মানসিক, শারিরিক বা বিষয়বস্তুর ক্ষতি সাধন করাকে violence বলে। আর violence এর মাধ্যমে Innocent ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অন্তরে চরম ভীতি সৃষ্টি করাকে Terrorism বলে। এখন আমরা যদি বাইবেলে বর্ণিত এই ক্যানানাইট জেনোসাইডের উদাহরণকে violence এবং terrorism এর সংজ্ঞায় বিশ্লেষণ করি তবে এটি নিশ্চিত যে এটি একটি চরম ধরণের violent terrorism এবং অমানবিক কাজ। আর যদি সত্যিই প্রভুর নির্দেশে ঘটনাটি এরকমই হয়েছিল বলে আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হয় তখন প্রভু’র (আল্লাহ) প্রতি আমাদের আস্থায় বা Faith-এ সন্দেহ সৃষ্টি হবার অবকাশ আছে। কারণ যেহেতু আল্লাহ নিজে একজন “ন্যায় বিচারক” এবং “অনুগ্রহশীল” এবং “ক্ষমাশীল” যা তিনি নিজে ঘোষণা করেছেন এবং আমরাও স্বচোক্ষে তার অনেক নিদর্শন প্রত্যক্ষ করে থাকি। কাজেই এধরণের অমানবিক জেনোসাইড কাজ করার জন্য প্রভু তার নবীকে নির্দেশ দেবেন বলে আমি বিশ্বাস করি না। কারণ এ ধরণের নির্দেশনা আল্লাহ’র গুণাবলির সাথে সামন্জস্যপূর্ণ নয়। তাছাড়া অতিতের কোন নবী বা রসুলকেও আল্লাহ এ ধরণের কোন নির্দেশনা দিয়েছেন বলে যেমন কোরআনে উল্লেখ নাই তেমনি তৌরাহ বা বাইবেলেও উল্লেখ নাই। তখন অনেক আলোচক নূহ নবী, সামুদ, গোমরা প্রভৃতি জাতীর উদাহরণ টেনে এনেছিল। আমি বলেছিলাম, নূহ নবীর জাতী, সামুদ গোমরা জাতীর সকলেই একসাথে সয়ং আল্লাহর সাথে চ্যালেন্জ ছুঁড়ে দিয়েছিল বলে তাদের এ ধরণের শাস্তি আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন, যেমন আধুনিক ইতালির পমপেই শহরের অধিবাসী। আল্লাহ’র সাথে যে সরাসরি চ্যালেন্জ করবে তার শাস্তি আল্লাহ নিজেই দেবেন এটা তিনি সব কিতাবেই ঘোষণা করেছেন যার উদাহরণ, ফেরআওন। আর যে আল্লাহ’র পথে চালিত অপর মানুষ বা জনগোষ্ঠীর প্রতি যুলুম করবে আল্লাহ সেই শোষিত জনগোস্ঠীর মাধ্যমে যালেমকেই কেবল শাস্তি দেবেন অন্য কাউকে নয়। আর আল্লাহ’র এই নীতি তিনি সুরা বাকারার ২৫১ আয়াতে সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। যে ব্যক্তি যুলুমের অংশীদার নয় তাকে যুলুমকারীর সাথে শাস্তি দেবার কোন উদাহরণ আল্লাহ কোন কিতাবেই দেন নাই, এটা সুষ্পষ্ট কারণ তিনি ন্যায় বিচারক। মক্কার কোরেশরা যখন মুসলিমদের অন্যায়ভাবে মক্কা থেকে বহিস্কার করে তখন আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহের দ্বারা বিতারিত মুসলিমদের দ্বারাই মক্কার কোরেশদের যালেমদেরই কেবল শাস্তি দিয়েছেন, যালেমদের অধিনস্ত কোন পরিবার বা প্রাণী বা বৃক্ষরাজীকে নয়। তার সুস্পষ্ট উদাহরণ মক্কা বিজয়ের পর অপরাধী সকল কোরেশদের রসুল (সাঃ) নিঃশর্ত ক্ষমা করেছিলেন। এর পরও ইহুদী নাসারার আলোচকরা মদিনার বানু কোরাইজা, বানু নাদির প্রভৃতি ইহুদী গোত্রের প্রতি রসুল (সাঃ) এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন শুরু করে। আমি বলেছি, যখন কেউ শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীসঙ্ঘ সনদে স্বাক্ষর করার পর স্বাক্ষরিত অপর পক্ষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে তখন তার প্রতি যে ধরণের আচরণ করা প্রয়োজন বলে আমরা আধুনিক সমাজে মনে করি, ঠিক তাই-ই রসুল (সাঃ) করেছিলেন। তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের মদিনা পরিত্যাগে বাধ্য করেছিলেন কিন্তু ক্যানানাইট ম্যাসাকারের মতো কোন জেনোসাইড ঘটনার পুনরাবৃতি ঘটাননি।
পরিশেষে বলতে চাই আসলে প্রফেসর জেনকিনস এর বইটি মূলত ইসলাম ও কোরআনে বর্ণিত আল্লাহ’র পথে মানবাধিকার ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লড়াই’র সত্যতাকেই স্বীকৃত করেছে, কোন ধরণের পার্থিব রাজনৈতিক স্বার্থে আল্লাহ’র নামে লড়াই এর প্রচলিত সো-কলড হোলী যুদ্ধকে নয়। আমি মনে করি বইটিতে প্রফেসর সাহেব সুস্পষ্টভাবে আল্লাহ’র পথে ন্যায় বিচারের স্বার্থে হোলী যুদ্ধ আর দুনিয়ার পথে রাজনৈতিক স্বার্থে সো-কলড হোলী যুদ্ধের মধ্যে একটি পার্থক্য সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.