নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য অন্বেষক

আরব বেদুঈন

আমি তো শুধু প্রাচারক মাত্র

আরব বেদুঈন › বিস্তারিত পোস্টঃ

হযরত ইব্রাহীম আঃ আসলে সেদিন কাকে কুরবানী করেছিলন ইসমাঈল আঃ না ইসহাক আঃ?

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০৮

সে পুত্র যখন তার সাথে কাজকর্ম করার বয়সে পৌঁছলো তখন (একদিন ইবরাহীম তাঁকে বললো, “হে পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখি তোমাকে আমি যাবেহ করছি,এখন তুমি বল তুমি কি মনে করো?” সে বললো, “হে আব্বাজান! আপনাকে যা হুকুম দেয়া হচ্ছে৬০ তা করে ফেলুন, আপনি আমাকে ইনশাআল্লাহ সবরকারীই পাবেন।”শেষ পর্যন্ত যখন এরা দু’জন আনুগত্যের শির নত করে দিল এবং ইবরাহীম পুত্রকে উপুড় করে শুইয়ে দিল।এবং আমি আওয়াজ দিলাম, “হে ইবরাহীম!
তুমি স্বপ্নকে সত্য করে দেখিয়ে দিয়েছো।আমি সৎকর্মকারীদেরকে এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চিতভাবেই এটি ছিল একটি প্রকাশ্য পরীক্ষা।”একটি বড় কুরবানীর বিনিময়ে আমি এ শিশুটিকে ছাড়িয়ে নিলাম।এবং পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে চিরকালের জন্য তার প্রশংসা রেখে দিলাম।শান্তি বর্ষিত হোক ইবরাহীমের প্রতি।আমি সৎকর্মকারীদেরকে এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি। আর আমি তাঁকে ইসহাকের সুসংবাদ দিলাম, সে ছিল সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে একজন নবী। এবং পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে চিরকালের জন্য তার প্রশংসা রেখে দিলাম।শান্তি বর্ষিত হোক ইবরাহীমের প্রতি।বরকত দিলাম তাঁকে ও ইসহাককে।(আস্ সা-ফফা-ত)


এখানে এসে আমাদের সামনে এ প্রশ্ন দেখা দেয় যে, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর যে পুত্রকে কুরবানী করতে উদ্যত হয়েছিলেন এবং যিনি স্বতস্ফূর্তভাবে নিজেকে এ কুরবানীর জন্য পেশ করে দিয়েছিলেন তিনি কে ছিলেন? সর্বপ্রথম এ প্রশ্নের জবাব আমাদের সামনে আসছে বাইবেল থেকেঃ
“ঈশ্বর আব্রাহামের পরীক্ষা করিলেন। তিনি তাঁহাকে কহিলেন, হে আব্রাহাম .................... তুমি আপন পুত্রকে, তোমার অদ্বিতীয় পুত্রকে, যাহাকে তুমি ভালবাস, সেই ইসহাককে লইয়া মোরিয়া দেশে যাও এবং তথাকার যে এক পর্বতের কথা আমি তোমাকে বলিব, তাহার উপর তাহাকে হোমার্থে বলিদান কর।” (আদিপুস্তক ২২: ১-২)

এ বর্ণনায় একদিকে বলা হচ্ছে, আল্লাহ‌ হযরত ইসহাকের কুরবানী চেয়েছিলেন আবার অন্যদিকে একথা বলা হচ্ছে, তিনি একমাত্র পুত্র ছিলেন। অথচ বাইবেলের নিজেরই অন্যান্য বর্ণনা থেকে চূড়ান্তভাবে প্রমাণ হয় যে, হযরত ইসহাক একমাত্র পুত্র ছিলেন না। তাই বাইবেলের নিম্নোক্ত বিস্তারিত বক্তব্যটি একবার দেখুনঃ

“আব্রাহামের স্ত্রী সারী নিঃসন্তান ছিলেন এবং হাগার নামে তার এক মিস্রীয় দাসী ছিল। তাহাতে সারী আব্রাহামকে কহিলেন দেখ সদাপ্রভু আমাকে সন্ধ্যা করিয়াছেন, বিনয় করি, তুমি আমার দাসীর কাছে গমন কর, কি জানি ইহা দ্বারা আমি পুত্রবতী হইতে পারিব। তখন আব্রাহাম সারীর বাক্যে সম্মত হইলেন। এইরূপে কানান দেশে আব্রাহাম দশ বৎসর বাস করিলে পর আব্রাহামের স্ত্রী সারী আপন দাসী মিস্রীয়া হাগারকে লইয়া আপন স্বামী আব্রাহামের সহিত বিবাহ দিলেন। পরে আব্রাহাম হাগারের কাছে গমন করিলে সে গর্ভবতী হইল।” (আদিপুস্তক ১৬: ১-৪)

“সদাপ্রভূর দূত তাহাকে আরও কহিলেন, দেখ, তোমার গর্ভ হইয়াছে, তুমি পুত্র প্রসব করিবে ও তাহার নাম ইশ্মায়েল [ ঈশ্বর শুনেন ] রাখিবে।” (আদিপুস্তক ১৬: ১১)

“আব্রাহামের ছেয়াশী বৎসর বয়সে হাগার আব্রাহামের নিমিত্তে ইশ্মায়েলকে প্রসব করিল।”(১৬: ১৬)

“আর ঈশ্বর আব্রাহামকে কহিলেন, তুমি তোমার স্ত্রী সারীকে আর সারী বলিয়া ডাকিওনা, তাহার নাম সারা [রানী ] হইল .............. তাহা হইতে এক পুত্রও তোমাকে দিব ; .............. তুমি তাহার নাম ইস্‌হাক [হাস্য] রাখিবে, ............ আগামী বৎসরের এই ঋতুতে সারা তোমার নিমিত্তে যাহাকে প্রসব করিবে, ........... পরে আব্রাহাম আপনপুত্র ইশ্মায়েলকে ও ............... গৃহে যত পুরুষ ছিল, সেই সকলকে লইয়া ঈশ্বরের আজ্ঞানুসারে সেই তাহাদের লিঙ্গাগ্রচর্ম ছেদন করিলেন। আব্রাহামের লিঙ্গাগ্রের ত্বক ছেদন কালে তাঁহার বয়স নিরানব্বই বৎসর। আর তাঁহার পুত্র ইশ্মায়েলের লিঙ্গাগ্রের ত্বক ছেদন কালে তাহার বয়স তের বৎসর।” “(আদি পুস্তক ১৭: ১৫-২৫)

“আব্রাহামের একশত বৎসর বয়সে তাঁহার পুত্র ইসহাকের জন্ম হয়।” (আদি পুস্তক ২১: ৫)

এ থেকে বাইবেলের বর্ণনার বৈপরীত্য পরিষ্কার সামনে এসে যায়। একথা সুস্পষ্ট, ১৪ বছর পর্যন্ত হযরত ইসমাঈল (আ) হযরত ইবরাহীমের (আ) একমাত্র সন্তান ছিলেন। এখন যদি একমাত্র পুত্রের কুরবানী চাওয়া হয়ে থাকে তাহলে তা হযরত ইসহাকের নয় বরং ইসমাঈলের কুরবানী ছিল। কারণ তিনিই ছিলেন একমাত্র সন্তান। আর যদি হযরত ইসহাকের কুরবানী চাওয়া হয়ে থাকে তাহলে আবার একথা বলা ঠিক নয় যে, একমাত্র সন্তানের কুরবানী চাওয়া হয়েছিল।

এরপর আমরা ইসলামী বর্ণনাগুলোর প্রসঙ্গে আসতে পারি। সেখানে দেখি ভীষণ মতবিরোধ। মুফাসসিরগণ সাহাবা ও তাবেঈগণের যে বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন তাতে একটি দলের উক্তি এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি ছিলেন হযরত ইবরাহীমের পুত্র হযরত ইসহাক। এ দলে রয়েছেন মনীষীগণঃ

হযরত উমর (রা.), হযরত আলী (রা.), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.), হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রা.), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), হযরত আবু হুরাইরাহ (রা.), কতাদাহ, ইকরামাহ, হাসান বাসরী, সাঈদ ইবনে জুবাইর, মুজাহিদ, শা’বী, মাসরূক মাকহূল, যুহরী, আতা, মুকাতিল, সুদ্দী, কা’ব আহবার, যায়েদ ইবনে আসলাম এবং আরো অনেকে।

দ্বিতীয় দলটি বলেন, তিনি ছিলেন হযরত ইসমাঈল। এ দলে রয়েছেন নিম্নোক্ত মনীষীগণঃ

হযরত আবু বকর (রা.), হযরত আলী (রা.), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), হযরত আবু হুরাইরাহ (রা.), হযরত মু’আবীয়াহ (রা.) ইকরামাহ, মুজাহিদ, ইউসুফ ইবনে মেহরান, হাসান বাসরী, মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব আল কুরযী, শা’বী, সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব, দ্বাহহাক, মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন (মুহাম্মাদ আল বাকের), রাবী’ ইবনে আনাস, আহমাদ ইবনে হামবল এবং আরো অনেকে।

এ দু’টি তালিকা পর্যলোচনা করলে দেখা যাবে এর মধ্যে অনেকগুলো নাম উভয় তালিকায় পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ একজন মনীষী বিভিন্ন সময় দু’টি ভিন্ন উক্তি করেছেন। যেমন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে ইকরামাহ এ উক্তি উদ্ধৃত করেছেন যে, তিনি ছিলেন হযরত ইবরাহীমের পুত্র হযরত ইসহাক। কিন্তু তাঁরই থেকে আতা ইবনে আবী রাবাহ একথা উদ্ধৃত করেছেনঃ زعمت اليهود انه اسحق وكذبت اليهود (ইহুদীদের দাবী হচ্ছে, তিনি ছিলেন হযরত ইসহাক কিন্তু ইহুদীরা মিথ্যা বলেছে) অনুরূপভাবে হযরত হাসান বাসরী থেকে একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে, তিনি হযরত ইসহাকের কুরবানীর প্রবক্তা ছিলেন কিন্তু আমর ইবনে উবাইদ বলেন, হাসান বাসরীর এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ ছিল না যে, হযরত ইবরাহীমের (আ) যে পুত্রকে যবেহ করার হুকুম হয়েছিল তিনি ছিলেন হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম।

এ বর্ণনার বিভিন্নতার ফলে মুসলিম আলেমণের একটি দল পূর্ণ নিশ্চয়তা সহকারে হযরত ইসহাকের পক্ষে রায় দিয়েছেন। যেমন ইবনে জারীর ও কাযী ঈয়ায। অনেকে চূড়ান্তভাবে এ মত প্রকাশ করেছেন যে, হযরত ইসমাঈলকেই যবেহ করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যেমন ইবনে কাসীর। আবার কেউ কেউ সংশয়াপন্ন। যেমন জালালুদ্দীন সুয়ূতী। কিন্তু গবেষণা ও অনুসন্ধানের দৃষ্টিতে বিচার করলে একথা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় যে, হযরত ইসমাঈলকেই যবেহ করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এর সপক্ষে নিম্নোক্ত যুক্তি রয়েছেঃ

একঃ ওপরে কুরআন মজীদের এ বর্ণনা উদ্ধৃত হয়েছে যে, স্বদেশ থেকে হিজরাত করার সময় হযরত ইবরাহীম (আ) একটি সৎকমশীল পুত্রের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন। এর জবাবে আল্লাহ‌ তাঁর একটি ধৈর্যশীল সন্তানের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। বক্তব্যের অন্তর্নিহিত অর্থ পরিষ্কার একথা জানিয়ে দিচ্ছে যে, এ দোয়া ঠিক তখন করা হয়েছিল যখন তিনি ছিলেন সন্তানহীন। আর যে সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল সেটি ছিল তাঁর প্রথম সন্তান। তারপর কুরআনের বক্তব্যের ধারাবহিক বর্ণনা থেকে একথাও প্রকাশ হয় যে, সে শিশুটিই যখন পিতার সাথে দৌড় ঝাঁপ করার যোগ্য হয়ে গেলো তখন তাকে যবেহ করার ইশারা করা হলো। এখন একথা চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত যে, হযরত ইবরাহীমের (আ) প্রথম সন্তান ছিলেন হযরত ইসমাঈল। হযরত ইসহাক প্রথম সন্তান ছিলেন না কুরআনে হযরত ইবরাহীমের সন্তানের ধারাবাহিকতার বর্ণনা এভাবে দেয়া হয়েছেঃ

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي وَهَبَ لِي عَلَى الْكِبَرِ إِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ (ابراهيم: 39)

দুইঃ কুরআন মজীদে যেখানে হযরত ইসহাকের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে সেখানে তাঁর জন্য “গোলামুন আলীমন” (জ্ঞানবান বালক) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছেঃ

وَبَشَّرُوهُ بِغُلَامٍ عَلِيمٍ (الذاريات: 28) এবং لَا تَوْجَلْ إِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلَامٍ عَلِيمٍ (الحجر: 53)

কিন্তু এখানে যে সন্তানটির সুসংবাদ দেয়া হয়েছে তাঁর জন্য “গোলামুন হালীমুন” (ধৈর্যশীল বালক) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ থেকে প্রমাণিত হয়, দুই পুত্রের দু’টি পৃথক বৈশিষ্ট্য ছিল এবং যবেহ করার হুকুমটি জ্ঞানবান সন্তানের জন্য ছিল না, ছিল ধৈর্যশীল সন্তানের জন্য।

তিনঃ কুরআন মজীদে হযরত ইসহাকের সুসংবাদ দেবার সাথে সাথেই এ সুসংবাদও দেয়া হয়েছিল যে, তাঁর গৃহে ইয়াকুবের মতো পুত্র সন্তান জন্ম নেবেঃ

فَبَشَّرْنَاهَا بِإِسْحَاقَ وَمِنْ وَرَاءِ إِسْحَاقَ يَعْقُوبَ (هود : 71)

এখন একথা পরিষ্কার যে, সন্তান জন্মের খবর দেবার সাথে সাথেই তাঁর ওখানে একটি সুযোগ্য পুত্র সন্তান জন্মেরও খবর দেয়া হয়ে গিয়ে থাকে, তার ব্যাপারে যদি হযরত ইবরাহীমকে এ স্বপ্ন দেখানো হয় যে, তিনি তাকে যবেহ করছেন, তাহলে হযরত ইবরাহীম কখনো একথা বুঝতে পারতেন না যে, তাঁর এ পুত্রকে কুরবানী করে দেবার ইঙ্গিত করা হচ্ছে। আল্লামা ইবনে জারীর এ যুক্তিটির জবাবে বলেন, সম্ভবত এ স্বপ্নটি হযরত ইবরাহীমকে এমন এক সময় দেখানো হয় যখন হযরত ইসহাকের গৃহে হযরত ইয়াকুবের জন্ম হয়ে গেছে। কিন্তু আসলে এটি ঐ যুক্তির একটি অত্যন্ত দুর্বল জবাব। কুরআন মজীদের শব্দ হচ্ছেঃ “যখন ছেলেটি বাপের সাথে দৌড় ঝাঁপ করার যোগ্য হয়ে গেলো” ঠিক এ সময়ই এ স্বপ্নটি দেখানো হয়েছিল। যে ব্যক্তি মুক্ত মনে এ শব্দগুলো পড়বে তার সামনে ভেসে উঠবে আট দশ বছরের একটি ছেলের ছবি। কোন জোয়ান ব্যক্তি যিনি সন্তানের পিতা তাঁর সম্পর্কে একথা বলা হয়েছে বলে কেউ কল্পনাও করতে পারবে না।

চারঃ কুরআনে আল্লাহ‌ সমস্ত কাহিনী বর্ণণা করার পর শেষে বলছেন, “আমি তাঁকে ইসহাকের সুসংবাদ দিয়েছি, সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে একজন নবী।” এ থেকে পরিষ্কার জানা যায়, যে পুত্রকে যবেহ করার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল, এটি সে পুত্র নয়। বরং পূর্বে অন্য কোন পুত্রের সুসংবাদ দেয়া হয়। তারপর যখন সে পিতার সাথে দৌড়াদৌড়ি ও চলাফেরা করার যোগ্যতা অর্জন করে তখনই তাকে যবেহ করার হুকুম হয়। তারপর যখন হযরত ইবরাহীম এ পরীক্ষায় সফলকাম হয়ে যান তখন তাঁকে আর এক সন্তান অর্থাৎ ইসহাক আলাইহিস সালামের জন্মের সুসংবাদ দেয়া হয়। ঘটনার এ বিন্যাস চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দান করে যে, যে পুত্রটিকে যবেহ করার হুকুম হয়েছিল তিনি হযরত ইসহাক ছিলেন না। বরং তাঁর কয়েক বছর আগে সে পুত্রের জন্ম হয়েছিল। আল্লামা ইবনে জারীর এ সুস্পষ্ট যুক্তিটি এ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, প্রথমে কেবলমাত্র হযরত ইসহাকের জন্মের সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল, তারপর যখন তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য কুরবানী করতে প্রস্তুত হয়ে গেলেন তখন তাঁর নবী হওয়ার সুসংবাদ দেয়া হলো কিন্তু এটি তাঁর প্রথম জবাবটি থেকেও দুর্বলতর। সত্যই যদি ব্যাপার এটাই হতো, তাহলে আল্লাহ‌ এভাবে বলতেন নাঃ “আমি তাঁকে ইসহাকের সুসংবাদ দেই, সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে একজন নবী।” বরং তিনি বলতেন, আমি তাকে এ সুসংবাদ দেই যে, তোমার এ পুত্র একজন নবী হবেন সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে।

পাঁচঃ নির্ভরযোগ্য বর্ণনা থেকে প্রমাণিত যে, হযরত ইসমাঈলের বিনিময়ে যে ভেড়াটি যবেহ করা হয়েছিল তার শিং কা’বা ঘরে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইরের (রা.) যামানা পর্যন্ত সংরক্ষিত ছিল। পরবর্তীতে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ যখন হরম শরীফে ইবনে যুবাইরকে (রা.) অবরোধ করে এবং কা’বা ঘর ভেঙে ফেলে তখন এ শিংও নষ্ট হয়ে যায়। ইবনে আব্বাস ও আমের শা’বী উভয়ই এ মর্মে সাক্ষ্য দেন যে, তারা নিজেরা কা’বা ঘরে এ শিং দেখেছিলেন (ইবনে কাসীর), এ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কুরবানীর এ ঘটনা সিরিয়ায় নয়, মক্কা মু’আযযমায় সংঘটিত হয়েছিল এবং হযরত ইসমাঈলের সাথেই ঘটেছিল। তাইতো হযরত ইবরাহীম ও ইসমাঈলের নির্মিত কা’বা ঘরে তার স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষিত রাখা হয়েছিল।

ছয়ঃ শত শত বছর থেকে আরবীয় বর্ণনাসমূহে ও কিংবদন্তীতে একথা সংরক্ষিত ছিল যে, কুরবানীর এ ঘটনা ঘটেছিল মিনায়। আর এটা শুধুমাত্র কিংবদন্তীই ছিল না বরং সে সময় থেকে নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যামানা পর্যন্ত হজ্জের কর্মকাণ্ডের মধ্যে এ কাজটিও নিয়মিতভাবে শামিল হয়ে আসছিল যে, এ মিনা নামক স্থানে যেখানে হযরত ইবরাহীম কুরবানী করেছিলেন প্রত্যেক ব্যক্তি সেখানে গিয়ে পশু কুরবানী করতো। তারপর যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমন হলো তখন তিনিও এ পদ্ধতি অব্যাহত রাখেন। এমন কি আজো হজ্জের সময় যিলহজ্জের দশ তারিখে মিনায় কুরবানী করা হয়। সাড়ে চার হাজার বছরের এ অবিচ্ছিন্ন কার্যক্রম একথার অনস্বীকার্য প্রমাণ পেশ করে যে, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের এ কুরবানীর উত্তরাধিকারী ছিল বনী ইসমাঈল, বনী ইসহাক নয়। হযরত ইসহাকের বংশে এ ধরনের কোন রেওয়াজ কোন দিন জারি থাকেনি, যাতে সমস্ত জাতির একসাথে কুরবানী করতো এবং তাকে হযরত ইবরাহীমের কুরবানীর স্মৃতি বলা হতো।

এগুলো এমন ধরনের যুক্তি যেগুলো সামনে রাখার পর একথা বিস্ময়কর মনে হচ্ছে যে, স্বয়ং উম্মতে মুসলিমার মধ্যে হযরত ইসহাকের আল্লাহর জন্য কুরবানী হবার ধারণা কেমন করে বিস্তার লাভ করলো। ইহুদীরা যদি হযরত ইসমাঈলকে এ মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করে তাদের দাদা হযরত ইসহাকের সাথে একে সংশ্লিষ্ট করার চেষ্টা করে, তাহলে এটি একটি বোধগম্য বিষয় হয় কিন্তু মুসলমানদের একটি বিরাট দল তাদের এ প্রতারণা গ্রহন করলো কেমন করে? এ প্রশ্নের অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী জবাব দিয়েছেন আল্লামা ইবনে কাসীর তাঁর তাফসীর গ্রন্থে। তিনি বলেনঃ

“প্রকৃত ব্যাপার তো আল্লাহই জানেন। তবে বাহ্যত মনে হয়, এ সমস্ত উক্তি (হযরত ইসহাকের আল্লাহর জন্য কুরবানী হবার পক্ষে যেগুলো বলা হয়েছে) কা’ব আহবার থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। তিনি যখন হযরত উমরের (রা.) আমলে মুসলমান হন তখন মাঝে মধ্যে ইহুদী ও খৃস্টানদের প্রাচীন কিতাবসমূহের বাণী তাঁদেরকে পড়ে শুনাতেন এবং হযরত উমর (রা.) সেসব শুনতেন। এ কারণে অন্য লোকেরাও তাঁর কথা শুনতে শুরু করে এবং তিনি যেসব ভালো-মন্দ বর্ণনা করতেন সেগুলো তারা বর্ণনা করতে শুরু করে। অথচ এ উম্মতের জন্য তাঁর এ তথ্য সম্ভারের মধ্য থেকে কোন জিনিসেরই প্রয়োজন ছিল না।”

মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব কুরাযীর একটি রেওয়ায়াত এ প্রশ্নটির ওপর আরো কিছুটা আলোকপাত করে। তিনি বর্ণনা করেন, একবার আমার উপস্থিতিতে হযরত উমর ইবনে আবদুল আযীযের (র) সামনে এ প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে, আল্লাহর জন্য যবেহ করা হয়েছিল কাকে, হযরত ইসহাককে না হযরত ইসমাঈলকে? সে সময় এমন এক ব্যক্তিও মজলিসে হাজির ছিলেন যিনি পূর্বে ইহুদী আলেমদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং পরে সাচ্চা দিলে মুসলমান হয়েছিলেন। তিনি বলেন, “হে আমীরুল মু’মেনীন! আল্লাহর কসম, তিনি ইসমাঈল ছিলেন। ইহুদীরা একথা জানে কিন্তু আরবদের প্রতি হিংসাবশত তারা দাবী করে যে, হযরত ইসহাককে আল্লাহর জন্য যবেহ করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। (ইবনে জারীর) এ দু’টি কথাকে মিলিয়ে দেখলে জানা যায়, আসলে এটা ছিল ইহুদী প্রচারণার প্রভাব এবং মুসলমানদের মধ্যে এ প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল। আর মুসলমানরা যেহেতু তাত্বিক বিষয়ে সবসময় বিদ্বেষ ও স্বার্থপ্রীতি মুক্ত থেকেছে তাই তাদের অনেকেই প্রাচীন সহীফাগুলোর বরাত দিয়ে ঐতিহাসিক বর্ণনার ছদ্মবরণে ইহুদীরা যেসব বর্ণনা পেশ করতো সেগুলোকে নিছক একটি তাত্বিক সত্য মনে করে গ্রহণ করে নেয় এবং একথা চিন্তা করেনি যে, এর মধ্যে তত্বের পরিবর্তে বিদ্বেষ ও স্বার্থপ্রীতি সক্রিয় রয়েছে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


গল্প অনুসারে, হযরত ইব্রাহীম আঃ এর অনেক বয়স হয়েছিল, কিছু একটা সমস্যা ঘটেছিল।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:২৬

আরব বেদুঈন বলেছেন: ইবরাহীম পুত্রকে উপুড় করে শুইয়ে দিল।এবং আমি আওয়াজ দিলাম, “হে ইবরাহীম!
তুমি স্বপ্নকে সত্য করে দেখিয়ে দিয়েছো।আমি সৎকর্মকারীদেরকে এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চিতভাবেই এটি ছিল একটি প্রকাশ্য পরীক্ষা।”একটি বড় কুরবানীর বিনিময়ে আমি এ শিশুটিকে ছাড়িয়ে নিলাম।এবং পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে চিরকালের জন্য তার প্রশংসা রেখে দিলাম।শান্তি বর্ষিত হোক ইবরাহীমের প্রতি।আমি সৎকর্মকারীদেরকে এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি। আর আমি তাঁকে ইসহাকের সুসংবাদ দিলাম, সে ছিল সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে একজন নবী।

ইব্রাহীমের আঃ এর বয়স অনেক হলেও বর্ণনার ধারাবাহিকতাই কিন্তু প্রথম পুত্রের কথা আসে আর এটা সবাই জানে যে প্রথম পুত্র ইসমাঈল আঃ ছিল।
"আর আমি তাঁকে ইসহাকের সুসংবাদ দিলাম, সে ছিল সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে একজন নবী" এখানে দেখুন কুরবানীর পর ইসহাকের সুসংবাদ দিল আল্লাহ । তাহলে এখন প্রশ্ন দাড়াই এর আগে তাহলে ইব্রাহীম কাকে কুরবানী দিল?

২| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২৫

তট রেখা বলেছেন: আরো এক হাদীসে আছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমি দুই জবিহার সন্তান। এতে তিনি তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ যাকে তাঁর পিতামহ আব্দুল মুত্তালিব কুরবানী করতে উদ্যত হয়েছিলেন, অপরজন তার পূর্বপুরুষ ইসমাইল আলায়হিসসাল্লাম এর দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এটা সর্বজন বিদিত যে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ঈসহাক আলায়হিসসাল্লাম এর বংশধর নয়। (হাদীসটির রেফারেন্স এই মুহুর্তে মনে করতে পারছিনা।)

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:১০

আরব বেদুঈন বলেছেন: আমি মনে মনে এই হাদিসটাই খুজছিলাম কিন্তু পাচ্ছিলাম না আর হাদিস টা যে সহিহ তাতে কোন সন্দেহ নেই ধন্যবাদ ভাই :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.