নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন মানুষ

সোনালী ঈগল২৭৪

সোনালী ঈগল২৭৪ › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপমহাদেশের কয়েকজন প্রথিতযশা পরমাণুবিজ্ঞানী

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২১

হোমি জাহাঙ্গীর ভাবা



ড. হোমি জাহাঙ্গীর ভাবা ছিলেন ভারতের একজন প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী। ১৯৪৮ সালে স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু তার সভাপতিত্বে একটি পরমাণু শক্তি কমিশন গঠন করেন। তার নেতৃত্বে এই কমিশন নিরন্তর গবেষণার ভিত্তিতে ভারতে বিশ্বমানের পরমাণু প্রযুক্তি কৌশল তৈরী করেন। আর এই কারণে তাকে ভারতের পরমাণু কর্মসূচির জনক হিসেবে অভিহিত করা হয়। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ৩০ অক্টোবর হোমিও ভাবা একটি দীর্ঘ ঐতিহ্যবাহী এবং রাষ্ট্রীয় কাজে আনুগত্য প্রদর্শনকারী সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হরমুসজি ভাবা, যিনি পেশায় ছিলেন একজন সুপরিচিত আইনজীবী এবং মাতার নাম মেহেরিন। হোমি জাহাঙ্গীর ভাবা কে নিয়ে একটি মজার কথা প্রচলিত আছে। ছোট বেলায় তাঁর ঘুম খুব কম হত। যা নিয়ে তাঁর মা-বাবা খুব চিন্তিত ছিলেন। একজন বড় ডাক্তারের কাছে জাহাঙ্গীর কে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তার ভাল করে পরীক্ষা করে বললেন, আপনাদের চিন্তার কোন কারন নেই। আপনাদের ছেলে জন্মেছে একটি সক্রিয় মস্তিষ্ক নিয়ে। চিকিত্‍সা বিদ্যায় যাকে বলে সুপার এক্টিভ ব্রেইন, যার ভেতর অনবরত চিন্তার স্রোত প্রবাহিত হয়। লন্ডনে পড়াশোনা চলাকালীন তিনি নিউটন স্টুডেন্টশীপ পান। সেখানে তাঁর থিসিস জমা দেওয়ার পর তাকে পিএইচডি উপাধি দেওয়া হয়। সেই সাথে "১৮৫১ এক্সিবিশন স্টুডেন্টশিপ" বৃত্তি দেওয়া হয়। পান 'রাউজ বল ট্রাভেলিং স্টুডেন্টশীপ'। কোপেনহেগেনে থাকা কালীন তিনি ড.ডাব্লিউ হাইটলার এর সহযোগিতায় তিনি "cascade theory of cosmic ray shower" তত্ত্ব আবিষ্কার করেন যা ছিল তাঁর বৈজ্ঞানিক প্রতিভার প্রথম স্ফুরণ।ভারতের একজন প্রসিদ্ধ নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানী, প্রতিষ্ঠাকালীন ব্যবস্থাপক এবং টাটা মৌলিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এর পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন জাহাঙ্গীর। তিনি ভারতের দুটি প্রসিদ্ধ শিক্ষা তথা গবেষণা প্রতিষ্ঠান টাটা মৌলিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান(TIFR) এবং ট্রম্বে এটমিক এনার্জি (AEET) প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাকালীন ব্যবস্থাপক ছিলেন(যা বর্তমানে তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে); উভয় প্রতিষ্ঠানই নিউক্লিয়ার অস্ত্রে ভারতের অগ্রগতিতে ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। যেখানে জাহাঙ্গীর স্বয়ং তত্ত্বাবধায়করূপে ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করতেন।ড.হোমি জাহাঙ্গীর ভাবা যখন পরমাণু বিষয়ে বক্তৃতা দিতেন তখন কেউ ভাবতেও পারত না পরমাণু দ্বারা অকল্যানকর কিছুও করা যায়! ১৯৬৬ সালের ২৪ জানুয়ারি বিমান দুর্ঘটনায় এই মহানবিজ্ঞানীর প্রয়ান ঘটে।

বিক্রম সারাভাই



ড. বিক্রম আম্বালাল সারাভাই ভারতের প্রথিতযশা একজন পরমাণু বিজ্ঞানী। তিনি ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতের বিখ্যাত সারাভাই পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা তৎকালীন সময়ে ভারতে একজন বিখ্যাত ধনী ব্যাক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি ১৯৪৭ সালে কৃতিত্বের সাথে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। একই বৎসর তিনি দেশে ফিরে ভারতের পদার্থ বিজ্ঞান চর্চার সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি () প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে তিনি ইন্ডিয়ান অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ভারতে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও উনাকে ভারতের মহাকাশ গবেষণার অগ্রদূত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো ) প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথিতযশা এই বিজ্ঞানী ১৯৭১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ও পারমাণবিক শক্তি বিভাগের সচিব হবার পরও রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে কোন ধরণের ব্যক্তিগত সুযোগ সুবিধে নেন নি। বাৎসরিক বেতন নিয়েছেন মাত্র এক রুপি। কারণ হিসেবে বলেছেন, “পারিবারিকভাবে আমার যা কিছু অর্জন তার সবই তো এ দেশ থেকেই পেয়েছি। আমাদের মত যারা যথেষ্ট সম্পদশালী তাদের উচিত নিজের দেশের জন্য বিনা বেতনে কাজ করা”।

এম আর শ্রীনিবাসন



বিখ্যাত পরমাণু প্রকৌশলী ড. এম আর শ্রীনিবাসন ১৯৩০ সালে ভারতের বেঙ্গালুরু তে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৪ সালে কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৫৫ সালে ইন্ডিয়ান অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনে যোগদান করেন। ভারতের প্রথম রিসার্চ রিএক্টর অপ্সরা স্থাপনে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। এছাড়াও ভারতের প্রথম নিউক্লিয়ার রিএক্টর স্থাপনের সময় তিনি প্রিন্সিপাল রিএক্টর ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে মাদ্রাজ নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট তৈরির সময় তিনি প্রধান প্রকল্প পরিচালক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৮৭ সালে ইন্ডিয়ান আত্মিক এনার্জি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন এবং একই বছর তার ঐকান্তিক চেষ্টায় নিউক্লিয়ার পাওয়ার কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া গঠিত হয় এবং তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হন। ভারতের বেশ কয়েকটি নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট তার প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় গড়ে উঠেছে।

আব্দুল কাদির খান



ড আব্দুল কাদির খান কে পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি ড এ কিউ খান নামেও পরিচিত। তিনি ১৯৩৬ সালে ভারতের ভুপালে জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে দেশ ভাগের সময় তার পরিবার পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন করেন।তিনি একজন খ্যাতিমান পরমাণু বিজ্ঞানী এবং একজন ধাতুবিদ্যা প্রকৌশলী। ১৯৭৪ সালের ১৮ মে, রাজস্থানের থর মরুভূমির পোখরান টেস্ট রেঞ্জে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায় ভারত। যার সাংকেতিক নাম ছিল 'স্মাইলিং বুদ্ধ'। ভারতের পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হওয়ার খবর পাকিস্তানের কাছে ছিল একইসাথে অস্বস্তিকর ও উদ্বেগজনক। এ কারণে ভারতের পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হওয়ার এক বছর পর থেকে পারমাণবিক বোমা তৈরির দিকে মনোনিবেশ করে পাকিস্তান। পারমাণবিক বোমার অধিকারী হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ভুট্টো সর্বপ্রথম দেশীয় পারমাণবিক বিজ্ঞানী আবদুল কাদির খানের শরণাপন্ন হন। কাদির তখন নেদারল্যান্ডে আলমেলো ইউরেনিয়াম এনরিচমেন্ট ফ্যাসিলিটিতে কাজ করতেন। পাক প্রধানমন্ত্রী তাকে পাকিস্তানে একই ধরনের প্রকল্প চালু করার জন্য অনুরোধ করেন। আবদুল কাদিরকে প্রথমে পাকিস্তান এটমিক এনার্জি কমিশন (পিএইসি) এর সহকারী প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। ১৯৭৬ সালের ৩১ জুলাই, কাহুটায় পাকিস্তানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। এবং পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য পাঁচ বছর সময় বেঁধে দেওয়া হয়। সেই মোতাবেক দ্রুতগতিতে কাজ চালিয়ে যায় পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানীরা। ১৯৮১ সালের ১ মে, আবদুল কাদির খানের অসামান্য অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য রিসার্চ ল্যাবরেটরির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় 'ড. এ কিউ খান রিসার্চ ল্যাবরেটরি'। যাই হোক ব্যাপক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১৯৯৮ সালের ২৮ মে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায় পাকিস্তান যার নেপথ্থ নায়ক হিসেবে আব্দুল কাদির খানকে গণ্য করা হয়। পাকিস্তানে ড এ কিউ খান ব্যাপক জনপ্রিয় হলেও সারা দুনিয়ায় তিনি বিতর্কিত চরিত্র হিসেবেই রয়ে গেছেন। তার বিরুদ্ধে ইউরোপে গবেষণা কালীন সময়ে সেই সকল রিসার্চ ল্যাব থেকে নিউক্লিয়ার প্রযুক্তিগত বিভিন্ন তথ্য পাকিস্তানের বিজ্ঞানীদের কাছে পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপরন্তু উত্তর কোরিয়া , ইরাক সহ বিভিন্ন দেশের বিতর্কিত পরমাণু অস্ত্র তৈরী প্রকল্পে তার সহযোগিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে ।

ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া



ড. ওয়াজেদ মিয়া বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা পরমানু বিজ্ঞানি , গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী। তিনি বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান । তিনি ১৬ফেব্রুয়ারী ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেহপুর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। গ্রামের প্রাইমারি বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে, পীরগঞ্জ থানার হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন শেষে তিনি ১৯৫২ সালে রংপুর জিলা স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে সেখান থেকেই তিনি ডিসটিনকশন সহ প্রথম বিভাগে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৫৮ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় বিজ্ঞান শাখায় প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। ১৯৬১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন । ১৯৬২ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। ১৯৬৭ সালে লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৩ সালের ১ এপ্রিল তিনি তৎকালীন পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনের চাকরিতে যোগদান করেন। ১৯৬৩-’৬৪ শিক্ষা বছরে তিনি লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের ‘ডিপ্লোমা অব ইম্পেরিয়াল কলেজ কোর্স’ কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করেন। ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যের ‘ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলে তাকে ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে ঢাকার আণবিক শক্তি গবেষণা কেন্দ্রে পদস্থ করা হয়।তিনি ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৬৯ সালে ইতালির ট্রিয়েস্টের আন্তর্জাতিক তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র তাকে এসোসিয়েটশিপ প্রদান করে। এই সুবাদে তিনি ১৯৬৯-’৭৩ ও ১৯৮৩ সালে ওই গবেষণা কেন্দ্রে প্রতিবার ৬ মাস ধরে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৬৯ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন শহরের ড্যারেসবেরি নিউক্লিয়ার ল্যাবরেটরিতে পোস্ট ডক্টোরাল গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং এর আগে ও পরের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তার উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য।
১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত তিনি তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির কার্লসরুয়ে শহরের ‘আণবিক গবেষণা কেন্দ্রে’ আণবিক রিঅ্যাক্টর বিজ্ঞানে উচ্চতর প্রশিক্ষণ লাভ করেন।১৯৭৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি ভারতের আণবিক শক্তি কমিশনের দিল্লির ল্যাবরেটরিতে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি অনেক জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান বিষয়ক সম্মেলনে যোগদান করেন। তার অনেক গবেষণামূলক ও বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্র-পত্রিকায় এবং সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ সাত বছর নির্বাসিত জীবন কাটান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের পদার্থ বিজ্ঞান, ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের ছাত্রদের জন্য দুটি গ্রন্থ রচনা করেছেন ড. ওয়াজেদ মিয়া আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে ১৯৯৯ সালে অবসর নেন। অত্যন্ত নিভৃতচারী এবং সজ্জন এই ব্যাক্তি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেও কোনোদিন আলোচনায় আসেননি , তার উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ঢাকার অদূরে সাভারে বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ নেয় যা দেশের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান স্থাপনা , বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন তিনি , ২০০৯ সালের ৯ই মেঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ৬৭ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়।

ড. এম ইন্নাস আলী



ড. এম ইন্নাস আলী একজন বাংলাদেশী পদার্থবিজ্ঞানী ও স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রথম চেয়ারম্যান।
তিনি ১৯৪০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে মাস্টর্সে ১ম শ্রেণীতে ১ম স্থান লাভ করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ প্রকৌশলে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিউক্লিয় পদার্থবিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ইন্নাস আলী ১৯৪০ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৪২ সাল পর্যন্ত সেখানে কর্মরত ছিলেন। ১৯৪২ সালে তিনি কলকাতার গভর্নমেন্ট টেস্ট হাউসের টেকনিক্যাল অফিসার হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত এ পদে ছিলেন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাকে রেডিওতে রিসার্চ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের জ্যেষ্ঠ্য প্রভাষক, রিডার, অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান পরমাণু শক্তি কমিশনের সদস্য ছিলেন। ১৯৬৮ সালে তিনি পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দেন এবং ১৯৭২ সাল পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর উপাচার্য ছিলেন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন এর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তিনি সৌদি আরবের কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটির নিউক্লিয় প্রকৌশলের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশন ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ১৯৯৪ সালে নিযুক্ত হন জাতীয় অধ্যাপক। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানী ইন্নাস আলীর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। ১৯৫৮ ও ১৯৬৪ সালে জাতিসংঘ আয়োজিত ‘পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার’ সম্মেলনে তিনি তত্কালীন পাকিস্তানের নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৪, ’৭৫ ও ’৭৬ সালে তিনি আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সাধারণ সভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তিনি অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্সের (ওআইসি) সদস্য ছিলেন। ১৯৯১ সালে থার্ড ওয়ার্ল্ড একাডেমি অব সায়েন্সের ফেলো নির্বাচিত হন বিজ্ঞানী ইন্নাস আলী। প্রথিতযশা এই বিজ্ঞানী ২০১০ সালে মৃত্যুবরণ করেন।




মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৫৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: পরমানু বিজ্ঞানীরা এই পৃথিবী এবং মানুষসহ পৃথিবীর সকল প্রাণী হত্যার তরিকা বাতলে দিয়ে গেছেন। এদের আমি ঘৃণা করি।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৩১

সোনালী ঈগল২৭৪ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। পরমাণুবিজ্ঞানের অনেক কল্যানকর ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে চিকিৎসা , কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ প্রয়োগ বিপ্লব নিয়ে আসতে পারে। মানুষ ধ্বংস নাকি কল্যাণের কাজে ব্যবহার করবেন তা সম্পূর্ণ তার ইচ্ছাধীন বিষয়। সামগ্রিকভাবে একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয় এর জন্য দায়ী হতে পারেনা।

২| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: এম ওয়াজেদ সাহেবকেই শুধু চিনি।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৩২

সোনালী ঈগল২৭৪ বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব ভাই আপনার মন্তব্যের জন্য। ওয়াজেদ সাহেব ছাড়া বাকি কেউ আমাদের দেশের নন আর এদের নিয়ে খুব বেশি আলোচনাও হয়না তাই হয়তো আপনার কাছে অপরিচিত।

৩| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৫৩

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: ওয়াজেদ মিয়া ও ইন্নাস আলী দুজনই তুখোড় ছাত্র ছিলেন কিন্তু ওনাদের বাস্তব কোন আবিস্কার নেই তাই জাতি ওনাদের বেশিদিন মনে রাখবেনা।

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৩৩

সোনালী ঈগল২৭৪ বলেছেন: বাঙালিরা এমনিতে বিজ্ঞানবিমুখ জাতি , বিজ্ঞানীদের মনে রাখবে না এটাই স্বাভাবিক।

৪| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:০৪

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: অসাধারণ পোস্টটি প্রিয়তে গেলো।
অনেক কিছু জানলাম, উইংস অব ফায়ার বইতে সারাভাই সাহেবের কথা পড়েছি। অনেক ভালো লাগলো লেখাটি পড়ে।
ধন্যবাদ

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৩৪

সোনালী ঈগল২৭৪ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। লেখা ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.