নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...

অর্ক

...

অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে দিনগুলো ফেলে এলাম পথের বাঁকে

২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৪০


(২০১৪ সালে বগুড়ায় তুলেছিলাম ছবিটি।)

করোনা অতিমারির সময়কার ঘটনা। ঢাকার কোথাও রেল লাইনের পাশে কিছু মানুষের ভিড় দেখে কৌতুহলী হয়ে দাঁড়ালাম। চব্বিশ পঁচিশ বছর বয়সী একজন ক্ষীণকায় যুবক চিৎ হয়ে পড়ে আছে। মাথা বেশ খানিকটা কেটে গেছে। অল্প করে রক্ত গড়াচ্ছে তখনও। ঠোঁটের কোণে লালা নিঃসরণের চিকন দাগও দৃশ্যমান। চারপাশে রক্তের দাগ শুকিয়ে কালো হয়ে গেছে। যার পর নেই মুমূর্ষু অবস্থা। সেখানে জানলাম যে, চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে এ অবস্থা। এর বেশি কেউ কিছু জানাতে পারলো না। জ্বলজ্যান্ত একজন যুবক এভাবে দুর্ঘটনাবশত ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে যাবে, ব্যাপারটা হজম করা কঠিন। খুব সম্ভবত কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলো। নিছকই অনুমান অবশ্য। নিশ্চিত হবার সুযোগ ছিলো না। দুর্ঘটনাও হতে পারে। যাই হোক দেখে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিলো, ঘটনা বেশ কিছুক্ষণ আগের। শুকনো ঘাশে রক্তের কালো দাগ। চোখ বন্ধ। কোনওরকমে শ্বাসটাই শুধু চলছে। মাথায় তীব্র আঘাত পেয়েছে। আশু চিকিৎসা দরকার, শুশ্রূষা দরকার। নাহলে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে মৃত্যু অনিবার্য। আমরা সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে তামাসা দেখছি। ঠাঠা রোদের দিন। ভীষণ গরম। খুব সম্ভবত এরকমই এপ্রিল মে’র গরম ছিলো সেটা। যাই হোক সময় গড়াতে লাগলো। মৃত্যুর কাছে চলে যাচ্ছে নিঃসাড় অসহায় আহত যুবক। এ সময় আমি বললাম, ট্রিপল ৯৯৯ এ কল দেয়া উচিত আমাদের। এখন এ মুহূর্তে চিকিৎসা না পেলে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে মৃত্যু হবে। আরও দুয়েকজন সুর মেলালো আমার সাথে। ৯৯৯ এ ফোন করা হলো। দুচার মিনিট পর কাছের মোর থেকে তিনটা পুলিশকে হেলেদুলে আসতে দেখলাম। ওদের একজন ঘটনাস্থলে এসে উল্টো জনতার উপরে ক্ষোভ ঝাড়তে লাগলো। এই সামান্য কারণে ৯৯৯ এ ফোন দেয়া লাগে? আপনারা নিজেরাই তো সিএনজি, রিক্সায় তুলে হাসপাতালে নিতে পারেন। হেনতেন। মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। অনেক কষ্টে নিজেকে সংবরণ করলাম কড়া জবাব দেয়া থেকে। ভদ্রভাবে বুঝিয়ে বললাম যে, খুব মুমূর্ষু অবস্থা ছেলেটির। যে কোনও সময় মারা যেতে পারে। পথে মরে গেলে লাশ নিয়ে বিপদে পড়তে হতে পারে আমাদের। কে এই ঝামেলায় জড়াতে চায় বলেন। আমি তো কিছুতেই রিস্ক নিবো না। তাই আরেকজনকেও উৎসাহ দিতে পারি না। সেজন্যেই পরিস্থিতি বিবেচনা করে পুলিশকে নক দেয়ার সিদ্ধান্ত সবার। এ পর্যায়ে ধরাধরি করে ছেলেটিকে সিএনজিতে তোলা হলো। আর ঘটনা ঠিক এ পর্যন্তই আমার জানা। তারপর ছেলেটির ভাগ্যে সেদিন কি হয়েছিলো জানি না। আমি সিএনজিতে উঠিনি। এখানে এই লেখা পড়ে হয়তো অনেকেরই আমাদেরকে ভীষণরকম নিষ্ঠুর বিবেকহীন অমানুষ বলে মনে হচ্ছে। পশ্চিমের কোনও সভ্য উন্নত দেশের নাগরিক পড়লে হতে পারে কুৎসিত গালি দিয়ে বসবে। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থার বাস্তবতা আমরা কিছুতেই উপেক্ষা করতে পারি না। পথে ছেলেটির মৃত্যু হলে আমাদের বিপদে পড়ার জোর সম্ভাবনা ছিলো। এই পুলিশ প্রশাসনই তখন বলতো, সময় মতো আনতে পারিনি বলে মৃত্যু। পাবলিকের গাফিলতি। তারপর এটার সাক্ষী দাও। সেটার সাক্ষী দাও। ক্যামেরার সামনে দাঁড়াও। দস্তখত করো। টিপসই দাও। বাপের নাম গ্রামের নাম জিলার নাম বলো। এরকম আরও বিভিন্ন হয়রানির মুখে পড়ার সম্ভাবনা শতকরার হিসেবে নব্বই ভাগ। এমনকি এরকম পরিস্থিতি থেকে এরচে’ও ঢেরবেশি বিপদে পড়ে টাকাপয়সা খোয়ানোও বিচিত্র কিছু নয় এ দেশে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দ্বারাও বিভিন্ন হয়রানির সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে পারি না। তাই আমাদের আম জনতাকে সেই নীরবতার জন্য চুল পরিমাণও দোষ দেয়ার সুযোগ নেই। ঘটনাটি ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হয়ে আছে। আমি শুধু আশা করি যে, ছেলেটি সেদিন বেঁচে ফিরেছিলো। ভালোয় ভালোয় সব শেষ হয়েছিলো।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৫৫

মিরোরডডল বলেছেন:





এ পর্যায়ে ধরাধরি করে ছেলেটিকে সিএনজিতে তোলা হলো।

কে নিয়েছিলো?
যাক ফাইন্যালি নেয়া হয়েছে সেটাই কথা।

তাই আমাদের আম জনতাকে আমাদের সে নীরবতার জন্য চুল পরিমাণও দোষ দেয়ার সুযোগ নেই কারও। ওখানে আমরা একদল সাধারণ মানুষ।

নাহ সেটা ঠিক আছে।
৯৯৯ কল করাটাই ওয়াইজ।

আমি আশা করি যে, ছেলেটি সেদিন বেঁচে ফিরেছিলো।

আই উইশ সো।


২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০৫

অর্ক বলেছেন: সাধারণ মানুষই ধরাধরি করে সিএনজিতে তুলেছিলো। দুয়েকজন সিএনজিতেও উঠেছিলো বোধহয়। বাংলাদেশের পুলিশ আরামপ্রিয়। কষ্ট করতে চায় না। একটার হুকুম দেয়ার কথা মনে আছে। তোলেন সবাই ধরাধরি করে তোলেন। পুলিশের উপস্থিতি সবাইকে সাহস দিয়েছিলো এই যা।

ধন্যবাদ।

২| ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০৩

শায়মা বলেছেন: নিশ্চয় বেঁচে আছে ছেলেটা। এটা ভেবেই বাকি জীবনটা কাটাতে হবে। নয়তো তার খবর নেবার আর কোনো উপায় নেই।

২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৭

অর্ক বলেছেন: সম্ভাবনা কম। মাথার আঘাত গুরুতর ছিলো। অনেক সময়ও নষ্ট হয়েছে।

ধন্যবাদ।

৩| ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২

কালো যাদুকর বলেছেন: কেমন আছে ছেলেটি এখন , একথা ভাবি। ছোট ছোট ভাল কাজ ও অনেক প্রভাব ফেলতে পারে। ৯৯৯ এ কল না দেয়া হলে , হয়ত সে মরে যেত। যা হোক , অনেক দিন পর আপনাকে ব্লগে দেখছি। এখন কি নিয়ে ব্যাস্ত।

০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১:২১

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

৪| ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

শেরজা তপন বলেছেন: এইসব কেসে প্রত্যক্ষদর্শী থেকে সাক্ষী হলে পরে যে কি প্যারা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই জানে!
সম্ভাব্য মৃত্যু-পদযাত্রী কাউকে বেশী আবেগ দেখিয়ে কোন উপকার করা মানে ডেকে মহা বিপদ আনা।
পুলিশ ডেকে আনাটাই সবচেয়ে উত্তম কাজ।

০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১:২২

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

৫| ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:১৮

মিরোরডডল বলেছেন:




শেরজা তপন বলেছেন: এইসব কেসে প্রত্যক্ষদর্শী থেকে সাক্ষী হলে পরে যে কি প্যারা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই জানে!

অর্কের মতো একবার আমারও অভিজ্ঞতা হয়েছিলো এখানে।
আমি ফ্রেন্ডদের সাথে গাড়িতে ছিলাম। রাইট টার্ন সিগন্যালে বসা।
সামনে একটা ট্রাক যেটা রাইট ইনডিকেটর দেয়া কিন্তু যাচ্ছে না।
একবার দুইবার আমাদের সিগন্যাল মিস হয়ে গেলো কিন্তু আমরা ডানে যেতে পারছি না ট্রাক যাচ্ছে না বলে।
পরে দেখলাম ড্রাইভার স্টিয়ারিং হাতেই সেন্সলেস হয়ে গেছে সম্ভবত। খুইব ভয়াবহ।
তখন রং লেইন দিয়ে পাস করে গিয়ে পাশেই এক জায়গায় গাড়ি রেখে ইমারজেন্সিতে কল করলাম।
আমার নাম, নাম্বার লোকেশন, সেই গাড়ির Rego দিয়ে তারপর আসলাম।
জানি ইমিডিয়েটলি ওরা টেইককেয়ার করবে।



আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.