নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মানুষ- ই থাকতে চাই - বিদ্যুৎ; কবি, লেখক, কলামিস্ট আর ব্লগিং তো করিই সব সময়।

বিদ্যুৎ

আমি মানুষ-ই থাকতে চাই - বিদ্যুৎ

বিদ্যুৎ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফেরার পথ কি নিশ্চিত বন্ধ?

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৪১



আমার বয়স তেমন বেশি না কিন্তু কখন আয়ুর শেষ বাতি নিভে যাবে তা আমি,আমারা কেউ বলতে পারিনা। প্রাত প্রদীপের এই নিভ নিভ জীবনে একটি সুখ,দুঃখ, হাসি,কান্না, জড়িত শৈশব আমারও ছিল অন্য সাবার মত। দুঃখ অবশ্য কি আমি তেমন ভাবে টের পাইনি। পরিবারের সবার যে ছোট তাঁকে তো শুধু সুখ দিয়েই বিধাতা পাঠিয়ে থাকেন এই ধরাধামে! ছোটবেলায় দেখতাম বাড়িতে প্রায় ডাক্তার আসতো। আগে ডাক্তার দেখে ভীষণ ভয় পেতাম। ডাক্তার তাঁর সিরিঞ্জ পরিষ্কার করার সময় আমার দিকে সেই ইনজেকশনের সিরিঞ্জ দিয়ে পানি পিস্কারির মত ছুড়ে দিতেন আর তাতেই চিৎকার চেঁচামেচি করতাম। ডাক্তার বাবু চলে যাওয়ার সময় এক ধরনের বড়ি ঔষধ দিয়ে যেতেন। সেই বড়ি ঔষধের নাম মনে পরছেনা কিন্তু চুষে খেতে মিষ্টি লাগত। তবে হ্যাঁ ডাক্তার বাবুর হাত বেশ পাকা ছিল। অত্র অঞ্চলের মধ্যে এই ডাক্তার সাহেব ছিলেন এক ভরসা চিকিৎসার জন্য। ও হ্যাঁ, আমাদের বাড়িতে বেশি বেশি ডাক্তার আসতেন কেন তা তো বলা হয়নি। আমার বাবা এক কঠিন অজানা রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। পরপর দু’বার অপারেশন করেও তাঁকে না ফেরার দেশ থেকে ফিরানো যায়নি। কে জানে অপারেশন করাটাই কিনা তাঁর জীবন ফিতা কাঁচি দিয়ে ঘ্যাচাং করে কেটে ছোট করে ফেলেছিল! যাইহোক সবই নিয়তি মেনে নিতে হয়েছে অমোঘ নিয়মের মত। আমি সবার ছোট তাই সবাই আমাকে ভালবাসত একটু বেশি। আমার ছোট খালার কোন ছেলে সন্তান ছিল না। তিনি আমাকে নাকি পালক নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমার মা দেননি তাঁকে। ছোট খালা শহরে থাকতেন, যখন তিনি আমাদের বাড়িতে আসতেন আমার জন্য নতুন জামা কাপড় খেলনা আরও অনেক কিছু নিয়ে আসতেন। আমাদের বাড়িতে আগে একজন মহিলা কাজ করতেন। বাবা অসুস্থ তাই মা প্রায় তাঁকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। ডাক্তার দেখানো, তাঁর যত্ন আত্তি সব কিছুই মা নিজের হাতে করতেন। একবার আমার বাবা অনেক দিন হাসপাতালে ছিলের অপারেশনের কারণে। সাথে মাকেও থাকতে হয়েছে অনেকদিন। এদিকে আমি তো অনেক ছোট ছিলাম সারাক্ষণ কান্নাকাটি করতাম। আমাদের বাড়ির সেই কাজের মহিলা অবশ্য আমার বুঝ হওয়ার পর থেকে তাঁকে আমি মামী বলে ডাকতাম। মূলত এই মামী আমাকে দেখাশোনা করতেন। ছোট বেলায় আমি নাকি ওই মামীর দুধ পান করেছি যত দিন আমার মা হাসপাতালে ছিলেন। আমার ওই মামী একই গ্রামে অন্য পাড়ায় বাস করতেন। তাঁর ছিল বেশ অনেকগুলো ছেলেমেয়ে। তাঁর একজন ছেলে সেই সময় অনেক বড় মাস্তান ছিলেন। মোটামুটি সবাই তাঁকে ভয় পাইত। সেই মাস্তান ভাই আমাকে তাঁর কাঁধে করে তাঁর শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যেত, আমাকে গাছ থেকে পাকা খেজুর পেরে দিত, আরও অনেক কিছু দিত যাতে আমি কান্নাকাটি না করি। আমাকে খুব আদর করত, আদর করে সে আমাকে বনুবনু বলে ডাকত। সে মাস্তান,গুন্ডা বা ডাকাত ছিল কিন্তু যত বড় হচ্ছিলাম তাতে বুঝতে পারছিলাম যে প্রতিটা মানুষের মধ্যে একটি ভাল দিক আছে, আছে স্নেহ, মায়া ও মমত্ববোধ।
আমি ধীরে ধীরে বড় হচ্ছি লেখাপড়া, খেলাধুলা সবই করছি। এভাবেই চলছে আমার বেড়ে ওঠা। যখন আমার মোটামুটি বুঝ হয়েছে আমি একদিন তাঁকে অর্থাৎ সেই মাস্তান ভাইকে বলেছিলাম ভাই সবাই তোমাকে ভয় পাই ঠিক কিন্তু দিনে দিনে তোমার শত্রুও অনেক বাড়ছে। তুমি কি ওই মাস্তানি, গুণ্ডামি, ডাকাতি ওই পথ ছেড়ে ভাল হতে পারনা? সে আমাকে বলেছিল ভাই বনুবনু আমি চাই কিন্তু চাইলেও আর ওই পথ থেকে ফিরে আসা সম্ভব হবে কিনা জানিনা। ওই পথ থেকে ফিরে আসা মানে নাকি নির্ঘাত মৃত্যু এই কথাও সে আমাকে বলেছিল। আমি এভাবেই একটি কথা বলেছিলাম ভাই মৃত্যু একদিন আসবেই তাই ভাল পথে এসে মরলে তার প্রতিদান হবে নিশ্চয় আনন্দের ও চির সুখের। তবে সে আমাকে এও বলেছিল আমি ভাল হতে চায় কিন্তু না সমাজ আমকে সহজ ভাবে নিবে না আমার সহকর্মীরা। তুই আমার আদরের দুধ ভাই আমি তোর কথা মনে রাখব রে বনুবনু। সত্যি কথা বলতে কি তারপর থেকেই ওই ভাইয়ের পরিবর্তন চোখে পড়ার মত লক্ষণীয়। আমার ধারণা সে সঠিক পথ খুজতে ছিল।

বেশ কিছু দিন পর একদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে জেগে দেখি আশপাশ এমন কি সারা গ্রাম স্তব্দ,শুনশান নিরবতা তবে ভিতরে ভিতরে কানাকানি একি হল একি হল! তারপর জানতে পারলাম সেই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করে খোলা মাঠে ফেলে রেখেছে। তাঁর নিথর দেহ দেখতে গিয়েছিলাম। সেই প্রথম কোন নিহত লাশ দেখেছিলাম। আমি রীতিমত শিউরে উঠেছিলাম। আতঙ্কে বুকে সেই প্রথম আমার বুক ধুরুধুরু করছিল। টের পেয়েছিলাম হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন কেমন হতে পারে। তারপর থেকে আর কোন দিন অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় এমন দেহ দেখতে যায়নি। আমার ধারণা সে যে স্বাভাবিক পথে ফিরে আসতে চেয়েছিল বা চেষ্টা করছিল সেটাই হয়ত তাঁর অপমৃত্যুর কারণ। মানি তাঁর ভুল ছিল কিন্ত সে তো শুদ্ধ হতে চেয়েছিল। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় কেন আমি তাঁকে তাঁর গতিপথ বদলাতে বলেছিলাম।
লেখক হুমায়ূন আহমেদের একটি নাটক আছে বেশ পুরনো দিনের যার নাম হল “নক্ষত্রের রাত” সেখানে একটা চরিত্র ছিল দুলাভাই, যাতে অভিনেতা আব্দুল কাদের অভিনয় করেছিলেন। সে অনেকটা অস্থির প্রকৃতির ছিল। ভাল চাকুরী করতেন আর সাথে মোটা অঙ্কের উপুরি কামায় করতেন। শ্বশুর বাড়ি আসতেন যে তাঁকে সালাম করত তাঁকেই মানি ব্যাগ থেকে চকচকা টাকা বের করে দিতেন। কি কাজের বুয়া, গেটের দারোয়ান অথবা শালা-শালি । ঘটনা চক্রে তাঁর জীবন বদলে যায়। সে উপুরি কামায় হিসেবে ঘুষ খাওয়া বন্ধ করে দেন। সারা জীবন ঘুষ খেয়েছেন তাঁর চাকুরী যায়নি কিন্তু ঘুষ খাওয়া বন্ধ করার কারণেই তিনি চাকুরী চ্যুত হন। তখন আফছস করে বলেছিলেন ঘুষ খেয়ে বড় অপরাধ করে চাকুরী গেলোনা আর আজ ঘুষ না খেয়ে নিরপরাধ হয়েও আমার চাকুরী গেলো। হায়রে কপাল!

আজকে আবার এমন একটি ঘটনা বিবেক নাড়া দিল ঝঙ্কার দিয়ে। ঢাকা মিরপুরে বাবুল হত্যাকাণ্ড। কিছু পুলিশ সদস্য বাবুলের গায়ে কেরোসিন সমেত আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারল। পুলিশের অত্যাচার বহুগুণ বেড়ে গেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু দেশ যে শুধু মৃত্যুপুরী তাই শুধু নয় এ যেন এক জীবন্ত মানুষ পোড়ানর মহাশ্মশান। বাবুলের অপরাধ হয়ত অনেক কিন্তু প্রধানতম অপরাধ সে মরণঘাতী মাদক ব্যবসা ছেড়ে ভাল মানুষ হয়ে সমাজে বেঁচে থাকতে চেয়েছিল। মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ায় নাকি তার এই নির্মম মৃত্যু। আগে মাদক কারবারের সাথে জড়িত ছিল দিন,মাস বছর জুড়ে পুলিশকে চাঁদা দিত। কিন্তু এখন সেই ব্যবসা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছিল তাই পুলিশকে চাঁদা দেওয়া বন্ধ। এতে পুলিশের যে উপুরি কামায় বন্ধ তাই খেপে গিয়ে বাবুলের জন্য রচনা করলেন জ্যান্ত সতকারের মহাশ্মশান উপাখ্যান।
এতে কি বার্তা যাচ্ছে অপরাধীদের কাছে। যারা ক্ষুধা,দারিদ্র,লাঞ্ছনা,বঞ্চনা এই সমাজ তথা রাষ্ট্রের অবহেলার কারণে অপরাধ জগতে পদার্পণ করেছিল, তারা অনেকেই হয়ত মাস্তান ভাই, দুলাভাই এবং বাবুলের মত স্বাভাবিক পথে ফিরে আসতে চেয়েছিল কিন্তু এই সমাজ, রাষ্ট্র সেই সুযোগ কি দিল তাঁদের? অপরাধ জগত থেকে কি কেউ আর বেড়িয়ে আসবে? সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা কি এর জন্য দায়ী নয়?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.