নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফরিদুর রহমান

ফরিদুর রহমান

ফরিদুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্তত পায়ে হেঁটে চলার পথটুকু দিন

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২৮

বসবাস যোগ্যতার বিবেচনায় আমাদের রাজধানী ঢাকা আরো একবার বিশ্বের দ্বিতীয় নিকৃষ্ট শহর হিসেবে তালিকায় স্থান পেয়েছে। পাঁচটি মহাদেশের ১৪০টি দেশের মধ্যে নিচের দিকে দ্বিতীয়। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) পরিচালিত এই জরিপের ফলাফলে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের চেয়ে নাগরিক নিরাপত্তাসহ দু-একটি ক্ষেত্রে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় বসবাসের জন্য ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে অযোগ্য শহরের 'গৌরব' অর্জন করতে পারেনি। একটি শহরের নাগরিক সুযোগ-সুবিধার যেসব মানদণ্ড বিচার-বিশ্লেষণ করে এই তালিকাটি প্রস্তুত করা হয়েছে, তার অন্যতম একটি সূচক নগরীর অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থা। শুধু এই একটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে কোনো জরিপ পরিচালিত হলে ঢাকা বিশ্বের নিকৃষ্টতম শহর হিসেবে চিহ্নিত হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।



এই শহরে বাস, ট্রাম বা সাবওয়ের মতো ব্যবহারযোগ্য গণপরিবহনব্যবস্থা দীর্ঘদিনেও গড়ে ওঠেনি। ট্যাক্সিক্যাব নামক বস্তুটি বিলুপ্তপ্রায় বাহনের মর্যাদা লাভ করেছে। আর তুলনামূলকভাবে কম ব্যয়বহুল সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালকদের স্বেচ্ছাচারিতা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমনই এক দুর্বিষহ অবস্থায় হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছার মতো নিখরচায় চলাচলের একমাত্র বিকল্পটিও এখন আর সহজসাধ্য নয়।



রাজধানীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কের উদাহরণ দিলে সহজেই বোঝা যাবে, পথচারীদের চলাচলের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ফুটপাত বা পায়ে চলার পথ কিভাবে বেদখল, ব্যবহারের অনুপযুক্ত এবং অনেক স্থানে সম্পূর্ণ উধাও হয়ে গেছে। বাংলামোটর থেকে মৌচাক পর্যন্ত সড়কটি রাজধানীর পূর্ব-পশ্চিম যোগাযোগের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও এর সাম্প্রতিক অবস্থা দেখে মনে হতে পারে, নগরীর গোড়াপত্তনের যুগে জনসাধারণের চলাচলের জন্য নতুন করে এখানে সড়ক নির্মাণের কাজ সবে শুরু হয়েছে। এই সড়কের উভয়পাশে রয়েছে একটি দৈনিক পত্রিকা, একটি টেলিভিশন চ্যানেল, একটি মেডিক্যাল কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বেশ কয়েকটি ছোট-বড় হাসপাতাল ও ক্লিনিক, ডজনখানেক ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ শাখা এবং পার্টি সেন্টার, চায়নিজ রেস্তোরাঁ ও শপিং মলসহ অসংখ্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ভবন ও স্থাপনা। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের মধ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কার্যালয়, মগবাজার টেলিফোন ভবন এবং রমনার উপ-পুলিশ কমিশনারের দপ্তরও এই সড়কের ওপর অবস্থিত হলেও এখন পায়ে হেঁটে চলার মতো কোনো ফুটপাতের অস্তিত্ব এই দীর্ঘ পথের কোথাও নেই বললেই চলে।



বাংলামোটর থেকে মগবাজার মোড় পর্যন্ত পুরো রাস্তার দুই পাশের ফুটপাতগুলো প্রধানত গাড়ি মেরামতের অস্থায়ী গ্যারেজে রূপান্তরিত হয়েছে। প্রতিটি মোটর পার্টসের দোকানের সামনে থেকে মূল রাস্তার অনেকটাজুড়েই চলে গাড়ি মেরামতের কাজ। বেশ কিছু হোটেল-রেস্তোরাঁর পরোটা-কাবাব-তন্দুর রুটি বা জিলাপি ভাজার চুলা নিজেদের সীমানা ছাড়িয়ে এগিয়ে এসে পুরো ফুটপাতই দখল করে নিয়েছে। সড়কের বাকি অংশে ফুচকা-চটপটি, বনরুটি-কলা-চায়ের অস্থায়ী টং দোকানিরা স্থায়ী অধিকার প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে।



সবচেয়ে অসহনীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামনে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এখানে অস্থায়ী বাজার জমে ওঠে। ফলে মাছ ও মুরগির বর্জ্যসহ যাবতীয় আবর্জনা জমে সমাজসেবার দেয়াল ঘেঁষে ফুটপাতজুড়ে তৈরি হয়েছে আবর্জনার পাহাড়। ঠিক তার পাশেই দুর্গন্ধ ছড়ানো উপচেপড়া আবর্জনা আর নোংরা পচা-গলা যাবতীয় ময়লার আঁধার সিটি করপোরেশনের ডাস্টবিন। এর ফলে পথচারীকে হয় দেয়াল ঘেঁষে জমে থাকা আবর্জনার পাহাড়ের ওপর দিয়ে হাঁটতে হয় অথবা ছড়িয়ে থাকা পুঁতিগন্ধময় আবর্জনা মাড়িয়ে মূল সড়ক ধরে চলতে হয়। প্রায় একই অবস্থা উপ-পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় থেকে মৌচাক পর্যন্ত। এই পথে ফুটপাতের অস্তিত্বহীন জলকাদার অংশ বাদ দিলে পুরোটাই চলে গেছে ভাঙাড়িওয়ালাদের দখলে। রমনা জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মহোদয় তাঁর কার্যালয় থেকে বেরিয়ে লেফট টার্ন করে মৌচাকের কাছাকাছি আবর্জনার বিপুল সমাবেশ পর্যন্ত একবার নিজের চোখে দেখে আসতে পারেন।



মোটর পার্টসের দোকান এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে যতটুকু জানা গেছে, তাতে এ কথা স্পষ্ট, তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ফুটপাত থেকে কখনোই তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। একাধিক দোকান মালিক বেশ জোর দিয়েই বলেছেন, তাঁরা 'অথরিটিকে' নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে থাকেন। অতএব তাঁদের উৎখাত করে কার বাপের সাধ্য!



শহরের রাস্তাঘাটের বেহাল দশার পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য অনেক জায়গায় 'উন্নয়ন কাজ চলিতেছে, সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত' জাতীয় একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের কর্তব্য শেষ করে। কিন্তু কোনো সভ্য সমাজে বিকল্প ব্যবস্থা না করে জনগণকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে ফেলে দিয়ে এমন উন্নয়ন কাজের কথা ভাবা যায় কি? বছরের পর বছর ভাঙাগড়ার কাজ চলতেই থাকে এবং ৪০ বছর ধরে প্রতিবছরই নানা প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বিভিন্ন সংস্থা তাদের 'উন্নয়ন'কাজের সূত্রে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করে চলেছে। কিছুদিন আগেও যে মগবাজার মোড়ে পথচারীকে রাস্তা পারাপারের জন্য ট্রাফিক পুলিশ দড়ি ধরে লাঠি হাতে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের শিক্ষা দিচ্ছিলেন, এখন সেই ফুটওভার ব্রিজ ভেঙে উড়াল সড়কের কাজ চলছে। ফলে উন্নয়ন কাজের লাল মাটি বৃষ্টির পানিতে গলে পুরো এলাকায় এক দুর্বিষহ অবস্থা সৃষ্টি করেছে। পথচারীরা এই থিকথিকে কাদা মাড়িয়ে চারদিক থেকে ধেয়ে আসা নানা ধরনের যানবাহনের ফাঁকে প্রাণ হাতে করে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে রাস্তা পার হচ্ছেন।



সবচেয়ে অবাক ব্যাপার, মহানগরীর কেন্দ্রে ব্যস্ততম একটি সড়কের এই অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কথা জানার পরও সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেনি কোনো কর্তৃপক্ষ। একটি বেসরকারি টেলিভিশনে যোগাযোগমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছেন, ঢাকা মহানগরীর রাস্তাঘাটের সংস্কার তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। এদিকে কয়েক বছর ধরে ঢাকা মহানগরীর উত্তর-দক্ষিণ কোনো প্রান্তেই কোনো নির্বাচিত মেয়র নেই। সরকার যাঁদের নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে, তাঁরা যথার্থ সরকারি কর্মকর্তার মতোই রুটিনওয়ার্ক করেন, জনগণের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের কোনো দায় তাঁদের নেই এবং কেউ তা আশাও করে না। কিন্তু প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় পায়ে হেঁটে চলা অসংখ্য কর্মক্লান্ত নারী-পুরুষের কণ্ঠে যে ক্ষোভ ঝরে পড়ে, তাতে কান দেওয়ার মতো কোনো 'অথরিটি' না থাকলে পুরো কর্তৃপক্ষের ভবিষ্যৎ সম্পর্কেই শঙ্কা জাগে।



l/2014/09/03/124249#sthash.Sx5GOOHv.dpuf

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:০৭

আমিনুর রহমান বলেছেন:





অন্তত পায়ে হেঁটে চলার পথটুকু দিন


চমৎকার লিখেছেন। কালের কন্ঠে সম্ভবত এই লেখাটি ছাপা হয়েছিলো।

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১৩

ফরিদুর রহমান বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। লেখাটি গত বুধবার কালের কণ্ঠে ছাপা হয়েছিল।

২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:৪৬

আমি বাংলাদেশের বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই আপনার সাথে আমিও একমত। এ সম্পকর্ীয় আমার লেখা দেখতে পারেন। 
১.http://m.somewhereinblog.net/mobile/blog/vabnay/29945913
২. Click This Link
৩.http://m.somewhereinblog.net/mobile/blog/vabnay/29975099
৪.http://m.somewhereinblog.net/mobile/blog/vabnay/29973792

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১৬

ফরিদুর রহমান বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ। আপনার লেখাগুলো অবশ্যই পড়ে দেখবো। তবে প্রশ্ন হলো, আমরা কি শুধু লিখেই যাবো? ফলাফল কী?

৩| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:২৫

চা-ওয়ালা বলেছেন: ঢাকাকে বসবাসের উপযুক্ত করতে হলে, ঢাকার জনসংখ্যার চাপ কমাতে হবে।নগরায়ন এককেন্দ্রিক না করে, বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।
মফঃস্বল শহরগুলোতে নাগরিক সুবিধা বাড়াতে হবে।।

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১৭

ফরিদুর রহমান বলেছেন: আপনার সাথে একমত। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

৪| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৩

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: শেয়ার করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ----- এখন ঢাকা বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে উঠেছে ------ গার্মেন্টসগুলো ঢাকা হতে সরানো উচিত

৫| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৫৯

ঝর্না রহমান বলেছেন: এসব লিখে লাভ হবে না। কারণ ‌কর্তৃপক্ষের কর্ণকুহরে তুলো আর চোখে পড়েছে ধুলো। তারা কিছু শোনেনও না দেখেনও না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.