নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“আমি আপনার কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করতেই পারি কিন্তু আপনার কথা বলার স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়োজনে জীবনও উৎসর্গ করতে পারি”

রুপম হাছান

‘‘আত্মত্যাগ সব সময় ভালো কিন্তু মাঝে মাঝে বিরক্তিকরও বটে...’’

রুপম হাছান › বিস্তারিত পোস্টঃ

-বাড়ি এবং ১০১ টাকার বাড়াবাড়ি!-

১৫ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৪০



.....লেখক মোস্তফা কামাল থেকে উদ্ধৃত।

আর কত? গেল তো দেশসেরা আইনবিদ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের ১০১ টাকার বাড়িও। এর আগে গেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার বাড়ি গেছে আরও আগেই। ১০১ টাকার এ বাড়াবাড়ির একটা শেষ কি হতে পারে না? রাজনৈতিক কারণে কিছু জানাজানি হলেও এ রকম আরও বহু বাড়াবাড়ি রয়েছে। এ ধরনের বাড়াবাড়ির ফয়সালা বা ফুলস্টপ জরুরি। নয়তো সময়-সুযোগে এ হিল্লাহীন নাপাক কায়কারবার চলতেই থাকবে। সরকার কেন, মন্ত্রিত্বের দাপটে লতিফ সিদ্দিকীরা তো দেড়শ কোটি টাকার সরকারি জমি স্ত্রীর সংগঠনকে মাত্র ১ কোটি ১ লাখ টাকায় ইজারা দেবেনই। আর দুস্থ, এতিম, অসহায়ের নামে সহায়-সম্পত্তি হাতানো হতেই থাকবে। সেই সঙ্গে হিন্দু আর বিহারি সম্পদ-সম্পত্তি হাতানোই বা থামবে কেন?

ক্ষমতা-সামর্থ্য থাকার পরও যারা এ ধরনের বাড়ি বা জমিন নেন বরাবরই তাদের লজ্জায় প্রিজারভেটিভ মাখানো। আর চরিত্র ফরমালিনে ভরা। যে কারণে যার বাড়ি যায় তিনিই শুধু ১০১ টাকার জন্য কাঁদেন। কেউ আশপাশে ঘেঁষতে চান না। ১০১ টাকার কাণ্ডটি মন থেকে মেনে নেওয়ার সমর্থক কম। যদিও নেওয়া-দেওয়ার সময় গুণমুগ্ধরা আহা বেশ বেশ কোরাসই করেন। আহা-উহুতে চারদিকে প্রশংসার ফল্গুধারার নহর বহান। কেউ ভুলেও বলেন না, কাজটা ভালো নয়। আবার ক্ষমতা মতো ছিনিয়ে নেওয়ার পরও কি চমৎকারই দেখা যায়। বলা হয়, কাজের কাজ। দশ কাজের এক কাজ। অথচ, কাদম্ব বা কাদম্বিনী কাঁদতে একরত্তি লজ্জাও পান না। এরাই জাতিকে শির উঁচা করার সবক দেন।

বাড়ি দেওয়া-নেওয়ায় আইনের দুর্গতিও বড় বেদনাদায়ক। আইনে দিতে বাধা নেই। বাধা নেই ছিনিয়ে নিতেও। এরপরও তারা থামেন না। এ বাড়াবাড়ি ক্ষান্ত হয় না। গজব নামার পরও এ আজব কর্মটি থামে না। খালেদা-মওদুদ বা হাসিনা-রেহানা কারোই বাড়ি পেতে সমস্যা হয়নি। আবার খেদাতেও বাধা পড়েনি। মাত্র দেড় দশকে ঘটল এ রাজকীয় খেদানো যজ্ঞগুলো। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ‘গণভবন’ কিনেছিলেন মাত্র ১০১ টাকায়। আর শেখ রেহানাকে বাড়ি দেওয়া হয় ধানমন্ডি ছয় নম্বরে। এ উদ্দেশ্যে একটি আইনও পাস করানো হয়। আইনটির নাম জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের নিরাপত্তা আইন। আর আইনের উদ্দেশ্যের জায়গায় বলা হয়— দেশের স্বাধীনতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ও আত্মত্যাগের বিনিময়। বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগের বিনিময় কোথায় নিয়ে ঠেকানো হয়েছিল দল বা সরকার থেকে কেউ চুপ্যিচুপ্যিও বলেননি কথাটি। বরং এই ধনে যেন নিজেরাও ধান্য হয়েছেন। এর স্বপক্ষে তখনকার যুক্তি ও কথামালা ভুলে যাওয়ার মতো নয়।

যখন যাকে বাড়ি দেওয়া হয় এর স্বপক্ষে আবেগঘন যুক্তি ও বক্তব্যের ছড়াছড়ি থাকে অন্তহীন। আবার উচ্ছেদের সময় দেওয়া যুক্তি-বক্তব্যও সেরের ওপর সোয়া সেরের মতো। ২০০১-এর ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পর বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার গদিনসীন হয়েই ১০১ টাকায় কেনা ‘গণভবন’ ছাড়তে বাধ্য করে শেখ হাসিনাকে। ১৬ আগস্টের মতো স্পর্শকাতর তারিখে ‘গণভবনের দখল ছাড়েন তিনি। এরপক্ষেও যুক্তির অভাব হয়নি। বলা হয়েছে, খাসকর্ম। শেখ হাসিনা যে ৩২ নম্বরের পৈতৃক বাড়িটি ‘বঙ্গবন্ধু জাদুঘর’কে দান করেছেন তা ওই সময়ের যুক্তির কাছে পানসে হয়ে যায়। বাতিল হয়ে যায় শেখ রেহানাকে দেওয়া ধানমন্ডির বাড়িও। পরে ওই বাড়িতেই হয় ধানমন্ডি থানা। তা সাড়ম্বরে উদ্বোধন করেন তখনকার ভূমিধসজয়ী নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ব্যাপারস্যাপারই অন্যরকম।

বাড়াবাড়ির ঘটনাবলি মোটাদাগে কাছাকাছিই। বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানে বাড়ি পাওয়া ১০১ টাকারই ঘটনা। দেড় একর আয়তনের একটি বাড়ির দাম মাত্র ১০১ টাকা। যা মাশাল্লাহ, তা-ই পরে আসতাগফিরুল্লাহ-নাউজুবিল্লাহ। এ ছাড়া ঢাকা সেনানিবাসে শহীদ মঈনুল সড়কে ১৯৮১ সালের ৮ জুলাই আট বিঘা আয়তনের আরেকটি বাড়িও দেওয়া হয় তাকে। বাড়িটি বেগম জিয়ার জন্য ১৯৭২ থেকেই স্মৃতিময়। সেনাবাহিনীর উপপ্রধান নিযুক্ত হলে ‘ব্রিগেডিয়ার জিয়া’ এতে সপরিবারে ওঠেন। একাশির ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়া নির্মমভাবে নিহত হওয়ার পর সরকার বাড়িটি বেগম জিয়াকে ১০১ টাকার বিনিময়ে চিরদিনের জন্য এই বরাদ্দ দেয়। এর পেছনে বিশেষ ভূমিকা ছিল আজকের সরকারের পার্টনার জিয়ার খাসপছন্দের তৎকালীন সেনাপ্রধান এরশাদের। তিনি তখনো বিএনপি ও জিয়া পরিবারের পরম স্বজন। এর স্বপক্ষে ছিল জিয়াউর রহমানের সাদামাটা জীবন, খালেদা জিয়ার হঠাৎ বৈধব্য, বাবার লাশের শিয়রে শিশু তারেক-কোকোর কান্নাসহ আবেগঘন কত সেশন। চারদিকে আহ, বাহ, উহ। আর এরশাদের উদারতার প্রশংসা প্রচার। তাতে কী? দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা পেয়ে ২০১০-এর ১৩ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে ছাড়ে শেখ হাসিনার সরকার। নাতনির হাস্যোজ্জ্বল ছবির ফ্রেম হাতে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বিদায় নেন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এর পক্ষেও সমর্থন ব্যাপক। ন্যায্য কাজের প্রশংসা। স্বয়ং এরশাদও বলেছেন উচিত কাজ। অথচ বাড়িটি দেওয়ার সময় কানে কানেও কেউ বলেননি, বাড়াবাড়ি একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে। বরং বলা হয়েছিল, মঈনুল রোডের স্মৃতিময় বাড়িতে খালেদা জিয়া তার সন্তানদের নিয়ে থাকবেন। আর গুলশানেরটি ভাড়া দিয়ে তিনি সংসার খরচ চালাবেন। সময় এবং ঘটনার ভিন্নতায় কথা-যুক্তি, দৃশ্যপট সবই পাল্টে যায়।

সর্বশেষ উচ্ছেদে যোগ হলেন আইনবিশারদ সাবেক উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ। গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের ১৫৯ নম্বর প্লটের এই ১০১ টাকা মার্কার সুবিশাল বাড়িতেই তিনি আয়েশে কাটিয়েছেন চল্লিশ বছরেরও বেশি। বাহাত্তরে তিনি তাতে ওঠেন ভাড়াটিয়া হয়ে। পরে ১৯৮০ সালে ১০১ টাকায় বরাদ্দ হাসিল। আইন-আদালত শেষে গত ৮ জুন উচ্ছেদ। আইন মতো বরাদ্দের পর উচ্ছেদও আইন মতোই। চার দশকের স্মৃতিবাসের সামনে রোজা-রমজানের দিনে মওদুদের একাকী কান্নাকাটি। তার ভায়রাভাই সরকারের উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীও পাশে নেই। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গিয়েছিলেন সমবেদনা জানাতে। মনের ক্ষোভে, অপমানে সত্তরোর্ধ্ব মওদুদ বলছিলেন, ফুটপাথেই ঘুমাব। কিন্তু তা জনমানসে আবেদন বা আবেগের খোরাক হতে পারেননি। আবার সরকারও যে প্রশংসিত তাও নয়। বরং ১০১ টাকার বাড়াবাড়ির অবসান কামনাই স্পষ্ট।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৮

বিজন রয় বলেছেন: ১০১ টাকার এ বাড়াবাড়ির একটা শেষ কি হতে পারে না?

বাড়াবাড়ি

বটে।

১৭ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৪

রুপম হাছান বলেছেন: সত্যি বাড়াবাড়ি বটে।

আমার মনে হয় এই অতি বাড়াবাড়ি বন্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে দৃঢ়তার সাথে ধর্মবিশ্বাস যুগোপযোগী ভুমিকা রাখতে পারে। এছাড়া অন্যকোনো উপায় আপাতত চোখে পড়ছে না।

২| ১৫ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


এদের লালসা ও দখলবাজি পুরোজাতির উপর প্রভাব ফেলেছে, বের হয়েছে ভুমিদস্যুরা: বসুন্ধরা, ঝুর আহমেদ, আফতাব, শাহ আলাম, যমুনা, এরা ভুমিদস্যু, ডলারে মাল্টি বিলিওনিয়ার।

১৭ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৬

রুপম হাছান বলেছেন: একদম সঠিক বাক্য ব্যবহার করেছেন। মূলত রাজনৈতিক ব্যক্তিরা যদি এমনসব অবৈধ আবদার প্রতিষ্ঠিত না করতেন তবে হয়তো ব্যাঙ্গের ছাতার মতো এতো ভুমিদস্যুদের জম্ম হতো না।

আপনার সুন্দর মতামতের জন্য ধন্যবাদ। সাথেই থাকুন।

৩| ১৫ ই জুন, ২০১৭ রাত ৯:২১

আহমেদ জী এস বলেছেন: রুপম হাছান ,




উপরে সহ-ব্লগার চাঁদগাজী ঠিকই বলেছেন , এদের দেখাদেখি সবাই ভুমিদস্যু হবার সাহস পেয়েছে । জবরদস্ত দখলদার হয়েছে অনেকেই । এর রেশ চলছে এখনও ।
মূল লেখক মোস্তফা কামাল যথার্থ লিখেছেন ---- সময় এবং ঘটনার ভিন্নতায় কথা-যুক্তি, দৃশ্যপট সবই পাল্টে যায়।
শেয়ার করার জন্যে ধন্যবাদ ।

১৭ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৮

রুপম হাছান বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার সাথে আমিও একমত পোষণ করছি আর লেখককে সাধুবাদ জানাচ্ছি তিনি সময়পোযুগী কথা-যুক্তির মাধ্যমে বিস্তারিত শেয়ার করার জন্য।

৪| ১৫ ই জুন, ২০১৭ রাত ৯:৪৮

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: লেখাটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

বাড়াবাড়ি ভালা না, হ।

১৭ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৫০

রুপম হাছান বলেছেন: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ রইল পুরো লেখাটি পড়ে আপনার মন্তব্য শেয়ার করার জন্য। ভালো থাকুন এবং সব সময় ভালোর সাথে থাকুন।

৫| ১৫ ই জুন, ২০১৭ রাত ১১:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: ১০১ টাকায় আমারও একশ' বাড়ি কিনতে ইচ্ছে করছে।

১৭ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৫১

রুপম হাছান বলেছেন: হা হা হা। না ভাই, ফ্রি পেলে আরো ভালো লাগতো। হা হা হা।

ধন্যবাদ ভাই রাজীব নুর আপনার সুন্দর এবং হাসিরসে ভরা মন্তব্যটি করার জন্য। ভালো থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.