নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাকিম৩

হাকিম৩ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইতিহাসের পাতায় কুড়িয়ে পাওয়া কিছু দাঙ্গার কথা

০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:১৫


১।১৯৭০ ভিওয়াদি দাঙ্গা
১৯৭০ ভিওয়াদি দাঙ্গা হল মুসলিম বিরোধী সহিংসতার একটি অনন্য দৃষ্টান্ত, যা ৭ এবং ৮ মে ভারতের ভিওয়াদি, জালগাঁও, মাহাদে স্ংগঠিত হয়।বিশাল পরিমাণ অগ্নিসংযোগ ও মুসলিম মালিকানাধীন সম্পত্তি ভাংচুর করা হয় এবং ২৫০ এর অধিক মানুষের মৃত্যু ঘটে। এই দাঙ্গা শিব সেনা দ্বারা পূর্ব পরিকল্পিত নিয়মে সংগঠিত হয়।স্বাধীনতার পর ভারতের ইতিহাসে এই ঘটনাটি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সবচেয়ে খারাপ দৃষ্টান্ত হিসাবে বিবেচিত যেখানে একাধিক উগ্র হিন্দু জাতিয়তাবাদি সংগঠন যথা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ, জন স্ংঘ এবং শিব সেনা জড়িত ছিল।

প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসে'র দাঙ্গার পর কলকাতার রাজপথে ছড়িয়ে থাকা নিহতদের দেহ। স্বাধীনতার এক বছর পূর্বে ১৯৪৬ সালে কলকাতায় সংঘটিত এই দাঙ্গায় চার হাজারেরও বেশি নিরীহ হিন্দু ও মুসলমান নিহত হয়েছিলেন।
কলকাতা দাঙ্গা
কলকাতা দাঙ্গা বা প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস The Great Calcutta Killing বা Direct Action Day ছিল ১৯৪৬ সালের ১৬ই অগস্ট তদনীন্তন ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশের রাজধানী কলকাতায় সংঘটিত একটি বহুবিস্তৃত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও নরহত্যার ঘটনা। এই দিনটিই ছিল "দীর্ঘ ছুরিকার সপ্তাহ The Week of the Long Knives নামে পরিচিত কুখ্যাত সপ্তাহকালের প্রথম দিন।
১৯৪০-এর দশকে ভারতের গণপরিষদের দুটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ছিল মুসলিম লিগ এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। ১৯৪৬ সালে ক্যাবিনেট মিশন ভারতীয় নেতৃবর্গের হাতে ব্রিটিশ ভারতের শাসনভার তুলে দেওয়ার প্রস্তাব রাখে। এই প্রস্তাবে একটি নতুন ভারত অধিরাজ্য এবং তার সরকার গঠনেরও প্রস্তাব জানানো হয়। এর অব্যবহিত পরে একটি বিকল্প প্রস্তাবে হিন্দুপ্রধান ভারত ও মুসলমানপ্রধান পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়। কংগ্রেস বিকল্প প্রস্তাবটি সম্পূর্ণত প্রত্যাখ্যান করে। এই প্রত্যাখ্যানের বিরুদ্ধে এবং একটি পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের দাবিতেন মুসলিম লিগ ১৯৪৬ সালের ১৬ই অগস্ট একটি সাধারণ ধর্মঘটের হরতাল ডাক দেয়। সেই প্রতিবাদ আন্দোলন থেকেই কলকাতায় এক ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্ম হয়।মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শহরে চার হাজারেরও বেশি সাধারণ মানুষ প্রাণ হারান এবং এক লক্ষ বাসিন্দা গৃহহারা হন।

লাসা দাঙ্গা ১৭৫০
লাসা দাঙ্গা তিব্বতের লাসা শহরে সংঘটিত একটি মাঞ্চু বিরোধী দাঙ্গা। এই দাঙ্গা ১৭৫০ সালের ১১ই নভেম্বর শুরু হয় এবং বেশ কিছুদিন চলে। মাঞ্চু আম্বানদের দ্বারা 'গ্যুর-মেদ-র্নাম-র্গ্যাল gyur med rnam rgyal নামক তিব্বতের শাসকের হত্যাকাণ্ডের ফলশ্রুতিতে সে দাঙ্গার সূত্রপাত ঘটে। সে দাঙ্গায় দুইজন মাঞ্চু আম্বান ছাড়াও একান্নজন চীনা সৈনিক এবং ৭৭ জন চীনা নাগরিককে তিব্বতী জনতারা হত্যা করেন।১৭৪৭ সালে মধ্য তিব্বতের শাসক ফো-ল্হা-নাস-ব্সোদ-নাম্স-স্তোব্স-র্গ্যাস pho lha nas bsod nams stobs rgyas মৃত্যুবরণ করলে তার দ্বিতীয় পুত্র গ্যুর-মেদ-র্নাম-র্গ্যাল gyur med rnam rgyal তিব্বতের শাসনভার লাভ করেন। তিনি সপ্তম দলাই লামার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে উৎসাহী ছিলেন না এবং চিং সাম্রাজ্যের শত্রু দ্জুঙ্গার মোঙ্গলদের দিকে সন্ধি স্থাপনের চেষ্টা শুরু করেন। চিং সাম্রাজ্যের অনুগত হওয়ার কারণে তিনি গুর-মেদ-য়ে-শেস-ত্শে-ব্র্তান gyur med ye shes tshe brtan নামক তার জ্যৈষ্ঠ ভ্রাতাকেও হত্যা করেন বলে চীনারা দাবী করেনতিব্বত শাসনের জন্য চিং সাম্রাজ্যের দুই উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি ফুসিন ও লাব্দোন নামক দুই আম্বান গ্যুর-মেদ-র্নাম-র্গ্যালকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। ১৭৫০ সালের ১১ই নভেম্বর সে দুই আম্বান তাকে একটি সভার জন্য আমন্ত্রণ জানান। সেখানে ফুসিন তাকে পেছন থেকে চেপে ধরেন এবং লাব্দোন তার বুকে তরোয়াল ঢুকিয়ে দেন । সে ঘটনা ব্লো-ব্জাং-ব্ক্রা-শিস blo bzang bkra shis নামক এক কর্মচারী দেখতে পেয়ে যান। তিনি সেই দুই হত্যাকারীদের থেকে লুকিয়ে কোনক্রমে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন।

ব্লো-ব্জাং-ব্ক্রা-শিস সে হত্যাকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে দেন। অল্প সময়ের মধ্যে লাসা শহরের প্রায় এক হাজার সশস্ত্র নাগরিক আম্বানদের বাসস্থানের বাইরে সমবেত হয়। সপ্তম দলাই লামা তার পক্ষ থেকে প্রথম র্বা-স্গ্রেং রিন-পো-ছে ঙ্গাগ-দ্বাং-ম্ছোগ-ল্দানের নেতৃত্বে একদল প্রতিনিধিকে জনতাদের শান্ত করতে পাঠান কিন্তু তারা তা করতে ব্যর্থ হন। উত্তেজিত জনতা আম্বানদের বাসস্থান জ্বালিয়ে দেয়। লাব্দোন উত্তেজিত জনতার সাথে লড়তে গিয়ে মারা যান এবং বহু অস্ত্রের আঘাতে আহত ফুসিন আত্মহত্যা করেন। আম্বানদের বাচাতে গিয়ে উনপঞ্চাশজন মাঞ্চু সৈনিক এবং দুইজন অফিসারের মৃত্যু ঘটে। জনতা তারপর সেই সৈন্যদের সম্পত্তি লুঠ করেন। সে দাঙ্গায় সাতাত্তর জন চীনা নাগরিক মারা যান ও প্রায় ২০০ জন চীনা নাগরিক পোতালা প্রাসাদে আশ্রয় গ্রহণ করেন। সে দাঙ্গা খুব তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। তিব্বতের প্রশাসনিক উচ্চপদস্থরা সে দাঙ্গাকে সমর্থন করেননি। ১৩ই নভেম্বর সপ্তম দলাই লামা একটি নির্দেশিকা জারী করেন যেখানে সমস্ত তিব্বতীদের ব্লো-ব্জাং-ব্ক্রা-শিস এবং তার সমর্থকদের সাহায্য করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়। ২১শে নভেম্বর ব্লো-ব্জাং-ব্ক্রা-শিস এবং তার চৌদ্দজন সমর্থকদের গ্রেপ্তার করা হয়।সে দাঙ্গার উত্তরে চিং সম্রাট চিয়ানলোং শাঞ্জি এবং সিচুয়ান থেকে যথাক্রমে ৮০০০ ও ৫০০০ সৈন্য প্রেরণ করেন। কিন্তু সপ্তম দলাই লামা কর্তৃক দাঙ্গা দমনের খবর পেয়ে মাত্র ৮০০ সৈন্যের একটি দল পাঠান।১৩০, ১৩১ তারা লাসা পৌছলে চীনা প্রতিনিধিদের হাতে বন্দীদের তুলে দেওয়া হয়। তারপর সামান্য জিজ্ঞাসাবাদের পর বন্দীদের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়। ব্লো-ব্জাং-ব্ক্রা-শিস এবং দাঙ্গার ছয়জন নেতাকে কেটে টুকরো টুকরো করে দেয়া হয় বাকি বন্দীদের মাথা কেটে দেয়া হয় বা ফাঁসি দেয়া হয়। এদের মাথাগুলি সর্বসমক্ষে ধাতব রডে টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়। বাকি নেতাদের সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে নির্বাসিত করা হয়।

দ্য স্টোনওয়াল ইন, ১৯৬৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তোলা ছবি। জানালায় একটি সাইনবোর্ডে লেখা,আমরা সমকামীরা আমাদের লোকেদের অনুরোধ করছি, তারা যেন ভিলেজের রাস্তায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সাহায্য করেন । ম্যাটাচিন
স্টোনওয়াল দাঙ্গা
স্টোনওয়াল দাঙ্গা Stonewall riots সমকামিতার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। নিউ ইয়র্ক সিটির গ্রীনউইচ গ্রামের ক্রিস্টপার রোডের ৫১ ও ৫৩ নাম্বারে স্টোনওয়াল ইন নামে একটা রেস্তরায় বহুদিন ধরেই সমকামীদের আড্ডা দেয়ার স্থান হিসেবে পরিচিত ছিলো । ষাট সত্তুরের দশকে পুলিশ এ ধরনের গে বার গুলোতে হঠাৎ করেই হামলা চালাতো। এ ধরনের বারে এসে পুলিশ সমকামীদের উপর চড়াও হয়ে গণহারে এ্যারেস্ট করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যেত। আর সে সময় সমকামীদের পক্ষে তেমন কোন আইন ছিলো না।
১৯৬৯ সালের ২৮শে জুন পুলিশ খুব স্বাভাবিক নিয়মেই গ্রীন উইচের গ্রামের গে বারটিতে হানা দেয়। কিন্তু সেদিন পুলিশ বারটিতে হানা দিলে সেখানকার লোকেরা অন্য সব সময়ের মতো পিছু না হটে সরাসরি পুলিশের সাথে সম্মুখ লড়াইয়ে লিপ্ত হয়। থালা বাসন, গ্লাস, বোতল এক কথায় যার সামনে যা কিছু ছিলো তাই নিয়েই পুলিশের মোকাবেলা শুরু করলো। একটা পর্যায়ে সব পুলিশদের রেস্তরার ভিতরে আবদ্ধ করে ফেলে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেয়। সেই পুলিশদের উদ্ধার করতে আরো নিরাপত্তারক্ষীদের পাঠানো হয়। কিন্তু তারা আবদ্ধ সহকর্মীদের দুরবস্থা দেখা ছাড়া খুব একটা সুবিধা করতে পারেলেননা না। জনগণ ততক্ষণে রেস্তরার আশে পাশের রাস্তাগুলো দখল করে নিলো। পুলিশদের ওভাবেই আবদ্ধ করে রেখে দিনভর আর রাত জুড়ে দাঙ্গা চলতে থাকে।তার পরদিন সমকামীদের সমর্থনে গ্রীনউইচ গ্রামের আশে পাশ থেকে আরো বহু লোক এবং সংগঠন এগিয়ে আসে। পুলিশদের উদ্দেশ্য পাথর ছোঁড়া থেকে আগুন জ্বালানো, পোড়ানো কোন কিছুই বাদ যায় নি। প্রায় চারশ পুলিশএর সাথে যুদ্ধ করছিলো প্রায় দু হাজার সমকামী।স্টোনওয়াল ইন এর প্রভাব পরবর্তি কালের আমেরিকান রাজনীতিতে ব্যাপক ভাবে পড়েছিলো। নিউ ইয়র্কের মেয়র জন লিন্ডসের প্রেসিডেন্টশিয়াল ক্যম্পেইনের সামনে সমকামীরা দল বেঁধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তাদের আন্দোলনের মুখে মেয়র পুলিশকে নির্দেশ দিতে বাধ্য হন সমকামী বারে হানা দিয়ে লোকজনকে গ্রেপ্তার এবং হেনস্তা না করতে। সংখ্যালঘু যৌনপ্রবৃত্তির কারণে সমকামীরা রাষ্ট্রীয়ভাবে যে নিপীড়নের স্বীকার হচ্ছিলেন তা থেকে মুক্তির পথে এগুতে পারলেন তারা। এই দিনটিকে স্মরণ করে সমকামী অধিকার কর্মীরা প্রতি বছর গৌরব পদযাত্রায় অংশ নিয়ে থাকেন।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:২৮

সৈয়দ আবুল ফারাহ্‌ বলেছেন: তথ্যবহুল সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:৫০

হাকিম৩ বলেছেন: পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।

২| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:৫৬

লেখা পাগলা বলেছেন: তথ্যবহুল পোস্ট এবং অনেক কিছু জানা হলো ।

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:৫২

হাকিম৩ বলেছেন: পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.