নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাস্তিক ও রাজাকার মুক্ত ব্লগ

আমি তুমি আমরা

লেখার সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।আমার অনুমতি ছাড়া এই ব্লগের লেখা কোথাও প্রকাশ করা যাবে না।

আমি তুমি আমরা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃ মুক্ত বিহঙ্গ

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৪৫

অবাক হয়ে চারিদিকে তাকালাম। বাজারে অনেকগুলো লোক ভীড় করে আছে একটা দোকানের সামনে, দোকানের শাটার নামানো। ভাল করে লক্ষ্য করলাম দোকানটা। খুব সম্ভব মনিহারী দোকান, নাম “বিহঙ্গ স্টোর”। নামানো শাটারের কারনে ভেতরের অবস্থা বোঝা যাচ্ছে না, তবে বাইরের অবস্থা বেশ জীর্ণ-শীর্ণ। এককালে হয়ত রমরমা অবস্থা ছিল, কিন্তু “বিহঙ্গ স্টোর” সেই সোনালী দিনগুলো ফেলে এসেছে অনেক পেছনে।
দোকানটা ঘিরে অনেকগুলো উৎসাহী লোক দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু কেন?
কিছু বুঝতে পারছি না। মনসুরের নম্বর ডায়াল করলাম। রিং হচ্ছে।
এই সুযোগে পাঠককে বলে রাখি আমার নাম মোসলেহ উদ্দীন, ‘দৈনিক আমার নগর’-এ আছি রিপোর্টার হিসেবে। মফস্বল শহরের স্থানীয় দৈনিক, তার ওপর আমি জয়েন করেছি অল্প কিছুদিন আগে। বুঝতেই পারছেন, অবস্থা খুব একটা ভাল নয়।
এজন্যই প্রণপণ চেষ্টা করছি কোন একটা দেশ কাঁপানো, চোখ ধাধানো স্টোরি কভার করতে, যাতে মুহূর্তেই নির্ভীক, সাহসী সাংবাদিক হিসেবে নামটা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে, বড় বড় সব পত্রিকা আর নিউজ চ্যানেল যেন আমাকে হায়ার করার জন্য উঠে পড়ে লাগে।
সমস্যা হচ্ছে, আমাদের ছোট্ট মফস্বলের নিরুত্তাপ জীবনে সচরাচর এমন কিছু ঘটে না। তার ওপর মানুষ হিসেবে আমি নিজেও প্রচন্ড মাত্রার অলস, অসময়ে মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দিয়ে নিউজ কভার করতে দূর দূরান্তে ছুটে যাব-এতটা করিৎকর্মা কখনোই ছিলাম না।
সেজন্যই পরিচিতজনদের বলে রেখেছি, আশেপাশে ইন্টারেস্টিং কিছু ঘটতে দেখলেই আমাকে খবর দিতে, সাথে সাথে পৌছে যাব স্টোরী কভার করতে।
সমস্যা হচ্ছে, আশেপাশে মজার কিংবা বীভৎস কিছু ঘটতে দেখলে এখন মানুষ নিজেই ক্যামেরা বের করে ভিডিও করতে শুরু করে, পুলিশ কিংবা সাংবাদিক ডাকার কথা তাদের আর মনে থাকে না।
এজন্যই আমি মনসুরকে পছন্দ করি। মনসুর যদি বলে, আমি তোকে খবর দেব, তারমানে সে খবর দেবেই। মরদকা বাত, হাতীকা দাঁত।
কিন্তু এখানে একটা বন্ধ দোকানের কি এমন ইন্টারেস্টিং ঘটবে, যার কারণে হাতের সব কাজ ফেলে ভরদুপুরে এই বাজারে আমাকে ছুটিয়ে আনল মনসুর?
আবার নম্বর ডায়াল করলাম।
-হ্যালো। অবশেষে ফোন রিসিভ করেছে ছেলেটা।
-তুই কই? আমি জানতে চাইলাম।
-আরে ব্যাটা, আমিতো জায়গা মতই আছি। তুই কই? পালটা প্রশ্ন করল সে।
-আমিতো বাজারে। তোর কথা শুনে সাথে সাথে বাইক নিয়ে দৌড়ে চলে আসলাম।
-এত তাড়াতাড়ি চলে আসছস?
-হ্যা।
-এখন কোথায়?
-“বিহঙ্গ স্টোর” এর সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
-ওখানেই থাক। এক মিনিটের মধ্যে আসতেছি।
যদিও মুখে এক মিনিটের কথা বলল মনসুর, তবে আমাকে খুঁজে পেতে ওর সময় লাগল দুই মিনিট।
-কোথায় ছিলি? জানতে চাইলাম।
-ওই যে, পাশের রেস্টুরেন্টে। নাস্তা খাচ্ছিলাম।
-তখন যেভাবে ফোন করেছিলি, আমিতো ভাবলাম কি না কি তুলকালাম কান্ড হয়ে যাচ্ছে।
-হয় নাই এখনো, তবে হবে।
-কি?
-ছাগ মিলনকে চিনস?
-কোন ছাগ মিলন? রাতের আঁধারে যে প্রতিবেশীর ছাগলের সাথে ইয়ে করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল?
-হ্যা, সেই ছাগ মিলন।
-তার ঘটনা কি?
-সে এখন এই এলাকার উঠতি মাস্তান। স্থানীয় কাউন্সিলর লাবু ভাইয়ের ডান হাত।
-তো?
-স্বাধীনতা দিবসের প্রোগ্রামের নাম করে বাজারের প্রতিটা দোকান থেকে চাঁদা নিছে হারামজাদাটা। এমনকি রাস্তার শেষ মাথায় যে পঙ্গু লোকটা পান বিড়ি বেচে, তাকেও ছাড় দেয় নাই।
-এর সাথে ‘বিহঙ্গ স্টোর” এর কি সম্পর্ক?
-‘বিহঙ্গ স্টোর” এর মালিক সাইফউদ্দীন সাহেবের ছেলে নাসিম, সাফ বলে দিছে সে কোন চাঁদা দিবে না।
-তাই নাকি? তো বাবা ছেলেকে বোঝায় নাই এসব মাস্তানদের সাথে ঝামেলা না করার জন্য?
-আরে বাপে বোঝাবে কি, উল্টা ছেলেকে উৎসাহ দেয় কোন অন্যায় না মেনে নেয়ার জন্য।
-তাই নাকি? আজকাল এরকম বাবা দেখা যায়?
-সেটাইতো। এখন প্র্যাক্টিকালি ভাবার সময়, এসব নীতি আর আদর্শ নিয়ে পড়ে থাকলে চলে?
-আচ্ছা, সেসব কথা বাদ দে। এমন ব্যস্ত দিনে ‘বিহঙ্গ স্টোর” এর শাটার নামানো কেন-সেটা বল।
-স্বচক্ষে সেটা দেখানোর জন্যই তোকে ডাকলাম।
-বুঝিয়ে বল।
-যেদিন ছেলেটা বলল, চাঁদা দেবে না, সেদিনই ওরা সাইফ সাহেবকে শাসিয়েছিল ঠিকঠাক চাঁদা দিয়ে দেয়ার জন্য। শুনেছি সাইফ সাহেব নাকি উলটো ওদের একজনকে চড় মেরে বের করে দিয়েছিলেন বাসা থেকে।
-বাপরে। ভদ্রলোকের সাহস আছে বলতে হবে। তারপর? ওরা কোন রিএকশান দেখায়নি?
-দেখাবে না আবার? এইসব ছ্যাচড়া ছেলে যা করার তা-ই করেছে। পরদিন রাতের বেলা দোকান থেকে ফেরার সময় ওরা সবাই মিলে আক্রমণ করেছিল সাইফ সাহেবের ছেলেকে।
-শিট। এখন কি অবস্থা ছেলেটার?
-ভাল না। মাথায় ভাল আঘাত পেয়েছে, অনেকগুলো সেলাই পড়েছে শুনলাম। জ্ঞান ফেরেনি, সেই রাত থেকে কোমায় আছে।
-বাঁচবে?
-জানি না। ডাক্তাররা নাকি দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেছে।
-তো নিচ্ছে না কেন?
-ছাগ মিলন আর লাবু ভাইয়ের সাথে ঝামেলা করে কোন ড্রাইভার তার নিজের এম্বুলেন্সটা খোয়াতে চাইবে?
-বলিস কি? এম্বুলেন্স পাওয়া যাচ্ছে না? আমি অবাক হই। এত খারাপ আমাদের শহরের অবস্থা?
-তবে আর বলছি কি?
-তো, এখন?
-এখন আর কি? হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষার প্রহর গোনা। আসলে কি আর প্রহর গুনবে, বেচারারতো জ্ঞান-ই ফেরেনি।
-আর সাইফ সাহেব?
-এই লোকের মেরুদন্ডের জোর আছে বলতে হবে। একমাত্র ছেলে হাসপাতালে, কিন্তু উনি তাও চাঁদা দেননি। উলটো বলেছেন, আজকে থেকে উনি দোকান খুলবেন, ‘বিহঙ্গ স্টোর” বন্ধ থাকবে না।
-সেজন্যই আমাকে ডেকেছিস?
-হ্যা, ছাগ মিলনরা সেদিন রাতেই শাটারে তালা লাগিয়ে দিয়েছিল, সাইফ সাহেব নাকি আজ সেই তালা ভেঙ্গে ফেলবেন।
-তো, কোথায় সাইফ সাহেব?
-ওই যে।
ভদ্রলোকের চারিত্রিক বর্ণনা শুনে ভেবেছিলাম সুঠাম দেহের কোন মধ্যবয়স্ক কাউকে দেখব। দেখা গেল সৌম্য চেহারার এক বৃদ্ধকে রাস্তা ধরে ধীর পায়ে এগিয়ে আসতে। পরনে সাদা পাঞ্জাবী-পাজামা, মাথায় সাদা টুপি, মুখ ভর্তি সাদা দাড়ি। ঠিক যেন গল্পের পাতা থেকে উঠে আসা কোন নানা-দাদার চরিত্র।
ভদ্রলোকের বয়স কত হবে? সত্তর-পচাত্তর? হতে পারে।
আশি-পঁচাশি? তাও হতে পারে।
শাটার নামানো ‘বিহঙ্গ স্টোর” এর সামনে এসে দাঁড়ালেন সাইফ সাহেব।
এই প্রথম কাছ থেকে সাইফ সাহেবের চেহারা দেখার সুযোগ পেলাম। চোখে একমাত্র পুত্রকে হারানোর আশংকা, অথচ চোয়ালে অন্যায়কে মেনে না নেয়ার ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা।
আমি এবং ‘বিহঙ্গ স্টোর” এর চারপাশে একদল উৎসুক জনতা দাঁড়িয়ে আছি সাইফ সাহেব কি করেন দেখার জন্য।
কিছুক্ষণ বন্ধ শাটারের দিকে চেয়ে রইলেন তিনি, সম্ভবত সারাজীবনে সঞ্চয় দিয়ে দাড় করানো ‘বিহঙ্গ’কে এভাবে বন্দী অবস্থায় দেখবেন-ভাবতেও পারেন নি তিনি।
আশেপাশে তাকিয়ে কি যেন খুজলেন ভদ্রলোক, তারপর একটু দূরে পরে থাকা একটা ইটের টুকরো তুলে নিলেন হাতে, তারপর সর্বশক্তি দিয়ে আঘাত করলেন শাটার আটকানো সেই তালায়।
হঠাৎ নীরবতার বুক চিড়ে কোথা থেকে যেন তালি বেজে উঠল।
ক্ষণিকের জন্য সব যেন থেমে গেল, আমরা একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলাম তালি দেওয়া সেই লোকটিকে দেখার জন্য, তারপর সব আবার সেই নীরবতা। কিন্তু সেই নীরবতার মধ্যেও উপস্থিত থাকা প্রতিটি লোক জানে, আমরা সবাই তালি দিয়েছি, হয়ত সশব্দে দেয়ার সাহস করতে পারিনি, কিন্তু মনে মনে ঠিকই তালি দিয়েছি, তালি দিয়েছি অন্যায়ের এই শেকল ভাঙ্গার আনন্দে।
-আহ। হঠাৎ করেই হাতটা চেপে ধরে বসে পড়েন সাইফ সাহেব।
কি হল? তালাটা ভাঙ্গতে গিয়ে হাতে আঘাত পেয়েছেন তিনি।
আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে একটু পর আবার উঠে দাড়ান ভদ্রলোক, ইটের টুকরোটা মুঠোয় নিয়ে হাত উঁচিয়ে তোলেন।
-চাচা, আপনার কষ্ট হচ্ছে। আমাকে দেন।
কন্ঠ শুনে অবাক হয়ে যান সাইফ সাহেব, হয়ত এভাবে কেউ তাকে আর চাচা ডাকেনি।
-তুমি কি বাবা? অবাক হয়ে জানতে চান তিনি।
-আমি মোসলেহ, আপনার ছেলের বন্ধু। মিথ্যা জবাব দেই আমি।
-কিন্তু… কি যেন বলতে গিয়েও তিনি থেমে যান।
-সমস্যা নেই চাচা, আমাকে দিন। আপনার হাত কেটে রক্ত পড়ছে, ব্যান্ডেজ করা দরকার।
কি যেন ভাবেন সাইফ সাহেব, তারপর ইটের টুকরো তুলে দেন আমার হাতে। এরপর হাত চেপে ধরে সরে যান একটু দূরে।
আমি সর্বশক্তি দিয়ে তালায় আঘাত করতে শুরু করি।
একবার।
দুইবার।
তিনবার।
… … …
আমি নিজেও জানিনা কতবার আঘাত করেছি, কিন্তু একসময় তালাটা ভেঙ্গে পড়ে। ভাঙ্গা তালাটা একপাশে ছুড়ে ফেলে আমি ধীরে ধীরে শাটার ওঠাই।
-চাচাজি, আসুন। আমি হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলি।
সাইফ সাহেব বসে পড়েছিলেন ক্লান্তিতে, আমার কথা শুনে উঠে দাঁড়ান। হালকা করে আমার পিঠ চাপড়ে এগিয়ে মুক্ত বিহঙ্গের দিকে। তার ঠোঁটের কোণে কোথায় যেন হালকা একটা হাসির রেখা আমি দেখতে পাই।
-আমি জানি, মোসলেহ নামে আমার ছেলের কোন বন্ধু নেই। একজন অপরিচিত মানুষ হয়ে তুমি যেভাবে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছ-সেটা আমি সারাজীবন মনে রাখব, বাবাজি।
সাইফ সাহেব এভাবে আমার মিথ্যা বলাটা ধরে ফেলবেন, ভাবতে পারিনি। কোন জুতসই জবাব খুঁজে না পেয়ে আমার বোকার মত একটা হাসি দেই।
জবাবে সাইফ সাহেবও একটা হাসি দিয়ে দোকানের ভেতর পা দেন। ঠিক তখনই...
ঢিশুম।
পিস্তলের শব্দ।
আমি কিংবা উপস্থিত জনতা কিছু বুঝে ওঠার আগেই সাইফ সাহেবের পাঞ্জাবী পড়া সাদা পিঠ লাল হতে শুরু করে। দৌড়ে গিয়ে কোনরকমে সাইফ সাহেবের ঢলে পড়া শরীরটাকে কোলে নেই।
-ওরা... আর কোন কথা বলতে পারেন না সাইফ সাহেব। কেবল হাত দিয়ে ইশারা করেন সাইফ সাহেব। তার আংগুলকে লক্ষ্য করে আমি বাইরে তাকাই। হ্যালমেট পড়া দুটো ছেলে বাইকে চড়ে দ্রুত পালিয়ে যাচ্ছে। তার পেছনে 'ধর, ধর' রব তুলে ছুটে চলেছে একদল মানুষ। ওই বাইক থেকেই গুলি করা হয়েছে।


... ...
এর পরের ঘটনা খুব সংক্ষিপ্ত। সাইফ সাহেব সেরাতেই মারা যান। বুড়ো মানুষ, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ-শেষ পর্যন্ত তিনিও হার মেনে নেন। কোমা থেকে তার ছেলেটাও আর ফিরে আসেনি। সাইফ সাহেবের স্ত্রী আর তার বাকি সন্তানরা শহর ছেড়ে চলে যায় কিছুদিন পর। তাদের খবর কেউ আর জানতে পারে নি।


... ...
যখনই কারো সাথে এই ঘটনাটা শেয়ার করি, তারা আমাকে পালটা প্রশ্ন করেন, একজন সাংবাদিক হয়ে কেন আমি ঘটনাটা নিয়ে কোন রিপোর্ট করিনি?
আমি জবাব দিতে গিয়েও তখন থেমে যাই। বলতে পারিনা নানা চাপ থাকা সত্বেও পুরো ঘটনা নিয়ে আমি রিপোর্ট তৈরী করেছিলাম, যেখানে লাবু কাউন্সিলর আর ছাগমিলন-দুজনের ভূমিকার স্পষ্ট উল্লেখ ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্পাদকের টেবিল থেকে সেই রিপোর্ট আর প্রেসে যেতে পারেনি।
তবে রাতের আঁধারে ওরা আমার ঘরে পৌছেছিল ঠিকই। দাউদাউ করে পুরো ঘরটা যখন জ্বলছিল, প্রাণ ভয়ে পালাতে থাকা এই আমি একবারও পেছন ফিরে বাপের পেনশনের টাকায় করা সেই বাড়ীকে শেষবারের মত দেখার সাহস করতে পারিনি।


... ...
এই ঘটনার পর পালিয়ে ঢাকা চলে আসি। সাংবাদিকতা পেশায় আর ফিরে যাইনি আমি, ঘৃণায় নাকি ভয়ে-আমার নিজের কাছেও উত্তরটা অস্পষ্ট। কোনরকমে ছোটখাটো একটা চাকরী জুটিয়ে নিয়েছিলাম, তাই করে এতগুলো বছর পেরিয়ে গেছে।

পাঠক আমাকে প্রশ্ন করতেই পারেন, তাহলে এতদিন পর এই ঘটনাগুলো আমি কেন লিখছি?
লিখে রাখছি, তার কারণ ছাগমিলন। কয়েকদিন আগেই জানতে পারলাম, আমাদের সেই ছোট্ট পৌরসভা এখন সিটি কর্পোরেশনে পরিণত হয়েছে, লাবু কাউন্সিলর আগেই মারা পড়েছে তার এককালের সাগরেদ ছাগমিলনের হাতে, কাউন্সিলর পদটাও ওই কাছেই হারিয়েছিল তার কিছুদিন আগে।

সেই ছাগমিলনের এখন চোখ পড়েছে মেয়র পদে, আমাদের সেই নিরুত্তাপ ছোট্ট মফস্বলের নগরপিতা হতে উঠেপড়ে লেগেছে।

নিজের জন্মস্থান ছেড়ে পালিয়েছি আজ বহু বছর, কেন যেন মনে হচ্ছে আজ ফিরে যাওয়ার সময় হয়েছে। যে ছাগমিলনের হাতে একদা মুক্ত বিহংগের মত উড়তে থাকা আমাদের ছোট্ট শহরটা খাচাবন্দী হয়েছিল-তার হাত থেকে আজ নাটাই কেড়ে নেওয়ার সময় হয়েছে।

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:৪৯

তানীম আব্দুল্লাহ্ বলেছেন: রাতের ভোটের আগেই
ট্রেনিং না ভুলে গেলে পুরনো অস্ত্র নিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে পারেন । শহরে মিছিল নামুক ।
সাইফ সাহেবদের জন্য সমবেদনা ।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:১৩

আমি তুমি আমরা বলেছেন: আমিও আশায় আছি, সাইফ সাহেবদের নেতৃত্ব একদিন শহরে মিছিল নামবে, দৃপ্ত পদক্ষেপ আর স্লোগানের প্রচন্ডতায় পালিয়ে যাবে শহরের যত লাবু ভাই আর ছাগ মিলন।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। শুভকামনা রইল। :)

২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:২৪

ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: আমরাও সবাই কোন না কোন ভাবে মোসলেহ উদ্দিন। আমরা সবাই চাই ফিরে যেতে। নিজ শহরকে মুক্ত করতে। কিন্তু আমরা সেটা আর পারি না।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:১৩

আমি তুমি আমরা বলেছেন: একদম ঠিক বলেছেন। আমাদের সবার শহরগুলোকে খামছে ধরেছে একদল ছাগমিলন আর লাবু ভাই।মোসলেহ উদ্দীনরা কি পারবে এদের হাত থেকে ভালবাসার শহরকে রক্ষার লড়াইয়ে বিজয়ী হতে?

৩| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:৩৪

আখেনাটেন বলেছেন: দুর্দান্ত......

ছাগ-গাভী-দুম্বা মিলনদেরই রামরাজত্ব এ দেশে যুগ যুগ ধরে। কে চায় হাতুড়ীর আঘাতে প্রাণ বিসর্জন দিতে? মোসলেউদ্দিনরা চিপায় চাপায় শুধু খেদ আর ঘৃণা প্রকাশ করতে পারে এই পঙ্কিল রাজনীতির কারিগরদের দেখে।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:১৫

আমি তুমি আমরা বলেছেন:  মোসলেউদ্দিনরা চিপায় চাপায় শুধু খেদ আর ঘৃণা প্রকাশ করতে পারে এই পঙ্কিল রাজনীতির কারিগরদের দেখে।

এই অক্ষম ঘৃণাও একদিন সক্ষম প্রতিরোধে পরিণত হবে-এটাই আশা করি।

৪| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৮:০৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: রাতের শেষে দিন , অন্ধকারের অপর পান্তেই আলো।একদিন খারাপের পতন হবেই
আপনি লিখেছেন পাঞ্জাবী পড়া , হ্যালমেট পড়া। এইটা পড়া না পরা কোনটা।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:১৬

আমি তুমি আমরা বলেছেন: একদিন অন্ধকারের পতন হবে অবশ্যই-প্রশ্ন হচ্ছে তার আগে কত সাইফ সাহেব আর তাদের ছেলেরা সেই অন্ধকারে বিলীন হবে?

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:১৭

আমি তুমি আমরা বলেছেন: পড়া আর পরা-এই নিয়ে কনফিউশনের কোন শেষ নেই। কি যে করি?

৫| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:০৭

ইসিয়াক বলেছেন:







হয়তো নাটাইটা একদিন ফিরে পাওয়া যাবে! কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কবে আসবে সেই দিন?
তবুও আশায় থাকি ....

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:১৮

আমি তুমি আমরা বলেছেন: সেটাই। আশা তার একমাত্র ভেলা।

৬| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার গল্প।
তবে কিছুটা অগোছালো।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:১৮

আমি তুমি আমরা বলেছেন: ঠিক আছে।

৭| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:৪৩

নীল আকাশ বলেছেন: নির্মম বাস্তবতাই তুলে ধরেছেন। মোসলেউদ্দিনরা একা এক চেষ্টা করেও এইজন্য সমাজ বদলাতে পারে না।
থীম খুব ভালো লেগেছে।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:২০

আমি তুমি আমরা বলেছেন: যেদিন সব মোসলেহ উদ্দীনরা একসাথে গর্জে উঠবে-পরিবর্তন আসবে সেদিন। একক চেষ্টায় সমাজের পরিবর্তন প্রায় অসম্ভবের কাছাকাছি।

৮| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৩৩

আহমেদ জী এস বলেছেন: আমি তুমি আমরা,




এ ছবি হলো, আমাদের দিনকালের ! এখানেই থাকে সাইফুদ্দিন সাহেবের মতো এক-দু'জন মানুষ আবার থাকে বহুসংখ্যক লাবু আর ছাগমিলনও !
আবার এখানেই হঠাৎ হঠাৎ দেখা মেলে একজন "মোসলেহ"এর যাকে পালিয়ে বেড়াতে হয় "সুবোধ" এর মতো বুকের মধ্যে সূর্য্যটাকে নিয়ে।

সব শ্লোগানই বাতাসে ভাসে কিন্তু এই শ্লোগানটি -"দুনিয়ার নির্যাতিতরা এক হও!" কখনও বাতাসে নিনাদ তোলেনি !

এ বড় কঠিন সময়! বড় কঠিন!

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০১

আমি তুমি আমরা বলেছেন: সব শ্লোগানই বাতাসে ভাসে বনবাতাসে নিনাদ তোলেনি !

এ বড় কঠিন সময়! বড় কঠিন!

সত্যিই এ বড় কঠিন সময়। তবুও আশায় থাকি, অন্যকোন গল্পে আবার সাইফ সাহেবের পাশে দাঁড়াবে মোসলেহ উদ্দীন, তাদের সম্মিলিত প্রতিবাদ-প্রতিরোধের সামনে পালিয়ে যাবে শহরের যত লাবু ভাই আর ছাগ মিলন। তালাবদ্ধ বিহঙ্গ স্টোরের মুক্তি মিলবে, সেই সাথে মুক্তি পাবে অদৃশ্য খাচায় বন্দী শহরের মানুষগুলো।

আশায় থাকি, স্বপ্ন দেখি...।

ভাল থাকুন প্রিয় ব্লগার। শুভকামনা জানবেন সব সময়। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.