নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিতর্ক করি ও খেতে ভালোবাসি।

আনাছ আল জায়েদ

আনাছ আল জায়েদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

৫ম প্রজন্মের মোবাইল প্রযুক্তি চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

১৩ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:০৮

বর্তমান পৃথিবী হল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিময় পৃথিবী। আমাদের জীবন-জীবিকা পুরোপুরি প্রযুক্তিকে আশ্রয় করে চলছে। কখনো আমরা আমাদের প্রয়োজনে প্রযুক্তিকে কাজে লাগাচ্ছি আবার কখনো প্রযুক্তি আমাদের আবেগ-অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করছে। দিন যত যাচ্ছে মানব সভ্যতায় প্রযুক্তির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায় ৭৫০ কোটি জনসংখ্যার এই পৃথিবীতে একজন মানুষ থেকে আরেকজন মানুষের জ্ঞান-দক্ষতা- উৎকর্ষগত পার্থক্য নির্ধারণ করে দিচ্ছে প্রযুক্তি। প্রযুক্তির একেকটি জেনারেশন বা প্রজন্ম আলাদা আলাদা চিন্তাভাবনা প্রচার করে যা মানুষের জীবনমানকে সহজ ও উন্নত করছে। সমাজের প্রগতির জন্য, কল্যাণের জন্য, আর্থিক সমৃদ্ধির জন্য আমাদের প্রতিনিয়ত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাথে যুক্ত থাকতে হবে। আজকের বিশ্ব ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের’ দ্বারপ্রান্তে, এই বিপ্লবের ‘ট্র্যাম্প কার্ড’ হচ্ছে ৫জি (পঞ্চম প্রজন্মের) মোবাইল প্রযুক্তি। ৫জি’র সাথে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা, যান্ত্রিক শিক্ষা, রোবটিক্স, বিগডাটা, ব্লক চেইন ও আইওটির মত প্রযুক্তির সমন্বয়ে এক প্রাযুক্তিক পরিবর্তন হতে যাচ্ছে যা আমাদেরকে এক নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করবে। ধরনা করা হচ্ছে, ৫জি (পঞ্চম প্রজন্মের) মোবাইল প্রযুক্তি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অমিত সম্ভবনার দ্বার খুলে দিবে বিশেষত চালকবিহীন গাড়ি, তারবিহীন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, কলকারখানায়- হাসপাতালে রোবটের ব্যবহার। পাশাপাশি ৫জি (পঞ্চম প্রজন্মের) মোবাইল প্রযুক্তি চলমান জীবন- জীবিকা- প্রথা-মূল্যবোধে চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে যেমন কায়িক শ্রমভিত্তিক পেশার বিলুপ্তি, ব্যক্তিগত তথ্য পাচার, ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকি, মানুষের বিকল্প হিসেবে রোবটের স্থান, উচ্চমাত্রার রেডিয়েশনের কারণে সংবেদনশীল প্রানী’র বিলুপ্তি বাস্তুসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করবে।

আমরা আজ গ্লোবাল ভিলেজের মেম্বার। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে, সমাজ থেকে সমাজে, রাষ্ট্র থেকে রাষ্ট্রে বিদ্যমান প্রাকৃতিক দূরুত্ব দূর করেছে মোবাইল প্রযুক্তি, অন্যদিকে ইন্টারনেট গোটা বিশ্বকে এক হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। আজকে আমরা যে সমৃদ্ধ মোবাইল প্রযুক্তি পাচ্ছি তার যাত্রা শুরু হয় ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে যখন আলেকজেন্ডার গ্রাহাম বেল টেলিফোন আবিষ্কার করেছিলেন।১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে বৈজ্ঞানিকরা ফটো ফোনে আলোর ভিত্তিতে কথা বলার চেষ্টা করেন।পরে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের দিকে কেন্টাকির কৃষক নাথান স্টাবেল ফিল্ড বিনা তারের ফোনের নকশা তৈরি মোবাইল ফোন নির্মাণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন। মোবাইল ফোনের ইতিহাস পাঠে জানতে পারি, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের দিকে জাহাজে বেতার যোগাযোগে ব্যবহার করা হয় এবং ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের দিকে জার্মানির বার্লিন ও হামবুর্গের মাঝে চলাচলকারী ট্রেনে তারবিহীন ফোন প্রচলনের পরীক্ষা করা হয়। এই সম্পর্কে প্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার তাঁর এক প্রবন্ধে লিখেন ,

“দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বেতার যোগাযোগ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ১৯৭৩ সালে ৩রা এপ্রিল মটরোলা মোবাইল ফোন বাজারজাত করে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে। সেই ফোনটিকে বলা হত ‘০’ জি। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে মটরোলা তাদের মাইক্রোট্যাক ফ্লিপ ফোন বাজারজাত করে। ১৯৮৭ সালে জিএসএম মানের বদৌলতে মোবাইল ফোন বিশ্বমানে পৌছায়। এরপর যাত্রা শুরু হয় ১জি,২জি,৩জি,৪জি আর এখন তুমুল আলোচনা হচ্ছে ৫জি নিয়ে।”
--- মোস্তফা জব্বার, ডিজিটাল বাংলাদেশ ও মানবসভ্যতার পঞ্চমস্তর, দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকা, ঢাকা, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ।

বাণিজ্যিক ভাবে মোবাইল ফোনের উৎপাদনের প্রথম লক্ষ্য ছিল কেবল যোগাযোগ। কিন্তু প্রযুক্তির উৎকর্ষে মোবাইল ফোন আর কথা বলার মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। আজ আমরা মোবাইল ফোনে কথা বলার পাশাপাশি ইন্টারনেটের নানামাত্রিক ব্যবহার করতে পারি যা আমাদের সমগ্র জীবনযাপন পরিবর্তন করে দিয়েছে। মোবাইল প্রযুক্তির ধারাবাহিক অগ্রগতিকে বিজ্ঞানীরা ৫টি ভাগে ভাগ করেছেন।
১. প্রথম প্রজন্ম(First generation)
২. দ্বিতীয় প্রজন্ম(Second generation)
৩. তৃতীয় প্রজন্ম(Third generation)
৪. চতুর্থ প্রজন্ম(Fourth generation)
৫. পঞ্চম প্রজন্ম (Fifth generation)

প্রথম প্রজন্ম বা 1st G( ১৯৭৯-১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ)
১. এই ফোনে রেডিও সিগন্যাল হিসেবে এনালগ সিগন্যাল ব্যবহার করা হত।
২. কম ব্যান্ডের সিগন্যাল ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা হত।
৩. এই প্রজন্মের ফোনে সর্বপ্রথম সেমি কন্ডাক্টর বা মাইক্রো প্রসেসর ব্যবহার করা হয়।
৪. প্রথম দিকে মোবাইল ফোনের ওজন অনেক বেশি ছিল।
৫. কোন SIM কার্ড ব্যবহার করা হত না এবং প্রোভাইডার বদল করা যেত না।

দ্বিতীয় প্রজন্ম বা 2nd G(১৯৯১-২০০০খ্রিস্টাব্দ)
১. ডিজিটাল রেডিও সিগন্যাল ব্যবহার করা হত।
২. নেটওয়ার্ক GSM and CDMA প্রযুক্তির ব্যবহার।
৩. সীমিত পরিসরে Internet Rooming সুবিধা।
৪. Handoff সুবিধা সৃষ্টি হয়। তাই, সংযোগ চালু থাকা অবস্থায় ব্যবহারকারীর অবস্থান পরিবর্তন করলেও সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে।
৫. বিলিং সিস্টেম হিসেবে পড়ি- পেইড পদ্ধতি চালু হয়।
৬. ভয়েজ কলের পাশাপাশি ডেটা কমিউনিকেশন চালু হয়।
৭. SMS ও এমএমএস চালু হয়।
৮. মোবাইল ফোনে বিভিন্ন মিডিয়া কনটেন্ট যেমন অডিও শোনা, ভিডিও দেখা, গেমস ইত্যাদি ব্যবহার করার সুযোগ।
১০. প্রথম প্রজন্মের ফোন থেকে এগুলো আকৃতিতে ছোট।

তৃতীয় প্রজন্ম বা 3G( ২০০১-২০০৮ খ্রিস্টাব্দ)
এই প্রজন্মের কয়েকটি মোবাইলের স্ট্যান্ডার্ড হল,
UMTS (Universal Mobile Telecommunication System)
WCDMA (Wideband Code Division Multiple Access)
EDGE (Enhanced Data Rates For GSM Evaluation)
HSDPA( High Speed Downlink Pocket Access)

১. এই প্রজন্মের ফোনে পূর্বের চেয়ে উচ্চগতির সিগন্যাল ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার এবং ডেটা ট্রান্সমিশন রেটও অনেক বেশি।
২. GPRS(Global Pocket Radio System) স্ট্যান্ডার্ডের ব্যাপক অগ্রগতি।
৩. আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা ব্যাপক ভাবে শুরু করা।
৪. অডিও কলের পাশাপাশি ভিডিও কলের ব্যবস্থা করা।
৫. FOMA (Freedom of Multimedia Access) স্ট্যান্ডার্ড প্রযুক্তি ব্যবহার করে Mobile Banking, E-commerce( electric commerce), E-mail( Electric Mail), Social Media সহ অন্যান্য ইন্টারনেট ভিত্তিক সার্ভিস প্রদান।
৬. Handset Interoperability সুবিধা ব্যাপক বৃদ্ধি করা।
উল্লেখ্য, ১৪ অক্টোবর ২০১২ সালে বাংলাদেশে তৃতীয় প্রজন্ম বা 3G মোবাইল প্রযুক্তি চালু হয়।

চতুর্থ প্রজন্ম বা 4G (২০০৯-বর্তমান)
১. উচ্চ গতির ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড সুবিধা পাওয়া যাবে।
২. ডেটা ট্রান্সমিশন রেট ২০mbps পর্যন্ত বাড়ানো।
৩. 3D ও HD ছবি দেখা যাবে।
৪. ডেটাকমিউনিকেশনসিস্টেমপুরোপুরিIP( International Protocol ) নির্ভরকরাহবে।
৫. SRD(Software Defined Radio) প্রযুক্তির ব্যবহার।

উল্লেখ্য, ১৯ ফেব্রুয়ারি-২০১৮ তে বাংলাদেশে চতুর্থ প্রজন্ম বা 4G চালু হয়।
তথ্যসূত্রঃ(Click This Link)

বর্তমান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিদদের প্রধান ভাবনা হল ‘5G মোবাইল প্রযুক্তি’-কে নিয়ে। চলমান বৈশ্বিক গ্রাম হিসেবে পরিচিত এই বিশ্বের প্রথাগত সামাজিকব্যবস্থা – অর্থনৈতিকব্যবস্থা - চিকিৎসাব্যবস্থা- বিনদোনব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে দিবে ‘5G মোবাইল প্রযুক্তি’। আমরা জানি, ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে বাষ্পীয় ইঞ্জিন ও বিদ্যুতের আবিষ্কার গোটা বিশ্বকে পরিবর্তন করে দেয়। কৃষিনির্ভর অর্থনীতি শিল্পভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হয়। কৃষিজপণ্য প্রযুক্তির সাহায্যে শিল্পায়িত পণ্যে রূপ নেয়। উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে বদলে যেতে থাকে মানুষে চিরচেনা জীবনাচার- ধর্ম বিশ্বাস- রাষ্ট্রভাবনা- কালচার। গ্রামীণ জীবন আস্তে আস্তে নগরজীবনে পরিণত হয়। রাজা-প্রজা সম্পর্কের ইতি টেনে তৈরি হয় আধুনিক গণতন্ত্র ব্যবস্থা, সমরব্যবস্থা, উন্নত অর্থব্যবস্থা। যারা প্রথম শিল্পবিপ্লবে অংশ নিয়েছে তারা আজ বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে- প্রযুক্তিতে। ফলত যারা প্রথম শিল্প বিপ্লবে অংশ নেয়নি তারা চলমান বৈশ্বিক অগ্রগতি থেকে নিজেদের হারিয়ে ফেলেছে। এভাবে ২য়,৩য় শিল্প বিপ্লবের পর আগামীতে যে শিল্পবিপ্লব গোটা বিশ্বকে উলটপালট করে দিবে তা শিল্পবিপ্লব ৪.০। প্রতিটি শিল্পবিপ্লব একদিকে যেমন অমিত সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে বিশ্ববাসীর প্রতি তেমনি তৈরি করেছে নানা সমস্যা, প্রতিবন্ধকতা। এই শিল্পবিপ্লবও তাঁর ব্যতিক্রম নয়।
‘ শিল্পবিপ্লব- ৪.০’ জার্মান সরকারের উৎপাদনশীলতাকে পুরোপুরি প্রযুক্তিনির্ভর করার প্রয়াসে ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ শব্দটি’র সূচনা হয়। এর বাস্তবায়নে ‘ট্র্যাম্প কার্ড’ হিসেবে কাজ করবে ‘5G মোবাইল প্রযুক্তি’। এই ক্ষেত্রে জার্মান সরকার যে ৪ টি নির্দেশককে মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করেছেন তা হল,
১. Interoperability বা পারস্পারিক সংযুক্তিঃ এই নির্দেশককে বলা হয়েছে শিল্প উৎপাদন কেন্দ্রে মানুষ ও যন্ত্র একসঙ্গে কাজ করবে। মানুষ ও যন্ত্রের পারস্পারিক সংযুক্তিতে উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করা হবে। এ ক্ষেত্রে ‘5G মোবাইল প্রযুক্তি’ মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। আমরা জানি, ‘5G মোবাইল প্রযুক্তি’ তে ব্যাপক ভাবে রোবটিক্সের ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। সাধারণত মানুষের পক্ষে যে কাজগুলো ঝুঁকিপূর্ণ তা রোবট করবে। তাছাড়া, ভারী শিল্পের অনেক কাজ যা মানুষের শরীরের জন্য ভীষণ সেগুলো যন্ত্র করবে। যেমন. আমাদের দেশে ‘জাহাজভাঙ্গা শিল্প’ ও ‘ খনি থেকে আকরিক উত্তোলন’ এই দুই পেশার শ্রমিকদের ভীষণ শারীরিক ক্ষতি হয় বিশেষত দৃষ্টি শক্তি হ্রাস, শ্রবণশক্তি হ্রাস সেখানে রোবটের ব্যবহার অনেক বেশি উপকারী হবে।
২. Information Transparency বা তথ্য স চ্ছতাঃঅপরিশোধিত সেন্সর ডেটাকে এমন ভাবে ব্যবহার করা যাতে বিদ্যমান বস্তুগত বিশ্বকে উপাত্ত আকারে সততার সাথে ব্যবহার করা যায়।
৩. Technical Support বা কারিগরি সহায়তাঃ প্রযুক্তিকে অবশ্যই মানুষের পক্ষে কষ্টসাধ্য এমন কাজে ব্যবহার করতে হবে। প্রযুক্তি অবশ্যই মানুষের কর্ম সহায়ক যন্ত্র হবে।
৪. Decentralization Decision বা বিকেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তঃ এ পদ্ধতিতে অহেতুক হস্তক্ষেপে ভারাক্রান্ত না করা ও বিকেন্দ্রীকরণভাবে পদ্ধতিকে কাজে লাগানো।
উপরোক্ত চারটি নির্দেশককে বিবেচনা ও পর্যালোচনা করে প্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার তাঁর আরেক এই সম্পর্কিত প্রবন্ধে আসন্ন ‘5G মোবাইল প্রযুক্তি’ সম্পর্কে বলেন,
“আমরা শিল্প বিপ্লবের স্তরগুলো সম্পর্কে যে ধারণা পেলাম তাতে বোঝা যায় যে প্রথমটি ছিল যন্ত্র, পানি ও বিদ্যুৎ চালিত। দ্বিতীয়টি হচ্ছে গণ উৎপাদন ব্যবস্থা। তৃতীয়টিকে কম্পিউটার আটোমাইজেশন। আর চতুর্থটিকে সাইবার ফজিক্যাল বা ডিজিটাল মানবিক যুগ বলা হচ্ছে।”
----- মোস্তফা জব্বার,চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, উপ-সম্পাদকীয়, দৈনিক জনকণ্ঠ, ঢাকা, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ।
আমরা যদি মোটাদাগে সমাজ ৫.০ বা শিল্প বিপ্লব ৪.০ নেতিবাচক দিকগুলো চিহ্নিত করি সেক্ষেত্রে যে দিকগুলো পাই,
১. মানুষের কাজ যদি যন্ত্র করতে থাকে তাহলে মানুষ কর্মহীন বা বেকার হয়ে হাবে। যেমন. চালকবিহীন গাড়ি বা উড়োজাহাজ চালু হলে আর কোন ড্রাইভার বা পাইলটের প্রয়োজন হবে না। তখন এই পেশার সাথে সম্পর্কিত যে মানুষগুলোর জিবন-জীবিকা জড়িয়ে আছে তারা পুরোপুরি কর্মহীন হয়ে যাবে।
২. উচ্চগতির ইন্টারনেট ও সহজ এক্সেস অনেক সাইবার অপরাধ সৃষ্টি করবে। যা প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতি সাধারণ মানুষের একধরনের নিরাপত্তাহীনতা কাজ করবে।
৩. মানুষের বিকল্প মানুষ ছাড়া অন্যকিছু হতে পারে না। মানুষ রক্তে- মাংসে গড়া সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। মানুষের মাঝে যেমন আবেগ-অনুভূতি-কর্মচেতনা কাজ করে তেমনি মানুষের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। মানুষ দীর্ঘ সময় নিয়ে কোন কাজ করতে পারে না অন্যদিকে রোবট ক্লান্তিহীন থেকে সুন্দর ভাবে কাজ কারতে পারে। তাই মানুষের সীমাবদ্ধতার কথা বিবেচনা করে মানুষের পরিবর্তে কোন অফিসে/ কারখানায় অধিক কাজ/ উৎপাদনে রোবট ব্যবহার করলে তা মানব সভ্যতার জন্য চরম হুমকি দেখা দিবে। সমাজে সৃষ্টি হবে মানুষ-প্রযুক্তির দ্বন্দ্ব, যা আমাদের কাম্য নয়।
৪. মানুষের আবেগের একটা বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করবে আর্টিফিশিয়াল বুদ্ধিমত্তা ফলেই মানুষের মন অনেকটা প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ করবে।
সর্বোপরি, পৃথিবীর প্রতিটি জিনিসের সমান সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ থাকে। চ্যালেঞ্জগুলোকে শক্তহাতে মোকাবেলা করে যারা এগিয়ে যেতে পারে তারাই কেবল ৫ম প্রজন্ম মোবাইল প্রযুক্তির সুফল ভোগ করতে পারবে। শুধু প্রাযুক্তিক উৎকর্ষই নয়, অংশগ্রহণকারী দেশগুলো একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বকে নেতৃত্ব দিবে। ২০০৮ সালে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ও রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করেছে। ইতোমধ্যেপ্রযুক্তি রাষ্ট্র- জনগণের মাঝে সেবা আদানপ্রদানের দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে। সরকার আগামী ৫ম প্রজন্মের মোবাইল প্রযুক্তি গ্রহণ ও শিল্পবিপ্লব ৪.০ অংশ নেয়ার পক্ষে। ইতিবাচক মনোভাব আমাদের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, সোনার বাংলাদেশ গড়ায় দৃঢ় ভূমিকা পালন করবে এই বিশ্বাস করি।

আনাছ আল জায়েদ , শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:১৩

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
ওয়ান জি বলেন আর ৫ জি বলেন
এদেশে স্বাধীনতার আগে থেকেই উন্নত টেকনোলজি ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে রাখার
একটা প্রবনতা ছিল।
একটি সাধারন সস্তা রেডিও কিনতে গেলেও রেডিও রাখার লাইসেন্স লাগতো। লাইসেন্স বিহীন রেডিও কেউ রাখলে জেল!
৮০ দশকে রঙ্গিন টিভি আসলে এই টিভি রাখতে ৫০০টাকা লাইসেন্স লাগতো প্রতি বছর।
সে আমলের ৫০০টাকা বুঝেন তো? তখন একজন ১ম শ্রেনির গেজেটেড অফিসারের বেতন ছিল ৬৫০ টাকা।

ল্যান্ডফোন ছিল, তবে মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে।
বড়লোক হলেও স্টাটাস না থাকলে ২০ হাজার টাকা জমা দিয়েও পাওয়া যেত না ল্যান্ড ফোন। উচ্চপদস্থ কর্তা, বড় ঠিকাদার, ডাক্তার, ইত্যাদি বড় পদ না থাকলে ল্যান্ড ফোন পাওয়া যেত না। মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে নিত অনেকে।

মোবাইল ফোন চালু হলেও এলিট পক্ষ মোবাইল ফোন কে সাধারন মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে রেখেছিল দির্ঘ দিন।
শুধু একটি কম্পানীকে একচেটিয়া ব্যাবসা দিয়ে একটি মোবাইলের দাম 'লাখ টাকা' করে রেখেছিল।
যাতে মোবাইল শুধু বড়লোকরাই ব্যাবহার করতে পারে।

২| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:২১

রাজীব নুর বলেছেন: এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ভাগ্যবান।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.