নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভাল ছেলে!

জুবায়ের হাসান রাব্বী

পরিচয় দেওয়ার মত তেমন কিছু নেই। আমি নিতান্তই অলস একজন মানুষ। লেখালেখি শখ হিসেবে শুরু করলেও এখন সেটা নেশা হয়ে গেছে।

জুবায়ের হাসান রাব্বী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমিই এখন দায়িত্ববান

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৪৫

সকালবেলা খেতে বসেছি মাত্র। আমার মা বসে আছে। মা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-বৌমার শরির নাকি কয়েকদিন ভাল যাচ্ছে না। ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাস তো।
-আমি যেতে পারব না।
-কেন?
-আমার কাজ আছে।

জেরিন এতক্ষণ দুরে বসে সব শুনছিল। আমার কথা শুনে উঠে আসল। মায়ের কাছে গিয়ে বলল
-উনি পারবেন কিভাবে? উনার তো অনেক কাজ।
-আমার কাজ আছেই তো।
-বেকার মানুষের যে কি কাজ আমি সেটা বুঝি না।
-বেশি বকবক না করে চুপচাপ থাকো।
-আমি কথা বললেই তো চুপচাপ। আমার সাথে গেলে কি হবে!! তোমার তো কোন কাজ নেই। বাপের ঘারে বসে খাওয়া।
-আমার বাপের আছে বলেই ঘারে বসে আমি খাই। তাতে কি হয়েছে!!

কথা বলতে বলতে একসময় আমি জোড়ে কথা বলতে থাকলাম। মা পরিস্থিতি সামাল দিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুই চুপ কর। ঝগড়া করিস না।
-এই জন্যই বলেছিলাম বেকার থেকে বিয়ে করব না।
-বেকার তো কি হয়েছে!! বেকার হলে কি বিয়ে করা যাবে না!!
-তাহলে ও আমাকে বলার কে।

জেরিন আমার রাগ দেখে চুপ করেছিল। এখন আস্তে আস্তে বলল
-আমি কি সেটা বলেছি!! আমি শুধু আমার সাথে যেতে বলেছি।
-আমি টাকা দিয়ে দিচ্ছি। তুমি নিজেই চলে যেও।
-টাকা লাগবে না। তোমার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার চেয়ে বাবার কাছ থেকে নিতে পারব।

পুরাপুরি খাবার না খেয়েই বেড়িয়ে গেলাম। বাসায় থাকলে একসময় আমাকে রাজি করেই ছাড়বে। সে মাকে দিয়ে হোক অথবা জেরিন নিজেই হোক।

বাসা থেকে বেড়িয়ে ভাবছি কোনদিকে যাওয়া যায়। নাইম বলেছিল ওর সাথে এক জায়গায় যেতে হবে। আমিও তাই সেদিকেই ছুটলাম

বাসে উঠতে গিয়ে প্রচুর ভিড় দেখেও উঠে পরলাম। তারাতারি যেতে বলেছে বলে সেই বাসেই উঠতে হল।

বাসের ভিড়ের মধ্যে ফোন পকেট কাঁপছে। প্রথমে পকেটমার ভেবেছিলাম। পরে বুঝতে পারলাম আমার ফোন কাঁপছে।

ফোন কানের কাছে ধরে বললাম
-হ্যালো।
-তুই আসছিস নাকি?
-হ্যা। আমি আসছি।
-তারাতারি আয়।
-আরে ভাই ভিড়ের মধ্যে আছি। তবুও আসছি।

বাস থেকে নেমে মনেহচ্ছে কবুতরের ঘর থেকে বেড় হলাম। গরমের সময় না হলে কি হত কে জানে।

নাইমের ঘরে গিয়ে নাইমকে বসে থাকতে দেখলাম। আমি বললাম
-আমাকে তারাতারি আসতে বলে এখন চুপচাপ বসে আছিস কেন?
-আমার সাথে তোকে একসাথে যেতে হবে।
-শ্বশুরবাড়ি যাবি নাকি?

নাইম দাঁত কেলিয়ে বলল
-তুই জানলি কিভাবে?
-শ্বশুরবাড়ি যাবি মানে!! আমার শ্বশুরবাড়ি তো আমি যাচ্ছি না।
-তোর শ্বশুরবাড়ি না আমার নিজের শ্বশুরবাড়ি।
-সেটা কিভাবে পেলি?
-আজকে বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছি।

আমি ওর হাসতে হাসতে বললাম
-তোর জীবন এখন তামাতামা হয়ে যাবে রে।
-ভাবিস না। তোর যেহেতু হয়েছে। আমার নাহলে কেমন দেখায়।
-যাবি কোনসময়?
-একটু পরে।
-এত তারাতারি কেন?
-রাতের অন্ধকারে কেমন মেয়ে দেখায় তার ঠিক আছে নাকি।
-চিন্তা করিস না।

নাইমের হাবভাব দেখে হাসছিলাম। মেয়ে দেখতে গিয়েই মনে হচ্ছে বিয়ে করে আনবে। আমার দায়িত্ব তার মিষ্টির প্যাকেট বয়ে নিয়ে যাওয়া।

আমি প্যাকেট টানছি আর মনে মনে বলছি "বেচে গেলি যে তোর জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছি। নাহলে বুঝাতাম" ভাবতে ভাবতে ফোনের কাপাকাপি শুরু হয়ে গেল।

ফোনের কাপাকাপিতে স্কিনে তাকিয়ে দেখি তুনা ফোন করেছে। ফোন ধরতেই
-রাব্বি তুই কোথায় রে?
-রাস্তায়।
-রাস্তায় না থেকে আমার হাসপাতালে আয়।
-কেন রাস্তায় কি জায়গার অভাব নাকি?
-দরকার আছে। তোর বউকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তুই জলদি চলে আয়।
-আচ্ছা।

নাইমের হাতে মিষ্টির প্যাকেট দিয়ে একটা রিক্সা ডাকলাম। রিক্সাওয়ালাকে দ্রুত হাসপাতালে যেতে বললাম।

হাসপাতালে এসেই কেমন যেন বিরক্তিকর অবস্থা। ছোট থেকেই হাসপাতালে আমার এলার্জি আছে। তাই খুব দরকার নাহলে আসি না।

তুনার ঠিকানা পেতে খুব কষ্ট হল না। এর আগে একবার ওর সাথে দেখা করতে হাসপাতালে এসেছিলাম। তুনাকে দেখে বললাম
-কি হয়েছে রে?
-তেমন কিছু হয় নি। মাথা ঘুরে পরে গিয়েছিল। তবে এখন সুস্থ আছে।
-সাথে কে এসেছে।
-তোর বাবা মা এসেছে। চল ভিতিরে গিয়ে দেখা করে আসবি।

তুনার সাথে ভেতরে চলে এলাম। জেরিনকে দেখলাম বেডে শুয়ে আছে। তবে ভালভাবেই কথা বলছে। আমি পাশে বসলাম। জেরিনের হাত ধরে বললাম
-এখন কেমন আছ?
-ভাল আছি।
-কি হয়েছে তোমার?

জেরিন বলার আগেই তুনা বলল
-ভাবি তুমি কিছু বলবে না। আমিই সব বলছি।
আমি তুনার দিকে তাকিয়ে বললাম
-তবে তুই বল।
-মিষ্টি খাওয়াতে হবে কিন্তু।
-খাওয়াব।
-কখন?
-আগে বল তারপরে।
-তুই বাবা হবি।
-এতো খুশির খবর। আমি আসছি।
-আমার মিষ্টি কই?
-অপেক্ষা কর।

বাইরে এসে দেখি আব্বা মা দুইজনই দাঁড়িয়ে আছে। আমি আব্বার সামনে না যেতে চাইলেও গেলাম। মাথা নিচু করে বললাম
-আব্বা আমি নাকি বাবা হবো।
-কেন তুই সঠিক জানিস না?
-সঠিকভাবে জানি।
-তাহলে ওভাবে বলছিস কেন?
-বাবাতো হবো কিন্তু....
-কিন্তু কি?
-আমিতো ইনকাম করি না। তারপরে আবার বাবা হলে.....
-যাক ছেলে থেকে তবে এখন বাবা বাবা ভাব এসেছে। আমি যদি তোর মত একটা ছেলেকে খেতে দিতে পারি। তবে তোর সন্তানকেও খেতে দিতে পারব। এ নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।

আমি উপরে তাকিয়ে এক গাল হেসে বললাম
-আব্বা কিছু টাকা দেন তো। পকেটে টাকা নাই।
-টাকা দিয়ে কি করবি?
-মিষ্টি কিনতে হবে।
আব্বা পকেট থেকে টাকা দিয়ে বলল
-আচ্ছা যা মিষ্টি নিয়ে আয়।

আব্বার কাছ থেকে টাকা নিয়ে এখন আমার গন্তব্য মিষ্টির দোকান। তবে এখন নিজের মধ্যে একটা পরিবর্তন বুঝতে পারছি। নিজের মধ্যে একটা দায়িত্ববোধ বুঝতে পারছি। শতহোক সন্তানের হবু বাপ তো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.