নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভাল ছেলে!

জুবায়ের হাসান রাব্বী

পরিচয় দেওয়ার মত তেমন কিছু নেই। আমি নিতান্তই অলস একজন মানুষ। লেখালেখি শখ হিসেবে শুরু করলেও এখন সেটা নেশা হয়ে গেছে।

জুবায়ের হাসান রাব্বী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ মিয়া বিবি রাজি

১২ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৩২



মা রান্না ঘরে রান্না করছিল। আমি পিছন থেকে ডাক দিয়ে বললাম
-তুমি প্রতিদিন রান্না কর। তোমার কষ্ট হয় না?
মা কথাটা শুনেই আমার দিকে অবাক চোখে তাকাল। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল
-হ্যা হয়। তো?
-বলছিলাম যে, রান্না করার জন্য কেউ থাকলে তোমার কষ্ট কম হত।
-ভাল একটা কাজের মেয়ে খুজতে হবে তাহলে।
-না মা। কাজের মেয়েরা ভাল রান্না করে না।
-তাহলে কে রান্না করে?
-তোমার বউ মা আনলেই, ভাল রান্না করবে।
-আমতা আমতা করছিস কেন? তুই বিয়ে করবি এইতো?
-বুঝই তো।
-বিয়ে করবি!! তাহলে করে ফেল।
-বললেই তো হয় না। তুমি আব্বাকে বল আমার জন্য মেয়ে দেখতে।

মা আমার দিকে তাকিয়ে অবজ্ঞার সুরে বলল
-আমি পারব না। তুই মেয়ে খুজ। বিয়ে করবি তুই, মেয়ে খুঁজবি তুই।

আমি কথা না বাড়িয়ে চলে এলাম।।মায়ের সাথে আর কথা বলেও লাভ হবে না। আমার বিয়ের পাত্রি আমাকেই খুঁজতে হবে। বিয়ে আমাকে করতেই হবে।

★★

ঘরে বসে চিন্তা করতে থাকলাম, বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজে পাই কোথায়! তবে বিয়ে আমাকে করতেই হবে।

ভাবতে ভাবতে উর্মির কথা মনে পড়ে গেল। উর্মির সাথে ব্রেকাপ হয়েছিল সাত-আট মাস আগে। ব্রেকাপ হয়েছে তাতে কি! একসময় তো সে আমার প্রেমিকা ছিল। এখন নাহয় বউ হবে।

মোবাইল থেকে উর্মির নাম্বার খুঁজে বের করলাম। এখনও সেভ করা আছে নাম্বারটা। জানি না সে সিম বদলে ফেলেছে নাকি। ব্রেকাপের পরে কথা বলা হয় নি। তবে আজ কথা বলতে হবে।

উর্মির নাম্বারে কল দিয়ে নাম্বারটা খোলাই পেলাম। কিন্তু ফোন রিসিভ করছে না। হয়ত আমার নাম্বার দেখে রিসিভ করছে না।

যদি পুরাতন প্রেম জেগে ওঠে! এই আশায় কল দিয়েই যাচ্ছিলাম। কথা বলে তাকে রাজি করাতেই হবে। বেশি প্রেম ছিল দুজনের। হয়ত সে'ও সিঙ্গেল আছে।

উর্মি ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ করে চুপচাপ। আমি নিরবতা ভেঙে বললাম
-কেমন আছ?
-ভাল।
-খুব ভাল?
-সেটা জেনে কি হবে?
-প্রেমিকার খবর প্রেমিক জানবে না?
-প্রেমিকা!
-কেন তুমি আমার প্রেমিকা না?
-ছিলাম। কিন্তু আজ সেটা পুরাতন গল্প।
-সেটাকে নতুন করে তৈরি করা যায় না?

উর্মি হতাশ হয়ে বলল
-তুমি কি মজা করতে কল দিয়েছ?
-না। সত্যি তোমাকে আমি ফিরে পেতে চাই।
-আবার যদি ছেড়ে দাও?
-তাহলে চল বিয়ে করে ফেলি।
-কি!
-সত্যি বলছি। বিয়ে করবে আমাকে?
-মজা করছ!
-না। কালকে আমার মায়ের সাথে তোমাকে দেখা করতে হবে। মা তোমাকে দেখবে। এখন রাখছি।

উর্মি আমার কথাগুলো শুনে হয়ত আবাক হয়েছে। এতদিন পরে পুরাতন প্রেমিক ফোন করে এমন প্রস্তাব দিলে অবাক হওয়ার কথা।



আমি আর মা একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম। উর্মিকে আগেই আসতে বলে দিয়েছি। আমার বিশ্বাস উর্মি আসবেই।

রেস্টুরেন্ট এর ভিতরে গিয়ে দেখি উর্মি একপাশের একটা টেবিলে বসে আছে। হালকা সাজে অনেকদিন পরে তাকে দেখে আমার পুরাতন প্রেম আবার জেগে উঠল। আমি মায়ের সাথে সেই টেবিলে বসলাম।

মা আর আমি বসতেই উর্মি মাকে সালাম দিল। মা সালামের উত্তর দিয়ে জিজ্ঞেস করল
-তোমার নাম কি?
-ফারিহা আক্তার উর্মি।
-কিসে পড় তুমি?
-এবারে অনার্স সেকেন্ড ইয়ার।
-তুমি আমার ছেলে শুভকে চিন?
-হুম।
-ওর সম্পর্কে সবকিছু জানো?
-হ্যা।

অনেক্ষন ধরে কথা বলার পরে দুজনের কথা বলা শেষ হল। আমি পাশে বসে এদের কথা শুনছিলাম আর খাবার মুখে দিয়ে চিবাচ্ছিলাম। মনেহল মা তার ইন্টার্ভিউ নিচ্ছে। এই মেয়ে আমার বউ হলে মায়ের সাথে গল্পের আসব বসাবে এটা আমি নিশ্চিত।

মায়ের কথা বলা শেষ হলে মা আমাকে বলল
-কিরে খাচ্ছিস না কেন?
-খাচ্ছিই তো। তোমরাও খাও।
-হ্যা।

সবার মোটামুটি খাওয়াদাওয়া শেষ হল। এখন বাসায় যেতে হবে। মা আর উর্মির সাথে কথা বলছে না। আমিই বিদায় জানিয়ে মায়ের সাথে বাসায় রওনা দিলাম।

★★

বাসায় আসার পরে মা একটু চুপচাপ। আমি মায়ের ভাব বুঝতে পারছি না। উর্মিকে মায়ের পছন্দ হয়েছে কি হয়নি বুঝতে পারছি না।

আমি চুপ না থেকে মাকে জিজ্ঞেস করলাম
-উর্মিকে পছন্দ হয় নি?
-হয়েছে। কিন্তু...
-কিন্তু কি?
-তোর মত একটা বেকার ছেলে অত ভাল মেয়েকে বিয়ে করবি!!

আমি তারাতারি সেখান থেকে সরে পরলাম। নাহলে আমার গুণগান গাওয়া শুরু হবে। এই বেকারের কারনেই বাবা মা বিয়ে দিতে রাজি হয় না।

★★

রাতে মায়ের কাছে গিয়ে রাজি করিয়ে ফেললাম। মা বলল
-তুই তাহলে বিয়ে করবি?
-হ্যা।
-তাহলে তো ওর বাবা-মায়ের সাথে কথা বলতে হবে।
-তাহলে বল তোমরা।
-এ মাসে হবে না। সামনের মাসে যাব। এ মাসে তোর বাবা ব্যাস্ত খুব।
-আচ্ছা।



নিজের জন্য শপিং করতে এসেছি। কালকে উর্মিদের বাসায় যেতে হবে। কোনদিন যেসব কাপড় কিনি না, আজ সেগুলো কিনেছি। কারন এই পোষাকে আমাকে ভদ্র দেখতে লাগবে।

শপিং থেকে বেড়িয়ে রিক্সায় উঠতে যাব, এমন সময় সামনের দিয়ে যাওয়া এক রিক্সায় চোখ আটকে গেল। রিক্সায় উর্মি বসে আছে। কিন্তু পাশের ছেলেটি কে? উর্মির এমন কোন ভাই'ও নেই। তাহলে এটা কে!

আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রিক্সাটির চলে যাওয়া দেখলাম। কিছুক্ষণ পরে মোবাইল বের করে উর্মির কাছে ফোন দিলাম। কিছুক্ষণ পরে উর্মি ধরার সাথে সাথেই আমি বললাম
-পাশের ছেলেটি কে?
-মানে!
-আমি যাওয়ার পরে তুমি নতুন রিলেশনে জড়িয়ে পরেছ, সেটা আমাকে বললেই হত।
-আজেবাজে কি বলছ এসব?
-সব ঠিক বলছি। তোমার সাথে আর কোন কথা নাই। ফোন রাখ।

★★

বাসায় এসেই মাকে বিয়ের ব্যাপারে না করে দিলাম। মা শুনে কারন জানতে চাইলে আমি বললাম "বিয়ে করব না। এটাই জেনে রাখ"। মা আরো কিছু বলতে চাচ্ছিল। কিন্তু আমি সেসব না শুনে রুম থেকে বেড়িয়ে এলাম।

অনেক্ষন ধরে উর্মি ফোন দিচ্ছে। আমি একবারও রিসিভ করছি না। ওর মত মেয়ের সাথে কথা বলার রুচি নাই। মেজাজটাই খারাপ হয়ে যাচ্ছে।



অনেক্ষন ধরে উর্মির কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। উর্মির সাথে দেখা করে কথা বলতে হবে। সেদিনের সেই ঘটনার পরে উর্মির সাথে যোগাযোগ হয় নি। উর্মির কাছে ফোন দেব সে অবস্থাও নেই।

খোজ নিয়ে জানতে পেরেছি ওই ছেলেটা উর্মির বয়ফ্রেন্ড না। উর্মির এক দুঃসম্পর্কের কাজিন। উর্মিকে বিয়ে করবে বলে তার বাড়িতে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। সেই বিয়ে বন্ধ করার জন্য উর্মি সেদিন রিক্সায় তার সাথে কথা বলছিল।

উর্মি গেট দিয়ে বের হয়ে চলে যাচ্ছে। আমি উর্মিকে ডাক দিলাম। উর্মি তবুও দাঁড়াল না। আমি উর্মির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। এবার উর্মি নিজেই মুখ খুলল
-পথ আটকে দাঁড়ালে কেন!
-তোমার সাথে আমার কথা আছে।
-আমার ইচ্ছা নেই।
-একবার বুঝার চেষ্টা কর। যখন সেদিনের সেই ঘটনার সত্যতা জানতে পেরেছি। সেদিন থেকেই আমি বিষন্নতায় ভুগছি। মনে হচ্ছে আমি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি।
-আর কিছু?
-আমাকে বিয়ে করবে?
-না। বারবার আমি তোমার নাটক দেখতে চাই না। তুমি বিয়ের দিন ঠিক করার কথা বলে পালাবে। আমি তা আবার হতে দেব না। বিয়ে নিয়ে আর নাটক না।

উর্মি কথাগুলো উত্তেজিত হয়েই বলছিল। বলা শেষ হলে আবার হাটতে শুরু করল। আমি আবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। উর্মির হাত ধরে বললাম
-চল আজই বিয়ে করে ফেলি।
-আমি কোন জোক্স শুনতে চাই না।
-জোক্স না। সত্যি। তুমি রাজি নাকি সেটা বল?

উর্মি কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল
-আমি রাজি।
আমি আনন্দিত হয়ে বললাম
-মিয়া বিবি রাজি, তো কিয়া কারেগা কাজি।
-কাজি কি করবে মানে!! কাজি আমাদের বিয়ে দিবে।
আমি মুচকি হেসে বললাম
-মিয়া বিবি রাজি, বিয়ে দিবে কাজি।

উর্মি আমার কথা শুনে হাসতে থাকল। উর্মি আমার হাত ধরে রিক্সায় উঠল। আগে বিয়ে করি দুজন। তারপরেই উর্মিকে নিয়ে বাসায় যাব।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:০৪

তারেক ভূঁঞা বলেছেন: গল্পের দুজনের জন্য রইল শুবকামনা----

২| ১২ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:২১

বিজন রয় বলেছেন: শেষটা মিল।

ভার লাগল।
+++

৩| ১৬ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:৩১

জুবায়ের হাসান রাব্বী বলেছেন: ধন্যবাদ সবাইকে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.