নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন সুখী মানুষ, স্রষ্টার অপার ক্ষমা ও করুণাধন্য, তাই স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধাবনত।

খায়রুল আহসান

অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।

খায়রুল আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফাহিয়ানের গল্প

১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:৩৪

এ ব্লগটা একটা পাবলিক প্ল্যাটফর্ম। এখানে ব্যক্তিগত কথা না বলাই ভাল, এ আমি ভাল করেই জানি। তবুও এখানে আমার অনেক লেখাই আছে, শুধু ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ নিয়ে। আমার লেখা ভ্রমণ কাহিনীগুলোতেও প্রায় সময় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথাই বিবৃত হয় বেশী। এটা ব্লগের হয়তো অনেকে পছন্দ করেন না, তবে এর পেছনে আমার একটা লক্ষ্য থেকে থাকে। এসব পাঁচালিতে আমি মানবতার কথা বলতে চাই, আমার চোখে দেখা প্রকৃতির সৌন্দর্যের কথা বলতে চাই, আমার সময়ের একটা চিত্র তুলে ধরতে চাই, নিজস্ব পরিমণ্ডলে দেখা আমার সময়ের কিছু ভাল মানুষের ভাল কাজের কথা বলতে চাই। এতে কতটা সফল হই, তা নির্ধারণের ভার পাঠকের ওপর ন্যস্ত।

আজ আমি অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানাচ্ছি যে, আমার বাল্যবন্ধু আবুল হাসানাৎ ফাহিয়ান গত ১৫ এপ্রিল ২০২০ তারিখে স্থানীয় সময় দুপুর দুইটায় চেক প্রজাতন্তের য্লীন (ZLIN) শহরের এক হাসপাতালে কিডনী প্রতিস্থাপনোত্তর অসুস্থতায় মাসাধিককাল ভোগার পর অনন্তলোকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। সে বিধবা স্ত্রী আর তিন পুত্র সন্তান রেখে গেছে। আল্লাহ রাব্বুল ‘আ-লামীন তাঁর অপার করুণা ও দয়ায় ফাহিয়ানের সকল দোষ-ত্রুটি, ছোট বড় সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়ে তার রূহের প্রতি সদয় হউন এবং তাকে শান্তিময় পরলোক দান করুন! আগামী ২২ এপ্রিল বুধবার, দুপুর একটায় (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যে সাতটায়) চেক প্রজাতন্ত্রের য্লিন শহরেই তাকে সমাধিস্থ করা হবে।

আমার এ বন্ধু সম্পর্কে একটা প্রাথমিক পরিচয় আমি আমার প্রথম দিকের পোস্ট আমার কথা - ৩ এ উল্লেখ করেছিলাম। বাবার কঠিন শাসনে মানুষ হওয়া এ বন্ধুটি নিজ গৃহকে বন্দীশালার মত মনে করতো। এজন্য যখনই সে কোন বন্ধুর সান্নিধ্য লাভ করতো, তখনই তার সাথে মন প্রাণ খুলে মিশতো। এ কারণেই, বন্ধুদের সান্নিধ্যে সে সবসময় হর্ষোৎফুল্ল থাকতো, হাসি তামাশা করতো, উচ্ছ্বাস নিয়ে গল্প করতো, আগ্রহ নিয়ে গল্প শুনতো, এবং সুযোগ পেলেই, দুষ্টুমিও করতো। শেষোক্ত কাজটাতে সে খুবই পারদর্শী ছিল। এমন একটা চঞ্চল ছেলে ঘরে কী অবস্থায় থাকতো, সেটা আর এখানে পুনরুল্লেখ করতে চাই না। উপরে উল্লেখিত আমার পোস্টটা পড়লে (লিঙ্ক দেয়া হয়েছে) খুব সহজেই সেটা বোঝা যাবে।

ফাহিয়ান পোল্যান্ড সরকারের বৃত্তি লাভ করে পোল্যান্ডের মেরিন একাডেমীতে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রথম জীবনে পেশা হিসেবে জাহাজের চাকুরী শুরু করেছিল। কালক্রমে জাহাজের ক্যাপ্টেন পদবীতে উন্নীত হবার পর চিরচঞ্চল ফাহিয়ানের এ শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন আর ভাল লাগেনি। সে চিরকাল ছিল বৈচিত্র সন্ধানী। ও যে এতটা দিন জাহাজের চাকুরীতে একাদিক্রমে লেগে থাকতে পারবে, এটাই ছিল আমার জন্য এক বিস্ময়! যাহোক, সে ক্যাপ্টেন হিসেবে কয়েক বছর চাকুরী করার পর জাহাজের চাকুরীতে ইস্তফা দিয়ে নিজেই একটা ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। (এ ব্লগে কয়েকজন প্রাক্তন সিনিয়র মেরিনার আছেন বলে জানি। তাদের কেউ কেউ ফাহিয়ানকে চিনলেও চিনতে পারেন)। চঞ্চল হলেও সে স্বভাবগতভাবে অত্যন্ত পরিশ্রমী ছিল। সে একজন ভাল ক্রীড়াবিদ ছিল, ছাত্রজীবনে এথলেটিক্সে সে চ্যাম্পিয়ন হতো। কলেজে থাকতে তাকে দেখতাম, স্পেয়ার টাইমে অন্যরা যখন গল্পগুজবে মশগুল, ও তখন মাঠে নেমে একা একাই দৌড় প্র্যাকটিস করে নিজের উৎকর্ষতা বাড়াতে সচেষ্ট। অর্থাৎ, ওর যখন যে কাজটা ভাল লাগতো, সেটাতে সে পুরোটাই আত্মনিবেদিত থাকতো। ফলে, সাফল্য অনায়াসে তার করায়ত্ত্ব হতো। তাই, চাকুরীতে ইস্তফার পর সে তার নতুন উদ্যোগে সাফল্য লাভ করবে, এটা আমরা ধরেই নিয়েছিলাম। ব্যবসার সূত্র ধরে তাকে বেশ কয়েকবার মালয়েশিয়া যেতে হয়েছিল। সেখানে সে বেশ কয়েকজন মালয়েশীয় ধনাঢ্য শিল্পপতির সখ্য লাভ করে। দু’ দু’বার সে ব্যবসা সংক্রান্ত আলাপ আলোচনার জন্য তখনকার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মাদ এর সাথে নৈশভোজে মিলিত হয়। তার সাথে আলাপচারিতায় জেনেছি, মাহাথির সম্পর্কে বিশ্বের অন্যান্য দেশ এবং আমরা বাংলাদেশীরা যে উচ্চ ধারণা পোষণ করে থাকি, ওর ব্যক্তিগত ধারণা ততটা উচ্চ নয়।

ঘন ঘন মালয়েশিয়া যাওয়া আসা করতে করতে একসময় সে অদৃষ্টের অলঙ্ঘ্য ইশারায় সেখানকার বাটা কোম্পানীতে কর্মরত এক ইউক্রেনীয় মহিলার প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং কয়েক বছর প্রেমের পর ওরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। একসময় তার স্ত্রী মালয়েশিয়া থেকে চেক প্রজাতন্ত্রের য্লিন শহরে অবস্থিত বাটা’র সদর দপ্তরে বদলী হলে ওরা উভয়ে য্লিন শহরে এসে বসতি গড়ে। আমরা হয়তো অনেকেই জানি, চেক ব্যবসায়ী টমাস বাটা ১৮৯৪ সালে এই য্লিন শহরেই বাটা’র ফ্যাক্টরি এবং সদর দপ্তর স্থাপন করেন। তিনি এক ঐতিহ্যবাহী জুতো ব্যবসায়ী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তখনকার হিসেবেই প্রায় তিনশ’ বছর ব্যাপী আট পুরুষ ধরে তার পূর্বপুরুষ এ ব্যবসায়ে নিয়োজিত ছিলেন।

দুর্ভাগ্যক্রমে ওদের সে বসতি শান্তির বসতি হিসেবে খুব বেশীদিন স্থায়ী হয়নি। য্লিনে আসার কয়েক বছর পর ওদের বড় ছেলের জন্ম হয়। তার কয়েক বছর পরে ওদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। ভাঙা সংসার, ভাঙা হৃদয় নিয়ে ফাহিয়ান একেবারে মুষড়ে পড়ে। জাহাজের প্রাক্তন নাবিকের তখন নিজের জীবনতরীর বেহাল অবস্থা। কিন্তু এ অবস্থা সে বেশীদিন চলতে দেয়নি, সে ঘুরে দাঁড়ায়। সে তার কাজে মনোনিবেশ করে, ধীরে ধীরে সাফল্যও তাকে ধরা দিতে থাকে। ব্যবসায়ে যখন সে নতুন করে আত্মনিয়োজিত, তখন এক রুশ রমণী (পেশায় স্থপতি) তার প্রতি সদয় হয়ে তার ভাঙা সংসারের হাল ধরতে সম্মত হয়। এভাবেই তার জীবনটা এক নতুন বাঁক নেয়। ফাহিয়ানের নতুন স্ত্রী তানিয়া (তাতিয়ানার সংক্ষিপ্ত সম্বোধন) রূপকথার সৎ মাকে হার মানিয়ে পরম মমতাভরে তার প্রথম সন্তানকে সাথে নিয়ে নতুন করে সংসার সাজাতে শুরু করেন। ব্যবসা সংক্রান্ত কাজেও তিনি যোগ্য সহধর্মিণী হিসেবে ফাহিয়ানকে সহযোগিতা করতে থাকেন। কালক্রমে ব্যবসায়ে যেমন উন্নতি হতে থাকে, তাদের নতুন সংসারেও আরো দুটি পুত্র সন্তান জন্মলাভ করে।

ফাহিয়ানের বড় দুই ছেলে তাদের শিক্ষা জীবন শেষ করে আজ স্বপ্রতিষ্ঠিত। শেষের জন শিক্ষা জীবনের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। মা বাবা ও তিনভাই মিলে ওদের একটি সুখী পরিবার ছিল। ওর সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল ২০১৮ সালের জুলাই মাসে, ঢাকার গুলশানের গ্লোরিয়া জীন্স কফিশপে। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে সেখানে একত্রিত হয়েছিলাম। সেবারেই সে শেষ ঢাকা এসেছিল, এবং অসুস্থতার কারণে সফর সংক্ষিপ্ত করে য্লিন ফিরে গিয়েছিল। তার পরে পরেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিডনী প্রতিস্থাপনের জন্য ডোনারের অপেক্ষায় তাকে ‘অপেক্ষা তালিকা’য় রাখে। গত ডিসেম্বরে তার কিডনী প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল য্লিন হাসপাতালে। প্রতিস্থাপনের পর সে দ্রুত আরোগ্য লাভ করছিল। আমাদের সাথে গত জানুয়ারী থেকে হোয়াটসএ্যাপে পুনরায় তার স্বভাবসুলভ হাসি ঠাট্টা ও কৌতুকভরা আলাপচারিতা শুরু করেছিল। সে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছিল, ডাক্তারদের কঠোর তদারকির কারণে এ বছরটাতে সে আমাদের কারো সাথে দেখা করতে পারবে না, কিন্তু আগামী বছরের শেষের দিকে হয় সে বাংলাদেশে এসে আমাদের সাথে দেখা করবে, নয়তো আমরা য্লিনে গিয়ে তার সাথে দেখা করতে পারবো। কিন্তু মানুষ ভাবে এক রকম, আর তার নিয়তিতে লেখা থাকে আরেক রকম। হোয়াটসএ্যাপে আমি ওর সর্বশেষ বার্তাটি পেয়েছিলাম ০৩ মার্চ, ২০২০ তারিখে। মাত্র ৪৩ দিনের মাথায় জ্বলজ্যান্ত একটা মানুষ কেমন করে ‘নাই’ হয়ে গেল!

আজ যখন পেছনের দিকে তাকাই, দেখতে পাই সদাচঞ্চল, সদাহাস্যোজ্জ্বল এ মানুষটির ভেতরে আরেকটি ধীর স্থির, বিচক্ষণ, দয়ালু, মানবিক, সঙ্গীতপিপাসু, সৌম্যকান্তি মানুষের প্রতিচ্ছবি। মনে পড়ে, ২০১১ সালে আমরা কয়েকজন বন্ধু ও সতীর্থ মিলে নিজেদের অনুদানে এবং পরিচিত দানশীল ব্যক্তিদের সহায়তায় একটি তহবিল গঠন করে ‘আইলা’ বিধ্বস্ত খুলনার প্রত্যন্ত অঞ্চল কয়রা উপজেলায় ১৫/১৬টি পুকুর সংস্কার করে স্থানীয় দরিদ্র জনগণের জন্য পানীয় জলের ব্যবস্থা করেছিলাম। প্রকল্পটা বেশ ব্যয়বহুল ছিল। প্রথমে পুকুরগুলোকে জলমুক্ত করে পুনঃখনন করা হয়েছিল। তারপরে সেগুলোকে লবণমুক্ত রাখা এবং সেখানে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ কাজে আমরা আমাদেরই কলেজের এক ছোট ভাই, যিনি ‘ওয়াটার এইড’ নামে একটি এনজিও’র কান্ট্রি চীফ ছিলেন, তার স্বতঃস্ফূর্ত সহায়তা পেয়েছিলাম। ফাহিয়ান যখন জানতে পারলো যে আমরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে এমন একটা বড়, দরিদ্রবান্ধব কাজ হাতে নিয়েছি, তখন সে সাথে সাথে একটা বড় অংকের অনুদান পাঠিয়েছিল। এ সংস্কার কাজের ফলে বিশেষ করে উপকৃত হয়েছিলেন এলাকার দরিদ্র নারীকূল, কেননা তাদেরকে প্রতিদিন বহু মাইল পথ কখনো পায়ে হেঁটে, কখনো সাঁতরে পাড়ি দিয়ে এক/দুই কলস পানীয় জল সংগ্রহ করতে হতো।

ফাহিয়ানের নরম মনের পরিচয় পাই ওর পেছনের ইমেইলগুলো ঘাঁটাঘাটি করার সময়। গত ০৩ জুলাই ২০১৭ তারিখে লেখা ওর এই মেইলটা পড়ে এখনও আমার মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠেঃ

প্রিয় খায়রুল,

তোকে আরেকটা দুঃখজনক ঘটনার কথা বলি, যেটা উত্তর রাশিয়ার একটা শহর ‘কাযান’ এ ঘটেছিল। মাত্র আড়াই বছর আর ছয়মাস বয়সের দুটি শিশু সন্তান নিয়ে এক ‘সিঙ্গেল মাদার’ সেখানকার এক কলোনীর ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন। তার বয়স ছিল চব্বিশ এর আশেপাশে। দুটি শিশু সন্তান নিয়ে এই কঠিন দুনিয়ায় বেঁচে থাকার জন্য তিনি দেহ বিক্রয়ের আদিম ব্যবসাকে বেছে নিয়েছিলেন। এ ছাড়া তার আর কোন উপায় ছিল না, কারণ তিনি নিজেই ছিলেন একজন এতিম। তার উপর দুটো বাচ্চাকে লালন করার মত কেউই তাকে আর্থিক সহায়তা দিতে ইচ্ছুক ছিল না।

কাজেই, বাচ্চাদের মুখে দুমুঠো অন্ন তুলে দেয়ার জন্য তিনি সন্ধ্যেবেলায় তাদের ঘুম পাড়িরে রেখে রাতে বের হতেন জীবিকার অন্বেষণে। মাঝে মাঝে বাচ্চারা রাতে উঠে যেত এবং অনেক কান্নাকাটি করতো। পড়শিরা এতে ভীষণ বিরক্ত হতেন, কিন্তু তবুও তারা তাকে কোন প্রকার সাহায্য করতেন না। তারা সবাই তার সম্পর্কে জানতেন, তাই তাকে সব বিষয়ে এড়িয়ে চলতেন।

কোন এক সন্ধ্যেয় বাচ্চাদের মুখে তুলে দেয়ার মত তার ঘরে কোন খাদ্য বা দুধ ছিল না, তাই তাকে রাস্তার ওপারের একটি দোকান থেকে কিছু খাদ্য এবং দুধ কেনার জন্য যেতে হয়েছিল। সেটি ছিল একটি অত্যন্ত ব্যস্ত সড়ক। রাস্তা পার হবার সময় দ্রুতবেগে একটি গাড়ী এসে তাকে চাপা দেয় এবং তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।

সাথে সাথে পুলিশের গাড়ী এবং এম্বুল্যান্স এসে উপস্থিত হয়। ওরা তার মৃত্যু হয়েছে, শুধু একথা নিশ্চিত করেই মৃতদেহ থানায় নিয়ে যায়। সেখানে বসে পুলিশ একটি রিপোর্ট তৈরী করে, কিন্তু মৃতের পরিচয় উদঘাটনের ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেয় না, কেউ তার সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে পারবে কিনা, সেটা বের করতেও তারা তৎপর ছিল না।

এদিকে বাসায় ক্ষুধায় কাতর বাচ্চারা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে। রাতেও তারা কয়েকবার উঠে আবার কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে। পড়শিদের এ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা ছিল না কারণ তারা এতে অভ্যস্ত ছিল। আস্তে আস্তে এক সময় কান্নার আওয়াজ থেমে আসে, পড়শিরা এ নিস্তব্ধতায় খুশী হয়। বাসাটা এভাবে দুই দিন শান্ত থাকে, পড়শিরা মহিলাকে এ দু’দিন দেখতে পায় না। একই বিল্ডিং এর আরেক মহিলা একদিন রাস্তার ওপারের সেই দোকানটিতে কিছু কেনার জন্য গেলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দু’দিন আগে রাস্তায় গাড়ী চাপা পড়ে এক মহিলার নিহত হবার খবর পান। সন্দেহ হওয়াতে উনি দৌড়ে এসে সেই মহিলার দরজায় করাঘাত করতে থাকেন, কিন্তু কেউ তখন দরজা খুলেনি। কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে তিনি পুলিশ ডাকেন। পুলিশ এসে দরজা ভেঙ্গে দেখতে পায়, দুটি শিশু মৃত পড়ে আছে। ক্ষুধায় এবং দেহে জলশূন্যতায় ওদের মৃত্যু হয়েছিল।

মৃত ঐ শিশু দুটির জন্য সেদিন আমি শুধুই কেঁদে কাটিয়েছিলাম। নিজেকে প্রশ্ন করছিলাম, মানুষের অবহেলার জন্য কেন ওদের এভাবে মৃত্যু হবে? এর কোন জবাব পাইনি। খোদাকে প্রশ্ন করেছিলাম, কেন, কেন, কেন? কিন্তু কোন উত্তর নেই। আজও যখন আমি ঐ ঘটনাটার কথা স্মরণ করি, আমার চোখ দুটো জলে ভিজে আসে!

শুভেচ্ছা---
ফাহিয়ান

(উল্লেখ্য, মেইলটি ছিল ইংরেজীতে লেখা, ভাষান্তর আমার। আর মেইলে উল্লেখিত ‘কাযান’ ওর শ্বশুরবাড়ী, ঘটনাটি ঘটার সময় ও সেখানে অবস্থান করছিলো।)

ফাহিয়ান খুব ভাল গান গাইতে পারতো, যদিও এ ব্যাপারে তার কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। হোয়াটসএ্যাপে ওর সাথে আমার সর্বশেষ বার্তা বিনিময়টাও হয়েছিল ওর পছন্দের একটা গান নিয়ে, যেটার একটা ইউটিউব লিঙ্ক আমি পাঠিয়েছিলাম। আজ মেইল ঘেঁটে বের করলাম, ও শুধু লঘু সঙ্গীতেরই ভক্ত ছিল না, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতেরও অনুরাগী ছিল। ২৩ জুলাই ২০১৯ তারিখে লেখা ওর পুরনো ইমেইলটা আজ আমাকে সেকথাটি পুনর্বার মনে করিয়ে দিলঃ

প্রিয় খায়রুল,

আমি আজ তোকে কোন ‘পথের পাঁচালি’ নয়, ‘রাতের পাঁচালি’ লিখতে বসেছি। সে রাতটা ছিল চন্দ্রালোকিত। বাইরের তাপমাত্রা ছিল ২৩-২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস, পূর্ণিমার সে রাতটিতে আমি বরাবরের পূর্ণিমার রাতের মতই ছিলাম নিদ্রাহীন। বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছিলাম আর খোলা জানালাটা দিয়ে চাঁদ, তারা দেখছিলাম। একসময় সেলফোনটা হাতে নিয়ে ইউটিউবে গান ছেড়ে দিলাম। আমার ইচ্ছে ছিল সিতার শুনবো। সেলফোনের পর্দায় অনেক বাঘা বাঘা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতজ্ঞের নাম ভেসে উঠলো, তার মধ্যে ওস্তাদ রবি শংকরের নামই বেশী জায়গায় দেখা দিল। পর্দায় চোখ বুলোতে বুলোতে এমন একজনের নাম চোখে পড়লো, যার নাম এর আগে আমি কোনদিন শুনিনি- তিনি সুজাত হোসেইন খান। আমি তাঁরই নামটাতে ক্লিক করলাম, আর তার পরিবেশনা শুনতে শুনতে বিহ্বল হতে থাকলাম, ক্রমেই যেন সম্মোহিত হয়ে গেলাম!

ওস্তাদজী রবি শঙ্কর এর তুলনায় তাঁর পরিবেশনাকে আমার কাছে একদম অন্যরকম মনে হলো, অনেক বেশী শান্ত ও প্রশমিত। উনি যখন সিতার বাজান, তখন তাঁর হাতে সিতার কথা বলে, তবলার সাথে যুগলবন্দী হয়ে এক অনন্য মূর্ছনার সৃষ্টি করে। ...... তুই যদি কিছুক্ষণ চোখ দুটো বুঁজে ওনার কন্ঠ এবং বাদ্যের সুর মূর্ছনা শুনিস, অবশ্যই তুই ওনার ঐশ্বরিক সঙ্গীতে সম্মোহিত হয়ে একেবারে যেন স্বর্গে পৌঁছে যাবি। বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের বিশাল শূন্যতায় তোর হৃদয়টা দুলে দুলে, উড়ে উড়ে বেড়াবে। আমারটা যেমন চন্দ্র তারকা গ্রহ নক্ষত্রে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। তবে যখন চোখ খুললাম, তখন দেখি, বিছানাতেই পড়ে আছি! :)

শুভেচ্ছা---
ফাহিয়ান
(এ মেইলটিও ছিল ইংরেজীতে লেখা, ভাষান্তর আমার।)

ফাহিয়ান আমাকে বহুবার আম্নত্রণ জানিয়েছে, যেন আমি চেক প্রজাতন্ত্রে গিয়ে কয়েক দিনের জন্য হলেও ওর আতিথ্য গ্রহণ করি। ও বলেছিল, ওর জীবনের অনেক ছোট বড় গল্প ও কাহিনী রয়েছে, যেগুলো নিয়ে একটা বই লেখা যায়। ও বলেছিল, আমি আমার গল্প বলে যাবো, আর তুই লিখে যাবি। লেখা শেষ হলে আমার এখান থেকে ইংরেজী ও চেক ভাষায় বইটা প্রকাশ করবো। আর তুই বাংলাদেশে গিয়ে সেটা বাংলা ভাষায় প্রকাশের ব্যবস্থা করবি। আমি বলেছিলাম, আমি কখনো ইউরোপে যাইনি। যদি কখনো যাই, তবে য্লিন থেকেই আমার ইউরোপ যাত্রা শুরু হবে। কিন্তু তার আগেই তো সে তার গল্প বলার জন্য লোকান্তরে পাড়ি জমালো!!!

সদা হাসিখুশী, সদা ইজী-গোয়িং, প্রাণচঞ্চল পিতা ও স্বামীকে হারিয়ে ওর স্ত্রী-সন্তানেরা আজ শোকে মূহ্যমান। এত তাড়াতাড়ি তাকে চিরবিদায় জানানোর কোন প্রস্তুতি না তাদের ছিল, না বন্ধু হিসেবে আমাদের। আমরা ওর পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলেছি। ওদের বাবার যে এত এত বন্ধু ও শুভাকাংখী ছিল, তা ওর ছেলেরা নতুন করে জানতে পেরে অভিভূত হয়ে গেছে। বারে বারে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। কিন্তু আমরা আর খোঁজ খবর নেবই বা কয়দিন! লসটা তো ওদেরই পার্মানেন্টভাবে হয়ে গেল!!


ঢাকা
১৮ এপ্রিল ২০২০
শব্দসংখ্যাঃ ২০৪৩

পোস্ট স্ক্রিপ্টঃ আমার বন্ধু ফাহিয়ানের জ্যেষ্ঠ্য ভাই, জনাব আবুল হাসানাৎ ফারুক গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকার একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। তিনি হার্ট, কিডনী এবং ফুসফুসের রোগে ভুগছিলেন, এ ছাড়াও তার ডায়েবেটিসও ছিল। সর্বোপরি, মৃত্যুর কিছুকাল আগে তিনি কোভিড-১৯ ভাইরাসেও আক্রান্ত হয়েছিলেন।

মাত্র ১৬ দিনের ব্যবধানে দুই ভাই দুই দেশে সমাহিত হলেন। এটাই জীবন, এটাই নিয়তি! কার কোথায় শেষ ঠিকানা হবে, তা কারও জানা নেই।

জনাব ফারুক পেশায় একজন শিক্ষক ছিলেন। তিনি খিলগাঁও হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিনেন এবং পরে গভঃ ল্যাবরেটরী হাই স্কুলেরও প্রধান শিক্ষক ছিলেন। আমাদের ব্লগের কেউ কেউ হয়তো তাঁকে একজন শিক্ষক হিসেবে পেয়ে থাকতেও পারেন।
উভয় ভ্রাতার জন্য দোয়া কাম্য।

ঢাকা
০২ মে ২০২০

মন্তব্য ৪৯ টি রেটিং +১৮/-০

মন্তব্য (৪৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:৫৪

ওমেরা বলেছেন: আল্লাহ উনার ভুল গুলো মার্জনা করুন, নেক আমলগুলো কবুল করুন । আল্লাহ যাদের সন্তুষ্ঠ উনাকে তাদের সাথে সামিল রাখুন ! আমীন।

১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ এ দোয়ার জন্য।
আপনার **** বাথান বাড়ি **** ( স্মৃতির পাতা থেকে ) পোস্ট পড়ে একটা মন্তব্য রেখে এসেছিলাম তিন দিন আগে। আশাকরি সময় করে পড়ে দেখবেন। সেখানে বর্ণিত ড্রাম তানভীর এর অভিজ্ঞতাটা বেশ মজার ছিল।

২| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:৫৯

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনার বন্ধুু ফাহিয়ান সৌভাগ্যবান বাংগালী, উনি জীবনটাকে নিজের মতো করে কন্ট্রোল করতে সমর্থ হয়েছিলেন; গড় বাংগালী থেকে ভালো অনেক অনেক ভালো জীবন যাপনা করে গেছেন; পরিবারের জন্য কষ্টকর সময়; কিন্তু তাদের জন্য শান্ত্বনার অনেক কারণ আছে।

১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৫৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: উনি জীবনটাকে নিজের মতো করে কন্ট্রোল করতে সমর্থ হয়েছিলেন - জ্বী, এটা একটা বড় সাফল্য। প্রথম জীবনে যথেষ্ট ঝড় ঝঞ্ঝা মোকাবিলা করে শেষের জীবনটা বেশ সুখেই কাটাচ্ছিলেন।
কিন্তু তাদের জন্য শান্ত্বনার অনেক কারণ আছে - একমত, ধন্যবাদ।

৩| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০০

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
আপনার বন্ধু'র আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

উনার চিঠিগুলো খুবই আবেগঘন। মনকে আলোড়িত করে।

শিশু দু'টোর মৃত্যুর ঘটনা পড়ে চোখ ছলছল করে উঠেছিলো।

সত্যি, পাশ্চাত্যের অনেক জায়গায় এক বাড়ির খবর আরেকজন রাখেন না। আমাদের ঢাক শহরের মাল্টি স্টোরিড ফ্যাটগুলোর অবস্থাও তা-ই হয়ে দাঁড়িয়েছে!

সর্বোপরি আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সুন্দর অনুবাদের জন্যে।

১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৪৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার বন্ধু'র আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি - অনেক ধন্যবাদ।
শিশু দু'টোর মৃত্যুর ঘটনাটা আসলেই ছিল মর্মান্তিক এবং হৃদয়বিদারক।
আমাদের ঢাক শহরের মাল্টি স্টোরিড ফ্যাটগুলোর অবস্থাও তা-ই হয়ে দাঁড়িয়েছে! - এগুলো নগরায়নের অভিশাপ। আমাদের জীবনটা আজ স্মার্টফোন এবং কম্পিউটারের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। কারোদিকে মুখ তুলে তাকাবার পর্যন্ত আমাদের সময়টি নেই। এজন্যই এমনটি হয়ে থাকে।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।

৪| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩১

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: অসাধারণ সুন্দর একটা পোস্ট।

১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:০৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। প্রশংসায় এবং প্লাসে প্রাণিত হ'লাম।

৫| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৯

জুন বলেছেন: আল্লাহ রাব্বুল আলামিন উনাকে জান্নাতনসীব করুন। সুন্দর স্মৃতিচারন।

১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৩০

খায়রুল আহসান বলেছেন: দোয়ার জন্য ধন্যবাদ। স্মৃতিচারণ এর প্রশংসায় এবং প্লাসে প্রাণিত হ'লাম।
শুভকামনা---

৬| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৮

মলাসইলমুইনা বলেছেন: খায়রুল ভাই,
আপনার বন্ধুর ওপর লেখাটা ভালো লাগলো । হাজার বছর আগে চীন হটাকে আমাদের দেশের ঘুরতে আসা পর্যটক "ফা-হিয়েনের" সাথে মিল আপনার বন্ধুর নামের । সেই নামের মিলের জন্যই কিনা একটা গতির, প্রবাসী জীবন হলো আপনার বন্ধুর সেটা ভাবছি । ব্লগে খুব বেশি ব্যক্তিগত কথা বলা আমার নিজেরও পছন্দ না । কিন্তু আপনি যে বলেছেন নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথার মধ্যে দিয়ে ব্লগ পোস্টে "--- আমার একটা লক্ষ্য থেকে থাকে। এসব পাঁচালিতে আমি মানবতার কথা বলতে চাই, আমার চোখে দেখা প্রকৃতির সৌন্দর্যের কথা বলতে চাই, আমার সময়ের একটা চিত্র তুলে ধরতে চাই, নিজস্ব পরিমণ্ডলে দেখা আমার সময়ের কিছু ভাল মানুষের ভাল কাজের কথা বলতে চাই" সেটার সাথে কিন্তু আমি এক মত । সেটা করা দরকার । কারণ সবার সেই ধরণের অভিজ্ঞতা থাকে না । আর তাছাড়া সবাই লিখে সেগুলো শেয়ার করতেও পারে না। জীবনের সেই অভিজ্ঞতা ব্লগে শেয়ার করা হয় দেখেই ব্লগ লেখা মূল্যবান । নইলে ব্লগ না পড়ে,ব্লগিং না করে নামি লেখকদের বই পড়লেই চলতো ।যাহোক,আপনার বন্ধুর জীবন থেকে একটা জীবন যুদ্ধ আর সেই যুদ্ধে জয়ের কথা যেটুকু জানা হলো সেটা মূল্যবান। আপনার বন্ধুর ওপর আল্লাহ রহম করুন । অনেক ভালো লাগা লেখায়।

১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:০০

খায়রুল আহসান বলেছেন: সেই নামের মিলের জন্যই কিনা - লিঙ্কে দেয়া "আমার কথা-৩" পড়লে হয়তো ওদের নামের ব্যাপারটা আপনার কাছে কিছুটা পরিষ্কার হবে।
বন্ধুর জন্য দোয়া করেছেন, এজন্য অনেক ধন্যবাদ। মন্তব্যে এবং প্লাসে অনুপ্রাণিত হ'লাম।
শুভকামনা---

৭| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:২০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আল্লাহ উনার আত্মাকে মুক্তি দিন।

খুবই আবেগী এবং নরম ছিল উনার মন। উনার মেইল গুলোতো তাই বলে।
সুজাত হোসাইন খানের সেতারে উনার হারিয়ে যাওয়ার অভিব্যাক্তি উনার ভাববাদী আত্মার পরিচয়ই ফুটিয়ে তোলে।

আহা! আফসোস রয়েই গেল। জীবনি গ্রন্থ খানা লেখা হলে হয়তো আরো জীবন ঘনিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির দারুন কিছু পেত পাঠক সামজ।
শেষ কথাটাই ঠিক। আমরা ভাবি এক নিয়তি ভাবে আরেক।
সেখানেই আমাদের অগ্যস্ত যাত্রা ইচ্ছেয় বা অনিচ্ছেয়।

পরপারে ভাল থাকুন প্রার্থনা রইল।

১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:৪১

খায়রুল আহসান বলেছেন: পরপারে ভাল থাকুন প্রার্থনা রইল - এ প্রার্থনার জন্য ধন্যবাদ।
সেতারে উনার হারিয়ে যাওয়ার অভিব্যাক্তি উনার ভাববাদী আত্মার পরিচয়ই ফুটিয়ে তোলে - খুবই চঞ্চল প্রকৃতির হলেও সে প্রকৃতি নিয়ে ভাবতো। কল্পনায় আকাশে উড়তো। ওর ইচ্ছেও ছিল এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনীয়ার হবার। কিন্তু বিষয়টি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে তখনও চালু হয় নাই। তাই সে আকাশের পরিবর্তে শেষ পর্যন্ত জলেই নামলো, হয়ে গেল একজন নাবিক।
মন্তব্যে এবং প্লাসে অনুপ্রাণিত হ'লাম।
ধন্যবাদ এবং শুভকামনা---

৮| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: আল্লাহ আপনার বন্ধুকে বেহেশ নসিব করুক।

১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:০২

খায়রুল আহসান বলেছেন: আমীন!
অনেক ধন্যবাদ।

৯| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:২০

আহমেদ জী এস বলেছেন: খায়রুল আহসান,




ব্লগ একটি বারোয়ারী মন্ডপ হলেও এখানে ব্যক্তিগত বিষয়ে না লেখাই শোভনীয়।
কিন্তু ঐ যে লিখলেন --- "এসব পাঁচালিতে আমি মানবতার কথা বলতে চাই, আমার চোখে দেখা প্রকৃতির সৌন্দর্যের কথা বলতে চাই, আমার সময়ের একটা চিত্র তুলে ধরতে চাই, নিজস্ব পরিমণ্ডলে দেখা আমার সময়ের কিছু ভাল মানুষের ভাল কাজের কথা বলতে চাই" এটাই বলে দেয় ব্যক্তিগত বিষয়গুলো কখন মহীয়ান হয়ে ওঠে, কখন মনের আয়নায় নিজেদের মুখখানা দেখায়, বায়েস্কোপের মতো স্মৃতির ছবি দেখিয়েও যায়।

"ফাহিয়ান" প্রতি আপনার বন্ধুত্বের মতো অমন বন্ধুত্বের দেখা সহজে মেলেনা।
আপনার বন্ধু চিরশান্তিতে ঘুমাক অনেক দূরের এক দেশে.............

১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৩৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: এটাই বলে দেয় ব্যক্তিগত বিষয়গুলো কখন মহীয়ান হয়ে ওঠে - অনেক ধন্যবাদ, প্রীত হ'লাম।
বায়েস্কোপের মতো স্মৃতির ছবি দেখিয়েও যায় - সে ছবিই দেখে যাচ্ছি গত কয়েকদিন ধরে।
বন্ধুর জন্য সুন্দর একটি শুভকামনা রেখে যাওয়ায় স্পর্শিত হ'লাম।
বৈশাখী শুভকামনা ... ভাল থাকুন সুস্বাস্থ্যে, সপরিবারে!

১০| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:১৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: Best wishes

১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৪৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ।

১১| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:৪৭

রাফা বলেছেন: আল্লাহ আপনার বন্ধুকে জান্নাতবাসী করুক।তার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।

আমি নিশ্চিত আপনার অনুবাদের কারনে আরো বেশি মানুষের মন ছুঁয়ে যাবে এই লেখনী.।আমি লেখাটি এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করেছি।আমার মনে হলো আপনার বন্ধুভাগ্য খুব ভালো। জিবনে ১/২ জন প্রকৃত বন্ধু থাকলে অনেক সময় পুরো জিবনের চিত্রটাই পাল্টে যায়।সেই দিক বিবেচনা করলে আপনি আপনার জিবনের একটি অধ্যায়ের যবনিকা টানলেন মনে হয়।আর আপনার বন্ধুর পরিবারের যে অপুরণিয় ক্ষতি হলো তা কোনভাবেই প্রকাশ করা যাবেনা।

যদি পারেন বন্ধুর লেখা সংগ্রহ করে কিছু করা যায় কিনা ভেবে দেখবেন।ধন্যবাদখা.আহসানভাই,বন্ধুত্বকে শেয়ার করার জন্য।

১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:০৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: দোয়ার জন্য ধন্যবাদ
আমি লেখাটি এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করেছি বেশ প্রীত হ'লাম এটা জেনে।
১/২ জন প্রকৃত বন্ধু থাকলে অনেক সময় পুরো জিবনের চিত্রটাই পাল্টে যায় - কথাটা একদম ঠিক বলেছেন। মানুষের ভালবাসা জীবনের সম্পদ। বন্ধুদের নৈকট্য তার মধ্যে অন্যতম।
মন্তব্যে এবং প্লাসে অনুপ্রাণিত হ'লাম।
ধন্যবাদ এবং শুভকামনা---

১২| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার বন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাই।

১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৩৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ, প্রীত হ'লাম।

১৩| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৭

রানা আমান বলেছেন: "ফাহিয়ান" আপনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। ভালো থাকুন , চির শান্তির দেশে ।

১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৪০

খায়রুল আহসান বলেছেন: সময় করে এসে লেখাটা পড়ে একটা মন্তব্য রেখে যাবার জন্য এবং মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করার জন্য ধন্যবাদ।
মন্তব্যে এবং প্লাসে অনুপ্রাণিত হ'লাম।

১৪| ২০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:৩০

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: আমার বিশ্বাস উনি ওপারে ভালো আছেন।
আল্লাহ এই বিবেকবান ভালো মানুষকে অবশ্যই কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ

২১ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:৫৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: দোয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। মন্তব্যে এবং প্লাসে অনুপ্রাণিত হ'লাম।

১৫| ২০ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৮:০৫

সোহানী বলেছেন: মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। ভালো থাকুক আপনার বন্ধু যেখানেই থাকুক।

আমার এখানে কিছু বন্ধু বান্ধব আছে রাশিয়া ইউক্রেন ও আর্মেনিয়ার। তাদের দেশের করুন কাহিনী প্রায় শুনি ওদের কাছে। ভয়াবহ সময় পার করছে ওরা। দূর্নীতি, আইন শৃংখলার অধ:পতন, বেকারত্ব, দ্রব্য মূল্য সব নিয়ে ওদের জীবন বিভীষিকাময়।

২১ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:২২

খায়রুল আহসান বলেছেন: দূর্নীতি, আইন শৃংখলার অধ:পতন, বেকারত্ব, দ্রব্য মূল্য সব নিয়ে ওদের জীবন বিভীষিকাময় - আমরাও মনে হয় সেদিকেই দ্রুতবেগে ধাবমান!
দোয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। মন্তব্যে এবং প্লাসে অনুপ্রাণিত হ'লাম।

১৬| ২১ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৫৫

মুক্তা নীল বলেছেন: আপনার এবং ফাহিয়ান এর চমৎকার বন্ধুত্বসুলভ বেঁচে থাকা অবধি নিরবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক পড়ে মুগ্ধ হলাম । উনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। এবং উনি আপনাকে প্রথম যে চিঠিটা লিখেছিলেন সেটা পড়ে আমি রীতিমতো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি কি নির্মম করুন পরিনিতি হয়েছিল ওই মহিলা ও শিশু বাচ্চা দুটির ।

২১ শে এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: আমি রীতিমতো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি কি নির্মম করুন পরিনিতি হয়েছিল ওই মহিলা ও শিশু বাচ্চা দুটির - ঘটনাটি ছিল অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।
দোয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। মন্তব্যে এবং প্লাসে অনুপ্রাণিত হ'লাম।
শুভকামনা---

১৭| ২১ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:৪৭

করুণাধারা বলেছেন: আপনার বন্ধু জান্নাতে শান্তিতে থাকুন।

উনাকে নিয়ে দেয়া আপনার আগের পোস্ট আমার মনে আছে। তাই উনার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে দুঃখ পেয়েছিলাম, কিন্তু এটাও ভাবলাম ভাগ্যিস উনি এসময়ে বাংলাদেশে মারা যান নি, তাহলে হয়তো শেষ যাত্রায় কোন প্রিয়জনকেও পাশে পেতেন না!!

২১ শে এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: কিন্তু এটাও ভাবলাম ভাগ্যিস উনি এসময়ে বাংলাদেশে মারা যান নি, তাহলে হয়তো শেষ যাত্রায় কোন প্রিয়জনকেও পাশে পেতেন না! - ওর ছেলে আমাদেরকে জানিয়েছে যে ওদের কেউই মৃত্যুকালে হাসপাতালে তার শয্যাপাশে দাঁড়াতে পারেনি, কর্তৃপক্ষের কঠোরতার কারণে। মৃত্যুর আগেও ওরা হাসপাতালে যেতে পারেনি, শুধু দুই তিন দিন পর পর একটা নির্দিষ্ট সময়ে ফোন করে ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমে হেলথ আপডেট নিতে পারতো। করোনা সবখানেই সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে।
মৃত্যুর পরেও তার লাশ সাত দিন পরে হস্তান্তর করা হবে বলে হাসপাতাল জানিয়েছে। সেই হিসেবে আগামীকাল আমাদের সময় সন্ধ্যে সাতটায় ওর নামাযে জানাজা এবং দাফন হবে।
দোয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। মন্তব্যে এবং প্লাসে অনুপ্রাণিত হ'লাম।
শুভকামনা---

১৮| ২২ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:১৫

মনিরা সুলতানা বলেছেন: এসব পাঁচালিতে আমি মানবতার কথা বলতে চাই, আমার চোখে দেখা প্রকৃতির সৌন্দর্যের কথা বলতে চাই, আমার সময়ের একটা চিত্র তুলে ধরতে চাই, নিজস্ব পরিমণ্ডলে দেখা আমার সময়ের কিছু ভাল মানুষের ভাল কাজের কথা বলতে চাই। [
আপনার এই মহৎ উদ্দেশ্য সফল, আমরা অনেকেই দারুণ ভাবে অনুপ্রাণিত হয় আপনার লেখায়।

আল্লাহ আপনার বন্ধুর ভুল গুলো মার্জনা করুন, নেক আমলগুলো কবুল করুন।

২২ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:১৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: আমার কথাগুলো উদ্ধৃত করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
আমার পোস্টগুলোতে আপনার মত আরো অনেকে যারা নিয়মিত এসে মন্তব্য করে যান, প্লাস দিয়ে অনুপ্রাণিত করে যান, তাদের সবার কাছে আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা।
আমার বন্ধু এই কিছুক্ষণ আগে চেক রিপাব্লিকের একটি গোরস্তানে সমাহিত হয়েছেন। তার স্ত্রী তাতিয়ানা আমাদের, অর্থাৎ তার শোক সন্তপ্ত ব্যাচমেটদের সাথে এ ছবি দুটি শেয়ার করেছেনঃ


আল্লাহ রাব্বুল 'আ-লামীন আপনার দোয়া কবুল করুন!
দোয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। মন্তব্যে এবং প্লাসে অনুপ্রাণিত হ'লাম।
শুভকামনা---


১৯| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৩৮

অন্তরন্তর বলেছেন: হৃদয়স্পর্শী লিখা শ্রদ্ধেয় ব্লগার। কেন যে আমাদের একটাই জীবন তা আবারও মনে হল আপনার পোস্ট পড়ে। কত অপূর্ণতা থেকে যায় একটা জীবনে। তারপরও এটাই যখন মহান সৃষ্টিকর্তার নিয়ম তাই তা মেনে জীবন চলছে সবার প্রকৃতির নিয়মে। আপনার বন্ধুকে রাব্বুল আলামিন বেহেশতের সর্বোত্তম স্থান দান করুন এই প্রার্থনা করি। শুভ কামনা।

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:২১

খায়রুল আহসান বলেছেন: যে কোন বিদায়ই আমার কাছে বেদনাদায়ক। আর ও যে একেবারে শৈশবের বন্ধু ছিল, হৃদয়স্পর্শী তো হবেই!
কত অপূর্ণতা থেকে যায় একটা জীবনে - কারো জীবনই বোধকরি পূর্ণতা নিয়ে শেষ হয় না!
আপনার বন্ধুকে রাব্বুল আলামিন বেহেশতের সর্বোত্তম স্থান দান করুন এই প্রার্থনা করি - প্রার্থনার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। আল্লাহ রাব্বুল 'আ-লামীন আপনার এ প্রার্থনা কবুল করুন! আমীন!
মন্তব্যে এবং প্লাসে অনুপ্রাণিত হ'লাম।
শুভকামনা---

২০| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:০৫

আখেনাটেন বলেছেন: বেদনাবিধুর লেখা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল। বিশেষ করে কাজানের ঐ ঘটনা পড়ে তো স্তম্ভিত। সামাজিক বন্ধনগুলো কতটা ভঙ্গুর হয়ে গেছে, যাচ্ছে। আর এখন করোনা তো বাধ্য করছে সামাজিকভাবে দূরে থাকতে। এমনিতে মানুষ এখন মারাত্মকভাবে স্বার্থবাদী হয়ে যাচ্ছে। ধনী-গরীবের বৈষম্য বাড়ছে। এই করোনা পরবর্তী বিশ্বে মানুষ আরো বেশি করে মনে হয় এককেন্দ্রিক হয়ে পড়বে।

কাজানের ঘটনাটা অনেক দিন ভাবাবে। এই জীবনঘনিষ্ঠ লেখাটির জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা।

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:২৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: বেদনাবিধুর লেখা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল - লেখাটা খুব মন দিয়ে পড়েছেন, তা মন্তব্য থেকে বোঝা গেল।
এই করোনা পরবর্তী বিশ্বে মানুষ আরো বেশি করে মনে হয় এককেন্দ্রিক হয়ে পড়বে - আমারও সেইটেই ভয়! তবে তার পরেও, আশাহত হই না। কারণ, বিচ্ছিন্ন হলেও, এর মাঝেই অনেক ছোট বড় ঘটনা ঘটছে যা মানবিকতার বিচারে অনেক উচ্চ মাপের।
যেমন, আজই এক ভিডিও ক্লিপ দেখে জানলাম স্পেনের এক ফেরেশতারূপী মানবের কথা, একজন ট্যাক্সিচালক যিনি করোনা আক্রান্ত রোগীদেরকে বিনা ভাড়ায় হাসপাতালে পৌঁছে দিতেন। একদিন তিনি হাসপাতাল থেকে একটা কল পেলেন, একজন রোগীকে হাসপাতাল থেকে তার বাড়ীতে পৌঁছে দেয়ার জন্য। যথারীতি চালক এসে হাজির, কিন্তু হাসপাতালের দুয়ার খুলে তিনি এক বিরাট চমকের সম্মুখীন হয়ে একেবারে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলেন। তিনি ঢোকার সাথে সাথে সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান ডাক্তার ও সেবক সেবিকাগণ করতালি দিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানান এবং তার হাতে সম্মানী বাবদ একটি মুখবন্ধ খাম ধরিয়ে দেন।ভেবে দেখুন, এ সম্মানীর অর্থ কিন্তু রোগীরা দেন নাই। ট্যাক্সিচালকের এমন মহানুভবতার কথা জানতে পেরে হাসপাতালের ডাক্তার এবং স্টাফগণ সম্মিলিতভাবে তাকে এভাবে সম্মানিত করেন। সুতরাং, ভাল কাজের স্বীকৃ্তি এখনো হয়, সংখ্যায় নগণ্য হলেও।
কাজানের ঘটনাটা অনেক দিন ভাবাবে। এই জীবনঘনিষ্ঠ লেখাটির জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা - আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হ'লাম।

২১| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:০৭

আখেনাটেন বলেছেন: লেখাটি প্রিয়তেও নিয়ে রাখলাম।

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:০৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: আমার এ পোস্টটাকে আপনি "প্রিয়" তালিকায় তুলে নিয়েছেন জেনে অনুপ্রাণিত বোধ করছি। এজন্য জানাচ্ছি অশেষ কৃতজ্ঞতা।

২২| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৫৯

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: প্রথমত একের পর এক বন্ধুর চলে যাওয়াতে মনের দিক দিয়ে আবেগপ্রবণ হওয়া খুবই স্বাভাবিক। ফাহিয়েনে মত একজন বিশ্বস্ত বন্ধুকে হারিয়ে লেখার প্রতি পরতে পরতে আপনার সেই অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে। তার সঙ্গে হাই স্কুল, ক্যাডেট কলেজের মুহূর্তগুলো সারা জীবনের জন্য স্মৃতিময় হয়ে রয়ে গেছে।
বন্ধুর বাসায় প্রথম চাকরি ও প্রণয়। পরে যিলন শহরে স্থানান্তর, বিবাহ প্রথম পুত্র সন্তান লাভ ও বিচ্ছেদ। জীবনে সামরিক ক্রান্তিকালের অবসান ঘটিয়ে আবার তাতিয়ানার নৈকট্য লাভ ও বিবাহ এবং আগে ও পরের তিন পুত্র সন্তানকে নিয়ে সুখে জীবন যাপনের কাহিনী পড়ে এক সফল জীবন নাটের কাহিনী মনে হল।

আয়েলা পরবর্তীকালে খুলনা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে আপনাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে পুকুর সংস্কারের মাধ্যমে এলাকাবাসীকে মিঠা পানির ব্যবস্থা করার উদ্যোগ গ্রহণের মধ্যে তার আর্থিক সহযোগিতায় তার চরিত্রের পরোপকারী মহানুভবতার সাক্ষ্য বহন করে।

কিন্তু সবকিছুকে যেন ছাপিয়ে গেছে ইমেইলের বিষয়টি।
ভারত-বাংলাদেশে হয়তো মাঝে মাঝে না খেতে পারার ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। কিন্তু অমন একটি দেশে একজন মায়ের খাবারের সন্ধানে এভাবে পথে নামা ও এক্সিডেন্টের পর চূড়ান্ত অমানবিকতার শিকার হয়ে বাচ্চা দুটোর অনাহারে প্রাণ যাওয়া সভ্য সমাজের কাছে এক ভয়ঙ্কর মর্মস্পর্শী কাহিনী বটে।

শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা স্যার আপনাকে।

২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৪০

খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, এ দীর্ঘ গল্পটি সময় করে এবং সময় নিয়ে পড়ে যাবার জন্য।
খুলনা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে আপনাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে পুকুর সংস্কারের মাধ্যমে এলাকাবাসীকে মিঠা পানির ব্যবস্থা করার উদ্যোগ গ্রহণের মধ্যে তার আর্থিক সহযোগিতায় তার চরিত্রের পরোপকারী মহানুভবতার সাক্ষ্য বহন করে - ঘটনাটির উল্লেখ করেছিলাম তার চরিত্রের এই পরোপকারী মহানুভবতা কে হাইলাইট করার জন্য। সেটা আপনার নজরে এসেছে এবং এ নিয়ে আপনি দুটো কথা বলে গেলেন, এতে অনেক প্রীত হ'লাম। অন্য কেউ হয়তো একথাটা খেয়াল করেন নি।
এ ছাড়াও ফাহিয়ান আমার সাথে বেশী না হলেও অন্ততঃ কয়েকজন দুঃস্থ ও এতিম শিশুকে কিভাবে মাদ্রাসায় না পাঠিয়ে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা যায়, এ নিয়ে আলাপ করেছিল। কিন্তু তার আগেই সে ব্যাধিগ্রস্ত হওয়াতে তার সে ইচ্ছে পূরণ হয়নি।
মন্তব্যে এবং প্লাসে অনুপ্রাণিত হ'লাম।
শুভকামনা---

২৩| ০২ রা মে, ২০২০ রাত ১০:৩৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: আমার বন্ধু ফাহিয়ানের জ্যেষ্ঠ্য ভাই, জনাব আবুল হাসানাৎ ফারুক গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকার একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। তিনি হার্ট, কিডনী এবং ফুসফুসের রোগে ভুগছিলেন, এ ছাড়াও তার ডায়েবেটিসও ছিল। সর্বোপরি, মৃত্যুর কিছুকাল আগে তিনি কোভিড-১৯ ভাইরাসেও আক্রান্ত হয়েছিলেন।
মাত্র ১৬ দিনের ব্যবধানে দুই ভাই দুই দেশে সমাহিত হলেন। এটাই জীবন, কার কোথায় শেষ ঠিকানা হবে, তা কারও জানা নেই।
জনাব ফারুক পেশায় একজন শিক্ষক ছিলেন। তিনি খিলগাঁও হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিনেন এবং পরে গভঃ ল্যাবরেটরী হাই স্কুলেরও প্রধান শিক্ষক ছিলেন। আমাদের ব্লগের কেউ কেউ হয়তো তাঁকে একজন শিক্ষক হিসেবে পেয়ে থাকতেও পারেন।
উভয় ভ্রাতার জন্য দোয়া কাম্য।

২৪| ৩০ শে মে, ২০২০ রাত ১০:০২

মেহবুবা বলেছেন: গল্প এর মত করে যা বলে গেলেন সে সব জীবন থেকে নেওয়া, আমাদের মনকে নাড়া দিল।
বাটা যে চেক প্রজাতন্ত্র এর থেকে শুরু জানতাম না।

৩১ শে মে, ২০২০ সকাল ১০:০৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: বাটা যে চেক প্রজাতন্ত্র এর থেকে শুরু জানতাম না - আমিও ওর কাছ থেকে শোনার আগে জানতাম না। চেক প্রজাতন্তের য্লীন (ZLIN) শহরে বাটা'র সদর দপ্তর অবস্থিত।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। প্রীত হ'লাম।

২৫| ৩০ শে মে, ২০২০ রাত ১০:১৫

আমি সাজিদ বলেছেন: আপনার বন্ধুর জীবন দর্শন খুবই গভীর। আশা করি উনার স্ত্রী সন্তানেরা এই শোক একটু হলেও কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন। আপনাদের বন্ধুত্বের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

৩১ শে মে, ২০২০ রাত ৯:১৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: পোস্টটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। সদয় মন্তব্যে প্রীত ও অনুপ্রাণিত।
শুভকামনা....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.