নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন সুখী মানুষ, স্রষ্টার অপার ক্ষমা ও করুণাধন্য, তাই স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধাবনত।

খায়রুল আহসান

অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।

খায়রুল আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

দিনলিপিঃ অবশেষে উইনিপেগ পৌঁছালাম (কানাডা জার্নাল-৬)

০৫ ই জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১:০২


বাম পাশে হাইওয়ে, মাঝখানে সবুজ তৃণভূমি, তার ডানপাশে স্থানীয় পাকা রাস্তা। এই সবুজ অংশটাতে বাচ্চারা কিছুক্ষণ বিচরণ করে আনন্দ লাভ করছিল, কিন্তু আমরা খুবই উৎকণ্ঠিত ছিলাম।
অন রিজাইনা-উইনিপেগ হাইওয়ে
২০ মে ২০২৩, ১৬ঃ২৯


যাত্রা শুরু'র পর থেকে আমরা সবাই বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ছিলাম। গান শুনতে শুনতে, গল্প করতে করতে, চারিদিকের সুন্দর সব দৃশ্যাবলী দেখতে দেখতে ধীরে ধীরে গন্তব্যের দিকে এগোচ্ছিলাম। হঠাৎ করে এমন একটা বিপদের সম্মুখীন হওয়ায় প্রথমে খানিকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লেও, দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার আবশ্যিকতা আমার মনে বারবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠছিল। সন্ধ্যা নামার আগেই গাড়ি সচল করতে হবে। স্বাভাবিকভাবে প্রথমে চেষ্টা করা হলো ফাটা চাকাটা খুলে স্পেয়ার চাকা লাগানোর। মোট ৫টা নাটের মধ্যে তিনটা খোলা গেল, কিন্তু বাকি দুটো সম্মিলিত শক্তি প্রয়োগ করেও কিছুতেই খোলা যাচ্ছিল না। উপায়ান্তর না দেখে ৯১১ কল করা হলো। যথার্থ সাড়া দেয়ার ব্যাপারে ওদের দীর্ঘসূত্রিতা আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে ফেলছিল। আমার এ সিরিজের চতুর্থ পর্বটি একটা ফেসবুক গ্রুপে পাঠ করে একজন পাঠক আমাকে জানিয়েছিলেন যে তিনিও একদিন সপরিবারে বেড়ানোর সময় একই এলাকায় একই রকম বিপদের সম্মুখীন হয়েছিলেন এবং ৯১১ এর সাহায্য কামনা করে হতাশ হয়েছিলেন। আমরা যাচ্ছিলাম উইনিপেগ, আর তিনি সেখান থেকে রিজাইনা ফিরছিলেন। পরে তিনি RCMP (Royal Canadian Mounted Police) কে ফোন করলে তারা খুব দ্রুত সাড়া দিয়েছিল এবং সমস্যা থেকে তাদেরকে দ্রুত দক্ষতায় উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিল। এ তথ্যটি সে সময়ে আমাদের জানা না থাকাতে ও পথ মাড়ানোর কোন সুযোগ ছিল না।

এটা আমাদের জানা ছিল যে রোডসাইড অ্যাসিস্ট্যান্স ইন্সুরেন্স করা থাকলে, যত রিমোট এরিয়ায় ঘটনা ঘটুক না কেন, ওরা এসে সমস্যাটি সমাধান করে দিয়ে যায়। কিন্তু আমাদের সে ইন্সুরেন্সটি করা ছিল না। তবে তার পরেও, অন দ্য স্পট ইন্সুরেন্স করে এবং প্রিমিয়াম পরিশোধ করে কী করে ওদের সাহায্য নেয়া যায়, সবুজ সে চেষ্টাটাই সেলফোনে চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু সেখানেও সেই একই দীর্ঘসূত্রিতা! এক নম্বর থেকে আরেক নম্বরে রেফার করে। এমন একটা ভয়াবহ এবং একই সাথে বিব্রতকর পরিস্থি্তির সম্মুখীন হয়ে বেচারা গলদঘর্ম হচ্ছিল, তদুপরি সময়ের সাথে সাথে পরিস্থিতি আমাদের আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছিল। আমাদের সামনে তখন কয়েকটি পাহাড় সমান সমস্যাঃ
*নতুন একটা টায়ার কেনার দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া। হাতে সময় একদমই নেই। ছয়টার পর সবকিছু বন্ধ হয়ে গিয়ে জনপদ বিরান মরুভূমিতে পরিণত হয়ে যায়।
*ফাটা চাকাটার বাকি নাট দুটো খুলে স্পেয়ার চাকা লাগানো। গাড়ির সাথের টুলবক্সে থাকা সাধারণ যন্ত্রপাতি দিয়ে সেটা করা সম্ভব হচ্ছিল না।
*নতুন টায়ার কেনার পর স্পেয়ার টায়ার খুলে ফেলে সেটা লাগানোর ব্যবস্থা করা।
*উচ্চ গতিসম্পন্ন যানবাহন চলাচলের হাইওয়ের পাশে ৫-৯ বয়সের তিন তিনটে বাচ্চাকে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করা থেকে বিরত রাখা। ওরা তো আর পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে পারছিল না, তাই ওরা লকড গাড়ি থেকে মুক্ত হয়ে হাইওয়ের পাশে সবুজ ঘাসের উপর ছোটাছুটি করার সুযোগ লাভ করে খুবই আনন্দ পাচ্ছিল।

আমরা যে সপ্তাহান্তে রওনা হয়েছিলাম, 'ভিক্টোরিয়া ডে' উপলক্ষে তার পরের দিনটিকে সপ্তাহান্তের সাথে যুক্ত করে সরকারী ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। ফলে পরপর তিন দিনের ছুটির কারণে দোকান পাটও তাড়াতাড়ি বন্ধ করে দেয়ার পাঁয়তারা চলছিল। অনলাইনে টায়ারের দোকানের খোঁজখবর নেয়ার পর দোকান পাটেরও টানা তিনদিন বন্ধ থাকার সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছিল। এমতাবস্থায়, প্রথম করণীয় সাব্যস্ত হলো সঠিক মাপের একটি টায়ার দ্রুত ক্রয়ের ব্যবস্থা করা। যেখানে এই বিপর্যয় ঘটেছিল, সেখান থেকে ৪৫ কিমি সামনে একটা টায়ারের দোকানের সন্ধান পাওয়া গেল, কিন্তু সেখানে পৌঁছাতে যে সময় লাগবে, তাতে হয়তো টায়ার কেনা যাবে, তবে একটা রিস্ক থেকে যাবে কেননা সে দোকানটা ঠিক পাঁচটায় বন্ধ হয়ে যাবে। সময় একেবারেই টানটান। পক্ষান্তরে গাড়ি ঘুরিয়ে যদি পেছনে ফেলে আসা ব্রান্ডন শহরে পুনরায় যাওয়া যায়, সেটা ৭০ কিমি দূরে হলেও তাতে হাতে কিছুটা সময় পাওয়া যাবে, কারণ সে দোকানটা বন্ধ হবে বিকেল ছয়টায়। এ ছাড়া পেছনের ব্রান্ডন শহরটি সামনের Portage la Prairie (পোর্টাজ লা প্রেরী) শহরের চেয়ে অনেক বড়, তাই সেখানে বিকল্প অপশনের সম্ভাবনাও বেশি। অতএব, আর কালবিলম্ব না করে আমার ছেলের গাড়িতে বাচ্চা তিনটিকে উঠিয়ে আমার স্ত্রীর জিম্মায় দিলাম, ছেলে ওদেরকে নিয়ে ছুটলো ব্রান্ডন শহরের উদ্দেশ্যে, টায়ার কেনার জন্য। আমি রয়ে গেলাম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত সবুজ ও তানিয়ার সাথে, তাদেরকে সাহস ও সঙ্গ দেয়ার জন্য।

পথে এমন আচমকা একটা বিপদ ঘটলেও, বিপদের স্থানটি কিন্তু খুব সুন্দর ছিল। সোজাসুজি পূর্ব-পশ্চিমে টানা দুটি আপ এ্যান্ড ডাউন সমান্তরাল হাইওয়ে। আমরা যে পাশে ছিলাম, তার পাশে এক ফালি সমান্তরাল তৃণভূমি, আর তার পাশে সমান্তরাল আরেকটি লোকাল পাকা রাস্তা, যেটা দিয়ে নির্দিষ্ট কিছু সংযোগ পয়েন্টে এসে স্থানীয় লোকজন হাইওয়েতে ওঠে। আমাদের অবস্থান থেকে প্রায় তিনশত মিটার দূরে (পূর্বে) একটা লাল রঙের ঘর দেখা যাচ্ছিল। সাধারণতঃ রাস্তার পাশের এসব ঘরগুলো শুধু ঘরই হয়ে থাকে, বাড়ী নয়। লোকজন মাঝে মাঝে এখানে এসে থাকে, তাদের কৃষি জমি দেখাশুনা করার জন্য। কয়েকদিন থেকে চলে যায়। আমাদের স্থান আর সেই লাল রঙের ঘরের মাঝ বরাবর হাইওয়েতে ওঠার একটা সংযোগ পয়েন্ট ছিল। হাইওয়ে থেকে সেই সংযোগ পয়েন্ট দিয়ে নেমে আসা একটা গাড়িকে আমি ঐ বাড়িটার দিকে যেতে দেখেছিলাম। এতে মনে আশার সঞ্চার হয়েছিল, আমরা হয়তো কারও সাহায্য পেলেও পেতে পারি। সেই সম্ভাবনাটুকু এক্সপ্লোর করার জন্য সবুজকে গাড়ির কাছে রেখে আমি আর তানিয়া সেই ঘরটার দিকে হাঁটা শুরু করলাম।

গ্রামীণ এ ঘরটার পেছন দিকটা রাস্তার দিকে ছিল, তাই আমাদেরকে একটু ঘুরে ভেতরের দিকে যেতে হচ্ছিল। ঘরটার প্রবেশমুখে একটা সাইনবোর্ড দেখতে পেলাম, তাতে লেখা "Welcome to …… (একটা স্থানীয় নাম, নামটা ভুলে গেছি) Golf and Country Club"। কিন্তু একটা গলফ ক্লাবের যে রকম শান শওকত হবার কথা, সেরকম কোন কিছুই দেখতে পেলাম না। আরেকটু ভেতরে প্রবেশ করেই দেখতে পেলাম, ভেতর বারান্দায় কয়েকজন নরনারী বসে খোশ গল্পে মশগুল। পাশে একটা বারবিকিউ এর উনুন জ্বলছে। সুস্বাদু খাদ্যের সুঘ্রাণ বাতাসে ভেসে এসে আমাদের নাসারন্ধ্রেও প্রবেশ করলো। আমরা দূর থেকে একজন লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হলাম এবং তাকে সম্ভাষণ জানালাম। তিনি উঠে আমাদের দিকে আসছিলেন। কিন্তু মুশকিল হলো, তার হাতে শেকলে ধরা ছিল কালো ভল্লুকের মত একটা বিরাট কুকুর, যে আমাদের প্রতি ততটা সদয় ছিল না। কাছে আসতেই সেটা ঘেউ ঘেউ করে এক লাফে আমাদের প্রায় কাঁধ বরাবর ওঠার চেষ্টা করলো। লোকটা আদর করতে করতে সেটাকে নিবৃত করলেও, ততক্ষণে ভয়ে তানিয়ার হার্ট এ্যাটাক হবার উপক্রম হয়েছিল।

সেখানে উপস্থিত প্রত্যেকেই উঠে দাঁড়িয়ে আমাদেরকে সম্ভাষণ জানালেন এবং আমাদের সাথে করমর্দন করলেন। সাইনবোর্ড দেখার কথা উল্লেখ করে আমি জিজ্ঞাসা করলাম এটা কোন গলফ ক্লাব কিংবা ক্লাবের কোন অংশ কিনা। তদুত্তরে তারা জানালেন যে এটা এক সময় গলফ ক্লাব ছিল, এখন এটা "Resurrection Life Ministries" (খৃষ্টান কোন উপাসনালয়ের অংশ বিশেষ, এনজিও) এর ক্রয়কৃত সম্পত্তি। তারা আমাদেরকে সাদরে তাদের সাথে বারবিকিউ এ অংশ গ্রহণের আমন্ত্রণ জানালে আমরা তাদেরকে আমাদের বিপদের কথা খুলে বললাম। সে কথা শুনে তারা আমাদেরকে তাদের সিনিয়র রে জনসন এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তিনি ও তার স্ত্রী(?) লেসলী জনসন আমাদের অনুমতিক্রমে দল বেঁধে মাথা নীচু করে হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে স্রষ্টার উদ্দেশ্যে কিছু প্রার্থনা করলেন। তারপর সেই সিনিয়র কয়েকজন লোককে প্রয়োজনীয় টুলবক্স নিয়ে অকুস্থলে যাবার জন্য নির্দেশ দিলেন এবং নিজে তাঁর গাড়িতে আমাদের দুজনকে উঠিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেন। ছোট্ট পথটুকু চলতে চলতেই তার সাথে খানিক আলাপচারিতা হলো, কারণ তিনি বেশ আলাপী মানুষ ছিলেন। বয়সে আমার চেয়ে চার/পাঁচ বছরের বড় হবেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মিশনারী হয়ে কাজ করেছেন, আমাদের দেশটা সম্বন্ধেও বেশ ভালোই জানেন, কেননা সিডর ও আইলা দুর্যোগের সময় তার প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশে ত্রাণ কাজে অংশ নিয়েছিল।

রে জনসন এর নির্দেশ মোতাবেক সবুজ রঙের একটা খোলা জীপে করে চারজন লোকের একটি দল এসে আমাদের গাড়ির স্পেয়ার চাকা খোলার কাজে লেগে গেল। তাদের মধ্যে একজন আমাদেরকে ইন্ডিয়ান ভেবে ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে বাৎচিৎ শুরু করলো, কিন্তু আমরা তাকে জানালাম, আমরা ইন্ডিয়ান নই, বাংলাদেশী। সে মৃদু হেসে জানালো যে সে তার এক ইন্ডিয়ান সহকর্মীর কাছ থেকে কিছু কিছু হিন্দি শিখেছে, সেটাই আমাদের উপর চালাতে চাচ্ছিল। সবুজ আমাকে জানালো যে সে 'রোডসাইড অ্যাসিস্ট্যান্স' এর ইন্সুরেন্স ফী পরিশোধ করতে পেরেছে এবং একজন সাহায্যকারী ইতোমধ্যে রওনা দিয়েছে। ওরা যখন কাজ করছিল, আমি আর রে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে এটা সেটা নিয়ে আলাপ করছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, "You are very lucky"। আমি সহমত জানিয়ে তাদের সাহায্যের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম। তিনি আরও বললেন, "Accidents like this do not happen by chance. They are pre-ordained by God"। আমি এ নিয়ে আর কথা না বাড়িয়ে ভিন্ন প্রসঙ্গে চলে গেলাম। ওনার লোকজন এসে ওনাকে জানালো যে দুটোর মধ্যে একটা নাট ওরা খুলতে পেরেছে, বাকিটার জন্য অন্য একটা স্প্যানার লাগবে। সেটা আনার জন্য ওরা গাড়ি নিয়ে পুনরায় ঐ লালঘরে ফিরে গেল। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে ওরা বাকি নাটটাও খুলে হৈ হৈ করে হাততালি দিয়ে সেলিব্রেট করলো। স্পেয়ার চাকাটা লাগিয়ে দিয়ে ওরা হাসিমুখে বিদায় নিল। আমরা ওদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে করমর্দন করলাম এবং ওদেরকে বিদায় সম্ভাষণ ও শুভকামনা জানিয়ে বিদায় দিলাম। রে থেকে গেল আমাদের সঙ্গে, শেষটুকু ভালোয় ভালোয় হয় কিনা তা দেখার জন্য।

একটু পরেই 'রোডসাইড অ্যাসিস্ট্যান্স' থেকে একজন লোক এসে পরীক্ষা করে দেখলো যে স্পেয়ার চাকাটা ঠিকমত লাগানো হয়েছে কিনা। তার যে কাজটা করার ছিল, সেটা ঐ চার্চের লোকজনই করে দিয়ে গেছে। সে যখন শুনলো যে কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্রয়কৃত নতুন চাকাটি এসে পৌঁছাবে, সে পরামর্শ দিল পেছনের চাকাটিও বদলে নিয়ে নতুন চাকাটি লাগাতে। কারণ সেটার অবস্থাও বেশি ভালো ছিল না। স্পেয়ার চাকাটি ভালো ছিল বলে সেটা দিয়ে উইনিপেগ পর্যন্ত যেতে কোন অসুবিধে হবে না বলে জানালো। তবে গাড়ির গতিবেগ কিছুতেই ৯০ অতিক্রম না করার জন্য সে সতর্ক করে দিল। লোকটি এসেছে দেখে রে জনসন বাকী পথটুকুর জন্য আমাদেরকে শুভকামনা জানিয়ে বিদায় নিতে চাইলো। আমরা তাকে প্রভূত ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিদায় সম্ভাষণ জানালাম। এরই মধ্যে আমার ছেলে নতুন টায়ার নিয়ে উপস্থিত হলে লোকটি সেটা পেছনের বাম পাশে লাগিয়ে দিল। আমরা তাকে অনুরোধ করলাম গাড়িতে আর কোন অসুবিধে তার নজরে পড়ে কিনা তা একটু দেখে দিতে। প্রয়োজনীয় সব কিছু পরীক্ষা করে সে 'ওকে রিপোর্ট' দিল।

উচ্চ গতিবেগের এই রাস্তায় ১১৫ কিমি গতিতে ধাবমান গাড়িটির পেছনের চাকা না ফেটে যদি সামনের চাকা ফাটতো, তাহলে যে কী হতো তা কল্পনা করতেও গা শিউরে ওঠে। যাহোক, বিরাট একটা দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাবার জন্য আমরা দয়াময় স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এবং বাকি পথের জন্য নিরাপত্তা কামনা করে বিকেল সোয়া সাতটায় উইনিপেগের উদ্দেশ্যে আমাদের যাত্রার দ্বিতীয়াংশ শুরু করলাম। যদিও 'রোডসাইড অ্যাসিস্ট্যান্স' এর সেই কারিগরটি গতিসীমা ৯০ এ সীমিত রেখে গাড়ি চালানো যাবে বলে অনুমতি দিয়েছিল, আমরা বাকি পথটাতে কখনোই আর ৭৫ এর ঊর্ধ্বে উঠি নাই। নানারকমের টেনশনে সবার ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছিল। Portage la Prairie তে পৌঁছে সেখানকার 'পপ আইজ' এ বসে ডিনার সেরে নিলাম। তখন সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে আটটা, সূর্য ডুবুডুবু। সেখানেই মাগরিবের নামায পড়ে যাত্রার বিরতিহীন শেষ অধ্যায়টা শুরু করলাম। পথে অনেকগুলো রেলক্রসিং পড়লো, তবে যাত্রীবাহী ট্রেন একটাও চোখে পড়লো না। মালবাহী ট্রেনগুলো মাত্রাতিরিক্ত দীর্ঘ, আমাদের দেশের কন্টেইনারবাহী দশটা ট্রেনের সমান ওদের একটা। আমাদের ঘটনাবহুল এই সুদীর্ঘ যাত্রাপথে (সময়ের হিসেবে, দূরত্ব হিসেবে ততটা নয়) ঐ মালগাড়িগুলোকে পাস দিতে দিতে আমাদের, বিশেষ করে বাচ্চাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটছিল। অবশেষে রাত বারটার একটু আগে আমরা আমাদের হোটেল 'সুপার এইট' এ পোঁছালাম। হোটেলের নিরিবিলি, ছিমছাম পরিবেশ আর ফ্রন্ট ডেস্ক এর কর্তব্যরত স্টাফের সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ পছন্দ হলো। রুমে গিয়ে ঝটপট একটা গরম শাওয়ার নিয়ে সবাই কথা বলতে বলতে একসময় একে একে নিশ্চুপ হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।


উইনিপেগ, ম্যানিটোবা, কানাডা
২০ মে ২০২৩
শব্দ সংখ্যাঃ ১৬৭০


সকৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি "Resurrection Life Ministries" এর সম্মানিত প্রধান রে জনসন কে, যিনি সেদিন আমাদের সহায়তায় অকাতরে এগিয়ে এসেছিলেন এবং বিপদমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সাথে অবস্থান করেছিলেন।

রিজাইনা থেকে উইনিপেগ চলার পথে,
২০ মে ২০২৩, বিকেল ১৭ঃ৫৮


কাজ শেষ করে রে জনসন এর লোকজনের বিদায় নেয়ার ক্ষণে....
রিজাইনা-উইনিপেগ হাইওয়ের পাশে......
২০ মে ২০২৩, ১৭ঃ৫৪


@উইনিপেগ, ম্যানিটোবা, কানাডা
২১ মে ২০২৩

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৯/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১:৪৩

রানার ব্লগ বলেছেন: দারুন এবং উদ্বেগ জনক অভিজ্ঞতা ।

০৬ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১:১২

খায়রুল আহসান বলেছেন: জ্বী, ভীষণ উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মাঝে সেদিন কাটিয়েছিলাম ৪/৫ ঘণ্টা সময়।
প্রথম মন্তব্যটির জন্য অশেষ ধন্যবাদ।

২| ০৫ ই জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৯

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: ভ্রমণ কাহিনীর সবগুলো পর্ব পড়লাম। খুব ভালো লাগলো। আপনি যে দিনলিপিঃ যাত্রা হলো শুরু.... কানাডার পথে- ১ আমার কমেন্টের জবাবে একটা প্রশ্ন করেছিলেন সেটা আমার চোখে পড়েনি। এখন তার জবাব দিচ্ছি। আমি কানাডা থাকা দূরের কথা কখনো যাবার সুযোগই পাইনি। বাংলাদেশেই থাকি। তবে গোটা বিশেক দেশ ভ্রমণের সুযোগ মিলেছে কর্মসূত্রে। এখন কি বাংলাদেশে ?
ভালো থাকবেন।

০৬ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ২:৪৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: এ সিরিজের ভ্রমণ কাহিনীর সবগুলো পর্বই আপনি পড়েছেন জেনে বাধিত হলাম। আর আমার কানাডা ভ্রমণের প্রথম পোস্টটিতে আপনার মন্তব্যের জবাবে রাখা আমার প্রশ্নটির উত্তর আজ এখানে পেলাম বলেও প্রীত বোধ করছি। এজন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

না, আমি এখনও বাংলাদেশে ফিরিনি। অগাস্টের মাঝামাঝি সময়ে ফিরবো বলে আশা রাখছি।

৩| ০৫ ই জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:০৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:




রিজাইনা হতে উইনিপেগের দীর্ঘ পথযাত্রা ট্রেনে করলে সম্ভবত রাস্তার এতসব যামেলা এড়ানো যেতো । তার পর
সেখানে গিয়ে রেন্ট এ কার হায়ার করে স্থানীয়ভাবে ঘোরা ফেরার কাজ করলে সুবিধা হতো । যাহোক গাড়ীতে করে
ক্রমন মাধ্যম ব্যবহার অপনাদের নিজস্ব সুবিধা আনুযায়ী করেছেন ।
উইনিপেগ বেশ আকর্ষনীয় দর্শনীয় শহড় । এটা নাকি Known as the "Gateway to the West,
This multicultural city hosts numerous annual festivals, অআশা করি এ সময়ে ঘটে যাওয়া আকর্ষনীয়
ভেসটিভাল উপভোগের সুযোগ পাবেন । আরো শুনেছি উইনিপেগে কানাডার Museum for Human Rights
রযেছে । সেখানে অতীতে ঘটে যাওয়া অনেক অমানবিক ঘটনার প্রাম্যন্য চিত্র রয়েছে ।

যদি এখনো উইনিপেগে অবস্থান করে থাকেন তাহলে সুযোগ পেলে উইনিপেগে অবস্থিত এই বিখ্যাত মিউজিয়ামটি
ঘুরে দেখে আসতে পারেন । সেখানে কানাডার আবাসিক স্কুলের আদিবাসী শিশুদের নির্যাতনের বেশ কিছু প্রামান্য
চিত্র রয়েছে বলে জানা যায় ।
আবাসিক স্কুলের আদিবাসী শিশুদের নির্যাতনের কাহিনী নিয়ে বেশ কিছুদিন আগে ব্লগান সোহানী একটি পোষ্টে বেশ
কিছু সচিত্র কাহিনী তুলে ধরেছেন ।

আবাসিক স্কুল ব্যবস্থা আদিবাসী শিশুদের তাদের পরিবার থেকে সরিয়ে দিয়ে, তাদের পূর্বপুরুষের ভাষা থেকে বঞ্চিত
করে এবং তাদের অনেককে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের মুখোমুখি করে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছিল।
বিদ্যালয়ের পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের অপুষ্টি, অনাহার এবং রোগের দিকে পরিচালিত করে। আবাসিক ছাত্রদেরকে
তাদের পরিবার এবং সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন এবং ইংরেজি বা ফরাসি বলতে বাধ্য করা হয়েছিল, ছাত্ররা প্রায়শই
তাদের সম্প্রদায়ের সাথে মানিয়ে নিতে না পারার কারণে মূলধারার কানাডিয়ান সমাজে বর্ণবাদী মনোভাবের শিকার
হয়। এই সিস্টেমটি শেষ পর্যন্ত প্রজন্মের মধ্যে আদিবাসী চর্চা এবং বিশ্বাসের সংক্রমণকে ব্যাহত করতে সফল বলে
প্রমাণিত হয়েছে। সিস্টেমের উত্তরাধিকারকে পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস, মদ্যপান, আত্মহত্যা এবং আন্তঃপ্রজন্মীয় ট্রমার
বর্ধিত প্রকোপের সাথে যুক্ত করা হয়েছে যা আজো আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে অব্যাহত রয়েছে।

২০০০ এর দশকের শেষের দিক থেকে, কানাডিয়ান রাজনীতিবিদ এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলি আবাসিক স্কুল ব্যবস্থায়
তাদের নিজ নিজ ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিতে এবং ক্ষমা চাইতে শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হার্পার তার এবং অন্যান্য
ফেডারেল রাজনৈতিক দলের নেতাদের পক্ষে জনসমক্ষে ক্ষমা চেয়েছেন। ১লা জুন,২০০৮ -এ, কানাডার ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন (টিআরসি) স্কুল সম্পর্কে সত্য উদঘাটনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কমিশন কানাডা জুড়ে
বিভিন্ন স্থানীয়, আঞ্চলিক এবং জাতীয় ইভেন্টের মাধ্যমে আবাসিক স্কুল থেকে বেঁচে যাওয়া প্রায় ৭০০০জনের
বিবৃতি সংগ্রহ করে। ২০১৫ সালে, ন্যাশনাল সেন্টার ফর ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ
করে বলেছে আবাসিক স্কুল ব্যবস্থাটি ছিল সাংস্কৃতিক গণহত্যার সমান। ২০২১ সাল থেকে টিআরসি তাদের চলমান
প্রচেষ্টায় প্রাক্তন আবাসিক বিদ্যালয়ের ভিত্তিতে হাজার হাজার সম্ভাব্য অচিহ্নিত কবর চিহ্নিত করা হয়েছে, যদিও
সেগুলিতে কোনো মানুষের দেহাবশেষ বের করা হয়নি। ২০২২ সালের জুলাই মাসে কানাডায় অনুশোচনামূলক
তীর্থযাত্রার সময়, পোপ ফ্রান্সিস ক্যাথলিক চার্চের ভূমিকার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন, এছাড়াও
সিস্টেমটিকে গণহত্যা হিসাবে স্বীকার করেছেন। ২০২২সালের অক্টোবরে, হাউস অফ কমন্স সর্বসম্মতিক্রমে একটি
প্রস্তাব পাস করে যাতে ফেডারেল কানাডিয়ান সরকারকে আবাসিক স্কুল ব্যবস্থাকে গণহত্যা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার
আহ্বান জানানো হয়।

আমাদের দেশে কিছু কিছু মাদ্রাসায় ও ইয়াতিমখানায় আবাসিক ব্যবস্থায় ছাত্রদেরকে পড়াশুনার করায় । সেখানে
বাংলার চেয়ে আরবী শিক্ষাতে বেশী জোড় দেয়া হয় , এবং বিবিধ ভাবে আবাসিক ছাত্রদেরকে নির্যাতন করা হয় ।
এছাড়া আরো বহুবিধ অমানবিক কান্ড কারখানা আমাদের দেশে অতীতে যেমন ঘটে গেছে এখনো বিবিধ ভাবে
বিভিন্ন মাত্রায় অমানবিক কান্ড ঘটে চলেছে । তাই কানাডার উইনিপেগের Museum for Human Rights
এর মত একটি মিউজিয়াম আমাদের দেশে স্থাপন করা প্রয়োজন । আমরা লেখালেখির মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে
গণদাবী তুলে ধরতে পারি । বিদেশ ভ্রমনের কিছু দেশবাসী পাক সে কামনাই করি ।

কানাডায় আপনার ভ্রমন আনন্দদায়ক হোক ।

শুভেচ্ছা রইল

তথ্য ও চিত্র সুত্র : উইকিপিডিয়া ।


০৮ ই জুলাই, ২০২৩ ভোর ৫:৫৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: যতদূর জেনেছি, রিজাইনা হতে উইনিপেগের মধ্যে এখন কোন যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে না, তবে কন্টেইনারবাহী ট্রেন নিয়মিত চলাচল করে।

ব্লগার সোহানী'র পোস্টের মাধ্যমেই আমি কানাডার আবাসিক স্কুলে আদিবাসী শিশুদের উপর নির্যাতনের করুণ কাহিনীর কথা প্রথম জানতে পারি। পরে এখানকার লাইব্রেরীতে বসে এ বিষয়ে এবং আদিবাসী নারীদের উপর নির্যাতনের বিষয়ে লেখা আরও দুই একটা বই এর উপর চোখ বুলিয়েছি (পড়ার সময় নেই)। এসব কাহিনীর বিশদ বিবরণ লোমহর্ষক এবং হৃদয়বিদারক। আমাদের সাথে তিনজন শিশু ছিল। ওদের মনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে ভেবে আমরা এবারে সেখানে যাইনি, অন্য মিউজিয়ামে গিয়েছি। তবে ভবিষ্যতে আরেকবার এলে অবশ্যই সেখানে যাবার আশা রাখি।

পোস্টের উপর বিশদ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। প্লাসে প্রাণিত।

৪| ০৫ ই জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২৪

একলব্য২১ বলেছেন: ঘটনাবহুল এই পর্বটি বিস্তারিত জানার আগ্রহ ছিল। পাঠকের সেই কৌতূহল আপনি যথার্থভাবে পূরণ করেছেন। সেইজন্য লেখক আপনাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিচ্ছি।

০৭ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১:০৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার প্রবল আগ্রহ (এতটাই, যে আপনি ঐ দিনের ঘটনা সংক্রান্ত দুটো পোস্টেই এসে মন্তব্য করেছেন, যা আপনি কদাচিৎ করে থাকেন) আমাকে প্রভূত অনুপ্রাণিত করেছে।

মন্তব্য এবং প্লাসের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।

৫| ০৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৯:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার এই কানাডা ভ্রমন কাহিনী আমি মুগ্ধ হয়ে পড়ি। বড় ভালো লাগে।

০৮ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১২:৪৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: আমিও আপনার এই মন্তব্যটা পড়ে বড়ই মুগ্ধ হলাম। পাঠকের মুগ্ধতা লেখকের সফলতা, তাই পেলে ভালো লাগে।
ধন্যবাদ ও শুভকামনা।

৬| ০৫ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৯:৪৮

করুণাধারা বলেছেন: একটা বড় সমস্যায় নানা বিকল্প বিশ্লেষণ করে সুন্দর সমাধান করেছেন। এমনভাবে লিখেছেন আমিও দিনের আলো কমে আসছে, দোকান বন্ধ হয়ে যাবে, এই সবকিছু নিয়ে উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়ছিলাম। সবকিছুর সমাধান হয়ে গেছে তথা সময়েই, ভালো লাগলো চার্চের লোকেদের সহায়তা করতে এগিয়ে আসাটা। নামকেওয়াস্তে সাহায্য করতে এগিয়ে আসা না, তাদের একজন রয়ে গেল যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিত না হয়েছে যে আপনারা বিপদমুক্ত হয়েছেন!!

মাঠের মধ্যে বাড়ি দেখে সেখানে সাহায্য পাওয়া যায় কিনা দেখতে যাবার কথা আপনিই ভেবেছেন। বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা রেখে এভাবে সমাধান খোঁজা সবাই পারে না!!

হাইওয়েতে দ্রুত গতিতে গাড়ি চলাচল করে সেখানে এভাবে গাড়ি রাখাটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। যা হোক, সব ভালো তার শেষ ভালো যার।

০৮ ই জুলাই, ২০২৩ ভোর ৫:৫০

খায়রুল আহসান বলেছেন: ভালো লাগলো চার্চের লোকেদের সহায়তা করতে এগিয়ে আসাটা - এ বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক ছিলেন ওনারা সবাই। রে জনসন (সম্ভবতঃ তাকে ফাদার সম্বোধন করা হয়) আমাদের জন্য সেদিনের বারবিকিউ পার্টিটা বোধকরি অনেকটাই মিস করেছিলেন। লেসলী জনসনের প্রার্থনার কথাগুলো খুব হৃদয়স্পর্শী ছিল। বিরান ঐ জায়গায় আমাদের ওয়াশরুম ভিজিটের খুব প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। ওনারা আমাদের সে সমস্যাটিও অত্যন্ত উদারতার সাথে সমাধান করে দেন।

আমি জানতাম, সময় খুব দ্রুত বয়ে যাচ্ছিল। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে না পারলে সেদিন আমাদের আরও অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হতো।

গাড়ীটা সাদা দাগেরও সামান্য একটু দূরে থামানো হয়েছিল। ফাটা টায়ারের অবস্থা দেখে ঐ অবস্থায় আর গাড়ীটা স্টার্ট দেয়া হয় নাই।

৭| ০৬ ই জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৭

শেরজা তপন বলেছেন: যাক অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে শেষ মেষ যে ঠিক জায়গায় কোন অঘটন ছাড়া পৌছুতে পেরেছেন সেটা জেনে ভাল লাগছে।
এই পর্বের অপেক্ষায় ছিলাম।

০৮ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১১:১৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: এই পর্বের অপেক্ষায় ছিলাম - ধন্যবাদ, অপেক্ষায় থাকার জন্য এবং অত্যন্ত দুঃখিত, এ পর্বটা দিতে এতটা দেরি করে ফেললাম বলে।
আল্লাহতা'লার অশেষ রহমতে কোন রকমের অঘটন ছাড়াই সেদিন আমরা গন্তব্যে পৌঁছতে পেরেছিলাম। তখন কিছুটা টেনশন হলেও, পথের সাময়িক বিঘ্ন-বিপত্তিটুকু অভিজ্ঞতার ঝুলিতে কিছুটা বৈচিত্রও যোগ করেছিল। সকৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি সম্মানিত রে জনসন কে, যিনি সেদিন আমাদের সহায়তায় অকাতরে এগিয়ে এসেছিলেন এবং বিপদমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সাথে অবস্থান করেছিলেন।

৮| ০৭ ই জুলাই, ২০২৩ সকাল ৯:১৪

সোহানী বলেছেন: ওওওওওওও নো...........। রোডসাইড এ্যাসিসটেন্স মারাত্মক ইম্পর্টেন্ট কানাডায়। বিশেষকরে গাড়ি যদি কিছু পুরোনো হয় বা লং ড্রাইভে যেতে হয় তাহলে এর বিকল্প নেই। এছাড়া শীতে যেকোন সময় গাড়ি বসে যেতে পারে। তখনতো মহা বিপদ।

আমার নতুন গাড়ি হলেও বছরের পর বছর ফি দিয়েছি। মাত্রই ক'দিন আগে একবার কাজে লেগেছে। তারপরও বন্ধ করি না। তবে, রোডসাইড এ্যাসিসটেন্স ছাড়াও বেশ কিছু দোকান আছে যারা অন দা স্পট সাহায্য করে। আমারও একবার টায়ার ফেটে গিয়েছিল। কারন তখন নতুন ড্রাইভ শুরু করেছিলাম ও ফুটপাথে গাড়ি উঠিয়ে দিয়েছিলাম। সে সময়ে আমার রোডসাইড এ্যাসিসটেন্স ছিল না। তখন অনলাইনে খুঁজে কল দিয়ে চাকা চেইন্জ করেছিলাম।

যাহোক, কানাডায় বিপদে পড়তে হয় কম কিন্তু। কোন না কোনভাবে সাহায্য পাওয়া যায়। B:-/

আমার নাম উঠে এসেছে আলী ভাইয়ের ও আপনার মন্তব্যে দেখে কৃতজ্ঞতাবোধ করছি। আদিবাসী শিশুদের নিয়ে আরো কিছু লিখার ইচ্ছে আছে।

উইনিপেগে আমাদের ব্লগার পলাশ থাকে সম্ভবত।

যাহোক, চমৎকার সময়ে আপনি কানাডায়। আনন্দে কাটুক আপনার সময়।

০৯ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১:৫৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: "রোডসাইড এ্যাসিসটেন্স মারাত্মক ইম্পর্টেন্ট কানাডায়। বিশেষকরে গাড়ি যদি কিছু পুরোনো হয় বা লং ড্রাইভে যেতে হয় তাহলে এর বিকল্প নেই। এছাড়া শীতে যেকোন সময় গাড়ি বসে যেতে পারে। তখনতো মহা বিপদ" - সেটা এবারে বেশ বুঝতে পেরেছি।

"সে সময়ে আমার রোডসাইড এ্যাসিসটেন্স ছিল না। তখন অনলাইনে খুঁজে কল দিয়ে চাকা চেইন্জ করেছিলাম" - আমাদের বেলাতেও এবারে ঠিক সেটাই ঘটেছে!

"যাহোক, চমৎকার সময়ে আপনি কানাডায়। আনন্দে কাটুক আপনার সময়" - অনেক ধন্যবাদ। সুন্দর সময়টাকে উপভোগ করছি।


৯| ০৮ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১:৩৮

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:



আপনার ভ্রমণ ব্লগে একটি বিষয় আপনি উল্লেখ করেছেন কিনা আমি সঠিক লক্ষ্য করিনি। বাংলাদেশের এক কোন থেকে আরেক কোন টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ার মতো - গত বছর আপনি ছিলেন অস্ট্রেলিয়া আর এ বছর পৃথিবীর এক কোন থেকে আরেক কোন কানাডা!

দুইটি দেশে যেতেই মহাসাগর পাড়ি দিতে হয়েছে।


০৯ ই জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১:৩৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনি ঠিকই সেটা লক্ষ্য করেছেন, তবে আমার ভ্রমণব্লগে আমি সেটা স্পষ্টতঃ উল্লেখ করিনি। শুধু কৌণিক দুই প্রান্তেই দেশ দুটোর অবস্থান নয়, জলবায়ুর দিক থেকেও দুটো দেশ দুই বিপরীতমুখী আবহাওয়া এ সময়টাতে ধারণ করে। যেমন কানাডায় এখন গ্রীষ্মকাল, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় শীতকাল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.