নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোঃ মাকসুদুর রহমান

মোঃ মাকসুদুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছারপোকার সাথে বসবাস!

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:০৩


ছারপোকার সাথে সম্ভবত প্রতিটি বাঙালি পরিচিত।যদিও দেশের আলীশান বাড়ীর বাসিন্দারা শয্যাকালের সাক্ষাত এ শত্রুটির নাম জানে কিনা তা জানা নাই! অবশ্য জানার দরকারও খুব একটা নেই।দুর্নীতি ও কালোটাকায় গড়ে তোলা সম্পদের তীব্র উত্তাপে ছারপোকার মত কীটের আলীশান বাড়ীর ধারকাছে যাওয়ার সুযোগ খুব একটা নাই।তাই ছারপোকা নামক ( যা আমাদের গ্রামদেশে উরাশ হিসেবেও অনেক এলাকায় পরিচিত) ক্ষুদ্র রক্ত খাদকের সকল আবেগ , অনুরাগ সব গণ মানুষের সাথেই। ক্ষুদ্র অথচ ভয়ংকর এ কীটের নিষ্ঠুর আক্রমনে কোন না কোন সময়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়নি , সে রকম মহাভাগ্যবান খুঁজে পাওয়াও এক ভাগ্যের বিষয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ছারপোকা নিয়ে আমার মিশ্র অথচ চমকপ্রদ এক অভিজ্ঞতা তৈরি হয়েছে। ঘটনাটা খুলেই বলি। একটু বেশি রাতে ঘুমাতে যাওয়া আমার অভ্যাস। সেদিনও তার ব্যতিক্রম ছিলো। না। আমার আবার অভ্যাস হচ্ছে মশারি ছাড়াই ঘুমানো। এর অবশ্য যুতসই কারণও আছে। পৃথিবীর সবচেয়ে কষ্টকর কাজের মধ্যে একটা হচ্ছে ঘুমুতে যাওয়ার আগে মশারি টানানো।যাইহোক ঘুমুতে গিয়ে যেই না কেবল নাক ডাকা শুরু করব ওমনি আমাদের সদাহাস্যেজ্জবল মেয়র আনিসুল হকের অবৈতনিক মিউসিক গ্রুপ ‘’ মসকিউটি ডেভিল’’ এসে তাদের বেসুরো গান শুরু করে দিল। গ্রুপের তরুণ সদস্যরা আবার গান শুনিয়ে খুশী না , তারা শরীরের বিভিন্ন অংশে বসে গেল ডিনার সারতে। কিন্তু ডিনারের সময় এদের সীমাহীন নিষ্ঠুরতা দেখে মাঝে মনে হল , মানুষ কি সাধে সৃষ্টির সেরা জীব। সে তার রসনা তৃপ্তিকালে কত যত্ন ও আদর করে গরু, মুরগী শক্ত হাড্ডি বা মাছের মাথা চিবোয় যাতে নীরিহ প্রাণীগুলো একটুও ব্যাথা না পায় অথচ মেয়র আনিসের মশার দল কি নিষ্ঠুরতার সাথে আমাদের শরীরের রক্ত খেতে গিয়ে তীব্র কামড় বসায়। যাই হোক এদের হাত থেকে বাঁচার জন্য চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে ঘুমিয়ে পড়লাম। কিন্তু বিধিবাম! কিছুক্ষণ পরেই ছারপোকার তীব্র আক্রমণে চাদর ফেলে দিয়ে ঘুম থেকে জেগে বসে পড়লাম। মেজাজ তখন এতই খারাপ কি করব বূঝে উঠতে পারছি না। মিনিট খানেক ভেবে , ‘জীব হত্যা মহাপাপ’ ব্রত সাময়িক সময়ের জন্য ভুলে গিয়ে ইয়াহিয়া খানের নীতি অবলম্বন করে ছারপোকা পিষে মারতে শুরু করলাম।এভাবে ছারপোকা নিধন করতে গিয়ে একসময় সকাল হয়ে গেল। তবে ছারপোকা নিয়ে একটা বিশেষ তথ্য হচ্ছে এরা দিনের বেলায় অনেক কম উৎপাত করে। সম্ভবত রাতের বেলায় ব্যস্ত সময় কাটাতে হয় বলে এরা দিনের বেলায় বিশ্রামে থাকে। আনিস বাহিনীর ক্ষেত্রে অনেকটা কথাটি প্রযোজ্য।সামনের কয়েকদিন ছারপোকার সাথে লুকোচুরি করে দিনের বেলা ঘুমুতে যাওয়া শুরু করলাম। কিন্তু এভাবে আর কয়দিন। সবশেষে ‘অপারেশন ক্লীন হার্ট’ প্রকল্প হাতে নিলাম। ছারপোকা নিধনের সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করলাম। এরপর কয়েকদিন নিজের বিছানাকে মনে হল ফাইভ স্টার হোটেলের আরামদায়ক শয্যাস্থান। কিন্তু এত সুখ বেশিদিন আর কপালে সইল না! অপারেশন ক্লীন হার্টের তীব্রতার মাঝেও কোন বিশেষ ব্যবস্থায় কিছু ছারপোকা ঠিকই নিজেদের বাঁচিয়ে রাখল। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এদের আচরণগত বিরাট পরিবর্তন এসেছে। এরা এখন নিষ্ঠুরতা ছেড়ে সহণীয় মাত্রায় শরীর থেকে রক্ত শুষে নিচ্ছে। তীব্র কামড় দিচ্ছে না। নিশ্চিন্ত মনে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেমন যানি একটা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের চেষ্টা! অপারেশন ক্লিন হার্টের কর্মযজ্ঞের কষ্টের কথা মনে করে আমিও কেন যেনো বিষয়টা মেনে নিয়েছি! মনের মধ্যে তীব্র রাগ ও বিরক্তি অথচ অলিখিত শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। আনিস বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেতে আমাকে এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বিরক্তিকর কষ্টকর কাজটি করতে হচ্ছে। অর্থ্যাৎ মশারি টানাচ্ছি। মশারির দিকে তাকিয়ে দেখি ছারপোকা হেটে বেড়াচ্ছে। ইচ্ছা হলে দুই একটা পিষে মারছি,আবার কখনো মারছি না। সবকিছু স্বাভাবিক ভাবার চেষ্টা করছি। মাঝে মাঝে মনে হয় ছারপোকার কাছে আত্মসমপর্ণ করে যেনো, স্বাভাবিক থাকার অভিনয় করছি। ভাবছি ওরাতো এখন আর কামড়ে দিতে গিয়ে ব্যাথা দিচ্ছে না! রক্ত খায় খাক!আর ছারপোকাও আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এখন নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছে ! এটা যেনো এখন ওরই রাজত্ব! আমি যেনো ওর প্রজা মাত্র। সেদিন বসে আছি , হঠাৎ হাতটা একটু চুলকাচ্ছে , তাকিয়ে দেখি একটা ছারপোকা রক্ত খেয়ে ঢাউস আকার ধারণ করে হেলেদুলে ছুটে চলেছে। কোন ভাবান্তর নেই! যেনো আমার শরীরটা কোন বৈকালিক হেটে বেড়ানোর ন্যাশনাল পার্ক!
ছারপোকার দিকে তাকিয়ে গভীর হতাশা নিয়ে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছি। যেনো স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করাই জাতীয় জীবনে আমাদের এখন একমাত্র কাজ! দিনের পর দিন ভুতুরে বাহিনী এক একজন জলজ্যান্ত মানুষকে প্রিয়জনের সামনে দিয়ে টেনে হেচঁরে নিয়ে গুম করে ফেলছে, লাশও ফেরত দিচ্ছে না! অথচ আমরা কিচ্ছু হয় নাই ভেবে অন্যদিকে তাকিয়ে স্বাভাবিকভাবে গুন গুন করে গেয়ে উঠছি ‘ ভালো করিয়া বাজাও গো দোতারা সুন্দরী কমলা নাচে’ । আমাদের প্রিয়জনের শ্রমে ঘামে অর্জিত পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা দেশের প্রধান ব্যাংক থেকে লুট হয়ে যাচ্ছে , আমরা চুপ করে থাকছি! কি স্বাভাবিকতা ! হাজার হাজার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সদস্যকে কাজে লাগিয়ে রাস্তা বন্ধ করে আলোকজ্জল দলীয় উৎসব করছে আমরা নিশ্চুপ থাকছি ! অথচ দেশের প্রধান বিরোধী দলকে একটি সমাবেশ করার দরখাস্ত নিয়ে রাষ্ট্রের কর্মচারীদের দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়াতে হয় ! সবশেষে মাত্র দুঘন্টা আগে কয়েক পাতা শর্ত দিয়ে সমাবেশের অনুমতি দান করে ! কি স্বাভাবিকতা! পার্শ্ববর্তী মোড়ল প্রতিবেশী দেশের সাথে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক হৃৎপিন্ড সুন্দরবন ধবংষের জন্য রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করছে আমাদের মুখে তালা ! কি স্বাভাবিকতা! কলেজ ক্যম্পাসে ঢুকে বাচ্চা বয়সী পুলিশ সদস্যরা পিটিয়ে শিক্ষক মেরে ফেলবে , মেরে ফেলবে খেটে খাওয়া ভ্যানচালক ! আমরা কিচ্ছু বলব না ! সবকিছু স্বাভাবিক ! পুলিশ সুপার (এসপি) সগর্বে ঘোষণা দিবেন, ‘ডাকাত যদি হাতেনাতে পান, তো জলজ্যান্ত ওটাকে পিষে মেরে ফেলেন। ...আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি, আপনাদের নামে কোনো মামলা হবে না। এই গ্যারান্টি আমার।’ কিচ্ছু বলব না ! না শোনার ভান করে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করব! প্রিয়জনের সাথে ঈদ পালন করতে মাত্র পাঁচদিনের মধ্যে শত শত মানুষ মৃত্যুবরন করে ,তারপরেও দেশে উন্নয়নের বন্যা বয়ে যাচ্ছে বলতে বলতে মুখে ফেনা তোলা জোকার মন্ত্রীদের চাপাবাজি শুনব আর মুখে তালা দিয়ে থাকব! ভাবব , সবকিছু কত স্বাভাবিক আছে ! ছাত্রলীগের বীরপুঙ্গবরা দিনের আলোয় সবার সামনে খাদিজার শরীর চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করবে ! ইশ , এই ছবি দেখা যায় বলে পত্রিকার পাতা উল্টিয়ে স্বাভাবিক থাকব ! প্রধান বিচারপতির বাসভবন থেকে ৫০ গজ দূরত্বের মাঝে কিশোরী স্কুল ছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করবে , আমরা না দেখার ভান করব! সারাদেশে শিশু ধর্ষণের উৎসব পালিত হবে , আমরা কিচ্ছু বলব না! স্থানীয় সাংসদ ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের ইন্ধনে যখন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নিঃস্ব সাঁওতালদের বাড়ীঘর পুড়িয়ে দিয়ে ক্ষান্ত না হয়ে গুলি করে হত্যা করে আবার তাদেরই গ্রেপ্তার করবে তখনো আমাদের বিবেক জাগ্রত হবে না! আদিবাসী ছাত্রনেতা বিপুল চাকমাকে যখন ক্যান্সার আক্রান্ত মৃত্যু অত্যাসন্ন মায়ের সামনে দিয়ে টেনে ছেঁচড়িয়ে নির্বিচারে মারতে মারতে নামিয়ে নিয়ে যাবে তখনো টুশব্দটি করব না! নাসিরনগরে প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় যখন হিন্দুদের বাড়ীঘর, মন্দির লুটপাট, ভাংচুর ও পুড়িয়ে দেবে তখনো আমাদের মনে হবে , সবতো স্বাভাবিকই আছে !
মহাবীর আলেজান্ডারতো আর এমনি এমনি এ অঞ্চলের মানুষের আজব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দেখে সেনাপতি সেলিউওকসের কাছে তাঁর হতাশা প্রকাশ করেননি !!অস্বাভাববিকতাই যেনো আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় স্বাভাবিকতা !

গভীর বিষন্নতার সাথে মশারীর ছাদের দিকে তাকিয়ে ঘুমুতে চেষ্টা করছি হঠাৎ দেখি একটি ছারপোকা লাফ দিয়ে আমার কপালের উপর পড়ছে ! আমি চোখ বুজলাম ! ভাবলাম না সবকিছু স্বাভাবিক আছে!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৬

আলগা কপাল বলেছেন: অসাধারণ। আসলেই ছারপোকারা বিপজ্জনক (বাস্তব এবং রূপক দুই ধরনেরই)। আমাদের অবস্থা এমন হয়েছে যে চুপচাপ মেনে নেয়া ছাড়া কিছু করার নেই।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:৩৩

মোঃ মাকসুদুর রহমান বলেছেন: হয়ত ছারপোকার হাত থেকে রক্ষা পেতে খোলনলচে ফেলতে হবে ।

২| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৬

নিয়াম বলেছেন: আমাদের সয়ে গেছে, অস্বাভাবিক সব আজ স্বাভাবিক-বোধ পর্যায়ে। আমি ভাল আছি নিশ্চিন্ততায় অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়েনা। ভুলেই বসে আছি- ওদের নৃশংসতা আর অবিচারের তালিকা নির্দিষ্ট নয়। হয়তো কোনো একদিন এ জাতি ঘুরে দাঁড়াবে, ছারপোকারা হয়তো সেদিন শরীরে রক্ত অবশিষ্ট রাখবে না।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:৩১

মোঃ মাকসুদুর রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনি না বলা কথা গুলোবলে দিয়েছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.