নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোঃ মাকসুদুর রহমান

মোঃ মাকসুদুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রগতিশীলতার আড়ালে মৌলবাদ !!!

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:০৪

“অপারেশন জ্যাকপট : মুক্তিযুদ্ধে প্রথম নৌকমান্ডো অভিযান” একটা প্রামাণ্য চিত্র। নির্মাণ করেছে দীপ্ত টিভি। প্রচারিত হয়েছে ১৬ ডিসেম্বর রাত ৯-৩০ মিনিটে। টেলিভিশনের অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য সময়টা নিঃসন্দেহে প্রাইম টাইম হিসেবে বিবেচিত। আর সেই সময়ে তারা বিজয় দিবস উপলক্ষে এই প্রামাণ্য চিত্রটি প্রচারের ব্যবস্থা করে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু গতকাল টেলিভিশন শিল্পীদের ১৪টি সংগঠনের ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনাল অর্গানাইজেশন (এফটিপিও) বক্তব্য শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম ! বিশেষ করে মামুনুর রশীদের বক্তব্যে আমাকে অবাক করেছে কারণ একজন প্রগতিশীল ভাব্ধারার সৃজনশীল শিল্পী কিভাবে একটা গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়ার হুমকি প্রদান করেন । এটাতো নিশ্চিতভাবে স্বৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। তাদের ক্ষোভের কারণ হচ্ছে ঐদিন বিদেশী দাবিং কৃত সিরিয়াল ''সুলতান সুলেমান'' কেন প্রচার করা হলো। আচ্ছা দীপ্ত টিভি কি রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন ? যেখানে মন্ত্রী, পাইক, পেয়াদা, চামচা চামুন্ডা , নব্য দালাল , পুরাতন দালাল তৈলবাজদের কান ঝালাফেলা অর্থহীন চাপাবাজি প্রচার করবে ?তাছাড়া বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান কি শুধু শিল্পীদের অভিনীত নাটক, সিনেমা ? না, যারা সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছে তাদের নিয়ে তৈরি প্রামাণ্যচিত্রও বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের মধ্যে পড়ে? না, ওনাদের বাইরে তৈরি কোন অনুষ্ঠানকে দেশীয় সংস্কৃতির বলে মনে করেন না। সম্ভবত না, কারণ দীপ্ত টিভিতো যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করে বিরাট ভুল করে ফেলেছে! তারচেয়ে বরং এফটিপিও'র নেতৃত্ব প্রদানকারী কাউকে দিয়ে গল্প বলার আসর নির্মাণ করতেন তবে সেটা নিশ্চয়ই দেশীয় সংস্কৃতির সাথে বিরোধ তৈরি করত না। দীপ্ত টিভি বাস্তবিক অর্থেই বিরাট ভুল করেছে ,ভবিষ্যতে তারা এ ধরনের ভুল না করার একটা মুচলেকা এফটিওকে দিতে পারে। কারণ ওনারা জাতির বিবেকের একমাত্র ইজারাদার। ওনারা যা বলবেন সেতাই দেশীয় সংস্কৃতি !আরে দীপ্ত টিভিতো তবুও একটা প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের কেবল অপারেটরদের তালিকার প্রথম প্রায় ২০টি চ্যানেলতো ভারতীয় বাংলা ও হিন্দি চ্যানেল। তারাতো বিজয় দিবসের নাম পর্যন্ত মুখে আনল না। তারাতো প্রতিদিনের মত বাংলাদেশের দর্শকদের চোখ আঠার মত স্ক্রীণের দিকে লাগিয়ে রাখার সব অনুষ্ঠানই যথারীতি প্রচার করে গেল। অথচ এ বিষয়ে মামুনুর রশীদরা একটা শব্দও উচ্চারণ করলেন না বা করার প্রয়োজন বোধ করলেন না।প্রশ্ন হচ্ছে তারা কি আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির অনুষ্ঠান প্রচার করে।
আমি অবশ্যই এফটিপিও আন্দোলনের মূল স্পিরিটের সাথে একমত কিন্তু আন্দোলনের এডহক পদ্ধতির তীব্র বিরোধিতা করছি। এডহক পদ্ধতি হচ্ছে মূল সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার প্রয়াস ! শুধু 'সুলতান সুলেমান' বন্ধ করার দাবী অনেকটা তাই ! যেকোনো সমস্যাকে সামগ্রিক অর্থে না দেখে এডহক সমাধানের চেষ্টা সমস্যাকে প্রশ্রয় দেয়ারই শামিল। আপনারা যদি প্রকৃত অর্থে দেশীয় শিল্প, সংস্কৃত বিজাতীয়করণ করার হাত থেকে রক্ষা করতে চান তবে প্রথমেই বাংলাদেশে বিদেশী চ্যানেল প্রচারের নীতিমালা প্রণয়ন করতে সরকারকে বাধ্য করুন। অর্থ্যাৎ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে টিভি চ্যানেল প্রচার ঘাটতি দূরীকরণে আন্দোন করুন। 'সুলতান সুলেমান' মাত্র ৩৭ মিনিট প্রচারিত একটা অনুষ্ঠান (যা পরবর্তীতে ১৮ মিনিটে এসে দাঁড়াবে) তা নিয়ে আপনাদের যে হম্বিতম্বি তা কিছুটা দৃষ্টিকটু লাগে। এতে আপনাদের সম্পর্কে মানুষ সন্ধিগ্ন ধারণা করে ! আর এটা করাতো খুব স্বাভাবিক। কারণ জি বাংলা, স্টার জলসা, স্টার প্লাস ইত্যাদি চ্যানেলের প্রচারিত অনুষ্ঠানের কাছে সুলতান সুলেমান নস্যিমাত্র। তাছাড়া সুলতান সুলেমান দেখে আজ পর্যন্ত দেশে কেউ মারা গেছে বা দুপক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে,তা অন্তত দেখা যায়নি।যা মাঝে মাঝেই ভারতীয় চ্যানেলে প্রচারিত অনুষ্ঠানের কারণে সংঘটিত হয়।
সবশেষে মামুনুর রশীদের গতকাল প্রদত্ত একটা বক্তব্য উল্লেখ করে শেষ করব , যেখানে তিনি বলেছেন "যুদ্ধাপরাধীর বিচারে তুরস্ক বাংলাদেশের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করে। অথচ সেই দেশের সিরিয়াল আমাদের দেশে প্রচার হচ্ছে। এটি বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি। " অতিরিক্ত স্বার্থচিন্তা অনেক সময়ই মানুষকে অতিরিক্ত আবেগাপ্লুত করে তোলে। এবং তখন অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তিও ঠুনকো শিশুসুলভ যুক্তি দাড় করানোর চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে তিনিও তাই করেছেন। মামুনুর রশীদ নিশ্চয়ই জানেন সুলতান সুলেমান সিরিয়ালটি নিয়ে তুরস্কের এরদোগান সরকারের অন্দরমহলে ব্যাপক বিরক্তি ও হতাশা রয়েছে কারণ এতে ইসলামের বেশ কিছু মৌলিক দুর্বলতা ঊঠে এসেছে। তাই এটাকে'তুরস্কের সিরিয়াল' বলে বন্ধ করার দাবী তোলা এক অর্থে প্রগতিশীলতার আড়ালে মৌলবাদী বিশ্বাস লুকিয়ে রাখারই নামান্তর মাত্র।
শেষ কথাঃ তাই কোন টিভি চ্যানেল বা সুলতান সুলেমান বন্ধের এডহক আন্দোলন না করে , দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষায় মৌলিক সমস্যা চিহ্নিত করে এগিয়ে যান ।শিল্প বাঁচবে আপনারাও বাঁচবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.